আঠার পাঁচালি

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ১৫/১০/২০১১ - ৫:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মারুফি ভাইয়ের সাথে পরিচয় ধানমণ্ডি লেকের আড্ডায়। রাইফেলস এর মার্কেট কমপ্লেক্সের উল্টোদিকে সন্ধ্যার পর আমরা নানা কিসিমের লোক জড়ো হয়ে রাজাউজির মারি এবং তাদের স্ত্রীকন্যাদের নিয়ে আদিরসাত্মক গল্প ফাঁদি। একেক দিন একেক লোকের বন্ধুবান্ধব সেই আড্ডায় এসে জোটে, তাদের কেউ কেউ নিয়মিত আড্ডাধারীতে পরিণত হয়, কেউ হয়তো তর্কাতর্কি ঝগড়াবিবাদ করে সেই তল্লাট ছেড়ে বিবাগী হয়ে চলে যায়।

এমনই এক সন্ধ্যায় আড্ডামঞ্চে পায়ের ধূলো দিলেন মারুফি ভাই।

তাঁকে দেখলেই বোঝা যায় তিনি আর্টকালচার লাইনের লোক। মাথায় একটি জিন্নাহ টুপি, পরনে টিশার্ট, তার ওপরে ফোটোগ্রাফারদের জ্যাকেট, সেই জ্যাকেটের পকেটগুলো রহস্যময় রকমের ফোলাফাঁপা, এবং সবশেষে একটি ঢলঢলে জিন্সের প্যান্ট। তাঁর স্যাণ্ডেল দুটো যে দুইরকম সেটা বোঝার জন্যে প্রচুর মনোযোগ ব্যয় করতে হয়, কারণ যত্রতত্র পায়ের ধূলো গ্রহণ ও বর্জনের প্রক্রিয়ায় ওগুলো ঝাপসা হয়ে আছে।

মারুফি ভাই একটা প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে বসে পকেট থেকে একটা পাইপ বার করেন, তারপর শীতল চোখে আমাদের পরখ করেন একবার। সন্ধ্যার অন্ধকারে পরিষ্কার বোঝা যায় না, কিন্তু আমরা এই ভেবে রোমাঞ্চিত হই যে তাঁর দৃষ্টি নির্ঘাত শার্লক হোমসের মতো তীক্ষ্ণ আর অন্তর্ভেদী। আমরা আরও টের পাই, তাঁর মধ্যে হোমস, ফাইনম্যান আর আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গুণাবলী সব একসঙ্গে ঘুটা মেরে দিয়েছেন ওপরোলা। ঐ একটি পাইপই যেন তাঁর সব গুণকে পিলসুজ হয়ে ধারণ করছে।

পাইপের পর জ্যাকেটের আরেক পকেট থেকে একটা পোঁটলা বার করেন মারুফি ভাই, তারপর সন্তর্পণে তামাক ভরেন পাইপে। সবশেষে একটি ভরসা ম্যাচ জ্বালিয়ে সেই তামাকে অগ্নিসংযোগ করেন। তারপর ফোঁসফোঁস করে পাইপে কয়েকটা টান দিয়ে একটা তৃপ্তির ধোঁয়াশা ছড়িয়ে দ্যান আশপাশটায়।

"আমি একটা ডকুমেন্টারি বানাইতেছি, বুঝলা তোমরা?" মারুফি ভাই বলেন।

আমরা খুশি হই আমাদের অনুমান মিলে যাওয়ায়। বলছিলাম না, উনি আর্টকালচার লাইনের লোক, এমন একটা ভঙ্গি করে সবাই সবার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসি।

"কী নিয়া বানাইতেছেন বস?" আমাদের একজন জানতে চায়।

মারুফি ভাই কটমটিয়ে প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে পাইপে একটি দীর্ঘ নীরব চুমুক দেন। আমরা বুঝি, এই পাইপের অনেক গুণ, মাঝেমধ্যে সাইলেন্সার পাইপ হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়।

আরো কয়েক লিটার ধোঁয়ার পর মারুফি ভাই মুখ খোলেন। বলেন, "আঠা!"

আমরা হতবিহ্বল হয়ে যাই। আঠার ওপর যে ডকুমেন্টারি তৈরি হতে পারে, এমনটা আমরা কস্মিনকালেও ভাবিনি। মারুফি ভাই যে আম আর্টকালচারী নন, সেটা বুঝে শ্রদ্ধায় জড়োসড়ো হয়ে পড়ি আমরা। ইনি ক্ষণজন্মা। ইনি বহুদূর যাবেন। নিশ্চয়ই ফেসবুকে ইনার ফ্যান পেজ আছে।

আগের সেই প্রশ্নামোদী আড্ডিক আবার প্যাঁ করে ওঠে, "আঠা? মানে, ঐ যে গাম?"

মারুফি ভাই এবার হাসেন মৃদু। রহস্যময় হাসি। এভাবেই হোমস, ফাইনম্যান আর ইলিয়াস হাসতেন নিশ্চয়ই।

"গাম? হাঁ, গাম বলা যায় বটে। গাম-এ-জিন্দেগিও বলতে পারো। ঐ যে একটা শের আছে না, হামে তো গাম নহি থা গাম-এ-আশিকি কে পেহলে? আঠা এক গামই বটে।"

আমরা কিছুই বুঝি না, কিন্তু এটা বুঝি, মারুফি ভাই সেই বিরল প্রতিভাদের একজন, যাদের কথা বোঝা যায় না।

প্রশ্নওয়ালা রবিন হুডের মতো তূণ থেকে প্রশ্ন বার করে ছুঁড়তেই থাকে, "গাম নিয়া ডকুমেন্টারি কীরকম বস?"

মারুফি ভাই এবার আরেকটা প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে নেন একপাশ থেকে। তারপর সেটার ওপর একটা পা তুলে একটু আয়েশ করে বসেন। তারপর বলেন, "চা চু দেয় না তোমাদের এদিকে?"

আমাদের কয়েকজন একসঙ্গে লাফিয়ে উঠে অদূরে চারচাকার কেঠো চলমান চায়ের স্টলের দিকে ধেয়ে চাচা চা চু লাগান বলে হাউকাউ করে উঠি। মারুফি ভাই ইত্যবসরে তাঁর পাইপটি ফুঁকতে থাকেন।

চা আসার পর তাতে একটি মৃদু, সুসংস্কৃত, পরীক্ষামূলক নিঃশব্দ চুমুক দেন মারুফি ভাই। দাড়ির ফাঁকে তার হৃষ্ট মুখ দেখে বুঝি, চা তাঁর পছন্দ হয়েছে। এবং এরপরই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে ভেসে আসে এক প্রলয়ঙ্করী চুমুকের আওয়াজ, তাতে তিন অক্টেভের শব্দই মিলে মিশে আছে।

"ভালো চা।" চায়ের কাপের ওম নিতে নিতে বলেন মারুফি ভাই। একজন আকলমন্দ আরেক কাপ চা দিতে বলে চাওয়ালা চাচামিয়াকে।

প্রশ্নকর্তা উসখুস করছিলো, তাই মারুফি ভাই খানিক করুণা করেই মুখ খোলেন। "আঠা নিয়ে ডকুমেন্টারি বহুরকম হতে পারে ভাইটু। কিন্তু আমি বানাচ্ছি আমার মতো করে।"

প্রশ্নওয়ালা সোৎসাহে বলে, "স্ক্রিপ্ট ছাড়া? মানে স্পন্টেনিয়াস শুটিং? ক্যামেরা ছাইড়া রাইখা সামনে যা পান সব শুট করবেন?"

মারুফি ভাই মুখটা কুঁচকে ফেলেন। "স্ক্রিপ্ট ছাড়া ডকুমেন্টারি! স্ক্রিপ্ট ছাড়া ডকুমেন্টারি? স্ক্রিপ্ট ছাড়া মারুফি পায়খানাতেও যায় না মিয়া!"

আমরা প্রচণ্ড ধমক দিই এতক্ষণ যে প্রশ্ন করছিল তাকে, "ঐ হালায় চুপ মার! বুঝে না সুঝে না খালি কথা কয়! চুপ বে!"

একজন কাঁচুমাচু হয়ে বলে, "সরি বস, ওর কথায় কিছু মনে কইরেন না, ও একটা ইয়া। যাজ্ঞা, কীরকম বানাইতেছেন বস?"

মারুফি ভাই এবার দ্বিতীয় কাপটি তুলে অভিমানী চুমুক ‌দ্যান একটি, যেন ইস্রাফিলের শিঙা বেজে ওঠে ভিভা রহমানের গলায়। তারপর অপমানের জ্বালা সয়ে নিয়ে ধিকিধিকি পাইপটিকে আবার চাঙা করেন। "বেসিকালি আমার ডকুমেন্টারিটা আঠার ছয় হাজার বছরের ইতিহাসকে কাভার কইরা। বুঝলা না?"

আঠার ইতিহাসের বয়স জেনে আমরা স্তম্ভিত হয়ে যাই। মারুফি ভাই যে একজন কঠিন পথের পথিক, সেটাও দিলঙ্গম করি, বুঝতে পারি, একদিন এই আড্ডার স্মৃতি আমরা অফিসে, দাওয়াতে রোমন্থন করবো। মারুফি ভাই আমাদের মাইকেল মুর।

মারুফি ভাই বলেন, "ডকুমেন্টারি বানাইতে গেলে বিস্তর খরচা। লোকেশনে যাওয়া-আসা, শুটিং, কাগজপত্র, দৌড়াদৌড়ি, দোভাষীর খরচ, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, তারপর ধরো দেশের বাইরে গেলে তো কিনাকাটাও করতে হয় কিছু না কিছু, তাই না? সব মিলাইয়া খুব ইয়া আর কি। এইজন্য আমি একটা বিকল্প ধারা ঠিক কইরা ফালাইছি। অনেক কথা যাই যে বলে, কোনো টাকা না ঢালি ... এই হইতেছে আপাতত আমার মটো।"

আরেকজন আকলমন্দ আরো এক কাপ চায়ের অর্ডার দেয় চাচামিয়ার দরবারে।

মারুফি ভাই পাইপে টান দিয়ে বলেন, "আঠার আলামত প্রথম পাওয়া গেছে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এক সাইটে খুব খোদাখুদি করতেছে, তো সেইখানে উইঠা আসছে ভাঙ্গা পাতিল, সেইটা আবার আঠা দিয়া জোড়া লাগানো। সেই আঠা আবার গাছের কষের আঠা। তারপর ধরো গিয়া, ব্যবিলনে মাটি খুইদা এক মন্দির পাইছে, সেই মন্দিরে মূর্তির চোখ হাতির দাঁতের, সেই চোখ গর্তের মধ্যে আঠা দিয়া ফিট করা। আলকাতরার আঠা, ছয় হাজার বছর পরেও যেমন ছিলো তেমনই।"

ধমক খাওয়া প্রশ্নকর্তা ফস করে বলে, "বস এইটা ক্যামনে দেখাইবেন? ব্যবিলন যাইবেন?"

মারুফি ভাই গম্ভীর মুখে বলেন, "ব্যবিলন কি আর আস্তা আছে? বুশ আর ওবামা মিল্লা ভাইঙ্গা চল্টা উঠায় দিছে না? সাভারে শুটিং হবে এইসব। গর্তের মধ্যে ভাঙ্গা পাতিল, আর কুমারপাড়ায় মূর্তির চোখ।"

আমরা শিহরিত হই মারুফি ভাইয়ের সূক্ষ্ম কৌশলের কথা জেনে। কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর, সাভারেরই মাঝে স্বর্গনরক ... মারুফি ভাই আবার কথা বলছেন দেখে ভাবনা থামিয়ে দিই।

"এরপর এক হাজার বছর ধইরা লোকজন নানা জায়গায় আঠা নিয়া অনেক ইয়া করছে, বুঝলা? এই যে ফারাও তুত আনখ আমেন, তার কবর তো বৃটিশেরা ঠিকই খুইদা খাইদা বাইর কইরা লইয়া গেছে, তো সেই কবরে যেইসব কাঠের বাক্সমাক্স ছিলো, সেইসব বাক্সেও আঠার আলামত মিলছে।"

"এইটাও কি সাভারে হবে বস?" জানতে চায় একজন।

মারুফি ভাই একটু ভাবেন পাইপে টান দিতে দিতে। তারপর বলেন, "না। এইটা একটু অন্যভাবে দেখাইতে হবে। মিশরী এমবেসির দরজাটা শুট করা হবে কয়েক সেকেণ্ড। তারপর আশুলিয়া থেকে প্লেন টেকঅফ করার দৃশ্য। এরপর পুরান ঢাকার মাদ্রাসা আর নিউমার্কেটে বোরখার দোকানের ক্লোজআপ শুটিং। তারপর একটা মমি দেখামু।"

"মমি পাইবেন কই?" কে যেন বলে।

মারুফি ভাই বলেন, "এক কম্পাউণ্ডারের সাথে আলাপ করা আছে। সে খুব ভালো ব্যাণ্ডেজ বানতে পারে। আমার বন্ধু বশীরের বাবার জামার দোকান আছে বসুন্ধরায়, ঐখান থিকা একটা ‌ম্যানিকিন হাওলাত করা হবে, ঐটারেই ব্যাণ্ডেজ প্যাচাইয়া মমি বানাইয়া ফালামু।"

মিনমিন করে একজন বলে, "ইয়া, কী জানি বলে, পিরামিড আর নীল নদ দেখাইবেন না?"

মারুফি ভাই ভীষণ খাপ্পা হয়ে বলেন, "পিরামিড আর নীল নদের সাথে মিশরের কী সম্পর্ক?"

আমরা স্তব্ধ হয়ে উত্তর খুঁজি। তাই তো?

মারুফি ভাই বলেন, "পিরামিড কি খালি মিশরেই আছে? সুদানে আছে, ইথিওপিয়ায় আছে, মেক্সিকোতে আছে! নীল নদ কি খালি মিশরেই আছে? উগাণ্ডা থিকা শুরু কইরা সুদান ফুদান হইয়া তারপরে না সে মিশরে আসছে। তোমরা মিয়া খালি স্টিরিওটাইপিং করো। এইভাবে শিল্প হয় না!"

মিনমিন কণ্ঠ আরো মিনমিনে হয়ে বলে, "পুরান ঢাকার মাদ্রাসা আর নিউমার্কেটের দোকানের ফুটেজ দিয়া কী হবে?"

মারুফি ভাই বলেন, "আরবী জামাকাপড় পরা লোকজন দেখাইতে হবে না? খালি পুরুষ দেখাইলে হবে? জেণ্ডার বায়াস এড়াইয়া এখন কাজ করতে হয়। সেইজন্য বোরখার দোকানে বোরখা পরা নারীও দেখাইতে হবে। খেজুরের আড়তে খেজুরের বস্তার ক্লোজআপও নিমু ভাবতেছি। যাজ্ঞা, মমিতে গিয়া ব্যাপারটার ক্লাইম্যাক্স। আর সেইসাথে কিছু আরবী মিউজিক। আজানের আওয়াজও রাখতে হবে।"

আমরা আর কিছু বলি না। শুধু অবাক হয়ে শুনি, কেবল শুনি।

মারুফি ভাই চায়ের কাপ নামিয়ে রাখেন। বলেন, "এরপর ধরো দেড় দুই হাজার বছর আগে রোমান আর গ্রীক লোকজন তাদের কাঠের কাজে আঠা ব্যবহার করছে প্রচুর। এরা আবার আঠা বানাইতো জন্তু জানোয়ারের হাড্ডিগুড্ডি দিয়া। কসাইয়ের দোকান থিকা শিং, হাড্ডি, খুর এইসব নিয়া বড় বড় পাতিলে ফুটাইয়া জেলাটিন বাইর কইরা সেইটা দিয়া আঠার কাম করতো। কেউ কেউ আবার মাছের কাটাকুটা দিয়াও আঠা বানাইতো।"

একজন বলে, "হ বস, এইটা শুট করা সহজ। নিউমার্কেটে গরুর গোস্তের দোকান আর সেনপাড়ায় কাঠের ফার্নিচারের দোকান দিয়াই ম্যানেজ করা যাবে।"

মারুফি ভাই বলেন, "না নিউমার্কেটের গরুর গোস্তের দোকানে ঠিক ফ্লেভারটা ফুটে না। টাউন হলের একটা গোস্তের দোকান আমি রেকি কইরা আসছি, ঐখানে ঐ প্রাচীন রোমান ভাবটা মোটামুটি আসে, যা দেখলাম। আর কাঠের কাজের শুটিংও সাভারে হবে। একটু নেচার রাখতে হয় মাঝেমাঝে, তোমরা তো বুঝো না এগিলি।"

কে যেন বলে, "এইটার লগে কী মিউজিক দিবেন?"

মারুফি ভাই বিরক্ত হয়ে বলেন, "এইটার সাথে মিউজিক দিমু ক্যান? আরে না বুইঝা খালি কথা বলে রে!"

আমরা আবার ধমক লাগাই। বলি, "এই চুপ বে!"

মারুফি ভাই বলেন, "আঠা নানা জিনিস থিকা বানানো হইতো। ডিমের সাদা অংশ, গরুবাছুরের রক্ত, হাড্ডি, চামড়া, দুধ, তারপর ধরো গিয়া শাকসব্জি, কী নাই? একবার খালি ফুল ফ্যামিলির জন্য বাজার করলেই সারা বছরের আঠা বানাইয়া ফেলা যায়। এই যে আমরা নৌকায় আলকাতরা লাগাই, এইটা প্রথম বাইর করছিলো কিন্তু রোমানরাই।"

আমরা ভয়ে ভয়ে চুপ করে থাকি।

মারুফি ভাই বলেন, "এগুলি সহজ সিন। নৌকাতে আলকাতরা লাগানোর সিন সাভারেই পাওয়া যাবে। আর তারেক অণুর কাছ থেকে রোমের কিছু ছবি হাওলাত করা হবে। সিদ্দিকা কবীরের একটা বই রাখা হবে ফ্রেমের এক পাশে, অন্য পাশে এক এক করে বাকি সব জিনিস একটা বাটিতে করে এক একটা শট নেয়া হবে। "

কে যেন অস্ফূটে বলে, "লারমিন শাকি!"

আমরা সবাই সমর্থন করি ব্যাপারটাকে। "‌হ্যাঁ হ্যাঁ লারমিন শাকি!"

মারুফি ভাই লাজুক হাসেন। "আচ্ছা দেখি, কথা বলে দেখবো শাকির সাথে। ও খুব বিজি, বুঝলা না? তারপরও আমি রিকোয়েস্ট করলে না করবে না হয়তো। দেখি। যাজ্ঞা। কী বলতেছিলাম যেন?"

তবুও কে যেন নাছোড়বান্দা বলে, "লারমিন শাকি!"

মারুফি ভাই বলেন, "আরে চুপ বে! এর পরে প্রায় এক হাজার বছর আঠা নিয়া তেমন আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায় নাই দুনিয়াতে। এরপর আবার কাঠমিস্ত্রিদের কাজকামে আঠার আলামত পাওয়া যায়। কিন্তু!"

আমরা নড়েচড়ে বসি।

"খালি সাদা চামড়ার লোকের আঠার কথা বললেই হবে? এডওয়ার্ড সাইদের কথা কিন্তু ফালায় দেওয়ার মতো না। ঠিক্কিনা?" মারুফি ভাই চেয়ারের ওপর দুই পা তুলে জুত করে বসেন।

আমরা জানি না এডওয়ার্ড সাইদ কী বলেছিলো, কীভাবে ফেলি তার কথা? তাই সবাই বলি, ঠিক ঠিক!

"যেমন ধরো, এই যে চেঙ্গিস খান, সে কীভাবে এত রাজ্য জয় করলো? টেকনোলজি। চেঙ্গিস খানের সাঙ্গোপাঙ্গোরা নানা অদ্ভুত অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতো। যেমন তাদের ধনুক ছিলো লেবুকাঠের সাথে গরুর শিং জোড়া দিয়া বানানো। ঐ কাজে ব্যবহার করা হইতো এক রহস্যময় আঠা, যেই আঠার মশল্লা সময়ের অতল গর্ভে হারায় গেছে। গন। ফিনিশ।" মারুফি ভাই হাতের খালি কাপটা নাড়েন। একজন আকলমন্দ আবার চাওয়ালা চাচাকে হুড়ো দেয়।

"চেঙ্গিস খান কই পাইবেন?" একজন রূদ্ধশ্বাসে জানতে চায়।

মারুফি ভাই হাসেন। "আমার বন্ধু সোহিনীর ছোটো চাচারে তো তোমরা দেখো নাই। দেখলে মনে হবে এইমাত্র মঙ্গোলিয়া থিকা আইসা নামছে এয়ারপোর্টে। ওনারে একটা চক্রাবক্রা আলখাল্লা পরাইলেই একদম রেডিমেড চেঙ্গিস খান। গরুর শিং আর কাঠের ধনুকও যোগাড় করা যাবে, ব্যাপার না। খালি মঙ্গোলিয়ার যুদ্ধের সিনটা দেখানো ট্রিকি। দেখি এইটা মঙ্গোলিয়ার দূতাবাসের সাথে কথা বলে, তারা কোনো ফুটেজ টুটেজ দিতে পারে কি না। না পারলে একদিন একটু কষ্ট কইরা কোনো হরতালের সিন শুট করতে হবে আর কি, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। ঐটারে একটু আউট অব ফোকাস কইরা তুললেই যুদ্ধের সিন হয়ে যাবে। পুরান ঢাকার ঘোড়ার গাড়ির ঘোড়ার ডাক রেকর্ড করে ছেড়ে দিলেই খেল খতম।"

চা আসে।

মারুফি ভাই চায়ের কাপে নতুন করে চুমুক দিয়ে বলেন, "অ্যান্টোনিও স্ট্র্যাডিভ্যারিয়াসের নাম শুঞ্ছো? না, শুনবা ক্যামনে। বেহালা বানাইতো এই লোক। সেইখানেও আঠার কেরামতি। এক রহস্যময় আঠা দিয়া সে কাঠ ল্যামিনেট করতো। সেই আঠার মশল্লাও কালের গর্ভে বিলীন। রহস্য।"

"এই লোকরে ক্যামনে দেখাইবেন?" একজন বলে।

মারুফি ভাই বলেন, "আমার বন্ধু বশীরের ছোটো বোন বেহালা বাজায়। ঐ বেহালার একটা ক্লোজ আপ গ্লাইডিং শট নিলেই হবে। অ্যান্টোনিওরে না দেখাইলেও চলে। নিতান্ত যদি দেখাইতেই হয় তো অ্যান্টোনিও বান্দেরাসের কোনো সিনামা থিকা ফুটেজ কাটা যাবে।"

আমরা চমৎকৃত হই।

মারুফ ভাই বলেন, "এরপর তো শিল্প বিপ্লব। তখন একের পর এক নতুন আঠা আবিষ্কার হইছে। একটা কইরা যুদ্ধ লাগে আর নতুন নতুন আঠা আবিষ্কার হয়, আর নতুন নতুন ফ্যাক্টরি খোলে। এমনেই চলতে আছে তারপর থিকা। টঙ্গীর আকাশে চিমনির ধোঁয়া দিয়া দেখামু এই অংশটা। আর পাটকলের ভিতরের মেশিনপাতি।"

একজন বলে, "তারপর শেষ?"

মারুফি ভাই বলেন, "না আরো আছে। সুপারগ্লু দেখাইতে হবে না? এইটা আবিষ্কারের কাহিনীটা দেখাইতে হবে। ইস্টম্যান কেমিক্যাল কোম্পানি পলিমার নিয়া গবেষণা করতেছিলো, একদিন তারা দেখে, মাইক্রোস্কোপের নিচে তাদের দুইটা স্লাইড জোড়া লাইগা গেছে। সে জোড়া এমনই জোড়া, টাইনাও খোলন যায় না। এইটা দেখানো এমন শক্ত কিছু না। বদরুন্নেসার বায়োলজি ল্যাবেই শুট করা যাবে।"

কে যেন এক হতভাগা বলে, "বদরুন্নেসায় ক্যান?"

মারুফি ভাই বলেন, "জানাশোনা চিন পরিচয় আছে সেইজন্য। খালি আলতু ফালতু কোশ্চেন কর ক্যান?"

আরেকজন বলেন, "তারপর শেষ?"

মারুফি ভাই বলেন, "না। এরপর দেখামু প্রাণীজগতে আঠা। যেমন ধরো তক্ষক ক্যামনে দেয়ালের সাথে চিপকায় লাইগা থাকে, এইটা দেখামু। শ্রীমঙ্গলে আমার এক বন্ধু থাকে, তার বাসার পিছের দেয়াল ভর্তি তক্ষক।"

কে যেন বলে, "তারপর শেষ?"

মারুফি ভাই বলেন, "আরে না রে ভাই। দেশীয় আঠা নিয়ে কিছু বলতে হবে না? গাবের আঠা, ভাতের আঠা।"

একজন বলে, "পিরিতি কাঁঠালের আঠা?"

মারুফি ভাই বলেন, "হ্যাঁ, ভালুকায় কাঁঠাল বাগানে কিছু শুটিং হবে, আর বলধা গার্ডেনে কিছু।"

কে যেন বলে, "তারপর শেষ?"

মারুফি ভাই বলেন, "হুঁ। ডকুমেন্টারি শেষ হবে বসন্ত বিলাস সিনামার ঐ গানটা দিয়া, ও শাম যখন তখন খেলো না খেলা অমন ধরিলে আজ তোমায় ছাড়বো না।"

একজন বলে, "ডকুমেন্টারি প্রডিউস করতেছে কারা বস?"

মারুফি ভাই কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পাইপ টানেন, তারপর বলেন, "আপাতত আমার বন্ধু বশীরের বাপ। অবশ্য উনি জানে না যে উনি প্রডিউস করতেছেন। বশীর ওনার দোকানের ক্যাশ থেকে টাকাটা ম্যানেজ করতেছে আর কি।"

কে যেন বলে, "বস, সরকারি অনুদানের চেষ্টা করে দেখবেন না একবার? এইরকম একটা মূল্যবান জিনিস, সরকারের তো উচিত হেল্প করা!"

মারুফি ভাই ফোঁসফোঁস করে বলেন, "সেই চেষ্টা করি নাই ভাবছো?"

আমরা নড়েচড়ে বসি, বুঝি গল্প শেষ হয়নি।

কে যেন বলে, "কী হইছিল বস?"

মারুফি ভাই ধরা গলায় বলেন, "মানিকদা তো ধরো গিয়া পথের পাঁচালির জন্য পশ্চিমবঙ্গের সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাছ থিকা ফাণ্ড পাইছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীরে ধইরা। আমি ভাবলাম, আমিও যাই। মন্ত্রী তো সিনামা লাইনেরই লোক। মন্ত্রীর এপিএস আবার আমার বন্ধু বশীরের চিনাজানা।"

একজন বলে, "কোন মন্ত্রী? যোগাযোগমন্ত্রী? ঐ বাবুল?"

মারুফি ভাই বলেন, "হ, ঐ বাবুল হোসেনের কাছেই গেছিলাম। তিন মাস ঘুরাঘুরি কইরা শেষে একদিন অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইলাম। গেলাম। সব খুইলা কইলাম। লোকটা খালি শোনে আর হাসে। যা-ই কই, সে খালি ক্যালক্যালাইয়া হাসে। তেল দিলাম, কইলাম আপনার তো এই ব্যাপারে অনেক রেপুটেশন, কয় সব ষড়যন্ত্র, ঐসব কানে নিয়েন না। কথা শেষ করার পর সে কয়, হুমমম, ওকে, দেখি, গুড বাই। তারপর সে বেল বাজাইয়া সেক্রেটারিরে ডাক দিলো, সেক্রেটারি আইসা তার চেয়ারটা ঠেইলা ঠেইলা টয়লেটে নিয়া গিয়া দরজাটা লাগাইয়া আমারে কইল, খাড়ায় খাড়ায় কী দেখেন ভাইডি, যান গিয়া, কথা শ্যাষ।"

আমরা শিহরিত হই। বলি, "এই লোক হাগতে মুততেও কি চেয়ার ছাইড়া উঠে না নাকি?"

মারুফি ভাই পাইপে টান দিয়ে বলেন, "না। গদির সাথে সে এমন টাইট হইয়া বসছে, নিজেও উঠে না, কেউ তারে টাইনাও তোলে না।"

কে যেন বলে, "তাইলে বস, ডকুমেন্টারিটা বলধা গার্ডেনে শেষ না কইরা, ওনার গদি আর ওনার পিছনের কিছু ফুটেজ দিয়া শেষ করেন।"

মারুফি ভাই কিছুক্ষণ ভাবেন, তারপরে হাসেন। বলেন, "হ!"

[সমাপ্ত]


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হো হো হো

হো হো হো

হো হো হো

মঈনুল এর ছবি

আজাদ মাষ্টার( রিডার/কমেণ্ট)  এর ছবি

গল্পটা আসলেই আঠালো ছিল পড়া শেষ না করে চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারি নাই ! লাস্টের ক্লাইমেক্সটা সেইরাম হইছে গুল্লি

অনটপিকঃ আপনার চণ্ডিশিরার গল্পের তৃতীয় পর্ব পড়ার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে শিরে পীড়া করছে ওইটা ভাই গরম গরম সার্ভ করুন

কল্যাণF এর ছবি

কত কষ্টে নিজেরে চাপা চুপা দিয়া রাখতেছি, দিলেনতো ভাই খুঁচা দিয়া দুঃখটারে আরো বাড়াইয়া!

হিমু এর ছবি

চণ্ডীশিরা আবার কী? এটা আমার বিরুদ্ধে এক কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র। জনগণ জানে, আমি এসবের সাথে জড়িত নই।

কল্যাণF এর ছবি

হ, হিমুভাইয়ের একাউন্ট হ্যাক করছিলাম আমি দুইবার চোখ টিপি , ০৭ সেপ ও ০৯ সেপ ২০১১ তে, সেই চান্সে গল্প ছাপাইছি খাইছে

হিমু এর ছবি

চণ্ডীশিরার পরের পর্ব কো? বিটলামি পাইছেন মিয়া, মাসের পর মাস ঝুলায় রাখবেন?

কৌস্তুভ এর ছবি

হো হো হো

তানজিম এর ছবি

সেই সুযোগ কি আর আছে...ঝাকানাকা হিমু পাসওয়ার্ড পাল্টাই দিয়াই তো বিপত্তি করসে রেগে টং

কল্যাণF এর ছবি

ঠিক কইছেন ভাই, তাছাড়া আমার পুস্ট আমার হাতে নাই।

কল্যাণF এর ছবি

খিক খিক দেঁতো হাসি, গঠনা হইল আমার পুস্ট এখন আর আমার হাতে নাই।

রুমঝুম ১ এর ছবি

অ্যাঁ হাসি দেঁতো হাসি হো হো হো গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি হাততালি
উত্তম জাঝা!

তারাপ কোয়াস এর ছবি

হো হো হো
মানী লুকজনের মানসুম্মান আর রাখলেন না!


love the life you live. live the life you love.

দ্রোহী এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
গড়াগড়ি দিয়া হাসি
গড়াগড়ি দিয়া হাসি
গড়াগড়ি দিয়া হাসি
গড়াগড়ি দিয়া হাসি

আপনে মিয়া অমানুষ!

কল্যাণF এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

চরম উদাস এর ছবি

দেঁতো হাসি

রু (অতিথি) এর ছবি

সবই তো বুঝলাম। শুধু 'তাদের স্ত্রীকন্যাদের নিয়ে আদিরসাত্মক গল্প' ব্যাপারটা বুঝলাম না।

ফাহিম হাসান এর ছবি

এই "তাদের" রাজা-উজিরের স্ত্রীকন্যাদের বোঝাচ্ছে, যারা গল্প করছে/আড্ডা মারছে তাদের স্ত্রীকন্যাদের না। তবে লাইনটা একটু কনফিউজ করে, @ হিমু ভাই, অন্যভাবে লেখা যায় না?

হিমু এর ছবি

না। এইটা আমার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্রের অংশ। একটা কুচক্রীমহল চায় না রাজাউজিরদের স্ত্রীকন্যাদের নিয়ে আদিরসাত্মক গল্প হোক। তারাই বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে এই ব্যাপারে নালিশ করেছে। আমি এখানে ষড়যন্ত্রের শিকারমাত্র। কিন্তু জনগণ জানে, এইখানে কোনো সমস্যা নাই। সবই ঠিকমতো চলছে।

রু (অতিথি) এর ছবি

তাই বলেন! আমি পুরাই কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলাম।

স্পর্শ এর ছবি

প্রভুখণ্ড! দেঁতো হাসি


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কৌস্তুভ এর ছবি

সিগনেচার হিমুদা-স্টাইল গল্প, বেশক উপভোগ্য।

'সাভার' কী কেউ বুঝাইয়ে দেন তো...

হিমু এর ছবি

সাভার ঢাকা জেলার আউটস্কার্টের একটা পৌর এলাকা, শহর আর গ্রামের সীমানা।

নাদির জুনাইদ এর ছবি

এই লেখার প্রশংসা করার মতো ভাষা সত্যিই আমার জানা নেই। জেম, সাচ আ জেম!

ফাহিম হাসান এর ছবি

গুল্লি গুল্লি সেইরকম জম্পেশ গল্প

মৃত্যুময় ঈষৎ(Offline) এর ছবি

আঠার জ্ঞানগর্ভ ইতিহাস-পাঁচালি দেঁতো হাসি আর "আবুলরে খাল পার করে দেওয়া..." সব মিলিয়ে উত্তম জাঝা! গুল্লি

তিথীডোর এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
জব্বর!

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গুরু গুরু

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দ্যা রিডার এর ছবি

গুল্লি হো হো হো

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

বুখে আয় বাবুল !!

গুল্লি

চিত্রাঙ্গদা এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গুরু গুরু
নাহ...... মানী-গুনী লোক হওয়ার ইচ্ছেটা এবার চিরদিনের মত জলাঞ্জলি দিতেই হবে । 'এই ভাল আছি এই বেশ' ।

ইস্কান্দর বরকন্দাজ এর ছবি

দেঁতো হাসি

বোকা ছেলে এর ছবি

বাবুল হোসেনের কোন কিছিমের আঠা? দেখার জন্য পুটুচ্ছেদ করা হোক।

বোকা মেঘ এর ছবি

হো হো হো

মুহিত হাসান এর ছবি

আর তারেক অণুর কাছ থেকে রোমের কিছু ছবি হাওলাত করা হবে

হো হো হো গড়াগড়ি দিয়া হাসি

বন্দনা কবীর এর ছবি

দেঁতো হাসি

আঠার প্যাচাল যে বাবুলকে দিয়া সমাপ্ত হইবে তাহা পূর্বেই বুঝিয়া ফেলিবার দরুন মজা কম পাইয়াছি মন খারাপ
গতকল্যই কোথায় যেন কাহার ফেবু স্টাটাসে ফেভিকল উইথ বাবুলের সম্পক্কের গপ্প পড়িয়াছিলুম ?!! তাই হয়তোবা... খাইছে

pathok এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি হাততালি

guest_writer এর ছবি

জনাব হিমু, মারুফি সাহেব অনেক প্রকার আঠার কথাইতো কইলেন। কিন্তু বাবুল সাহেব যে গদির লগে ফেভিকল লাগায়া লইছেন ( যাতে কেউ টাইনা তুলতে না পারে ) এইটা চাইপা গেলেন ক্যান্ ? এখনওকি অনুদানটা পাওয়ার আশা করতেছেন ?

অত্যন্ত সুখপাঠ্য একটি লেখা। একটু টেনশনে ছিলাম। লেখাটা পড়তে পড়তে রিমুভ হয়ে গেছে।

ধন্যবাদ।

প্রৌঢ়ভাবনা

বিলাস এর ছবি

গুরু গুরু

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

গুল্লি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নিটোল. এর ছবি

আসল কথা হইল সব আঠার থিকা বড় আঠা হইল গদির আঠা! হো হো হো

হিমু এর ছবি

এই আঠার নাম আবুলগাম [সৌজন্যে শুভাশীষ দাশ]

কালো কাক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
তারেক অণুও বাদ নাই
বাবুল বেচারার কী দোষ ! বেচারা আটকায়্যা গেসে, কারো হাতেই নাকি নাই তারে উঠানোর ক্ষমতা !!!

অরফিয়াস এর ছবি

আঠায় আঠাময় .... চোখ টিপি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

হেমন্তের ঘ্রাণ এর ছবি

আমি কিন্তু আগেই বুঝতে পারছিলাম এইটা আবুইল্লারে নিয়া লেখা !! হা হা হা

সব খুইলা কইলাম। লোকটা খালি শোনে আর হাসে। যা-ই কই, সে খালি ক্যালক্যালাইয়া হাসে।

আমরা শিহরিত হই। বলি, "এই লোক হাগতে মুততেও কি চেয়ার ছাইড়া উঠে না নাকি?"

মারুফি ভাই পাইপে টান দিয়ে বলেন, "না। গদির সাথে সে এমন টাইট হইয়া বসছে, নিজেও উঠে না, কেউ তারে টাইনাও তোলে না।"

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গুল্লি গুল্লি গুল্লি

পাঠক এর ছবি

জেবতিক ভাই এর ফেসবুক এও আঠার কারবার দেখলাম। বড় কড়া আঠা রে ভাই।

তাপস শর্মা এর ছবি

আপনার নিয়ম করে গরম জল খাওয়ানো হোক। যাতে আপনি আরও গরম গরম লেখে দিতে পারেন।

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি
লেখাটা পড়ে আমার বুক ব্যাথা হয়ে গেছে মিয়া গুরু গুরু

মেঘা এর ছবি

হিমু ভাই বাবুল হোসেন যে লেখার শেষে এমনভাবে চলে আসবে ভাবি নি। চরম মজা পেয়েছি। গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

Abrar Ahsan এর ছবি

আজকেই ইত্তেফাকে আরিফ জেবতিক ভাই কইছে - "বাংলা ব্লগে অনেক অনেক লেখক, তাদের অনেকের লেখাই কোনো না কোনো সময় ভালো লেগেছে। তবে তালিকা করতে বললে, আমার মনে হয় আমি সবার আগে হিমুর নাম বলব। সচলায়তন ব্লগ সাইটের এই নিয়মিত ব্লগার আমার দেখা শুধু সেরা ব্লগার শুধু নন, আমি তো মনে করি এই প্রজন্মরে অন্যতম শক্তিশালী লেখক। উনি লেখালেখিতে সিরিয়াস হলে দেশের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় লেখক হবেন বলে আমার বিশ্বাস।" (লিংক- http://new.ittefaq.com.bd/news/view/49034/2011-10-15/25)

এখন ইচ্ছা করতেছে ইত্তেফাকে আপ্নের এই পোস্টের লিংকটা মেইল কইরা দেই।
সুপার্ব হইছে বস গুল্লি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

মারুফি ভাইরে একটু বইলা দিয়েন যে সাভারে ওনার শুটিঙের জায়গা নাই যদি বাদশা ভাই না দেয়। কোনও বাবুইল্যা-কাবুইল্যা ভাইতে কাম হইতো না।

বাদশা ভাইরে চিনেন তো! চোখ টিপি

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

guesr_writer rajkonya এর ছবি

এত রকম গাম নিয়ে কথা হল, অথচ চুইং গাম নিয়ে কিছু বলা হল না। অথচ শুকিয়ে যাবার পরে এই গাম উঠানো খুবই কষ্টকর। এমন কি দীর্ঘদিন পরেও এই গাম অটুট থাকে।

থার্ড ইয়ারে লেদার টেকনোলজির উপর আমাদের একটা কোর্স ছিল। ঐটা পড়তে গিয়ে জেনেছিলাম জিলাটিন আর এডহেসিভ একই জিনিস। পার্থক্য হল, জিলাটিন ইস হাইলি রিফাইন্ড এডহেসিভ, যেটা খাবার সাজানোর জন্য ব্যবহার করা হয়। লেখাটা পড়তে গিয়ে থার্ড ইয়ারে চলে গিয়েছিলাম একটু ক্ষণের জন্য।

এছাড়াও স্টার্চ দিয়ে যে আঠা বানানো যায়, এতো সব্বাই জানেন। আর কথাটা জেনে আমিও ঐ ঘরোয়া আঠা তৈরি করে নিয়েছি। আর্ট এটাকিয় পদ্ধতিতে আমিও কিছু শিল্পকলা (কিছু অণুর মডেল) করতে চেষ্টা করেছি। সেখানে পিভিয়াই গ্লু ব্যবহার করা হয়েছে, আর আমি তার বদলে কাজ চালিয়েছি রান্না ঘরের ভাতের মাড় দিয়ে। এখনো ঐ মডেলগুলো বহাল তবিয়তে আছে। আমার স্টুডেন্টরা পরে ঐ মডেল দেখে আরো মডেল তৈরি করেছে ঘরের আঠা দিয়ে। শুধু তাই না, আলু সিদ্ধ করেও নাকি বেশ ভাল ঘরোয়া আঠা তৈরি করা যায়।

আরো আঠা আছে। অনেক ছোটবেলায় নানুবাড়িতে একটা বৃক্ষ জাতীয় গাছের ফল পেয়েছিলাম, যেটা দেখতে বড়ইয়ের মত। অথচ ভেতর থেকে যে আঠালো পদার্থ বের হয়, সেটা খুব ভাল আঠার কাজ করে। গাছটার নাম ধাম কী কিছুই জানি না। পরে ঐ গাছ অনেক খুঁজেছি, সন্ধান পাই নি। এই গল্পের মারুফি ভাইয়ের কাছে অনুরোধ থাকবে গাছটির সন্ধান করে দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখার।

কল্যাণF এর ছবি

আপনি মনে হয় গাব গাছের সন্ধান পাইছিলেন।

guesr_writer rajkonya এর ছবি

গাব কি বরইয়ের মত?

যুমার এর ছবি

গুল্লি

তারেক অণু এর ছবি
কল্যাণF এর ছবি

ওই মিয়া হাস্য কমাও, রোমের ছবি রেডি কর, কুইক।

কনীনিকা এর ছবি

শেষের টুইস্টটা জব্বর হয়েছে!!! গড়াগড়ি দিয়া হাসি =)) গড়াগড়ি দিয়া হাসি

------------------------------------------------------------------
It is impossible to be a mathematician without being a poet in soul.

সাকিন উল আলম ইভান  এর ছবি

কালজয়ী লেখা বস , পুরাই নাকের জল চোখের জলে গড়াগড়ি খেলাম ,হাসতে হাসতে শেষ ।

ওডিন এর ছবি

লারমিন শাকি!

গড়াগড়ি দিয়া হাসি সিদ্দিকা কবিরের বইয়ের কথা আসামাত্রই আমি আন্দাজ করতে পেরেছিলাম যে ওনার কথা আসবেই!

আমারে হাতে রাখেন, বুচ্ছেন। চোখ টিপি ওনাকে আমি চিনি অল্পস্বল্প। আমি বললে হয়তো আপনাকে কান্দাহারি কোর্মা রান্না শেখাতে রাজি হতেও পারেন।

হিমু এর ছবি

আয় ভাইটু, বোস। চা-চু খাবি? একটা ডিম ভেজে দেই?

Kamrul Hasan এর ছবি

লইজ্জা লাগে $) লইজ্জা লাগে

আয়নামতি1 এর ছবি

হো হো হো

হো হো হো

হো হো হো

পাঠক এর ছবি

অসাধারণ! শেষের আঠায় আঠিত হইলাম। হাততালি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আঠরশিতে আঠা চাষে জনৈক সরকার প্রধান যে ভর্তুকি দিছিলো সেইটা কিছুটা কম হৈলে আকজে আঠা নিয়া বাংলার ঘরে ঘরে ডকুমেন্টারী তৈরীতে অনুদান পাওয়া যাইতো!

বাবুলের কাজ বাবুল করেছে, খাবলায়া ধর্ছে কুরসির পায়
বাবুলের পুটুর ভাঙাহাঁড়ি কি জোড়া যায় আঠরশির আঠায়!

মারুফি ভাইয়ের ক্যারেক্টার চয়ন কল্পনা করেই হাইসা কাইত হয়া গেলাম!

ধৈবত(অতিথি) এর ছবি

জননকারী তরলকেও তো স্ল্যাংগাত্মক বয়ানে আঠা বলে। ওনার পশ্চাৎপ্রান্তরে কি ও ধরণের কোন আঠার আলামত পাওয়া যেতে পারে? চিন্তিত

উচ্ছলা এর ছবি

এই রকম bad-ass পোস্ট যে লিখতে পারে তার 'guts' আর 'balls'রে স্যালুট!

বাবুল-প্যাদানি সগৌরবে এগিয়ে চলুক চলুক গুরু গুরু

হাবাছেলে  এর ছবি

ব্লগিং এর জগতে আমি একেবারেই নতুন এবং আনকোরা। তাই বেশিরভাগ সময় ব্লগ পরেই ক্ষান্ত দেই, আর খুব বেশী ভাল লাগলে সাহস করে ১ টা কমেন্ট, তাও সেটা ২/১ শব্দের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু হিমু মামার লেখা পড়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। হিমু মামা , আপনি একজন অসাধারন লেখক। আমি এই সল্প সময়ে যতগুলো ব্লগ এ ঢু মেরেছি আর যে কয়টি লেখা পড়েছি এর মধ্যে আপনার লেখাগুলো আমার কাছে মনে হয়েছে মনে রাখার মতন। বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যাগুলোকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে রসের মোড়কে পেঁচিয়ে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে বোধহয় আপনার চেয়ে ভাল আর কেউ পারেন না!

আর আপনার চলমান গল্পগুলোর একেকবার পড়তে বসলে নিজেকে মাঝে মাঝে বাবুল হোসেনের ছোটভাই মনে হয়। গল্প শেষ না করে কিছুতেই গদি ছেড়ে উঠতে মন চায় না, আর আপনে মামা গল্প মাঝপথে ঝুলায় রেখে কোন আগাম সংকেত ছাড়াই চা পানের বিরতি ঘোষণা করেন:( এইভাবে পাঠকদের কষ্ট দেয়া কি ঠিক বলেন? চণ্ডীশিরার তৃতীয় পর্বটা একটু জলদি পোস্ট করেন নাহলে গদিতে বসে থাকতে থাকতে আমার পশ্চাৎদেশ ধীরে ধীরে সমতল হয়ে যাচ্ছে। ঃ(ঃ(ঃ

কল্যাণF এর ছবি

আপনার মন্তব্যের দ্বিতীয় প্যারা সম্পর্কে আপডেট দেওয়া নৈতিক দায়িত্ব মনে করতেছিঃ

এই চন্ডীশিরার সাথে হিমু ভাই এর কোন সম্পর্ক নাই, এই গুলা সব রটনা। হিমু ভাইএর একাউন্ট হ্যাক হইছিল আর সেই ফাকে এক পামর এই গল্প ছাপাইয়ালাইছিল। কিন্তু এখন সেই পামর নিজেই বাটে পড়ছে। কারণ এক- ওই গল্প আর পামরের হাতে নাই, দুই- হিমু ভাইএর একাউন্ট পাসোয়ার্ড বদলাইয়া গেছে, হ্যাক ম্যাক আর করা যাইতাছে না ইদানিং। দেঁতো হাসি

হিমু এর ছবি

বৎস আমি তোমার বাবার বয়েসী। আত্মীয়তাসূচক কিছু যদি ডাকতেই হয়, আমাকে মামা না ডেকে হিমু বাবা বলে ডেকো। আর চণ্ডীশিরা আসবে সামনে, পশ্চাদ্দেশের হেফাজত করো।

ইতি

তোমার হিমু বাবা

কল্যাণF এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

যথারীতি দুর্দান্ত হয়েছে গল্পটা !

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

হাবাছেলে  এর ছবি

@হিমু বাবাঃ আব্বা ফেট্টিস আইন্না দাও, ফেট্টিস কাইতাম হো হো হো

নব্য পাঠক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গুরু গুরু হাততালি

ইশমাম এর ছবি

সেইরাম হাততালি উত্তম জাঝা!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।