সেদিন করে বাসে করে আসছিলাম। তখন কিছু ছাত্রের কথা শুনলাম, বি সি এস পরিক্ষা দিয়ে আসার পথে বাসে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের আর তাদের ছেলেদের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে। কারন একটাই, তাদের জন্য ৩০% কোটার জন্য অনেক যোগ্য ছাত্রও সুযোগ পাচ্ছেনা চাকরির। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সম্মানের পাত্র। কিন্তু সরকার এই মুক্তিযুদ্ধকে বানিয়ে ফেলেছে আমাদের সাথে বৈষম্য করার একটা মাধ্যমে। যেখানে সরকারি চাকরিতে দেশের সব চেয়ে মেধাবীদের থাকার কথা, সেখানে অনেক অযোগ্য লোকেরাও ঢুকে যাচ্ছে এই কোটা আর রাজনৈতিক বিবেচনায়। এসব অযোগ্য লোকেরা আগামী ৩০ বছর যেই সেবা দেবে, তার চেয়ে অনেক যোগ্য লোকেরা কি আরও ভাল সেবা দেশকে দিতে পারত না? আমরা সরকারি আমলাদের অযোগ্যতার অনেক সমালোচনা করি, কিন্তু তাদের নিয়োগ দেবার সময় যোগ্যতা কতোখানি প্রাধান্য পায়, সেটা নিয়ে কথা খুব কমই বলি আমরা। সব চেয়ে বড় কথা এত কোটা ব্যবস্থার কোন সাংবিধানিক ভিত্তি নেই, বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধা কোটার তো একেবারেই নেই! এ বিষয়ে অনেকেই বলেছেন, আকবর আলির মতে।
আমাদের দেশে বি সি এস এ সরকারি কোটা অনেকটা এই রকম, ৩০% মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান,(ভবিষ্যতে নাকি নাতি-নাত্নিরাও), ৫% উপজাতি, ১০% নারী, ১০% জেলা। তার মানে ৪৫% মাত্র মেধার জোরে আর বাকি সবাই কোটার জোরে ঢুকবে সরকারি চাকরিতে! সুত্র আসুন দেখি আমাদের সংবিধানের সাথে এটা কতটুকু মেলে।
সংবিধানের ১৯ নং অনুচ্ছেদে আছে,
সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবেন৷
সরকারি চাকরিতে তা কেমন মানা হচ্ছে কোটা ব্যবস্থা তা ভালই দেখাচ্ছে!
সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদে আছে,
সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।
কোটা আমাদের কি চাকরির ক্ষেত্রে সমান অধিকার দিচ্ছে? যদি আমরা এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সরকারের বিরুদ্ধে রিট করতে চাই, আমার ধারনা, অন্তত মুক্তিযোদ্ধার কোটার কোন আইনগত ভিত্তি থাকবে না।
সংবিধানের ২৮ নং অনুচ্ছেদে আছে,
কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না।
কিন্ত সরকারি চাকরিতে জন্ম পরিচয়ের জন্য কেউ ৩০% কোটা পাচ্ছে!
সংবিধানের ২৯ নং অনুচ্ছেদে আছে,
(১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।
(২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।
আমি মনে করি সরকারি চাকরিতে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সংবিধানের এই একটা অনুচ্ছেদই যথেষ্ট।
যদিও এই অনুচ্ছেদেই ৩টি বিশেষ ক্ষেত্র বলা হয়েছে,
(৩)(ক) নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে,
(খ) কোন ধর্মীয় বা উপ-সমপ্রদায়গত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবলম্বী বা উপ-সমপ্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান-সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হইতে,
(গ) যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরূপ যে কোন শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হইতে,
রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।
প্রথম অংশ দিয়ে জেলা কোটা, তৃতীয় অংশ দিয়ে নারী কোটা কোন ভাবে সমর্থন কড়া গেলেও সব চেয়ে বড় কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা কোন ভাবেই সাংবিধানিক ভিত্তি দেয়া সম্ভব না। যদিও আমি মনে করি উপজাতি ছাড়া কোন কোটাই থাকা উচিত না। কোটা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ছিল যারা পিছিয়ে পড়া অংশ তাদের সমান সুযোগ দেয়া। আজকাল মেয়েরাও ছেলেদের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই তাদের কোটার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা, এখন কোন জেলাই এতো অনগ্রসর নয়, যে জেলা কোটার প্রয়োজন আছে।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতির জন্য গৌরবের ব্যাপার, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সম্মানের পাত্র। কিন্তু সরকার কেন এই মুক্তিযুদ্ধকে আমাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বৈষম্য করার জন্য ব্যবহার করছে, তা আমার জানা নেই। সরকারি চাকরিতে অন্তত শুধু মেধার জোরে যদি নেয়া হত, আমাদের সরকারের কার্যক্ষমতা অনেক বাড়ত, সে বিষয়ে কোন কোন সন্দেহ নেই। আমাদের দেশে নাকি ৩২তম বি সি এস নাকি শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য হবে। এসব কম যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তারা আমাদের কত টুকু সেবা দিতে পারবেন, তারা আমাদের দেশকে কত ভাল সেবা দেবেন, তা যথেষ্ট সন্দেহর কারন। এই বি সি এস পরিক্ষার দীর্ঘসূত্রিতা আর মেধার যথাযথ মূল্যায়ন না হলে মেধাবী ছাত্ররা কখনই দেশে থাকতে আগ্রহি হবে না, এতে কোন সন্দেহ নেই। দেশের প্রশাসন আরও কর্মক্ষম করতে যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মচারী নিয়োগ দিতে হবে আর এজন্য কোটা ব্যবস্থার বিলুপ্তি আশু প্রয়োজন।
মন্তব্য
আপনার বক্তব্যের সাথে একমত। কোনদিন হয়ত শুনব রাজাকারের সন্তানদের জন্যও কৌটা রাখা হয়েছে। অবাক হবনা মোটেও। আপনার " উপজাতি " শব্দটা না লিখে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ লিখতে আরো ভাল লাগত। ধন্যবাদ।
মুক্তিযোদ্ধারা যদি গৌরবের ব্যাপার হন, আর সম্মানের পাত্রও হন, তাহলে তাদের বংশধরদের জন্য এই কোটা ব্যবস্থা নিয়ে এতো গোস্বা করার কী আছে ভাই? ওনারা যেই কাজটা করেছেন, সেটা না করলে আজকে যারা বাসে বসে তাদের তুলাধুনা করছে, তারা তো সরকারী কর্তা হিসেবে চাকরির স্বপ্নও দেখতে পারতো না। পেটে ভাত না থাকলে মুক্তিযোদ্ধা আর তাঁদের সন্তানেরা গৌরব আর সম্মান দিয়ে কী করবেন?
এই ব্যবস্থার একটাই সমস্যা, এটা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়টাকে কেনাবেচার একটা আইটেমে পরিণত করতে পারে। যদি সেটা সামাল দেয়া যায়, তাহলে এই ব্যবস্থার সমস্যা দেখি না। প্রচুর মুক্তিযোদ্ধা বিপুল দৈন্যদশায় জীবন কাটিয়েছেন, তাঁদের সন্তানেরা যদি অন্তত এইটুকু প্রতিদান রাষ্ট্রের কাছ থেকে পায়, সমস্যা কী? বরং এই দাবি করুন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা যেন মেধার পরিচয় দিতে বাধ্য থাকেন, ন্যূনতম একটা নাম্বার না পেলে যেন তাদের নিয়োগ দেয়া না হয়, খালি পদে পরবর্তী ব্যাচের মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নিয়োগ যাতে হয়।
ভাই, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতে আমার কোন সমসসা নাই, কিন্তু তাদের জন্য ৩০% কোটা রাখার কোন যুক্তি আছে? তাদের সন্তানদের জন্য পড়াশোনার ভাল ব্যবস্থা হোক। শুধুমাত্র লোক দেখানো সম্মান দেখিয়ে তাদের কি আমার যথাযথ সম্মান দেখাচ্ছি? তাছাড়া, যারা সরাসরি যুদ্ধ করে নাই, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে, অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে, তাদের কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এই কোটা ব্যবস্থা অনেক দুর্নীতিরও সুযোগ করে দিয়েছে। আমি এমন অনেক ঘটনা জানি, যে সন্তানের এই সুবিধা দেবার জন্য অনেকেই টাকা দিয়ে ভুয়া সার্টিফিকেট বের করেছে! অনেক কর্মকর্তা ২ বছর বেশি চাকরির জন্য দুর্নীতি করে এই সার্টিফিকেট নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেজেছে!
যারা সরাসরি যুদ্ধ করে নাই, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে, অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে, তাদেরও স্বীকৃতি দেয়া হোক, তাদের সন্ততিদেরও এই কোটা পদ্ধতির আওতায় আনা হোক।
আপনি যে উদাহরণ দিলেন, সেটা কোটা পদ্ধতির দোষ না, দুর্নীতির দোষ। কোটা পদ্ধতি না থাকলে কি পিএসসিতে দুর্নীতি হতো না?
মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা যে বাবার মত বুক চিতিয়ে দেশের জন্য লড়ে যাবে সেটা নিশ্চিত হবেন কি করে??
এই একই সন্দেহ তো মেধার পরীক্ষা দিয়ে যারা যোগ দেবেন, তাদের ক্ষেত্রেও খাটে, তাই না? তবে সরকারী কর্তারা দেশের জন্য বুক চিতিয়ে লড়ার যুগ মনে হয় বহু আগেই শেষ। ওনারা যাতে ঠিকমতো লড়েন, সেটা নিশ্চিত করার দায় সরকারের ওপর মহলের।
যে দেশে BCS পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট পর্যন্ত সব কিছুতেই ভেজাল সেখানে এই যুক্তিতর্ক অর্থহীন। তবে যদি মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা প্রকৃত মূল্যায়ণ করতে চাই একটি নির্ভুল মুক্তিযোদ্ধা তালিকাই হবে সর্বপ্রথম পদক্ষেপ।
মুক্তিযোদ্ধারা গৌরবের এবং সম্মানের সন্দেহাতীতভাবে। কিন্তু তাদের সম্মান দিতে গিয়ে যদি আমার পেটে দানাপানি জুটাতে না পারি তখন কিন্তু এই সম্মান দেখানো আমার পক্ষে সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ আছে।
কোটা মানেই বিশেষ সুবিধা, এখানে মেধার ব্যাপার খুবই অল্প। বিসিএস-এ এই কোটায় এমন সবাই চান্স পায় যার তুলনায় সাধারণ মেধায় অনেক ভালো নম্বর নিয়েও তাদের চান্স হয়না।
একটা উদাহরণ দিই- আমার দুই বন্ধু (একজন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধায় চান্স পাইনি, ওয়েটিংএ ছিল), মুক্তিযোদ্ধা কোটায় দুই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টপ সাবজেক্টে পড়াশোনা শেষ করেছে। তারা দুজনেই এখন আবার এই মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস প্রশাসনে কর্মরত। তাহলে কি হলো? তারা একবার মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স নিল আবার মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিসিএস-এ চাকরী পেল।
আমার তো মনেহয়, মুক্তিযোদ্ধা কোটা শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়ই দেয়া উচিত। তারপর তারা যদি পড়াশোনা করে অন্যদের সাথে কম্পিটিশন করার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারে তাহলে তাদের এই সরকারী চাকরী পাওয়ার অধিকার কতটুকু চিন্তা করা দরকার।
* নাম পেলাম না! *
১। এগুলো আসলে 'আমাদের' কোটা ব্যবস্থার দুর্বলতা। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। সামান্য কোটার ব্যাবস্থা করে যদি তাঁদেরকে সম্মান জানানো যায় তাতে আমি কোন দোষ দেখিনা। কিন্তু যেকোন কোটা ব্যাবস্থা মানেই এমন নয় যে শুধু কোটায় পড়লেই যোগ্য বিবেচিত হবেন বরং বেশীরভাগ ক্ষেত্রে একটা নূন্যতম যোগ্যতা পার করলেই কেবল কোটাধারী ব্যাক্তিরা নিয়োগ পাবেন। এই নূন্যতম যোগ্যতার স্কেল্টাকে একটু উপরে তুলে দিলেই আর অযোগ্য লোক ঢোকার সম্ভাবনা থাকে না। শুধু কোটাধারী হলেই চলবে না, তাকে মানসম্পন্নও হতে হবে। সমমান বা কাছাকাছি মানের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা প্রাধান্য পেতেই পারেন। এটুকু সম্মান বোধহয় তাঁদের দেয়া যায় কি বলেন?
২। মূল সমস্যা আসলে কোটায় নয়, সমস্যা আমাদের সিস্টেমে। হয়ত দেখা যাচ্ছে কেউ বাপ-চাচা-মামার জোরে গোয়া-যমদের রক্ত নিয়েও মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট যোগার করে ফেলছেন। আবার অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা চেষ্টা করেও পাচ্ছেন না একটা সার্টিফিকেট। ব্যাবস্থাপনা সুন্দর আর স্বচ্ছ হলে এই ব্যাবস্থায় কোন সমস্যা দেখি না। তবে কোটার পরিমাণটা বোধহয় একটু বিবেচনার দাবী রাখে। আপনার তথ্য থেকে যেনে বলছি, যেকোন পদের জন্যেই ৪৫% ই যদি কোটাধারী হন সেক্ষেত্রে আপনার আশংকা কিছু অংশে সত্যি হতেই পারে।
৩। আবারও সেই সিস্টেমের কথাই বলব। এগুলো তো স্বচ্ছ্বভাবে প্রদর্শিত কোটা। কিন্তু 'লীগ'কোটা 'দল'কোটা এভাবে যে আইনের বাইরেও শুধুই কোটার দৌরাত্ম। দেখবেন হয়ত ঘোষিত কোটার কারণে তাও কিছু সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, পিছিয়ে পড়া নারী বা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর লোকেরা সুযোগ পাচ্ছেন, তা না হলে ১০০% ই যে হাম্বালীক আর বিম্পি কোঠায় যাবে না, সে নিশ্চয়তা কে দেবে?
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
পোস্টের আলোকে - কোটা ৫৫%, মেধায় ৪৫%
৭১এ যারা সরাসরি যুদ্ধ করেছে , শুধু তারাই কি মুক্তিযোদ্ধা? যারা জীবনের ঝুকি নিয়ে তাদের সাহায্য করেছে তাদের কি কোন অবদান নেই? কিছু রাজাকার ছাড়া সবাই সেই সময়ে যুদ্ধ করেছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। আপনি শুধু সার্টিফিকেটধারিদের শুধু মুক্তিযোদ্ধা বলে তাদের সাহায্য করতে চান? বাকিদের কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে?
এই কোটা ব্যবস্থা অনেক দুর্নীতিরও সুযোগ করে দিয়েছে। আমি এমন অনেক ঘটনা জানি, যে সন্তানের এই সুবিধা দেবার জন্য অনেকেই টাকা দিয়ে ভুয়া সার্টিফিকেট বের করেছে! অনেক কর্মকর্তা ২ বছর বেশি চাকরির জন্য দুর্নীতি করে এই সার্টিফিকেট নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেজেছে! মোট কথা হল, এখন সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুরোই বৈষম্যমূলক, এটা উঠে যাওয়া উচিত!
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সম্মান দেওয়া আর দুঃখদুর্দশা দূর করার কোন পদক্ষেপ নাই, অথচ এই কোটা ব্যবস্থায় অসম-অব্যবস্থাপনা-অনীতির কারণে আজ সত্যই প্রশ্নের এটা সম্মুখীন।
কোটা অনেক ক্ষেত্রে আছে। নারীদের জন্য- এটা খুব প্রয়োজনীয়। যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের সময় ৫০+% নারীদের কোটা দেওয়া হয়(যতটুকু জানি), সেটা খুবই দরকারী। কিন্তু সমস্যা হল ৫০% কোটা পূরণ না হলে সিটগুলো ফাঁকাই রাখা হয়, অন্য যোগ্যদের দেওয়া হয় না। এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত অযৌক্তিক। বিষয়টি এমন হওয়া উচিত যে সর্বোচ্চ ৫০% কোটা নারীদের জন্য, যদি কোটা পূরণ করার মত প্রার্থী না পাওয়া যায় তবে তা অন্য কোটামুক্ত যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হবে। কোটা পদ্ধতিটি হওয়া উচিৎ ডায়নামিক আর ফ্লেক্সিবল।
_____________________
Give Her Freedom!
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হতেই আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা দেওয়া সমর্থন করি তবে হিমু ভাই যেভাবে বললেন অর্থাৎ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা থাকতে হবে সুষ্ঠুভাবে
বিগত জামাত বিএনপি সরকারের সময়ে আমি নিজে দেখেছি আমার প্রতিষ্ঠানের মুক্তিযোদ্ধা দপ্তরীর ছেলে উপযুক্ত যোগ্যতা থাকার পড়েও বৈষম্য এর স্বীকার হয়েছে কারন তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এই কারনে সরকারে থাকা জামাতিরা তাকে আউট করে দিয়েছে ।
১০০% সমর্থন করছি।
কোটা দিয়ে ভোট ব্যাংক বাড়ানো গেলেও দেশের ভবিষ্যত যে অন্ধকার তা সবাই জানে ও বুঝে।
কিন্তু, মগের মুল্লুকে যে কিছু করতে হয় না।
------------------------------
একা পাখি
(হায় সেলুকাস! কী বিচিত্র এই দেশ, তাই না!)
আমার মনে হয় ৩০% এর বদলে ১০% হলে ঠিক আছে।
মালয়েশিয়াতে সরকারী নিয়োগে পুরোটাই "কোটা পদ্ধতি" তে হয়, কিন্তু সেখানে কোন অনিয়ম এর কথা শুনি নাই। সমস্যা জাল সনদপত্রের আর মূল্যায়নের। কোটায় কেউ না আসলে মেধা থেকে নিয়োগ দেয়া উচিত। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, তিনি রাতে তাদের জন্য খাবার বয়ে নিয়ে যেতেন। তাই বলে কী আমরা বলব, তার কোন অবদান নেই ?
২৯ তম, ৩০ তম এবং ৩১তম বিসিএস এর জন্য আমি নিজে চেষ্টা করছি, ২৯ এ নন-ক্যাডার, ৩০ এর ফলাফলের অপেক্ষায় আর ০৯ অক্টোবর ২০১১ ৩১ এর লিখিত পরীক্ষা দিলাম। আমি নিজে দেখছি, আমার চেয়ে কম পরিশ্রমে (মেধার কথা বলব না কারন সকলেরই আছে বলে আমি বিশ্বাস করি) কয়েকজন শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে চাকরী করছেন। তখন খুব কষ্ট লাগে। আর ৩১তম তে মুক্তিযোদ্ধার নাতিরাও কোটার ছায়াতলে কিন্তু আমার জায়গা কোথায়?
বিশ্বের সব দেশেই জাতির শ্রেষ্ঠ বা অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ কোটার ব্যবস্থা আছে। এটা সমাজের সমান্তরাল এগিয়ে যাবার জন্য সহায়। কিন্তু পোস্টটি লেখা হয়েছে পাকিস্তানী দালালদের দৃষ্টিকোণ থেকে। বাসে যারা ছিল, তারা হয়তো রাজাকারের বাচ্চা- এর বেশি আর কোন সমস্যা আমি মুক্তিযুদ্ধ কোটাতে পাচ্ছিনা।
এই নিয়ে গতকালই মায়ের সাথে কথা হচ্ছিল। আমিও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, কিন্তু বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আর চাকরিতে তাদের সন্তানদের জন্য আলাদা কোটা থাকা সমর্থন করি না। বিশ্বের অনেক দেশেই দেখেছি এমন কোন ব্যবস্থা নেই আর সেই সাথে বাংলাদেশে কে আসল মুক্তিযোদ্ধা আর কে, তা জানা আসলেই মুস্কিল। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সূর্যসন্তান কিন্তু তাদের অনেকের বর্তমান কার্যকলাপ কি আমাদের মাথা এখন হেঁট করে দেয় না, কত মুক্তিযোদ্ধা তো রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে যেমন সেরা দুর্নীতিবাজ হয়েছে, তেমন রাজাকারদের সাথে এক কাতারে মিলে যেতেও দ্বিধা করে নি। তাহলে কোন অধিকারে তাদের পরিবার এমন সুবিধা ভোগ করবে? একজন মুক্তিযোদ্ধার শ্রেষ্ঠ সম্পদ দেশের স্বাধীনতা, তার পর কি তারা এমন বংশপরম্পরায় কোন বিশেষ পদ কুক্ষিগত রাখার স্বপ্ন দেখেছিলেন!! এমন বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা দূর হোক।
facebook
হ আমারো একই প্রশ্ন, মুক্তিযুদ্ধ করছে এমন অনেকেই তো পরে বালছাল কাজ করা শুরু করছে। ওদের পোলা মাইয়ারাও কোটা পাইবো ক্যান, কোন যুক্তিতে পাইবো? আগে ভালো কাম করছে বইলা?
-মেফিস্টো
কোটা থাকুক - সম্মুখ যোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পলনকারিয়াও এর আওতামুক্ত হোক। দুর্নীতি নিপাত যাক।
প্রচণ্ডভাবে সহমত।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
আমি কোটা পদ্ধতির পক্ষে কিন্তু এখন যেভাবে চলছে ঠিক সেটাকে সমর্থন করতে পারছি না। দুটো বিষয় এখানে মূখ্য, এক. প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার বংশধর নাকি সার্টিফিকেট কেনা মুক্তিযোদ্ধার বংশধর পরীক্ষা দিচ্ছে? এবং যে পরীক্ষা দিচ্ছে সে কি যোগ্য? প্রথমটা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর দ্বিতীয়টায় পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনতে হবে। যদি ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধররা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেটা সাধারণ ছাত্র দিয়ে পূরণ করা উচিত, আবার বিসিএস আয়োজন করে নয়।
টুইটার
কষ্ট লাগে যখন অনেকেই মেধা থাকার পরেও চাকরি পায়না, কিন্তু মেধা কম থাকার পরেও অনেকে চাকরি পেয়ে যায়। তাছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের পরেই দেশে সব মুক্তিযোদ্ধার ভুমিকা কি সঠিক ছিল? বঙ্গবন্ধুকে কেন বলতে হল, সবাই পাই সোনার খনি, আমি পাই চোরের খনি! বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছিল, তারা কি মুক্তিযুদ্ধ করেনি? আর তাদের সন্তানরা সবাই ভাল হবেন, তার গ্যারান্টি কে দিবে? জিয়াউর রাহমান এক জন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তার সন্তানরা কি সবাই ভাল?
সরকারি চাকরির নিয়োগ পদ্ধতি সম্পূর্ণ কোটা মুক্ত করে দেয়া উচিৎ।
একুশ শতকে এসে যারা কোন ascribed status এর পক্ষে থাকে, তা সে যে মোড়কেই হোক, তারা হিপোক্রেট ছাড়া আর কিছু বলে আমার মনে হয় না।
মুক্তিযোদ্ধা বংশ হলেই (এখন নাতি-নাতনি পর্যন্ত গিয়েছে আইন) যদি কোটা পাওয়া যায়, তাহলে এইটা caste প্রথা থেকে কিভাবে আলাদা হয়? সম্মান জানানোর পদ্ধতি অবশ্যই এমন একটা এলিট বংশ তৈরী করা নয়, কারন এই বংশ প্রথাই যারা সুবিধাপ্রাপ্ত সেই আরো বেশি সুবিধা পায়। যে মুক্তিযোদ্ধা ডে লেবার হিসেবে দিন কাটান, তার সন্তান এই কোটার কোন সুবিধা পায় না, কারন সে পড়ার সুযোগই পায় না। যিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পেয়েছেন, তার সন্তান পড়ার সুযোগ পায়, অযোগ্য হলেও সে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পায়। এই কোটা স্কিম সিম্পলি দেশে পারিবারিক রাজতন্ত্রের জাস্টিফিকেশনের জন্য অনুগত ভোটার বংশ গড়ার চেষ্টা। যদি মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বা নাতি হিসেবে সরকারি চাকরি আপনার অধিকার হয়, কারো কণ্যা বা নাতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হওয়াও তাদের অধিকার।
সম্মান জানাতে চাইলে বংশ না, এখনও যে কজন মুক্তিযোদ্ধা বেচে আছেন তাদের কিছু সম্মান জানান। তাদের ফ্রি, সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করেন, ভাতা সম্মানজনক করেন। এমন আইন করে ব্লু ব্লাড বানিয়ে সম্মান কেনা যায় না।
নতুন মন্তব্য করুন