সচল-পরীক্ষা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: সোম, ১৭/১০/২০১১ - ৫:৪৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পরীক্ষার হল পৃথিবীর একটি ভীতিকর স্থান। এ স্থানটি এড়িয়ে যেতে পারলে মনুষ্য প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত ছাত্র-ছাত্রী নামক উপ-প্রজাতিভুক্ত প্রাণীগুলো বেজায় খুশি হতো এটা অনুমান করার জন্য রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। অমুক বিষয়টি বোঝার জন্য রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না- এই প্রবচনটি কে প্রথম লিখেছিলেন? সে যাগগে। আচ্ছা, ব্লগাঞ্চলের জন্য কিছু প্রবাদ-প্রবচন দাঁড় করালে কেমন হয়? যেমন, কারো সাধারণ কোনো লেখা পড়ে যদি পাঠকেরা উচ্ছ্বসিত প্রশংসার সহিত 'ফাটায়ে ফেলছেন ভাই', 'পাশবিক', 'আপনের জবাব নাই' জাতীয় কমেন্ট করতে থাকে তখন তাদেরকে নিবৃত্ত করার জন্য বলা যেতে পারে- বৎস, এই পোস্ট লেখার জন্য হিমু হতে হয় না, যে কেওই লিখতে পারে। তাছাড়া সচলে মন্তব্য করার সুবিধার্থে আরো কিছু ইমো বাস্তবের সাথে সঙ্গতি রেখে সংযুক্তিকরণ অতীব জরুরী হয়ে উঠেছে। সচলের জনপ্রিয় ও বিশেষায়িত ব্লগারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন-স্বরূপ এই ইমোর প্রচলনের দাবি শুধু আমারই নয়, বরং সকল মন্তব্য-কারীর। যেমন, ফাটাফাটি গল্পের জন্য হিমু-ইমো, জোশ ভ্রমণকাহিনীর জন্য তারেক অণু ইত্যাদি। উক্ত ইমো প্রচলনের ফলে সকল সচল, হাচল ও অতিথি লেখকের বড়োই সুবিধা হবে তা বলাই বাহুল্য। ব্যস্ত ব্লগারগণ পোস্টে চোখ বুলিয়ে কিংবা না বুলিয়ে এধরনের ইমোসম্ভার ব্যবহার করবেন আর কোনো কিছু টাইপ না করেই মানেমানে কেটে পড়বেন। ব্যস, এক ঢিলে তিন পাখি। লেখক মন্তব্য পেয়ে খুশি, মন্তব্য-কারী অল্প কষ্টে পার পাওয়ার খুশি আর সচল কর্তৃপক্ষ মন্তব্যের ঠেলায় সার্ভার থেকে ধুঁয়া বের হতে দেখে খুশি। তবে এ কাজ তো বেশ আগেই শুরু হয়েছে। সম্প্রতি চরম উদাসের এক ভ্রমণকাহিনীতে পাঠকেরা 'পাঁচ তারেক অণু' দিয়ে চলে গেছেন। ভ্রমণের কথা যেহেতু এসেই গেল নিজের কথা বলেই ফেলি। ভ্রমণ তো আমিও কম করিনি হে। প্রতিদিন ঘন্টাখানেক ভ্রমণ করেই তো ভার্সিটিতে পৌঁছুই। কিন্তু সেসব প্যাঁচাল আমার অখাদ্য গদ্যে সচলে পেশ করলে বোধ হয় আমাকে আইপি সহ ব্যান করা হবে। ভেবেছিলাম সেন্ট-মার্টিন ভ্রমণ নিয়ে রসে ভরপুর ভ্রমণকাহিনী লিখে সচলে ছেড়ে দেব আর রসের গন্ধে সচলের সার্ভারে পিঁপড়ের হামলা হবে। কিন্তু সেই ভাবনা শুধু সেরেব্রাল কর্টেক্সেই বৈদ্যুতিক তরঙ্গ হিসেবেই ভ্রমণ করেছে, বাস্তবে আর নেমে আসেনি। তারেক অণুর ভ্রমণ-পোস্টগুলো এমন এক স্ট্যান্ডার্ড সেট করে দিয়েছে যে নবীন লেখকেরা ভ্রমণকাহিনী লিখতে বসলেই পোস্টে 'মাইনাস দুই তারেক অণু' পাবার আশংকায় কেঁপে কেঁপে ওঠে।

কোথা থেকে কোথায় চলে আসলাম! পরীক্ষার হল দিয়ে শুরু করেছি আর চলে আসলাম তারেক অণুতে! সে যাগগে। যা বলছিলাম, পরীক্ষার হল হলো এমন একটি জায়গা যেখানে 'কেহ নাহি যেতে চায়, তবু যেতে হয়'। কেন যেতে হয়? ছোটবেলায় সবাই না বুঝেই যায়, আর বড়োবেলায় বুঝেশুনেই যায়। পরীক্ষার হল নিয়ে যতো মন্দ কথাই বলিনা কেন, এটা কিন্তু ঠিক যে পরীক্ষার হলই পৃথিবীর সবচেয়ে সাশ্রয়ী ফিজিক্স ল্যাবরেটরি। কীভাবে? বলছি বলছি। তার আগে অবশ্য নিজেদের মধ্যে খানিকটা বিভাজন জরুরী। প্রথমে মেধাবী, ফার্স্ট বয় (এবং গার্ল) সচলদের বলছি। ভেবে দেখুন ত, এমন ঘটনা তো অনেকবারই ঘটেছে যে আপনি প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর ভালোমতোই জানেন কিন্তু ঘড়ির কাঁটা তো আর সে কথা জানেনা। সে তখন ডিপজলের মতো বিটলে হাসি দিয়ে শেয়ারবাজারের সূচকের মতো লাগাম-হীনভাবে ছুটতে থাকে। যে পরীক্ষায় সময়ের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সে পরীক্ষাতেই দেখা যাবে অর্ধেক প্রশ্নের উত্তর দেবার পর পরীক্ষক গম্ভীর মুখে ঘোষণা করবেন- আর মাত্র ১৫ মিনিট বাকী! কিন্তু এখানে ফিজিক্স কই? আছে আছে। আরে, এটা তো আইনস্টাইনের সেই বিখ্যাত আপেক্ষিকতার সূত্রের ব্যবহারিক প্রয়োগ। বিলকুল ফ্রি! আমাদের শরীরকে যদি একটা সিস্টেম হিসেবে ধরি তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। যখন খুব মনোযোগ সহকারে লিখতে থাকি তখন এই সিস্টেমের গতি দ্রুত হয় (তাড়াতাড়ি লিখতে হয় কিনা)। সময়ের গতি শ্লথ হয়ে আসে কিন্তু পারিপার্শ্বিক তো আর পরীক্ষা দিতে বসেনি। তাই স্বাভাবিক গতিতেই সময় বয়ে যায়। আর সেটাই করে সর্বনাশ। তবে এর উল্টো প্রয়োগও আছে যা আমার মতো লেখাপড়া কম জানা প্রকৃত মেধাবীরা ফেস করে। কিছুই লিখতে না পেরে হতাশ হয়ে বসে তাহলেই আপেক্ষিকতার উলটো তত্ত্ব মনে পড়ে। সময় যেন কাটেনা, বড়ো একা একা লাগে!

অবশ্য প্রকৃত মেধাবীরা এসব পরীক্ষা-টরীক্ষা নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাই তাদের মাথা থাকে ঘামাচি-মুক্ত। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল কি পরীক্ষা দিয়ে কবি হয়েছে? আইনস্টাইন কি কখনো ফাটিয়ে পরীক্ষা দিতে পেরেছেন? গণিতবিদদের গণিতবিদ রামানুজনের কাহিনী আমাদের কী শেখায়? আর তাছাড়া বর্তমান যুগ হলো সচেতনতার যুগ। পরিবেশের প্রতি যদি আমরা সচেতন না হই তাহলে আক্ষরিক অর্থেই ডুবে মরতে হবে। এক-একটি পরীক্ষার খাতা তৈরি করতে কতো গাছ কাটতে হয়, কতো এনার্জি নষ্ট হয়- সে খবর কি আমরা রাখি? তাই গাছ বাঁচান, পরিবেশ বাঁচান, পরীক্ষা বর্জন করুন।

অনেক প্যাঁচাল হলো, এবার শেষ করি। সচলায়তনও একটি পরীক্ষার হল কিন্তু। অতিথি লেখকেরা এখানে মরিয়া পরীক্ষার্থী। মডারেটররা তীক্ষ্ণ পরীক্ষক। পাঠকেরা হল-গার্ড। ফাঁকি দেবার কোনো উপায় নেই। তবে লেখকদের জন্য এ পরীক্ষা আনন্দময়, সত্যিকারের পরীক্ষার মতো বিভীষিকাময় নয়। হতাশ হবার কোনো সুযোগ নেই। লেগে থাকতে হবে। পরীক্ষার স্বাদ তিতকুটে হলেও এর ফল রসালো। হয়ত কোনো এক ভোরে ঘুম ভেঙ্গে উঠেই দেখবেন আপনার কাছে পৌঁছে গেছে সচলত্বের চিঠি!

নিটোল

সচলে আগের লেখাঃ

কেন চোখ বন্ধ করে ভাবেন?
বই বিষয়ক আবজাব
খাল-বিল-নদী-পুকুর শ্যাষ, এবার সমুদ্র খাবো…
কীটপতঙ্গ-কথা (১)
কীটপতঙ্গ-কথা (২)


মন্তব্য

ফাহিম হাসান এর ছবি

ব্যস্ এই? লেখা কই?

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এটা মনে হয় পরীক্ষা পাসের জন্যে তড়িঘড়ি করে লেখা খাইছে

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নিটোল. এর ছবি

নাই মন খারাপ

সাফি এর ছবি

এই লেখায় ৫ গ্যালন তেল দিলাম

কৌস্তুভ এর ছবি

তার চেয়ে তেলের ইমো হিসাবে সৌদি আরব (বা সাম্প্রতিক ঘটনার হিসাবে অন্য কোনো ওপেক দেশ) প্রচলন করে লেখায় পাঁচ সৌদি আরব দিতে পারেন খাইছে

নিটোল. এর ছবি

দেঁতো হাসি

guesr_writer rajkonya এর ছবি

হুম, অতিথি লেখকের এখানে পরীক্ষার্থী। আর মডুরা পরীক্ষক।

নিটোল. এর ছবি

হুম, ঠিক তাই।

চরম উদাস এর ছবি

চিন্তিত

নিটোল. এর ছবি

ভাই, এতো চিন্তার কি আছে?

নীড় সন্ধানী এর ছবি

একদম ঠিক হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আদিরসে পাঁচ রাত‍ঃস্মরণীয় দিয়েন।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

নিটোল. এর ছবি

ঠিকাছে। তবে মুখফোঁড়'দাও বোধ হয় এই দাবি করে বসতে পারেন। যেহেতু উনার সব রসাত্মক গল্পই সেই আদিযুগের,আদমের স্বর্গবাসকালীন। হাসি

guest_writer এর ছবি

" ছোটবেলায় সবাই না বুঝেই যায়, আর বড়বেলায় বুঝেশুনেই যায়।"

সচলেওতো অতিথিদের মধ্যে ছোটবেলা আর বড়বেলার মত শ্রেণীবিন্যাস আছে।

এই যেমন আমি, এই বয়সেও ছোটবেলার মত না বুঝেই যাওয়া শুরু করেছি।

"হয়তো কোন এক ভোরে ঘুম ভেঙ্গে উঠেই দেখবেন আপনার কাছে পৌঁছে গেছে সচলত্বের চিঠি !"

ভাবছি ওপারের একটা ইমেইল একাউন্ট খুলে সচলে দিয়ে যাব। যদি কখনও.....।

বিখাউজমুক্ত থাকুন। সুস্থ থাকুন।

প্রৌঢ়ভাবনা

নিটোল. এর ছবি

হো হো হো

ধন্যবাদ।

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

হা হা। আসলেই ক'দিন আগেই সচলের একটা পরীক্ষায় পাস করসি। এরপর থেকেই সব বন্ধ। মানে পরীক্ষার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

নিটোল. এর ছবি

পাস করছেন সে তো খুশির খবর। জলদি একখান ফাটাফাটি লেখা ছেড়ে হাচলপ্রাপ্তি উদযাপন করেন।

 তাপস শর্মা (অফ লাইন)  এর ছবি

ওঁয়া ওঁয়া

তারেক অণু এর ছবি

নতুন ইমোর দাবীর সাথে সহমত ( একটু বিটকেল ইমো হলে ভাল হয়) দেঁতো হাসি
লেখে ফেলেন আপনের ভ্রমণ কাহিনী, আরে লেখেন না একবার !

নিটোল. এর ছবি

আপনে আশির্বাদ দেন, তাহলেই লেখা হয়ে যাবে। হাসি

মৌনকুহর এর ছবি

রসালো দাবি! হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
ফেসবুক -.-.-.-.-.- ব্যক্তিগত ব্লগ

নিটোল. এর ছবি

দেঁতো হাসি

বন্দনা এর ছবি

লেখা খুব মজারু হয়েছে। হাততালি

নিটোল. এর ছবি

ধন্যবাদ।

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

সময় লাগতে পারে নাও পারে, তবে পাশে থাকলে হবে- হবেই একদিন............. হাসি


_____________________
Give Her Freedom!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।