কিছুদিন আগেও এ প্রশ্নটির কোনো সদুত্তর বিজ্ঞানীদের কাছে ছিলো না। তবে ধীরে ধীরে অনেক কিছুই বেরিয়ে আসছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন প্রশ্নটির উত্তর আমাদের মস্তিষ্কে লুকিয়ে আছে। আসলে আমরা যখন পুরনো কোনো তথ্য কিংবা স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করি তখন মস্তিষ্কের যে অংশটি সক্রিয় হয়ে ওঠে ঠিক সেই অংশটিই আবার আমাদের চোখ দু’টো থেকে প্রাপ্ত ডাটা বিশ্লেষণ করে।
ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করি। যখন আমাদের চোখ খোলা থাকে অর্থাৎ যখন আমরা কোনো দৃশ্য দেখছি তখন আমাদের মস্তিষ্কের কিছু বিশেষ অংশ চোখ থেকে প্রাপ্ত ডাটাগুলোর ইনপুট নিতে থাকে। ফলে ঐ অংশটুকু যথেষ্ট ব্যস্ত থাকে। আবার আমরা যখন কঠিন কোনো প্রশ্নের উত্তর দেবার কথা ভাবি অথবা অতীতের কোনো দৃশ্যের কথা মনে করি তখন চোখ বন্ধ করে ফেলি যাতে আমরা নিজেদেরকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও দৃশ্যময় জগত থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলি। এর ফলে দু’টো লাভ হয়। এক, মস্তিষ্কে চোখ থেকে ইনপুট আসা বন্ধ হয়। আর, মস্তিষ্কের সেই বিশেষ অংশটি পুরনো স্মৃতি উদ্ধারের কাজে মনোযোগ দিতে পারে। ( সিলিংয়ের দিকে কিংবা আকাশের দিকে তাকানোও একটা সমাধান হতে পারে। কারণ তখন দৃশ্যের পরিবর্তনের সংখ্যা আমাদের আই-লেভেলে থাকা দৃশ্যের চেয়ে অনেক কম)
এ বিষয়টির ওপর একটি চমৎকার গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় অক্টোবর সংখ্যার ‘মেমরি এন্ড কগনিশন’ নামক জার্নালে। গবেষণাপত্রের লেখক আনেলিস ভ্রেডেভেল্ট, গ্রাহাম হিচ এবং এলান বাডেলী।
গবেষণায় প্রথমে একদল লোককে একটি টিভি অনুষ্ঠানের আট মিনিটের ক্লিপ দেখানো হয়। এরপর পাঁচ মিনিটের বিরতি দিয়ে তাদের প্রত্যেককে ক্লিপটিতে তারা কী দেখেছে আর শুনেছে তার খুঁটিনাটি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়। তবে তার আগে সবাইকে চারটি গ্রুপে ভাগ করে ফেলা হয়। প্রথম গ্রুপের স্বেচ্ছাসেবকদেরকে একটি বন্ধ কম্পিউটার মনিটরের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিতে বলা হয়। দু’নম্বর গ্রুপের সদস্যরা উত্তর দেয় চোখ বন্ধ করে। তৃতীয় গ্রুপের লোকজনকে কম্পিউটারের কিছু চলমান দৃশ্য দেখতে দেখতে প্রশ্নগুলোর জবার দিতে হয়। আর সর্বশেষ গ্রুপের ক্ষেত্রে মনিটরের পর্দা কালোই রাখা হয়, কিন্তু তাদেরকে অমনোযোগী করার জন্য বিদেশী এক ভাষার শব্দ শোনানো হয়।
ফলাফল ছিল মজার। যে গ্রুপের স্বেচ্ছাসেবকেরা কালো পর্দা দেখে উত্তর দিয়েছিল এবং যারা চোখ বন্ধ করে রেখেছিল, তারাই গবেষকদের বেশিরভাগ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছে। আর যারা মনিটরে দৃশ্য দেখতে দেখতে কিংবা বিদেশী শব্দ শুনতে শুনতে উত্তর দিয়েছে তারা অপেক্ষাকৃত কম সঠিক উত্তর দিতে পেরেছে। গবেষণাটি ইঙ্গিত করছে যে, আমরা মানুষেরা চোখ বন্ধ রেখে আসলে আমাদের সামনে দৃশ্যগুলো পরিহার করি যা আমাদের পুরনো স্মৃতি মনে করার ক্ষমতাকে বাধা দেয়।
গবেষণার আরেকটির মজার দিক খেয়াল করেছেন গবেষকেরা। যে গ্রুপের ক্ষেত্রে দৃশ্য দেখতে দেখতে প্রশ্ন করা হয়েছিল সে গ্রুপের সদস্যরা সেইসব প্রশ্নের ক্ষেত্রেই জটিলতায় পড়েছে যেখানে ক্লিপটির দৃশ্যগত খুঁটিনাটি স্মরণ করতে হয়েছে। আবার যে গ্রুপ বিদেশী ভাষা শুনেছে সে গ্রুপ ‘শাব্দিক ঝামেলায়’ পড়েছে অর্থাৎ ক্লিপের শব্দ সম্পর্কিত প্রশ্নে ফেল করেছে। ব্যাপারটা থেকে বোঝা যায়, আপনি যখন অতীতের কোনো মধুর দৃশ্যের স্মৃতি রোমন্থন করছেন তখন যদি আপনার সামনের দৃশ্যাবলী দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে তাহলে আপনার স্মৃতিচারণে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
তাই, এখন থেকে যদি জরুরী কোনো তথ্য স্মরণ করতে চান তাহলে উপরে তাকান কিংবা চোখটাই বন্ধ করে ফেলুন ( পারলে কানে তুলোও গুঁজে রাখুন!), কাজে দেবে।
( নোট: লেখাটি ‘সাইকোলজি টুডে‘ তে প্রকাশিত ড. আর্ট মার্কমেনের ‘Why Do You Close Your Eyes to Remember?’ নামক প্রবন্ধের ভাবানুবাদ।)
মন্তব্য
পরীক্ষার হলে এই থিউরি প্রয়োগ করতে গিয়ে ঘুমিয়ে না পড়ি আবার......
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
ও হ্যাঁ, সে ভয় তো আছেই!
বয়সের কারনে অনেক চর্চিত বিষয়ও সহজে স্মরন করতে পারিনা। এখন থেকে এই পদ্ধতি অনুসরন করবো।
ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রৌঢ়ভাবনা
আপনাকেও ধন্যবাদ।
শাফি।
হুম
কী ভাবছেন দাদা?
গবেষণাটা মজার।
টুইটার
আসলেই মজার। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
বাহ!
খাইছে, এই'নি সব কান্ডকারখানা। এইজন্যই তো বলি চোখ-কান বন্ধ রেখে সব কাজ কর
ডাকঘর | ছবিঘর
আমি তো চোখ বন্ধ করে ভাবি যাতে মাথা অন্যমনস্ক না হয়ে যায়, চোখ থেকে আসা নানারকম সিগনালকে প্রায়রিটি দিয়ে প্রসেস করতে গিয়ে। এরাও দেখছি মোটাদাগে তাই বলেছে।
কতকিছু জানা হয় সচলে এসে!
নতুন মন্তব্য করুন