(১) "সম্ভাবনা"
ছেলেটি থাকত একটি সরকারি কোয়ার্টারের নিচতলার ফ্লাটে। মধ্যদুপুরে সে বারান্দার রেলিঙে কনুই এর উপর ভর দিয়ে কোমর বাঁকিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে দাড়িয়ে থাকত। চারতলার ফ্লাটের বারান্দা থেকে একটি কিশোরী ছেলেটির মাথা লক্ষ্য করে থুথু ফেলতো। কখনও থুথু মাথায় পড়ত কখনওবা লক্ষ্যভ্রষ্ট। ছেলেটি উপরের দিকে তাকিয়ে মেয়েটির প্রতি কি সব ইশারা করত। বেশ কিছুদিন এমনটাই দেখেছি। তারপর আব্বার বদলির কারনে আমরা অন্যত্র চলে যাওয়ায় আর কিছুই দেখা হয়নি।
(২) "চাতুরী"
কলেজে প্রথমবর্ষে পড়াকালীন আমার এক সহপাঠী প্রায়ই দোকান থেকে দুটো সিগারেট কিনত। একটি নিজে জালিয়ে টানা শুরু করতো। আরেকটি জালিয়ে আমার হাতে ধরিয়ে দিত। আমি তখন ঠিক সিগারেট খাওয়ায় অভ্যস্থ নই। তবুও তার পিড়াপিড়িতে খেতে শুরু করি।
আমি সিগারেট খাওয়ায় অভ্যস্থ হয়ে পড়ার পর প্যাকেট ধরেই কিনতাম। আমার সহপাঠীটি তখন সিগারেট কেনা ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু সিগারেট খাওয়া নয়।
(৩) "থ"
৭১ এর মার্চ মাসের শেষ ভাগে ঢাকা থেকে চিটাগাং চলে এসেছি। আমার শরীরের গড়নটি তখন ছিল হালকা পাতলা লম্বাটে ধরনের। মাথায় লম্বা চুল। গায়ের রংটি মোটামুটি ফর্সা। মোচটা ঠোটের দুধারে নিচের দিকে একটু নামানো।
তো একদিন বাসার পাশের সেলুনে গিয়েছি চুল কাটাতে। চুল কাটতে কাটতে সেলুনের ছেলেটি বলল, " আপনিতো ভালই বাংলা বলতে পারেন।"
(৪) "উচিত জবাব"
সত্তর দশকের মধ্যভাগে বাসায় ফিরতে আমার প্রায়ই মধ্যরাত পেরিয়ে যেত। তখনকার দিনে ঢাকা শহরে সিটি সার্ভিস বাস ছিলনা। ছিলনা ট্যাক্সিক্যাব বা সি,এন,জি,ও। মধ্যবিত্তের একমাত্র বাহন ছিল রিকসা। অত রাতে রিকসা পেতে প্রায়শই বেশ বেগ পেতে হত।
একদিনের ঘটনা, কোন রিক্সাওয়ালাই আমার গন্তব্যে যেতে রাজি হচ্ছিলনা। সেদিন মনটাও ছিল বেশ বিক্ষিপ্ত। তো এক রিক্সাওয়ালাকে বললাম, " ওই খালি যাইবা নাকি?" সে বলল, " কই যাইবেন স্যার?" উত্তর দিতে দিতে আমি তখন বেশ বিরক্ত। উষ্মার সাথে বললাম, " জাহান্নামে যামু।" উত্তরে সে বলল, " যাইবার পারি স্যার, তয় গেট পর্যন্ত্য পৌঁছায়া দিমু ভিত্রে যামুনা।"
মন্তব্য
ভালো লেগেছে, বিশেষ করে ২ আর ৩ নম্বরটা। তবে লেখকের নাম থাকলে আরো ভাল লাগত।
ক্যাটাগরিতে নাম দিয়েছি বলে শেষে আর নাম লেখার প্রয়োজন মনে করিনি।
ধন্যবাদ। ভাললাগা জানাবার জন্য।
প্রৌঢ়ভাবনা
হেহ হেহ, বুঝতে পেরেছি, অনুমান করছিলাম আপনি আমাদেরই প্রৌঢ়ভাবনা, কিন্তু অনুমানতো ভুলও হতে পারত
ক্যাটাগরি আর নাম উল্লেখ করার মধ্যে পার্থক্য আছে। সচলায়তনে লেখার সাথে নাম প্রকাশের উপর জোর দেওয়া হয় - এ তো জানা কথা। "প্রৌঢ়ভাবনা" বলতে তো অনেক পাঠক (বিশেষ করে অতিথি) প্রৌঢ়ত্বের চিন্তা বা বার্ধক্যকালীন বিষয়ও বুঝতে পারেন।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
দুঃখিত। আপনি সঠিক ভাবেই বিষয়টি তুলে এনেছেন। এভাবে আসলে ভেবে দেখিনি।
ধন্যবাদ আপনাকে। ভবিষ্যতে সাবধান হব।
প্রৌঢ়ভাবনা
বাহ। সংক্ষিপ্ত অথচ ছোট্ট ছোট্ট কথা এবং ঘটনা গুলি মনে রাখার মতো। পাঠক থেকে লেখকে উত্তরণ ভাল লাগল
প্রৌঢ়ভাবনা ( প্রৌঢ়ভাবনাধিকারিক) মহাশয়। আরও লেখা উঠে আসুক জলদি। আপনার অভিজ্ঞতার ভাগ আমরাও শেয়ার করে নিতে চাই।
----------------------------------------------------------------------
চিত্ত যেথা ভয় শূন্য উচ্চ যেথা শির
জীবনের একটা লম্বা কাটিয়ে এসেছি। জীবনে কতযে বিচ্ছিন্ন ঘটনা আছে তারতো ইয়ত্তা নেই। সবকি আর সবার ভাল লাগবে?
বয়স্ক লোকেরা বেশী কথা বলে, বলার মত কিছু না থাকলেও। সে রকমই একটা বিষয় এই লেখাটি। আপনার ভাল লেগেছে জেনে পুলকিত বোধ করছি। আরও লেখার অনুপ্রেরনা পাচ্ছি।
প্রৌঢ়ভাবনা
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কিংবা সত্তর দশকের শেষদিকে আপনার বয়সটা অনুমান করলে আজ আপনি অনেকখানি প্রবীণ। তবে কলম আপনি হাতে নিয়ছেন নতুন, লেখা পড়ে এটা বিশ্বাস করা কঠিন!
এমন একটা ধারণা অনেকের মতো আমারও ছিলো। কিন্তু আজ বলতে গেলে দিনভর সচলায়তনে আপনার লেখাগুলো পড়তে গিয়ে মনে হয়েছে এই ধারণাটা অনেকখানি ওভার-জেনরালাইযেশন। পুরাণকথা ইত্যাদি পড়ে ভাবতে বাধ্য হচ্ছি আপনি অল্পই কথা বলেন – প্রয়োজন-মাফিক। আপনার পোস্টগুলি আমার পছন্দ হয়েছে বলার ধরণ আর স্বল্প-আয়তনের জন্যেই।
এছাড়াও বয়স আপনাকে রগচটাও বানিইয়েও দেয়নি (আবারো ওভার-জেনরালাইযেশন!), কি পোস্টে, কি মন্তব্যে আপনি অনেক বিনয়ী।
এই পোস্টের ২ আর ৩ ক্রমিকের গল্পদু’টি (গল্পই তো, নয়তো কি?) একজন পাঠক হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে সফল রচনা।
১ নং ক্রমিকের শীর্ষক, বিষয়বস্তু আর বর্ণনার উদ্দেশ্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কটা সম্ভবতঃ আমি ধরতে পারিনি। আর সর্বশেষটি অনেকটা চুটকি’র মতো মনে হয়েছে। অবশ্য গল্প হিসেবে চুটকি’র আদৌ কোনো অবস্থান আছে কিনা, থাকলে সে’টা কোথায় - আমার স্বল্প সাহিত্যজ্ঞানে তা নির্ণয় করাও বোধহয় সম্ভব নয়।
চালিয়ে যান, আপনার জন্যে শুভ কামনা।
আপনার মন্তব্যে নতুন করে নিজেকে বোঝার চেষ্টা করছি।
আপনার প্রতি রইল শুভকামনা।
দুই নম্বরটা ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ।
প্রৌঢ়ভাবনা
কী সুন্দর লেখেন আপনি !
খু-উ-ব ভালো লাগল একেকটা ঘটনার এরকম 'কমপ্যাক্ট' বর্ননা
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
আপনি একজন অত্যন্ত ইতিবাচক মানসিকতার মানুষ। উচ্ছলও বটে। শত বিখাউজ ( তাসনীম এর লেখা থেকে ) এর মাঝেও এটি যেন বজায় থাকে।
হুজুগের মাঝে তাড়াহুড়ো করে লেখা। পড়ে মনে হয়েছে, হয়ত আরেকটু গুছিয়ে লেখা যেত।
আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ, সবসময় অনুপ্রেরণা যোগাবার জন্য।
প্রৌঢ়ভাবনা
আপনি আমার প্রথম পোস্টের প্রথম মন্তব্যকারী; এজন্য আপনার প্রতি আমার একটা স্পেশাল 'নেপোটিজম' হুদাই সক্রিয়ভাবে কাজ করবে সবসময়
আরও লেখা দিন, প্লীজ। আপনি সুন্দর লেখেন, এটা এখন প্রকাশ্য দিবালোকে ফাঁস হয়ে গেছে
ছোট্ট একটা উপহার
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
২ আর ৪ ভালো লাগলো।
বয়সের ভারে অনেক স্মৃতি ঝাপসা হয়ে এলেও (২) আর (৪) আমার স্মৃতিতে উজ্জল। বুঝতেই পারছেন, কেমন বোকা বনেছিলাম।
ধন্যবাদ।
প্রৌঢ়ভাবনা
ধন্যবাদ। ইমো দেওয়া এখনও শিখিনিতো।
প্রৌঢ়ভাবনা
দুই নাম্বারটা বেশি ভালো লাগল
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
ধন্যবাদ। আর অন্যগুলো ?
প্রৌঢ়ভাবনা
অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়লাম, কারন প্রতিটা শব্দ অনেক অর্থ বহন করেছে।
২ আর ৪ বেশি ভাল লেগেছে।
ধন্যবাদ, মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য। ভাললাগা জানাবার জন্যও।
প্রৌঢ়ভাবনা
চলুক। ভাল্লাগ্তেসে
ধন্যবাদ। চালাবার চেষ্টা থাকবে।
প্রৌঢ়ভাবনা
ভালো লাগলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনাদের ভাল লাগাইতো আমার প্রেরণা।
ধন্যবাদ।
প্রৌঢ়ভাবনা
। শেষের টা মোক্ষম, একবারে পুরান ঢাকার ঘোড়াওলাদের গল্প মনে করিয়ে দিল!
facebook
আপনিতো মিয়া মিজাইল নিয়ে বসে আছেন। আমার যা হাতিয়ার আছে তাই দিয়েই টিকে থাকার চেষ্টা আরকি !
ধন্যবাদ, ভাললাগা জানাবার জন্য।
প্রৌঢ়ভাবনা
২ আর ৩ বেশী ভালো লাগলো।জীবনের বাঁকে বাঁকে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আরো ভাগ করুন না
আমাদের সাথে!
বলছেন!
ধন্যবাদ। বেশ তাহলে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
প্রৌঢ়ভাবনা
ভাল লেগেছে, এর বেশি আর কিই বা বলার যোগ্যতা আছে আমার?
রাজকন্যারাও যে এত অযোগ্য আর দরীদ্র হয়, জানা ছিলনা।
ধন্যবাদ।
প্রৌঢ়ভাবনা
ভালো লাগলো
উদাস ভাই এইটা কিন্তু অবিচার।
কোনটা অবিচার?? কি করলাম??
এই যে আমাদের খিচুড়ি মিচুড়ি কিচ্ছু না দিয়া চুপচাপ নিঃশব্দে কমেন্ট করে কাইটা পড়তেছিলেন?
উপন্যাস লিখতেছি তো। এট্টু সময় দেন, দিবো অচিরেই।
(আপনে পুরা সচল পুলিশ। আপনের ঠ্যালা খেয়ে সবাই ভয়ে লেখা দিয়ে দেয় ... )
হেহ হেহ উদাস ভাই কিযে কন, আমি কি আর অত তালেবর হইছি ? তারপরো আপনার স্বীকৃতি সগৌরবে মাথা পেতে নিলাম। এইবার ঘটনা তাইলে খুইল্লা কই। সচল খালি পড়ি বেশ কিছু দিন, মাঝখানে অবশ্যি কিছু বাদ পড়ছিল, তো আবার যখন ফিরত আসলাম ভাবলাম আমিও লেইখ্যা সব আন্ধার করুম। কিন্তু দেখলাম লেখালেখি খুউউব কঠিন। তো বুঝালাম ওইটা আমারে দিয়া হইত না। তাই খালি পড়ি আর ভয়ে ভয়ে মন্তব্য করি। এতে সুবিধা হইল হাচল বা সচল হওয়ার লোভ থেকে বেকুবের মত আওফাও পুস্টানোর থিকা নিজেরে বিরত রাখতে পারি। আরো দেখলাম মডুরা মডারেশনে খুব ব্যাস্ত। তাই ভাবলাম নিজ দায়িত্বে সচলের নিয়মিত ও সুলেখকদের একটু উতসাহ টুতসাহ দিয়ে বেড়াই। তাছাড়া আপনারাও যে অনেক ব্যাস্ত থাকেন তা আর না জানে কোন বেকুব, তাই মাঝে মাঝে লেখার কথা টথা মনে করাইয়া দেই যদি আপনারা ভুইল্লা যান সেই ভয়ে। আসলে আপনাদের লেখা এত ভাল লাগে যে আপনা আপনি ঠেলা আইসা যায় তার কিক্করুম কন? তয় বিশ্বাস করেন আমি কিন্তু অতি বিনীত ভাবে হালকা মত ঠেলি।
পিছনে স্টেনগান ধইরা বলেন, আমি খুবই বিনীত ...
আচ্ছা যান, আপনের ঠ্যালা খেয়ে আজ কালকের মধ্যেই লেখা ছাড়বো।
এই আনন্দ রাখার যায়গা পাইতাছি না, বিশ্বাস করেন, কথা সইত্য। এই লন (গুড়) । আরামে মিষ্টি মুখে নিয়া লেখা শেষ করেন ভাই।
এইযে অপেক্ষায় বসলাম; তবে যত সময় লাগে নেন....
_____________________
Give Her Freedom!
ধন্যবাদ।
প্রৌঢ়ভাবনা
বেশ লাগলো! ২ নম্বরটার জন্য ভুটিয়ে দিলাম।
আর ইমো দিতে কমেন্ট বক্সের উপরে ডান দিক থেকে ৬ নম্বর আইকনে ক্লিক করুন। কোন আইকন না পেলে কমেন্টে সরাসরি ":)" ":(" ইত্যাদি লিখেও ইমো দিতে পারেন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ
ধন্যবাদ, সবকিছুর জন্যেই।
ইমোর বিষয়টি আপনার উপর দিয়েই টেরাই করি কেমন !
প্রৌঢ়ভাবনা
খুবই সাবলীল উপস্থাপনা। ভাল লাগল। কিন্তু ভাল লাগাটা কতটুকু বা মনের ঠিক কতটা গভীরে আঁচড় দিয়ে গেল বুঝে উঠতে পারলাম না। চমতকার লেখা।
ধন্যবাদ।
প্রৌঢ়ভাবনা
খুব ছোট্ট করে লিখা কিন্তু অর্থবহ, ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ আপনাকে এরকম অর্থবহ মন্তব্যের জন্য।
প্রৌঢ়ভাবনা
উত্তরণ স্পষ্টতঃ।
_____________________
Give Her Freedom!
ধন্যবাদ।
প্রৌঢ়ভাবনা
নতুন মন্তব্য করুন