• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

ভূমিকম্প ও বাংলাদেশ — দ্বিতীয় পর্ব

দ্রোহী এর ছবি
লিখেছেন দ্রোহী (তারিখ: শনি, ১৫/১০/২০১১ - ১২:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান নিয়ে লেখা বড় কঠিন ব্যাপার। ভূতত্ত্ব বিষয়টি পদার্থ, রসায়ন, জীববিদ্যার মত অতোটা জনপ্রিয় না হওয়ার কারণে ভূতত্ত্বে ব্যবহৃত খটমটে শব্দগুলোর কোন সুন্দর বাংলা প্রতিশব্দ তৈরি হয়নি। যেগুলো আছে সেগুলো এমনই দাঁতভাঙ্গা যে শব্দগুলো বাক্যে ব্যবহার করলে বাক্যের অর্থোদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়ে। সঙ্গত কারণে এ সিরিজটিতে প্রচুর বিদেশি শব্দ বেড়ার ফাঁক গলে লেখায় ঢুকে পড়ছে। তাই পাঠকদের বিনীত অনুরোধ জানাই এই অনভিপ্রেত শব্দদুষণকে ক্ষমা–সুন্দর চোখে দেখার জন্য। সেইসাথে ব্লগ–জগতের প্রতিশব্দ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিদের মধ্যে যারা এখনো বেঁচেবর্তে আছেন তাদের আহ্বান জানাই শ্রুতিমধুর প্রতিশব্দ বানিয়ে সাহায্য করার জন্য।

__♣♣♣__

আগের পর্বগুলো:

গত পর্বে আমরা জেনেছি যে পৃথিবীর ম্যান্টল বা গুরুমণ্ডলে পরিচলন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট ঘূর্ণনের ফলে উপরিভাগের কঠিন অশ্মমণ্ডল বা লিথোস্ফিয়ারের টুকরোগুলো অতি ধীর গতিতে স্থান পরিবর্তন করছে।

এই ফ্ল্যাশ অ্যানিমেশনটি দেখলে ম্যান্টলে সৃষ্ট ঘূর্ণনের প্রভাবে টেকটোনিক প্লেটগুলোর চলন প্রক্রিয়া বোঝাটা সহজ হবে।

আমরা গত পর্বে আরও জেনেছিলাম যে ভূপৃষ্ঠ লিথোস্ফিয়ারের অংশ হিসাবে নিজেই বিভিন্ন টুকরায় বিভক্ত হয়ে টেকটোনিক প্লেটগুলো তৈরি করেছে। অর্থাৎ, ভূপৃষ্ঠের প্রতিটি স্থান কোন না কোন টেকটোনিক প্লেটের অংশ। তাই প্রশ্ন জাগতে পারে, টেকটোনিক প্লেটগুলো জায়গা পরিবর্তন করছে কীভাবে? জায়গা পরিবর্তন করতে যে অতিরিক্ত জায়গাটুকু প্রয়োজন সেটা আসছে কোথা থেকে? যেহেতু টেকটোনিক প্লেটগুলো একে অন্যের সাথে লেগে আছে সেহেতু প্রতিবেশী প্লেটগুলোর ক্ষতি না করে কোন প্লেটের পক্ষে নড়াচড়া করা সম্ভব কি?

মহাসাগরীয় টেকটোনিক প্লেটের স্থান পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বোঝাতে উদাহরণ হিসাবে বিমানবন্দরের কনভেয়র বেল্ট বা শপিং মলগুলোর চলমান সিঁড়ির কথা বলা যেতে পারে। শপিং মলের চলমান সিঁড়িগুলো যেভাবে মাটির একদিক থেকে উঠে এসে মাটির উপরে কিছু দূর গিয়ে সিঁড়ির শেষ মাথায় পৌঁছে ফের মাটিতে ঢুকে পড়ে তেমনি মহাসাগরীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো একপাশের সীমানায় সৃষ্টি হয়ে বিপরীত দিকের সীমানায় গিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

নিচের ছবিটা দেখলে বিষয়টা বুঝতে সুবিধা হবে।

সূত্র: [এখানে]

ছবিটিতে লাল দাগ ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত বড় টেকটোনিক প্লেটগুলোর সীমানা দেখানো হয়েছে। ছবিটিতে টেকটোনিক প্লেটগুলোর চলার দিক নির্দেশ করতে কোথাও দুটো প্লেটের মধ্যবর্তী সীমানা বরাবর পরস্পর বিপরীতমুখী তীর চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে আবার কোথাও দুটো প্লেটের সীমানা দাগের একপাশে করাতের দাঁতের মত চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছে।

ছবিটিতে দুটো টেকটোনিক প্লেটের একে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া বোঝাতে পরস্পর বিপরীতমুখী লাল তীর চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। অপরদিকে করাতের দাঁতের সারির মাধ্যমে দুটো প্লেটের মুখোমুখি সংঘর্ষ বোঝানো হয়েছে। যখন দুটো প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষ হয় তখন হালকা প্লেটটি অপেক্ষাকৃত ভারী প্লেটটির উপর চড়ে বসে। উপরের মানচিত্রে করাতের দাঁতের অবস্থান প্লেটের সীমানা দাগের যে পাশে সে প্লেটটি অপেক্ষাকৃত হালকা।

চলার ধরন অনুযায়ী টেকটোনিক প্লেটের সীমানা তিন প্রকারের হয়ে থাকে:–

  • Divergent plate boundary বা অপসারী প্লেট সীমানা: এ ধরনের প্লেট সীমানায় দুটো টেকটোনিক প্লেট একে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরে যায়।
  • Convergent plate boundary বা অভিসারী প্লেট সীমানা: এ ধরনের প্লেট সীমানায় দুটো প্লেট একে অন্যের সাথে মুখোমুখি/কৌণিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
  • Conservative or Transform plate boundary বা রক্ষণশীল অথবা রূপান্তরিত প্লেট সীমানা: এ ধরনের প্লেট সীমানায় প্লেটগুলো তাদের সীমানা দাগের সমান্তরালে স্থান পরিবর্তন করে।

অপসারী প্লেট সীমানায় লিথোস্ফিয়ার বা অশ্মমণ্ডলের ফাটল দিয়ে ম্যান্টলে ঘূর্ণনরত ম্যাগমা [গলিত শিলা] উঠে এসে অতি দ্রুত শীতল হয়ে সমুদ্রগর্ভে বিশালাকার পর্বতশ্রেণী সৃষ্টি করে। সমুদ্রগর্ভে সৃষ্টি হওয়া এ ধরনের পর্বতশ্রেণীকে Mid–Ocean Ridge বলে। ম্যান্টল থেকে ম্যাগমা উঠে আসার ফাটলটি Rift zone বা Spreading Center নামে পরিচিত।

নিচে সংযুক্ত অ্যানিমেশনটিতে অপসারী প্লেট সীমানায় Mid-Ocean Ridge বা সমুদ্র–মধ্য পর্বতশ্রেণী সৃষ্টির প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে। অ্যানিমেশনটি চালাতে “Play” বোতামের ডান দিকের নীল তীর চিহ্নে ক্লিক করুন।

সূত্র: SCIGN at JPL, NASA

আগ্রহীরা উইকিপিডিয়াতে সংযুক্ত অ্যানিমেশনটিও দেখতে পারেন। ফাইলের আকার বড় হওয়ার ছবিটি এখানে এমবেড করা হয়নি।

সমুদ্র–মধ্য পর্বতশ্রেণী সৃষ্টির ফলে প্রসারণ কেন্দ্র বা Spreading Center এর দুই পাশে পর্বতশ্রেণী গঠনের মাধ্যমে ওশিয়ানিক ক্রাস্ট বা মহাসাগরীয় ভূত্বকের নতুন অংশ তৈরি হয়। সদ্য সৃষ্ট নতুন ভূত্বক তখন জায়গা করে নেবার জন্য মহাসাগরীয় ভূত্বককে ধাক্কা দিতে শুরু করে। ধাক্কা খেয়ে মহাসাগরীয় ভূত্বক প্রসারণ কেন্দ্র থেকে দূরে সরতে থাকে। তখন পুনরায় ম্যান্টল থেকে ম্যাগমা উঠে এসে মিড–ওশান রিজ সৃষ্টির মাধ্যমে আবার নতুন মহাসাগরীয় ভূত্বক সৃষ্টি করে। তাই বলা যায় ম্যান্টলে সৃষ্ট ঘূর্ণন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি মিড–ওশান রিজে নতুন ভূত্বকের ধাক্কাধাক্কি প্লেটগুলোর স্থান পরিবর্তনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গুগল ম্যাপে আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝামাঝি অঞ্চল বরাবর মিড–ওশান রিজ বা সমুদ্র–মধ্য পর্বতশ্রেণী দেখতে পাওয়া যাবে। আটলান্টিক মহাসাগরে সৃষ্টি হয়েছে দেখে এর অপর নাম মিড–আটলান্টিক রিজ। দৈর্ঘ্যের হিসাবে মিড–আটলান্টিক রিজ পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতশ্রেণী।

সুতরাং, আমরা জানলাম অপসারী প্লেট সীমান্তবর্তী ফাটল দিয়ে ম্যান্টল থেকে ম্যাগমা উঠে এসে নতুন ভূত্বক সৃষ্টি হয় যা পূর্বে সৃষ্ট মহাসাগরীয় ভূত্বককে ঠেলে সরিয়ে জায়গা করে নেয়। ফাটল দিয়ে যে ম্যাগমাটুকু উঠে আসতে পারে না সে বাড়তি অংশটুকু অশ্মমণ্ডলের নিচ দিয়ে দুই দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। অশ্মমণ্ডলের নিচ দিয়ে প্রবাহিত ম্যাগমাকে Convection Cells বা পরিচলন কোষ বলা হয়। অশ্মমণ্ডলের নিচ দিয়ে পরিচলন কোষের প্রবাহের সময় তা উপরে ভেসে থাকা অশ্মমণ্ডল বা লিথোস্ফিয়ারে ঘর্ষণজনিত চাপ সৃষ্টি করে।

এভাবে ভূত্বকে সৃষ্ট পার্শ্ব–চাপ ও লিথোস্ফিয়ারের নিচ দিয়ে প্রবাহিত পরিচলন কোষের ঘর্ষণজনিত চাপের সম্মিলিত আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে অপসারী প্লেট সীমান্তে মহাসাগরীয় প্লেটগুলো একে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে Sea–floor spreading বা সাগরতলের প্রসারণ নামে ডাকা হয়।

পরবর্তীতে ভূ–বিজ্ঞানীরা সাগরতলের প্রসারণে সদ্য–সৃষ্ট মহাসাগরীয় ভূত্বক কর্তৃক প্রযুক্ত পার্শ্ব–চাপ ও অশ্মমণ্ডলের তলদেশে পরিচলন কোষের ঘর্ষণের পাশাপাশি অ্যাসথেনোস্ফিয়ারে তাপমাত্রা ও ঘনত্বের পার্থক্য, মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব, ম্যান্টল থেকে উঠে আসা তাপ ইত্যাদি কারণগুলোর সম্মিলিত প্রভাবকে দায়ী করেছেন।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে নতুন ভূত্বক সৃষ্টির জন্য অতিরিক্ত জায়গা কোথা থেকে পাওয়া যাচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাব দিতে হলে আমাদের যেতে হবে তালিকার দুই নাম্বারে থাকা Convergent Plate Boundary বা অভিসারী প্লেট সীমানায়। Convergent Plate Boundary বা অভিসারী প্লেট সীমানায় দুটো প্লেট রাধা–কৃষ্ণের মতো অভিসারে লিপ্ত হয় অর্থাৎ একে অন্যের উপর চড়ে বসে। নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক! কোন প্লেট রাধার ভূমিকা নেবে আর কে কৃষ্ণ হবে তা নির্ধারিত হয় প্লেট–দ্বয়ের ঘনত্বের পার্থক্যের ভিত্তিতে! যদি মহাদেশীয় ভূত্বকের সাথে মহাসাগরীয় ভূত্বকের অভিসার ঘটে তাহলে মহাদেশীয় ভূত্বকের ঘনত্ব কম হওয়ার কারণে তা মহাসাগরীয় ভূত্বকের উপরে চড়ে বসে [পোস্টে সংযুক্ত প্রথম ম্যাপটিতে জাপানের পূর্ব উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটটি ইউরেশিয়ান প্লেটের তুলনায় বেশি ঘনত্ববিশিষ্ট বা ভারী হওয়ার কারণে তা ইউরেশিয়ান প্লেটের তলায় সেঁধিয়ে গেছে] । অভিসারী প্লেট সীমান্তে সাধারণত আগ্নেয়গিরি অথবা পাললিক পর্বতশ্রেণী সৃষ্টি হয়।

একইভাবে দুটো মহাদেশীয় ভূত্বকের অভিসার ঘটলে যেটি হালকা সেটি উপরে চড়ে বসে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ভারতীয় প্লেট ও ইউরেশিয়ান প্লেটের অভিসারী সীমান্তে ভারতীয় প্লেট তুলনামূলক ভাবে বেশি ভারী হওয়ায় তা ইউরেশিয়ান প্লেটের তলায় ঢুকে পড়েছে এবং প্লেট–দ্বয়ের সংযোগস্থলে হিমালয় পর্বতশ্রেণী সৃষ্টি হয়েছে]। একটি প্লেট অপর প্লেটের নিচে তলিয়ে যায় দেখে এ ধরনের প্লেট সীমানাকে Subduction Zone বলা হয়।

অভিসারী প্লেট সীমান্তে যে প্লেটটি ভারী হওয়ার কারণে অন্য প্লেটের তলায় ঢুকছে তার ভাগ্যে কী ঘটছে? সে প্রশ্নের উত্তর জানার আগে নিচের অ্যানিমেশনটি একবার চালিয়ে দেখি।

সূত্র: SCIGN at JPL, NASA

অ্যানিমেশনটিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি অভিসারী প্লেট সীমানায় অপেক্ষাকৃত বেশি ঘনত্ববিশিষ্ট মহাসাগরীয় ভূত্বকটি মহাদেশীয় ভূত্বকের তলায় সেঁধিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্লেট–দ্বয়ের সংযোগস্থলে একটি গভীর খাদের সৃষ্টি হচ্ছে যাকে Trench বলা হয়। এই ট্রেঞ্চগুলো সাধারণত মহাসাগরের গভীরতম জায়গা। পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট ও মারিয়ানা প্লেটের অভিসারী সীমান্তে সৃষ্ট মারিয়ানা ট্রেঞ্চ পৃথিবীর গভীরতম খাদ।

অভিসারী সীমান্তে উপরে চড়ে বসা অপেক্ষাকৃত হালকা মহাদেশীয় প্লেটের অংশবিশেষ এবং দুটো প্লেটের সংযোগস্থলে জমে থাকা sediment বা পলল একত্রে সংকুচিত হয়ে সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী তৈরি করে।

তলায় সেঁধিয়ে যাওয়া অপেক্ষাকৃত ভারী প্লেটটি নিচের দিকে ধাবিত হয়। তলিয়ে যাওয়ার সময় প্লেটটি উপরে চেপে বসে থাকা প্লেটের সাথে তীব্র সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ কারণে বেশিরভাগ ভূমিকম্প সাধারণত Subduction Zone এ সংঘটিত হয়।
গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা ও চাপ বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে যেতে থাকা প্লেটটি একসময় গলে ম্যাগমায় পরিণত হয়। সে ম্যাগমা পুনরায় উপরের দিকে ধাবিত হয়ে ভূত্বকের উপর চাপ সৃষ্টি করে। মহাদেশীয় ভূত্বকের পুরুত্ব বেশি হওয়ার কারণে উপরের দিকে উঠে আসা ম্যাগমা ভূত্বক ফুঁড়ে মাটিতে উঠে আসতে পারে না। ফলে তা ভূগর্ভে আঁটকে পড়ে শীতল হয়ে Pluton বা Batholith সৃষ্টি করে। চরম উদাসের ইয়োসেমিটি ভ্রমণ বিষয়ক পোস্টে সংযুক্ত আয়না হ্রদের ছবিতে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা 'এল ক্যাপিটান' নামক পাহাড়টি এভাবে সৃষ্টি হয়েছে

উপরের দিকে উঠে আসা গলিত ম্যাগমা মহাসাগরীয় ভূত্বকের তলায় গিয়ে জমা হলে তবে মহাসাগরীয় ভূত্বকের পুরুত্ব কম হওয়ার কারণে সহজেই ভূত্বক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে। ফলে মহাসাগরীয় ভূত্বক ও মহাদেশীয় ভূত্বকের অভিসারী সীমানায় মহাসাগরীয় অংশে আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হয়। আলাস্কার উত্তর পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটের সাথে উত্তর আমেরিকান প্লেটের অভিসারী সীমান্তে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটের তলিয়ে যাওয়া অংশ থেকে উৎপন্ন ম্যাগমা প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট ফুড়ে বেরিয়ে এসে প্রায় ৩০০টি ছোট আকারের আগ্নেয়গিরি সৃষ্টির মাধ্যমে অ্যালুশান/অ্যালিউশান দ্বীপপুঞ্জ তৈরি করেছে।

প্রশান্ত মহাসাগরের চারপাশের সীমানা লক্ষ্য করলে দেখা যায় মহাসাগরীয় প্লেটগুলো একদিকে ইউরেশিয়ান–ফিলিপাইন–অস্ট্রেলিয়ান মহাদেশীয় প্লেট ও অপরদিকে উত্তর আমেরিকা, ক্যারিবীয়, ও দক্ষিণ আমেরিকান মহাদেশীয় প্লেটগুলোর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে অভিসারী প্লেট সীমানা তৈরি করেছে। ফলে পৃথিবীতে সৃষ্ট ভূমিকম্পগুলোর একটা বড় অংশ প্রশান্ত মহাসাগরের চারিদিকের সীমানা–চক্র বরাবর সংঘটিত হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় ভূত্বকের তলিয়ে যাওয়া অংশ থেকে সৃষ্ট ম্যাগমা মহাসাগরীয় ভূত্বক ঠেলে উঠে এসে প্রশান্ত মহাসাগরের সীমানা–চক্র ঘিরে আগ্নেয়গিরির সারি তৈরি করেছে। এ কারণে প্রশান্ত মহাসাগরের সীমানা–চক্রটিকে The Pacific Ring of Fire/The Ring of Fire বা প্রশান্ত মহাসাগরের আগ্নেয় মেখলা নামে ডাকা হয়।

auto

মহাসাগরীয় ভূত্বকগুলো অপসারী সীমান্তে তৈরি হয়ে অভিসারী সীমান্তে এসে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ফলে মহাদেশীয় ভূত্বকের তুলনায় মহাসাগরীয় ভূত্বকের জীবনকাল অতি ক্ষুদ্র হয়। যেখানে মহাদেশীয় ভূত্বকে প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন শিলার বয়স প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর সেখানে সবচেয়ে প্রাচীন মহাসাগরীয় ভূত্বকের বয়স সর্বোচ্চ ২০০ মিলিয়ন বছর।

auto

তালিকার তিন নাম্বারে থাকা প্লেট সীমানার নাম Conservative or Transform Plate Boundary বাংলায় রক্ষণশীল বা রূপান্তরিত প্লেট সীমানা। এ ধরনের সীমানায় প্লেটের সৃষ্টি বা বিনাশ হয় না দেখে এদের রক্ষণশীল সীমানা বলা হয়। এ ধরনের সীমানায় একটি প্লেট অন্য প্লেট ঘেঁষে চলে যায়। ক্যালিফোর্নিয়ার সান অ্যান্ড্রিয়াস ফল্ট এ ধরনের প্লেট সীমানার সবচাইতে বিখ্যাত উদাহরণ। ক্যালিফোর্নিয়ার ভূমিকম্প ঝুঁকির মূল কারণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট ও উত্তর আমেরিকান প্লেটের রূপান্তরিত বা রক্ষণশীল সীমানায় এ ফল্টের বা চ্যুতিটির অবস্থান। সাধারণত অপসারী প্লেট সীমানায় সমুদ্র–মধ্য পর্বতশ্রেণীতেও এ ধরনের ফল্ট দেখা যায়।

নিচের অ্যানিমেশনটিতে সমুদ্র–মধ্য পর্বতশ্রেণীতে কীভাবে চ্যুতি তৈরি হয় তা দেখানো হয়েছে।

সূত্র: SCIGN at JPL, NASA

গুগল ম্যাপে আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝামাঝি অঞ্চল বরাবর মিড–ওশান রিজ বা সমুদ্র–মধ্য পর্বতশ্রেণীতে জুম করলে এ ধরনের ফল্ট বা চ্যুতি দেখতে পাওয়া যাবে।

[চলবে...]


এ পর্বটি লিখতে The Southern California Integrated GPS Network at JPL, NASA -র শিক্ষা মডিউলের Plate Tectonics অধ্যায়ের কাঠামো অনুসরণ করেছি।


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

এই তো লক্ষ্মী ছেলের মত দ্বিতীয় পর্ব দিয়ে দেওয়া হয়েছে! :P :D

দ্রোহী এর ছবি

$)

সাফি এর ছবি

একাউনট্টা এখন কে চালাইতেছে কন তো দেখি?

দ্রোহী এর ছবি

কমেন্টগুলো আমি করি, পোস্টগুলো আমার ব্যাটায় লেখে। :D

সাফি এর ছবি

অ্যানিমেশনপ্রীতি দেখে সেইরকম ই ধারণা করছিলাম, কঠিন বিষয় সহজ করে লিখতে এনিমেশনগুলার তুলনা হয়না।

দ্রোহী এর ছবি

আরো দারুণ সব অ্যানিমেশন আছে কিন্তু ফাইল সাইজ বেজায় বড়। :(

ধুসর গোধূলি এর ছবি
নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

লাঞ্চে যাচ্ছি.... এসেই ঝাপিয়ে পড়বো আপনার পোস্টটা পড়তে :)

চিলতে রোদ এর ছবি

প্রথম পর্বের মত কিছু শরীয়তি-মারফতি গাল-গপ্পো লাগান্‌ গেলে ভালো হইত। :D
তাইলে পোস্টটা পড়তে আরেকটু আরাম পাইতাম। চিনিগুলা দিয়া তিতা ট্যাবলেট খাইতে মজা।
কিন্তু... ওভারঅল... (জাঝা)

দ্রোহী এর ছবি

এই পর্বের বিষয়বস্তু আসলে অসম্ভব কঠিন। আমি বেশি সহজ করে লিখতে গিয়ে জিনিসটা অনেকটা "সমীকরণ ছাড়া কোয়ান্টাম মেকানিক্স" বানিয়ে ফেলেছি। :(

এই পর্বে রাধা-কৃষ্ণ নিয়েই খুশি থাকেন আপাতত। পরের পর্বে এই পর্বের ক্ষতিটুকু পুষিয়ে দিব। ;)

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আপ্নে ধীরে ধীরে একটা ভালোতর লোক হয়ে উঠতেছেন। :)

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

দ্রোহী এর ছবি

:D

মেয়ে দ্যাখেন জলদি। একটা আমার জন্য, একটা আমার ছেলের জন্য, একটা মনির হোশেনের জন্য, আরেকটা আপনার জন্য।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আপ্নে ধীরে ধীরে একটা ভালোতর লোক হয়ে উঠতেছেন। :)

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

এবারে পর্ব কঠিন! পড়ালেখা ভাল্লাগেনা! :(

কয়েকটা জিনিস -

১। টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া মনে হলো মহাসাগরীয় প্লেটগুলোতেই বেশি ঘটছে, উদাহরণগুলোতে ওগুলোর কথাই বেশি এসছে, তারমানে কি মহাদেশীয় প্লেটেরা লক্ষ্মী ছেলের মতন চুপটি করে বসে থাকে? নাকি তাদের ঘনত্ব কম (১ম পর্ব) তাই দেবে মানে মহাসাগরীয়দের নিচে চলে যায় না? এদের নড়াচড়ায় কোন মারিয়ানা ট্রেঞ্চ বা হিমালয় তৈরি হয় নাই?

২। সবচেয়ে প্রাচীণ ভূ-ত্বক শিলার বয়স ৪ বিলিওন হলেও মহাসাগরীয় ভূ-ত্বক শিলা মাত্র ২০০ মিলিয়নের খোকা? কন কী! ভূমিকম্প রিলেটেড না, কিন্তু মাথায় আসলো তাই জিজ্ঞেস করি, আপনি জানবেন মনে হয়। :) তার মানে পৃথিবীর নিজের বয়সই যেহেতু প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর, পৃথিবীর সৃষ্টির সসময়ের এবং পরবর্তীতে আসা জীববৈচিত্রের ফসিলায়িত তথ্য জানতে মহাদেশীয় ভূ-ত্বকই বেশি কাজের? কিন্তু পৃথিবীর আদি অবস্থায় কি মহাসাগরীয় এলাকা বেশি ছিলো নাকি মহাদেশীয়? মহাসাগরীয় জীববৈচিত্র তদন্ত করতে তাহলে মহাদেশীয় ভূ-ত্বকের চেয়ে পুরানো শিলা পাবার কোন সম্ভাবনা নাই?

৩। মহাদেশের কোন কোন অংশ আগে মহাসাগরের তলে ছিলো, পরে প্রাকৃতিক কারণে জেগে উঠেছে বলে পড়েছি। আবার কোন কোন অংশ মিলিয়ন বছর আগে ছিলো, এখন পানির নিচে চলে গেছে, এরকম এরিয়া কোন্‌গুলো? এরকম ঘটনা কি টেকটনিক প্লেটদের ধাক্কাধাক্কির কারণে হয়? যেহেতু শিফটিং অনেক ধীরে ঘটছে, হিমালয়ের উচ্চতাও অনেক ধীরে বাড়ছে, এমনটা কি হুট করে হবার চান্স আছে, নাকি অনেক মিলিয়ন বছর ধরে হয়েছে? হিমালয়ের গভীরে কি তাইলে মহাসাগরীয় ফসিল পাবার সম্ভাবনা আছে?

৪। এটাও ভূমিকম্প ইরেলেভ্যান্ট, রিং অফ ফায়ার পড়ে লর্ড অফ দ্য রিংগস মনে পড়লো, আর মারিয়ানা ট্রেঞ্চ, সান আন্দ্রিয়াস ফল্ট, ইত্যাদি থেকে নানান অ্যাডভেঞ্চার গল্প। আচ্ছা, ভাসমান দ্বীপের কথা পড়েছি, এরা নাকি ড্রিফটও করে, অক্ষাংশ/দ্রাঘিমাংশ ঠিক থাকেনা, এটা কি সত্যি হয়? গুগল করতে ইচ্ছা করছে না, জানলে জানাবেন কিন্তু! :)

এডিট:
* sea floor spreading বলবার সময়ে 'অভিসারী' প্লেট পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়, নাকি 'অপসারী' প্লেট হবে? (বাংলা ইংলিশ প্রতিশব্দে ক্যাচাল লাগছে)
:(

* এর এক প্যারা পরে, 'সুতরাং আমরা জানলাম' এক্সট্রা এসেছে মনে হয়।

ভালো কথা, পরের পর্ব দেরি করে না আসে! এক হপ্তা বসে থাকতে পারবো না! <কোলন হুমকি!>

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

দ্রোহী এর ছবি

আপাতত ভুল দুটো ঠিক করে দিলাম।

আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর বাংলাদেশের খেলা দেখা শেষ করে দেবো। শালার পুতেরা প্রতিদিন হারে জানি, তাও নির্লজ্জের মত ওদের খেলা দেখি। :(

দ্রোহী এর ছবি

এবারের পর্বের বিষয়বস্তু আসলেই খুব কঠিন। যেটুকু বুঝলে জিনিসটা সম্পর্কে একটা ভাসাভাসা ধারণা তৈরি হবে আমি কেবল সেটুকুই রেখেছি। বেশি সহজ করে বুঝাতে গিয়ে পুরো জিনিসটা “সমীকরণ ছাড়া তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা” হয়ে গেছে। :(

এবার আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করি:–

১। টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া দু ধরনের প্লেটেই সমানভাবে ঘটে। মহাদেশীয় প্লেটগুলো মোটেও লক্ষ্মী ছেলের মত চুপটি করে বসে থাকে না। প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর সবগুলো মহাদেশ একত্রে এক জায়গায় ছিল। সেই সুপার কন্টিনেন্ট বা মহা–মহাদেশটির নাম ছিল প্যানজিয়া [Pangea/Pangaea]। যেহেতু নামের শেষে জিয়া আছে তাই বুঝতেই পারছেন....

কথায় আছে, সুখে থাকতে ভূতে কিলায়। তাই প্যানজিয়ার কপালে বেশিদিন সুখ সইলো না। মহাদেশগুলো নিজেদের মধ্যে মারামারি করে বিকলপোঁদহারার মত বিভিন্ন উপদল–পাতিদলে ভাগ হয়ে একে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করলো। সেই দূরে সরে যাওয়ার ২৫০ মিলিয়ন বছরের ফসল পৃথিবীর বর্তমান মানচিত্র।

নিচের অ্যানিমেশনটিতে প্যানজিয়ার অন্তঃ-কোন্দল দেখানো হয়েছে।

মনে রাখতে হবে, ট্রেঞ্চ বা পর্বত সৃষ্টির জন্য দুটো প্লেটের অভিসারী সীমান্তে সংঘর্ষ ঘটতে হবে এবং দুটো প্লেটের মধ্যে অন্ততপক্ষে একটিকে মহাদেশীয় প্লেট হতে হবে। দুটো মহাসাগরীয় প্লেটের অপসারী সীমান্তে যে পর্বত সৃষ্টি হয় তা পানির তলায় থাকে। পানির উপরে যেসব পর্বত দেখা যায় সেগুলো তৈরি হতে গেলে কমপক্ষে একটা মহাদেশীয় প্লেট লাগবে।

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ তৈরি হয়েছে মারিয়ানা প্লেট [মহাদেশীয়] ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটের অভিসারী সংঘর্ষে। হিমালয় পর্বত তৈরি হয়েছে ভারতীয় প্লেট [মহাদেশীয়] ও ইউরেশিয়ান প্লেটের [মহাদেশীয়] অভিসারের ফলে।

২। শুরুতে মহাদেশীয় প্লেট বলে কিছু ছিল না। পুরো ভূত্বক আবৃত ছিল মহাসাগরীয় প্লেট দিয়ে। [জিনিসটা এখনো পুরোপুরি প্রমাণিত না। তবে পরীক্ষালব্ধ ফলাফল এমন কিছুরই ইঙ্গিত করে] ধারণা করা হয় মহাসাগরীয় প্লেটের ভাঙ্গনের মাধ্যমে মহাদেশীয় প্লেট সৃষ্টি হয়েছিল। জিনিসটা কীভাবে হয়েছিল তা আমি জানি না। আসলে কেউই এখনো জানে না। জিনিসটা এখনো গবেষণাধীন। অগ্নুৎপাত বা উল্কাপাত জাতীয় কোন এক ধরনের উৎপাতে ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা বাইরে বেরিয়ে এসে অ্যালুমিনাম সিলিকেটসঘটতি শিলা তৈরি করেছে। যা থেকে তৈরি হয়েছে মহাদেশীয় ভূত্বক। পরবর্তীতে অভিসারী সীমানায় সাবডাকশন ও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত থেকে মহাদেশীয় প্লেট সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় অ্যালুমিনাম সিলিকেটসঘটিত শিলা [মূলত: গ্র্যানিট] পাওয়া গেছে।

মহাদেশীয় বা মহাসাগরীয় প্লেটের তলদেশ বা বেজমেন্ট মূলত আগ্নেয় শিলায় তৈরি। বেজমেন্টের উপরে ধীরে ধীরে পাললিক ও রূপান্তরিত শিলা জমে মহাদেশীয় ভূত্বক তৈরি করে। ফলে মহাদেশীয় ভূত্বকের পুরুত্ব বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ: মহাদেশীয় ভূত্বকের বাংলাদেশ অংশে বেজমেন্টের উপরে প্রায় ২০–২২ কিলোমিটার পুরু পলিমাটির স্তর জমেছে।

মহাদেশগুলো যেহেতু পানির উপরে থাকে তাই মহাদেশীয় অঞ্চলের শিলা ক্ষয়ে পলল বা সেডিমেন্ট সৃষ্টি করে। সেই পলল পানি, বায়ু ইত্যাদির মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে মহাদেশ সংলগ্ন অগভীর সমুদ্রে জমা হয়। সেখানে বসবাসরত প্রাণী মরে গিয়ে সেই পলল স্তরে আটকা পড়ে কালের আবর্তে বিভিন্ন রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ফসিল তৈরি করে। সেই পলল আবার দুটো প্লেটের অভিসারী সংঘর্ষের চিপায় পড়ে ভাঁজ হয়ে পানির উপরে উঠে এসে পর্বতশ্রেণী তৈরি করে। সুতরাং, এক অর্থে আপনার কথাই সঠিক। ফসিলায়িত জৈববৈচিত্রের তথ্য জানতে মহাদেশীয় ভূত্বকই কাজের। আরেকটু সঠিকভাবে বললে মহাদেশীয় ভূত্বকের পাললিক অংশটুকুই কাজের।

গভীর সমুদ্রে ফসিল পাওয়া যায় না বললেই চলে। প্রযুক্তি উন্নত হলে হয়তো ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে।

৩। প্রায় সবগুলো মহাদেশই সমুদ্রতলের উচ্চতার পরিবর্তন, প্লেট মোশন ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন সময়ে পানির তলায় ছিল। পৃথিবীর কিছু জায়গা আছে যেগুলো শুরু থেকে কখনো পানির তলায় যায়নি। এই জায়গাগুলো Shield Area বলা হয়।

auto

এই এলাকাগুলো ছাড়া বাকি সব এলাকাই কোন না কোন ভূতাত্ত্বিক সময়ে পানির তলায় ছিল।

হিমালয়ের উচ্চতা বছরে গড়ে প্রায় ২ সেমি করে বাড়ছে। ভয়াবহ মাত্রার ভূমিকম্পে হিমালয়ে কোন অংশের উচ্চতা হুট করে ৮–১০ ফুট থেকে শুরু করে কয়েকশো ফুট বাড়তে পারে। সে ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হলে হিমালয়ের উচ্চতাবৃদ্ধি দেখার সৌভাগ্য আপনার কপালে নাও ঘটতে পারে। ;)

কিন্তু পুরো হিমালয় পর্বতশ্রেণীর উচ্চতা হুট করে বাড়া সম্ভব না। টেকটোনিক প্রসেস বিবর্তনের মতোই অত্যন্ত ধীরগতির প্রক্রিয়া। তবে বিবর্তনের মতো এটা নিয়ে বর্তমানে কোন প্রকার তর্ক–বিতর্কের অবকাশ নাই কারণ ভূতত্ত্ব এক ধরনের “কুফরি কালাম”। ;)

হিমালয় সৃষ্টি হয়েছে ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট আর ইউরেশিয়ান প্লেটের অভিসারী সংঘর্ষে। ভারতীয় প্লেট ইউরেশিয়ান প্লেটকে ধাক্কা দেয়ার আগে প্লেট দুটোর মাঝে একটা সাগর ছিল। সাগরটার নাম ছিল Tethys। টেথিস যেখানে ছিলে সেখানে বর্তমানে ইনডিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও ভারত মহাসাগর গড়াগড়ি খাচ্ছে। ইনডিয়া আর ইউরেশিয়ার গুঁতাগুঁতিতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর আগে বেচারা টেথিস দুনিয়ার বুক থেকে হারিয়ে গেছে। ইন্ডিয়া, ইউরেশিয়ার পরিধির অংশবিশেষ আর টেথিসে জমা শিলাস্তর ভাঁজ হয়ে তৈরি হয়েছে হিমালয় পর্বতশ্রেণী।

হিমালয়ের তলায় প্রায় ১৫০ –২০০ কিলোমিটার পুরু শিলাস্তর আছে। মানব ইতিহাসের সর্বোচ্চ ড্রিলিং ডেপথ ১২,২৬২ মিটার [রাশিয়ায়]। :(

৪। ভাসমান দ্বীপ জিনিসটা ঠিক সেভাবে ভূতত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত না। এ সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানতাম না। আপনার প্রশ্ন শুনে কাল রাতে একটু উইকিতে দেখলাম। বিশেষ ধরনের কিছু উদ্ভিদ একত্রে কোন এলাকার মাটি শিকড় দিয়ে আঁকড়ে রেখে ভাসমান দ্বীপ তৈরি করে। উইকিতে এ সম্পর্কে বিশদ দেখতে পারেন।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আরে হ! প্যানজিয়া!! :)
কিন্তু প্যানজিয়া নিয়ে ভিডু লিংকটা কই দিয়েছেন? দেখতে পাচ্ছি না। :(

অনেক ধন্যবাদ! সময় নিয়ে, এত যত্ন করে উত্তর দেবার জন্যে। বুঝতে পেরেছি ব্যাপারগুলো। এই পর্বের বিষয়বস্তু কঠিন লাগেনি আসলে, তথ্য অনেক বেশি ছিলো, আর একটার সাথে অন্যটার পার্থক্য মনে রাখাটাই কঠিন আসলে।

পরের পর্ব অবশ্যই তাড়াতাড়ি লিখতে বলেন দ্রোহী জুনিয়রকে। :D

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

দ্রোহী এর ছবি

ভিডু কৈ পাইলেন? যে অ্যানিমেশনটা দিয়েছি ওটা উইকি থেকে নেওয়া।

এ পর্বের বিষয়বস্তুর ভেতরটা আসলে ভয়াবহ কঠিন। আমি ভুলেও সেদিকে পা মাড়াইনি। ;)

পার্থক্য মনে রাখার কিছু নাই। শুধু এটুকু মনে রাখলেই চলবে যে মহাসাগরীয় ভূত্বকগুলো রাজনীতিবিদদের মত সরাক্ষণ পোঙামারামারি করে। তারা দলের ভেতর অন্তঃকোন্দল সৃষ্টি করে একে অন্যের থেকে দূরে যায়। মাঝে মধ্যে তারা চারদলীয় জোট ও ইসলামী ঐক্যজোটের মত সমান্তরালে চলে। আবার মাঝে মধ্যে বিম্পি -জামাতের মত পাশাপাশি বসে থেকে একসাথে মিলে একটা প্লেটের মত আচরণ করে।

অপরদিকে মহাদেশীয় প্লেটগুলো প্রেমিক প্রকৃতির হয় [প্রকৃতি প্রেমিক কিন্তু বলিনি... খুব খিয়াল কইরা]। তারা সবসময়ই কারো না কারো সাথে গুঁতাগুঁতি করার জন্য ব্যতিব্যস্ত থাকে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

হ, ঐতো ভিডু, অ্যানিমেশন। :)
এখন দেখা যাচ্ছে বাই দ্য ওয়ে। আর বাকিটা পড়ে হাস্তে হাস্তে... এবার মনে থাকবে এমনিতেই। :D

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

মাহফুজ খান এর ছবি

দ্রোহীদা ইতিমধ্যে আপনার প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিয়েছেন। আমি আপনার দুই নম্বর প্রশ্নের প্রথম অংশটার জবাবে একটা লাইন যোগ করতে চাই (দ্রোহীদা তুমি নিশ্চয় কিছু মনে করবে না?)।
মহাসাগরীয় শিলা মহাদেশীয় শিলার তুলনায় সত্যি খোকা, এর কারন আর কিছুই না বরং Sea Floor Spreading. মিড-ওসেনিক রিজ বরাবর অনবরত অগ্নুৎপাতের ফলে নতুন মহাসাগরীয় শিলা তৈরি হচ্ছে আর যেহেতু পৃথিবী পৃষ্টের আয়তন বাড়ছে না তাই এই শিলাকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য ঐ মহাসাগরীয় প্লেটকে অন্য কোথাও ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে হবে। এই কারনে মিড-ওসেনিক রিজ বরাবর মহাসাগরীয় শিলার বয়স সবথেকে কম...আর ঐ অঞ্চল থেকে আপনি যত দূরে যেতে থাকবেন (উভয় দিকে) তত পুরাতন শিলা পাবেন, আর একেবারে দুরবর্তি অঞ্চলে Convergent Plate Boundary তে তুলনামুলক ভাবে সবচেয়ে পুরাতন শিলা ধ্বংপ্রাপ্ত হচ্ছে। যেহেতু এই প্রক্রিয়া অনবরত চলমান কাজেই মহাসাগরীয় প্লেটগুলো সর্বদা নবীন থাকছে। আশাকরি নিচের ভিডিওটা আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে।
http://www.youtube.com/watch?v=t-ctk4KR-KU

তারেক অণু এর ছবি

(Y)

ওডিন এর ছবি

আগ্রহ নিয়ে পড়ছি, দুর্দান্ত লেখে আপনার ছেলে :D

দ্রোহী এর ছবি

লিখবে না? .......পোলা তো নয় একখান আগুনেরই গোলা রে!

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

:D

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

:D

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনি দেখি পর্দা কাঁপানো ব্লগার হয়ে যাচ্ছেন দিনে দিনে ;)

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দ্রোহী এর ছবি

:O

নাউজুবিল্লাহ মিন জালেক! কীসের পর্দার কথা বলছেন? ;)

সচল জাহিদ এর ছবি

চা কফির লগে মুড়ি চানাচুর নিয়া বইলাম। অনেকদিন পরে খুব আগ্রহ নিয়ে একটা সিরিজ পড়ছি।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দ্রোহী এর ছবি

আপনার টিপাইমুখ সিরিজ থেকে খানিকটা হলেও উৎসাহ পেয়েছি।

আমি চাইছি সিরিজটা এমন ভাবে লিখতে যাতে লেখা শেষ হলে পুরোটা একত্রিত করে খানিকটা এডিট করে একটা হ্যান্ডবুক টাইপের কিছু বানানো যায়। যে ভূমিকম্প সম্পর্কে কোন কিছু জানে না সে যাতে এই হ্যান্ডবুকটা পড়ে ভূমিকম্প ও বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি সম্পর্কে একটা ভাসাভাসা ধারণা লাভ করতে পারে।

রু (অতিথি)  এর ছবি

খুব ভাল লাগলো এই পর্বটা। অনেক কিছু জানলাম, আবার কিছু কিছু জিনিশ বুঝি নাই।

দ্রোহী এর ছবি

ধন্যবাদ।

কী কী জিনিস বুঝেননি? এই সিরিজে লেখার চাইতে মন্তব্যে আলোচনা বেশি হবে। তাই কোন প্রশ্ন থাকলে করে ফেলতে ভুলবেন না যেন।

শাব্দিক এর ছবি

আপনার ছেলেকে বলবেন পরের পর্ব তাড়াতাড়ি লিখতে, না হলে এটা ভুলে যাব :S

দ্রোহী এর ছবি

টেকটোনিক প্লেট দুটো নাড়ানো কি চাট্টিখানি কথা? সপ্তাহান্তে ব্যাটা আমার একটা করে পর্ব ছাড়বে এ আমি কয়া দিলাম!

শাব্দিক এর ছবি

এই সাইজে সপ্তাহে একটা হলে চলবে। টেনেটুনে তার সাইজটা একটু বড় করে দিন না, যেন গতি একটু বাড়ে।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

তখন দৌড়ের উপর থাকায় আর পড়তে বসি নি। এখন সময় নিয়ে পুরোটা পড়লাম। আপনার মন্তব্য এবং মন্তব্যের জবাবগুলোও পড়লাম। এক কথায় লেখাটা আসাধারণ হয়েছে। কিন্তু লাই যখন দিয়ে ফেলেছেন, তখন মনে প্রশ্ন জেগেছে কিছু। উত্তর দিলে আমার জানার গ্যাপগুলো কমিয়ে নিতে পারতাম।

১. টেকটনিক প্লেটগুলোতো সব সময় নড়ছে। তো এই নড়ার বেগ কেমন? উপরে আপনার দেয়া একটা মন্তব্যের উত্তরে দেখলাম উল্লেখ করেছেন হিমালয়ের উচ্চতা গড়ে বছরে ২ সে.মি. বাড়ে। এরকমটা কি মহাদেশীয় প্লেটগুলোর হরাইজন্টাল ডিসপ্লেসমেন্টের জন্যেও সত্য? যদি তাই হয়, তাহলে অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশের পরিবর্তনটা কী করে মেইনটেইন করা হয়?

২. যেহেতু টেকটনিক প্লেগুলো অনেকটা শপিং মলের সিড়ির মত একদিকে তৈরী হচ্ছে এবং অন্যদিকে ধ্বংস হচ্ছে (এ ক্ষেত্রে আমার বোঝায় ভুলও থাকতে পারে। উদাহরণটা থেকে আমার এমনটাই মনে হয়েছে), তাহলে আমাদের ভূত্বকে যা আছে তা কালক্রমে একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে? (অর্থাৎ পৃথিবী ধ্বংস হবার আগেই)।

৩. ঠিক কী কারণে প্যানজিয়া ভেঙ্গে গিয়ে কন্টিনেন্টাল ড্রিফ্ট হয়েছিল? এবং ভাঙার সময় মহাদেশীয় প্লেটগুলো কি র‌্যান্ডমলি তৈরী হয়েছিল নাকি কোন বিশেষ নিয়ম মেনে বিভক্ত হয়েছিল?

উত্তরগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম। এত চমৎকার একটা সিরিজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে অবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ।

মাহফুজ খান এর ছবি

চমৎকার কিছু প্রশ্ন করেছেন। দ্রোহীদা হয়ত আরো ভাল জবাব দিবেন। আমি সামান্য চেষ্টা করলাম মাত্র।
১। টেকটোনিক প্লেটগুলোর নড়ার বেগ প্লেটভেদে কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। আবার একটি বৃহত প্লেটের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন বেগে বিভিন্ন দিকে সঞ্চালিত হতে পারে। উদাহরন সরুপ অস্ট্রেলিয়া প্রতিবছর ৭ সেমি হারে সরছে অন্যদিকে ইন্ডিয়া প্রতিবছর ৬সেমি এবং মায়ান্মার প্রতিবছর দুই সেমি হারে সড়ছে (চিত্র-1)। সারনী-১ এ বিভিন্ন প্লেটের নড়ার বেগ দেয়া হল।
Plate_BD

Plate velocity

অক্ষাংশ দ্রাঘীমাংশের পরিবর্তন্টা মেইন্টেইন করা সত্যি দুস্কর। তবে আপনি খেয়াল করলে দেখবেন যে অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ পরিমাপের জন্য যে সমস্ত ডেটাম ব্যবহার করা হয় প্রত্যেক্টার সাথে একটি সাল যুক্ত আছে। যেমন বহুল প্রচলিত একটি ডেটাম হচ্ছে WGS-1984, এই ডেটামটি ১৯৮৪ সালের প্লেটের অবস্থানের উপর প্রতিষ্টিত। এখন আপনি যদি এই ডেটাম ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়ার কোন জায়গার ম্যপ তৈরি করেন তবে আজকের অবস্থানের সাথে প্রায় ১.২ মি বিচ্যুতি হবে।

নীচের ভিডিওটিতে প্লেটগুলোর অতিত ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য অবস্থান দেখানো হয়েছে।
http://www.youtube.com/watch?v=uGcDed4xVD4

২। আপনি ঠিকই বুঝেছেন, সত্যি টেকটোনিক প্লেটগুলো এক জায়গায় তৈরি হচ্ছে এরবং এক জায়গায় ধ্বংশ হচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে এই তৈরি এবং ধ্বংস কাজ হচ্ছে মুলত সামুদ্রিক প্লেটগুলোতে। মহাদেশীয় প্লেটগুলো তুলনামুলক ভাবে অক্ষয়। এদেরকে কনভেয়র বেল্টের উপর অবস্থিত যাত্রী মনে করতে পারেন। যেহেতু এই কনভেয়র বেল্টগুলো একে অপরের সাথে সন্নিবিদ্ধ ভাবে অবস্থান করে, কাজেই এদের গতির দিকের উপর ভিত্তি করে কখনো দুটি মহাদেশীয় প্লেট একে অপরের সাথে ধাক্কা খায় আবার কখনো একে অপরের থেকে দূরে সরে যায়।

৩। টেক্টনিক প্লেট ভাঙ্গনের প্রক্রিয়াকে কন্টিনেন্টাল রিফটিং বলা হয়। কন্টিনেন্টাল রিফটিঙ্গের কারন হিসেবে অনেক মতবাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মতবাদটি হচ্ছে মেন্টল কনভেকশন। এই তত্ব অনুযায়ী মেন্টলের উত্তপ্ত ম্যগ্মা উপরের দিকে উঠে ভূত্বকের নীচ বরাবর বিপরিত দুই দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাপ হারিয়ে ঠান্ডা হতে থাকে। এই ঠান্ডা ম্যগ্মা আবার মেন্টলে ফিরে যায় আবার উত্তপ্ত হয়ে উপরে উঠে আসে, ঠিক বায়ুর পরিচলনের মত। নীচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
http://www.youtube.com/watch?v=ryrXAGY1dmE&feature=related
ভূত্বকের নীচে ঠিক যে বরাবর ম্যগ্মা উপরের দিকে উঠে সে বরাবর ভূত্বক ফুলে উঠে ডোমের আকার ধারন করে আর উচ্চ চাপ ও তাপে গলে গিয়ে এর পুরুত্ব হারাতে থাকে এবং একসময় এর মধ্যে ফাটলের সৃষ্টি হয়। সাধারনত সমকেনদ্রিক তিনটি ফাটলের সৃষ্টি হয় যার মধ্যে যে কোন একটি ফাটল বরাবর ভূত্বকের সম্প্রসারন ঘটতে থাকে। যেহেতু এই ম্যগ্মা ভূত্বককে স্পর্শ করে বিপরিত দুই দিকে ছড়িয়ে পড়ে সেহেতু তারা ভূত্বকের উপর একধরনের বিপরিত মুখি বল প্রয়োগ করে। এই বল বিন্যাসের উপর নির্ভর করে কোন ফাটল বরাবর ভূত্বকের সম্প্রসারন ঘটবে।
এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং সর্বদা কাজ করছে। বর্তমানে (মহাদেশের নীচে) আফ্রিকা মহাদেশের পূর্বাংশে এমন একটি প্রক্রিয়া চলমান এবং এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে ঐ অংশ একসময় আফ্রিকা থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং তাদের মধ্যে নতুন সাগরের সৃষ্টি হবে। পেনজিয়ার ভাঙ্গনও একই প্রক্রিয়ার ফসল।

দ্রোহী এর ছবি

বাঘের বাচ্চা! এই না হইলে ভূতত্ত্ববিদ কীসের!

মাহফুজ,

তোর হাতে সময় থাকলে বাংলাদেশের খাবার পানিতে আর্সেনিক দূষণ সমস্যা এবং সে সমস্যাকে পুঁজি করে পুঁজিপতিদের ব্যবসা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে একটা সিরিজ লেখা শুরু করতে পারিস। এ বিষয়ে তোর চাইতে ভাল এখানে কেউ জানে না। লিখবি নাকি? প্রতি সপ্তাহে কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটা করে পর্ব দিলেও হয়।

সাফি এর ছবি

গ্রামীণ পানি আসতেছে নাকি?

মাহফুজ খান এর ছবি

ভাই আমার অনেক দিনের ইচ্ছা এই বিষয়টি নিয়ে লেখার, কিন্তু সময় করে উঠতে পারছিনা। হাতে এখন কিছু কাজ আছে, কাজগুলো শেষ করে লিখব আশা করি।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

দ্রোহীদার জাবাবগুলোও চমৎকার ছিল, তবে আপনারগুলোও খুবই সুন্দর এবং সরল করে কঠিন বিষয়টাকে উপস্থাপন করেছে। ভিডিও এবং লিঙ্কগুলোর জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আশা করবো আপনি নিয়মিত সচলে লিখবেন।

আপনার সর্বশেষ উত্তর থেকে একটা প্রশ্ন ছিল। আপনি লিখেছেন,

বর্তমানে (মহাদেশের নীচে) আফ্রিকা মহাদেশের পূর্বাংশে এমন একটি প্রক্রিয়া চলমান এবং এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে ঐ অংশ একসময় আফ্রিকা থেকে আলাদা হয়ে যাবে।

এই অংশটা আফ্রিকার কোন দেশ বারাবর পড়েছে এবং আলাদা হয়ে যেতে কত বছর লাগতে পারে? সময়টা কি অনেক বেশী নাকি তুলনামূলক দ্রুত (২০০-৩০০ বছর) ঘটবে?

মাহফুজ খান এর ছবি

ধন্যবাদ নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী, আপনার এই প্রশ্নটির জবাব আমি যে ভিডিও লিঙ্কটি দিয়েছিলাম (প্লেটের বর্তমান ও ভবিশ্যতের সম্ভাব্য অবস্থান) সেখানেই আছে। আপনি যদি ভিডিওটির ২:২৪--২:২৮ মি এ আগুপিছু করেন তবে দেখতে পাবেন আফ্রিকার কোন অংশ সরে যাছে এবং ১০০ মিলিয়ন বছর পরে এর অবস্থান কোথায় হবে।
এটি বর্তমানে ইথিওপিয়া-কেনিয়া-উগান্ডা-তাঞ্জানিয়া' এই অঞ্চল বরাবর বিস্তৃত। নিচের মানচিত্রে এর অবস্থান দেখানো হল।
figure2
ভাই আপনার প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশের জবাবে বলছি...জিওলজিকেলি ২০০-৩০০ বছর কিছুইনা। এইধরনের প্রক্রিয়া মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে চলতে থাকে।

আরেকটা ব্যপার হচ্ছে এখন যে প্রক্রিয়াটি সচল আছে সেটি বিভিন্ন ভুতাত্বিক কারনে একসময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে, আর সে ক্ষেত্রে হয়ত এই অঞ্চল আদৌ আলাদা হবে না। এই রিফ্‌ট ভ্যালি সম্পর্কে আরো জানার আগ্রহ থাকলে নীচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
http://www.youtube.com/watch?v=IDWAPd46Q7A&feature=player_embedded#!

দ্রোহী এর ছবি

এই অংশটা আফ্রিকার কোন দেশ বারাবর পড়েছে এবং আলাদা হয়ে যেতে কত বছর লাগতে পারে? সময়টা কি অনেক বেশী নাকি তুলনামূলক দ্রুত (২০০-৩০০ বছর) ঘটবে?

ভূতত্ত্ব ও অ্যাস্ট্রোনমিতে মিলিয়ন খুবই ক্ষুদ্র সংখ্যা। ২০০-৩০০ বছর সময়কাল এত বেশি আণুবীক্ষণিক যে তা খালি চোখে দেখা যায় না। ;)

দ্রোহী এর ছবি

১. টেকটোনিক প্লেটগুলোর সরণের গতি প্লেটের আকার, আকৃতি, প্লেটের উপর মোট প্রযুক্ত বল ইত্যাদি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। ফলে একেক প্লেটের গতি একেকরকম হয়ে থাকে।

সাধারণ হিসাবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট মোটামুটি ৮ সেমি/বছর গতিতে সরছে। আমাদের ভারতীয় প্লেট প্রায় ৬ সেমি/বছর গতিতে উত্তর পূর্ব দিকে সরছে।

সুনিশ্চিত গতিবেগ জানতে ক্যালটেকের জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির জিপিএস টাইম সিরিজ দেখতে পারেন। ম্যাপে দেখবেন হলুদ দাগ দিয়ে প্লেটগুলোর বাৎসরিক সরণের মান ও দিক দেখানো হয়েছে। হলুদ দাগের গায়ে ক্লিক করলে টাইম সিরিজ পাবেন। সেখান থেকে প্লেটগুলো প্রতিবছর কী পরিমাণ সরে যাচ্ছে তা টুকে নিতে পারবেন।

হিমালয়ের উচ্চতা প্রতি বছর প্রায় ~২ সেমি করে বাড়ছে। এই উচ্চতাবৃদ্ধির মূল কারণ ইউরেশীয় প্লেটের সাথে ভারতীয় প্লেটের অভিসারী সংঘর্ষ। এ সংঘর্ষের ফলে দুটো প্লেটের অংশবিশেষ ভাঁজ হওয়ার কারণে উচ্চতাবৃদ্ধি ঘটছে। হিমালয়ের উচ্চতাবৃদ্ধির হার নির্ভর করছে অভিসারী প্লেট দুটো হিমালয় পর্বতের শিলাস্তরকে কত দ্রুত ভাঁজ করছে তার উপর।

অক্ষাংশ–দ্রাঘিমাংশ কখনো পরিবর্তিত হয় না। অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশের হিসাবটা এক ধরনের গাণিতিক মডেলের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা। বর্তমানে আমরা সারা পৃথিবীর জন্য যে মডেলটা ব্যবহার করি তার নাম WGS 1984. এ ছাড়াও একেক অঞ্চলের জন্য বিভিন্ন ধরণের আঞ্চলিক গাণিতিক মডেল রয়েছে। যেমন উত্তর আমেরিকার জন্য NAD 1927। সুতরাং, আমরা বলতে পারি সময়ের সাথে অক্ষাংশ–দ্রাঘিমাংশের কোন পরিবর্তন হয় না। বরং আমাদের ম্যাপগুলো আউটডেটেড হয়ে যায়। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কোন ম্যাপ যখন তৈরি করা হয় তখন ম্যাপের গায়ে ব্যবহৃত গাণিতিক মডেলের নাম ও সাল লিখে রাখা হয়। ফলে পরবর্তীতে কেউ সে ম্যাপ নিয়ে নিখুঁতভাবে কাজ করতে চাইলে তাতে কন্টিনেন্টাল ড্রিফট কারেকশন যোগ করে নিতে পারে।

জিপিএস নেটওয়ার্কেও একইভাবে কন্টিনেন্টাল ড্রিফট কারেকশন যোগ করা হয়।

২.
আমি লেখাটিতে একটি বড় ভুল করেছি। প্রুফ রিড করার সময়ও ভুলটি চোখ এড়িয়ে গেছিল। আপনার এই প্রশ্ন থেকে ভুলটি চোখে পড়েছে। তবে ইতিমধ্যেই ঠিক করে দিয়েছি।

আমি লিখেছিলাম “টেকটোনিক প্লেটগুলো অনেকটা শপিং মলের সিঁড়ির মত একদিকে তৈরি হচ্ছে এবং অন্যদিকে ধ্বংস হচ্ছে”। প্রকৃতপক্ষে কথাটা হবে “মহাসাগরীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো শপিং মলের সিঁড়ির মত একদিকে তৈরি হয়ে অন্যদিকে ধ্বংস হয়।”

মহাদেশীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো তৈরি হয় অন্যভাবে। আগ্নেয় শিলা-ঘটিত বেজমেন্টের উপর আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে সৃষ্ট আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা ও রূপান্তরিত শিলা জমে মহাদেশীয় প্লেটগুলো তৈরি হয়। আগ্নেয়-শিলা ক্ষয় হয়ে অগভীর সমুদ্রে জমে তৈরি হয় পাললিক শিলা। সেই পাললিক শিলা আবার অভিসারী সীমান্তে ভাঁজ হয়ে পর্বতশ্রেণী গঠনের মধ্য দিয়ে উপরে উঠে আসে। আবার আগ্নেয় ও পাললিক শিলা ভূ–অভ্যন্তরে চাপে ও তাপে রাসায়নিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয়। মহাদেশীয় প্লেটের কিছু কিছু অংশ আছে যাদের বয়স পৃথিবীর বয়সের কাছাকাছি। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, এই অংশগুলো কখনো ধ্বংস হয়নি। এদের বলা হয় Precambrian Shield Area. যাযাবর ব্যাকপ্যাকারের প্রশ্নের জবাব হিসাবে দেওয়া ১৬ নাম্বার মন্তব্যে সংযুক্ত ম্যাপটি থেকে এই শিল্ডগুলোর অবস্থান দেখে নিতে পারেন।

যেহেতু মহাসাগরীয় প্লেটগুলো শপিং মলের সিঁড়ির মতো আচরণ করে তাই তারা নিয়মিত ভিত্তিতে তৈরি হয় আবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এ কারণে মহাদেশীয় ভূত্বকের সর্বোচ্চ বয়স যেখানে ~৪ বিলিয়ন বছর সেখানে মহাসাগরীয় ভূত্বকের সর্বোচ্চ বয়স ‍২০০ মিলিয়ন বছর।

সুতরাং, আমাদের ভূত্বকে বর্তমানে যা কিছু আছে তার মহাসাগরীয় অংশ পর্যায়ক্রমে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে তারপর আবার তৈরি হয়ে আবার ধ্বংস হবে। এভাবে এই প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। আর মহাদেশীয় অংশে যা কিছু আছে তার কিছু অংশ যেভাবে গত ৪ বিলিয়ন বছর ধরে রয়ে গেছে সেভাবেই থেকে যাবে।

৩.
এ প্রশ্নটা খুবই স্মার্ট একটা প্রশ্ন।

ভূতত্ত্বের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সূত্রটা খুব সহজ। সূত্রটা হচ্ছে “Present is the key to the past”। এই সূত্রের নাম Uniformitarianism।

জেমস হাটন নামের একটা স্কটিশ ব্যাটা এই সূত্র দিয়ে গেছে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী চার্লস লাইল এটাকে সবার কাছে পরিচিত করেছে।

সূত্রটা পড়লেই এর গুঢ় অর্থ সহজেই বোঝা যাচ্ছে। সুতরাং, এ সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে যে কারণগুলোর সম্মিলিত প্রভাবে প্লেটগুলো মুভ করছে অতীতেও প্লেটগুলো ঠিক একই কারণে মুভ করতো।

অর্থাৎ, ম্যান্টলের ঘূর্ণনের ফলে লিথোস্ফিয়ারে তলদেশে সৃষ্ট ঘর্ষণ, অপসারী প্লেট সীমানায় প্রসারণ কেন্দ্রে সৃষ্ট পর্বতশ্রেণী, অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের পার্শ্বীয় ঘনত্বের পার্থক্য, ম্যান্টল থেকে উঠে আসা তাপ, মাধ্যাকর্ষণ ইত্যাদির সম্মিলিত প্রভাবে প্যানজিয়া বিভিন্ন খণ্ডে ভাগ হয়ে দূরে সরে গেছে।

একটা কাঠের টুকরোকে বল প্রয়োগ করে ভাঙ্গলে সেটা র‍্যান্ডমভাবে ভাঙবে কিন্তু সেই র‍্যান্ডমনেস নিয়ন্ত্রিত হবে কাঠের দুর্বলতার ভিত্তিতে। কাঠের টুকরার যে অংশটা সবচাইতে দুর্বল সেখানে ভাঙ্গন সৃষ্টি হবে। প্যানজিয়ার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। প্যানজিয়ার দুর্বল অংশগুলো বরাবর ফাটল ধরে টুকরাগুলো তৈরি হয়েছে।

এবার আসি আপনার প্রথম প্রশ্নের সম্পূরক উত্তরে।

প্যানজিয়া ভাঙ্গন শুরু হয়েছিল প্রায় ২৫০ মিলিয়ন বছর আগে। বর্তমানে মহাদেশগুলো একে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। প্রশ্ন করা যেতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে ‌কী ঘটবে?

উত্তরে বলা যায় – মহাদেশগুলো আবার একত্রিত হয়ে প্যানজিয়ার মতো আরেকটি সুপার কন্টিনেন্ট তৈরি করবে।
এই প্রক্রিয়াটি একটি চক্র হিসাবে কাজ করে। এই চক্রটির নাম Wilson Cycle। প্যানজিয়া সৃষ্টি হওয়ার আগে পৃথিবীর মহাদেশগুলো বর্তমান পৃথিবীর মতো আলাদা আলাদা ছিল। তারও আগে প্রায়১.১ বিলিয়ন থেকে – ৭০০ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত যে সুপার কন্টিনেন্টটি ছিল তার নাম Rodinia। রোডিনিয়ার আগের সুপার কন্টিনেন্টটির নাম কলাম্বিয়া, তার আগেরটির নাম লরেনশিয়া, তার আগে ভালবারা।

সুতরাং, আমরা দেখতে পাচ্ছি সুপারকন্টিনেন্টের গঠন ও ভাঙ্গন চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে। অতএব আমরা ধরে নিতে পারি ভবিষ্যতে মহাদেশগুলো একত্রিত হয়ে আরেকটি সুপার কন্টিনেন্ট তৈরি করবে। তারপর সেটি আবার ভেঙ্গে যাবে। এভাবে প্রক্রিয়াটি চলতে থাকবে টেকটোনিক অ্যাকটিভিটি বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

এত চমৎকার করে ব্যাখ্যা করলেন যে কৃতজ্ঞতা না জানিয়ে পারছি না। উপরে মাহফুজ খানও উত্তর দিয়েছেন। আপনাদের দুজনের উত্তরগুলো এত সহজ এবং টু দ্যা পয়েন্ট ছিল যে পুরো বিষয়টা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে এসেছে। এরপর আমি প্রশ্ন করতে যাচ্ছিলাম,

বর্তমানে মহাদেশগুলো একে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। প্রশ্ন করা যেতে পারে তাহলে ভবিষ্যতে ‌কী ঘটবে?

কিন্তু সে উত্তরও আপনি দিয়ে ফেলেছেন! দ্রোহীদা, মাহফুজ খান বা এমন লেখকদের ছোঁয়ায় সচলায়তন আর সাধারণ কোন কমিউনিটি ব্লগ নেই সচলায়তন এখন নিজের জানাকে আরো বাড়িয়ে নেয়ার একটা প্লাটফর্মও। আমি এই সিরিজটার ভক্ত আগেই ছিলাম, এখন আরো গভীর ভাবে হলাম। পরের পর্বের অপেক্ষায় রয়েছে। তার আগে একটা সম্ভাব্য শেষ প্রশ্ন এই পর্বে রাখছি,

টেকটনিক এ্যাকটিভিটি কবে বন্ধ হবার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেটা বন্ধ হবার পেছনে ঠিক কী কারণ কাজ করবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন?

দ্রোহী এর ছবি

টেকটনিক এ্যাকটিভিটি কবে বন্ধ হবার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেটা বন্ধ হবার পেছনে ঠিক কী কারণ কাজ করবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন?

অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের উপর ভেসে থাকা লিথোস্ফিয়ারের টুকরোগুলো সরণের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি মূলত আসে ম্যান্টলের গলিত শিলাস্তরের ঘনত্ব ও তাপমাত্রার পাথর্ক্যের কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণন থেকে। ম্যান্টল যখন তাপ বিকিরণ করে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে তখন ম্যান্টলের ভেতর গলিত শিলার ঘূর্ণন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে ফলে পৃথিবীর টেকটোনিক অ্যাকটিভিটিও বন্ধ হয়ে যাবে।

অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের গড় তাপমাত্রা বড়জোর ~৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৃথিবীর কোরের তাপমাত্রা ~ ৫৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৃথিবীর বর্তমান বয়স ~৪.৫ বিলিয়ন বছর। পৃথিবীর প্রায় ৮০-৮৫% এখনো তরল অবস্থায় রয়ে গেছে। সুতরাং, জুড়িয়ে ঠাণ্ডা হতে পৃথিবীর আরো কমসে কম ৫০-১০০ বিলিয়ন বছর তো লাগবেই।

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

৫০-১০০ বিলিয়ন বছর? বাঁচা গেলো! হাতে কিছু সময় পেলাম তাহলে :)

৩য় পর্ব পোস্ট করেছেন দেখলাম। পড়তে যাচ্ছি.... রীতিমত ফ্যান হয়ে গিয়েছি এই সিরিজের।

 তাপস শর্মা (অফ লাইন)  এর ছবি

দুটো পর্বই মনযোগ সহকারে পড়া হয়ে গেছে আগেই। এবার একটা প্রশ্ন নিয়ে এলাম - পৃথিবীর কোর- এ এক্স জিটা সেক্টরে অর্থাৎ আভ্যন্তরীণ প্রকোস্টের সিল্ড এনাব্লকে কতটা পরিবর্তন হয় ভুমিকম্পের ফলে। আর সেটা যদি হয়েই থাকে তাহলে কিন্তু এক্সট্রা স্লট গুলি দিন কে দিন সরেই যাচ্ছে। ফলত পৃথিবী দিন কে দিন হাল্কা হয়ে যাচ্ছে সংযুক্তির দিক থেকে। তার মানে এভেবে চলতে থাকলে আর বেশি দিন নেই যখন ওজন স্তরের মতো কোরের প্লেট গুলিও ফাটতে শুরু করবে? তার মানে পৃথিবীর হাতে আর কত সময় আছে ? আর যদি তা নাইবা হয় কি হতে পারে।

দ্রোহী এর ছবি

আমি সলিড–আর্থ জিওফিজিক্সের লোক নই তাই “পৃথিবীর কোর- এ এক্স জিটা সেক্টরে অর্থাৎ আভ্যন্তরীণ প্রকোষ্ঠের সিল্ড এনাব্লকে” কথাটুকু দিয়ে কী বুঝাতে চাইলেন তা বুঝতে পারিনি। ভূমিকম্প সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি তা মূলত অনার্স–মাস্টার্স লেভেলের কোর্স ম্যাটেরিয়াল থেকে শেখা। তাই আপনি যা জানতে চাইছেন তা একটু সহজ করে বললে বুঝতে পারতাম।

“এক্সট্রা স্লটগুলি” বলতে কীসের কথা বোঝাচ্ছেন সেটাও বুঝতে পারলাম না।

পৃথিবী হালকা হওয়ার জন্য পৃথিবী থেকে একটা বড় আকারে টুকরো আলাদা করে নিতে হবে। সেটা বিশালাকৃতির [অন্তত চাঁদের কাছাকাছি সাইজের হওয়া উচিত] উল্কাপাত ছাড়া কোনভাবে হওয়া সম্ভব বলে মনে হয় না। সংযুক্তির দিক থেকে হালকা হওয়ার ব্যাপারটা বুঝলাম না। পৃথিবী একটা কারণেই ঝুলে আছে সেটা হচ্ছে মাধ্যাকর্ষণ বল। মাধ্যাকর্ষণ বলের মান পরিবর্তন না হলে পৃথিবীর হালকা ভারি হওয়ার প্রশ্ন আসে না। আর উল্কাপাতে পৃথিবীর অংশ বিশেষ আলাদা হয়ে না গেলে রাতারাতি মাধ্যাকর্ষণ বলের মান বদলাবে এমন ধারণা অমূলক।

পৃথিবীর প্রায় ৮৫% এখনো তরল অবস্থায় আছে। সুতরাং, তরল অবস্থাতেই পৃথিবী যদি এত পোক্ত থাকতে পারে তাহলে তাপ বিকিরণ করে ঠাণ্ডা হলে পৃথিবী সংযুক্তির দিক থেকে আরও পোক্ত হবার কথা।

ওজোন স্তরের মত কোরের প্লেটগুলি ফাটতে শুরু করবে দিয়ে কী বোঝালেন তাও বুঝতে পারলাম না। মেরুর কাছাকাছি ওজোন স্তরে ফুটো সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ হ্যালোজেন-ঘটিত যৌগ [CFC]। এর সাথে কোরের প্লেটের কী সম্পর্ক তা বুঝতে পারলাম না!

তার চেয়ে বড় কথা কোরে কোন প্লেট আছে বলে কখনো পড়িনি। প্লেট বলতে যদি টেকটোনিক প্লেটের কথা বুঝান তাহলে তা কেবলমাত্র ভূপৃষ্ঠেই আছে।

কোর সম্পর্কে মানুষ খুবই কম জানে। কোরের ভেতরের পার্ট [inner core] প্রচণ্ড তাপে ও চাপে কঠিন অবস্থায় আছে। ভূমিকম্প থেকে উদ্ভূত তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা কেউ কেউ কোরের ভেতরের পার্টকে [inner core] সমস্বত্ত্ব [homogeneous] বলছেন। এ কারণে অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা পুরো ইনার কোর একটা মাত্র আয়রন ক্রিস্টাল দিয়ে তৈরি।

ইদানীং, কিছু বিজ্ঞানী সাইজমিক তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে কোরের ভেতর স্তরের উপস্থিতির কথা বলছেন। এছাড়া ভূমিকম্প থেকে উদ্ভূত তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির সাথে ইনার কোরের ঘূর্ণন গতির সামান্য পার্থক্য রয়েছে। এ পার্থক্যের পরিমাণ প্রতিবছরে প্রায় ১ ডিগ্রি পরিমাণ। কোর পৃথিবীর তুলনায় ভিন্ন গতিতে ঘুরছে কিন্তু সে গতি পৃথিবীর ঘূর্ণন-গতির চাইতে বেশি নাকি কম তা এখনো সুসংহতভাবে প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি।

আপনি জানতে চেয়েছেন পৃথিবীর হাতে কত সময় আছে। ঠিক কোন দৃষ্টিকোণ থেকে জানতে চাইছেন? পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে পৃথিবী থেকে প্রাণ নিশ্চিহ্ন হতে আরও কত সময় লাগবে তা পরিবেশ বিজ্ঞানীরা ভাল বলতে পারবেন।

পৃথিবীর বর্তমান বয়স ~৪.৫ বিলিয়ন বছর। ভূতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীর হাতে আরও কমপক্ষে ৫০–১০০ বিলিয়ন বছর আছে।

 তাপস শর্মা (অফ লাইন)  এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ দ্রোহী দাদা এভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। আসলে আমিও ভূতত্ত্ব বিদ্যার লোক নই। আমার এক জিও বন্ধুর কাছ থেকে কিছু কিছু জানার চেষ্টা করি, আর সামান্য বইপত্তর। বলতে পারেন এই বিষয়ে আমার প্রচণ্ড কৌতূহল আছে।

আপনার কাছ থেকে জানার আইডিয়াটা আসে দ্যা কোর মুভিটা থেকে কিছু বিষয় জেনে। এখন তো দেখছি সমস্ত কিছুই ওখানে কল্পবিজ্ঞান।

আর হ্যাঁ। ওজোন স্তরের সাথে আমি কোরের তুলনা করতে চেয়েছিলাম। অর্থাৎ দুটো অংশেই ক্রমাগত পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের কথা।

দ্রোহী এর ছবি

ও আচ্ছা, দ্য কোর! এবার বুঝতে পেরেছি। :D

হলিউড মুভি থেকে বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞানার্জন বড় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। হলিউডি সিনেমা থেকে বিজ্ঞান শেখা আর রিকশাওয়ালার কাছ থেকে এরোপ্লেন চালাতে শেখা প্রায় একই ব্যাপার।

ভুল ভূতাত্ত্বিকজ্ঞান ব্যবহারের দিক থেকে 'দ্য কোর' ছবিটি সর্বকালের সেরা ছবিগুলোর লিস্টে আছে। এছাড়াও আর্মাগেডন, ২০১২, ভলক্যানো প্রভৃতি ছবি এই লিস্টে আছে। সেই তুলনায় ডিপ ইমপ্যাক্ট মোটামুটি সঠিক বিজ্ঞান ব্যবহার করেছে।

 তাপস শর্মা (অফ লাইন)  এর ছবি

হলিউড মুভি থেকে বিজ্ঞান বিষয়ক জ্ঞানার্জন বড় ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। হলিউডি সিনেমা থেকে বিজ্ঞান শেখা আর রিকশাওয়ালার কাছ থেকে এরোপ্লেন চালাতে শেখা প্রায় একই ব্যাপার।

:D
ডিপ ইমপ্যাক্ট দেখা হয়নি। দেখি আজই ডাউনলোডাইয়া ফেলতে পারি কি না।
----------------------------------------------------------------------
চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।