কুলদা রায়
এমএমআর জালাল
দুটো মেয়ের কথা হবে আজ। একজনের নাম কিম ফুক। বাড়ি ভিয়েতনাম। আরেকজনের নাম খুকি--খুকিরানী। বাড়ি বাংলাদেশে। ঘটনাকাল ১৯৭২ সালে আর ১৯৭১ সালে। কিমের বয়স ছিল তখন মাত্র নয়। আর খুকীর বয়স তের কি চৌদ্দ।
আমাদের যাত্রা আগে ভিয়েতনাম
----------------------------------
ভিয়েতনাম যুদ্ধে বিষয়টা একটু সংক্ষেপে জানা যাক।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ ১৯৫৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংঘটিত একটি দীর্ঘমেয়াদী সামরিক সংঘাত। এটি দ্বিতীয় ইন্দোচীন যুদ্ধ নামেও পরিচিত। যুদ্ধের একপক্ষে ছিল উত্তর ভিয়েতনামি জনগণ ও ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট এবং অন্যপক্ষে ছিল দক্ষিণ ভিয়েতনামি সেনাবাহিনী ও মার্কিন সেনাবাহিনী। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামিরা প্রথম ইন্দোচীন যুদ্ধে লড়াই করে ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে। এই যুদ্ধশেষে ভিয়েতনামকে সাময়িকভাবে উত্তর ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম --- এই দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। ভিয়েতনামের সাম্যবাদীরা যারা ফ্রান্সের বিরোধিতা করেছিল, তারা উত্তর ভিয়েতনামের নিয়ন্ত্রণ পায়। অন্যদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাম্যবাদ-বিরোধী ভিয়েতনামিরা শাসন শুরু করে। উত্তর ভিয়েতনামের সাম্যবাদীরা একটি একত্রিত সাম্যবাদী ভিয়েতনাম গঠন করতে চাচ্ছিল।
মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা বিশ্বাস করেছিলেন যে যদি সমগ্র ভিয়েতনাম সাম্যবাদী শাসনের অধীনে চলে আসে, তবে "ডমিনো তত্ত্ব" অনুসারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বত্র সাম্যবাদ ছড়িয়ে পড়বে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের ঘটনাবলির সাথে জড়িয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাম্যবাদ বিরোধী সরকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। কিন্তু এই সরকারের নিপীড়নমূলক আচরণের প্রতিবাদে দক্ষিণ ভিয়েতনামে আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯৬০ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকারকে উৎখাতের লক্ষ্যে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন করা হয়।
১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামি সরকারের পতন রোধকল্পে সেখানে সৈন্য পাঠায়, কিন্তু এর ফলে যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, তাতে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হতে পারেনি। ১৯৭৫ সালে সাম্যবাদী শাসনের অধীনে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয়। ১৯৭৬ সালে এটি সরকারীভাবে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নাম ধারণ করে। এই যুদ্ধে প্রায় ৩২ লক্ষ ভিয়েতনামি মারা যান। এর সাথে আরও প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ লাও ও ক্যাম্বোডীয় জাতির লোক মারা যান। মার্কিনীদের প্রায় ৫৮ হাজার সেনা নিহত হন।
চলুন দক্ষিণ ভিয়েতনামের একটি গ্রামে
-----------------------------------------
গ্রামটির নাম ট্রাং ব্যাং। সাইগণ শহর থেকে ৩০ মাইল দূরে। সাইগন শহরটি দক্ষিণ ভিয়েতনামে অবস্থিত। বর্তমানে এই শহরটির নাম হোচি মিন সিটি। ট্রাং ব্যাং গ্রামটি ছোটো। এ গ্রামের মানুষজন কারিগর। দরিদ্রও বটে।
ডেটলাইন জুন ৮, ১৯৭২, ট্রাং ব্যাং গ্রাম
-----------------------------------------
সেদিন এই গ্রামটি সকালে দখল করে নেয় উত্তর ভিয়েতনামী ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের ফোর্স। এর খবর চলে যায় দক্ষিণ ভিয়েতনামী আর্মির ২৫ ডিভিশনের ফোর্সদের কাছে। তারা দুপুর দুটায় ঝাঁকে ঝাঁকে বোমা বর্ষণ করে ট্রাং ব্যাং গ্রামে। সাদা ফসফরাস মার্কার বোমা ফেলে গ্রামটি নিশ্চিহ্ণ করে ফেলার চেষ্টা করে। গ্রামের ঘরবাড়িতে আগুন ধরে যায়। মারা যায় অসংখ্য মানুষ। আর যারা জীবিত ছিল তারা প্রাণ ভয়ে পালাতে থাকে লোকালয় ছেড়ে।
এ সময়ই দেখা যায় গ্রামের রাস্তা ধরে ছুটে পালাচ্ছে একদল শিশু। এদের মধ্যে একটি মেয়ের নাম কিম ফুক। বয়স মাত্র নয় বছর। এই নিষ্পাপ শিশুদের উপরে ফেলা হয় চার ড্রাম নাপাম বোমা। সঙ্গে সঙ্গে মারা যায় কিম ফুকের দুটো ভাই। এই ভাই দুটোও শিশু।
সে সময় এসোসিয়েটেড প্রেস বা এপির সাংবাদিক নিক অট যুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে ট্রাং ব্যাং গ্রামে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁর হাতে ক্যামেরা। তিনি ক্যামেরায় লুক থ্রু করতেই দেখতে পেলেন, পলায়নরত শিশুদের মধ্যে হরিণ শাবকের মত একটি বালিকা ছুটছে। বোমার আঘাতে ঝলসে গেছে তার সারা শরীর। মেয়েটির খালি গা। রক্ত ঝরছে। মেয়েটি বিড় বিড় করে বলছে, নং কুয়া, নং কুয়া। পুড়ে যাচ্ছে। পুড়ে যাচ্ছে। মেয়েটা পুড়ে যাচ্ছে।
নিক মেয়েটির ছবি তুললেন।
মেয়েটি বলেছে, আমি বোমা দেখেছি। আমি আগুন দেখেছি। সে আগুন ছিল ভয়ঙ্কর রকমের গরম। আমার পরণের জামা কাপড়েও আগুন ধরে গেছে। নিজেকে বাঁচাতে সব খুলে ফেলেছি। কিন্তু আমার শরীর পোড়া বন্ধ হয়নি। কিছু লোকজন পানির ক্যান থেকে পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে। এরপর? আর কিছু মনে নেই কিম ফুকের। জ্ঞান হারিয়েছে।
এপির সাংবাদিক নিক অট এই অচেতন পোড়া মেয়েটিকে তার গাড়িতে তুলে নিলেন। তাকে পৌঁছে দিলেন কাছের হাসপাতালে। কিমের শরীরের অর্ধেকটাই ভয়ঙ্করভাবে পুড়ে গিয়েছিল। এটা ছিল থার্ড গ্রেডের পোড়া। তার বাঁচার কোনো আশা ছিল না। এখানে ১৪ মাস ছিল মেয়েটি।
সে সময়ে সাইগনের বার্কসি চাইল্ড প্লাস্টিক সার্জারী হাসপাতালে কিমকে স্থানান্তর করা হল। সেখানে সানফ্রান্সিসকোর স্বচ্ছাসেবী ডাঃ মার্ক গোর্নি কর্মরত ছিলেন। গোর্ণি যখন প্রথম কিমকে দেখেন তার চিবুকটি বুকের সঙ্গে লেগে গেছে। তার বাঁহাতখানি পুরোপুরি হাড় আব্দি পুড়ে গেছে। তার কাছে বসে আছেন তার মমতাময়ী মা।
বছর দুই এই হাসপাতালে কিমকে থাকতে হয়েছিল। তারপর ফিরে গেছে আবার তার তাদের গ্রামে-- ট্যাং ব্যাংএ।
--------------------------------------------------------------
এবার আমাদের যাত্রা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশে
---------------------------------------------------------------
আপাতত আমাদের গন্তব্য চট্টগ্রামের হালিশহর। হালিশহর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় চট্টগ্রাম শহরের একটি বর্ধিষ্ণু এলাকা। এটি উত্তর হালিশহর ও দক্ষিণ হালিশহরের সমন্বয়ে গঠিত। এর উত্তরে কাট্টলি ও পাহাড়তলী, দক্ষিণে বন্দর এলাকা, পূর্বে আগ্রাবাদ, এবংপশ্চিমে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।
মার্চ ২৫, ১৯৭১ : অপারেশন সার্চ লাইট
----------------------------------------
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সে খবর পৌঁছে যায় চট্টগ্রামে। হালিশহরে ছিল ইপিআরের ঘাঁটি। মেজর রফিকের নেতৃত্বে ইপিআর বাহিনী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু করে। দক্ষিণ হালি শহরের মানুষজন ইপিআরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে।
তখন চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজে পাকিস্তানী অস্ত্রের চালান এসেছে। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ মেজর জিয়াকে সে জাহাজ খালাস করার নির্দেশ দিলে তিনি গাড়ী নিয়ে রওনা হয়ে যান। পথিমধ্যে লে: খালেকুজ্জামান তাঁর গাড়ি আটকে পাকিস্তানী বাহিনী বাঙালি হত্যা শুরু করেছে এই খবরটি দেন । সোয়াত জাহাজের এই অস্ত্র বাঙালিদের হত্যার জন্য ব্যবহৃত হবে। মেজর জিয়া খালোকুজ্জামানের অনুরোধে অস্ত্র খালাস না করে ক্যান্টনমেন্টে ফিরে আসেন। বাঙালি সৈন্যদের সঙ্গে কথা বলে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। তারপর নদী পার হয়ে নিরাপদ এলাকায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম বাঙালিদের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
মার্চ ২৬, ১৯৭১
----------------
সকাল থেকে মাইকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সারা চট্টগ্রাম শহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা নিরবিচ্ছিন্নভাবে পাঠ করা হয় এবং সাইক্লোস্টাইলে ছাপা করা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাটির একটি লিপলেট জনগনের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
দুপুরে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হান্নান চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষাণাটি পাঠ করেন।
সন্ধ্যায় কালুরঘাটে বেলাল মোহাম্মদের নেতৃত্বে চালু করা হয় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র। আবুল কাশেম সন্দীপ এবং মোঃ হান্নান পুনরায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
মার্চ ২৭, ১৯৭১
---------------
স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
মার্চ ২৯, ১৯৭১
----------------
পাকিস্তান বাহিনী দক্ষিণ কাটালির ইপিআর বাহিনীর দিকে অগ্রসর শুরু হতে বঙ্গোপসাগর উপকূল দিয়ে। তাদের উদ্দেশ্য সাঁড়াশি আক্রমণ করা। বাঙালি হত্যা করা। চট্টগ্রামকে দখল করা।
মার্চ ৩০, ১৯৭১
----------------
উত্তরে গহনা খাল এবং দক্ষিণে ইপিআর ক্যাম্প সংলগ্ন পুরো এলাকাটি ঘিরে ফেলে পাকবাহিনী। তাদের সঙ্গে ভারী ভারী অস্ত্র। তারা বোম্বিং করে চিটাগাংএর দখল নেয়। ফলে সামান্য হালকা অস্ত্র নিয়ে তাদের মোকাবেলা করা সম্ভব নয় মনে করে ইপিআর বাহিনী এলাকা ছেড়ে চলে যায়। রয়ে যায় ৪০জন সদস্য। এরা হালিশহরের নাথপাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন।
মার্চ ৩১, ১৯৭১, আমাদের খুকিরানী
---------------------------------------
এই হালিশহরের একটি পাড়ার নাম নাথপাড়া। সেখানে হরিপদ নাথের বাড়ি। তার বুড়ে বাবার নাম ক্ষরোদ বাঁশি নাথ। হরিপদর চার ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলিটির নাম দুলালচন্দ্র নাথ। পড়ে চট্টগ্রাম কমার্স কলেছে বি-কম ক্লাসে। আর মেজো ছেলেটির নাম বাদলচন্দ্র নাথ। চট্টগ্রাম কলেজের অনার্সের ছাত্র। মেয়েটির নাম খুকি। নবম শ্রেণীর ছাত্রী। ওদের মায়ের নাম নিরুবালা। স্বামী, পাঁচ ছেলেমেয়ে আর বুড়ো শ্বশুরকে নিয়ে নিরুবালার সুখের সংসার।
১০/১২ জন ইপিআরের একটি দল হরিপদ নাথের বাড়ি খুব ভোরবেলা এলেন। তারা ক্ষুধার্ত। নিরুবালা তাদের জন্য রান্না করলেন। আর ছেলেরা দিল তাদেরকে কিছু কাপড় চোপড়। ছয়দিন পরে ইপিআরের দলটি পেটপুরে খেলেন। তারপর নাথপাড়া ছেড়ে চলে গেলেন।
সকাল ১০টা, ৩১ মার্চ, ১৯৭১
-----------------------------
পাক বাহিনী আর নাথপাড়ার পাশের পাড়ার বিহারীরা যৌথভাবে সাঁড়াশি আক্রমণ করল বাঙালিদের উপর। সে সময়ে হরিপদ নাথের বাড়ির সবাই আশ্রয় নিয়েছে পুকুরপাড়ের মন্দিরে।
একটু বেলা বাড়তেই তাদের দরোজায় টোকা পড়ল। একদল লোক হৈ হৈ করতে করতে চেঁচিয়ে উঠল, দরোজা খোলো।
দরোজা খোলা হল। সামনে দাঁড়িয়ে একদল বিহারী। পাশের পাড়ায় বাসিন্দা। তাদের হাতে কুড়াল, কিরিচ আর রামদা। তাদের পাণ্ডার নাম শওকত। বিহারী জল্লাদ।
দরোজার পাশেই দাড়িয়েছিল খুকি রাণীর বড় ভাই দুলাল। বিহারী জল্লাদ শওকত কিরিচের এক কোপে তার মাথা কেটে ফেলল। ধড়ফড় করে লাফাতে থাকে তার ধড়।
দুলালচন্দ্রের মা নিরুবালা এগিয়ে এলে তাকে শওকত বলল, খুবতো জয় জয় বাংলা করেছিস। এবার ছেলের রক্তে গোসল কর। তারা নিরুবালার গায়ে বড় ছেলে দুলাল চন্দ্রের কাটা মুণ্ডু উঁচিয়ে ধরল। আর মুণ্ডু থেকে গরম রক্তের ধারা নেমে এল তার কাপড়ে—গায়ে। ছেলের রক্তে মায়ের গোসল হল। মা নিরুবালা মূর্ছিত হয়ে গেলেন।
এ সময় আরেক ভাই বাদল নাথকে নিয়ে খাটের তলায় ঢুকে পড়েছিল বোন খুকি। শেষরক্ষা হয়নি। বোনের বুক থেকে বাদলকে টেনে এনে কুড়াল দিয়ে কুঁপিয় কুঁপিয়ে হত্যা করল বিহারী ঘাতক শওকতের দল। খুকি রাণীর কাকিমার কাছ থেকে কোলের শিশুটি নিয়ে ছুড়ে মারল। তারা মনে করেছিল খুকিরানী মরে গেছে। নিরুবালা দেবী শেষ। রাম দা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করল খুকি রানীর বাবা হরিপদ নাথকে। আর হত্যা করল হরিপদর বুড়ো বাবা ক্ষীরোদ বাঁশি নাথকে।
যাওয়ার সময় রক্তের বন্যা বয়ে যাওয়া কালী মন্দিরে মৃত অর্ধমৃত মানুষের ওপর কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিল ঘাতকবাহিনী। একসময় গায়ে আগুন লাগলে বীভৎস দৃশ্যে জ্ঞান হারানো খুকু জেগে ওঠেন। ওঠেই ঝাঁপ দেন পাশের পুকুরে। ততক্ষণে তাঁর বাম হাত পা বুক পুড়ে গেছে।
প্রতিবেশী ডলি নাথ তখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। তিনি সেদিন হারান তাঁর বাবা অনিল বিহারী নাথসহ তিন স্বজনকে। প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন জানান, ‘বাইরে রাস্তায় পাহারাই ছিল পাকিস্তানি মিলিটারি। আর পাড়ার মধ্যে বিহারিরা ঢুকে এই তাণ্ডব চালায়। চোখের সামনে খুন হতে দেখল স্বজনদের।’
শুধু মধ্যম নাথপাড়ায় নয়, সেদিন হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল পাশের আবদুরপাড়ায়ও। সেখানে আজগর আলী, ইসহাক, বাবুল হক, সিদ্দিক আহমদসহ অনেকে। এই দুটি পাড়ায় সেই ৩১ মার্চ দুপুরে প্রায় ১০০ লোক নিহত হলেও অনেকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে ইপিআর সদস্যদের পরিচয় জানা যায়নি। শুধু হত্যা নয়, লুটতরাজও করেছিল খুনিরা। আর পুড়িয়ে দিয়েছে ঘরবাড়ি।
এর পরে যখন এইসব হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল, হত্যাকাণ্ড ক্রমশ এগিয়ে চলল—টেকনাথ থেকে তেতুলিয়ায়--সারা দেশে, হরিপদ, দুলালচন্দ্র, বাদলচন্দ্র থেকে বুড়ো ক্ষীরোদ বাঁশি, আজগর আলী অথবা প্রাণবান ইসহাক-বাবুলকে মৃত করা হল, সেই মৃত মানুষের সংখ্যা ৩০ লক্ষের দিকে দ্রুত এগিয়ে গেল, আর পাকবাহিনীর সহযোগী রাজাকার, আল বদর, আল শামসরা মেশিন গান, কামাল, মর্টার, শেল আর দেশি কিরিচ কড়াল নিয়ে পাকবাহিনীর পাশাপাশি ধেয়ে যেতে লাগল, তখন নিরুবালা দেবী চেতন-অচেতনের বাইরে। সবাই তখন ভিটেমাটি ছেড়ে নেমে গেছে পথে। তিনিও হাঁটছেন তাদের সঙ্গে। সঙ্গে কচি ছেলে দুটো। আগুনে পোড়া মেয়েটি আসেনি। এক মুসলমান পরিবার তাকে রেখে দিয়েছে। তার বাঁচার আশা নাই। নিরুবালা দেবীর পরণে ছেলের সেই রক্তে রাঙা শাড়ী। সারা পথে সেই শাড়িটি খোলেননি। কারো অনুরোধও শোনেননি। তিনি এইভাবে স্বামী সন্তান শ্বশুর মৃতপ্রায় একমাত্র মেয়েকে রেখে দেশত্যাগে বাধ্য হলেন।
আবার ভিয়েতনামে : কিম ফুক থেকে পৃথিবীর মেয়ে
------------------------------------------------------
এসোসিয়েটস প্রেসের সাংবাদিক নিক অট নাপাম বোমায় পোড়া কিম ফুককে হাসপাতালে রেখে তার দায়িত্ব শেষ মনে করেননি। এই পোড়া মৃতপ্রায় মেয়েটি তার মনের মধ্যে সব সময় ছিল। তিনি বারবার ছুটে গেছেন হাসপাতালে। তার বাবা মাকে খুঁজে বের করেছেন। মেয়েটিকে পৌঁছে দিয়েছেন পড়ার জন্য বই, ভাল লাগার জন্য উপহার। যুদ্ধে সর্বস্বহারানো এই পরিবারের জন্য খুলেছেন একটি ফান্ড। জোগাড় করেছেন টাকা পয়সা। নিকের তোলা ‘তাড়া খাওয়া ছটন্ত মেয়ে কিমের ছবিটি’ এসেসিয়েটস প্রেসের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে পৌঁছে দিয়েছেন। এই ছবিটি নিককে এনে দেয় পুলিৎজার পুরস্কার। দুনিয়া জোড়া খ্যাতি পায় নিক। দুজনের জীবনটাই পাল্টে যেতে শুরু করে। এই ছবির মাধ্যমেই কিমের চেহারাটি মানুষের মনে গেঁথে যায়।
সে সময়ে কিমরে শরীরে ছিল অসহ্য যন্ত্রণা। সতের বার অস্ত্রাপচার করা হয়েছে। তাকে পাঠানো হয়েছে চিলড্রেন প্লাস্টিক সার্জারী হাসপাতালে। তার মা গভীর মমতায় পাশে বসে বসে শরীরের ও মনের দিক থেকে সেরে উঠতে সাহায্য করেছেন। এই মৃত্যুর সঙ্গে একটা পাঞ্জা লড়াই করছে ছোট্ট কিম ফুক। তখন এই সেরে ওঠার লড়াইটা নিয়ে ফুটেজ করা হয়েছে। মেয়েটি এই কষ্টের মধ্যে বলে উঠেছে, আমি বেঁচে উঠলে ডাক্তার হব। মেয়েটির নাম কিম ফুক। ভিয়েতনামী এই কাম ফুক শব্দটির অর্থ সোনালী সুখ। তখন জানা যায়—সেরে উঠতে উঠতে যুদ্ধে পোড়া মেয়েটি কালো দুঃখের বদলে সোনালী সুখের দিশা দিতে চায় ।
দশ বছর পরে কিম ফুক হো চি মিন সিটিতে প্রি মেডিকেল কোর্সে ভর্তি হয়েছে কিম ফুক। সে সময় এক ডাচ সাংবাদিক ভিয়েতনাম সরকারকে অনুরোধ করে ছবির পোড়া মেয়েটির খোঁজ খবর জানাতে। সরকার এক বছর চেষ্টা করে তার সন্ধান পায়। ডাচ সাংবাদিক কিমের জীবন নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি করে। আবার পৃথিবীতে কিমকে নিয়ে সাড়া পড়ে যায়। কিমের খ্যাতি বেড়ে যায়। সরকার কিমের পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। তাকে যুদ্ধের জাতীয় প্রতীক হিসাবে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চায়। তার দৈনন্দিন কাজের উপর খবরদারি শুরু করে। পাশাপাশি সারা পৃথিবীর সংবাদ মিডিয়ার আগ্রহ আর সরকারী নজরদারী তাকে ক্লান্ত করে।
১৯৮৫ সালে হোচি মিন সিটিতে ভিয়েতনাম যুদ্ধের দশ বছর পূর্তি উৎসবে সারা পৃথিবীর সাংবাদিকরা জড়ো হয়েছিল। তখন সবার কাছে কিম ফুক সেলিব্রেটি। তাকে সবাই খুঁজতে থাকে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভিয়েতনাম সরকার তাকে সরকারী সেলিব্রেটি হতে অনুরোধ করে। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্টের তিনটি প্রধান সংবাদসংস্থা কিমের সাক্ষাৎকার প্রচার করে। পৃথিবীব্যাপী মানুষের দাবীর মুখে ভিয়েতনাম সরকার তাকে আবার পড়াশুনা করার অনুমতি প্রদান করে। সরকারের তত্বাবধানে তাকে কিউবা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করতে পাঠানো হয়। ১৯৮৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানায় এক মার্কিন পীস গ্রুপ। ভ্রমণের সব আয়োজন যখন চূড়ান্ত তখন কিমের যাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। তারা বলে, যারা তোমাকে বোমা মেরেছে তুমি তাদের দেশে যেতে পার না।
লস এঞ্জলেস পত্রিকা কিমের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশিত করে। আর্টিকেলটি সারা পৃথিবীতেই আলোচনার ঝড় তোলে। তখন আমেরিকা থেকে শতাধিক ভিয়েতনাম ফেরৎ সৈন্য তাকে চিঠি লেখেন, আমাকে ক্ষমা করুন কিম ফুক। আমি তোমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী
কিউবা বিশ্ববিদ্যালয়ে সে সময়ে কিমের পরিচয় হয় বুই হু তোয়াণের সঙ্গে। বু তার সহপাঠী। তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সরকার কিমকে বিয়ের হানিমুন পালনের জন্য মস্কো যাওয়ার অনুমতি প্রদান করে। এই সুযোগে কিম দেশ থেকে পালিয়ে কানাডতে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করে। সারা পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধ বিরোধী সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
কিম এখন দুটো সন্তানের মা। আর জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত।
আবার বাংলাদেশে, ফিরে দেখা খুকিরানী বৃত্তান্ত
------------------------------------------------
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসম্বরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর নিরুবালা দেবী দেশে ফিরে আসেন দু সন্তানসহ। বাড়িটি তখন শ্মশান। শ্বশুর, স্বামী আর দুই পুত্রের হাড়। আগুনে একমাত্র মেয়ে খুকিরানী প্রতিবেশির বাড়িতে থেকে মরতে মরতে বেঁচে আছে। এই পাকবাহিনীর শ্বাসরোধী গণত্যার কালে মেয়েটি কোনো চিকিৎসা সেবা পেয়েছিল কিনা জানা যায় না। তার কোনো খবর পত্রিকায় পাওয়া যায় নাই। তার কোনো ছবিও পৃথিবীর কোনো সাংবাদিকের ক্যামেরায় ওঠেনি। কেউ জানেই না কিম ফুকের মত যুদ্ধের আগুনে পোড়া একটি মেয়ে বাংলাদেশে আছে। মা নিরুবালা ফিরে এলে খুকুরানী ঘরের অন্ধকারে সেঁধিয়ে যায়। তার লেখাপড়া আর হয়নি। তার বিয়েও হয়নি।
ঘটনার ৪০ বছর পেরিয়ে গেছে। খুকি রানীর জন্য কোনো নিক আট আসেননি। প্লাস্টিক সার্জন ডঃ মার্ক গোর্নির দেখা মেলেনি। খুকিরানীর জীবনে আর নো লেখাপড়া। নো মিডিয়া। নো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। নো ফান্ড। নো দাতা গোষ্ঠী। নো রাষ্ট্র। নো পুলিৎজার। নো জাতিসংঘ। নো আলো। অনলি অন্ধকার।
এর মধ্যে নিরুবালা দেবী মারা গেছেন ২০০৮ সালের ২ মার্চ। এর মধ্যে জাতির জনককে হত্যা করা হয়েছে। রাজাকাররা মন্ত্রীমিনিস্টার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরে আবার স্বাধীনতার পক্ষবিপক্ষ কি? মেহেরজান ছিঃনেমা এসে বলছে, সব ভুলে যাও বাপা। পাকিদের সঙ্গে পুনর্মিত্রতা করো। এর মধ্যে খুকি রানীর ছোটো ভাইটি মারা গেছেন।
এর মধ্যে ভিয়েতনাম যুদ্ধে পোড়া কিম ফুক জাতিসংঘের শান্তির দূত। আর আমাদের একাত্তরে পোড়া খুকিরানী, কী বলেন—এসব বানানো কাহিনী, সে আবার কে, ধুৎ।।
--------------------------------------------------------------------------
কিম ফুকের সাক্ষাৎকার দেখুন : লিংক
আমাদের কাছে খুকি রানীর কোনো ছবি নেই। নেই কোনো ভিডিও সাক্ষাৎকার। কারো কাছে আছে কি? পেলে সেটা সংযোজন করা হবে।
মন্তব্য
......
এরকম ঘটনা একটা দু'টা নয়। শত শত, হাজার হাজার আছে। আর এই যে চট্টগ্রামের বিহারীদের কথা বললেন, এরা এখন আটকে পড়া পাকিস্তানি হিসেবে দক্ষিণ খুলশির পিছনে (পাহাড়তলি মনে হয়, ভূলে গেছি এখন) ক্যাম্পে থাকে আর বিদেশি সমবেদনা নিয়ে থাকে। কর্ম সূত্রে সেখানে গেছি, দেখেছি এদের মত বিদ্যুৎ চোর আর দুইটা নেই। আবার অবৈধ সংযোগ কেটে দিলে থানা থেকে সাবধান করা হত যে সেটা আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে যেতে পারে। এদের নৌকা ভরে বঙ্গপসাগরে ভাসিয়ে দেয়া দরকার, নৌকা বেয়ে পাকিস্তান চলে গেলেই পারে।
আমাদের খুকু রানীরা হারিয়ে যায় মহাকালের স্রোতে।
সব ভুলে যাওয়ার কঠিন রোগটা মনে হয় শুধু আমাদেরই আছে।
------------------------------
একা পাখি
(হায় সেলুকাস! কী বিচিত্র, না!)
পড়ে অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলাম। প্রাণপণে বিশ্বাস করতে চাই এসব কিছু ঘটেনি, কিছুই ঘটেনি, সব বানানো গল্প।
আমাদের খুকি রানীরা এত অভাগা কেন? কেন শুধু এক সীমাহীন অন্ধকারে ঢাকা তাঁদের জীবন? প্রকৃতির এ কেমন বিচার? ধিক্কার জানাই আর বিচার চাই যেসব পশুদের যারা ধর্মের নামে এতবড় অধর্ম করেও পার পেয়ে গেল। ধিক সেইসব ধর্মান্ধ নরপশুদের! আর ধিক আমাদের ক্ষমতালোভী নষ্ট রাজনীতিবিদদের, যাদের কারণে খুকি রানীদের আজকের এই অবস্থা!
কুলদা রায়, আমি খুব শান্তিবাদী মানুষ।
মৃত্যদন্ড সমর্থন করি না।
কিন্তু এই সব চোখের সামনে ভেসে ঊঠলে মনে হয় শান্তির খেতাপুড়ি!
পরশুরামের কঠোর কুঠার দিয়ে এই বর্বরতার প্রতিশোধ নেই।
ভিয়েত নামের ঐ শিশুটির উপড় ফসফসার বোমা ফেলা হয়েছিল যুদ্ধের বিমান থেকে।
আর খুকিরাণীর ভাই-বাবাকে একেবার সামনে থেকে ....
যুদ্ধের সময় বালক ছিলাম অনেক ঘটনা কথকদের মুখে শোনা, কিছু নিজের চোখে দেখা। তাই নিয়ে যখন লিখি
তখন মনে হয় এত বর্ব হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা মানুষ বিস্বাশ করবে তো!
সত্যিই অবিস্বাশ্য এত পাষণ্ড মানুষ কী করে হয়!
সব কিছু বাদ দিয়ে এই বর্বরতাগুলোর একটা আর্কাইভ রাখুন।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
আমি খুব বেশি আবেগপ্রবন নই। কিন্তু চোখের পানি তো আটকানো গেল না...
কিছু বলার নেই।
...........................
Every Picture Tells a Story
এ বিষয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে কিছু আশা করা কি আসলেই শিশুসুলভ বাতুলতা?
কাঁদালেন...
পড়ার পর অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।
..................................................................
। ২৫ শে মার্চের ব্যাপারটা মনে হয় মেজর রফিকে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বইটিতে একটু অন্য ভাবে উল্লেখ আছে, সেখানে মেজর জিয়া অস্ত্র খালাসে সাহায্য করেন, কারণ পাকিস্তানিরা যে এমন আক্রমণ করতে পারে তারা সেটা কল্পনাই করেন নি, কিন্তু মেজর রফিকের ধারনা ছিল এমনটা ঘটতেও পারে।
facebook
সাথে আছি,আরও জানতে চাই, লিখতে থাকুন ..
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
কিছু বলার ভাষা নেই।
_____________________
Give Her Freedom!
কিমের কাহিনী আগেই কিছুটা জানতাম; তবু লেখাটি পড়ে আবারো চোখ ভিজে উঠল। আর খুকিরানীর কাহিনী এই লেখা থেকেই প্রথম জেনেছি! কি বলব! শোকের চেয়েও বেশী ক্ষোভ জেগে উঠছে মনে! পাশাপাশি, একটা অপরাধ-বোধও কাজ করছে! খুকিরানীর জন্য কিছু করতে চাইছে মন! কিন্তু কোথায় পাব তাকে? তাকে তো আমরাই হারিয়ে যেতে দিয়েছি!
আপনার এ কথার মধ্য দিয়ে, আধুনিক মিডিয়া-নির্ভর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষা, শান্তি প্রচেষ্টা বা ন্যয়ব্যবস্থার অন্তঃসারশূন্যতা প্রকটভাবে ধরা পড়েছে।
পরিশেষ, ধন্যবাদ এই মর্মস্পর্শী লেখার জন্য। আশা করি, আমাদের চেতনার দ্বার জাগ্রত হবে!
আমেরিকার সাথে যুদ্ধ হলে প্রচার প্রচারনা বেশী হয়। আমাদের যুদ্ধ হয়েছিলো এলাকার আরেক ফকিরের সাথে। আমাদের খুকুরানীরা এতো প্রচার পাবে কেমন করে? ইরাক-আফগানিস্থানের বেশ কিছু নারী-শিশুদের আমেরিকায় চিকিৎসার খবরও বেশ প্রচার পেয়েছে। যুদ্ধে একেকটা দেশ গুড়িয়ে দেয়ার পরে আমেরিকানরা নিজেদের সেলফ ডাউট ঢাকার জন্যে এরকম হাই প্রোফাইল ফিল গুড স্টোরী নিয়মিতই করে।
কাঁদালেন দাদা
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
অস্ত্র খালাশ সংক্রান্ত ব্যাপারে অন্য রকম জানতাম।
যাই হোক, অনেক ভাল লেগেছে।
লেখা অনেক ভাললেগেছে। চালিয়ে যান। অন্তত খুকিরানীদের মনে করতে পারব।
সব খুকিরানীর জন্য রইল
নতুন মন্তব্য করুন