সকালে জগিং করতে বের হই আজ রোজকার মত। হাতের ব্যান্ডে আইফোন। পডকাস্ট শুনতে শুনতে এক ঘন্টা, দৌড়াই বা জোরে হাঁটি। সাথে একটা নোকিয়ার ফোন থাকে যেটা ওয়াই-ফাই হটস্পট হয়ে আমার আইপড টাচকে ইন্টারনেট কানেকশন দেয়। সবকিছুই ঠিক ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে আইপড বন্ধ হয়ে গেল। আইপড বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটু আগে যে পডকাস্টটিতে আগের রাতে ডাউনলোড হওয়া সংবাদ এপিসোড শুনছিলাম তাহল, স্টিভ জবস নেই। আই-গোত্রীয় হার্ডওয়্যার এবং সাথে সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারের জনক তিনি, এর আগে ম্যাকিন্টস বিপ্লব ইত্যাদির নির্মাতা তিনি। আইপডটা বেশ কয়বার অন করার চেষ্টা চালালাম। একি! আইপডটা ভিজে উঠছে কেন! রুমাল দিয়ে মুছে নিচ্ছি, তাও বার বার ভিজে যাচ্ছে। আর অনতো হচ্ছেই না।
আইপড, আইফোন, আইপ্যাডের সেদিন ছিল শোক দিবস। তাদের জনক স্টিভ জবস দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা আজ কোন কাজ করবে না। প্রতিটি ডিভাইসই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হওয়ায় তারা একত্রে এই সিদ্ধান্তটি নিতে পেরেছে।
আমার আইপড বন্ধ, অনেকেরই আইফোন ও আইপডও বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর শুনেছি। ভাগ্যিষ আমি আইফোন ব্যবহার করি না, নয়ত মাঝ রাস্তায় আমি ফোন বিহীন হয়ে পড়তাম। যাই হোক, আমার নোকিয়া ফোনটা বের করে আমার প্রিয় বন্ধুকে কল দেই ভোর ৬টায় “স্টিভ জবস মারা গেছে, শুনেছো?”
এমনটা হতে পারতো। কিন্তু হয়নি। মানুষ যন্ত্র বানিয়েছে – তাকে বোধ দেয়নি।
তাবৎ দুনিয়ার মানুষ ভারাক্রান্ত। কিন্তু জবসের একটি উদ্ভাবনও নয়। মানুষের আবেগ আছে, আছে দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ, সুখ। যন্ত্রের তা নেই। আই-গোত্রীয় হার্ডওয়্যারের কাছে জবসের মৃত্যু নিছকই অনির্দিষ্টিত কিছু ইলেক্ট্রনের ছোটাছুটি। এমনকি হতে পারে না যে কিছু ইলেক্ট্রন থাকবে যেগুলো অনেক ভারী, গম্ভীর, কষ্টের সংবাদ এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে পৌঁছে দেবে? হাল্কা, হাশিখুশি কিছু ইলেক্ট্রন থাকবে, যেগুলি দুনিয়াময় সুখের সংবাদ পৌঁছে দেবে? আমরা হাশিখুশি ইলেক্ট্রনের সাবস্ক্রিপশন নিবো, রাশভারী ইলেক্ট্রনের না। চাইলেই কি পারা যাবে মন খারাপ করা সংবাদ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে?
মানুষ একা হচ্ছে দিন দিন। সঙ্গী হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছে বোধহীন এই যন্ত্রগুলোকে। যদি সৃষ্টিকর্তা আমাদের বোধ না দিতেন তাহলে কেমন হত? আমরা কি পারতাম এক মিনিটের মধ্যে জবসকে ভুলে যেতে? স্টিভ জবস, মানুষের জীবন আরও সহজ, আনন্দময় ও আরামদায়ক করার জন্য চিরকাল কাজ করে গেছেন। মানুষ খুব একা। খুব একাকীভাবে মানুষ পরকালে চলে যায়। তিনিও একাকী চলে গেছেন। তারপর আরও বেশি নিঃসঙ্গতা। তার যন্ত্ররা একদিনের জন্যও শোক করেনি।
হে ভবিষ্যতের স্টিভ জবস, তুমি যেই হও, মানুষের নিঃসঙ্গতা দূর করার ব্যবস্থা করো। মানবিক যন্ত্রের টিউরিং টেস্টে (কাল্পনিক) যাওয়ার আগে নিচের অনুশীলনগুলো করতে পারো। প্রতি স্টিভ জবস ডেতে (অক্টোবর ১৬) এই টেস্ট দেয়া যায়। উত্তীর্ণরা প্রযুক্তিতে নোবেলের মনোনয়ন পায়।
ব্যবহারিক কল্পবিজ্ঞান-১
ব্যবহারিক কল্পবিজ্ঞান-২: ঠিক এই মূহুর্তে বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মহাকাশীয় যুক্তি কি হতে পারে?
তানজিম সাকীব
মন্তব্য
বলবেন নিশ্চয়ই। অপেক্ষায় থাকলাম।
ডাকঘর | ছবিঘর
মানুষ ভারাক্রান্ত পৃথিবীতে মানুষের নিঃসঙ্গতা কাটাতে মানবীয় গুণাবলীর যন্ত্র কেন অবশ্যম্ভাবী মনে হচ্ছে?
নতুন মন্তব্য করুন