[ এই লেখাটার পেছনের উদ্দেশ্যটা বলছি, বেশ কিছুদিন আগে খুবই কাছের একজন আস্তিক বন্ধুর সাথে কিছু বিষয়ে কথা বলার সময় ধীরে ধীরে কথার প্রসঙ্গ বিবর্তনবাদের দিকে গড়ায়, স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহলী বন্ধুটি কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে, তখন তার কিছু সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে দেখলাম, খুব সহজ ভাষায় ব্যাপারগুলো বর্ণনা করতে পারছিনা, বিবর্তন নিয়ে পড়ার পরেও সহজ ভাবে সেটি সেদিন বন্ধুকে বোঝাতে ব্যার্থ হয়েছিলাম, তারপর থেকেই বিবর্তনের সম্পর্কে সাধারণ ভ্রান্ত ধারণাগুলো নিয়ে লেখা খুঁজছিলাম, পেয়েও গেলাম| তারপরে আরও কিছু জিনিস নজরে এলো, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর মাধ্যমে বেশ কিছু মানুষ বিবর্তন সম্পর্কিত ব্যাপারে বেশকিছু ভ্রান্ত ধারণা ছড়াচ্ছে| শুধু তাইনা, কিছু মানুষ দলবদ্ধভাবে বেশ কিছু বিখ্যাত বিজ্ঞানীর বক্তব্য নিয়েও ভ্রান্ত কিছু ভিডিও তৈরী করে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাই এই বিষয়টি নিয়ে লেখাটা লিখছি, ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া ও তথ্য সংযোজনকে স্বাগতম জানাই|]
বিবর্তনবাদ প্রথম থেকেই তুমুল বিতর্কের জন্ম দেয়, তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম ছিলো, এটি সৃষ্টির প্রথাগত ধারনাকে পরিবর্তন করে, একটি উপযুক্ত ও প্রমানসাপেক্ষ শক্তিশালী ধারণার জন্ম দিয়েছিলো| কিন্তু সমাজের বিরুদ্ধ স্রোতের দাপটে মহান বিজ্ঞানী ডারউইন এর অসাধারণ এই কাজটি ততটা জনপ্রিয়তা পায়নি ঠিকই কিন্তু মুক্তমনা ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের চিন্তার নতুন রাস্তা খুলে দিয়েছিলো| এত বছর পরেও অধিকাংশ মানুষ বিবর্তনের অতি চমৎকার ও সহজ ধারনাটিকে বুঝতে সক্ষম হয়নি বা বলতে গেলে বুঝতে চায়নি| এর পিছনের ইতিহাসে যাবোনা, শুধু খুবই প্রচলিত ও আলোচিত ১০ টি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে লিখবো| (সহজ করে লেখার চেষ্টা করেছি, জানিনা কতটুকু সফল|)
______________________________________________________________________
১ম প্রশ্ন: যদি মানুষ বানর থেকে আসে, তাহলে এখন বানর কেন মানুষে পরিণত হচ্ছেনা??
উত্তর: খুবই মজার একটা প্রশ্ন, তর্কে বিতর্কে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত| কিন্তু বিবর্তনবাদ সম্পর্কে এই প্রশ্নটি চরম ভাবে আলোচিত হলেও এটি মারাত্মক একটি ভুল| বিবর্তন কথাটি সহজভাবে বললে হয়, ধাপে ধাপে পরিবর্তন, কখনই হুট করে বিবর্তন হয়না, কোনো একটি প্রজাতির বিবর্তনের জন্য হাজার হাজার বছর লাগে| ডারউইন কখনই বলে যাননি, মানুষ বানর থেকে এসেছে| বানর গোত্রীয় প্রজাতির বিবর্তনের উধাহরণ বর্তমানের মানুষ| বানরগোত্রীয় ও বানর থেকে এই কথাটির সূক্ষ পার্থক্যের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আসল তথ্য| মানুষ, বানর এবং বনমানুষ এরা সকলেই সমগোত্রীয়| মানুষ বানর থেকে নয়, বরং এমনই একটি সাধারণ প্রজাতি থেকে এসেছে, যা বানর কিংবা মানুষ কোনটাই ছিলনা, এরা মানুষের পূর্বপুরুষ যারা অতীতে কয়েক মিলিয়ন বছর পৃথিবীতে ছিলো| শুধু তাই নয়, বিগত ৭ মিলিয়ন বছর ধরে বেশ কিছু মানুষ ধরনের প্রজাতি বিবর্তিত হয়েছে, যাদের মধ্যে- Homo habilis, Homo erectus, and Homo neanderthalensis অন্যতম| এরা বিভিন্ন সময়ে হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে, কিন্তু বিবর্তনের মাধ্যমে টিকে আছে বর্তমানের মানুষ এবং আরও কিছু সমগোত্রীয়|
২য় প্রশ্ন: বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত ফসিল রেকর্ডে অনেক ফাঁক ফোকড় আছে, তাই ফসিল কি বিবর্তনের তত্ত্ব প্রমান করে???
উত্তর: এই প্রশ্নটির সূচনা হয় সাধারণ মানুষের ফসিল সম্পর্কিত অবজ্ঞার ও ভ্রান্ত তথ্যের কারণে| প্রথমেই জানা উচিত ফসিল কি? ফসিল হচ্ছে, প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষিত মৃতপ্রাণীর দেহবশেষ যা কিনা কালের আবর্তনে বিভিন্ন সময়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক চাপ ও তাপের প্রভাবে স্তরীভূত হয়ে থাকে| বিভিন্ন সময়ে খননের মাধ্যমে উদ্ধারকৃত এই ফসিল নিয়ে তৈরী হয় ফসিল টেবিল| যা কিনা কোনো একটি বিশেষ প্রজাতির, বংশানুক্রমিক বিবর্তনের উধাহরণ বহন করে| এখন প্রশ্ন হচ্ছে যখন ফসিল হবার প্রক্রিয়াটি পুরোটাই প্রাকৃতিক, তখন একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির প্রাণীর, পূর্বপুরুষের দেহবশেষ এর ফসিল হবার সম্ভাবনা কতটুকু?? সেটা নির্ভর করে কিছু বিষয়ের উপর-
১. সেই নির্দিষ্ট প্রাণীটির দেহকে খাদক অথবা শিকারী প্রাণীর হাত থেকে রেহাই পেতে হবে|
২. তারপর সেটিকে কিছু নির্দিষ্ট চাপ ও তাপের পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে সংরক্ষিত হতে হবে যাতে সেটি ফসিলে পরিণত হবার আগেই হারিয়ে না যায়| এখানে পুরো সংরক্ষণ প্রক্রিয়াটি প্রাকৃতিক ও অকৃত্তিম|
৩. তারপর লক্ষ্য বছর ধরে মাটির নিচে চাপা থাকার পরে প্রাকৃতিক উপায়ে সেটি হয়তো মাটির উপরে উঠে আসবে অথবা খননকার্যের মাধ্যমে সেটির সন্ধান পাওয়া যাবে|
৪. এই বিপুল প্রাণীজগতের অজস্র ফসিল এর উদ্ধারের জন্য যারা কাজ করছে তাদের সংখ্যা অনেক কম|
এতগুলো বিরুদ্ধ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীতে যত ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে তা বিবর্তনের জন্য কম তো নয়ই, বরং বিভিন্ন সময়ে প্রানীদের বিবর্তনের মধ্যবর্তী প্রজাতিরও ফসিল আবিষ্কৃত হয়ছে, যা আরও শক্ত ভাবে বিবর্তনের পক্ষে উধাহরণ স্থাপন করে| উদাহরণ হিসেবে Archaeopteryx কে নেওয়া যায়, যা এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত অন্যতম প্রাচীন পাখিদের মধ্যে পরে, যার কংকাল সরীসৃপ প্রানীদের মতো কিন্তু এর ডানা এবং পালক ছিলো| যা কিনা পাখি এবং সরীসৃপ গোত্রীয় প্রানীদের মধ্যে বিবর্তনের উধাহরণ| Therapsids হচ্ছে সরীসৃপ এবং স্তন্যপায়ীদের মধ্যবর্তী স্তরের ফসিল একই ভাবে Tiktaalik হচ্ছে উভচর প্রানীদের বিবর্তনের মধ্যবর্তী ফসিল| বিশালাকায় তিমি মাছের বিবর্তনের ধারার মধ্যবর্তী অন্তত ৬ শ্রেনীর ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে, একই ভাবে বর্তমান আধুনিক মানুষের বিবর্তনের মধ্যবর্তী প্রায় ১২ টি স্তরের ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে| তাই ফসিল বিবর্তনকে শুধু সমর্থনই করেনা, এটিকে সচিত্র প্রতিস্থাপন করে আমাদের অতীতকে আমাদের সামনে তুলে ধরে|
৩য় প্রশ্ন: যদি বিবর্তন বহু বছর ধরে ধাপে ধাপে ঘটে থাকে, তাহলে ফসিল রেকর্ডে সেটা প্রতিয়মান হয়না কেন??
উত্তর: ফসিল রেকর্ডে কিছু দ্রুত পরিবর্তন কখনই ধাপে ধাপে পরিবর্তন এর বিরুদ্ধে নয় বরং এটি বিজ্ঞানের ভাষায় punctuation এর একটি উদাহরণ| কোনো প্রজাতি একটি দীর্ঘ সময় ধরে অপরিবর্তিত থাকতে পারে, কিন্তু একটি প্রজাতি থেকে আর একটি প্রজাতিতে পরিবর্তন ঘটে দ্রুত, যাকে বলা হয় punctuated equilibrium| এই পদ্ধতিতে দেখা গেছে, যদি কোনো নির্দিষ্ট প্রজাতি থেকে উদ্ভূত হয়ে অন্য একটি প্রজাতি সৃষ্টি হয় তাতে বিবর্তন ঘটে দ্রুত, কিন্তু তাদের পূর্বপুরুষের সংখ্যার থেকে তাদের সংখ্যা কম থাকায় এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রজাতি তৈরী হওয়ার জন্য এদের মধ্যে পরিবর্তন হয় দ্রুত, এ কারণে ফসিল হিসেবে সংরক্ষিত হবার আগেই হয়তো এদের পরিবর্তন সাধিত হয়| এ কারণেই ফসিল রেকর্ডে দ্রুত পরিবর্তন দেখা যায় কখনো কখনো বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রে, কিন্তু সব ক্ষেত্রেই তারা তাদের পূর্বপুরুষের বৈশিষ্ট্য বহন করে| তাই দ্রুত পরিবর্তন কখনই বিবর্তনের বিরুদ্ধে নয় বরং এটি বিবর্তনের একটি ধারাকে প্রমান করে|
৪র্থ প্রশ্ন: কেউ কি বিবর্তন নিজের চোখে ঘটতে দেখেছে??
উত্তর: বর্তমান পৃথিবীর প্রতিটি ক্ষেত্র বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে, প্রজাতির জীবন হতে শুরু করে জীবিকা সবই বিবর্তনের উধাহরণ| কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির ফসিল রেকর্ড দিয়ে বিবর্তন প্রমান করা হয়না, বরং অজস্র প্রজাতির ফসিল থেকে ধারণকৃত তথ্য উপাত্ত ও DNA গবেষনার উপর ভিত্তি করে প্রচুর প্রমানের পরেই এই উপসংহারে আসা হয়| সাধারণ বিজ্ঞান এর বিভিন্ন শাখা থেকে শুরু করে, বিভিন্ন উপশাখার মাধ্যমে বিবর্তন সম্পর্কে কাজ করা হয়েছে| বিভিন্ন প্রজাতির বংশানুক্রমিক পরিবর্তন বহু বছর ধরে পর্যবেক্ষণের পরেই এই ধরনের উপসংহারে আসা সম্ভবপর| কোনো জাদুকরী কুদরতির উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞান কাজ করেনা, বিজ্ঞান প্রমান সাপেক্ষ জ্ঞান, বিজ্ঞান নিজের ভুল নিজে খুঁজে বের করে এবং তা স্বীকার করে পরিবর্তনও বিজ্ঞানই করে, বিবর্তনও ঠিক সেরকমই একটি চলমান ধারা, যা প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে| ভাইরাস কোষ কিংবা ব্যাকটেরিয়া কোষ এর বিবর্তন যথেষ্ট দ্রুত ঘটতে দেখা গেছে, যা আধুনিক মেডিকেল সাইন্স এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক|
৫ম প্রশ্ন: বিবর্তন রেন্ডম চান্স এর মাধ্যমে হয়, তাই এটি কি নির্ভরযোগ্য??
উত্তর: বিবর্তন কখনই রেন্ডম চান্স এর মাধ্যমে হয়না, এটি একটি ভুল ধারণা| এই সম্পর্কে রিচার্ড ডকিংসের একটা বর্ণনা আমার বেশ ভালো লাগে| যদি বলা হয় একটি ঘুর্নিঝড়কে একটি স্ক্রেপ ইয়ার্ড এর মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং অজস্র টুকরো থেকে এক হয়ে একটি বোয়িং বিমান তৈরী হবার চান্স কতটুকু?? তাহলে যেমন হাস্যকর শোনায়, বিবর্তন রেন্ডম চান্স এ ঘটে থাকে এটা ততটাই হাস্যকর শোনায়| Natural selection কখনই রেন্ডম নয়, তা কোনো চান্স এর মাধ্যমেও হয়না| বিবর্তন এমন একটি প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন সময়ে দেহকে পরিবেশের উপযুক্ত করে গড়ে তুলে, এটি অতীতের ভুল-ত্রুটি গুলোকে সংশোধন করতে থাকে, তাই ধাপে ধাপে একটি অতি চমৎকার ও জটিল নকশা তৈরী হয়| কিন্তু সেটা কখনই রেন্ডম নয়| যেমন মানুষের চোখের গঠন একদিনে হয়নি, রেন্ডম ঘটনাও নয়| পরিবেশ ও সময় উপযোগী করে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়েছে, একই ভাবে হাতের তালু মুঠো করবার ক্ষমতা মানুষের মধ্যে যেমন দেখা যায় অন্য স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সেটা অনেক সময় অনুপস্থিত| এটা বিবর্তনের ফসল| বিবর্তন মানুষের দেহকে অন্য স্তন্যপায়ী প্রানীদের দেহ থেকে আলাদা এবং আধুনিক করেছে ধাপে ধাপে| মস্তিস্ক এর পরিবর্তনও হয়েছে ধাপে ধাপে|
৬ষ্ঠ প্রশ্ন: শুধুমাত্র একজন অসাধরণ সৃষ্টিকর্তাই পারেন দেহর মতো এমন একটি জটিল নকশা তৈরী করতে, বিবর্তনের পক্ষে একটি কোষ থেকে এত জটিল একটি নকশা সম্ভব কি??
উত্তর: সম্ভব| মানুষের চোখের উদাহরণ ধরি, প্রথম কথা হচ্ছে চোখের গঠন জটিল কিন্তু উল্টো, মানুষ যা দেখে তা প্রথমে সম্পূর্ণ উল্টো থাকে তারপর বিভিন্ন জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেটি মস্তিস্ক সঠিক করে এবং সোজা করে দেয়| তাই যখন চোখে আলো প্রবেশ করে তা কর্নিয়া, লেন্স, একুয়াস ফ্লুইড, ব্লাড ভেসেল, গেন্গ্লীয়ন সেল, হরাইজন্টাল সেল, বাইপোলার সেল ইত্যাদি অতিক্রম করে আলোক সংবেদনশীল রড এবং কোন এ পৌঁছে, যা নিউরাল ইমপালস তৈরী করে যেটা পরে ভিজুয়াল কর্টেক্স এ যায় যা কিনা মস্তিষ্কের পেছনে অবস্থিত সেটা এই সিগনালকে অর্থপূর্ণ ছবিতে পরিণত করে যা আমরা দেখতে পাই| যদি কোনো অসাধরণ সৃষ্টিকর্তাই দেহ বানাতেন তাহলে এত ঝামেলার কি দরকার ছিলো, আর ছবিটা উল্টো করে পাঠানোরই কি দরকার ছিলো?? তার থেকে বরং সোজাসুজি সব কিছু করলেই ঝামেলা থাকতনা| কিন্তু তা হয়নি, কারণ চোখের মতো আর সব অঙ্গই তাদের কাছে থাকা পদার্থ দিয়ে ধাপে ধাপে তৈরী হয়েছে, তাই এত ঝামলা| এটা কোনো অলৌকিক ঘটনা তো নয়ই বরং খুবই নির্দিষ্ট ভাবে বিবর্তনকে সমর্থন করে| এভাবে প্রাণীজগতের সব প্রজাতির দেহই বিবর্তনের মাধ্যমে তাদের নিজ নিজ চাহিদা অনুযায়ী পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য তৈরী| বিবর্তনের এটাই মজা|
৭ম প্রশ্ন: বিবর্তন শুধুই থিওরি, প্রমান কি??
উত্তর: বিজ্ঞান থিওরি থেকেই আসে, তবে কেউ থিওরি দিলেই সেটা মেনে নেওয়া হয়না| অজস্র পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে যুক্তি তর্কের উপর ভিত্তি করে তবেই কোনো উপসংহারে আসা হয়, যেমন নিউটন এর মাথায় আপেল বা কাঁঠাল পরলেই অভিকর্ষ আর মহাকর্ষ প্রমান হয়না, তার জন্য লাগে গাণিতিক প্রমান, যুক্তি, পর্যবেক্ষণ| তেমনি বিবর্তনের ধারণা কোনো গায়েবী আওয়াজ থেকে আসে নাই, ডারউইন বহু বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করে যে মহা বিপ্লবের সূচনা করে গেছেন, তা তার মৃত্যুর সাথেই থেমে যায়নি, বরং আধুনিক বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত বহু বছর আগে করে যাওয়া তার থিওরিকেই প্রমান করে চলেছে| অজস্র ফসিল প্রমান, প্রজাতির বংশানুক্রমিক পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত থেকে তৈরী করা চার্ট ইত্যাদি সবই বিবর্তনকে সমর্থন করে| এর পরেও বিশ্বাস করতে না চাইলে কিছু করার নেই, চোখের সামনেই সব উধাহরণ আছে|
৮ম প্রশ্ন: মানুষের বিবর্তন শুধুই ভ্রান্ত ধারণা ও নানা ভুলে ভর্তি, কেন মানবো??
উত্তর: মানুষের দৈহিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক কোনো বিবর্তনই ভুল ধারণা নয়, দৈহিক বিবর্তন নিয়েই সব ঝামেলা কিন্তু তাতেও কোনো ভুল নেই, বরং কিছু সন্দেহ ছিলো যা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়েছে প্রমান সাপেক্ষে| মানুষের দেহে নানাবিধ বিবর্তনের উদাহরণ উপস্থিত| দেহের মেরুদন্ডের সর্বশেষ অস্থিটি বিবর্তিত হয়ে বর্তমান রূপ পেয়েছে, এপেন্ডিক্স মানুষের দেহে বিবর্তিত হয়ে আজকের অবস্থায় রয়েছে| মানুষের শরীরে এরকম বেশ কিছু উদাহরণ আছে-
১. পশম দাড়িয়ে যাওয়া [Goose Bumps- (Cutis Anserina)] : এটি শুধু মানুষের মধ্যেই না অনেক লোমশ প্রাণীর মধ্যে আরও ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়, সাধারণত আত্মরক্ষার্তে দেহের পরিধি বাড়ানোর জন্য অনেক প্রাণীই যেমন- বিড়াল, কুকুর ইত্যাদি এটি ব্যাবহার করে থাকে| কিন্তু মানুষের দেহে ততটা দরকারী না হলেও, ভয় কিংবা শিরশিরে অনুভূতি হলেই আমাদের পশম দাড়িয়ে যায়|
২. Jacobson’s Organ-(Vomeronasal organ) : নাকের ভেতরের এই অঙ্গটি বিভিন্ন প্রজাতির প্রানীদের মধ্যে খাবারের ঘ্রাণ গ্রহনের পাশাপাশি বিপরীত লিঙ্গের প্রানীদের শরীর এর গন্ধ পেতে সাহায্য করে, যাতে তারা শারীরিক মিলনের মাধ্যমে জৈবিক কর্ম সম্পূর্ণ করতে পারে, মানুষ এর শরীরে এই অঙ্গটি থাকলেও বিবর্তনের মাধ্যমে সেটি এখন আর কোনো কাজে লাগেনা, ধারণা করা হয়, মানুষের পূর্বপুরুষরাও এই অঙ্গটি বিপরীত লিঙ্গের খোঁজ পেতে ব্যাবহার করে থাকতো|
৩. Junk DNA-(L-gulonolactone oxidase) : অতীতে এটি এনজাইম তৈরিতে ব্যাবহার হত যা দেহে ভিটামিন সি তৈরী করতে পারতো, কিন্তু বিবর্তনের ফলস্বরূপ এটি কার্যত এখন অকেজো, কিন্তু দেহে বিদ্যমান|
৪. Extra Ear Muscles-(Auriculares muscles) : বিভিন্ন প্রাণীর মতো আমাদের দেহেও এই অংশটি আছে, প্রাণীরা শব্দ ভালো করে শোনার জন্য কান নাড়াতে এটি ব্যাবহার করে, বিড়াল বা কুকুরকে হামেশাই করতে দেখা যায়| কিন্তু মানুষের মধ্যে হালকা নাড়ানো ছাড়া এটির আর কোনো কাজ নেই, এটিও বিবর্তনের ফল|
৫. Plantaris Muscle : পায়ের এই পেশিটি অনেক প্রাণী খাবার ধরতে ব্যাবহার করে থাকে, বানরদের মাঝে এটা দেখা যায়| কিন্তু মানুষের পায়ে এই পেশিটি থাকলেও কোনো কাজে লাগেনা| বিভিন্ন সময় দেহে পেশী অপারেশনের সময় ডক্টর এখান থেকে পেশী কেটে নেন| মানুষের দেহে এই পেশিটি এতই অপ্রয়োজনীয় যে শতকরা ৯ ভাগ মানুষ এটা ছাড়াই জন্মগ্রহণ করে|
৬. আক্কেল দাঁত (Wisdom Teeth) : প্রচলিত ধারণা এটি গজালে নাকি বুদ্ধি হয়, রসিকতা থাক| প্রাচীন যুগে এই দাঁতটি ব্যাবহার হত লতা পাতা খাবার জন্য, দ্রুত চর্বন ও শর্করা দ্রুত খেতে এটি ব্যাবহার করতো আদি মানবরা| কিন্তু বিবর্তনের ফলে অদরকারী হয়ে পরা অঙ্গটি এখনো দেহে বিদ্যমান ঠিকই কিন্তু বর্তমানে অনেক মানুষেরই এটি গজানো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বংশানুক্রমে|
৭. চোখের তৃতীয় পাতা (Third Eyelid) : কোনো বিড়ালকে কাছে থেকে চোখের পাতা ফেলতে দেখলে দেখা যায় যে, হালকা সাদা একটা অংশ চোখের মনির উপর দিয়ে চলে গেলো, এটা চোখের তৃতীয় পাতা| স্তন্যপায়ী প্রানীদের মধ্যে এই অংশটি বিরল হলেও পাখি, সরীসৃপ এদের মধ্যে স্বাভাবিক অংশ এটি| মানুষের মধ্যেও আছে এটি কারো কারো বেশ ভালো ভাবে দেখা যায়|
৮. Darwin’s Point-(plica semilunaris) : এই অংশটি স্তন্যপায়ীদের মধ্যে দেখা যায়, মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়, এটা প্রানীদের নির্দিষ্ট শব্দের প্রতি মনোযোগ দিতে সাহায্য করে কিন্তু মানুষের দেহে এর কোনো কাজ নেই| শতকরা ১০ ভাগ মানুষের দেহে স্পষ্ট দেখা যায়|
৯. Coccyx : মেরুদন্ডের এই অংশটি আগে লেজ হিসেবে ব্যাবহার হলেও বিবর্তনের ফলে এখন আর লেজ হিসেবে নয় বরং বিভিন্ন পেশির কাজে উঠা বসার সময় ব্যবহার হয়|
১০. Appendix : আগেও বলা হয়েছে, মানব দেহে এর কাজ নিয়ে বিভিন্ন মত আছে, সচারচর ব্যাবহার হয়না, অনেকে অপারেশন করে ফেলে দেন| ডারউইন এবং কিছু বিজ্ঞানীর মতে অতীতে যখন প্রচুর পরিমানে লতা পাতা খাবার হিসেবে গ্রহণ করতো আদি মানবেরা, তখন সেই বিপুল পরিমানের শর্করা হজম করতে এটি ব্যাবহার হত| এখন আর কোনো সঠিক ব্যাবহার খুঁজে পাওয়া যায়না|
৯ম প্রশ্ন : থার্মোডিনামিক্স এর ২য় সূত্র প্রমান করে বিবর্তন অসম্ভব, তাই না??
উত্তর: থার্মোডিনামিক্স এর ২য় সূত্রটি একটি বন্ধ ও আইসলেটেড সিস্টেম এর জন্য ব্যাবহার করা যায়, কিন্তু যেহেতু পৃথিবীতে সূর্য থেকে তাপ আসছে আর তাপ বাইরেও যাচ্ছে, তাই পৃথিবী কোনো বদ্ধ সিস্টেম না| তাপের আদান প্রদান এর উপর ভিত্তি করে তাপমাত্র বাড়ছে কমছে, তাই যতদিন সূর্য থাকবে ততদিন কোনো প্রাকৃতিক নিয়ম ভঙ্গ না করেই বিবর্তন হবে|
১০ম প্রশ্ন : মানুষের মূল্যবোধের সাথে বিবর্তনের ধারণা সঙ্গতিপূর্ণ কি??
উত্তর: অবশ্যই| মানুষ সামাজিক প্রাণী, তার মূল্যবোধ আজকের যে পর্যায়ে আছে তা একদিনে তৈরী হয়নি, বরং ধাপে ধাপে বিবর্তিত হয়ে আজকের রূপ পেয়েছে| আগে মানুষের যেরকম মূল্যবোধ ছিলো সামাজিক পট পরিবর্তনের হাত ধরে বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনের মাধ্যমেই মানুষ আজকের অবস্থানে এসেছে, এটাও কোনো অপরিবর্তনীয় অবস্থা নয়, ধীরে ধীরে ভবিষ্যতে এটাও পরিবর্তন হবে| তাই বিবর্তন চলমান একটি প্রক্রিয়া| তাই সমাজ ও মানুষ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল|
______________________________________________________________________
বিবর্তনকে মানা আর না মানার মধ্যে কিছুই নেই, না মেনে যারা থাকতে চায় তারা সত্যি অবজ্ঞা করে বাঁচতে চায়, যারা বিবর্তন সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক এত অল্প পরিসর কখনই যথেষ্ট নয়, ইন্টারনেটে অজস্র পেপার দেওয়া আছে বিজ্ঞানীদের, অজস্র উদাহরণ আছে সচিত্র, দেখতে শুরু করলে জানতে শুরু করলে দারুন ভালো লাগবে| বিবর্তন চলমান একটি প্রক্রিয়া, এখনো কাজ চলছে, প্রতিদিন নিত্য নতুন তথ্য আবিষ্কার হচ্ছে, এগুলো সহজ ভাষায় সাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সবার|
মন্তব্য
চমৎকার পোস্ট, অর্ফিয়াসদা। আশাকরি অনেকের ভ্রান্তি দূর হবে, উত্তর পেয়ে যাবে। খুব সহজ আর গুছিয়ে লিখেছেন।
ধন্যবাদ, বৃহৎ একটা ব্যাপারকে ক্ষুদ্র পরিসরে প্রকাশের অপচেষ্টা মাত্র ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করার ক্ষমতা কারোর নেই।
পৃথিবীতে এই ভ্রান্ত ধারণা দূর হলে..... মহা জগতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই মানতে হবে, মানতে হবে না যীশুর অলৌকিক ক্ষমতা. পরম আল্লাহ মিথ্যা হয়ে যাবে.....
ধর্মবাদীদের এক চরম সংকটের মুখে পড়তে হবে..... তার এটা মেনে নিয়ে পরবেন না।
========================
তাহলে কি হবে, বিবর্তন বাদের বিরোধীতা হবে,
হবে অপ প্রচার... লড়াই হবে ( সবই বুঝি,বিচার মানি, কিন্তু.. তালগাছটা আমার)
আরো বিস্তৃত হওয়া উচিত ছিলো। যতটা আশা করেছিলাম ততটা পেলাম না। আপনি বিবর্তন বোঝেন বলে আপনার কাছে জিনিসটা খুবই শজ হতে পারে। কিন্তু এই শিরোনামের একটা লেখা, অতিঅবশ্যই মাস পিপলকে উদ্দেশ্য করে লেখা হবার কথা। তাদের জন্য খুব বেশি কাজে লাগবে বলে মনে হয় না। প্রথম তিনটা উত্তর ভালোই লেগেছে। ষষ্ঠ এবং সপ্তম উত্তর খুবই ঝাপসা, যেখানে এদের উত্তরের সবচেয়ে বেশি ব্যাখ্যা অধিকৃত অবস্থান থাকার কথা ছিলো।
যাই হোক, আপনার প্রচেষ্টায় সাধুবাদ। অনুরোধ করছি, যদি সম্ভব হয় তবে কয়েক পর্বের সিরিজ নিয়ে এই বিষয়ে লিখবেন। বিবর্তন নিয়ে মুক্তমনার আর্কাইভ সবাই পড়ে দেখতে যায় না। সাধারণ্যের জন্য সচলে এমন লেখা দেখতে চাই।
বিশেষভাবে বলতে গেলে, অষ্টম প্রশ্নের উত্তর ভালো লেগেছে। চমৎকার।
সব বিষয় উঠে আসেনি। তারপরও ভালো প্রচেষ্টা। গুছিয়ে লিখেছেন। বিশেষ করে ৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর বেশ ভালোভাবে এবং সুন্দরভাবে দিয়েছেন।
আপনার জন্য শুভকামনা। আরো লিখুন।
ধন্যবাদ, আসলে প্রচলিত ১০ টি মিথ নিয়ে লিখেছিলাম, তাই সব বিষয় আলাদা ভাবে বিস্তারিত আসেনি, যদি আলাদা করে লিখতে যাই তাহলে এই ১০ টা মিথ নিয়েই ১০ টা পোস্ট সম্ভব, হয়তো তাও যথেষ্ট হবেনা| সহজ ভাষায় কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা মাত্র ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ধন্যবাদ, আসলে "সহজ কথা যায়না বলা সহজে" কিছুটা এরকম ছিলো ব্যাপারটা, তাও যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
সেইরকম লেখা হয়েছে! ফেইসবুকে বিবর্তন নিয়ে অনেক উল্টাপাল্টা কথার সেইরকম একটা জবাব হবে এটা।
-অ্যালবেট্রস
ধন্যবাদ, ফেইসবুকের উল্টা পাল্টা পোস্টগুলি এই লেখার প্রেরণা...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
facebook
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ধন্যবাদ|আগেই বলেছি স্বল্প পরিসরে পুরো বিবর্তনের ধারণা দেওয়া সম্ভবপর নয়, আর আরও তথ্য সংযোজন করলে লেখা অনেকটা দীর্ঘায়িত হত, ষষ্ট ও সপ্তম প্রশ্নের উত্তর তো ঝাপসা হবার কথানা, বরং বাকি প্রশ্নগুলো এই ২টি প্রশ্নের উত্তর আরও পরিষ্কার করে দিয়েছে, আর অযথা ওই ২টা প্রশ্ন নিয়ে লেখাটা বড় করতে চাইনি, সপ্তম প্রশ্নের পরবর্তী প্রশ্নেই সেটার উত্তর আরও পরিষ্কার হয়েছে, যাই হউক যদি কিছু ঘোলাটে লেগে থাকে তাহলে হয়তো আমার ব্যার্থতা, পরবর্তিতে আরও পরিষ্কার করে লিখতে চেষ্টা করবো|
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ভালো লিখেছেন দাদা, বেশ তথ্যবহুল।
চতুর্থ প্রশ্নের উত্তরে কিছু জিনিস যোগ করতে চাই-
১) Evolution মানে transfiguration না। নিজের জীবদ্দশায় কোন প্রাণী অন্য কোন প্রাণীতে রূপান্তরিত হয় না। বরং এটা বহু বছর ধরে ঘটে আসা মিউটেশনের ফল। সুতরাং কেউ যদি আশা করে যে হুট করেই আপনার চোখের সামনে বানর গোছের কিছু একটা আইনস্টাইন হয়ে যাবে, ভুল ভাবছেন।
২) বিবর্তনের মূলে রয়েছে প্রাকৃতিক নির্বাচন। মিউটেশনের ফলে তৈরি হওয়া মিউটেন্টগুলোর মাঝে যেটা পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে সেটা টিকে যাবে। প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন ঘটলে সেটা প্রজাতির টিকে থাকার উপর কীভাবে প্রভাব ফেলবে সেটার ব্যাখ্যাও বিবর্তনের কাছ থেকে স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশিত। আনন্দের ব্যাপার হলো, এ ধরনের ঘটনার পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ আছে। একটি হলো শিল্প বিপ্লবের আগে ও পরে ইংল্যান্ডে Peppered moth এর দুটো উপপ্রজাতি Biston betularia f. typica এবং Biston betularia f. carbonaria এর সংখ্যানুপাতের পরিবর্তন।
শিল্প বিপ্লবের আগে এই দুটোর মাঝে প্রথমটা সংখ্যানুপাতে অনেক বেশি ছিল। এর কারণ সেটার গায়ের রঙ সাদা বলে হালকা রঙের গাছের বাকলে এরা সহজেই মিশে যেত, শিকারী পাখিদের নজরে কম পড়তো। পরেরটার রঙ কালো হওয়ায় সেটাই শিকারী পাখির কবলে পড়তো বেশি। শিল্প বিপ্লবের পর বাতাসে দূষিত পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গেলে সেটার কারণে গাছের বাকলে গাঢ় রঙের পদার্থের প্রলেপ পড়া শুরু হয় এবং সেই ক্ষেত্রে গাঢ় রঙের বাকলে কালো মথের লুকোনোটা সহজ হয়ে পড়ে, কিন্তু সাদা মথগুলো পরিষ্কার ধরা পড়া শুরু করে। ফলে শিল্প বিপ্লবের পরের সময়ে সংখ্যানুপাতের পাল্লা উলটে যেতে শুরু করে। এই উদাহরণ প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্বের কার্যকরণের একটি সুন্দর দৃষ্টান্ত। বিবর্তনের ধারায় উদ্ভূত বিভিন্ন মিউটেন্টের মাঝে কোনগুলো টিকবে সেটা প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব যেভাবে ব্যাখ্যা করে, এখানে সেটারই প্রমাণ দেখি আমরা।
বিস্তারিত আছে http://en.wikipedia.org/wiki/Peppered_moth_evolution লিংকটায়।
ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়ার ক্ষেত্রে পরীক্ষাগারেই মিউটেশন চিহ্নিত করতে পারা যায়, শুধু তাই নয়- বিবর্তন আর গেম থিওরির সম্মিলিত ধারণায় পাওয়া Evolutionarily Stable Strategy এর ধারণা এবং তার তাত্ত্বিক prediction এর সাথে পরীক্ষার ফলাফল মিলেও যায়। বিজ্ঞানী Paul Turner এবং তাঁর গবেষণা সহকারীরা পরীক্ষাগারেই ভাইরাসের মিউটেশন শনাক্ত করেছেন।
http://www.yalealumnimagazine.com/issues/2006_05/evolution.html
শুধু তাই নয় নিজের পরীক্ষাগারে তিনি এবং আরেক বিজ্ঞানী Lin Chao একই ভাইরাসের দুটি মিউটেন্টের মাঝে পরীক্ষায় Evolutionarily Stable Strategy এর তাত্ত্বিক ফলাফলের অনুরূপ ফলাফল অর্জন করেছেন। সেটাও প্রাকৃতিক নির্বাচনের পক্ষেই কথা বলে।
http://homepage.univie.ac.at/karl.sigmund/Nature99a.pdf
৩) বিবর্তনবাদের ধারণার সাথে পরিসংখ্যান এবং গেম থিওরির ধারণার সম্মিলন ঘটিয়ে প্রাণীদের অনেক বৈশিষ্ট্য এবং আচরণের ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। যেমন-
ক) কোন প্রজাতিতে নারী পুরুষের অনুপাত মোটামুটি নির্দিষ্ট কেন থাকে
খ) গোষ্ঠীবদ্ধ প্রাণীর দুটি গ্রুপ একই রিসোর্স অধিকার করার চেষ্টা করলে সেখানে প্রতিটি মেম্বারের নিজস্ব স্বার্থ আর দলীয় স্বার্থের ট্রেড অফ কেমন হতে পারে
Cambridge University Press থেকে প্রকাশিত David Easley এবং Jon Kleinberg এর Networks, Crowds, and Markets: Reasoning about a Highly Connected World বইয়ের সপ্তম অধ্যায় Evolutionary Game Theory এ ধরনের আলোচনা রয়েছে।
ভালো লিখেছ অভীক, অনেকগুলো জিনিস আরও জানা হলো, ধন্যবাদ... লেখাটা সময় নিয়ে পড়েছ দেখে ভলো লাগলো.....
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
বলে কী! এটা তো সবসময় দেখা যাচ্ছে! একটা ছোট উদাহরণ দেই ন্যাচারাল সিলেকশনের,
পেনিসিলিনের ব্যাবহার শুরু হল ১৯৪১ এ, ন্যাচারাল সিলেকশনের কেরামতে পেনিসিলিন সহনশীল ব্যাকটেরিয়া তৈরি হল পরের ১ বছরের মধ্যে। মেথিসিলিনের ব্যবাহার শুরু হল ১৯৫৯ এ, সহনশীল ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেল ১৯৬১'তে।
১৯৯৯ এ কুইনুপ্রিস্টিন/ডালফোপ্রিস্টিনের ব্যাবহার শুরু, রেজিস্ট্যান্স ২০০০ এ।
২০০০ সালে লিনেজয়েডের ব্যাবহার শুরু, রেজিস্ট্যান্স ২০০১ এ।
২০০৩ এ ডাপটোমাইসিন ব্যাবহার শুরু, রেজিস্ট্যান্স ২০০৫ এ।
...
লেখাটা ভালো হয়েছে। তবে কিনা যাদের অন্তরে মোহর মারা থাকে তারা যুক্তি মানেনা
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ঠিক কথা, তথ্য সংযোজনের জন্য ধন্যবাদ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ভালো উদ্যোগ। লেখাটা আরেকটু গোছানো হতে পারত হয়ত।
ফসিল রেকর্ডে ফাঁকফোঁকর সম্পর্কে ডকিন্সের একটা ভালো বক্তব্য আছে - "ধরুন আমাদের কাছে দুটো যুগের দুটো ফসিল আছে। তাতে একজন ক্রিয়েশনিস্ট বলবে, ঐতো, মাঝখানে ফাঁক আছে! পরে তাদের মধ্যবর্তী সময়ের, মধ্যবর্তী চরিত্রের আরো একটা ফসিল পাওয়া গেল। তখন তারা ডবল আনন্দিত হয়ে বলবে, এখন তাহলে (তিনটের মধ্যে) দু-দুখানা ফাঁক আছে!"
মানবদেহেই ঘটমান বিবর্তনের সাম্প্রতিক লক্ষণ নিয়ে দুটো আর্টিকল -
Natural Selection Leaves Fresh Footprints on a Canadian Island
Still Evolving, Human Genes Tell New Story
goose bumps এর অনুবাদে পশমের বদলে রোম লেখা ভালো হবে মনে হয়।
ধন্যবাদ, লিঙ্ক সংযোজন করার জন্য ..
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
প্রচেষ্টাটা দারুণ।
তবে আমারও মনে হয়েছে আরেকটু সময় নিয়ে লিখলে স্পষ্টতর হয়তো ব্যাখ্যাগুলো। বিবর্তন নিয়ে একদমই প্রাথমিক ধারণা থাকায় আমি হয়তো প্রশ্নের উত্তরগুলো ধরতে পেরেছি, তবে তা না থাকলে মনে হয় খুব সরল হতো না কাজটা আমার জন্যে।
... ব্যাপার না, এ জাতীয় পরের লেখাটা তুই নিশ্চয়ই আরো গুছিয়ে, আরো সময় নিয়ে লিখবি।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
জটিল ...
তবে কিনা বিবর্তন বুঝতে কই আর এতো কষ্ট করতে হয়। আমারে দেখেন তাইলেই বুঝতে পারবেন।
আর আদম হাওয়ার ব্যাপারটা তাইলে ক্যামনে কি?
তবে বিবর্তনের ব্যাপারে আমি জানতাম তিন আপেলের কবলে পড়ে দুনিয়ার তিনবার বিবর্তন হইছে।
প্রথমে আদমের আপেল, তারপরে নিউটনের আপেল, আর কলিকালে স্টিভ জবস এর আপেল।
আরে উদাস ভাই আমিও তাই কই আমার দুই কানের উপরের দিকে এইরাম চুক্ষা ভাব কইথিকা আসলো!!
যদি চুক্ষা অংশটা বেশ ভালো কইরা বোঝা যায়, তাহলে কিন্তু আপনে সেই ভাগ্যবান ১০ ভাগের একজন...

----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
তাইতোরে ভাই, কি জ্বালা কনদেখি? কোন কিছুই তো আর আমার হাতে নাই।
আদম হাওয়ার ব্যাপারটায় আমার একটা প্রশ্ন অনেক দিনের, বলতে লজ্জা পাই
যদি প্রথমে খালি এই দুজনেই ছিলো তাহলে পরে নাহয় বুঝলাম এদের বাচ্চা কাচ্চা হইলো, কিন্তু এর পরে??? তাহারা তো একে অন্যের ভাই বোন ছিলো
কিজানি, সবই বিবর্তনের ফল
ভাগ্যিস নিউটনের মাথায় বেল বা কদবেল পরে নাই, তাহলে তো গেছিলো..
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
অরফিয়াস ভাই এই পোষ্টের জন্য
আমারা যারা ততটা বিজ্ঞান জানিনা। তাদের জন্য আরেকটু বিষদ হলে ভালো হয়। তবে নেচারেল সিলেকশন নিয়ে এত ধন্দ কেন থাকছে তা আজ অবধি পরিষ্কার নয়।
তবে মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়, সেটা অবশ্য কল্পবিজ্ঞানের মতোই - পৃথিবীর ক্লাইমেট চেঞ্জ হচ্ছে, এটা তো সত্যি। এই চেঞ্জ এর সাথে সভ্যতার বিবর্তনও কি অসম্ভব ?
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ তাপস দা, পুরো পৃথিবীটাই তো বিবর্তনের জোরে চলছে, সেটা যে ক্ষেত্রেই হউক না কেন, বিবর্তনের প্রভাব সব জায়গাতেই ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
বিবর্তন হইসে ঠিক, কিন্তুক মাইনষের কোনো বিবর্তন হয় নাই। আসলে ঈশ্বর জানতেন যে ডারউইন নামের এক বদলোক বিবর্তন-টিবর্তন আবিস্কার কইরা বসবে। সেজন্যই আসলে এতোসব প্রমাণ সাজায়ে উনি দিয়া দিসেন, যাতে বিজ্ঞানীরা ভুল বুইঝা হুদাই লাফালাফি করে।
আসলে সব প্রাণীর বিবর্তন হইসে, কিন্তু মাইষেররাটা যখন হওনের সময় হইসে তখন ঈশ্বর মানুষরে স্বর্গের আরাম থেইকা বঞ্চিত করলেন আর পৃথিবীতে আইনা ফেললেন!
এ বিষয়ে আমাদের মুখফোড়'দা ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। 
এ সম্পর্কে "আদমচরিত" হতে পারে মোক্ষম প্রমান... ঈশ্বর বড়ই পেচাইন্না জিনিস ..
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
বাংলায় এ ধরণের অসাধারণ রেফারেন্স দরকার আছে। কিন্তু আমি আরো তরলীকৃত রেফারেন্স তৈরী করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবো আপনাকে। যেমন প্রথম প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো:
যদি একই কাপড় থেকে লুঙ্গি আর শার্ট হতে পারে, তাহলে লুঙ্গি থেকে শার্ট হতে পারে না ক্যানো? কারন শুরুতে দুটোর উৎস একই থাকলেও, "বিবর্তন" এর কারনে একটা কাপড় লুঙ্গি হয়েছে আরেকটা হয়েছে শার্ট। কাপড়ের ক্ষেত্রে "বিবর্তন"টা হয়েছে "ফ্যাশন সিলেকশন" নীতিতে।
একই ভাবে আদিতে বানর গোত্রীয় পিতৃপুরুষ থেকে মানুষ আর বানর প্রজাতি এসেছে। এক্ষেত্রে বিবর্তনটা হয়েছে প্রাকৃতিক সিলেকশন নীতিতে।
--
এমনিতে খুব ভালো হয়েছে আপনার লেখা। ডাবল থাম্বস আপ।
মাহবুব ভাই আপনি করে বললে লজ্জা পাই,
আমি একটু আধটু চেষ্টা করেছি আর কি... তরলীকৃত করার প্রচেষ্টা জারি রাখবো, লেখাটা সময় করে দেখেছেন, ভালো লাগলো 
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ফ্যাশন সিলেকশনের উদাহরণটা ভালো হলেও সামান্য সমস্যা আছে।
কাপড়, মানে থান কাপড়, একটা র মেটেরিয়াল, আর লুঙ্গি বা শার্ট পরিধেয় হিসাবে ফিনিশড প্রোডাক্ট। সে অর্থে থান কাপড়কে পরিধেয়র কাতারে ফেলা যায় না। কিন্তু বাঁদর-মানুষের পূর্বপুরুষ (ধরে নিলাম লুসি গোত্রীয় কেউ) সে তো এখনকার চলতা-ফিরতা বাঁদর/মানুষের একই কাতারে, একরকম প্রাইমেট। এবং 'মোর প্রিমিটিভ' অর্থে বাঁদর তার বেশি কাছাকাছি, মানুষের তুলনায়।
এখানে মনে হয় এই উদাহরণটা বেশি মিলবে - বাকল এবং চামড়ার সাদামাটা উত্তরসূরী হল সুতি কাপড়ের একখন্ড পরিধেয়, ধুতি। সেটা দক্ষিণ এশিয়ায় বিবর্তিত হয়ে রূপ নিল লুঙ্গির, আর পারস্যদেশে পায়জামার। এখন 'মোর প্রিমিটিভ' অর্থে লুঙ্গি ধুতির বেশি কাছাকাছি। কিন্তু লুঙ্গি তো আর পায়জামাতে বিবর্তিত হবে না, বা পায়জামা লুঙ্গিতে। তারা নিজের নিজের পথে অল্প অল্প করে বিবর্তিত হতে থাকবে, যেমন পায়জামা ইউরোপে বনেছে প্যান্টুলুন।
এভাবেও চিন্তা করার রাস্তা দেখা যাচ্ছে ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
অনেক অজানা জিনিষ জানলাম। খুব ভালো লেগেছে, আমার যথেষ্ট গুছানো লেখা মনে হোল।
ধন্যবাদ, ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম ..
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আইন বিষয়ে আল্লাহর বিবর্তন-
প্রাচীন যুগ: আমার আইন মত চলবে
বর্তমান যুগ: আইন যাই হোক 'আমার আইন' বলে চালাবে
আস্তিকরা বিবর্তন মানতে চায়না তার কারণ তারা মনে করে তাতে ঈশ্বরের অপমান হয়, সে যে মানুষ সৃষ্টি করেছে তা ভুল প্রমানিত হয়, কিন্তু তারা কখনই বলে না কেন কোনো ধর্মগ্রন্থেই ডাইনোসর দের সৃষ্টি নিয়ে কিছু লেখা নাই, ঈশ্বর যদি সব কিছুই সৃষ্টি করে থাকে তাহলে ডাইনোসর কি কারণে সৃষ্টি করেছিলো তা জানতে মন চায়, এটা কি কোনো এক্সপেরিমেন্টাল ইরর ছিলো নাকি কোনো রসিকতা ???
ঈশ্বররে একবার জিগাইবার মন চায় .. 
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আমেরিকার কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাইনোসরের কংকাল আছে যার বয়স ৩০০০ বছর!!!! বিশ্বাসে মিলায় বস্তু
বিবর্তনের বিরুদ্ধে যারা তর্ক করে, তারা বিবর্তনের ধারণাটাকে শত্রুজ্ঞান করে তর্কে নামে বলে তাদের বোঝানো মুশকিল। এই প্রশ্নোত্তরও তাদের খুব কাজে আসবে বলে মনে হয় না, যদি না বিবর্তনের প্রক্রিয়াটা সম্পর্কে তাদের মোটামুটি ধারণা না থাকে। আর বিবর্তন নিয়ে যারা এঁড়ে তর্ক করে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা বোঝে না ব্যাপারটা কী, বুঝতে চায়ও না। দেখা যায় তারা হয় জোকার নায়েকের রেফারেন্স দেয়, নয়তো কোনো অবস্কিওর বিজ্ঞানীর, যে কি না বিবর্তনকে খুব ধুয়েছিলো একশো বছর আগে, কিছু না বুঝেই।
বিবর্তন নিয়ে তর্কে বিবর্তনমূর্খকে বিবর্তনের গতি বোঝাতে খুব বেগ পেতে হয়। যেহেতু বিবর্তন নির্ভর করে এক জেনারেশন থেকে আরেক জেনারেশন তৈরি হওয়ার সময় মিউটেশনের ওপর, এর গতি পুরোপুরি নির্ভর করে ঐ প্রজাতির জেনারেশন পিরিয়ডের ওপর। মানুষের জেনারেশন পিরিয়ড কুড়ি থেকে পঁচিশ বছর। কাজেই একটি মিউটেশনের প্রজন্মান্তর দেখতে চাইলেও আমাদের পঁচিশ বছর অপেক্ষা করতে হবে। পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে প্রায় এক বিলিয়ন বছর ধরে, সেখানে পঁচিশ বছর একটা হাস্যকর রকমের ছোটো সময়। এ কারণেই বিবর্তন নিয়ে যারা এঁড়ে তর্কে নামে, তারা একটা খোঁড়া যুক্তি সবসময় দেয়, কেন বিবর্তন আমরা চোখে দেখি না। একটা প্রজাতির বিবর্তন বা স্পিশিয়েশন দেখতে গেলে যে কয়েক হাজার জেনারেশন পিরিয়ড অপেক্ষা করতে হবে, এ ব্যাপারটা তাদের বোঝানো শক্ত। এ কারণেই বিজ্ঞানীরা এমন কোনো কিছু বেছে নেন, যেসব জীবের জেনারেশন পিরিয়ড ছোটো। একটা ব্যাকটিরিয়া ধুপধাপ নতুন জেনারেশন তৈরি করে, তাই হয়তো এক বছরের মধ্যেই একটা ব্যাকটিরিয়ার স্পিশিজকে বিভিন্ন কনস্ট্রেইন্টে ফেলে স্পিশিয়েশন চোখে দেখা সম্ভব, কিন্তু বিবর্তনমূর্খ তো আর মাইক্রোস্কোপে চোখ রাখতে চায় না। তাদের জন্যে পরে দেখাতে হয় ড্রোসোফিলা মেলানোগাস্টার (একটা মাছি) কিংবা ইঁদুরের বিবর্তন। সেসব দেখালে তারা বলে, দেক্সো, বিবর্তন খালি সোডোখাডো জিনিসের উপ্রে হয়, মাইনষের কোনো বিবর্তন হয় না!
আমি আগেই লিখেছি,যারা বিবর্তন মানতে চায়না তারা সত্য অবজ্ঞা করে বাঁচতে চায়, তাদের জন্য কোনো সমবেদনা নেই, কিন্তু যারা জানতে চায় তাদের সরল ভাষায় জানানোর জন্য প্রচেষ্টা জরুরি মনে হয়, প্রমান চোখে দেখার পরেও যদি কেউ মানতে না চায় তাহলে জোর করে মানানো যায়না, তেমনি কেউ যদি এরে তর্ক করে তাদেরও বুঝিয়ে কোনো লাভ হয়না, বিশেষ করে জোকার নায়েকের মতো যারা বোকাচো** তাদের কথা বলে কি লাভ??? এদের তো জ্ঞানপাপীও বলা যায়না কারণ এদের তো কোনো জ্ঞানই নাই!!!! কিন্তু দেখবেন বাংলাদেশে অনেক টিভি চ্যানেল এই জোকার এর অনুষ্ঠান সারাদিন প্রচার করে, পিস (peace) টিভি নামের একখানা চ্যানেল আছে আমি মনে করি (piss) পিস টিভি, এই অভদ্রলোকের কথা ছাড়া ঐখানে আর কিছুই দেখায়না মনে হয়, একখানা ভিডিও শেয়ার করেছিলাম ফেসবুকে যাতে ৫ মিনিটে ওই ব্যাটা ২৫ টা ভুল আর মিথ্যা বলেছিলো, কিন্তু সেই ভিডিও তো খুব বেশি লোক শেয়ার করে নাই !!!
কোনো মানুষ অন্ধকারে থাকতে চাইলে তারে টানাটানি করতে চায়না আলোতে আনার জন্য, কিন্তু যারা আলোতে আছে তারা যাতে টানাটানির ঠেলায় অন্ধকারে না ঢুকে টা দেখার দায়িত্ব আছে মনে করি ..
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
দারুণ পোস্ট। এটার ধারাবাহিকতায় আরো পোস্ট আসবে আশা করি।
আগ্রহী পাঠকদের জন্য বিবর্তন বিষয়ক নানান প্রশ্নের উত্তর নিয়ে মুক্তমনার করা বেশ সমৃদ্ধ বিবর্তন আর্কাইভের লিঙ্কটা এখানে দিচ্ছি।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ধারাবাহিক লেখা চালানোর ইচ্ছা আছে, দেখি কতটুকু সফল হই
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
একটা বিখ্যাত উক্তি দিয়ে আমার কথাটুকু বলে যাই:
ইশ্বরকে দরকার আছে কি নাই, সেটা তো আস্তিকদের বলতে গেলে খুন করে ফেলবে, ওই কাজটাই তো ভালো পারে, কিন্তু যুক্তি তর্ক মানার মানসিকতা কজনের আছে???
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আসলে গড বিবর্তন তত্ত্ব দুনিয়ায় পাঠাইছে বিশ্বাসের খুটি কতটা পোক্ত সেইটা পরীক্ষা করার জইন্য
love the life you live. live the life you love.
আসলেই একদম রোস্ট করে ফেললো...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আসাধারণ একটা পোস্ট। পড়ার সময় আমি নিজেকে নিজে দেখছিলাম; বিশেষতঃ কানের কাছটা! বিবর্তন এবং বিজ্ঞান সংক্রান্ত এ ধরনের গোছানো পোস্ট আরো আশা করছি আপনার কাছ থেকে।
পোস্টে পাঁচ তারা
টুইটার
অসংখ্য ধন্যবাদ,
কানে কি পাইলেন ?? জানতে মন চায়
চোখা হইলেই কিন্তু ভাগ্যবান ১০ ভাগের অংশীদার হে হে ....
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
হ্যা, আমারটা চোখা। প্রথমে নিজে দেখেছি। পরে বৌকে দিয়ে চেক করিয়েছি। এখন বুঝতে পারছি না যে খুশি হবো নাকি নিজেকে প্রাগঐতিহাসিক ভাববো!
টুইটার
ভালো লাগলো। যুক্তিবহুল একটা লেখা। অনেক কিছুই জানলাম নতুন করে।
ধন্যবাদ, যুক্তি ছাড়া দুনিয়া অচল, যুক্তিতেই মুক্তি ..
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ধন্যবাদ অরফিয়াস গুছিয়ে লিখার জন্য।
অনেক কিছুই বলার ছিল, তবে সংক্ষেপে বললে- বিবর্তন আসলে বিশ্বাস-অবিশ্বাস বা তর্ক করার বস্তু নয়, বিবর্তন হচ্ছে fact, যা জানার বিষয়। বিবর্তনকে feel করা সবার জন্য সহজসাধ্য না, তবুও বলছি শুধুমাত্র DNA ও RNA evolution এর mathematical ও algorithmic model গুলো জানলে আপনি অনেকটা যোক্তিকভাবে চিন্তা করতে পারবেন; অন্তত বিবর্তন বিষয়ে। কারন আমরা সবাই mathematics বিশ্বাস করি। বেতাল, অনার্য সঙ্গীত ও হিমু স্রোতের বিপরীতে অনেক fact তুলে ধরেছেন; ধন্যবাদ তাদেরকে। কিন্তু সবশেষে এটাই সত্য যে, অন্তরে মোহর মারা থাকলে যুক্তি মানা যায়না।
ধন্যবাদ আপনাকেও, ছোটবেলায় শ্রদ্ধেয় আব্দুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিন স্যার এর বই পড়তে খুবই ভালো লাগতো, বিজ্ঞানকে ভালোবেসেছি তার বই থেকেই, উনি খুব সহজ ভাষায় ছোটদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক বই লিখতেন, তাতে অনেক গভীর কথা সরল ভাষায় লিখে গেছেন, যার প্রকৃত গভীরত্ব আজ টের পাই, উনার মতো বিজ্ঞানী কম আছেন দেশে, যারা এত সহজ ভাষায় বর্ণনা করতে পারেন জটিল বিষয়গুলো| বিজ্ঞান ছোট শিশু ও সাধারণ মানুষের নাগাল আনতে হলে তাকে সহজ বাংলা ভাষায় বর্ণনা করা জরুরি, এর জন্য সম্বিলিত প্রচেষ্টা জরুরি ....
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ভালোলাগা জানালাম
ধন্যবাদ জানালাম ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
অনেকেই এধরনের পোস্টগুলোকে পাত্তা দেয় না, ফেসবুকে সেদিন একটা নোট দেখলাম বিবর্তন একটি বাতিল হাইপোথিসিস। কি আশ্চর্য এরা কি অসুখ হইলে অ্যান্টিবায়েটিক খায়না ? কখনো কি ফুলকপি , বাধাকপি খায়নাই ? এমনকি সাগর কলা,সবরি কলা, হাজার রকমের কলা , উন্নত জাতের ধান? এইডস রোগের চিকিৎসা বের করতে বিজ্ঞানীরা এত হিমশিম খাচ্ছেন কেন ? আমাদের ব্যাক পেইন কেন হয় ? চোখের ব্লাইন্ড স্পট থাকার কারন কি ? মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে অ্যালবিনো পাওয়া যায় কেন ? এরকম হাজার হাজার প্রশ্নের উত্তর বিবর্তন তত্ত্ব ছাড়া দেওয়া সম্ভব নয় । লেখার জন্য ধন্যবাদ আশা করি ভবিষ্যতে আরো বিষয় তুলে ধরবেন
ধন্যবাদ| আসলে কেউ পাত্তা না দিলেও কিন্তু আমরা বিবর্তনেরই ধারক ও বাহক, তাই কেউ যদি মানতে না চায় তাহলে তাকে অন্ধ বলতে হবে, আর কেউ যদি জানতে চায় তাহলে প্রমানের অভাব নেই ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
৬ এর উত্তর - ল্যারেঞ্জিনিয়াল নার্ভের বিবর্তন মাছ থেকে জিরাফে -
http://www.youtube.com/watch?v=cO1a1Ek-HD0
ভিডিওটা দেখলাম, বেশ ভালো উদাহরণ ..
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
দারুণ উদ্যোগ। কিন্তু ভাষা কোথাও কোথাও বেশ খটোমটো, আর উদাহরণ আরও প্রয়োজন ছিলো মনে হয়েছে। তবে সচলদের মন্তব্যগুলোতে সে ঘাটতি অনেকখানি পুরিয়ে গেছে।
)
(আমি মনে হয় বেশ প্রিমিটিভ, একটা-দুইটা না, চার-চারটা আক্কেল দাঁত ভালোই জ্বালাচ্ছে!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ধন্যবাদ,
আসলে সহজ ভাষা বজায় রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছু জায়গায় সেটা অসম্ভব মনে হয়েছে, পরবর্তিতে আরও চেষ্টা থাকবে ...
)
( চার চারখানা আক্কেল দাঁতের জন্য শুভেচ্ছা নিন
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আপনাকে স্যালুট এরকম একটা লেখার জন্য।
তবে আমার কাছে অদৃশ্য কোন শক্তিতে আস্থা স্থাপন করা কে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সমাধান মনে হয়। তবে এটা বিশ্বাস করি না সেই শক্তিটি সাত-আসমানের উপরে কোন আরশে বসা একজন পর্যবেক্ষক। সেই অদৃশ্য শক্তি আমাদের জুড়েই আছে, সেই শক্তিতে বিশ্বাস করে আশায় বুক না বাধলে কিন্তু আজকের সভ্যতা এই পর্যায়ে এসে পৌঁছাত না কখনোই।
কিন্তু অদৃশ্য শক্তিতে বিশ্বাস করতে গিয়ে আমাদের অনেকেই নিজের পর্যবেক্ষনকে শিকল পড়িয়ে রাখি। আমি যেটি লক্ষ্য করেছি আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত এবং প্রগতিশীল তরুনও শুধুমাত্র নিজের ভেতরের এই শেকলে আটকে পড়ে প্রমানিত সত্যকে এড়িয়ে চলতে চায়।
একটা সময় সেই আবর্তে বন্দি ছিলাম আমি নিজেই। সত্যকে অস্বীকার করার আমাদের এই প্রবনতার জন্য আমাদের সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থা অনেকখানি দায়ী। জানিনা মুক্তি মিলবে কবে!
ধন্যবাদ
| আসলে দেখুন, অদৃশ্য কোনো শক্তি বোঝাতে আপনি কি চিন্তা করছেন সেটা স্পষ্ট নয় এখানে, আর দেখা না গেলেই সেই শক্তিটা নেই এমনও কিছু নয়, কিন্তু কথা হচ্ছে সেটার যৌক্তিকতা কতটুকু আছে, আশায় বুক বাধার জন্য কি খুব একটা অলৌকিক কিছুতে বিশ্বাসের দরকার?? নাকি সত্যি জেনে কাজ করা আরও বেশি উপযুক্ত??
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
দারুণ ! তবে লেখাটা আরো একটু সহজ ভাষায় হলে আরো ভালো লাগত।
ধারাবাহিকভাবে লিখলে আরো চমৎকার অনেক কিছু জানতে পারব।
অনেক টার্মই বাংলায় ব্যাখ্যা করা কষ্টকর, তবুও চেষ্টা করেছি,
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
কিসব মিয়া বিবর্তন বিবর্তন লাগাইছেন! কইলেই হইলো বান্দর আমার কাজিন! নাউ এক্সপ্লেইন দিস
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
http://www.rationalistinternational.net/article/20041001_en.html এই নেই এক্সপ্লানেশন
সাধারণ ধারণা থাকাই পোস্টটির সাথে কো-রিলেট করতে পারলাম। কিন্তু যাদের ধারণা নেই,তাদের ধারণা দিতে গেলে হয় কিছুই বোঝে না কিংবা জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে কিছুই বোঝাতে পারি না
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
একদমই ধারণা না থাকলে মনে হবে গাঁজাখুরি বলা হচ্ছে, সেরকম কেউ হলে তাকে প্রথমে সময় করে শুরুর থেকে বোঝাতে হবে, আর একসময় পড়তে শুরু করলে নিজে থেকেই অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
এসব লেখা পড়ে আশ্বস্ত হই, সত্যি, "একদিন ভোর হবেই"
অন্ধকারে আর কতদিন থাকা যায় বলুন, ভোর যে হতেই হবে ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
১ নং প্রশ্নের উত্তরে ২য় এবং ৩য় ছবিগুলো দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছেন তা বোঝা গেল না। এটা কি মানুষ বানর গোত্রিয় প্রজাতি থেকে কিভাবে বিবর্তিত হয়ে আজকের মানুষে রূপান্তরিত হইল সেটার ব্যাখ্যা?? কিন্তু লুসি হিসাবে যেই জিনিসটার ছবি দেখানো হচ্ছে মানুষের পূর্বপুরুষ হিসাবে সেইটা তো আজকের দিনের একটা ৩ ফুট শিম্পাঞ্জি!!! ছবির নিচে ক্যপ্সনতো তাই বলছে!! নেবারাস্কা মানুষ বিবর্তনবাদীদের উর্বর মস্তিষ্কের ফসল,এইটা আগে জানতাম। আপনার ছবির ক্যপ্সনেও তাই বলা আছে। এই ছবিগুলোর সবকটিই বিবর্তনবাদীরা যে অসৎ উপায়ে আমাদের বিভ্রান্ত করছে তার প্রমাণ।।আপনি ডারুইনবাদের সাপর্টে লিখতে গিয়ে কেন এই ছবি দিলেন তা বুঝলাম না।।
একটা সহজ় প্রশ্ন করছি। ডারুইনের বিবর্তনবাদ প্রয়োগ করতে হলে পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব হতে হয়। কিন্তু পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব কিভাবে হইল এই ব্যাখ্যাইতো ডারউইনবাদে পাইলাম না।।আপনি দিতে পারবেন???
১ম প্রশ্নের উত্তরে ১ম যে ছবিটা আছে সেটা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমগোত্রীয় প্রাইমেটদের জীবনকাল, জীবনযাত্রার উপরে আলোকপাত|
১ম প্রশ্নের উত্তরে ২য় যে ছবিটা আছে তা বিভিন্ন সময়ের ভুলত্রুটিগুলোর উপরেও আলোকপাত করেছে| ফসিল থেকে তথ্য বের করা কতটা ঝামেলার তা আশা করি ২য় প্রশ্নের উত্তরে পেয়ে থাকবেন, তাই কোনো ভুল সিদ্ধান্তে অবতীর্ণ হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু পরবর্তিতে সেই ভুল স্বীকার করে সঠিক সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, আর দিয়েছে বিবর্তন নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীরাই|
বিজ্ঞান নিয়ে সংযত ভাষায় কথা বলাটা জরুরি, এখানে কোনো কিছুই উর্বর মস্তিষ্কের ফসল না| প্রমান সাপেক্ষ জ্ঞান, তাই ভ্রান্তি থাকলে সেটা প্রমানের উপর ভিত্তি করেই দূর হবে এটাই স্বাভবিক| বিবর্তনবাদীরা অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো ছবিই ব্যাবহার করছেনা, এটা আপনার মতো মানুষের উর্বর মস্তিস্ক প্রসূত ভাবনা, অতীতের ভুল শুদ্ধ করে এগিয়ে চলে বিজ্ঞান, তাই বিজ্ঞান মানেই বিবর্তন| বিবর্তনকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করার কোনো দরকার নেই|
ডারউইনবাদ বলে আলাদা কিছু নেই, বিবর্তন নিয়ে স্যার ডারউইন এর কাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কখনো কখনো বিবর্তনবাদকেই ডারউইনবাদ বলা হয়ে থাকে| ডারউইন এর কাজ সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য সমৃদ্ধ, সেটা তার লেখা বইগুলো পড়লে আরও ভালো জানা যাবে| কিন্তু আমার লেখা যেই ছবি গুলো ব্যাবহার করা হয়েছে তা একই সাথে জীব জগতের বিবর্তন ও বিবর্তনবাদের ও বিবর্তন প্রকাশ করে কোনো তথ্যই আকাশ থেকে আসে নাই, বছরের পর বছর পর্যবেক্ষন করার পরেই উপসংহারে আশা সম্ভব, কিন্তু সেটারও পরিবর্তন হতে পারে নতুন তথ্যের ভিত্তিতে| তাই কোনো তথ্য ভুল বলেই আস্তিকদের নৃত্য করার দরকার মনে করিনা, বিজ্ঞান নিজের ভুল নিজে ঠিক করে| কোনো ধর্মীয় নেতা সেটা ঠিক করে আসতে যায়না|
পৃথিবীতে প্রানের উদ্ভব হবার প্রশ্নে এখনো কাজ চলছে, একটি নির্দিষ্ট উপসংহারে আসার এখনো সময় হয়নি| তার মান এই নয়যে, তাতে বিবর্তন নিয়ে কাজ করতে ঝামেলা হবে| বিবর্তন প্রানের উদ্ভব হবার পর থেকে এখনো পর্যন্ত চলে আসা পরিবর্তনগুলোকে দেখায়, এতে কোনো সমস্যা নেই|
কিছুদিন আগেই, নাসা এবং আরও কিছু বিজ্ঞানী থেকে প্রাপ্ত প্রমান ও তথ্যে দেখা গেছে, মহাকাশের থেকে প্রাপ্ত খন্ডে প্রাণ সৃষ্টিকারী পদার্থের অনু পাওয়া গেছে, তাই একটি তত্ত্ব আস্তে আস্তে উন্নত হচ্ছে যে, আসলে পৃথিবীর প্রানের উদ্ভব হয়তো পৃথিবীর বাইরে হতে আগত বস্তু থেকে হয়ছে| এখনো কাজ চলছে, তাই কোনো উপসংহারে যাওয়া যাচ্ছেনা|
আমি কতটুকু উত্তর দিতে পারলাম জানিনা, আরও জানতে হলে কষ্টকরে বিবর্তনের উপর লেখা বই পড়ুন, আর মাথা একটু ঠান্ডা রাখবেন পড়ার সময়|
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ভাই সহজ প্রশ্নটির উত্তর আপনার জানা থাকলে আমাদের জানাবেন কি?
প্রাণের উদ্ভব ব্যাখ্যা করা তো ডারউইনবাদের লক্ষ্য বা বক্তব্য নয়। 'প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন' এই থিয়োরি হল ডারউইনবাদ। সেটা জীবের উপর প্রযোজ্য হতে পারে, অন্য কোনো রেপ্লিকেটিং মিউটেশন-সক্ষম সিস্টেমের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ডকিন্স সেটা পরীক্ষা করার জন্য 'বায়োমর্ফ' বলে একটা কম্পিউটার সিমুলেশনের মধ্যে চালিয়েছিলেন, তাতেও একই ভাবে বিবর্তন হয়েছে। মেশিন লার্নিং-এর একটা বহুপ্রচলিত অ্যালগরিদম হল 'জেনেটিক অ্যালগরিদম', তাতেও একই থিয়োরি ব্যবহার করা হয়।
প্রাণের উৎস বিজ্ঞানের অন্য প্রশাখায় গবেষণা করা হয়। বজ্রপাতের দ্বারা অ্যামিনো অ্যাসিড সৃষ্টি, ভিনদেশী উল্কাপাত, ইত্যাদি নানা থিয়োরি নেড়েচেড়ে দেখা হচ্ছে সেখানে।
খবরটা আগেই দেখেছি, বেশ কিছুদিন আগে, খোঁজাখুঁজি করেও এর সত্যতা খুঁজে পাইনি, শুধুমাত্র একটি সৌদি আরব ভিত্তিক আর্টিকেল ছাড়া, আর এরকম কিছু পাওয়া গেলে সেটা আর যাই হোক, ডিসকভারি আর ন্যাশনাল জিওগ্রাফির থেকে অন্তত জানা যেতো, কিন্তু তার কিছুই হয়নি, তাই একে প্রমান ছাড়া কিছু উদ্ভট অসাধু মস্তিস্ক প্রসূত কুমতলব ছাড়া আর কিছু বলা যাচ্ছেনা, যদি এতই সৌদি সরকারের আল্লাহের প্রতি বিশ্বাস থাকতো তাহলে তারা ঘটা করেই সেটা সবাইকে দেখতে দিত, প্রচার করতো ...তা না করে এত লুকোচুপির একটাই মানে থাকে, সব ফালতু|
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
ভীষণ কাজে'র একটি লেখা...
সময় করে পড়েছেন দেখে ভালো লাগলো....
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
চমৎকার লাগলো। মুক্ত বুদ্ধির চর্চা সচলেই সম্ভব। অনেক ধন্যবাদ তথ্যবহুল পোস্টটির জন্যে।
ধন্যবাদ, মুক্তবুদ্ধির চর্চা চলুক বাধাহীন ভাবে ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
খুবই কাজের লেখা। কিন্তু একটু সন্দেহে আছি আদৌ এটা কোন কাজে আসবে নাকি। হয়ত এটা তর্কে আমাদের যুক্তি দেওয়া আরেকটু সহজ করল, কিন্তু দিনের শেষে একজন "মোমিন মোসল্লি" বা সমগোত্রীয় ঠিকই বলবে, "না, তুমরা ভুল বুঝিতেস, আরেকটু কোরান-হাদীস ঘাটিয়া দেখ, সবই ঠিকঠিক বুঝিতে পারিবা।"
আমার এক আস্তিক বন্ধুর সাথে সেদিন তর্কে নতুন যুক্তি পাইলাম। "দাউদের সময় একদল লোক আল্লাহর আদেশ না মাইনা নদীতে মাছ ধরসিল, শাস্তি হিসেবে আল্লাহ তাদের বানর বানায়ে দিসেন।" এরকম একটা গল্প "আদি ও আসল কাছাছুল আম্বিয়া (বড়দের জন্য)" ঘাটলে আরো অনেক চটিমার্কা গল্পের সাথে পাওয়া যাবে। গল্পটার আরো অনেক রেফারেন্স হয়ত আছে ধর্মের বইগুলাতে। আমার আস্তিক বন্ধুর যুক্তি হইল, আল্লাহ আসলে এদের একবারে বানর বানান নাই, ধাপে ধাপে মানুষ থিকা বানর বানিয়েসেন। আমরা আসলে এদেরই ফসিল পাইয়া উল্টাটা ভাইবা দিনাতিপাত করতেসি।
"মানুষ বানর থেকে হয়নাই", এই সত্যটা aside, আমি তাকে যুক্তি দেখাইলাম, ধাপে ধাপে বানাইলে তো ব্যাপারটা বহুত দিন ধইরা হওয়ার কথা, কিন্তু গল্পে তো আছে আল্লাহ তাদের সরাসরি বানর বানাইসেন।
দোস্তঃ "নাহ, আল্লাহ আসলে জানতেন, ঐ লুকগুলা এরকম করবে, কথা শুনবে না। তাই আল্লাহ তাদের ধাপে ধাপে তাদের বংশক্রমে বানর বানাইসেন।"
আমিঃ "তাইলে আর ওদের দোষ দিয়া লাভ কি? ওরা তো আগে থিকাই জানত তারা বানর হয় যাবে, কলা খাইতে হবে, মানুষ থাকতে থাকতেই শেষবারের মত মাছ খাইতে চাইসিল, তাই।"
"আল্লাহই বরং হুদাই তাদের খারাপ বানাইল। শয়তানেরও তো তাইলে এইখানে কোন কাজ থাকল না।"
দোস্তঃ "না, আল্লাহ আসলে আমাদের কনফিউজড কইরা বিশ্বাসের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এই প্ল্যান করসে। আমরা কি তার সবকিছু বুঝি?"
আর তারপরে, সেই চিরাচরিত ত্যানা প্যাঁচানি সার্কুলার আর্গুমেন্ট
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
ধন্যবাদ, ত্যানা যারা পেঁচায় তাদের জীবনটাই ত্যানা হয়ে আছে...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
রিচার্ড ডকিন্সের "দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ" বইটিতে জিনবিজ্ঞানী জে.বি.এস হ্যালডেনকে নিয়ে একটা মজার এনেকডোট ছিল,
একটা ডেভেলপিং ভ্রুণ যদি জেনেটিক কোড অনুসরণ করে মাত্র নয় মাসে একটা কোষ থেকে একজন জলজ্যান্ত মানুষে বিবর্তিত হতে পারে, তবে র্যান্ডম প্রকরণের(variation) উপর তীব্র নির্বাচনী চাপের ফলে কোটি কোটি বছর ধরে একটামাত্র কোষ থেকে মানুষের মত জটিল প্রাণীর বিবর্তিত না হওয়ার কোন কারণ নেই। এই দীর্ঘ সময়ে শুধু প্রজাতি না, প্রজাতির জিনোমও বিবর্তিত হয়েছে। যে মানুষ বড় জোড় ৭০ বছর বাঁচে, তার পক্ষে কোটি কোটি কেন, কয়েক হাজার বছরের দীর্ঘত্ব বোঝাও সম্ভব না।
জিনের একটা ক্ষুদ্র পরিবর্তনকেও হেলাফেলা করা চলবে না। ড্রসফিলা নামক এক ফলের মাছির একটা জিন একটু পরিবর্তন করলেই মাথার জায়গায় পা দেখা দেয়(Antennapedia), এমনকি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মাথাও তৈরী করা গিয়েছে। এরকম কোন বিকট শারীরিক পরিবর্তন যদি কোন প্রজাতির প্রজনন সাফল্য একটু হলেও বাড়িয়ে দেয়, তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একটা প্রজাতির শারীরিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। প্রাণীর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের উপর জিনের ক্ষুদ্র পরিবর্তনের এরকম বিকট প্রভাব সহ আরও অনেক ফ্যাক্টর আমাদের আজকের জীববৈচিত্র্যের জন্ম দিয়েছে।
যারা যুক্তি ও প্রমানে বিশ্বাসী নয় তাদের বলে লাভ নেই, শুধু আমাদের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা থাকতে পারে, সেটাই বা কম কি??..
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
স্মৃতি তুমি বদনা
অজ্ঞাতবাস
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
সুন্দর লিখেছেন
ধন্যবাদ ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
আস্তিক তো বহু মানুষই, সবাইকে এক ব্রাশে রঙ দেওয়ার মানে হয় না। বিবর্তনবাদ আমার চমৎকার লাগে, আমার ধর্মবোধে সেটা্র সাথে কোন সমস্যাই হয় না। আপনারা যাদের সাথে তর্ক করছেন, তারা হল আমেরিকান ক্রিয়েশনিস্টদের ইসলামিস্ট ভার্শন (কোন বাংলাদেশি আধা-পাকা ইসলামিস্ট থার্মোডিনামিক্স দিয়ে বিবর্তনবাদ নিয়ে তর্ক করতে গেছে এটা বিশ্বাস হয় না)/ তবে আজকাল আমরাও পড়াশোনা শিখে ফেলছি কি না, এখন আমরাও ছদ্ম-বিজ্ঞান, শিক্ষিত কুতর্ক ইত্যাদি দিয়ে ধর্মের আলাপে নেমে পড়ছি। এখন আমাদেরও টেলে-এভানজেলিস্ট আছে। যা হোক, আপনি যেরকম বললেন, বিজ্ঞান তো আর ধর্ম না, এটা আকাশ থেকে আসে না। বারবার বিভিন্ন ভাবে বহুবছর ধরে একটা থিওরি গৃহীত, বর্জিত বা পরিমার্জিত হয়। বিজ্ঞানীরা নিজেরাই তা করে। বিজ্ঞানের তো এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আমার আল্লাহ বিশ্বাসের সাথে এর কোন কিছুর বিরোধ হবার কি আছে আমি এটাই বুঝি না।
নতুন মন্তব্য করুন