গত পরশুদিন (রবিবার) চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। আবারও। এই নিয়ে চারবার, চাকরি জীবনে। তবে আগের চাকরি গুলো ছাড়বার পেছনে কারণ গুলি ভিন্ন রকম ছিল। এইবার চাকরি ছাড়ার কারণটা টোটাল আলাদা। আজ এই লেখাটা আমি আমার হোম সিটিতে বসে লিখছি। আজ আমি আগরতলা ছেড়ে বাসায় চলে এলাম। কারণ আমার পরিবার। এই মুহূর্তে আর বাইরে জীবন কাটানো আমার পক্ষে অসম্ভব। মা এবং বাবা আর ছোট ভাইকে নিয়ে আমার পরিবার। বাবা ও মা অসুস্থতার এমন একটা জায়গায় পোঁছে গেছে যে ছেলে হিসেবে আমি আর বাড়ির বাইরে থাকার মতো পরিস্থিতিতে নেই। এবং আজ থেকে পাঁচ বছর আগেই আমার বাসায় চলে আসা উচিত ছিল। যা আমি করিনি। এটা আমার জীবনের বিরাট বড় ভুল।
তারপর পাব্লিক সেক্টারে কাজ করার স্বাদ আমি তা ভালো ভাবেই বুঝে গেছি! কেরিয়ারের ‘ক’- নেই সেখানে। বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যে মাস্টার ডিগ্রি করার পর ভেবেছিলাম কলেজে টিচারি করে লাইফ কাটাব। না, তা হল না। শুরু করলাম প্রাইভেট স্কুল এ সাবজেক্ট টিচার এর জব দিয়ে। মাইনের কথা না বলাই ভালো! তারপর মাথায় পোকা ঢুকল। চিত্র পরিচালক কিংবা সাংবাদিক হবো। তারপর এদিক ওদিক না তাকিয়ে আবার ভর্তি হয়ে গেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। জার্নালিজম এন্ড মাস কমিউনিকেশন নিয়ে। টানা এক বছর শেষ। বাকি আর একবছর। তারপর......... প্রফেসারের সাথে ব্যক্তিগত বিরোধের নিরিখে আমার নম্বর(পরীক্ষার মার্কস) নিয়ে দু’নম্বরি করা হল। আমি মানতে পারলাম না, অনেক প্রতিবাদ করলাম, কিন্তু সিস্টেমের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারলাম না। অবশেষে কোর্স অর্ধ পথে থামিয়ে দিয়ে আমি বিদায় নিলাম। আমার জীবনের একটা বছর জলাঞ্জলি দিলাম। মজার বিষয় সেই প্রফেসার আমার থেকে বয়সে ছোট!! জীবনে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি দিনের পর দিন, একবারের জন্যও সিভিল সার্ভিস কিংবা পাব্লিক সার্ভিস এর পরীক্ষা গুলুতে বসার কথা মাথায় আনিনি। বাড়ি থেকে বাবা মা কোন দিনিই আমার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। চুপচাপ সহ্য করে গেছেন, আর তার উপর আমার জন্য খরচ তো করেই গেছেন। আমি আমার পরিবারের কথা একবারের জন্যও চিন্তা করলাম না। বছরে একবার কি আধবার বাড়িতে আসতাম। এইভাবেই কাটিয়েছি গত বারোটা বছর! একের পর এক উৎকট সিদ্ধান্ত। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে মাথাটা আরও বিগড়ে গেলো। কোনরকমে মেনেজ করে একটা সংবাদপত্রে নাম কে ওয়াস্তে সেলারি নিয়ে ঢুকে পড়লাম। তখন বাবা একবার বলেছিল, - বাবা আর এসবে কি হবে, বাড়ি চলে আয়, এখানে এসে সরকারি চাকরির জন্য ট্রাই কর, আশা করি কিছু একটা হয়ে যাবে। কি বলব, আমি শুনিনি। বাবার সেদিনের কথায় নির্দেশ ছিলোনা, আকুলতা ছিল। আমি পাত্তা দেই নি। চোখে তখন আমার সর্ষের ফুল। আমি সাংবাদিক হবোই হবো!
তারপর............... থোড় বড়ি খাড়া আর পুরোনো পাজামা। আর আমি জলে ভাসতে লাগলাম। এবং কিছুদিন পর থেকেই শুরু হল আমার নরকদর্শন পর্ব। সেই ল্যাং মারামারির ঠেলায় আমার আবার চাকরি থেকে ইস্তফা! আবার আরেকটা- আবার ইস্তফা। তারপর ...... গত পরশুদিন আবার শেষবারের মতো শেষ চাকরিটাও ছেড়ে দিয়ে এলাম। তবে আমার শেষবারের ছাড়া কাগজটায় আমি কোরেস্পন্ডেন্স হিসেবে কাজ করবো।
নিজেই বলছি ছাত্র হিসেবে আমি এতটা খারাপ ছিলাম না, অন্য কিছু ট্রাই না করে একটা জেদ নিয়ে পড়েছিলাম। হুম, শেষ পর্যন্ত আর কি হল ? এই চাকরি জীবনের তিন চার বছর আমার( থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখবো এবার জগতটাকে) ‘জগত’ দেখা হয়ে গেছে। আর না , এইবার ঘরের ছেলে ঘরে... তবে বড্ড দেরি করে ফেললাম.....
২
এত দৌড়ঝাঁপের ভেতর লিখতে বসার সুযোগ আর হয়নি। তাই আজ লিখতে বসলাম। যাকগে, আর মন খারাপের কথা বলছি না। এইবার আবার সফরের শুরু।
ডুম্বুরভ্যালীতে পৌছানোর জন্য আমার মনের উত্তেজনা ছিল চরমে। প্রথমত গোমতীর ওয়াইল্ড লাইফ সেঞ্চুয়ারি, তারপর গোমতী হাইড্রো ইলেকট্রিসিটি প্রোজেক্ট। একটা কথা যাওয়ার আগে মাথায় এসেছিলো। যদি একটা ডকুমেন্টারি বানানো যায় এর উপর তো কেমন হবে। ভাবার মধ্যে আর কাজ করার মধ্যে অনেক তফাত। সবই ঠিক আছে, কিন্তু ক্যামেরা পাবো কোথায় ? কি করব ভেবে উঠতে পারছিলাম না। তবে শেষ পর্যন্ত আমাকে হতাশ হতে হল না। কোথাও শুনেছিলাম গন্তব্যে যাওয়ার সদিচ্ছা থাকলে নাকি পথ এমনিতেই এসে ধরা দেয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হল। এক জুনিয়রের কাছে একটা থার্ড গ্রেড যোগ্যতা সম্পন্ন ভিডিও ক্যামেরা পেয়ে গেলাম, টীভিসির পাতি প্রোডাক্ট সেই ক্যামেরা। ওই বেচারিও সেই যন্তরখানা কিনে পস্তাচ্ছিল, তাই বোধ হয় আমার উপর দয়া হল। হা হা হা হা হা হা ... যাই হোক এটাই ছিল আমার কাছে সোনায় সোহাগা। ক্যামারা তো হয়ে গেলো, এইবার সঙ্গী দরকার। বন্ধু বান্ধবদের অনেকেই প্রস্তাবটা শুনে কেউ সরাসরি কেউ ইনিয়ে বিনিয়ে নাকচ করে দিল। কিন্তু আমার দু’জন লোক অন্তত প্রয়োজন। তারপর হঠাত আমার দুই নিষ্কর্মা বন্ধুর কথা মনে পড়ল। অনেক দিন হল ওদের সাথে যোগাযোগ নেই, আমার স্কুল ফ্রেন্ড। দু’জনেই এই আধবুড়ো বয়সে বাপের মাথার উপর বসে রুটি ঝাড়ছে। আমার বলা মাত্রই উৎসাহের সহিত এক পায়ে দাঁড়িয়ে রাজি হয়ে গেলো। হা হা হা হা, ওদের চোখে আমি বিরাট মাপের কোন কিছু করতে যাচ্ছি! ওরা এর সঙ্গী হতে পারায় গর্ব বোধ করছে!! যাক, আমার চিন্তা খানিকটা দূর হল।
তারপর...... আমার পথ চলা শুরু। তিন দিনের সফর সঙ্গী বন্ধু বিমল এবং সুকান্ত। একটা গাড়ি হায়ার করলাম। আগরতলা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার জার্নি করে সোজা ডুম্বুরভ্যালি পৌছালাম।
ছোট্ট একখানা ক্লিপ
জীবন যে কত রঙ তামাশা দেখায় তা দেখে নিতে সত্যি আর ভালো লাগেনা।
হ্যালো লাইফ, আমি তোমাকে সালাম জানাই, আর কত দেখাবে, হা হা হা হা...... চল আমিও তোমাকে দেখে নেবো।
আমার শহর
অক্টোবর, ১১, ২০১১
মন্তব্য
সাবাশ! শেষ লাইনটা সবচাইতে পছন্দ হয়েছে! লড়াই চলুক
তানিম ভাইজান, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ডাকঘর | ছবিঘর
শেষ লাইনের জন্য স্যালুট!
ধন্যবাদ ভাই নিটোল
ডাকঘর | ছবিঘর
ফাইটিং স্পিরিট ভালো লাগল
ধন্যবাদ রিশাদ_ময়ূখ। এইতো জীবন দাদা
ডাকঘর | ছবিঘর
'তাপস ফটোগ্রাফি' খুবই চোখ জুড়ানো
জীবনের নতুন চ্যাপ্টার শুভ হোক, সফল হোক। লাইফকে একহাত 'দেখে নেয়ার' প্রত্যয় ভালো লাগল।
"Life is a nasty bitch up-close; and I have to fight back with this bitch no matter what"...এই হলো লাইফের সাথে আমার সার্বক্ষনিক বোঝাপড়া
উচ্ছলা
ধন্যবাদ।
\"Life is a nasty bitch up-close; and I have to fight back with this bitch no matter what\".
দ্যাটস এ গুড ওয়ান। ব্যাং ইট। লাইফ...
ডাকঘর | ছবিঘর
মাঝে মাঝে মনে হয়__
"আমার সাজনো বাগান শুকিয়ে গেল"
কিন্তু পরক্ষনেই একটু সাহস সঞ্চয় করে লড়াই করতে নেমে পড়ি "টিনের তরবারি" হাতে নিয়ে___
বাস্তব বড়ই কঠিন..........................................................................................................................
ডাকঘর | ছবিঘর
তাপস দা' আপনি অতিশয় বিচলিত আছেন, কোন সন্দেহ নাই, মাথা ঠান্ডা করেন। বাবা-মায়ের কাছে যেয়ে থাকার সিদ্ধান্তে সালাম, আমার মত অভাগারাই দূরে দূরে থাকে। আমি যে কত কি মিস করতেছি তা আর কহতব্য নয়। আপনার গ্রামে যাওয়ার চিন্তাতে সাপোর্ট, আমারো মাঝে মধ্যে সব ছেড়ে ছুড়ে চাষ-বাস করতে ইচ্ছা হয়। শেষতক আপনার লেখা পইড়া মনে হইল আপনি হইলেন ফাইটার গোত্রের লোক। সুতরাং সমুদ্রে পেতেছি শয্যা শিশিরে কি ভয়? কিপিটাপ। আপনার ফাইটিং স্পিরিটে
বলতে ভুলে গেছিলাম, ছবি গুলা ভালৈছে।
কি আর বলি কল্যাণ ভাই, এই তো জীবন। তাই আপনার ভাষায় বলে যাই
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আর আপনিও একদিন বাবা - মায়ের কাছে ফিরে আসুন, এই কামনা রইলো। চাষ-বাস করার ইচ্ছেতে
ডাকঘর | ছবিঘর
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স, খুব ভালো লাগলো জেনে তাপসদা, আমার খুব পছন্দের সাবজেক্ট, কত ইচ্ছা ছিল এর উপর পড়বো, সে আর হল কৈ!!!
আর শুনেন এত মন খারাপ কৈরেন নাতো, যে কাজ করতে ভালো লাগে তাই করেন। জীবনযুদ্ধে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, এর কাছে পরাজিত হৌয়া যাবে না কিছুতেই, যেমন আপনি হন নি।
------------------
ফড়িং আর শেষের ছবিটা খুব সুন্দর।
_____________________
Give Her Freedom!
অলি, ভাই তুমি ভালো থেকো। সাহিত্য নিয়ে মাস্টার্স না করতে পারলে কি হবে, তোমার মনন এবং চেতনায় জেগে আছে ভাষার কলতান।
স্বপ্ন মাটির সঙ্গে মিশে যায়
প্রতিদিন
জেগে থাকে
নিঃসঙ্গ শূন্যতা
অদ্ভুত ভূতুরে চেতনা নিয়ে
বেঁচে থাকে প্রতিক্ষণ।
শুধু বাতাসে
ভেসে থাকে
চাপা কান্নার আওয়াজ।
নিরব নৌকার উপর
মরচে পরা জলে
শান্তি খুঁজে
দ্বিখণ্ডিত রাত্রি...
ডাকঘর | ছবিঘর
জীবন...! সে জীবনকে সময়ের সাথে মানিয়ে চলতে হয়।
কারণ, জীবন, সময় আর সামাজিকতা থেকে আমরা আলাদা
হতে পারব না কখনও...
ভালো থাকুন।
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
ধন্যবাদ আফসার ভাইজান। আপনিও ভালো থাকুন।
ডাকঘর | ছবিঘর
যুদ্ধে খানিকটা উৎসাহ যোগানোর জন্য নিজের কিছু কথা শেয়ার করতে ইচ্ছে হল। আমি ছাব্বিশে পা দিয়েছি, আর এটা আমার পঞ্চম কামলাখানা। এই পাঁচটা জব আমকে যে কত বেশি শিখিয়েছে, তা শুধু আমি জানি। কর্পোরেট ব্যাকবাইটিং সহ্য করা থেকে শুরু করে, কুকুর শ্রেনীর বস, লোভ, ক্ষোভ, চোখে জল জমিয়ে মুখে হাসি ধরে রাখা...সব...সব।
তবু, হাঁ তবু, তবু আমি হার মানিনি...আমাদের কি হার মানলে চলে?...আমাদের তো বাঁচতে হবে, তাইনা!
- সংগ্রামকে কুর্ণিশ
ডাকঘর | ছবিঘর
তাপস,
আমি সরকারী, বেসরকারী দুইধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে দেখেছি পলিটিক্স সব জায়গায় আছে. সুতরাং যতোদূর সম্ভব মানিয়ে নিয়ে এবং গা বাচিয়ে কাজ করে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে.
বাবা-মার দেখাশোনা করার সিদ্ধান্তটা ভাল. তবে প্রয়োজনে দূরে যেতেও হতে পারে.
ভেবেচিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার.
ছবি এবং লেখা ভাল লেগেছে.
আপু, তোমাকে ধন্যবাদ
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ দ্যা রিডার
ডাকঘর | ছবিঘর
চল আমিও তোমাকে দেখে নেব ।
facebook
অনু, ভাই কাকে দেখে নেবে - আমাকে, এই রে...... চল বুঝলাম দুই পাঁঠায় মন ভরে নি , এই নেও আরেকটা দিলাম। আর বায়না নয় খোকা, কেমন
ডাকঘর | ছবিঘর
পড়লাম। ভাল লাগলো...
কর্ণজয় দাদা অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
ডাকঘর | ছবিঘর
ভালো লাগলো। অনেক আগে হঠাৎ ক্ষণস্থায়ী হতাশা থেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম-
নিজের অজান্তেই এই অসাধারণ স্ট্যাটাসটা দিয়ে ফেলেছিলাম। পরে এক বয়োজ্যোষ্ঠ বন্ধু মন্তব্য করেছিলো,
বন্ধুর করা সেদিনের সেই মন্তব্যটা আজ আমি আমার বন্ধু তাপসের উদ্দেশে সমর্পণ করলাম। হোক না ধার করা কথা, কিন্তু সত্যি তো!
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
সসম্মানে নিলাম দাদা।
ডাকঘর | ছবিঘর
খুব ভাল লালো , আর আপনার ফটোগ্রাফার পরিচয় পেয়ে ভাল্লাগলো
ধন্যবাদ নীরব কবি। তবে আমি ততটা প্রোফেস্ন্যাল ফটোগ্রাফার নই। একসময় কাজের প্রয়োজনে তুলতে হতো। তবে ফটোগ্রাফির প্রতি সুতীব্র আকর্ষণ আছে।
ডাকঘর | ছবিঘর
অনেক ভাল লাগল দাদা, লেখা্ আর ফটোগ্রাফি।
অনেক ভাল লাগল দাদা, লেখা্ আর ফটোগ্রাফি।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ডাকঘর | ছবিঘর
প্রার্থনা করি যুদ্ধে জয়ী হোন।
লেখা আর ফটোগ্রাফি দুটোই চমৎকার ।
নতুন মন্তব্য করুন