১..................................................................................................................
নামের কখনো স্বত্ব হয় না। অনামের হয়।
এই আমি, কুলদা রায় নামে এই শব্দকঙ্কালগুলো ঝেড়ে দিচ্ছি—আমার নামটি কুলদা রায় না হয়ে রাম শ্যাম যদু মদু আথবা শেরশা, মীর আতশ, তিমথি রোজারিও হলেও কোনো সমস্যা হত না। যদু নামেই লেখা হত এই ঝেড়ে দেওয়া শব্দ—মীর আতশ নামেই লেখা হত এইসব ছাতামাতা। ব্যক্তির কখনো রূপান্তর হয় না। ব্যক্তিত্বের মধ্যেই প্যাঁচঘোচ থাকে। প্যাঁচে প্যাঁচে ধন্দ। চোখ থাকতে অন্ধ।।
তাহলে কে আমি? এই প্রশ্নটি করেছেন সিদ্ধার্থ টিপু। তিনি কবি। কবিতা লেখেন। একটি কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে। বলেছেন, লোকে বলে—আপনার নাম কুলদা রায় নয়। আপনি জ্যান্ত ফেইক। আপনি মাহবুব মোর্শেদ।
--এই মাহবুব মোর্শেদটা আবার কেডা?
--স্বখ্যাত গল্পলিখক। সমকালের লোক।
--তিনি কি কলু মোর্শেদ নামে পরিচিত?
--হ্যা। কলু মোর্শেদ নামে পরিচিত। তার বান্ধবীরাও তাকে কলু মোর্শেদ নামে ডাকে। শুনে তিনি অশেষ প্রীতি পান।
--মুশকিল। আমাগো গ্রামে আগে কলুবাড়িতে ঘাইন ছিল। সেখানে গরু দিয়া ঘাইন ঘোরাইন হইত। গরুর চোখ বান্ধা। গরু চারিদিকে ঘোরে। আর ফরফর করে ত্যাল পড়ে। সেই ত্যালে গরুর কোনো হিস্যা নাই। ত্যাল দেওয়াই তার কাম। এই কারণে পানিনি না কেডা জানি ব্যাকরণে বাগধারা লিখছেন, কলুর বলদ। রাইট?
শুনে কবি সিদ্ধার্থ টিপু হা হা করে হেসে ওঠেন। তাঁর হাসিটা সুন্দর।
২.......................................................................................................................
আমি মাহবুব মোর্শেদও নহি। কলু মোর্শেদও নহি। আমার চোখ খোলা। যা দেখি—তাই বলি। সাদাকে সাদা বলি। কালাকে কালা বলি। নো ইনডিসিশন। সিধে থ্রো। ডাইরেক্ট হিট দি উইকেট। আঙুল তোলো হে ব্রাদার। আউট। ফিনিস।
--তাইলে কুলদা রায়?
--এই নামটি ভুয়া। ১০১% ফেইক। আরেকজনের নাম। আমি ইউজ করছি।
--তাইলে আপনি একজন হিমু।
--হিমুটা আবার কে?
--রহস্যময় চরিত্র। হুমায়ূন আহমেদের রচনা। হলুদ জামা। আর জ্যোৎস্নার খাবনামা। খুল খুল সিম যা। ভুল ভুল হিম তা।।
৩........................................................................................................................
সত্যি সত্যি কুলদা রায় ছিল। খুব আলাভোলা একজন লোক। কোনো কাজ জানত না বলে কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিল। লিখতে লিখতে জেনেছিল, কারো কারো চেতনায় পান্না হয়েছে সবুজ। সেই ‘কারো’টিকে কুলদা রায় চিনতে পারেনি। শুধু হাসফাসই সার। বুঝেছিল—সকল সবুজ ফুল হলুদ হয়ে ফোটে। এইটুকু।
এই কুলদা রায়কে দেখা গিয়েছিল তেতুলিয়া নদীতে। মেহেন্দীগঞ্জে। সেদিন পাতার হাট থেকে এমএল পাতারহাট একটু দেরী করেই ছেড়ে গেল। মালিক বুড়ো গান্দিবাবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে সারেংকে ইশরা করলেন, তাইলে যাও। দুগ্গা দুগ্গা।
পালে বাতাস লাগিল। একটু একটু ঢেউ জাগিল। ছোট্ট লঞ্চটি তরতরাইল। আর কুলদা রায়ের হাতে ছিল একটি জলপিদিম। তাহা মাছের উসক হইল। বাপারা, মৎস ধরিও—খাইও সুখে। বৎস গড়িও—যাইও দুখে।।
৪. ........................................................................................................................
--কুলদা রায় তাহলে কোথায় গেল?
--জানা নাই। কেউ জানে না। কুলদা রায়ও জানেনা।
--তাইলে কি জানে?
--খট খট। খট খট। এক বাঁও মেলে না। ফেইক বাঁও মেলে।
শুধু তার কয়েকটি পুরনো ডাইরী পাওয়া যায় পাতার হাট লঞ্চের সিঁড়ির পাশে। গান্দিবাবু উল্টে পাল্টে দেখেছেন। ডাইরীর সব পাতা সাদা । কোথাও কোনো কালির আঁচড় পড়েনি। ফকফকা।
শুধু শেষ পৃষ্ঠায় লেখা—একদিন কেউ এসে লিখবেন।
গান্দিবাবু সেই একদিনের আশায় আছেন। ছিলেনও কিছুদিন। চক্ষু মুঞ্জার আগে দেখেছিলেন, জলের তলা থেকে উঠে আসে হলুদ হলুদ কুমড়ো ফুল। ফুলের গোড়ায় সবুজ ফল।
কেউ এসে লিখবেন জলের কথা। গান্দিবাবুর কথা। ভটভট লঞ্চের কথা। পাতার হাটের ছাতার কথা। আসমান-জমিনে মাতার কথা। আর কি?
শালিক পাখি উড়ে যায়।
কুলদা রায় দূরে যায়।।
কেউ লিখবেন সেই শালিক পাখিটির কথা। আর কুলদার কথা।
লিখবেন, গতকাল ম্যানহাটনে হেঁটে যেতে যেতে দেখেছি, টুইন টাওয়ার আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। লক্ষ লক্ষ ক্যামেরা দেওয়ালের লেখা তুলছে, এইখানে এক সঙ্গে ৩০০০ শ্রমিক কাজ করছে। আর হাডসন নদীর পাড় থেকে একটি শীতল হাওয়া উঠে আসছে। সে হাওয়ায় স্ট্যাচু অব লিবার্টি কাঁপা কাঁপা গলায় বলছে, আমার শীত লাগেরে। আমার শীত লাগে। ঠিক এই সময় ওয়াল স্টিটে সবুজ ফুলগুলো হলুদ হয়ে ফোটে। ফুলটির নাম কুমড়ো ফুল। জলে ভেজা। নূয়ে পড়েছে লতাটা। আর ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছেন আমাদের মা।
৫.....................................................................................................................................
কুলদা রায় নেই। কুলদা রায় আছে।
কেউ কেউ লিখছে কুলদাকে। কেউ কেউ লিখবে কুলদাদের।।
মন্তব্য
এই লিখাটা ভালো লাগলো বড়ই।
-মেফিস্টো
নাম নিয়ে কেন এতো কানাকানি বাপু! কারও কারো গা জ্বলে যায় নাকি।
মনে তো হয় তাই।
তাহলে আমরা যারা এই কানাকানি করছি একবার নিজেদের তলানিটা খুজে দেখা যাক।
নতুন মন্তব্য করুন