বিখাউজ বলে একটা রোগ আছে। ঢাকা কলেজের সামনে বিখাউজ রোগের ওষুধ বেচতে দেখেছি। যে কোনো জনবহুল স্থানে ওষুধ বিক্রেতারা এই রোগের ওষুধ বেচেন। সেই থেকে অনুমান করতে পারি যে এই অসুখটা মানুষজনের বেশ হয়। আমিও মাঝে মাঝে বিখাউজ রোগে আক্রান্ত হই, সে সময়ে যাই দেখি সেটাই বিখাউজ লাগে। বতর্মানে সেই বিখাউজ রোগ চলছে। সকালে এক পশলা বিখাউজ বৃষ্টি দেখে, একটা বিখাউজ জ্যাম পেরিয়ে, আমাদের অফিসের বিখাউজ লাল রঙের (যেটার আগে অন্য রঙ ছিল, বিভিন্ন জায়গায় জং-টং ধরে লালচে হয়ে গেছে) ভবনে ঢুকে, দৈনন্দিন বিখাউজ কাজ সেরে বিখাউজ এই লেখাটা শুরু করলাম।
২.
ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে শুধু গল্পের বই পড়ব। একটা ঘর থাকবে যেটার মেঝেতে শুধু একটা তোষক থাকবে (নরম তোশক হতে হবে সেটা) আর সারা ঘরে শুধু বই আর বই। আমার ছেলেবেলার স্বপ্ন ছিল শুয়ে শুয়ে বই পড়া আর দুপুরবেলায় ঘুমানো। স্বপ্নটা এক বন্ধুকে বলায় সে বেশ বিরক্ত হয়েছিল, শুয়ে শুয়ে ঘুমালে টাকা-পয়সা আসবে কীভাবে? আমি তাকে বলেছিলাম মাসে মাসে কেউ হাজার দুয়েক টাকা দিলে আমি কোনো কাজ করতে ইচ্ছুক নই। আমার এই বাসনাতে সে আরও বিরক্ত হয়েছিল। তোকে বিনা কারণে টাকা দেবে কে? আমাকে মাসে মাসে কে টাকা দেবে সেটা আমার বিবেচ্য নয়, আমি শুধু তাকে আমার সামান্য ডিমান্ডটা জানাতে চাইছিলাম। যাই হোক এরপর থেকে সে প্রায়ই আমার চাহিদার খবর নিত। বহু বছর ধরেই নিচ্ছে। গত বছর দুয়েক আগেও একবার নিয়েছে। আমার চাহিদা খুব বেশি নয়, শুধু মূল্যস্ফীতির কারণে টাকার অঙ্কটা বেড়েই চলছে। এখন জিনিসপত্রের যা দাম তাতে মাসিক পঞ্চাশ হাজার টাকার নিচে আমি কোনো মতেই রাজি নই। আর ড্রাইভারসহ একটা গাড়ি হলেও মন্দ হয় না। সিএনজির দাম আমিই দিয়ে দেব।
যার জীবনের লক্ষ্য ঘুমানো তার বিখাউজ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই প্রবল। ডাক্তারি শাস্ত্রেও বিখাউজ রোগ সম্বন্ধে এই তথ্য থাকা উচিত। জীবনে সহজ কাজ করাটাই এতো জটিল হতে পারে সেটা আমি আগে জানতাম না।
৩.
বিয়ের আসরে কাজী সাহেব আমার একবন্ধুকে (যার কথা উপরে বলেছি) জিজ্ঞেস করেছিল...আপনি কি এই বিয়েতে সম্মত আছেন কি না? আমাকে পরে সে বলেছে যে ওই প্রশ্নের জবাবে তার বলতে ইচ্ছে হয়ছিল...ওই মিয়া আমি কি ক্লাউনের মতো শেরওয়ানি পইড়্যা এইখানে XX ফালাইতে আইছি?
জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখজনক ব্যাপারটা হচ্ছে যে - উচিত কথাগুলো কস্মিনকালেও বলা যায় না। কিছুদিন আগে একটা ইন্টারভিউ নিতে হয়েছিল। কিছু সেট করা প্রশ্ন ছিল...একটা হচ্ছে আগামী পাঁচ বছরে তুমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাও? এই প্রশ্নের চেয়ে আব্বু ভালো না আম্মু বেশি ভাল সেটার মেরিটও অনেক বেশি। কিন্তু কর্পোরেশনের গাধাগুলোকে কে বোঝাবে? এই প্রশ্নের জবাবে কি কেউ বলবে যে - ভাই আমি পাঁচ বছরের মধ্যে নিজেকে দিনের মধ্যে ১৩ ঘন্টা নিদ্রারত দেখতে চাই।
যেই কথাগুলো আমরা বলতে চাই তার অধিকাংশই না-বলা রয়ে যায়। আমরা কবে মন খুলে কথা বলব? ব্যাপারটা কি বিখাউজ কি না বলুন?
৪.
কয়েকদিন আগে আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে ব্যাপক ঘুরেছি। সাথে আরেক বাল্যবন্ধু ছিল। সব মিলিয়ে দুই সপ্তাহের সফর। এক সপ্তাহের শেষে আমরা দুজনেই লক্ষ্য করলাম যে সুন্দর জায়গাগুলোতে মূলত রয়েছে - অরণ্য বা বাগান, সমুদ্র বা নদী, পাহাড়, মেঘ বা বরফ আর খাদ। যেখানেই যাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এইসব জিনিসের কম্বিনেশন। ঈশ্বর মূল ডিজাইনে তিন চারটি জিনিস তৈরি করেছেন, তারপর সেইগুলোই মোটামুটিভাবে বিভিন্নভাবে রিসাইকেল করে দিয়েছেন। যে কোনো বড় কোম্পানির প্রোডাক্টের ডিজাইন ঘাঁটলেই প্রচুর কপি পেস্টের নিদর্শন পাওয়া যাবে। ঈশ্বর এন্টারপ্রাইজও তার ব্যাতিক্রম নয়।
দেখা যাচ্ছে - যেটা করতে চাই সেটা করতে পারি না, যেটা বলতে চাই সেটা বলতে পারি না, যেটা দেখতে চাই সেটা দেখতে পারি না...অথচ ছোটবেলায় ধারণা ছিল যে বড় হলে সব কিছুই নিজের ইচ্ছায় করতে পারবো। বড় হওয়াটা যে কি বিচ্ছিরি ব্যাপার সেটা কেউ খুলে বলেনি। আরও বলেনি যে নিজের ইচ্ছে বলে কিছু থাকতে নেই। বড় হয়ে যাওয়াটাই আসলে...আসলে পুরোই একটা বিখাউজ ব্যাপার।
৫.
আমি দীর্ঘদিন বাবার হোটেলে ছিলাম। বেশ সুখেই ছিলাম। সামান্য কিছু অসুবিধা বাদ দিলে হোটেলটা নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। সমস্যা হচ্ছে এই হোটেল নিজে চালাতে গেলে। হোটেলের বোর্ডার হওয়া আর ম্যানেজমেন্ট চালানো এক ব্যাপার নয়। এটা চালাতে গেলে হাজারটা ঝামেলা - আজকে সকালে পানির কল নষ্ট, বিকাল বেলাতে বাজার শেষ, আগামীকাল খাওয়া নিয়ে বাসিন্দাদের অভিযোগ ইত্যাদি ইত্যাদি। দুনিয়ার যাবতীয় সমস্যার সমাধান এই হোটেলের ম্যানেজার সাহেবকে করতে হয়। বাবার হোটেল বাবাকেই চালাতে দেওয়া উচিত। নিজে বাবা হয়ে যাওয়াটা এক ধরনের প্রমোশন হলেও এতে হ্যাপা অনেক।
বিনাবেতনে এই সমস্ত কাজ করতে গেলে বিখাউজ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভবনা আছে।
৬.
“আব্বু আর ইউ ফিলিং স্যাড?”
উত্তরটা হবে স্যাড নয় আই অ্যাম ফিলিং বিখাউজ। কিন্তু বাচ্চাদের এই সব বিখাউজ শব্দ শেখালে ওদের শিশু মনে আবার বিরূপ প্রভাব-টভাব পড়ে বসতে পারে।
“আই অ্যাম অ্যা লিটল ডাউন..." ভগবানই জানে বিখাউজের ইংরেজি অনুবাদ আছে কি না।
বলতে বলতে আমি টিভির রিমোট তুলে সিএনএন ছেড়ে দেই। ওয়ালস্ট্রিটে একটা আন্দোলন চলছে ওটার খবর দেখতে চাইছিলাম। স্টিভ জবসের বন্দনা আর মাইকেল জ্যাকসনের ডাক্তারের বিচারেই আশি ভাগ টাইম বরবাদ ওদের। আমার ফেসবুকের বন্ধুদেরও অনেকেরই চেহারা একদম স্টিভ জবসের মতো হয়ে গেছে। ভদ্রলোক অনেকদিনই এভাবে বেঁচে রইবেন মনে হয়।
এই সব খবর পেরিয়ে আন্দোলনে পৌঁছুতে অনেকটা সময় লেগে যায়। আন্দোলনকারীরা মাইক ব্যবহার করতে পারেন না, তাই একটু পরে পরে একজন চেঁচিয়ে বক্তব্যগুলো সামনে দেখে পেছনে পৌঁছে দিচ্ছেন, অনেকটা বিদায় হজ্জের ভাষণের মতো। একপাশে গান-বাজনাও চলছে। হারমোনিয়াম বাজিয়ে কে আর কবে দাবি আদায় করতে পেরেছে?
আওয়ামী লীগ নেতা নাসিম অথবা তোফায়েল একবার বলেছিলেন, আন্দোলন কত প্রকার ও কী কী সেটা আওয়ামী লীগের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। আমার নিজেরও তাই মত – আন্দোলন শেখানোর একটা স্কুল আওয়ামী লীগ অনায়াসেই খুলতে পারে।
চ্যানেল পাল্টালেও শান্তি নেই। বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোতে আট বাংলাদেশির শিরশ্ছেদের খবর, অথবা বিউটি পার্লারে গোপন ক্যামেরা, কোথাও দুদণ্ড শান্তি পাওয়ার জো নেই। টিভির জানালা দিয়ে জগতে যাবতীয় দুঃসংবাদ সুট করে আমার ঘরে ঢুকে পড়ে অবলীলাতে। দুনিয়া জোড়া বিখাউজ ব্যাপার-স্যাপার।
“আব্বু ক্যান আই ওয়াচ সামথিং এলস?"
এরপর টিভির পর্দায় ভেসে ওঠে হলদের রঙের একটা স্পঞ্জ, কার্টুনটার নাম স্পঞ্জ বব স্কোয়ার প্যান্ট। সে থাকে সমুদ্রের তলায়। স্পঞ্জ ববের বন্ধু প্যাট্রিক, বিখাউজ রোগে আক্রান্ত সহকর্মী স্কুইডওয়ার্ড আর অর্থলোভী রেস্তোরাঁ মালিক মি: ক্র্যাব, উল্টোদিকের প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ী প্ল্যাঙ্কটনকে নিয়ে তৈরি কার্টুনগুলো দেখতে থাকি। পিতা ও কন্যা দু'জনেই মুগ্ধ হলাম। আস্তে আস্তে কাটতে থাকে মনের ভার।
জগৎটা খুবই চাপময়। কাজের চাপ, দুঃসংবাদের চাপ, খারাপ আবহাওয়ার চাপ, অর্থনীতির চাপ...সব মিলিয়ে রক্তের চাপল্য বেড়ে যেতে সময় লাগে না একদম। আধুনিক মানুষকে তাই চাপ মোকাবেলার করার পদ্ধতি শিখতে হয়। সমস্যা হচ্ছে নিজের ঘরে উলটো হয়ে শুয়ে গল্পের বই পড়া ছাড়া আর কোনো উপায় আমার জানা নেই। তবে দেখলাম স্পঞ্জববেও কাজ মন্দ হয় না।
আর হ্যাঁ খাবার থেকে নয়, খবর থেকে দূরে থাকাটা দরকার। এটা করলে শিরশ্ছেদ, গোপন ক্যামেরা, তিস্তার পানি, ক্রমাগত নিম্নগামী অর্থনীতি, ওয়ালস্ট্রিটে আন্দোলন সব কিছু থেকেই বেঁচে থাকা যায়। আমার মেজাজ খারাপ হলেই মমতা বাংলাদেশকে পানির হিস্যা দেবেন অথবা সৌদি আরব ভদ্র দেশ হয়ে যাবে কিংবা স্টক মার্কেট ধাঁই ধাঁই করতে উঠতে থাকবে অথবা কানিজ আলমাস ক্যামেরাগুলো বোরখা দিয়ে মুড়ে দেবেন - এটা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। তাহলে কেন এই হয়রানি?
ভবিষ্যতে হয়ত আরও ওষুধ বের হবে বিখাউজ রোগ নিরাময়ের।
আপনাদের জানাবো তখন। এখন তাহলে চলি...টা টা বাই বাই...
মন্তব্য
বিখাউজ না হোক, কোন না কোন রোগে সবকিছুই এখন আক্রান্ত!!!
চ্রম অইছে।
আর অলির লগে আমিও
মোটামুটি খোলসের ভেতর বাস করা শিখে গেছি। আরেকটু জুতমতো শিখতে পারলেই সেটা নির্বাণ পাওয়া হিসেবে গণ্য হবে। তখন আমি মুক্ত।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
মুন্নাভাই ছবিতে একটা জটিল ডায়লগ ছিল, "টেনশন লেনেকা নেহি, দেনেকা"। টেনশন মুক্ত হতে হলে অন্য কারো ঘাড়ে টেনশন চাপিয়ে দেয়া সবচেয়ে সহজ বুদ্ধি। এজন্যই বাসায় বউয়ের ঠ্যালা খেয়ে বসরা অফিসে হইহল্লা করে।
বিখাউজ পুস্ট ভালো পাইলাম!
কয়েক জায়গায়
দারুণ!
খবর থেকে দূরে থাকার আইডিয়া খুব উপাদেয় মনে হলো। আমার এক পরিচিতা কথায় কথায় বলতেন' লাইফ'জ স্ট্রেসফুল'! তখন তেমন বুঝতাম না মানে, এখন খুব ভালো বুঝি!
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
তারা দিতে চাইছিলাম, যাচ্ছেনা কেন যেন!
----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand
উপরে উদাস ভাই চরম একটা কথা কইছে, নিকের সুবিচার করা একেই বলে। চরম উদাস হয়ে সব কিছু বিলিয়ে দিতে হবে। কথা হচ্ছে, আপনার ঘরের মেঝেতে ছাদ পর্যন্ত বই নিয়ে চিত হয়ে শুয়ে থাকার স্বপ্ন আমারো ছিল। কি অদ্ভুত, চিন্তার অরিজিনালিটি অতি কঠিন বস্তু। একি সাথে এক অতি বিচিত্র বিখাউজ রোগ ভোগাচ্ছে খুব। তবে কথায় আছে মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন, ত্বুরীয় সমাধি ছাড়া আর উপায় নাই।
হ, দুনিয়াদারী আর ভাল্লাগে না। পুরাই বিখাউজ অবস্থা, তার উপর একমাত্র রিসোররট বেশী ঘুমানোর সুযোগ পাওয়া যাচছেনা কয় দিন ধরে।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
বিখাউজ সিন্ড্রোম আমার ভেতরও দেখা দিচ্ছে। এর থেকে দূরে থাকতে নিজেকে ব্যস্ত রাখি আশ্রয় দাতার ঘর ভ্যাকুয়াম, বাগান পরিষ্কার, হাড়ি পাতিল ধোয়ার মতন নানান কাজে।
...........................
Every Picture Tells a Story
সবার কথা শুইনা মনে হইতাছে গোছা বাইন্ধা সবার মিড লাইফ ক্রাইসিস শুরু হইছে।
ক্রাইসিস এখন আর মিড লাইফের লাইগা বইসা নাই, আবালব্্দ্ধ যারে পাইতাছে সামনে, তারেই কামড় দেয়া শুরু করছে।
চিন্তার বিষয়।
-মেফিস্টো
কামলাজীবনে ঢুকেছি খুব বেশিদিন হয়নি।
আগামি ইন্টারভিউগুলোর বিদঘুটে এবং অনেকাংশে অযৌক্তিক প্রশ্নগুলোর উত্তরে কোনদিন কী ঠোঁট ফসকে বলে ফেলব, কে জানে ...
পাঁচ বছর অনেক লম্বাসময়, অতদিন বাঁচতেই চাই না। [টেনেটুনে] এইইই.. দু- একবছর সাধ মিটিয়ে গল্পের বই কেনার মতো কোন আয়েশি ব্যবস্থা [হাত পা না নেড়েই] হলে বড় ভাল হতো। কী আছে জেবনে?
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আমি ছোটবেলায় কখনো বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখি নি। বড় হয়ে কখনো আফসোসও করি নি। বিখাউজ চিরকালই ছিলো, থাকবে। আগে খুব অস্থির হতাম, আজকাল কম হই। ব্যাপারটা ইতিবাচক না নেতিবাচক জানি না।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
বিখাউজ লাগে মাঝে মধ্যে খুব প্রবল ভাবেই।তার পরেও কিভাবে যেন জীবনটাকেই ভালোবেসে ফেলি খুব।
মরণের পরপারে বড় অন্ধকার-----
জন্ম না নেওয়াটাই স্বর্গ... সকল বিখাউজ থেকেই মুক্ত
বিখাউজের মধ্যে শ্বাস নিতে নিতে বিখাউজকেই ভালবেসে ফেলেছি মনে হয়, নইলে দুদিন টেনশন ফ্রি থাকলেই সব কেমন খালি খালি লাগে কেন?
বিখাউজের কথা বলছেন ? ভাইরে অধমের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এ তিনদিন ধরে ওয়াসার লাইনের পানি বন্ধ। ওয়াসায় পানি কেনার রিকুইজিসন দিলে ৩২ ঘন্টা পরে পানি পাওয়া যায়। কারন জানতে চাইলে জানাল ভি,আই,পি, দের আগেতো আর আমাদেরকে বিবেচনা করা যায়না।
অ্যাপার্টমেন্টের অন্যান্য বাসিন্দাদের গাল শোনার ভয়ে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছি।
আজ পানির সমস্যা তো কাল বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা, লিফ্টের সমস্যা, ব্যাক্তিগত সমস্যার কথাতো বাদই দিলাম।
এসব কারনে রক্তচাপের ঊর্ধগতি। ওষুধ খেয়েও আয়ত্বে রাখা যাচ্ছেনা।
বড় সমস্যা হল আমি এই অ্যাপার্টমেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক। কয় বছর ধরে অনুরোধ করেও পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়নি।
বিখাউজ কত প্রকার ও কি কি, সে সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ একটি রচনাও লিখে ফেলতে পারি, লেখার হাত নেই তাইতে....।
চুলকানি শুরু হয়েছে, আপাতত ক্ষান্ত দিচ্ছি।
প্রৌঢ়ভাবনা
আপনি লেখা দিয়ে বেশ বিখাউজ করে দিতে পারেন ...
পুরাই বিখাউজ অবস্থায় চলে গেলাম।
দারুণ পোস্ট
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
বিটিডব্লিউ, আগামী পাঁচ বছরে নিজেকে কোথায় দেখতে চাই?
উত্তর: ইহকালে!
রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ায় ভয়ে বাসায় সাধারনত পেপার পড়ি না। অফিসেই পড়ে মাথা গরম হয়ে যায়। এখন তাও পড়া বাদ দিতে হবে।
মাঝেমাঝে অফিস ফাকি দিয়ে কার্টুন দেখি। স্পঞ্জপপ, সিম্পসন প্রিয় কার্টুন। টিভিতে যেকোনপ্রকারের কার্টুন এই অধমের কাছ থেকে মুক্তি পায় না। একটু মনখুলে হাসা যায়। বিখাউজ থেকে অন্তত কিছু সময়ের জন্য রক্ষা।
বিখাউজ, অর্থাৎ কিনা যে ব্যক্তি স্থান-কাল-পাত্র ভুলে গিয়ে শরীরের যত্রতত্র সম্ভব অসম্ভব সব জায়গায় চুলকায় এবং কোন প্রতিরোধ না মেনে চুলকাতেই থাকে। প্রিয় রাজনৈতিক নেতারা যেভাবে দেশের আনাচে কানাচে প্রবল বেগে চুলকে দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, নিশ্চিত ভাবেই বাংলাদেশের নামের পরিনতি হতে যাচ্ছে বিখাউজদেশ। সব নাগরিকদের জন্য চুলকানি ফ্রী.....................
পোস্টে
বিখাউজ ছাড়া বাঁচার উপায় নেই এই যুগে। তাই বিখাউজকে মেনে নিয়েই চলছি। চলতে চলতে একটা গল্প বলে যাই,
বরিশালগামী লঞ্চের ডেকে ঈদের ঠিক আগে এক শীতের রাতে এক বিখাউজের রোগী গাদাগাদির মধ্যে গলা পর্যন্ত চাদর মুড়ে শুয়ে আছে আর একটু পরপর মোড়ামুড়ি করছে। হঠাৎ করেই তার ঠিক পাশে শোয়া লোকটা ক্ষিপ্ত হয়ে খেঁকিয়ে উটলো তার উপর-
পাশের লোকঃ এউ মেয়া, আমনে দেহি একছের জাউর্যাচোদা। লাইথ্যাইয়া উডাইয়া দিমু কইলাম।
বিখাউজের রোগীঃ এউ মেয়া, খামার দ্যাও বোছো। জাউর্যামির কি হরছি মুই?
পাশের লোকঃ কি হরেন নায় আমনে? হেই সোমাইদ্যা হাত এউক্যা ভইর্যা রাখছেন মোর হোগার মইধ্যে। জাউর্যামির জাগা পায়েন নায়।
বিখাউজের রোগীঃ ও বুজজি, এ্যাহন বোজতে পারছি। হেইর পিন্নে মুই খাউজাইয়া হুখ পাই না।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
বরাবরের মতোই দারুন লিখেছেন।
জীবনটা আসলেই বড় চাপময়। বই নিয়ে একটা স্কাইভিউ রুমে শুয়ে থাকার ইচেছে আমারও ছিল আর এখনো আছে, কিন্তু জানি যা কোনদিনই হবার নয়।
ধন্যবাদ
আপনার ঘরের মেঝেতে ছাদ পর্যন্ত বই নিয়ে চিত হয়ে শুয়ে থাকার স্বপ্ন আমারো ছিল, শেষে স্বপ্নপূরণও হল, কিন্তু সেই সাথে সময়ের টান দেখা দিল! মরণ!
লেখায়
facebook
মন্তব্যের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
বিখাউজের কবল সব্বাই বেঁচে থাকুক...
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বরাবরের মতই দুর্দান্তিস
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
আমার কিন্তু একঘর বই আছে! হাতে টাকা থাকলেই বইয়ের দোকানের আশেপাশে গেলেই আমার ঘরে আরও বই হাজির হয়ে যায়। কিন্তু ... আমার পড়ার সময় নাই... অথচ আমি এখনো বাবার হোটেলেই আছি! আবার একরকম এই হোটেলে থেকেও বিখাউজ দিন শেষে, বিখাউজ জ্যাম ঠেলে, বিখাউজ কাদাপানির সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বিখাউজ ড্রেইন জ্যাম প্রকল্প, বিখাউজ ফ্রিজ নষ্ট প্রকল্প, বিখাউজ মিস্তিরিদের সাথে বিখাউজ তর্কের পরে বিখাউজ ক্লান্তির অভিজ্ঞতাও অর্জন হয়ে গেছে, নিজের হোটেল চালু হবার আগেই এইসব অন্যায় অনাচার সহ্য করাটাও একটা সিরিকাস বিখাউজ ব্যাপার! দুনিয়াটাই বিখাউজ আসলে!
তবে হ্যাঁ, খবর থেকে দূরে থাকলে আসলেই অনেক উপকার পাওয়া যায়। আর অ্যানিমেশন হলো লাইফ সেভিয়র।
আপনার মুড ভালো হোক, মন হালকা আর ফুরফুরা থাকুক। মন ভালো করা লেখার প্রতীক্ষায় রইলাম।
আপনার ছোটভাইবোনদেরমানেআমাদের তরফ থেকে আপনার জন্যে -
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
বিখাউজ দুনিয়াদারী থেকে পালাতে প্রতিদিন অন্তত একবার স্পন্জবব আর স্কুবিডুর কাছে যাই। কিন্তু প্যাট্রিকের লাগাতার গাধামির জন্য স্পন্জববের ভোগান্তি দেখলে মাথা নষ্ট হয়ে যায়। বিখাউজ প্যাট্রিক্ক্যা
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
বিখাউজের মহত্তম ওষুধ "বিচ্ছু মলম" .... "আআআআআ নেবেন নাকি বিচ্ছু মলম" -
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
প্রাইমারি স্কুলে থাকতে আংরেজি because এর বানান মনে রাখার জন্য উচ্চারণ করতাম, বিখাউজ! সব বানান ভুলে গেলেও এইটা ভুলি নাই কখনো।
দুইন্যাটাই একটা বিখাউজ জায়গা তাসনীম ভাই। এই বিখাউজ দুইন্যাতে থাকলে খাইজ্যানি একটু আধটু হবেই। দুই দিনের দুইন্যা, ইট্টু সহ্য করেন।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ভাই, "৫ বছর পরে কোথায় দেখতে চান"-- প্রশ্নের উত্তরখান যদি দিতেন, তাহলে ভালো হইতো। মানে আপরারা যারা ইন্টারভিউ নেন তারা কী উত্তর শুনতে চান সেটা যদি বলতেন।
সাম্প্রদায়িকতার বিষ যেভাবে চারিদিকে ছড়াচ্ছে - শত চুল্কিয়েও, মলম লাগিয়েও নিরাময় হবে না।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
একটা কথা কই, স্পঞ্জবব মোটেও ছোটদের কার্টুন না, অনেক গভীর ভাবের ব্যপারস্যাপার আছে সেইটাতে, কয়দিন নিয়মিত দেখলেই বুঝবেন
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
একটানে পড়লাম।
ক'দিন ধরে কেমন যে লাগছে এটা ঠিক প্রকাশ করতে পারছিলাম না। এখন বুঝলাম, এর নাম বিখাউজ ফিলিং।
ধন্যবাদ, এমন একটা নাম খুঁজে দেয়ার জন্য।
নতুন মন্তব্য করুন