একজন ডাক্তার ও কিছু কথা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ১৮/১০/২০১১ - ২:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পূজার বন্ধে বাসায় বসে টিভির রিমোর্টের উপর অত্যাচার করছিলাম।হঠাৎ একটা খবরে চোখ আটকে গেল।সিলেট মেডিকেলে সেবার নামে ডাক্তারদের অবহেলা এবং দালালদের দৌরাত্ন।পুরো রিপোর্টটা দেখলাম।মনটাই খারাপ হয়ে গেল।সরকারি মেডিকেলে চিকিৎসা সেবা পুরোপুরি নিশ্চিত করা আসলেই একটু কঠিন।বেশিরভাগ সময়ই বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা দিনের বেলায় রাউন্ড দেন।রাতের বেলা তাদের খুজে পাওয়া যায় না।তখন পুরো দায়িত্ব পড়ে ইন্টার্নি,আই এম ও আর রেজিষ্টারের উপর।সদ্য পাশ করা ইন্টার্নি আর আই এম ও কতটুকুই বা স্বাস্থ সেবা নিশ্চিত করতে পারে।

একটা ব্যক্তিগত আভিজ্ঞতার কথা বলি।আমরা তখন ৩য় বর্ষে।নতুন নয়ুন ওয়ার্ডে যাই।একদিন রাতে ওয়ার্ডে গিয়েছি।স্যার তখনো আসেননি।এক বেড থেকে আর এক বেডে ঘোরাঘুরি করছি।এমন সময় ইমার্জেন্সি থেকে এক ও পি সি পয়সনের পেশেন্ট এডমিট করা হল আমাদের মেডিসিন ওয়ার্ডে।রোগী সম্পূর্ণ জ্ঞানহীন ছিল।তার সাথে আসা আত্নীয়স্বজনরা তখন তাকে ঘিরে মরাকান্না জুরে দিল।অনেক খোজাখুজির পর এক ইন্টার্নি ডাক্তার পাওয়া গেল।তিনি পুরো পরিস্থিতি দেখে ঘাবরে গেলেন।ও পি সি পয়সনিং এর ম্যানেজমেন্ট তার জানা।একমাত্র অভিজ্ঞতার কারনে তিনি তাকে স্পর্শ করার সাহস করলেন না।বাংলাদেশ বলে কথা,যদি কিছু হয়ে যায় তাকে তো আর আস্ত রাখবে না । তার চিকিৎসা শুরু হল রেজিষ্টার আসার পর।সৌভাগ্যক্রমে সে বেচে গিয়েছিল।

গতকালের ঘটনাটা আমি সারাজীবন মনে রাখব।মূলত গতকালের ঘটনাটাই আজ আমাকে লেখার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।সকালে ওয়ার্ডে ক্লাশ করছিলাম আমরা।এক বেডের চারপাশে ঘিরে স্যার আমাদের ক্লাশ নিচ্ছেন।হঠাৎ পেছনের বেড থেকে এক মহিলার আর্তচিৎকার শুনে পেছনে ফিরে তাকালাম।তার স্বামী পেশেন্ট।হঠাৎ করেই তার পেশেন্টের তীব্র শ্বাস কষ্ট দেখা দিয়েছে।মহিলার চিৎকারে দুজন ডাক্তার ছুটে এলেন।একজন ইমার্জেন্সি হাসপাতালের ই,সি,জি ডিপার্টমেণ্টে ফোন দিয়ে ই,সি,জি করার ব্যবস্থা করলেন।দেখা গেল যে তার হার্ট ফেইল করেছে।হাসপাতালের বেড গুলো খুব চাপাচাপি করে রাখা এরই মাঝে একজন ডাক্তার তার বেড টেনে বের করে ফেলেছেন।তাকে তখুনি সি,সি ইউ (কার্ডিওলজি ) তে এডমিট করা জরুরী হয়ে পড়ে।সাধারনত এক ডিপার্টমেন্ট থেকে আরেক ডিপার্টন্টে ট্রান্সফার করার প্রক্রীয়াটা জটিল।কাগজ পত্র সহ অনেক ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় রোগীর পরিবারের।এই বিলম্ব অনেক সময় পেশেন্টের জন্য মৃত্যুর কারন হয়ে দারায়।কার্ডিওলজির রেজিষ্টার কে ফোন দিয়ে তারা খুব সুন্দর ভাবে ব্যবস্থা করে ফেললেন।তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার মনটা ভরে উঠল।আর আমিও সেই টিভি চ্যানেলের সমালোচনার মোক্ষম জবাব পেয়ে গেলাম।।

এটা ঠিক যে ডাক্তারদের মাঝে অনেক অসাধু ডাক্তার আছে।ডাক্তার নামের সাথে কসাই নামটা মানিক জোড় হয়ে গেছে।কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে তারাও মানুষ।টানা বারো থেকে আঠারো ঘণ্টা ডিউটি কখনো সমান মনযোগ আর মেজাজ নিয়ে করা যায়না।তবুও তারা অপরাধী যে কোন ভুলের জন্য।কিছু করার নেই

সর্বশেষে একটা কথাই বলব এই শ্রেণীর উপর ঢালাও ভাবে অভিযোগ না করে আমাদের যেকোন কিছুরই সুষ্ঠ তদন্ত করা।ভাল মন্দ সব জায়গায় ই বিদ্যমান।

-আয়ন


মন্তব্য

পাঠক এর ছবি

হেহে। ডাক্তার আর উকিল এই দুইটা প্রফেশন ই এমন যে, এই দুই পদের লোকের কাছে গিয়া মানুষজন কখনো সুখের কথা কয়না। লম্বা টাইম ধইরা এরকম মাইন্ষের দুঃ্খের আর কষ্টের গান শুনতে থাকলে কিছু মানসিকতার পরিবতর্ন আসা আমার মতে স্বাভাবিক।

-মেফিস্টো

আয়ন এর ছবি

সহমত..

Kamrul Hasan এর ছবি

হে হে, ডাক্তার সাহেবরা আজকাল বেশ প্রেশারে আছেন বুঝতে পারছি। হাস্পাতাল ছেড়ে মাইরের ভয়ে ব্লগিং করতে নেমেছেন! জনগন কে বুঝানোর বৃথা চেষ্টা আরকি। আজকাল অনেক ডাক্তার সাহেবকেই দেখি হাসপাতালে মোবাইলে সোসাল নেটোয়ার্কিং করতে। কাজে মনোযোগ দেন স্যার। আপনাদের মানুষ করতে বাংলাদেশ সরকারের অনেক খরচ গেছে। চোখ টিপি

তানজিম এর ছবি

আর আপনাদের পিছনে খরচ করেও মানুষ করতে পারে নাই বুঝা গেল অফ যা

Kamrul Hasan এর ছবি

না না আমরা তো পথের ধুলা। ভ্যাট-ট্যাক্স তো আমাদের অজান্তেই সরকার আদায় করে নেয়। কিন্তু, হাসপাতালে আমাদের প্রতি অবহেলা, পুলিশ স্টেশনে অবজ্ঞা, কোর্টে দীর্ঘ্যসূত্রিতা....। আমরা ভাই পথের ধুলা। মন খারাপ

Kamrul Hasan এর ছবি

তাই মাইর দেওয়াটাই আমাদের শেষ উপায় - the last stand। দেঁতো হাসি

তানজিম এর ছবি

এতই যদি বংশদণ্ডের জোর থাকে পুলিস আর উকিলদের একটু পিটাইয়া দেখায়েন পারলে... পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

Kamrul Hasan এর ছবি

বংশদণ্ড! এস পি, ডিসি দুইডারে এক লগে ধাওয়া দিলাম - আবার জিগায়!

আয়ন এর ছবি

কামরুল ভাই,ডাক্তাররা কি ব্লগিং করতে পারে না?সোসাল নেটয়াওর্কিং করলে অসুবিধা আবার যদি একটু ভাল করে কথা না বলা হয় গালি দিতে তো ছাড়েন না।মানুষ মনে হয় না আমাদের?নাকি অসামাজিক করে রেখে চিরজীবন কসাই গালি দিয়ে যেতে চান??

Kamrul Hasan এর ছবি

আপনারা আছেন বলেই প্রতিদিন হাজারো মানুষ নতুন জীবন ফিরে পায়। প্রচন্ড ব্যাথার উপশমে শান্তির চোখ বুজে। এটা ব্লগে এসে নতুন করে বলতে হয়?

আমরা সাধারন মানুষতো মনে মনে আপনাদের যীসুর পাশেই বসাতে চাই। কিন্তু, আপনারা আমাদের মন ভেঙ্গে দিলে কি আর করবো?

এটাও কিন্তু সত্য যে এটা আপনাদের জব। এভাবে জাহির করে নিজেদের ছোট করবেন না। ব্লগিং করবেন, করেন না। কত বিষয়ই তো আছে। যেমন, আপনাদের শ্বশুর কত ধনী, আপনাদের বউরা কত সুন্দরী, আপনাদের শালীর সংখ্যা কত ইত্যাদি ইত্যাদি... । চোখ টিপি

মাশুদুল হক এর ছবি

তারমানে দাঁড়াইল , আজকে বিরাট কনটেস্টে নাইমা যে পোলাপাইন গুলা মেডিকেলে ভর্তি হইছে ওরা চান্স পাওয়ার পর থিকা সবাই এক একটা মহাপুরুষ হইয়া যাইবো। তারা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং করবো না, ফেসবুকে ঢুকবো না। ব্লগে আবার কী? সারাদিন মানবতার মহান ব্রতী হইয়া নিরামিষাশী হইয়া দিনানিপাত করবে। কারন সরকার মহোদয় তো এগো পিছনে এত্ত খরচ করতাছে, সেইটাতো আমাগো বাকীদের পিছনে করতাছে না। যদিও মানলাম একজন মেডিকেল স্টুডেন্টের নিজস্ব খরচ অন্যান্য পাবলিক ভার্সিটির পোলাপাইনের চেয়ে অনেক বেশি হয়, একটা রবিন'স এর দাম ২১০০, ডেভিডসন দুই-আড়াই হাজার, যন্তর-মন্তর হাবিজাবির পিছনে যতই খরচ টরচ হউক সরকারের তরফ থেকেও তো অনেক খরচ হয়। তাই এদের উচিত নিরামিষাশী, গোবাচারী, পরহিতাকাঙ্খী, অহিংসী, মাটির মানুষ হইয়া-যাবতীয় নেটফেট,সোশ্যালনেটওয়ার্কিং, ফেবু আর ব্লগফ্লগ থিকা কমপক্ষে ল্যে পিপল প্রমাণিত হওয়ার মত দূরত্ব রাইখা চলা!
তাই না জনাব কামরুল!

Kamrul Hasan এর ছবি

আমি বলছি,

আজকাল অনেক ডাক্তার সাহেবকেই দেখি হাসপাতালে মোবাইলে সোসাল নেটোয়ার্কিং করতে।

বাড়িতে যাইয়া করেন না কেন। মানা করছে কে? ঘেঁয়াও...

মাশুদুল হক এর ছবি

বস, আপনে বোধহয় জানেন না, অনেক ডাক্তারেরই দৈনিক ১৬-১৭ ঘন্টা ডিউটি থাকে। আমি যখন প্রথম দিকে হলে ইন্টার্নি ভাইদের সাথে উঠেছিলাম তাদের দেখতাম কিছু কিছু দিনে তারা জাস্ট ঘুমানোর জন্য হলে আসতো। তাই ওই বাড়ি কিন্তু হাসপাতালই হইয়া যায় তাদের জন্য।
তার কোন কাজ থাকলে সে যদি ফাকিঁ দিয়া ফেসবুকে গুতাগুতি করে সেটার সাফাই গাইছি না। কিন্তু ১৬-১৭ ঘন্টা ডিউটিতে থাকাকালীন নিশ্চয়ই পুরা সময় সে তার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে না!

ডালিম কুমার এর ছবি

আবেগপূর্ণ একটি লেখা।ভালোই লেগেছে।তবে কিছু ব্যাপারে একটু বলতে চাই। সরকারী মেডিকেলে চিকিত্‍সা সেবা পুরোপুরি নিশ্চিত করা একটু কঠিন বলে পরেই যে কারণটি(রাতে 'বিশেষজ্ঞে'র সশরীরে অনুপস্থিতি) দেখিয়েছেন তা একটু খেলো হয়ে গেল। আইএমও মোটেও সদ্য পাশ করা চিকিত্‍সক নন।ইন্টার্ণশীপ শেষ করে পূর্ণ রেজিস্ট্রশন প্রাপ্ত চিকিত্‍সক বিসিএস বা চুক্তিভিত্তিক উপায়ে সরকার কর্তৃক আইএমও হিসেবে নিযুক্ত হন।পদমর্যাদায় তিনি সহঃ রেজিস্ট্রার ও রেজিস্ট্রারের সমান;কর্মপরিধি ভিন্ন মাত্র।অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা হয় স্নাতোকত্তর প্রশিক্ষণার্থী নয়তো স্নাতোকত্তর ডিগ্রীধারী। (HMOরাও তাই তবে এরা বিনা বেতনে খাটেন)।আর ইন্টার্ণরা তো হাসপাতালের মূল ফোর্স।জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই করে। তাই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ(অধ্যাপকশ্রণী বুঝাতে চেয়েছেন কি?) চিকিত্‍সকই সর্বদা লাগবে এ ধারণাটি সাবিহা আলম টাইপের হয়ে গেল।শিক্ষকশ্রেণীর চিকিত্‍সকরা সকালে রাউণ্ডে মূলত পরামর্শক হিসেবে থাকেন।ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দেন,পরবর্তী সিদ্ধান্তগ্রহনে সহায়তা করেন,সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এর ফাঁকে টুকটাক পড়ান।চিকিত্‍সার কাজ মূলতঃ উপরিউক্ত তিন শ্রেণীই করেন।(রেজিস্ট্রার কিন্তু আপনাদের পড়াশুনার খবর নিয়েই ব্যস্ত থাকেন বেশি,তাকে এদিকে ঘাঁটানো হয় কম)।তাই রাতে ওয়ার্ডের ক্লাশে অধ্যাপক কেন নিয়মিত আসেন না এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন,তবে রাউণ্ডের ব্যাপারটি ভিন্ন।
আপনার ওপিসি কেসটিতে একেবারে নবীণ ইন্টার্ণ হলে এরকম হওয়ার কথা তবে উল্লেখিত সিনিয়র গোষ্ঠীর যে কোন একজনের পরামর্শই যথেষ্ট।কথায় মনে হচ্ছে ওয়ার্ডে এডমিশন ডে চলছিল। তাহলে তো ঐ সিনিয়ররা তো সুলভ হওয়ার কথা।
আর একটা ব্যাপার, ইমার্জেন্সী সিসিইউ এডমিশনযোগ্য(যেমন MI,VF,VT,Asystole ইত্যাদি) কোন ব্যক্তির চিকিত্‍সা দাপ্তরিক কাজের জন্য বিলম্বিত হয় না।সঠিক সময়ে সঠিক কাজ একটি পূর্ণজীবন ফিরিয়ে দিতে পারে।তাই এসব ক্ষেত্রে চিকিত্‍সকরা নিজেদের মধ্যে দ্রুত যোগাযোগ করেন এবং সম্ভবপর দ্রুতগতিতে চিকিত্‍সার ব্যবস্থা করেন।
আপনি এখনো ছাত্র (যেহেতু কালকের ক্লাশেরই ঘটনা বললেন,সাথে কিছু অনভিজ্ঞ শব্দ,এবং ধরে নিচ্ছি আপনার কথাই বলছেন কপি পেস্ট নয়) চিকিত্‍সা বিজ্ঞানের আলোকিত দিকগুলি আপনার মনে দাগ কেটেছে দেখে ভালো লাগলো।মিডিয়ার রগড় দেখে মন খারাপ করবেন না।ওদেরও চলতে হয়,এভাবেই চলতে হয়। ভালো থাকবেন

আয়ন এর ছবি

আপনার তথ্য গুলো পড়ে ভালো লাগল।সহমত পোষণ করছি আপনার সাথে।পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

রুমঝুম ১ এর ছবি

চলুক

আয়ন এর ছবি

ধন্যবাদ

সাফি এর ছবি

ডাক্তারি একটা সেবাধর্মী পেশা। এখন লাঞ্চ টাইম বা আমার আওয়ার শেষ তাই রোগী দেখবনা জাতীয় অজুহাত তাই আমরা ডাক্তারদের কাছে আশা করিনা। দূর্ভাগ্যক্রমে এখনও আমাদের দেশে ডাক্তারের সংখ্যা রোগীর তুলনায় অপ্রতুল, তাই এটা মাথায় রেখেই রোগীর সেবা করা উচিত।

আয়ন এর ছবি

আপনার সাথে আমি পুরোপুরি একমত।আপনার কথার জের ধরেই বলি যেহেতু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রোগীর তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা অপ্রতুল তাই সবসময় শতকরা একশ ভাগ সেবা নিশ্চত করা সম্ভব হয়না।আসলে যখন একতরফা ভাবে দোষ দেয়া হয় তখন খুব খারাপ লাগে।ভাল থাকবেন

তানজিম এর ছবি

ভাইরে, প্রেম-পিরিতি এক দিক থেকে হলে কোন লাভ নাই।দুইজনকেই সহনশীল হতে হয়। সরকার ডাক্তারদের কি অতিরিক্ত সুবিধা দেয় যেটা অন্য পেশাজীবীদের দেন না?...আমাদের সমাজে সেবার ব্রত নিয়ে কতদূর যাওয়া সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?

সাফি এর ছবি

সরকার ডাক্তারদের অতিরিক্ত সুবিধা দেয়না বলে আপনি তো ডাক্তারদের কসাইগিরিকে হালাল করে নিলেন। তাহলে আর কসাই বললে গোস্বা কেন? এই লেখার উদ্দেশ্য কিন্তু এটাই, সব ডাক্তারদের যে কসাই মনোভাবের না সেটা বলা।

আমি বড় হয়েছি বাবর রোড, মোহাম্মদ্পুরে। মিরপুর রোডের পূর্ব প্রান্তে সোহরোওয়ার্দি আর পঙ্গু হাসপাতাল, আর পশ্চিম প্রান্তে বাবর রোড শ্যামলি জুড়ে ক্লিনিক, চেম্বার আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অফিস সময়ে অধিকাংশ ডাক্তার-ই হাসপাতালে না থেকে চেম্বারেই সময় দিতেন। রাস্তার এপার ওপার হওয়ায় হঠাৎ ভিআইপি রোগী এলে বা পরিদর্শনে কেউ এলে যেন সহজেই রাস্তা পার হয়ে হেঁটে হাসপাতালে যেতে পারে।

তানজিম এর ছবি

ডাক্তার কসাই এটাতে আপত্তি নাই, এই সমাজে সুজগ পেলে কে না কসাইয়ের মত আচরন করে? আপনি চাইলেই হাজারো নিয়ম করে এ সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। আগে বুঝতে হবে চেম্বারে কি এমন মধু আছে যা হাসপাতালে নেই?...

আমি যখন সরকারি হাসপাতালে কাজ করে মাসে ১২ হাজার টাকা পেতাম তখন আমার বুয়েট পাস বন্ধুরা অনেকেই ৬০ হাজারেরও বেশি টাকা মাসে আয় করে। অথচ ছাত্রজীবনে আমাদের মধ্যে ব্যাবধান ছিল ৬ ইঞ্চির একটা দেয়াল।

হীনমন্যতায় ভোগা কাউকে দিয়ে সেবার মত মহৎ কোন কাজ হয়না।

ডাক্তারদের কাছে শুনেন তাদের কি সমস্যা, সেগুলোর সমাধান করেন। দেশে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করে কঠোর আইন করে বাস্তবায়ন করেন। যারা আইন মানবে না দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেন। ডাক্তার না ডাক্তারের বাপ এসে ডিউটি দেবে।

সাদাকালো এর ছবি

১।

এই সমাজে সুজগ পেলে কে না কসাইয়ের মত আচরন করে?

ঠিক। ডাক্তাররা কি মানুষ না? ডাক্তাররাও মানুষ এবং এই সমাজেরই অংশ। সুযোগ পেলে কেন তারা তার স্বদ্ব্যবহার করবেনা? ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং সকল পেশাজীবি নির্বিশেষে "সুযোগ স্বদ্ব্যবহারের অধিকার চাই"।
সুযোগ চাই, কসাই হবো

২।

আগে বুঝতে হবে চেম্বারে কি এমন মধু আছে যা হাসপাতালে নেই?

মধু। ডাক্তারী জীবনের শুরুতে ১০-১৫ মিনিট ২৫০ টাকা নতুন রোগী, ১৫০-২০০ পুরাতন; দু-তিন বছর পর ৫-১০ মিনিট ৩০০+ টাকা; তারপর আরো ২-৪টা ডিগ্রী লাগানোর পর <৫ মিনিট ৫০০+ টাকা। স্যাম্পল ঔষধ (পরে যেগুলো পাশের ফার্মাসীতেই পাওয়া যাবে)। টেষ্ট, যত বেশী তত কমিশন। আর পেসক্রিপশানে কম্পানীর কোন ঔষধ লেখা হলে, বাড়ীর কাজের মেয়ের ঈদের জামা থেকে শুরু করে বৌয়ের গলার নেকলেস, বাথরুমের টাইলস থেকে ড্রইংরুমের সোফা (যা আগে থেকেই ভাবীরা পছন্দ করে রাখে, ডাক্তারদের শুধু বলতে হয় "আপনার ভাবীতো...."।

৩।

আমি যখন সরকারি হাসপাতালে কাজ করে মাসে ১২ হাজার টাকা পেতাম তখন আমার বুয়েট পাস বন্ধুরা অনেকেই ৬০ হাজারেরও বেশি টাকা মাসে আয় করে

এটাও ঠিক। সরকারী চাকরী ছেড়ে দিয়ে প্রাইভেট কোন প্রতিষ্ঠানে যোগদেন। ৬০ হাজার টাকার রস পেছন দিয়ে বের করে ছেড়ে দিবে। বিভিন্ন ট্রেনিংএ অংশ নিয়ে সরকারী ডাক্তাররাও কম আয় করে না। আর ছুটি নিয়ে যে ডিগ্রীর পর ডিগ্রী অর্জন করা হচ্ছে তার দাম নির্ধারণ করবেন কিভাবে?

৪।

হীনমন্যতায় ভোগা কাউকে দিয়ে সেবার মত মহৎ কোন কাজ হয়না

সত্যি কথা। আপনাদের কাজ কে সেবা বললে "সেবা" শব্দটার সম্মনহানী ঘটে তাই চাকরী করতে এসে এই শব্দ ব্যবহার না করাই ভালো। আপনাদের তথাকথিত "সেবা" আমরা নিজের রক্ত পানি করা পয়সা দিয়ে কিনে নিই। আর সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিই কারণ এর জন্য সরকারকে আমরা ট্যাক্স দিই। এটা আমাদের অধিকার, আপনারা এই সরকারী হাসপাতালের চাকুরীজীবি, এর বেশি কিছু না ভাবাই ভালো। উপজেলার একজন কৃষি অফিসার, মৎস অফিসার আপনার থেকে কম আয়ে অনেক বেশি "সেবা" দিয়ে যাচ্ছে।

৫।

যারা আইন মানবে না দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেন। ডাক্তার না ডাক্তারের বাপ এসে ডিউটি দেবে।

এটাও ঠিক। মাইরের উপর ঔষধ নাই।

তানজিম এর ছবি

ভাই সাহেব, এর পর থেকে হাসপাতাল বা ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়ার সময় আপনি একটা পাকা মুলিবাঁশে উত্তমরূপে তেল দিয়ে সাথে নিয়ে যাবেন। যে দেশে Might is Right সেখানে আপনার মত রুস্তমরা পরম পূজনীয় হয়েই থাকবেন।

সাদাকালো এর ছবি

ভাই তানজিম, এই মাইর দেওয়ার কথাটা কিন্তু আমার না, আপনারই:

দেশে যুগোপযোগী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করে কঠোর আইন করে বাস্তবায়ন করেন। যারা আইন মানবে না দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেন। ডাক্তার না ডাক্তারের বাপ এসে ডিউটি দেবে।

আর মাইর তো আমি দিবনা কারণ আমি এখনও কসাই শ্রেণীতে নাম লেখাতে প্রস্তুত না। যারা এই কঠোর আইন প্রনয়ণ করবে, মাইর দেয়াও তাদের কাজ।

তবে আপনি শুধুমাত্র মাইর খাওয়ার ব্যাপারেই মুখ খুল্লেন? মধু খাওয়ার বিষয়েও কিছু বলেন, জনগন জানতে চাই।

তানজিম এর ছবি

কস্কি মমিন! বাংলা পড়তে পারেন তো? না পারলে প্রাইমারী স্কুল পড়ুয়া কারো সাহায্য নিন। আমার কমেন্টের যেটুকু কোট করলেন কোথায় মাইর দেয়ার কথা পেলেন বুঝলাম না।

আর হ্যা, কথায় কথায় লুঙ্গিতে কাছা মেরে মাইর দিতে যাওয়ার আগে একটু ভেবে দেখবেন। হয়তো একসময় এমন কারো হাতে পড়ে গেলেন, সাদাকালো থেকে রঙিন হতে বেশি সময় লাগবে না।

খুদাপেজ, আলবিদা, সায়োনারা!!!!

সাদাকালো এর ছবি

গাইটনগ্যানন আর লাভবেলী না দিল্লীবেল্লী মুখস্ত করতে করতে মাথা তো দেখি শ্যাস।
আমি বলি কী? আর আমার সারিন্দা বাজাই কী? এখন জিগান সারিন্দা কি?
ভাই তানজিম আপনি যে পড়ালেখায় যথেষ্ট ফাঁকিবাজ ছিলেন তা কিন্তু আপনার পোস্ট পড়া দেখেই বুঝা যাচ্ছে। পড়তে হয় খুব বুঝে বুঝে আর প্রতিটা লাইন তো অবশ্যই। দেখেন তো আগের দুইটা পোস্টের সব লাইন পড়েছেন কিনা? না পড়লে আবার পড়েন। নিজে না পারলে প্রাইমারি পাশ কেউ হলেই চলবে তয় পিএইচডিতেও আমার আপত্তি নাই।
থাউগ্গা মনে করেন উপ্রে কিছু লিখিনাই। আপনি মধু খাওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেন। চিন্তা করেন, বুকে সৎ সাহস আনেন, পর্যাপ্ত সময় নেন আমি পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

সাফি এর ছবি

তানজিম ভাই, আপনি নিজে সরকারি বেতনের সাথে বুয়েট পাশ বেসরকারি চাকরিরতদের বেতনের তুলনা করলে কিভাবে হবে? বুয়েটের যেসব ছেলেরা রোড্স & হাইওয়েজ বা পিডাব্লিউডিতে সরকারি চাকরি শুরু করেছে তাদের বেতনের সাথে তুলনা করেন। আমেরিকার সুইপারের আয় কী আর আমি ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার আমার আয় কী এই চিন্তা করে জোর করে হীনমন্যতায় ভুগলে তো মুশকিল।

আপনি যেহেতু ডাক্তার, ডাক্তারদের সমস্যার কথা আপনিই বলা শুরু করুন না। সচলায়তন আপনাদের কথা শুনতে অবশ্যই আগ্রহী। দেশের স্বাস্থ্যখাত ভালো হলে আমার আপনারই লাভ, সুতরাং দোষারোপ এর বদলে সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজাতেই আমি আগ্রহী।

তানজিম এর ছবি

আসলে সামগ্রিক সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন না করে শুধুমাত্র একটা খাতেই পরিবর্তন করা অসম্ভবই বলা যায়। সরকারী ও বেসরকারি বেতন কাঠামোর এই বিরাট অসঙ্গতি সরকারী কর্মকর্তাদের অসদুপায় অবলম্বনকেই উৎসাহিত করে।

শাব্দিক এর ছবি

চিন্তিত

আয়ন এর ছবি

কি বুঝলেন শাব্দিক???

 তাপস শর্মা  এর ছবি

চলুক , সত্য। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়না। তবু আমাদের বলতে হয়।

পাঠক_পদ্মজা এর ছবি

ডালিম কুমারের সঙ্গে সহমত।
প্রতি তিন হাজার রোগীর জন্য আমাদের দেশে ডাক্তার একজন। কামরুল সাহেব অঙ্কটা এবার নিজেই করতে পারবেন আশা করি।

উপজেলা পর্যায়ে আমি এমন লোকজনের দেখাও পেয়েছি যারা এই বলে নিজেকে জাহির করতে পছন্দ করে যে "দিলাম সেইদিন এক ডাক্তার'কে চড় লাগায়া। শালা আমারে চেনেনা।" আর স্থানীয় সংবাদদাতা নামধারী যারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘুরঘুর করে তারা কেন, কি উদ্দেশ্যে তা করে সেটা জনমানুষের সংসর্গহীন শহুরে লোকদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। স্থানীয় সবাদদাতা'রা সরাসরি ব্ল্যাক্মেইল করে ডাক্তারদের, " আমারে এইভাবে সার্টিফিকেট দিতে হবে। না হলে মাইর খাইতে হবে।" আর আমাদের আমলা আর সুশীল সমাজ এইসব সমস্যার সমাধান তো দেয়ার যোগ্যতা তো রাখেন'ই না, উলটা ডাক্তারদের পিণ্ডি চটকান!

আর ট্যাক্সের পয়সার কথা যদি তোলেন তো ছোট মুখে একটা কথা বলি, বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে একমাত্র ডাক্তার'রাই বেতন হালাল করে খান।

এখন আমার খুব সহজ দু'টা প্রশ্ন, ১) ডাক্তার'রা মানুষ কিনা?
২) ডাক্তারদের কর্মে অবহেলার অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্ত করার সৎ সাহস সরকার, সংবাদ মাধ্যম ইত্যাদিদের আছে কিনা?

Kamrul Hasan এর ছবি

দুঃখিত। ঠাট্টা করছিলাম। সিরিয়াস হয়ে গেছে।

কখনোই আমি ওই বেয়াদব ব্যাক্তি, বা তথাকথিত সাংবাদিকদের দলভূক্ত নই। কিছু মানুষ অবশ্যই আছে যারা গোড়া এবং নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে সর্বদাই আগ্রহী। তাদের জন্যও মাইর দরকার।

আমি আসলে বুঝাতে পারিনি। আমার কথা হলো, যেখানে আপনারা প্রতিদিন হাজারো লোকের প্রান বাচাচ্ছেন সেখানে একটি দুটি ঘটনার কথা ব্লগে লিখে সিম্প্যাথি ভিক্ষা করার কি দরকার? এদিকে আপনাদের কান দেওয়ারই দরকার নাই।

আয়ন এর ছবি

কামরুল ভাই ভাল বলেছেনতো আপনি,আপনার ইচ্ছে মত যা খুশি বলে যাবেন তার জবাবে কিছুই বলতে পারব না,মুখে কুলুপ এটে বসে থাকব।সালাম ভাই গুরু গুরু

আয়ন এর ছবি

শেষের লাইনটা চমৎকার বলেছেন ভাই।আর উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তারদের অবস্থা তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

পাহাড়ী বাংগাল  এর ছবি

সরকারী হাসপাতালের ভয়াবহ অব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা থেকেই আমার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে উন্নত সেবার আশায় ঢাকার একটি বেসরকারী অভিজাত হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম (আমি একজন নিরীহ মানুষ ভয়ে নাম বলতে চাইনা)। আমার স্ত্রী সেই হাসপাতালে একজন স্বনামধন্য গাইনী বিশেষজ্ঞের তত্তাবধানে ছিলেন। তার নিকট থেকে জানতে পারি, অপারেশন থিয়েটারে সিজারিয়ানের পূর্বে বোর্ডে (যেখানে রোগীর প্রোফাইল লিখা থাকে) তার রক্তের গ্র ভুল লিখা হয়েছিল। সেটা ধরিয়ে দেয়ার পর তড়িঘড়ি করে ঠিক করা হয়। সেখানে আমাদের একটি কন্যা সন্তান জন্মায়। তবে সে কিছু সমস্যা নিয়ে জন্মায় তাই তাকে NICU- তে ভর্তি করানো হয়। ৩৬ ঘন্টা পর্যšÍ জানতেই পারিনি আমাদের সন্তানটির কি হয়েছে। শুধু অসহায় পায়চারি করেছি NICU- এর সামনে। আর প্রতিটি মুহুর্তে আশায় থেকেছি এখনই সশ্লিষ্ট ডাক্তার এসে শিশুটির সমস্যা সম্পর্কে জানাবেন। কিন্তু তা হয়নি। অবশেষে একজন বিশেষজ্ঞের দেখা পেয়েছিলাম কিন্তু তার ব্রিফিং স্টাইল ছিল তাচ্ছিল্যপূর্ন। তার আচরণে ছিল নিজেকে সৃষ্টিকর্তা পরবর্তী কেউ হিসেবে জাহির করার প্রবল প্রচেষ্টা। একজন কষ্ট ভারাক্রান্ত বাবার অবস্থানকে সে মোটেই বিবেচনায় নেয়নি। আমি উন্নত সেবার আশায় সেখানে গিয়েছিলাম তা অবশ্যই অধিক অর্থের বিনিময়ে। কিন্তু তার আচরণে মনে হয়েছিল, তিনি আমাদের দয়া করছেন।
আমার স্ত্রীকে রাত নয়টার দিকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। নার্স মহোদয়া রোগীর খাবারের খোঁজ করছিলেন। কিন্তু রেষ্টুরেন্ট বা কেন্টিন থেকে সে খাবারের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। পরবর্তীতে একই ফ্লোরে পাঠানো খাবার থেকে ঠান্ডা স্যূপজাতীয় কিছু এনে সে রাতের মত চালিয়ে নেয়া হয়। এ বিষয়টিকে আর লম্বা না করে বলা যায় পরবর্তী দিনগুলো ছিল মাস্টারমশাই জাতীয় সদ্য পাশকৃত ডাক্তারদের রামগরুরের ছানার মত ভাবগম্ভীর মহড়ায় ভরপুর। আমার স্ত্রী পাঁচদিন পর হাসপাতালের প্যাঁচ থেকে মুক্ত হয়। আমার সন্তানকে সেখানে রাখা হয় নয় দিন যার যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ। অবশেষে ছয় ডিজিটের বিল পরিশোধ করে আমাদের হাসপাতাল পরিক্রমা শেষ হয়। কিছুদিন পূর্বে সেই স্বনামধন্য গাইনি বিশেষজ্ঞসহ আরও কয়েকজনের বিরূদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা হয়েছে যা বিচারাধীন।
আমার জানামতে চিকিৎসাবিদ্যা পাঠকালীন সময়ে ছাত্র/ছাত্রীদেরকে মেডিকেল এথিক্স পড়ানো হয়। ডাক্তারি বিদ্যার এই অংশটুকুর প্রতিফলন আমি এদেশে দেখিনি এমনকি অধিক অর্থ ব্যয় করেও।
কয়েকদিন পূর্বে পত্রপত্রিকায় আরেকটি সংবাদ জানলাম যে পিজি হাসপাতালে বেলা দুইটার পর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগন দুইশত টাকা ফির বিনিময়ে সেবা দিচ্ছেন। আয়জক্গন অবশ্যই সাধুবাদের দাবীদার। তবে একটি প্রশ্ন মনের মধ্যে খচখচ করছে এবং সেটি হচ্ছে সে সকল সম্মানিত ডাক্তারগণ বেলা দুইটার পর এই বিশেষ সেবা দিচ্ছেন, তাদের দৈনিক কর্মঘন্টা কত?

আয়ন এর ছবি

আপনার স্ত্রীর ঘটনা আসলেই দুঃখজনক।এমনটা কেউই আমরা প্রত্যাশা করিনা।সেবা পাওয়া নাগরিক মাত্রই অধিকার।এখানে একটা কথা লক্ষ করুন আমি কিন্তু বলেছি ভালোমন্দ সবজায়গাতেই আছে।আজ কিছু অসাধু স্বার্থেন্বেষী ডাক্তারদের জন্য পুরো গোষ্ঠীটাকে সবাই খারাপ চোখে দেখ শুরু করেছে।আমি শুধু এ সমস্যা থেকে উত্তরণের একটা পথ বের করতে চেয়েছি মাত্র।সব ডাক্তাররাই ভাল এরকম সাফাই গাওয়া আমার উদ্দেশ্য না।

পাঠক এর ছবি

ডাক্তারদের সাথে কসাইয়ের পার্থক্য মননে। আপনার নিজের পোস্ট টা একজন আমেরিকান ডাক্তার কে পড়তে দিন। হায়রে "গরীব" দেশের "নবাব" ডাক্তারগন। থু থু থু

আয়ন এর ছবি

আপনাকে বিশেষ কিছু বলব না , নিচের লিংকটা পড়ুন

ডাক্তার মাখনলাল এম,বি,বি,এস

KamrulHasan এর ছবি

এই অবস্থা তাহলে! Sad. মন খারাপ

আমি এক মাখনলালের গল্প জানি। সত্য ঘটনা।

তার বাবা গরীব কৃষক। মাঝে মাঝে ভ্যান ও চালাতো সবজি ফসল টানার জন্য। ইনফ্যাক্ট ভ্যানটা তাদের নিজেরই ছিল। তো এই মাখনলাল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হবার পূর্বে বাবার খুব নেওটা ছিল। বাপ-বেটায় একসাথে ধান কাটতো, ফসল তুলতো আর ভ্যানে করে হাটে নিয়ে যেত। কখনো কখনো বাবা ভ্যান চালাতো কখনোবা ছেলে - আমাদের গাঁয়ের মাখনলাল। বাবা তখন ভ্যানে বসে বিড়ি টানতো। মাখনলাল অবশ্যই মেধাবী ছিল।

লং স্টোরী শর্ট। ছাত্রজীবনেই মাখনলাল এক ধনীর দুলালীকে বিয়ে করলো। তারপর বাবাকে ভূলে গেল। আজ দশ বছর পার হয়ে গেল। সেই মাখনলাল আর গ্রামে ফিরলোনা............

আর মাখনলালের বাবা? ওই তো দেখাযায়। সন্ধ্যাবেলায় গ্রাম্যহাটে টিমটিমে আলো জ্বালান জিলিপির দোকানটায় দুইটাকার জিলিপি কিনে খায় আর বিড়িতে সুখ-দুখের টান দেয়।

এখন ডাক্তাররা মানুষ কিনা তারাই ভালো জানেন।

আয়ন এর ছবি

কামরুল ভাই বারবার পয়েন্ট থেকে দূরে সরে যান কেন??আপনি যেই উদাহরনটা দিলেন সেটা যে কোন পেশাজীবি মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে,আপনি প্রতিষ্ঠিত হবার পর আপনার বাবা মাকে দেখবেন কি লাথি দিয়ে দূরে সরিয়ে দিবেন সেটা আপনার পেশার উপর নির্ভর করে না। আপনার তো দেখতেছি পুরা ডাক্তার জাতিটার উপরই এলার্জি

ঠিক আছে ভাই আপনারই মানুষ,আমরা কষাই

KamrulHasan এর ছবি

রাগু কইরেন না।

আপনি একটা দূরের লিংক দিয়েছেন তাই আমিও একটা দূরের গল্প কাছে আনলাম আরকি।

আপনার লিংকে kfc তে আলুর দাম কত সেই হিসাব দেখাইছে সুন্দর মতো এক পুলা। সোনার চামচ মুখে বড় হওয়া ছেলে উন্নত চিকিতসা সরি, উন্নত শিক্ষা নিয়ে বড় হয়ে, রেক্টামে করে চুরি করে আনা প্রশ্নপত্র লাখ টাকায় কিনে সরকারী কলেজে ভর্তি হয়ে, সরকারী টাকায় ডাক্তারী পাশ করে উপজেলায় চাকরী করতে চায় না! ঢাকায় থাকবো, kfc তে খাইবো - হেই কান্না কাটি করে। হালা ফাউল কোনহান কার।

আর আমি এখনো প্রতিষ্ঠিত হইনি তা আপনাকে কে বলল? আর মানুষের মতো মানুষের কাছে নিজের বাবা মার চেয়ে বড় কেউ নাই।

ডালিম কুমার এর ছবি

হেহেহে ভাই সরকারি টাকার উপ্রে খুব নাখোশ দেহি। আপনে ভাগ পান নাই? পান নাই বইলাই যারা পাইসে তাদের সবাইকে জালিয়াত বলে দিলেন এক ধাক্কায়। ভালু ভালু। ভাইজান করেনটা কি? আমগো বুয়েট কুয়েত এইগুলাতেও টেরাই দেন নাই? পাবলিক ভার্সিটি? নাকি সব হালায় জালিয়াত, ফাউল; প্রশ্ন মাইরা টিকছে আর সরকারি টাকায় ছহবত করতাছে। আপনেই হালায় খালি খাঁটি মানুষ।বাপের 'কইথেক্কা পুটু মেরে আনা' পয়সায় সার্টিফিকেট বাগাইছেন। কেপচিতে খাইছেন। (আসলেই ভাই সরকারি টাকায় পইড়া এই 'ক লিখতে কলম ভাঙ্গা' ভ্যাবলামূর্খ পুলাপাইন কেপচি ...দায় ক্যান আমিও বুঝিনা।ফকিরনির পুলা তোরা টিউশনির পয়সায় নীলক্ষেতের তেহারি খাইয়াই হাত চাটবি। কেপচির আলুভাজির দামে তোদের বাপের কি? তোরা মানুষ?) আপনে ভাই প্রতিষ্ঠিতও হইয়া গ্যাছেন। মারহাবা!!! মারহাবা!!!
ভাইজান, কোন উপজেলায় কাজ করতাছেন? থুক্কু উপজেলা তো বিরাট ব্যাপার ইউনিয়ন!! ইউনিয়ন!! কোন ইউনিয়ন এ আছেন?

KamrulHasan এর ছবি

আপনি তো একজন ডাক্তার, তাই না? নিজের চেহারা দেখিয়ে দিলেন তো?

চলুক দিলাম কারন, এটাই আশা করেছিলাম। কত ভালোকরেই না আপনাদের আমি চিনি। মুখোসের তলায় আপনাদের আমি জন্মের পর থেকে দেখছি না? মুখোস খুলতে ভালো লাগলো। মজা পেলাম।

বাপের 'কইথেক্কা পুটু মেরে আনা' পয়সায় .........

এই প্রশ্নটা আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন। ওর এন্সার টাই আবার আমার এন্সার ধরে নিয়েন না। মেধাস্বত্বে আপনাদেরই একচ্ছত্র অধিকার আছে এমনটা ভাবেন কেন?

KamrulHasan এর ছবি

আর ভাগ চাইনা। অধিকার চাই।

তাই, উপজেলা শব্দটা যদি আপনার উপযুক্ত জায়গায় লেগে থাকে তাহলে আমার বংশদন্ড ধন্য।

ডালিম কুমার এর ছবি

দেঁতো হাসি প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে ঝোপঝাড় কুপিয়ে বেড়ানোও খুব মজার কাজ। কি করেন কোথায় পড়েছেন এটি খুব বিব্রতকর প্রশ্ন ছিল?বংশদণ্ডের উল্লেখের চেয়ে কম বিব্রতকর নয় কি? 'মেধাস্বত্ব' শব্দটি কিভাবে ফিট করলেন? অর্থ জানেন?মেধাস্বত্ব দাবী করেছেটা কে? হাসি স্বদেশব্রতী আপনি কোন উপজেলায় কাজ করেন জিজ্ঞেস করলাম। আমি ইউনিয়নেই কাজ করি। এটা আপনার এতটা লাগবে বুঝতে পারিনি, রাগটি বংশদণ্ডের উপর ঝাড়বেন না দেঁতো হাসি মোড়ক উন্মোচন থুক্কু চেহারা উন্মোচন খেলায় আর না যাই। যা হোক কথাগুলো বেশী লাগলে দুঃখিত। শ্যাষ

KamrulHasan এর ছবি

খালেদা হাসিনার মতো ফলহীন বিতর্ক আমাদের কোথাও পৌঁছাবে না। আপনি-আমি কেউ ওদের মতো বড়(?) নই। তাই ট্রফিটা আপনাকেই দিলাম। তাতে যদি আপনি সুস্থির মনে কাজ করতে পারেন সেটাই আমার জিত।

নিচে কোথাও বলেছি আমি ইল্লিটারেট। সত্যিই তাই। আপনার হেভীওয়েট সার্টিফিকেটের সাথে পারি, সে সাধ্য আমার নাই। আমি এক স্বাধীন ক্ষ্যাপা মানুষ। আই. টি. ফ্রিল্যান্সার। কখনো ধানমন্ডীতে - কখনো ধানক্ষেতে। এক ল্যাপিই আমার সম্বল। নিজেকে প্রতিষ্টিত বলেছিলাম। আসলে প্রতিষ্ঠা বিষয়টি খুবই আপেক্ষিক। প্রশ্ন হলো কতটুকুতে একজন মানুষ এ জগতে সুখি।

আমার শ্যাষ কোন ব্যাপার না, সেটা অনেক আগেই হইছে। চাই আপনারা নতূন এক শুভ সূচনা করেন, সবার অভিযোগ মুছে দেন, সবার মুখে হাসি ফোটান। ভাল থাকবেন। হাসি

বিঃদ্রঃ আমার কাছে কিছুই বিব্রতকর ছিল না। আমি শুধু ভাবগম্ভীর একটা বিষয়ের মধ্যে ঢুকে মজা করে ঝোপঝাড় কুপিয়েছি আরকি।

KamrulHasan এর ছবি

ওহ আর একটা কথা, সন্ধ্যায় চা খেতে খেতে মনে পড়ল - না বলে পারছি না।

তানজিম ভাইয়ের সার্জারি আউটডোরে মোড়ক উন্মোচনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তো? তা সেটা উনার মতো বাচ্চা বাচ্চা খোকাবাবুদের উপরে প্রয়োগ করাটাই যথোপযুক্ত নয় কি?

আমাদের যাদের পাকা কলা আছে তাদেরকে একটু চাটা দিয়ে আপ্যায়ন করলেই হবে। আর আপনার সংগ্রহে যদি ভালো বিস্কিট থাকে তাও মোড়ক উন্মোচন করে আমাদের মুখে তুলে দিতে পারেন। আজ কাল বোম্বের আমির খানের আশে পাশে নাকি অনেক বিস্কিট shaking চলছে। চোখ টিপি

Kamrul Hasan এর ছবি

শ্যাষ!

হিমু এর ছবি

ডাক্তার আর হবুডাক্তারদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, আপনারা চিকিৎসার্থীদের কাছ থেকে ঠিক কী কী জিনিস আশা করেন? বাকিদের বলছি, আসুন এ নিয়ে আলাপ করি। বাংলাদেশের সব ডাক্তারের ওপর জমে থাকা রাগ এই পোস্টে সমাগত ডাক্তারদের ওপর না ঝাড়ি।

একটা জিনিস মনে হয় আপনারা বুঝবেন, চিকিৎসা নিতে গিয়ে মিসকমিউনিকেশনের শিকার হন প্রচুর চিকিৎসার্থী। এ ব্যাপারে ডাক্তার আর হবুডাক্তাররা ঠিক কীভাবে তাদের সহায়তা করতে পারেন? চিকিৎসা নিয়ে সাধারণ মানুষের ধারণাও কিন্তু অপর্যাপ্ত। কাজেই সময়োচিত কিছু ফিডব্যাক না পেলে তারা এই চিকিৎসা ব্যবস্থাটাকে নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়েই বিচার করবেন, আপনাদের দৃষ্টিকোণ তো আপনারা তাদের জানার সুযোগই দিচ্ছেন না।

যদিও খুব বাস্তবতাবোধবিবর্জিত আইডিয়া মনে হতে পারে, কিন্তু আমার মনে হয়, চিকিৎসক কমিউনিটির উচিত সাধারণ মানুষের সাথে জনসংযোগের জন্যে একটা জনসংযোগ উইং মেইনটেইন করা। হাসপাতালে রোগীর উদ্বিগ্ন আত্মীয়ের উপস্থিতি যেহেতু চিকিৎসা ব্যবস্থারই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ, কাজেই তাদের উদ্বেগ প্রশমনের একটা ব্যবস্থা রাখা উচিত।

ডালিম কুমার এর ছবি

হিমুভাই আপনার সাথে পূর্ণ সহমত।মিসকমিউনিকেশন,মিসকনসেপশন এই দুটোই মারাত্মক হয়েছে এই খাতটিতে।
আর আইডিয়াটি বাস্তববর্জিত নয় মোটেও।অন্তত জরুরী রোগী তথ্যকেন্দ্র চালু করাটিই অত্যন্ত জরুরী।Mass Casualtyর(যেমন ২১ আগস্ট বোমা হামলা,পিলখানা ঘনঘটা,নিমতলী অগ্নিকাণ্ড) সময় মনে হয়েছে একটি নোটিশবোর্ড দিয়েই জরুরী বিভাগের ভীড় শতকরা দশভাগে নামিয়ে আনা যেত।চিকিত্‍সকরা যেমন আশা করেন না যে তাঁর কাজের পাশেই শখানেক লোক ভীড় করে থাকবে,ধাক্কাধাক্কি করবে,বিছানার উপরে ক্যামেরাম্যান দাঁড়িয়ে থাকবে তেমনি আমারও জানা দরকার আহত ব্যক্তিটি আমার আত্মীয় কিনা,সে শঙ্কামুক্ত কিনা,তাঁর চিকিত্‍সায় বাইরে থেকে কিছু প্রয়োজন হবে কিনা(হ্যাঁ সম্পদ অপ্রতুলতা স্বীকার করে নিয়েই বলছি)।

আয়ন এর ছবি

কাজেই সময়োচিত কিছু ফিডব্যাক না পেলে তারা এই চিকিৎসা ব্যবস্থাটাকে নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়েই বিচার করবেন, আপনাদের দৃষ্টিকোণ তো আপনারা তাদের জানার সুযোগই দিচ্ছেন না।

আমাদের দৃষ্টিকোণ তুলে ধরার জন্যই কিন্তু এই পোষ্টটা দিয়েছিলাম।আমাদের ভালোলাগা মন্দ লাগার অনূভুতি জানানোই এই পোষ্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল।এটা কখনই অস্বীকার করার উপায় নেই যে শতভাগ সেবা জঙ্গনের কাছে পৌছানো সম্ভব হচ্ছে না।

আপনার আইডিয়াটা চমৎকার।

তানজিম এর ছবি

চলুক এর উপর কথা নাই।
বিদেশে কাউনসিলিং ছাড়া রোগীর গায়ে হাত পর্যন্ত দেয়া বারণ। এ ক্ষেত্রে আমাদের ৯৯% ডাক্তারের পারফর্মেন্স হতাশাব্যাঞ্জক। তবে কাউনসিলিং এর সাথে সাথে যে জিনিসটা সমান গুরুত্বপূর্ণ তা হোল ডাক্তারের উপর রোগী ও তার লোকজনদের পূর্ণ আস্থা।

ব্যাক্তিগতভাবে আমি দেখেছি, অক্লান্ত পরিশ্রম করে রোগী ভালো করেও মিসকমিউনিকেশনের কারণে রোগীর লোকজন ডাক্তারের উপর টং হয়ে থাকে। আবার সঠিক বোঝাপড়ার কারণে মৃতরোগীর লোকজনও এতো শোকের মাঝে ডাক্তারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলে না।

বিঃদ্রঃ আমাদের মেডিক্যাল কারিকুলামে কাউনসিলিঙের উপর কোন কোর্সও নেই।

হিমু এর ছবি

কারিকুলামে তো একটা আইডিয়াল সারকামস্ট্যান্সকে সামনে রেখে সব পড়ানো হয়, তাই না? বাস্তব তো সবসময়ই একটু অন্যরকম। আমাদের টার্গেট হওয়া উচিত বাস্তব পরিস্থিতি ম্যানেজ করার জন্যে কিছু জিনিস ডেভেলপ করা, যেটা হয়তো এক্সট্রাকারিকুলারই হবে। কিন্তু এই ছোটো ছোটো পরিবর্তনও একটা রিজিড সিস্টেমে ইনট্রোডিউস করা খুব কঠিন, গোটা দুনিয়াতেই। আপনারা যদি নবীন ডাক্তার হিসেবে নিজেরা একা না পারেন, আপনাদের বিশাল সম্ভাব্য রোগী কমিউনিটিকে সাথে নিয়ে চেষ্টা করুন। দুনিয়াটা সবসময়ই পাল্টায় অল্প কিছু মানুষের বড় উদ্যোগের হাত ধরে।

বেশি পণ্ডিতির মতো শোনাচ্ছে বোধহয়, কিন্তু আমি খুব চাই, আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো ভালো হোক। ডাক্তাররা যদি নতুন আইডিয়াগুলোকে নিজেদের মতো করে কাজে লাগাতে না পারেন, আমরা তো যেখানে আছি সেখানেই রয়ে যাবো।

হয়তো আপনি জানেন, তবুও উদাহরণ হিসেবে একটা গল্প শোনাই।

ইগনাজ জেমেলভাইস ছিলেন হাঙ্গেরীয় চিকিৎসক। অস্ট্রোহাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের তখন জমকালো অবস্থা, ইয়োরোপের কলা-বিজ্ঞানের পীঠস্থানগুলোর একটা রাজধানী ভিয়েনা, জেমেলভাইস ভিয়েনার প্রসূতি হাসপাতালে চাকরি নিয়ে আসেন। ভিয়েনার বনেদী লোকজন হাঙ্গেরীয়দের হয় চাষা নয় হুসার (অশ্বারোহী যোদ্ধা) হিসেবেই দেখে অভ্যস্ত, তাই নবাগত জেমেলভাইস সেই হাসপাতালে একজন ক্ষ্যাত হিসেবেই বিবেচিত হলেন শুরু থেকে। কিন্তু জেমেলভাইস ছিলেন খুবই লক্ষ্যনিষ্ঠ চিকিৎসক, তিনি হাসপাতালের প্রসূতিমৃত্যু নিয়ে এক ধাঁধার সমাধান খুঁজতে উঠে পড়ে লাগলেন।

হাসপাতালে দুটো প্রসূতি ওয়ার্ড ছিলো, একটাতে প্রসব করাতেন চিকিৎসকরা, অন্যটায় ধাত্রীরা। ধাত্রীদের ওয়ার্ডে প্রসূতিমৃত্যুর হারের চেয়ে চিকিৎসকদের ওয়ার্ডে প্রসূতিমৃত্যুর হার ছিলো নয়গুণ বেশি। কেন এমনটা হতে পারে, এটা কেউ যেমন বুঝতো না, তেমনই কেউ কেয়ারও করতো না। এবং প্রসূথিমৃত্যু হতো ঘুরেফিরে একই রোগে, যেটাকে এখন আমরা সেপ্টিসিমিয়া বলে চিনি। জেমেলভাইস এই ধাঁধা নিয়ে খুব বিব্রত ছিলেন। বলে রাখা ভালো, তখনও রোগের পেছনে জীবাণুর ভূমিকা নিয়ে লোকে তেমন কিছু জানে না, পাস্তুর সবেমাত্র এ নিয়ে গবেষণা করছেন দূর ফ্রান্সে।

একদিন এক ওয়ার্ডে অটোপ্সি করতে গিয়ে জেমেলভাইসের এক সহকর্মী হাত কেটে ফেললেন। এবং কয়েকদিনের মধ্যে সেপ্টিসিমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেলেন। জেমেলভাইসের মাথায় বাজ পড়লো। তিনি ভেবে দেখলেন, তাই তো, ডাক্তাররা অটোপ্সিতে কাটাকুটি করে হাত না ধুয়েই বাচ্চা প্রসব করাতে চলে যান। ধাত্রীরা তো আর অটোপ্সি করেন না। তবে কি এ কারণেই প্রসূতির মৃত্যু ঘটে?

জেমেলভাইস ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতির ধার ধারলেন না, নিজে বালতি হাতে প্রসূতি ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন, সব ডাক্তারকে হাত ধুইয়ে তবেই প্রসব করানোর কাজে ঢুকিয়ে ছাড়বেন তিনি। তাঁর এই গুণ্ডামির কারণে ডাক্তারদের ওয়ার্ডে প্রসূতিমৃত্যু একেবারে নাটকীয়ভাবে কমে গেলো।

কিন্তু নাকউঁচু ভিয়েনিজ ডাক্তাররা বিরক্ত হলেন জেমেলভাইসের ওপরে। উঠতে বসতে পিছে পিছে এসে হাত ধোয়ায় ব্যাটা, এইসব কী? কেন হাত ধুতে হবে, এই প্রশ্নের বিজ্ঞানোচিত ব্যাখ্যা দিতে পারলেন না জেমেলভাইস। তার সহকর্মীরা আবার হাত না ধুয়েই প্রসব করানো শুরু করলো, এবং আবার প্রসূতিমৃত্যুর হার বেড়ে গেলো। কিন্তু কেউ কেয়ার করে না সেখানে। এবং অবধারিতভাবেই জেমেলভাইসের চাকরির চুক্তি নবায়ন আর হলো না। তিনি ফিরে গেলেন বুদাপেস্টের একটি হাসপাতালে।

সেখানেও তিনি হাসপাতালের সবকিছু কঠোরভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, হাঙ্গেরীর চিকিৎসকরা তাঁর এই আচরণকে ভিয়েনিজ ফুটাঙ্গিরি হিসেবে নিলেন, এবং মহা চটলেন। জেমেলভাইস বদরাগী মানুষ, লোকজনের সাথে কমিউনিকেট করায় বিশেষ কাঁচা ছিলেন, তিনি মানুষজনকে ঝেড়ে একেবারে সাদা করে ফেলতেন। ফলাফল দাঁড়ালো, তার কোনো মিত্র রইলো না, এবং লোকজন তাঁর পরিচ্ছন্নতা আন্দোলনটিকে ল্যাম্পুন করে তাঁর ওপর শোধ নিতে শুরু করলো।

জেমেলভাইস উপায়ান্তর না দেখে একটা বই লিখলেন, সেখানে তিনি কারণ বলতে না পারলেও পর্যবেক্ষণের কথা বিশদ লিকলেন। সেইসাথে ইয়োরোপের সব বড় বড় ডাক্তারকে এক হাত নিলেন। সেই বইয়ের কপি তিনি সেই ডাক্তারদের কাছে পাঠিয়ে তাদের ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করে বকা দিয়ে চিঠি লিখতেন, "আপনার কারণে হাজারো তরুণী মায়ের মৃত্যু ঘটেছে" ধরনের তিরস্কার করে। উদভ্রান্ত জেমেলভাইস বুদাপেস্টের পথে পথে তরুণ যুগলের হাত ধরে বলতেন, তোমরা যদি কখনো সন্তান নাও, তাহলে প্রসবের সময় অবশ্যই ডাক্তারের হাত ভালো করে সাবানজলে ধুইয়ে নিতে ভুলো না।

এর ফল দাঁড়ালো, লোকে তাঁকে পাগল ডাকা শুরু করলো, তাঁর তরুণী স্ত্রীর সাথে তাঁর দূরত্ব বেড়ে গেলো, জেমেলভাইস মদ্যপান আর বেশ্যাগমন শুরু করলেন, এবং গোটা ইয়োরোপের চিকিৎসক সমাজ তাঁর ওপর চটলো।

একদিন তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, চলো ভিয়েনায় যাই বেড়াতে। জেমেলভাইস স্ত্রীর সাথে ভিয়েনা গেলেন। সেখানে তাঁর স্ত্রী তাঁকে এক চিকিৎসক বন্ধুর হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। সেই হাসপাতালে যাওয়ার পর কিছু লোক এসে জেমেলভাইসকে আটক করলো, সেটা আসলে ছিলো উন্মাদশালা। জেমেলভাইসকে শুধু উন্মাদ হিসেবে সেখানে বন্দীই করা হলো না, এক রহস্যময় কারণে কয়েকদিন পর তিনি মারাও গেলেন।

সেপ্টাসিমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে।

তখন জার্নাল তেমন ছিলো না, তাই জেমেলভাইস জানতেন না, পাস্তুর ফ্রান্সে বসে রোগের সাথে জীবাণুর সম্পর্ক বের করে ফেলেছেন। কেউই বোঝেনি, জেমেলভাইস সঠিক ছিলেন।

আজ কিন্তু তাঁকে হাঙ্গেরি আর অস্ট্রিয়া. দুই দেশেই বিপুল সম্মান দেয়া হয়। তাঁর নামে ভিয়েনার সবচেয়ে আধুনিক প্রসূতি হাসপাতালের নামকরণ করা হয়েছে, তাঁর নামে স্ট্যাম্প, কয়েন আছে, মেডিকেল কলেজ আছে, ভাস্কর্য আছে।

ইনিও ডাক্তার। আবার যিনি কিডনি ব্যবসার সাথে জড়িত, তিনিও ডাক্তার। পার্থক্য কোথায়, আমরা জানি। এবং জেমেলভাইসের মতো দুয়েকজন ক্ষ্যাপা পাগল ডাক্তার এগিয়ে না এলে আমরা আস্তে আস্তে আরো ডুববো। আপনাদের মধ্যে কে জেমেলভাইস হতে পারবেন?

আয়ন এর ছবি

সহমত

আয়ন এর ছবি

ইগনাস জেমেলভাইসের ঘটনাটা সংক্ষেপে শুনেছিলাম আমাদের ফরেনসিক মেডিসিনের কাছ থেকে।আজকে আপনার কাছে বিস্তারিত জানলাম।অনেক ভালো লাগল।আসলে আপনাদের ইতিবাচক মনোভাবে আমরা উৎসাহ পাই ভালো কিছু করার।

তানজিম এর ছবি

এই সমাজে ছাপোষা জীবন নিয়ে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মন আজ স্বপ্ন দেখতেও কেমন জানি ভীত হয়ে উঠে। তবুও চাই সুদিন আসুক, হয়ত সেনাপতি নয় সাধারণ সৈন্যদের কাতারে গিয়ে দাঁড়াবার স্বপ্নটা আজো বাঁচিয়ে রেখেছি।

কালো কাক এর ছবি

যে ঘটনার উল্লেখ করলেন এখানে ডাক্তারদের মহত্ত্বটা কোথায় ???

মিস্তিরি হিসেবে আমার কাজের ক্ষেত্রে উদাহরণ দিতে পারি, যদি দেখি কোন মেশিন গড়বড় করছে তখন অবশ্যই হাকডাক দিয়ে / ফোন করে/ লোকজন এনে/নাটবল্টু কিনে/হাতে কালিঝুলি মেখে যেভাবেই হোক ঐ মেশিন ঠিক প্রডাকশানের জন্য রেডি করে দিব। অফিস আওয়ার শেষ/ লাঞ্চ টাইম/ওভারটাইম করসি এই ধরণের কোন অজুহাত তো দেবোনা।

এখন একজন রোগীর কোন সমস্যা (বড় হোক বা ছোট), উপস্থিত ডাক্তারদের তো এটাই দায়িত্ত্ব ঐ সমস্যা সমাধান করা। তারা তাই করেছেন। এখানে অতিরিক্ত কী করা হলো বা মহত্তর কী কাজের উদাহরণ হলো এটা একটু বুঝিয়ে বলেন প্লিজ।

ডালিম কুমার এর ছবি

কাল কাক ভাই বোধহয় ঝোঁকের মাথায় নিজের পেশাটিকে টেনে এনেছেন। ভাই 'মিস্তিরি'দের অফিসআওয়ার এর পর তো দূরে থাক অফিসে বসেই জীবনযাপনের মহত্তম উপকরণটির উপরি ছাড়া কাজ করানো যায় কি?অফিসআওয়ারেই গ্রাহকরা ফোন টোন করে তিনদিনেও এলাকার বিকল বিদ্যুত যন্ত্রটি(ট্রান্সফর্মার হয়তো) দেখাতে আনতে পারে নি।আবুলাধীন মিস্তিরদের কথা আনবো না। রীতির গোলকধাঁধা না দেখিয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে কাজ করে দিয়ে আপনি যে মহত্ত্ব দেখান তার জন্য আপনি তো প্রাতঃস্মরণীয়!

পাঠক এর ছবি

"বিঃদ্রঃ আমি সরকারী মিস্তিরিদের কথা বলছি না", এটা লিখে দেয়া উচিত ছিল।
যাই হোক প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করা মিস্তিরিদের কথা বলছিলাম।
আমি শুধু বলতে চাইলাম যার যা কাজ সে তো করবেই, "আমি আমার কাজটা করসি" এটা হাঁক ছেড়ে বলার কী আছে !

দেশের ডাক্তারদের নিয়ে ভাল অভিজ্ঞতা খুব কম মানুষেরই আছে। এর কারণ হতে পারে মানুষ বেশ বিপর্যস্ত অবস্থায় ডাক্তারের কাছে যায় আর এই অবস্থাটা সামাল দেয়ার মত "ট্রেনিং" ডাক্তারদের নেই। তাদের কাছে ডালভাত হয়ে যাওয়া রোগগুলো সাধারণ মানুষের কাছে দুর্যোগসম। এই ব্যাপারটাই ডাক্তাররা হয়তো বুঝতে চায় না। ("সামাল দেয়ার মত ট্রেনিং" কথাটা বললাম কারণ "how to handle annoyed customer" বকবকানী শুনে আসলাম কিছুক্ষণ আগে। ডাক্তাররা এমন কিছু বিদ্যা কি লাভ করেন?)

আমরা রোগেশোকে বিপর্যস্ত থাকা অবস্থায় ডাক্তারদের নাকমুখঝাড়ি, কিছু ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসা মেনে নিতে রাজী নই। তাদের সমস্যা আছে, সেগুলো সল্ভ করেন, সল্ভ করার উপায় বের করেন। "আমাদের অনেক সমস্যা, তাই আমরা ঝাড়ি দিলে হাসিমুখে খাবেন, ভুল চিকিৎসা করলে লাশ নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি যাবেন" এটা মানতে পারবো না।

ডালিম কুমার এর ছবি

হুম পোস্টে যে ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে( আপনার ভাষায় মহত্ত্ব আরোপের চেষ্টা করা হয়েছে) সেটি একটি সরকারি হাসপাতালের ঘটনা বলেই মনে হয়। তাই আপনি 'সরকারি মিস্তিরিদের কথা বলছি না' বলে যে দায়মুক্তি চাইলেন তাতে করে এখন আমার মনে হচ্ছে সরকারি 'রুদ্রজটা পদ্ধতিকে' বাইপাস করায় তারা কিছুটা 'মহত্ত্বের' দায় এড়াতে পারে না। (যদিও আমি আমার অনেক উপরের কমেন্টে এটি স্বাভাবিক দায়িত্ববোধই বলেছি, এহেন জরুরী ক্ষেত্রে এটাই হওয়া উচিৎ এবং লেখকও আমার দিকে "রে কে আছিস, এ গোমূর্খ আমাদের ছোট করতে চায়" বলে তেড়ে আসেনি )।

আপনার ২য় প্যারার সাথে আমার পূর্ণ সহমত। এ বিষয়টি আমার অনেক আগেই মনে হয়েছে জোরালো করা উচিত ছিল। অমন বিদ্যা লাভ করেন কিনা জানতে চেয়েছেন তার উত্তরে বলি হ্যাঁ, করেন। কর্পোরেট কায়দায় customer care শেখানো না হলেও বেশ কিছু ক্লাস থাকে doc pt relationship, breaking bad news, hospice ইত্যাদি অনেক বিষয়ের উপর।তবে আমার মনে হয় এগুলোর পরিমাণ বাড়ানো উচিৎ অন্তত কমোডের সাইজ, মশারির ফুটার মাপ,trench latrine এইসব বিষয়ে মারাত্মক পেইন কমিয়ে হলেও।(শিক্ষকরা পিএসএম কে anal fissure এর চেয়েও পেইনফুল পর্যায়ে নেওয়ার কৃতিত্ব রেখেছেন)। আপনি মিস্তিরি বলছেন। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই classটি করছেন? বন্ধুদের কেউ কখনো বলেইনি ওদের পাঠ্যক্রমে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত!! বললে দু একটি ক্লাস করতে যাওয়া যেত।আমি বিগত বেশকিছুদিন যাবত নেটে এ নিয়ে topicsগুলো পড়ছি। বেশিরভাগই ব্যবসা সংক্রান্ত ধাপ্পা বলে ভালো কিছু পাই না। আপনার ভালো জানা থাকলে লিংকগুলো শেয়ার করলে অশেষ কৃতজ্ঞ থাকবো।

কিছু ক্ষেত্রে না কোন ক্ষেত্রেই ভুল চিকিৎসা মেনে নিতে রাজী হওয়া উচিৎ নয়। সীমাবদ্ধতা আর ভুল দুই এক নয় কোনভাবেই।সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, রোগীকে সেটা বলে দেয়া উচিৎ। তার যদি সামর্থ্য থাকে সে ওখানে নেবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানেরই সীমাবদ্ধতা থাকলে সেটা অন্য। সেটাও বলে দেয়া ভালো।

তবে আপনি যেমন মানতে চাইছেন না, তাদেরও না মানতে চাওয়ার ব্যাপার থাকতে পারে। অনুমাননির্ভর ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে তুলকালাম করবেন, চেষ্টা বলতে শুধু চিকিৎসকের শয্যাপাশে শারীরিক উপস্থিতিই প্রাধান্য পাবে, স্বজন হারানোর তাৎক্ষনিক অতি আবেগী প্রতিক্রিয়া বলেই মানতে বলবেন(প্রায় সব ক্ষেত্রে মানাও হয়)। গুছিয়ে লেখার মত অবস্থায় আসার পরেও অন্য ক্ষেত্রে প্রচণ্ড যুক্তিবাদী নিজ বিষয়ে প্রখর মেধাবী আপনি অনুমানেই স্থির থাকবেন এবং ব্লগিং করবেন, অন্য পক্ষের মন্তব্য আমলেই আনবেন না, গা বাঁচানো বলে তাচ্ছিল্য করবেন। জানতে চাইবেন না আসলেই সমস্যা কী হয়েছিলো তাহলে কিভাবে আশা করেন শুধু আপনাকেই তারা ভুল বুঝবে না, আপনার অভিযোগে মনযোগী হবে।

ভালো থাকবেন।

কালো কাক এর ছবি

ইশকুল থেকে বের হয়ে গেছি বহু আগেই। যেখানে কামলা দেই তারা শিখায় এগুলা। কারণ কাস্টমার খেপলে "আপনার প্রোডাক্ট বুড়া হইসে, তাই নষ্ট হয়ে গেছে" ফট করে এটা বলে দেয়ার কোন সিস্টেম নাই, ঐসব কাহিনী করে তাকে বুঝানো লাগে যে বুড়া হওয়ার কারণে প্রোডাক্ট ইন্তেকাল করসে, আমার কোন ভুলে না।

আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করিনা ডাক্তার ইচ্ছা করে কোন রোগী মেরে ফেলে। কিন্তু ডাক্তারদেরও এটা বুঝা উচিত স্বজন হারানো / চিকিৎসাপ্রার্থী লোকজনের সাথে কেমন ব্যবহার করা উচিত। ৮০ বছরের মানুষ তো মরবেই, এতে হাউকাউ করার কী আছে- এই ধরণের চিন্তাভাবনা থেকে বের হয়ে আসা দরকার।

আয়ন এর ছবি

যদি দেখি কোন মেশিন গড়বড় করছে তখন অবশ্যই হাকডাক দিয়ে / ফোন করে/ লোকজন এনে/নাটবল্টু কিনে/হাতে কালিঝুলি মেখে যেভাবেই হোক ঐ মেশিন ঠিক প্রডাকশানের জন্য রেডি করে দিব।

ভাই খুব ভলো বলেছেন,আমরা তো মিস্ত্রি ই।। হাততালি

এই লেখায় মহত্ত জাহির করার কোন চেষ্টা ছিল না উলটা দিকে ঘটনা প্রবাহিত করবেন না।

পাঠক_পদ্মজা এর ছবি

ডালিম কুমার এর সঙ্গে সহমত।

ডাক্তারদের কেন মহৎ হতে হবে একটু বুঝিয়ে দেন, দয়া করে। মিস্তিরির কাজ যন্ত্র ঠিক করা। আমাদের কাজ চিকিতসা করা। আমরা তাই করি।
আমরা ঈশ্বর না। তাই সব রোগী বাঁচাতে পারিনা।

একজন রোগী নিয়ে আমাদের কাজ না। রোগীর সাথে বাঙালি নিয়মে কমপক্ষে তিনজন বাড়তি লোক যায়। এদের'কে বোঝানো আমাদের দায়িত্ব। কারন বার্ধক্যজনিত কারনেও যদি ৮০ বছরের রোগী মারা যায়, তখন এই বাড়তি লোকগুলাই "মার শালার ডাক্তাররে, ভাইঙ্গা ফালা হাস্পাতাল" বলে ঝাপিয়ে পড়ে।
আমারা তাই অনেক ধৈর্য্য ধরে কাজ করি। তবু আমরাও মানুষ, আর ডাক্তার বনাম রোগীর অনুপাত ১ঃ৩০০০।

আর হাস্পাতালের একজন 'তথ্য মুখপাত্র' অবশ্যই দরকার। কিছুদিন আগে ATN NEWS এর রিপোর্টার গেছে ICDDRB তে। তাকে নিয়মানুযায়ী 'তথ্য মুখপাত্র'র কাছে পাঠানো হলে, গোপন ক্যামেরা নিয়ে এমন স্টান্টবাজী করলো, যে ভাবখানা এই ICDDRB তাদের তথ্য দিতে চায়নি! সংবাদ মাধ্যম এবং নেতাদের কাছে ডাক্তার'রা জনগণের মনযোগ ঘুরানোর (divert) করার ভাল অস্ত্র।

আমাদের যারা পিণ্ডি চটকান, তাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের মানুষ থাকতে দেন। আমরা মহৎ হতে চাইনা। দয়া করে আমাদের কাজ করতে দেন, হাস্পাতালে 'ফাউ' ভিড় কইরেন না। যান না সংসদে বা সচিবালয়ে গিয়া মর্দানি দেখান, বুঝি বাঙালি বাঘের ছা।

ছুড মুখে অনেক কথা কইলাম 'সুশীলেরা' মাইন্ড খায়েন না।

হিমু এর ছবি

ভিডিও ক্লিপ আছে আপনার কাছে? থাকলে এটা নিয়ে একটা পোস্ট দিতে পারেন তো, আলোচনাসহ। আপনাদের মুখ খুলতে হবে, কথা বলতে হবে, কী চান সেটা জানাতে হবে, কী ডেলিভার করতে পারবেন না, সেটাও জানাতে হবে। আপনাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশা বিরাট, যদি মানুষকে বোঝাতে না পারেন, ভুলবোঝাবুঝি বাড়বে তো।

হারিকেন  এর ছবি

সরকারী হাসপাতালের চাকুরীতে ডাক্তারদের বেতন কম, রোগীর অনুপাতে ডাক্তার কম ..........সত‍্য বটে। তাই বলে লুলু কসাই হতে হবে?? জানি সরকারী হাসপাতালে ডাক্তাররা সাধ‍্যমত চেষ্টা করেন, কিছু ভুল চিকিৎসার ঘটনাও ঘটে। ২/৪ টা রোগী মারতে না পারলে ডাক্তার কেমনে ডাক্তার হইল!
কিন্তু বেসরকারী হাসপাতালে রোগী যে সার্ভিসটা পাওয়ার জন‍্য উচ্চমাত্রায় টাকা খরচ করছেন, তার কাছাকাছি মানের সার্ভিস চাওয়াটা দোষের নয়। সব ডাক্তার না হলেও, অনেক ডাক্তারই টাকার নেশায় উন্মত্ত ও বিবেকহীন হয়ে যাচ্ছে। সম্ভবত ডাক্তারী শিক্ষাব‍্যবস্থায় গুণগত মানের পরিবর্তন দরকার।
---
হারিকেন

পাঠক_পদ্মজা এর ছবি

ও ভাই হারিকেন, প্রাইভেট হাসপাতাল এত্তো ভালো, তাইলে ভুল চিকিতসার অভিযোগে ল্যাব এইড, ইবনে সিনা, এপোলো (নায়ক মান্না'র ঘটনা স্মর্তব্য) এদের গালি গালাজ করেন কেন?

আর ভীম্রুল থুক্কু কাম্রুল ভাই, ডাক্তার সম্প্রদায়ের প্রতি আর কত বিষোদগার করবেন!

বাংলাদেশ একটা গরীব দেশ, সরকার চাইলেও সরকারী হাস্পাতালে অনেক সুবিধা দিতে পারেনা। আর এই জন্যে আমরা যদি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকি, অথবা এথিক্স অনুযায়ী অর্থোডক্স চিকিতসা করি ... আল্লাহ মাফ করুক, আমরা অনেক হ্যাপা থেকে বেঁচে যাবো কিন্তু সাধারন মানুষ চিকিতসা পাবেনা। একটা নমুনা দেই ... ওটি লাইট ছাড়া কি অপারেশন হয়? অসম্ভব। উপজেলায় সরকারী 'কসাই'রা মানুষের জন্য বিনা পয়সায় তাও করেন, টিউব লাইটের আলোয় অপারেশন। ঝামেলা হইলে দোষ শালা কসাইয়ের! লজিস্টিক এই মানে ওটির বাত্তি, অক্সিজেন, আম্বু ব্যাগ হেনতেন কি ডাক্তার ব্যাগে লইয়া আসবে?

ভাই উত্তমকুমারের মত ডাক্তার সিনেমায় ভালু লাগে।
বাস্তবে যান শত সীমাবদ্ধতায় একটা প্রাণ বাচান, দেখেন কি ঠ্যালা!

হারিকেন এর ছবি

ভাই পাঠক_পদ্মজা, আমি কি কইছি প্রাইভেট হাসপাতাল ভালো? কইছিলাম ওখানে বেশি টাকা দিয়েও রোগীরা ভালো মানের সার্ভিস পাচেছন না।

পাঠক_পদ্মজা এর ছবি

কাম্রুল ভাইরে একডা কথা জিগাই... ভাইজান কি ব্যাক্তি মালিকানাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন?
আমরা তো সেই ছোটকাল থেকে নিজস্ব মেধার জোরে সব পার হয়ে আসছি তাই নোংরা বিষোদ্গার করার আগে একবার চিন্তা করি।

KamrulHasan এর ছবি

আপনাদের মেধাকে সালাম। আপনারা এতোই মেধাবী যে বুঝতেও পারেন নি যে, যেব্যাক্তি নিজেকে মিস্ত্রি বলেছেন তিনি তার চেয়েও বেশী কিছু হতে পারেন।

নাম নিয়ে পার্সোনাল এটাক করেন কেন? সুতীক্ষ্ণ মেধাতে আর কিছু কুলাচ্ছে না? রাগে মাথা আউলাইয়া যাচ্ছে? Dormicum try করতে পারেন। অনেকেই তো অভ্যস্থ। ইয়ে, মানে...

আর আমি? পুরাই ইল্লিলিটারেট। সত্যি।

KamrulHasan এর ছবি

পেত্নীজী আফা, আমি হইলামগিয়া আফনের কমপ্লিডলি ইল্লিটারেইড।

হিমু এর ছবি

প্রবল ভুরুঙ্গামারামারি চলতেছে দেখি। ভায়েরা আমার, শান্ত হন।

ডাক্তাররা চিকিৎসার্থীদের কাছ থেকে কী চান, জানতে পারলাম না এখনও। আপনারা একটা লিস্ট করেন, যে এইসব জিনিস চিকিৎসার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া গেলে আপনারা তাদের মনোবেদনা বহুলাংশে কমিয়ে আনতে পারবেন।

এরপর আমরা, যারা বর্তমান আর হবু রোগী, তারা একটা লিস্ট করি, যে ডাক্তারদের কাছ থেকে আমরা কী চাই। দেখি কোন কোন পয়েন্টে মতানৈক্য কম, কোন কোন পয়েন্টে বেশি।

সাদাকালো এর ছবি

ডাক্তাররা সরকারের কাছে কি কি সুযোগ-সুবিধা চায় (যেমনঃ তারা কত বেতন চায়, তারা উপজেলায় থাকতে চায় কিনা, তাদের প্রাইভেট প্রাকটিসের সময় বাড়ানো উচিত কিনা ইত্যদি ইত্যাদি) এগুলোও জানা দরকার।

পুতুল এর ছবি

ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল-ব্যারিষ্টার সমাজের একটা বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত শ্রেনী থেকে আসে। এরাই পড়ালেখা শেষে যে যার ক্ষেত্রে কাজ করে। প্রাতিষ্ঠানিক দূরবস্থা টিকিয়ে রাখে। যেখানে দূরবস্থা না থাকে সেখানে নতুন করে তৈরী করে। মেধা এবং আর্থিক সংগতি থাকায় ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল-ব্যারিষ্টার পরষ্পরের কাছ থেকে উপযুক্ত সেবা আদায় করতে পারে।
এর পরে আসে আর্থিক সংগতি আছে কিন্তু মাথায় ঐ বিষয় পড়ার মতো ঘিলু না থাকায় রাজনিতী করা শ্রেনী। পেশী-অর্থ-আর ক্ষমতার বলে এরাও তথাকথিক বুদ্ধিজীবিদের কাছ থেকে সেবা আদায় করতে পারে।

বাকী থাকে আমাদের মতো সাধারণ জনগন। আমরা পরমপূজা করেও ঐ তথাকথিত বুদ্ধিজীবি শ্রেনীর মন গলাতে পারি না। আমাদের ফিরে যেতে হয় মসজিদে-মন্দিরে পাণ্ডা আর পীরের খোঁজে।

আমাদের কথা চিন্তা করে আমাদের দেশের কোন সরকারী-বেসরকারী বা দাতব্য প্রতিষ্ঠান তৈরী হয় নি। যেখানে টেক্স এবং উপযুক্ত দাক্ষিণ্য দিয়েও সেবা পায় না, সেখানে আমাদের মতো আম জনতার কথা চিন্তা করবে কে!

আপনাদের আলোচনা উপভোগ করছি।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

কল্যাণF এর ছবি

রোগী হিসাবে আমি চাই অসুখের নিরাময় আর
* আমার সমস্যার কথা মনযোগ দিয়ে শোনা হোক।
* সঠিক, পরিস্কার ও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা-পরামর্শ-ব্যাবস্থাপত্র দেয়া হোক।
* আমাকে পরিস্কার করে জানাতে হবে আমার কি সমস্যা, সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্তি পাব, আমার সমস্যার সাথে আর কি কি জটিলতা যুক্ত আছে, কোন কোন বিষয়ে আমাকে এখন সতর্ক থাকতে হবে, সম্ভাব্য কতদিনে রোগ নিরাময় হবে, না হলে পরবর্তিতে কি করতে হবে বা কোথায় যেতে হবে।
* চিকিৎসায় সর্বমোট কত টাকা খরচ হবে তার গ্রহনযোগ্য পরিমান, যেন আমি সময়মত টাকা পয়সা ম্যানেজ করতে পারি।
* কোথায় টেস্ট করালে ভাল হবে তার (সৎ)পরামর্শ।
* চিকিৎসাধীন অবস্থায় কেস হঠাত খারাপ হয়ে গেলে কার সাথে প্রথম যোগাযোগ করব বা কোথায় যাব।
* টানাটানি যখন মানুষের জীবন নিয়ে হচ্ছে তখন সেখানে এই সব কিছু পেশাদারি মনভাবের সাথে ও সততার সাথে সার্ভিস হিসাবে দেয়া হোক। এর জন্য যেটা উপযুক্ত সেটা মূল্য হিসাবে নেয়া হোক। আমি মূল্য পরিশোধে অক্ষম হলে সরাসরি জানিয়ে দেয়া হোক আমাকে সার্ভিস দেয়া যাবে কিনা।
* আমার উপর নতুন আসা ওষুধের ইচ্ছাকৃত পরীক্ষা না চালানো হোক।
* আমাকে যখন ঠকান হবে তখন শুধু ঝাড়ি ঝূড়ি না মেরে আমার কথা শোনা হোক এবং প্রতিকার করা হোক।

কালো কাক এর ছবি

ঠিক ঠিক। এখন ডাক্তাররা বলেন এইগুলা দিতে আপনাদের অসুবিধা কোথায়?

কদিন আগে মায়ের কোলেস্টেরল বেশি বলেছে ডাক্তার। কিন্তু কী বেশি কতটুকু বেশি কী করতে হবে কিচ্ছু বলেনি। মা ডাক্তারকে "..... সমস্যাটার জন্য কোন ওষুধটা দিলেন" প্রশ্ন করে ঝাড়ি খেলেন "ডাক্তারকে এত কথা জিজ্ঞেস করতে হয়না।"
সেই প্রেস্ক্রিপশান/ টেস্ট রিপোর্ট থেকে এখন আমি গুগল করে করে দেখতেসি কোলেস্টেরলের রেঞ্জ, কোন স্টেপে কী করতে হয়, কোন ওষুধ কোন রোগে দেয়া হয় (এবং কিছুই বুঝতেসিনা ,কনফিউসড হচ্ছি)।

ডাক্তার হয়ত ভাবছেন -যে অষুধ দেয়ার দরকার দিসি, কোনটা কেন দিসি রোগীকে বলার দরকার কী। কিন্তু রোগবালাই নিরাময় অনেকটাই নির্ভর করে মানসিক শান্তির উপর। জানিনা ডাক্তার সাহেবরা এটা মানেন কীনা। তারা ঐ বয়স হইসে রোগ তো হবেই, ৮০ বছর হইসে মরবেই তো, আমরা জান বাঁচাতে পারিনা - এইসব ধরে নিয়ে আমাদের ইচ্ছামত ঝাড়ার জন্য বসে আছে।

আয়ন এর ছবি

এখানে একটা কথা বলি,একসময় আমারও প্রশ্ন ছিল ডাক্তাররা কোন ওষুধ,রোগের কি প্যথলজি জিজ্ঞেস করলে মুখ কুলুপ এটে বসে থাকেন কেন।

ব্যপারটা আসলে এক্ষেত্রে অন্যরকম,একজন রোগীর অসুখের তীব্রতা একজন ডাক্তারই ভালো বুঝতে পারেন।এখন তিনি যদি সব কমপ্লিকেশন আর ছোটখাট রিস্ক ফ্যাক্টর গুলো রোগীকে বলে দেন তাহলে রোগীর সাইকোলজিতে সেটা প্রভাব ফেলবে

উদাহরণ হিসেবে বলি,একজন হাইপারটেনশনের রোগীকে বাধ্যতামূলক ভাবে ওষুধ খেতেই হবে আর প্রত্যেক রোগীকেই তিনি যদি বলেন এই ওষুধ খাওয়ার পর আপনার নিম্নোক্ত সাইড এফেক্ট হতে পারে

১।শুকনো কাশি
২।এনজিও ওডেমা
৩।হাইপারক্যালেমিয়া
৪।স্কিন র‌্যাশ
৫।মাথা ব্যথা
ইত্যাদি.........ইত্যাদি

এতো কিছু শোনার পর রোগী কি আর ঐ ওষুধ খেতে চাইবে??
এক্ষেত্রে ডাক্তারের য করণীয় সেটা হচ্ছে রোগীর হিস্ট্রি ভালোভাবে নিয়ে তার জন্য কন্ট্রাইন্ডিকেটেড ড্রাগ গুলা বাদ দেয়া।এটা ডাক্তারের কর্তব্য,রোগীর এই নিয়ে না চিন্তা করলেও চলবে

আর প্যথলজির বিষয়টা তো আরো ভয়ংকর।রোগ কিভাবে হয়েছে এটা বোঝাতে গেলে তো আর রোগীরা চিকিতসা পাবেনা।আর এটা বোঝানোও কঠিন,তবে ডাক্তার এখানে রোগীর বোধগম্য করে একটা ব্রিফ দিতে পারেন।

KamrulHasan এর ছবি

ফালতু কথা। আজ কাল মানুষ অনেক কিছুই বোঝে এবং মানুষের জানার অধিকার আছে।

রোগীর হিস্ট্রি নিয়া কয়টা ডাক্তার কতক্ষন মাথা ঘামায়? আমার নিজেরই উদাহরন দিই। বুকে ব্যাথা নিয়া গেছিলাম জাপান ফেরত এক কার্ডিওর কাছে। ব্যাডায় জাপানে থাইকা আইসা পুরা জাপানী স্টাইল লয়। চোখের দুই কোনা ভাজ কইরা ব্যাডা এমুন সুন্দর কইরা হাসে মনে হয় পুরাই জাপানী। ব্যাডার হাইট ও ওই রকম পাচ ফিট চাইর ইঞ্চি। ভালই লাগছিল, খারাপ কমুনা। অরে দেইখা আমার এক চাকমা বন্ধুর কথা মনে আসছিল। বেশ বন্ধু সুলভ।

তো ইসিজি মিসিজি করাইল। করাইয়া কয়, নাহ হার্টের কোন সমস্যা নাই। এত অল্প বয়োসে কিছু হয় নাই। কইল ডাম্বেল টাম্বেল দিয়া আঘাত লাগতে পারে। তো বুকের মাংস পেশিরও এক্সরে করাইলো। কিসের কি তাতেও কিছু পাইলো না। পরে কইল এমনি এমনি ঠিক হইয়া যাইব। ঠান্ডা টান্ডার কারনে হইতে পারে।

এক বারের জন্যও কইল না - গ্যাস্ট্রোএন্টেরো রে দেখান।

তো রোগের হিস্ট্রি নিয়া রুগীর চাইতে বেশী কন্সার্ন কে হইতে পারে?

যাই হোক, ইসিজি নিয়া কিছু কথা শেয়ার করতে খুব মন চাইতেছে। তো ঘটনা হইল এই রকম, ইসিজি রুমে গেলাম। ইসিজি রুমে যাইয়া দেখি অল্প বয়োসী সুন্দরী এক টেকনি। তো সে আমারে কয় শার্ট খুলেন। আমিকি বেটি ছাওয়াল নি? মাসুদ রানার মতো পাকানো পেশি দেখাইতে লজ্জা কি? খুললাম! কয় বেডের উপরে হুইয়া পরতে। এইবার ভয় পাইলাম। যাই হোক আল্লার নামে হুইলাম। সেই সুন্দরী টেকনি দেহি কি কি সব লাগায় আমার বুকের এই খানে ওই খানে। কেউ ঘুসি টুসি মারলে সহ্য করতে পারি কিন্তু সুরসুরি দিলে তো আর সহ্য হয় না! যাই হোক বহুত কষ্টে তাও সহ্য করার চেষ্টা করতে লাগলাম। এহেনাবস্থায় সেই টেকনীর দিকে তাকাইয়া দেহি ফিচিত ফিচিত হাসি দেয়। এমুউউন মেজাজ খারাপ হইছিল না, মনে হইতেছিল ভীম্রুলের হূলটা পুরাই ফুটাইয়া দেই। হাইসেন না কইলাম। মন খারাপ

বিঃদ্রঃ আজ নতুন না, বহুকাল আগে থেকেই যেসব মেয়েরা আমাকে ভয় পেত তারা আমাকে ভীম্রুল বলে ডাকত। আই কাইন্ডা এঞ্জায় ইট। চোখ টিপি

কল্যাণF এর ছবি

অয়ন আমি মনে করি বোধগম্য ব্রীফিং সার্ভিসের সাথে আমার পাওয়া উচিত। আপনার কথা ধরেই বলি, ওষুধের ১০টা সাইড এফেক্ট থাকতে পারে, তারমধ্যে কোনটা হয়ত ইগ্নোর করতে পারি, আবার কোনটাতো সিরিয়াস হতে পারে যে আমার সাথে সাথে ডাক্তার কে জানানো উচিত, নাকি? নাকি ওষুধের সাইড এফেক্ট যত গুলা আছে সব আমার মাঝে দেখা যাবে? আর কোন মারাত্মক সাইড এফেক্ট না থাকলে সোজা বললেই হয় ওষুধ খাওয়ার পর এই এই রকম হতে পারে ইগ্নর করবেন, দুই সপ্তাহ (বা যেটাই হোক) পরে চলে যাবে। আবার ধরেন হাইপার টেনশনের বাধ্যতামূলক যে ওষুধের জন্য শুকনা কাশি সাইড এফেক্ট সে ওষুধ খাই আমি, এখন ছয় মাস ধরে আমার শুকনা কাশি চলতেছে এটা কি স্বাভাবিক ধরব? নাকি ডাক্তারের কাছে যাব?

দয়া করে একটা জিনিস বলেন, ডাক্তাররা কি অনুমান ভিত্তিক চিকিৎসা করে ও অনুমানে ওষুধ দেয়? নাকি রোগ আইডেন্টিফাই করে চিকিৎসা করে? যদি রোগ আইডেন্টিফাই করতে পারেন তাহলে তার ইমপ্লিকেশন ও পরবর্তী করনীয় সম্পর্কে কেন ব্রীফ করা যাবে না?

চরম উদাস এর ছবি

* সুন্দরী নার্স দেয়া হোক ইয়ে, মানে...

কল্যাণF এর ছবি

রুগীর মানসিক অবস্থার উন্নতি ঠিক রাখতে সাহিত্যিক-২,৩,৪,৫...দ্রুতবেগে আসতে থাকুক, সেইসাথে জগাখিচুড়ি আবার শুরু হোক।

KamrulHasan এর ছবি

গুরু গুরু

তানজিম এর ছবি

সার্জারি আউটডোরে খৎনার সময় থাকা বাধ্যতামূলক চোখ টিপি

পাঠক_পদ্মজা এর ছবি

১) রোগী কাউন্সেলিং করার জন্য প্রফেশনাল নিয়োগ দেয়া হোক।
২) আমাদের দেশে রোগীর সঙ্গে উটকো লোক যারা ফাউ ভীড় করে তাদের কন্ট্রোল করতে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যাবস্থা বাড়ানো হোক।
৩) BMDC কে শক্তিশালী করতে হবে, যেন উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া 'ভুল চিকিতসা' আখ্যায়িত করে, অবৈধ উদ্দেশ্যে ডাক্তারদের অপদস্থ করা যাবেনা।

আপাতত এই বললাম।

আমাদের কাজ করতে দেন। মানুষ থাকতে দেন।

শমশের এর ছবি

পোস্টটি অগোছালো ছিল, প্রথমদিকের মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যগুলোও গতানুগতিক ডাক্তার সমাজের পিন্ডি চটকানো আর আবেগতাড়িত প্রতিক্রিয়া নির্ভর ছিল। পোস্টটিতে হিমুর একটি মন্তব্যের পর কিছুটা গঠনমূলক আলোচনার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এজন্য নিজের কিছু চিন্তা শেয়ার করার ইচ্ছা হল। আমার বাংলা টাইপিং অত্যন্ত ধীরগতির, অনেকগুলো বিষয় আলোচনায় আনার ইচ্ছা আছে। হয়ত একবারে পারবনা, তবে মন্তব্যগুলো অনুসরণ করে পরেও আলোচনা করতে পারি।
প্রথমেই দুইটা ডিসক্লেইমার দিয়ে রাখি;
১। বহুদিন (একযুগেরও বেশি হবে বাংলায় ফরমাল এপ্লিকেশন আর চাকরির বিধিমালা ইত্যাদি ছাড়া) বাংলায় কিছু লেখা হয়নি তাই মাঝেমধ্যে দু-চারটা ইংরেজি শব্দ চলে আসতে পারে। যথাসাধ্য চেষ্ঠা করব পরিহার করার, তবে তাতেও হয়ত রসভঙ্গ হতে পারে, অ্প্রচলিত শব্দ-ভারাক্রান্ত হয়ে।
২। নিজে চিকিৎসক সমাজের অন্তর্ভুক্ত। তাই ‍‌'কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট' (বাংলা প্রতিশব্দ জানিনা) চলে আসতে পারে, তবুও চেষ্টা থাকবে নিরপেক্ষ একটা অবস্থান থেকে সার্বিক চিকিৎসাসেবার বিদ্যমান অব্যবস্থাপনা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনার জন্য কিছু বিষয় তুলে ধরার। স্বনামে দায়িত্ব নিয়ে নিজের চিন্তাগুলো শেয়ার করছি। সমালোচনা করতে চাইলে স্বাগতম। বিষয়ভিত্তিক সুস্থ সমালোচনা করুন। বেনামে, উড়ো, গোষ্ঠি-বিদ্বেষমূলক কুৎসা করতে চাইলে দয়া করে 'দূরে গিয়া করেন'।

পাঠক_পদ্মজার সূত্র ধরে শুরু করি;
১) রোগী কাউন্সেলিং করার জন্য প্রফেশনাল নিয়োগ দেয়া হোক। (মন্তব্য হাইলাইট করতে পারিনা)
রোগী কাউন্সেলিং করা চিকিৎসকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, তার জন্য কিরকম প্রফেশনাল নিয়োগ দিবেন। একজন চিকিৎসক কি বুঝে চিকিৎসা দিলেন তা সেই প্রফেশনালকে কে বুঝাবে। সে বুঝলেও রোগিকে বুঝাইতে গিয়া যে আরও প্যাঁচ লাগাবে না তার নিশ্চয়তা কি? সহজ ভাবে চিন্তা করেন, রোগিকে তার সমস্যাগুলো ডাক্তার নিজে বুঝালে সে যেটুকু আশ্বস্ত হবে, আর একজন বুঝালে সেই নির্ভরতা পাবে?
চিকিৎসকদের নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয় এটা যেমন সত্যি, তেমনি তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি আছে; বিশেষত: রোগিদের সাথে আচরন বিষয়ক তা বেদনাদায়কভাবে হলেও বহুলাংশে সত্যি। আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলোও যদি বলি এমন অনেক উদাহরন দেয়া যাবে। কিন্তু অবশ্যই তারজন্য আমি সমগ্র ডাক্তার সমাজকেই দায়ী করবনা। কারও ব্যক্তিগত আচরনের জন্য আমি, আপনি কিংবা অন্য কেউ কেন দায়িত্ব নিব?

এখন অন্যদিকটা একটু বিবেচনা করি। রোগিকে কাউন্সেলিং করতে হবে, সম্ভব হলে রোগির এটেনডেন্টকেও (ক্রিটিক্যাল রোগী হলে অবশ্যই)। কিন্ত কতজনকে; এক, দুই, তিন ‌‌‌------------- ? সরকারী হাসপাতালগুলোতে সমস্যাটা মূলত হয় এইখানে। আপনি খুব যত্ন করে একজন - দুইজনকে ব্রিফ করতে পারবেন কিন্তু সংখ্যাটা অসীম হলে? মহামানব‍-মানবী না হলে সমান ধৈর্য্য নিয়ে সেটা করা কারোর পক্ষে সম্ভব না। ফলাফল হল আপনি যত আন্তরিকই থাকেন সবাই সন্তুষ্ট হবেনা।
আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হচ্ছে জাতি হিসাবে আমরা অত্যন্ত অত্যন্ত আবিনয়ী। বাইরে দেখেছি মানুষ নিজের কাজটাকে দায়িত্ব মনে করেই করে, শুধু করতে হয় তাই করেনা। কেউ সামান্য একটু সাহায্য করলে ধন্যবাদ দেয়। এমনকি নিজের স্বাভাবিক কাজটুকু করলেও, লোকজন ধন্যবাদ দেয়, শুভেচ্ছা বিনিময় করে। বাংলাদেশে আমরা সবাই নিজেদের শ্রেষ্ঠ ভাবি আর অপরকে তুচ্ছ। নিজের দায়িত্ব পালন করলে ভাবি করুনা করছি। আমি আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে কোন অফিসে (পূর্ব পরিচিত বা রেফারেন্স ছাড়া) ভাল ব্যবহার পাওয়ার কথা মনে করতে পারিনা। এটা সরকারী অফিসের পিয়ন থেকে, স্মার্ট কর্পোরেট কর্মকর্তা সবাইকে ধরেই বলছি।
স্বভাবতই চিকিৎসক সমাজ এর বাইরে নয়। একজন ডাক্তার আপনাদের কারোরই ভাই-বোন, মামা-চাচা, খালা-ফুপু, আত্মীয়-স্বজন। বিশেষত প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের ব্যাপক প্রসারের পর এমন পরিবার কমই আছে যাদের নিকটআত্মীয়দের মধ্যে একজন ডাক্তার নাই। আমি আমার জীবনে নিজে যেকয়টা রোগী চিকি্ৎসা করেছি তার কমপক্ষে একশ গুন রোগীকে বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে (হাসপাতালে বা চেম্বারে) দেখাতে নিয়ে গেছি। আমি যখন নিজের বিবেচনায় ডাক্তার পছন্দ করি তখন তার পেশাগত সুনামের চেয়ে তার আচরনগত সুনামকেই প্রাধান্য দেই। যখন লোকজনের বিশেষ চাপাচাপিতে অনেক অনেক বড় ডাক্তারের চেম্বারে গেছি, তখন অনেক সময় নিজেরই খারাপ লাগত। (উল্লেখ্য নিজের শহরে প্রায় সকলেই চিনত, কিন্তু ঢাকায় পূর্বপরিচিত না হলে ভুলেও পরিচয় দিতাম না)।
এই আচরনগত সমস্যার সমাধান কি হতে পারে?
১। প্রাইভেট চেম্বারের জন্য কোন অজুহাত দেয়ার সুযোগ নাই। যে রোগী পয়সা খরচ করে আপনার চেম্বারে দেখাতে আসে, তার পূর্ণ অধিকার আছে আপনার কাছ থেকে সু্ন্দর ব্যবহার পাওয়ার। আপনি সময় কম হলেও তার পিঠে হাত বুলিয়ে হোক, মিষ্টি হাসি দিয়ে হোক তাকে সন্তুষ্ট করতে হবে। এইখানে এথিকসের প্রশ্নের চেয়েও বড় প্রশ্ন ব্যবসার। আপনি যতই মহত্ত্বের বুলি কপচান মোটাদাগে এটা একটা ব্যবসা এবং আপনি যদি আপনার ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করতে না পারেন তবে সে অন্যখানে যাবে। দেশে না হলে বিদেশে যাবে (কারন আমাদের পার্শ্ববর্তি দেশের একটা আগ্রাসী বাজার আছে আমাদের দেশে। মুখে মধু ভরা দালালরাও আছে। যদিও সেখানে আরও বড় বাঁশ খেয়ে আসলেও আপনাকে বলবেনা, কারন ওনারা বাঁশ দেয়ার আগে পর্যাপ্ত জাইলোকেন জেলী দিয়ে নেন।)
আপনি প্রয়োজন হলে ফি বাড়ান, রোগীর সংখ্যা কমান। আখেরে লাভ কিন্তু আপনারই।
আর রোগীদের জন্যও বলি ভাই, ছোটখাট ডাক্তারদেরও একটুখানি সম্মান দেন। কিছু হইতে না হইতেই লম্বা লেজওয়ালা (এর মধ্যে কিছু ভুয়াও আছে, ঢাকা শহরেই) ডাক্তারদের চেম্বারে লাইন দেওয়ার আগে পাড়ার ছোট ডাক্তারটারে একটু দেখান। এমবিবিএস পাশ করতে যথেষ্ঠই পড়াশোনা করা লাগে (কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে)। তাদেরকে একটু আস্থায় নিয়া দেখেন। সবাইরে প্রমান পাওয়ার আগেই কসাই ভাইবেন না। বিপদে-আপদে যেমন তারে পাইবেন, নিতান্ত পাষন্ড না হইলে পাড়ার লোকরে জবাই করব না। স্পেশালিস্ট ডাক্তার দেখানোর আগে তার চিকিৎসা নেন, না হলে কোন স্পশালিটির কাছে যাবেন তার পরামর্শ নেন। বাংলাদেশে অন্তত আমার বি্শ্বাস ঠিকমত রেফারেল সিস্টেম চালু করতে পারলে এই সমস্যা শতকরা আশিভাগ সমাধান হয়ে যাবে।

সরকারী হাসপাতালের ব্যাপারটা একটু জটিল, লিখতে অনেক সময় লাগবে। আশা করি কাল পরশুর মধ্যে একটু আপডেট করতে পারব।

পাঠক_পদ্মজা এর ছবি

৪১ এবং ৪৩ নং মন্তব্যের প্রতি মনযোগ আকর্ষন করছি।

পারিবারিক বা ব্যক্তিগত রাগে ডাক্তার সম্প্রদায়ের ওপর যাদের রাগ, তাদের শান্তি কামনা করছি।

KamrulHasan এর ছবি

৪১ নং টা এখন ৪২ হবে। হয়তো পরে আবারো তা চেঞ্জ হয়ে যাবে উপরে অন্য কেউ প্রতিমন্তব্য করলে। তো সেখানে কি আমি খুবই বাজে কিছু বলেছি? বাংলাদেশের মতো একটা গরীব দেশে বেতন-স্কেল কি কোথাকার কোন ছেলেপেলের বাজার কেএফসির সাথে তুলনা করে হবে? আর অদ্ভূত কিছু প্রাসঙ্গিক শব্দের জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু, শুধু আপনাদের কলেজেরই না এমন কি বিসিএস এর প্রশ্নপত্র নিয়েও এদেশে কি হয় তা তো কারো জানতে বাকী নাই। এজন্যই তো আমাদের মন্ত্রী মিনিস্টার আর তাদের সচিবরা এমন সুদক্ষ। যাহোক, ব্যাক্তিবিশেষের উপরে আমার রাগ থাকলেও পুরা সম্প্রদায়ের উপরে তা ঝাড়ার মতো স্থুল মানষিকতা আমি কখনই পোষন করি না।

এখন কথা হলো উপরের কোন মন্তব্য আপনার মননে বা কাজে কোন প্রকার বাধা সৃষ্টি করলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু জেনে রাখেন যে, এখানকার কোন মন্তব্য বা কোন লিস্ট কোথাও কোন পরিবর্তন বয়ে আনবেনা। যাকিছু যেভাবে চলছিল সেসব কিছুই সেভাবেই চলতে থাকবে। আর এভাবে কোন লিস্ট নতুন করে করার প্রয়োজনও নেই। কোথাও না কোথাও এরকম লিস্ট ইতিমধ্যেই করা আছে। একই হুইল রিইনভেন্ট করার তো কোন মানে হয় না। সুতরাং এগুলো পড়ে এগুলোকে সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নাই।

আমি জেনেছি এটাই বাংলাদেশ। জাতীয় সংগীতে যা কিছু গাওয়া হয় তা শতাধিক বছর আগের কোন এক বুড়া লোকের কথা। যার কোনটাই সত্য নয়। তাই একটু উল্টা পাল্টা উদাসিনতা আরকি।

তো সামগ্রীক ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আসুক বা না আসুক এই আলোচনার সুযোগে আপনাদের একটা সবিনয় অনুরোধ জানাই। তা হলো, রোগীর সাথে আসা লোকজনকে দয়া করে উটকো বলবেন না। আপনারা তো রাউন্ডে থাকেন ক্ষনকাল মাত্র। তার পরে যারা থেকে যায় তারা কর্মভারে ভারাক্রান্ত কর্কশ ভাষীনি মধ্যবয়সী এক দল নার্স। যারা এক রুগীর পেনিসিলিন দেয় আর এক রুগীকে আর আরেক রুগীর প্যারাসিটামল দেয় আরো অন্য কাউকে। তাদের কাছ থেকে এক গ্লাস পানি আশা করাও বৃথা। রোগীর সাথে যদি আপনাদের এই উটকো কেঊ না আসে তাহলে সে রোগী রোগে না মারা পড়লেও পিপাসায় মারা পড়বে নির্ঘাত। সো, আপনাদের আচরনে আর একটু উদারতা প্রার্থনীয়।

আপনাদের আলোচনায় স্থান দেওয়ার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

শমশের এর ছবি

সরকারী হাসপাতালের রোগীদের এটেনডেন্ট নিয়ে ডাক্তার-সেবাপ্রার্থীর দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য আছে, যা উপরের আর নিচের দুটি মন্তব্য দেখলেই পরিস্কার বোঝা যায়। যার যার অবস্থান থেকে দুইটাই সঠিক। একটু বাস্তবতার দিকে তাকাই:

১। রোগীর সাথে এক-দুই জন এটেনডেন্ট থাকলে আমার মনে হয়না, সরকারী হাসপাতালে কোন ডাক্তার সেটাতে খুব আপত্তি করবে। আমাদের দেশের বাস্তবতায় কোন এটেনডেন্ট না থাকাটা আরো বেশী সমস্যার। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ঔষধ ও খুবই প্রয়োজনীয় জিনিসের (সিরিঞ্জ, ক্যানুলা ইত্যাদি) সরকারী যে সাপ্লাই থাকে তা নিতান্তই অপ্রতুল। বিশেষত বিকালের আর রাতের শিফটে কাজ করলে ধরে নিতে হবে সাপ্লাই নেই। জিনিসগুলো বাইরে থেকে আনাতে হলে রোগীর এটেনডেন্ট না থাকলে আপনি একেবারে অসহায়। এখন বলতে পারেন নেই কেন, আপনারা ম্যানেজ করেন না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে দশটা পোষ্ট মিলে আলোচনা করলেও কোন সমাধান হবেনা। ধরে নেন বাংলাদেশের রাজনীতি-অর্থনীতির বাদবাকী সমস্যা মিটলে সেটা আপনাআপনি মিটে যাবে। এছাড়াও রোগীর সেবা-শুশ্রূষা থেকে শুরু করে নানান কাজে ন্যূনতম একটা এটেনডেন্ট থাকা জরূরী।

২। তাহলে এটেনডেন্ট নিয়ে ডাক্তারদের সমস্যাটা কোথায়?
প্রথমত: সংখ্যায়। এক রোগীর সাথে দশজন মানুষ থাকলে ডাক্তার রোগীর থেকে তার এটেনডেন্ট ম্যানেজ করা নিয়ে বেশী উদ্বিগ্ন হবেন, তার মনসংযোগ নষ্ট হবে এবং সবচেয়ে গুরুত্মপূর্ণ ব্যাপার তিনি যেহেতু মহামানব নন তাই তার মেজাজ খারাপ হবে। এর প্রভাব পড়বে তার ব্যবহারেও। আপনারা ডাক্তারের উপর একটু আ্স্থা রাখেন, তাকে ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে দেন। সে আপনার শত্রু নয়, রোগী মরলে তার কোন লাভ নাই বরং ভাল হয়ে বাড়ী গেলেই শান্তি।

দ্বিতীয় সমস্যা আচরনে (বলা উচিৎ এটিচ্যুডে): খুব স্বাভাবিক ভাবেই একজন ডাক্তার প্রথমেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রোগী আর তার আশেপাশের লোকজনের এটিচ্যুড থেকে। তাই পরিস্থিতি হোস্টাইল মনে হলে সে অনেকটা রক্ষনাত্মক হবে এবং রোগীর লোকজন ক্ষমতা দেখানোর মহড়া শুরু করলে পরিস্থিতি অনুযায়ী দুইটি অবস্থান নিতে পারে---
ক) সবার সাধারণ একটি ধারণা হচ্ছে যে উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তার যায়না কিংবা থাকেনা। অস্বীকার করার কোন উপায় নাই এই ধারণা বহুলাংশে সত্য। উপজেলা পর্যায়ে নিজের পৌনে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এই বিষয়ের উন্নতির জন্য কিছু চিন্তা ছিল, যেটা ঠিক এই মন্তব্যের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, পরে সুযোগ পেলে আলোনায় আনার ইচ্ছা আছে। এখন মূল বিষয়ে আসি - উপজেলায় পোষ্টিং পাওয়া ডাক্তাররা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে অবলা প্রাণী। ঢাল-তলোয়ার ছাড়া নিধিরাম সর্দারের একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ। উপজেলায় ডাক্তার ছাড়া আর সবাই স্যার। পুলিশের কনস্টেবল থেকে মৎস্য, কৃষি (উপরে কে যেন তাদের কাছ থেকে শিখতে বলেছেন), সাব-রেজিস্ট্রার সবাই। পুলিশের এসআই, ওসি কিংবা ইউএনও স্যারদের কথা বাদ দেই, একসাথে নিয়োগ পাওয়া এসি-ল্যান্ড, কলেজের শি্ক্ষক তাদের সাথেও তুলনা চলেনা। আমি বলছিনা স্যার বললেই সম্মান করা হয় আর না বললেই অসম্মান হয়, কিনতু এক্ষেত্রে মূল বিষয় হল সেই এটিচ্যুড- 'আমার এলাকায় ডাক্তার কোন শালার পুত'। আপনারা যারা মনে করেন গ্রামের মানুষ বড়ই সহজ সরল আর নিরীহ, যদি জীবনে কখনও ঐসব পর্যায়ে কাজ করে থাকেন তবে জানার কথা ঐখানেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, শিবির আছে। আছে এমপি সাহেবের মামাত ভাইয়ের, চাচাত শালীর, ফুফাত ভাইয়েরা। আর বাংলাদেশের আত্মীয়তার প্যাটার্নটাই এমন যে কেন্দ্রের ক্ষমতা পাল্টাইলেও নতুন এমপি সাহেবও আন্য কোন ভাবে সম্পর্কিত হয়ে যান। ডাক্তারদের বিপদ হল সবার ক্ষমতা দেখানোর সবচেয়ে সহজ জায়গা হল হাসপাতাল। হাসপাতালে একটু চোটপাট দেখালে পাবলিকের কাছে ওজন বাড়ে, তাছাড়া ডাক্তাররাও বুঝল তার সাথে ডিল করতে কতটা তাজিমের প্রয়োজন।
কাজেই উপজেলায় ডাক্তারের ভুমিকা রক্ষণাত্মক। তাছাড়া উপজেলায় যিনি থাকেন (কিছু লোকতো অবশ্যই থাকেন) বা থাকতে বাধ্য হন তারা সাধারণত: নিরীহ গোবেচারা। সেইরকম ক্ষমতাবান হলে (নেতা, মন্ত্রী-সচিব-জেনারেলদের আত্মীয়-স্বজন) তাদের অবশ্য বেশী থাকার প্রয়োজন পড়েনা। কাজেই ঐজায়গায় ডাক্তার রোগীর সাথে দূর্ব্যবহার করার ঘটনা ঘটলে বুঝতে হবে ডাক্তার বিশাল তাক্বৎওয়ালা কিংবা জন্মগতভাবেই রূঢ়।

খ) ঘনঘন অভিযোগ পাওয়া যায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ণী চিকিৎসকদের সাথে রোগীর স্বজনদের মারামারি। বিষয়টার কারনগুলো আমার দৃষ্টিতে......
কেন ইন্টার্ণীদের সাথেই হয়? উ্ত্তর সহজ .........
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল কাজটা ইন্টার্ণী চিকিৎসকদেরই করতে হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে সাধারন সৈনিকের মত। প্রফেসাররা জেনারেল দিনে একবার, (ভাল প্রফেসার হলে এডমিশনের দিন সন্ধ্যায় একবার) রাউন্ড দিয়ে কোন রোগীর জন্য কি করতে হবে দিক-নির্দশনা দিয়ে চলে যান। ওয়ার্ডে সার্বক্ষনিক ভাবে একজন এসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার বা আইএমও থাকেন (বেচারারা নিজের গরজেই দিনরাত ওয়ার্ডে পড়ে থাকেন)। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের জ্ঞান প্রফেসারদের থেকেও আপডেটেট থাকে (ফারাক শুধু একটা পরীক্ষা পাশের আর ডিগ্রীর)। রোগী দেখা ছাড়াও কিছুটা কেরানীগিরীর কাজও থাকে বলে তারা সারাক্ষনই ওয়ার্ডে দৃশ্যমান থাকেনা। আবার কখনও দেখা যায় পুরুষ ওয়ার্ড একতলায়, এই ইউনিটের মহিলা ওয়ার্ড চারতলায়, সে হয়ত একখানে আছে অন্যখানে ইন্টার্ণী একা সামলাচ্ছে। রোগীর এডমিশন থেকে শুরু করে সব কিছু সাধারণত ইন্টার্ণীদের হাত দিয়ে হয়, প্রয়োজনে এসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার বা আইএমওর পরামর্শ নেয়া যায়। এটাই স্বাভাবিক লার্নিং প্রসেস। যে ইন্টার্ণীর সময় যত বেশী কাজ করবে সে তত বেশী শিখবে।
এখন দেখি ইন্টার্ণী কারা? কিছুদিন আগেই এরা ছাত্র ছিল। ছাত্র আর প্রফেশনালের মাঝখানে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে এই অভিযোজন প্রক্রিয়াটির জন্য এরা কি পর্যাপ্ত সময় পেয়েছে? মনে হয় না? উপজেলায় বা বাইরে ডাক্তারের উপর মাতব্বরি করা (কারো কারো ভাষায় দৌড়ানি দেয়া) যাদের স্বভাবে পরিণত হয়েছে তাদের সেই আচরন ইন্টার্ণীদের সাথে করলে এরা স্বভাবতই ছেড়ে কথা বলবে না। ফলাফল অনিবার্য। কিন্তু এখানে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এই হাসপাতালের ইট-কাঠ-সুরকীও ডাক্তারের অনুকূলে, তাই এখানে সে মন্ত্রী-এমপিও পুঁছেনা। তাছাড়া কিছুদিন আগেও সে ছাত্র-লীগ\দল\শিবির করে আসছে। নেতাগোছের হলে মন্ত্রী-এমপি দুই চারটা তাদের নাগালেও আছে।
এসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার বা আইএমও সরকারী চাকরী করে, তারা চাকরীর বাধ্যবাধকতায়ই এগ্রেসিভ হয়না। তাছাড়া এক-দুই বছর যারা উপজেলায় কাটিয়ে আসছে তারা অনেক পরিণত (ব্যতিক্রম থাকতে পারে) হয়ে যায়।

এতক্ষণ সমস্যার কথা হল, সমাধান কি?
অভাজনের কথা যদি শোনেন তাহলে বলি, এটিচ্যুড বদলাতে হবে- দুই পক্ষেরই।

ডাক্তারদের কথাটাই আগে বলি।
১. ইন্টার্ণী শুরুর আগে ভালভাবে একটা ইনডাকশন ট্রেনিং করানো যেতে পারে। "Working with limited resources: managing patient/attendant and handling stressful situations" এই ধরনের একটা ট্রেনিং হতে পারে (ইংরেজীর জন্য দু:খিত, বাংলা পরিভাষা জানা নাই)
হাসপাতাল গুলোতে ইন্টার্ণী হিসাবে যারা কাজ করেন তারা সজ্ঞানে রোগীর ক্ষতি করবেন (এমনকি এটেনডেন্টরা দূর্ব্যবহার করলেও), এটা আমি অন্তত বি্শ্বাস করতে নারাজ। আমার অভিজ্ঞতা বলে, পকেটের পয়সা দিয়ে গরীব রোগীদের অত্যাবশ্যকীয় জিনিস কিনে দেয়ার শত শত উদাহরণ নিজের চোখে দেখা। সরকারী হাসপাতালের রোগীদের চাপ কেমন থাকে, সেটা কল্পনা করে দেখেন। যারা ইউরোপ-আমেরিকার তুলনা করেন তাদের জ্ঞাতার্থে বলি, এই রকম সীমিত সুযোগ-সামর্থ্যের মধ্যে তারা কাজ করতে পারতনা, পারলেও এর থেকে ভাল সেবা দিতে পারতনা। একবছর আগেও কথাটা কনফিডেন্টলি বলতে পারতাম না, এখন নিজের চোখে দেখে বুঝতে পারি। আমরাও যখন পড়াই\পড়ি তখন আইডিয়াল সিচুয়েশনের কথাই মাথায় থাকে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় সেটা নিকট কিংবা দূর ভবিষ্যতেও পাওয়া যাওয়ার কোন সম্ভাবনা আমি অন্তত দেখিনা। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে কাজ করলে, সিস্টেমের পাশাপাশি, নিজের উপরও ক্ষোভ জন্মায়। কেউ সেটার স্বীকৃতি না দিয়ে যদি অনুদার সমালোচনা করে তবে সেই ক্ষোভ তার মুখের উপরই না ঝাড়াটা শিখতে হবে, কঠিন হলেও। ধরে নিতে হবে এটা একধরনের পেশাগত ঝুকি মোকাবেলার (Professional hazard management) পাঠ।

২. হাসপাতালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যব্স্থা থাকতে হবে। হাসপাতালে কাজ করা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইন্টার্ণী এবং নিয়মিত ডাক্তার মহিলা। তাছাড়া রোগীদের নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দিলেও, ছাত্রাবস্থায় পড়াশোনার চাপে আর প্রফেশনাল লাইফে অন্নসংস্থানের জোগাড়ে বাড়তি রোজগারের চেষ্টায়, নিজেদের প্রতিদিনের সাম্ভাব্য অবসর সময়টা বিসর্জন দিয়ে, ডাক্তাররা নিজেদের শরীর গঠনের দিকে আর মনোযোগ দেয়ার সময় পায় না। তাই মারামারিতে তারা পেরে উঠার সম্ভাবনা কম (সংখ্যাধিক্যর সুযোগে ভিন্ন চিত্র অবশ্য দেখা যেতে পারে)। সর্বোপরি মারামারি, ভাংচুর, মামলা সম্পদ আর সামর্থ্যর বিপুল অপচয়।

৩. ইচ্ছাকৃত অবহেলার (wilful negligence), কিংবা অসদাচরনের তদন্ত ও বিচারের জন্য প্রতিটা হাসপাতালের একটা কার্যকর ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে, প্রমান সাপেক্ষে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদাহরণ তুলে ধরতে হবে।

ভাল আচরণ প্রত্যাশা করলে রোগীদের (এবং এটেনডেন্টদের) ব্যবহারেরও কিছু পরিবর্তন করা দরকার।
১. ডাক্তারের উপর আস্থা রাখার চেষ্টা করেন, সরকারী হাসপাতালের ওয়ার্ডের পরিবেশ নোংরা হলেও ডাক্তাররা এখনও এত পঁচে যায় নাই যে আপনাকে ইচ্ছা করে মেরে ফেলবে। ইন্টার্ণী কিংবা নিয়মিত যেই হোক সে একটা নির্দিষ্ট প্রটোকল আনুযায়ী আপনার চিকিৎসা শুরু করবে। আপনার ইমিডিয়েট ম্যনেজমেন্ট এর জন্য যা যা প্রয়োজন সবই করার চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে সিনিয়রদের পরামর্শ নিবে (আজকাল মোবাইলের যুগে এটা খুবই সহজে করা সম্ভব)।
২. পেপার পত্রিকার স্বাস্থ্য পাতা পড়ে বা ইন্টারনেট ঘেটে আপনি অনেক কিছুই জানতে পারেন, কিন্তু আপনার ডাক্তার বিষয়টির উপর একটা সিসটেমেটিক পড়শোনা করে এসেছে। তারে বেশী জ্ঞান দিতে যাবেন না, আপনার সন্দেহ হলে ভদ্রভাবে সিনিয়রদের মতামত নিতে বলেন। (আমি নিশ্চিত আমি যদি একজন ইঞ্জিনিয়ারকে তার বিষয়ে জ্ঞান দেয়ার চেষ্টা করি, তিনিও খুব একটা প্রীত হবেন না।)
৩. আমার দেখামতে সরকারী হাসপাতালে সবচেয়ে ভাল চিকিৎসা পায় দুই শ্রেণীর লোক। একদল যাদের লাইনে দাড়ানোর প্রয়োজন পড়েনা আরেকদল যাদের লাইন ধরে দাড়ানোর ধৈর্য্য আছে। লাইনে যাদের দাড়াতে হয়না তাদের মধ্যে সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ আছেন এবং তারা শুধু হাসপাতালেই না সবখানেই সাধারনত প্রিভিলেজড। আর যারা পুরাপুরি ডাক্তারদের উপর আস্থা রেখে নিজেদের চিকিৎসার ভার ছেড়ে দেয় তারা। একটা জিনিস বোঝা দরকার সরকারী হাসপাতালে নিজের খেয়াল খুশীমত কিছু করার সুযোগ সীমিত। কোন অপারেশনই হোক বা ইনভেস্টিগেশন, প্রফেসার এডভাইস করলে রাউন্ডে ইন্ডিকেশন ব্যাখ্যা করবে, জুনিয়ররা করলেও তা রাউন্ডে জাস্টিফাই করতে হবে। কাজেই সব বিষয়ে সন্দেহ না করে আস্থা রাখতে চেষ্টা করেন। আপনার বেডের ডাক্তার ফলোআপ দিতে এলে তাকে সুন্দর করে জিজ্ঞাসা করেন। আমার মনে হয়না সে আপনাকে নিরাশ করবে।

বি:দ্র: দুইটা বিশাল বিশাল মন্তব্য করলাম। আপাতত এখানেই ক্ষান্ত দেই। ইতিবাচক ফিডব্যাক পেলে ভবিষ্যতে আলেচনায় অংশ নিতে পারি। যারা যারা ধৈর্য্য ধরে লম্বা মন্তব্য পড়লেন তাদের ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি

চলুক

চিকিৎসা ব্যবস্থা ইস্যুতে সচলায়তনে নিয়মিত লিখবেন বা মন্তব্য করবেন আশা করছি। ধন্যবাদ।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

@শমশেরঃ চমৎকার লিখেছেন এবং চমৎকার বিশ্লেষণ, আমার মতে এটা বেশ জরুরী বিষয়। সবার নজরে আসা দরকার। আপনি আপনার চমৎকার মন্তব্যদুটোকে গুছিয়ে আর কিছু তথ্য যোগ করে একটা পোস্ট দিতে পারেন কিন্তু। সেক্ষেত্রে বিষয়টা আরও অনেকের নজরে আসবে।

ভাল থাকবেন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

রনি এর ছবি

চলুক

পদ্মজা এর ছবি

চলুক হাততালি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

পদ্মজা এর ছবি

চমৎকার বিশ্লেষণ।

১) ইন্টার্নদের যেমনি '"Working with limited resources: managing patient/attendant and handling stressful situations" ট্রেনিং এর প্রয়োজন, তেমনি হস্পিটাল ম্যানেজমেন্ট এর ওপর ট্রেনিং বা ডিগ্রি থাকলেই কেবল ডিরেক্টর বা সিভিল সার্জন বা টি এইচ পোস্টে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।

২) ডাক্তারদের প্রতি মনোভাব সামাজিক ভাবেই বদলাতে হবে। আর সেটা অনেক কঠিন হবে।
আমাদের দেশে স্বভাবতই মানুষ ডাক্তারকে অবিশ্বাস করতে শেখে, ইদানিং কালে দন্ডমুণ্ডের (মন্ত্রী, এম,পি, আমলা) কর্তাদের আস্কারা পেয়ে সেটা আরও বেড়েছে।

৩) মানুষ এখন পত্রিকা আর ইন্টারনেট ঘেটে অনেক কিছুই জানে। সেই কারনেই বলেছিলাম একজন স্পোকসম্যান বা প্রফেশনাল কাউন্সিলরের কথা যিনি রোগ এবং তার চিকিতসা না হোক অন্তত প্রোগনোসিস, সাইড এফেক্টস সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা দিতে পারবেন। তাতে রোগীর সঙ্গে আসা শুভাকাঙ্খীরাও সন্তুষ্ট হবেন; আর ডাক্তার সাহেব কে শুধুমাত্র যিনি দায়িত্বশীল ব্যাক্তি ( মানে যিনি রোগীর সিদ্ধান্ত নেন; বাবা, ছেলে, মা, মেয়ে), তার সঙ্গেই ঝুঝতে হবে।

৪) BMDC কে আরও শক্ত ভূমিকা নিতে হবে। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, আগে BMDC বিচার করবে। মিডিয়ার কাটতি বাড়ানোর জন্য অভিযোগ প্রথমে সংবাদ মাধ্যম পরে অভিযুক্ত চিকিতসক জানবেন, এমন যেন না হয়।

KamrulHasan এর ছবি

Agreed! চলুক

sampa এর ছবি

চলুক

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

সচলায়তনে চমৎকার সামাজিক, স্মৃতিচারন, ভ্রমন কাহিনী, কবিতা, সাহিত্য, তথ্য-প্রযুক্তি, দেশাত্ববোধক, সমকালীন চিন্তা ভাবনার প্রতিফলন ভালো লাগে, সেই তুলনায় চিকিৎসা সম্পর্কিত পোস্ট একটু কম, তাই আয়নকে ধন্যবাদ। একটু সময় করে চিকিৎসক সম্প্রদায় যদি এগিয়ে আসেন ব্লগে, মানুষের সচেতনতার উদ্দেশ্য তাহলে খুব ভালো হয়।
আমি একজন অসুস্থ রোগী, চিকিৎসা সন্মদ্ধে লেখা পোস্ট
এম জির সাথে জীবন যুদ্ধ

মাত্র মাস চারেক আগে আমার আরো একটি গুরুত্বপুর্ন অপারেশান হয়েছে। উপলব্ধিতে রয়েছে ডাক্তার, নার্স, ফিজিও থেরাপিস্ট, ফার্মাসিস্ট, ক্লিনার, ওয়ার্ড বয়ের সমবেত প্রচেস্টার সমাহার হচ্ছে রোগীর আরোগ্য।

শমশের এর মন্তব্য চমৎকার যুক্তিপুর্ন, স্বতন্ত্র পোস্টে এলে গঠন মুলক আলোচনায় আমরা অনেক কিছু জানতে পারবো।

KamrulHasan এর ছবি

সব গুলো পড়লাম। যুদ্ধ জয়ে আপনাকে অভিনন্দন।

কানাডিয়ান চিকিৎসা সেবার মনোরম বর্ণনা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মনের দুঃখটা আরো বাড়িয়ে দিল। মানলাম যে অর্থনৈতিক কারনে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা বাংলাদেশে প্রত্যাশা করা যায় না। কিন্তু ডাক্তারদের আচরনের ক্ষেত্রে তো আর এ সীমাবদ্ধতার কথা খাটে না। কানাডার উনারাও ডাক্তার বাংলাদেশের ইনারাও ডাক্তার। উনারা পা মাটিতে রেখেই হাটেন আর ইনাদের পা মাটিতে পরে না।

শমশের স্যারের মত হাতে গোনা দু চার জনকে বাদ দিয়ে বলছি কথাটা। স্যার না বলে পারলাম না। ( বাকীরা দেখলেন তো আপনার সম্মান আপনার নিজের হাতে? ) এখানে একজন ডাক্তার আমার নাম বিকৃত করে উপহাস করেছেন। আমিও করেছি। পার্থক্য হলো, আমি সরি বলেছি। কিন্তু ইনারা নিজেদের মনটাকে সরি বলার মতো, একটু কার্টেসি দেখানোর মতো বড় করতে পারেন নি। একজন তো আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রশ্নও তুলেছেন। যেটা কিনা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত। ইনারা নিজেদের কি এক সার্টিফিকেটের অহঙ্কারে ভাবেন যে শুধু উনাদের মাথাতেই ঘিলু আছে আর বাকি সবার মাথা গোবর ভর্তি। ইনারা জানেন না যে ইনাদের যত জ্ঞান সব ইনাদের পেশা কেন্দ্রীক। পৃথিবীতে আরো অনেক পেশা আছে, সকল পেশাই সমান এবং সকল পেশাতেই অল্প বিস্তর জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। এবং পেশাগত জীবনের বাইরে একটা সুন্দর পৃথিবী আছে, জীবন আছে যেখানে পেশা, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র সবকিছুর উর্ধে উঠতে হয়। ইনারা পেশার গর্বে একেবারেই বর্ণবাদী। অথচ চান কিনা সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হোক। ইনারা জানেন না যে সম্মান পেতে হলে আগে সম্মান দিতে হয়।

চিটাগং মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র রাজনীতির নামে হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করেছি কি? এদের মধ্যে পরমত সহিষ্ণুতা, ঔদার্য আর গনতান্ত্রীক মূল্যবোধ কোথায়? বড় বড় হাস্পাতালের ডাক্তারদের মধ্যেও রাজনৈতিক ক্ষুদ্রে সবার্থে এই একই রকম বিভক্তি। এরা নিজেদের মেধাবী বলে?

সব দেখাশুনে আমি বুঝতে পারছি জাতি হিসাবে আমাদের সম্ভাবনা নিতান্তই শুন্য।

শত কষ্টের মাঝেও কানাডার চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুন্দর বর্ণনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ম্যা'ম। আপনার লেখা গুলো নতূন কোথাও নতূন করে মানুষের মতো বাচার স্বপ্ন দেখায়।

শমশের এর ছবি

ধন্যবাদ, কামরুল স্যার।

আমি কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও বছরখানেক ধরে পুরাদস্তুর ছাত্র। তাছাড়া আমার সাবেক ছাত্ররাও অনেকে ভাই বলে ডাকে, আমি স্বচ্ছন্দ বোধ করি বলে।

অর্থনীতি-রাজনীতির মতই, বাংলাদেশের মানুষের ব্যবহারের সাথে উন্নত বিশ্বের তুলনা করে লাভ নাই। এসব দেশে একটাকার চকলেট কিনলেও মানুষ হাসিমুখে 'থ্যাংক ইউ' বলে, প্রতিউত্তর রিফ্লেক্সের মত এসে যায়। জাতি হিসাবে আমাদের মধ্যে বিনয় এবং সৌজন্য জিনিসটা কমই আছে, এর প্রতিফলন সব পেশার মানুষদের মধ্যেই দেখা যায়।

অন্যের পেশাকে সম্মান দেখানোর অভাবও শুধুমাত্র ডাক্তারদের মধ্যেই আছে, বাকী সবাই মহান; এই দৃষ্টিভঙ্গীটাও একটু একপেশে মনে হল। আপনার হয়ত ব্যক্তিগত ভাবে ডাক্তারদের ব্যাপারে খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা আছে, আমার এর বিপরীত অভিজ্ঞতাই বেশী।

চট্রগ্রাম মেডিকেলের ছাত্রটির মৃত্যুতে খুবই দু:খিত। নষ্ট রাজনীতির থাবা থেকে বাংলাদেশের কোন শিক্ষাঙ্গনই কি মুক্ত আছে (প্রাইভেটগুলো ছাড়া)? এর দায় শুধু চিকিৎসকদের উপর চাপালে হবে?

কল্যাণF এর ছবি

উপরে ডাঃ শমশের চমৎকার ভাবে বক্তব্য তুলে ধরেছেন। কিন্তু আপনিও আইডিয়াল কন্ডিশনের কথাই বললেন বলেই আমার মনে হল। আমি কিছু কথা বলে যেতে চাই। যে পেশায় সাধারন মানুষের সাথে মিশতে হবে সেখানে বিভিন্ন মানুষের বিচিত্র সব মানসিকতার মুখোমুখি হবার জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং সেগুলো সামলানোর মত মানসিকতা, দক্ষতা ও উদারতা থাকতে হবে। প্রফেশন ও ব্যাক্তিগত ব্যাপারগুলো আলাদা করতে না পারলে তার দোষ কার? একেই কি বলে প্রফেশনালিজম এর অভাব? আপনার সিনিয়ররা যদি ভুল করে থাকে তবে আপনি কেন সেগুলো থেকে বের হতে পারেন না?

অন্যদের না টানাটানি করে নিজের উদাহরন দেই, আমাকে আমার পেশায় অনেক সাধারন মানুষের মুখোমুখি হতে হয়, আবার এমন এমন মানুষের মুখমুখি হতে হয় যে কিচ্ছু জানেনা কিন্তু পদাধীকার বলে বড় বড় কথা বলে, উপদেশ দেয়, হাউ কাউ করে। আমার সিনিয়রদের এসব ক্ষেত্রে দেখছি রেগে যেত, চুপ করে কেটে পড়ত, পরে প্রতিশোধ নিত সুযোগমত, আর ওদের রাগ অন্যদের উপর ঝেড়ে দিত। আমিতো তা করছি না। তাহলে আমি যদি আপনার কাছে একি রকম আশা করি সেটা কি ভুল? আমার চাক্রীর এক পর্যায়ে একটা প্রোজেক্টে আমাকে বাজারের মধ্যে ঘীরে ধরে মানুষ বলেছে “এই শালা আর এক নীলকর আইছে। আমাদের সব চুষে নিবে”। আমার কপাল ভাল যে আমাকে মেরে হাস্পাতালে পাঠায় নাই, অথচ ঘটনা ছিল অতি তুচ্ছ, আমি আগের মাসের বিদ্যুতের বিল দেখতে চেয়েছিলাম এবং আমার অধীকার ছিল। রাত ১২টায় ফোন করে বলেছে মিটার বন্ধ হয়ে গেছে, বিদ্যুৎ নাই, তখন আবার অফিস খুলে প্রিপেইড বিদ্যুতের টোকেনের ব্যাবস্থা করেছি। শুধু আমি না, আমার সাথে আমার সহকর্মীরা সবাই একি কাজ করেছে।

পাবলিক এসে বলেছে ঢিল মেরে সব ভেঙ্গে আগুন দিয়ে দিবে। কারন মিটারে টাকা জমা আছে তাইলে বিদ্যুৎ নাই কেন? আরে ভাই বিদ্যুৎ এর উতপাদন চাহিদার থেকে কম হলে কেম্নে কি? বিদ্যুৎ কি আপনার মিটারে জমা থাকে নাকি? বড় বড় নেতারা ফট করে ঘোষণা দেন এই ঈদে কোন লোডশেডিং হবে না! এর থেকে হাস্যকর আর কিছু হতে পারে? আপনার আছে ১ আপনি কইলেন ১০ দিবেন। বাকি ৯ কি আকাশ থেকে পড়বে? প্রোজেকেটের কাজে গ্রাহকের বাসায় গেছি ইন্সপেকশনে, কিছু লোক একসাথে হয়ে বলেছে মাইর দিবে যদি মানে মানে কেটে না পড়ি আবার তার পাশের বাড়িতে আদর করে বস্তে দিছে। মনে হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় কথা বলছি? বলতে চাচ্ছি যে প্রফেশনাল হ্যাজার্ডের কথা মাথায় রাখা দরকার, সেই সাথে মাথায় রাখতে হবে আমি কোন পরিবেশে কোন সিস্টেমে কাজ করছি। বিদ্যুৎ সংস্লিষ্ট প্রফেশনের কারনে আমাকে প্রতিদিন শত শত মানুষের মুখমুখি হয়ে সার্ভিস দিতে হয়েছে, মানুষের বিচিত্রতর আবদার, অসততা, অন্যায় এর মুখমুখি হতে হয়েছে। মানুষ বিদ্যুৎ কিনতে এসে নকল টাকা চালিয়ে দিয়ে আবার সেই নিয়ে উলটে ঝগড়া গালাগালি করেছে, কিন্তু আমার কি সে জন্যে একজনের উপর রাগ করে কাউন্টার বন্ধ করে বাকি ১০০ মানুষ্কে ভোগাতে হবে? নাকি আমি রাগ করে কাজ করা বন্ধ করে দিব? কিন্তু আমি তো কাজ করার জন্যে বেতন নিচ্ছি, আর এটাই আমার কাজ জেনেই চাকরি নিয়েছি! তাহলে বেতন নিব আর সার্ভিস দিব না? আমার বেতন অনেক কম দেয়া হয়েছে কিন্তু সেই দোষ তো পাবলিকের না, আমি তো এই কম বেতন জেনেই চাক্রীতে যোগ দিয়েছিলাম, তাহলে এখন সেটা নিয়ে অভিযোগ করে করে আমার যে সার্ভিস দেয়ার কথা সেটা না দিতে চাওয়ার যৌক্তিকতা কত টুকু? বরং আমার তো উচিত আমার নিয়োগকর্তার কাছে এইগুলার প্রতিবাদ করা। আমরা সবাই জানি কোন প্রফেশনে কেমন ভবিষ্যত, কেমন আয়। তাহলে সব যদি জানাই থাকে এধরনের প্রফেশন এড়িয়ে গেলেই হয়। আমি বলতে চাচ্ছি সমস্যা যদি সিস্টেমে থাকে তাহলে তার ঝাল গ্রাহকের উপর না ঝাড়াই উচিত। এখন বলবেন গ্রাহক সিস্টেমের অংশ। কিন্তু আমার সিস্টেমে অল্প কিছু লোক নিয়ে আমি অনেক অনেক বেশি মানুষ্কে গ্রাহক হিসেবে আটকে ফেলি নাই? আর আমার সিস্টেমের আমার কাছের মানুষগুলা কে ঠিক করা বা নিয়মের মধ্যে আনা কি যুক্তি যুক্ত নয়?

এইবার তাহলে একটু ব্যাক্তিগত চিকিৎসা অভিজ্ঞতার কথা বলে যাই। আমাদের পরিবারে আলগা মাতবরি না করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে আমাদের। এর জন্যে ছোট থেকে বলতে পারেন শহীদ হয়ে আছি। যে বিষয়ে কিছু জানি না, সেই বিষয়ে আগবাড়িয়ে মাতব্বরি করি না, চিকিৎসা যার মাঝে উল্লেখযোগ্য। ফলে আমি কোনদিন ডাক্তারদের সাথে মাতবরি করি নাই, হাস্পাতাল ক্লিনিকে গলাবাজী করি নাই, ফল হয়েছে সব সময় সবার শেষে পিছনে থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। দুর্ব্যাবহার পেয়েছি ও সহ্য করেছি। আর তালেবর ও পরিচিত লোকেরা আমার আগে আগে কাজ সেরে ফেলেছেন।

উদাহরন ১- আমার বাবার উচ্চ রক্তচাপ যখন ধরা পড়ে তখন তা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চিকিতসকের পরামর্শ মত ওষুধ খাওয়া শুরু করতে হয়। দুই বছর একটানা ওষুধ খাওয়ার পরেও উচ্চ চাপ ও বুকে ব্যাথা কন্ট্রোল হল না, এর মধ্যে মফস্বল শহরের ডাক্তাররা একেকজন একেকজনের কাছে রেফার করলেন, কয়েকবার ঢাকাতে পাঠালেন, সব শেষে বলে দিলেন হৃদযন্ত্রের বাইপাস এর একমাত্র সমাধান। এর মধ্যে এই সব ডাক্তাররা একজন আর একজনের কাছে রেফার করেন ঠিকি কিন্তু এক সপ্তাহ আগে করা টেস্ট রিপোর্ট আর খুলেও দেখেন না, সব ফেলে দিয়ে আবার নতুন করে করতে দেন। এটা আজ থেকে ১১ বছর আগের কথা এবং তখন আমার বাবাকে বলে দেয়া হল সমস্যা হার্টের আর্টারি ব্লক, অবিলম্বে এঞ্জিওগ্রাম করতে হবে এবং ৬ মাসের মধ্যে বাইপাস করে ফেলতে হবে। এখন এঞ্জিওগ্রাম ও বাইপাসের টাকা জোগাড় করার দৌড়া দৌড়ির মধ্যই একজন (অবশ্যই সে মানুষ না, ফেরেশ্তা) ঢাকায় এক ঠিকানা দিয়ে ডাক্তারের কথা বললেন। সেই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসায় আমার বাবাকে ওষুধ দেয়া হল এবং একজন সাইকিট্রিস্টের কিছু পরামর্শ নিতে বলা হল। বাবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, তার সমস্যা হার্টের আর্টারি ব্লক ছিল না এবং বাইপাস করা লাগেনি। বাবা এখনো সেই ডাক্তারের চিকিৎসা নেন।

উদাহরন ২- আমার ভাগনি জন্মের পরথেকেই খুব আসুখে ভুগতে লাগ্লো। সব সময় শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মত চলা হচ্ছিল। ৩/৪ মাস বয়সের মাথায় এক সন্ধ্যায় হঠাত ভয়ানক পাতলা পায়খানা শুরু হল, ডাক্তার সব শুনে বললেন অবস্থা সিরিয়াস তখুনি হাস্পাতালে ভর্তী করতে হবে (এখানে একটা জিনিস স্বীকার করতে চাই ডাক্তার ভদ্রলোক রাত১২টার সময় কল করলেও বিরক্ত না হয়ে এটেন্ড করতেন, ওনার ফী বলে হাহাকার করতে চাই না, শুধু বলি সেটা আমার মত সাধারন মানুষের নাগালের বাইরের জিনিস হলেও বাচ্চাটা বাচিয়ে রাখার জন্যে অমানুষিক সব কান্ড করে চালিয়ে নিতে হত, সে আরেক কাহিনী)। উনি যেখানে যুক্ত সেখানেই ভর্তী করা হল। উনি টেলিফোনে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন ও নিজেই পরদিন দেখতে আসলেন। সব দেখে ব্যাবস্থা পত্র দিলেন। অসুখ আরো বেড়ে গেলো, এক দিনের মাথায় সেই শিশুর পায়খানা করতে করতে মলদ্বার ছিড়ে রক্ত পড়তে লাগলো। ক্যানেলা (বা ক্যানোলা) করে সরাসরি স্যালাইন দেয়া হল, একটা টেস্ট করতে দেয়া হল যেটা নাকি শুধু আইসিডিডিয়ারবিতে করা যায়। মনে হয় কলেরার টেস্ট। অইটা করা হল, কিছু পাওয়া গেলো না। এর মধ্যে আরো একদিন চলে গেছে। শিশুটা এখন আর কাঁদেও না এত দূর্বল। হুম্ম, তিন দিনের মাথায় ডাক্তার একটা সিরাপ বন্ধ করে দিলেন এবং ওই সিরাপ বন্ধ করার ২/৩ ঘন্টার মাথায় পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়ে গেলো। বাচ্চাটা সেরে উঠতে লাগলো। ওষুধটা স্কয়ারের ছিল, নাম মনে নাই, বেশ দামী এবং তখন সবেমাত্র বাজারে ছাড়া হয়েছিল। আমার বোনের একটাই মাত্র বাচ্চার কথা বলছি যেটা তারা পেয়েছিল ৭ বছর টানা চিকিৎসা ও চেষ্টার পর। এখানে আরো উহ্য আছে আমাদের পুরা পরিবারের ২৪ ঘন্টার দৌড়, দুশ্চিন্তা আর কষ্ট।

বিশাল মন্তব্য করে ফেলেছি, মনে হচ্ছে ধৃষ্টতা করে ফেললাম।

শমশের এর ছবি

ধন্যবাদ যারা ক্ষ্ট করে পড়ে মন্তব্য করেছেন সবাইকে। বাংলা টাইপিংএ নতুন, সময় স্বল্পতাও আছে। উইকএন্ডের দুইদিনে যতটুকু পারলাম লিখলাম। পুরো পোষ্ট লেখার ধৈর্য্য সঞ্চয়ের চেষ্টা করছি।
আমি কিন্তু প্রথম মন্তব্যেই স্বীকার করে নিয়েছি যে ডাক্তারদের আচরনের একটা গুনগত পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে, তাদের নিজেদের স্বার্থেই এবং সার্বিকভাবে চিকিৎসাব্যবস্থার বিদ্যমান আস্থার সংকট কাটানোর জন্য। তাদের দূর্ব্যবহারের সাম্ভাব্য কারণগুলো চিহ্ণিত করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু বলি নাই যে এগুলোই শুধুমাত্র কারণ আর এজন্য এই আচরনগুলোই সঠিক।
মানুষের মন খুবই বিচিত্র। বিভিন্ন কারনে, বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতায় সে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া দেখায়। সেই প্রতি্ক্রিয়াটির উপর তার জেনেটিক গঠন থেকে শুরু করে তার একাডেমিক শিক্ষা ও সামাজিক ইন্টারএকশনের প্রভাব থাকে। প্রতিটা মানুষই সেই দিক থেকে স্বতন্ত্র, তাই একজনের আচরন থেকে অন্যজনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়। কিন্তু যখন কোন বিশেষ শ্রেণী-পেশার মানুষদের (ডাক্তারদের ব্যবহার খারাপ, রাজনীতিবিদরা দূর্ণীতিবাজ, পুলিশ উর্দি পরা সন্ত্রাসী ইত্যাদি) সম্পর্কে সাধারণের একটা নেতিবাচক ধারণা গড়ে উঠে তখন চিন্তা করতে হবে কোন সমস্যা নিশ্চয়ই আছে।
সেই সমস্যার সমাধানে ঐ শ্রেণী-পেশার মানুষদেরই এগিয়ে আসতে হবে। চিকিৎসকদের পাবলিক হেলথ বিষয়ক উচ্চ-শিক্ষার কয়েকটা থিসিস এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে করা যায়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েরও সামাজিক বিজ্ঞান\মনোবিজ্ঞানের গবেষকরাও কাজ করতে পারেন এই বিষয়টি নিয়ে। মানুষের জেনেটিক গঠন অপরিবর্তণীয় হলেও শিক্ষা এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার আচরণের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। কোন সমস্যার কারন যদি ঐসকল গবেষণায় বেরিয়ে আসে তাহলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়াও সম্ভব হবে।
চিকিৎসকদের আচরণের উপর তাদের পারিবারিক ও সামাজিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কোন বিশেষ অবদান আছে কিনা, এটা নিয়ে আমার একটা ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ আছে। সময় পেলে গুছিয়ে একটা পোষ্ট দেয়ার চেষ্টা করব।
সবাইকে আবারও ধন্যবাদ।

KamrulHasan এর ছবি

চলুক

KamrulHasan এর ছবি

intern er 2nd din...amr 1st placement chilo medicine e..
oidin chilo admission....amk pathano holo female ward e
dupur 12tay hurmur kore ek class 9 e pora meye k nie ekgada lok ward e dhuklo
maia 2sip harpiq khaise
ami ha koira chaia asi...harpiq poisoning er management tokhno ami janina
ami just male ward e jacchilam kno senior er kas theke jene ashte j management ki
jeteo parinai
tar agei meyer vai amk okottho vashay gali dea suru korse
boltese apnara rogi dekhtesen na...ami apnar name case korum...bla bla
khub beshi hole 2-3min hoise tara ashche...
boila se rogi nia chila gase
i thought....vry gd!ja jekhane khushi!poisoning er case kno pvt hospital rakhbe na
tara chole gelo
then amio male ward e gelam
senior der theke janlam
ki korte hoy harpiq khaile
just half an hr por tara back korlo
ward dhuikai sei chele literaly amr pa dhore kanna suru korlo j amr meye k bachan
sry...bon k
i was just.......
then ami sathe sathe manage korlam...temn serious kichu chilo na!
2 chumuk harpiq khaya karo kisu hoy na!
bt amk okarone gali dear to tar dorkar chilo na
seidin ami bujhlam.....ihai bangladesh
erpor to koto kharap opc poisoning er pt manage korsi....joghonno ekta case k bachaisilam o bt attendent gula emn harami chilo....
mohilar in laws nijerai bish khaoisilo....pore jokhn dekhse beche gase tokhn chup chap rogi nie hospital theke chole gase
amr 4hrs er porisshrom pura jole gelo
erokm hundreds of ex[erience ase amr

এক জন খাটি মানুষ কে fb তে honorable friend হিসাবে পেয়েছি। তার কথা গুলোই তার নিষেধ সত্তেও কোট করলাম। আমার শেষ উপলব্ধি হলো সবাই কে এক পাল্লায় বিচার করাটা ঠিক না। ভাল মন্দ সব খানেই আছে। মন্দদের জন্য ভালরা যেন কখনো কষ্ট না পান সেটাও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। তার হান্ড্রেডস অফ এক্সপেরিয়েন্সর দু তিন তা শুনতেই আমি যথেষ্ঠ ইমোশনাল হয়ে পড়েছি। যা বলতে চাই তা আর বের হচ্ছে না। যাহোক, নেক্সট টাইম কোন ডাক্তারের সাথে অন্ততঃপক্ষে রাগারাগী করব না।

শমশের এর ছবি

ধন্যবাদ কামরুল ভাই,

কথা সেটাই, সমাজের সব পেশায়ই ভালো খারাপ লোক আছে। অযৌক্তিক আচরনের স্বীকার হলে প্রতিবাদও করবেন। তবে প্রতিক্রিয়া বা প্রতিবাদ যাতে সংঘাত, হানাহনির দিকে না যায় সে বিষয়ে সকল পক্ষেরই আরও যত্ন নিতে হবে।

ভালো থাকুন, ডাক্তারদের সাথে আপনার ভবিষ্যত অভিজ্ঞতাগুলো সুন্দর হোক এই কামনা থাকল।

KamrulHasan এর ছবি

স্যারের মতলব সুবিধার না! বার বার রুগী বানাইয়া আমারে হসপিটালাইজ করতে চান। খাইছে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।