আনু
আমি, রাজীব আর উদাস ন্যাংটা কালের বন্ধু। ন্যাংটা কাল মানে যে বাল্যকাল সেটা নয়। বরং তখন আমরা বালক থেকে বেশ বালেগ হয়েছি। ন্যাংটাকাল মানে ন্যাংটা হবার কাল। মাধ্যমিক এর উচ্চ গণিত পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে আমার যখন নিজেকে পুরা দিগম্বর মনে হচ্ছিলো তখন উদাস পরীক্ষা হল থেকে বেরিয়ে বলল,
-আমি শেষ আমারে পুরা ন্যাংটা করে ছেড়ে দিছে। এমনি এমনি ছাড়ে নাই। পার্শ্ববর্তী পাটক্ষেতে নিয়ে উপর্যুপরি ইয়ে করে ছেড়ে দিছে।
তারপর সে পিথাগোরাসের মাকে নিয়ে অশ্লীল একটা গালি দিলো। আমি আর উদাস রাগ ঝাড়ার জন্য একে একে টলেমী, ইউক্লিড থেকে শুরু করে ব্রম্মগুপ্ত পর্যন্ত সবার মাতাকে গালিগালাজ করতে লাগলাম এমন কুলাঙ্গার সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য। একটু পরেই রাজীব বের হল পরীক্ষা হল থেকে। পরীক্ষা কেমন হয়েছে জিজ্ঞেস করায় ও অনেকক্ষণ চিন্তাভাবনা করে বলল, ঠিক মনে নেই। রাজীব দার্শনিক টাইপের মানুষ, যে কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করতে পছন্দ করে। কিন্তু সে আবার ক্লাসের ফার্স্ট বয়ও। সুতরাং ওর পরীক্ষা খারাপ হবার কোন কারন নেই। আমি আর উদাস এরপর কিছুক্ষণ ঢিল মেরে মেরে স্কুল বিল্ডিং এর অনেকগুলো কাঁচ ভাঙ্গলাম। এতে নাকি রাগ কমে, আমাদের আরও বেড়ে গেলো। উদাস বুদ্ধি দিলো কাপড়চোপড় খুলে ফেলতে। পৃথিবী আজ আমাদের নগ্ন করে দিয়েছে, তাই কাপড় পড়ে থাকার নাকি কোন মানে নেই। আর এতে করে নাকি রাগও কমে যায়। আমরা রাগ কমাতে তিনজন একসাথে দিগম্বর হয়ে স্কুল বিল্ডিংকে ঘিরে দুই চক্কর দিলাম। এতে বেশ কাজ হলো। আমাদের মন ভালো হয়ে গেলো। রাজীব দিগম্বর হয়ে চক্কর খাওয়ার পরে ওর মনে পড়লো ওর পরীক্ষা আসলে বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে ভুলে গেলো কি কারনে ও দিগম্বর হয়ে দৌড়াচ্ছিলো। ওইটা নিয়ে পরে আমাদের কম ঝামেলা পোহাতে হয়নি। পুরো স্কুলে ব্যাপক আলোড়ন হয়েছিলো। আমাদের মতো পোঙটা পোলাপান নাকি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠটি তাদের ৪০ বছরের দীর্ঘ জীবনে দেখেনি ইত্যাদি নানা কথা শুনতে হয়েছিলো। সেই সাথে ভালোরকম ধোলাইও জুটেছিল প্রিন্সিপালের কাছ থেকে। সেদিন বুঝেছিলাম উদোম নিতম্বে বেতের বাড়ির তীব্রতার বর্ধন অনেকটা ভূমিকম্পের রিখটার স্কেলের মতো করে হিসাব করতে হয়। ১৫ বছর পার হয়ে গেছে কিন্তু আমরা কেউই এখনো শক্ত চেয়ারে বসে জুত পাইনা। কিন্তু কাজের কাজ হয়েছিলো ওই দিনটা ন্যাংটা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেলো আর আমরা ন্যাংটা কালের বন্ধু হয়ে গেলাম এরপর থেকে। আমাদের কয়েকজন ভক্ত অনুরাগী আমাদের সম্মানে ওই দিনকে বিশ্ব উদাম দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলো। একজন আবার ওই দিন থেকে নতুন সন গণনা করার প্রস্তাবও দিয়েছিলো। B.C আর A.D এর মতো B.U. (Before উদাম) আর A.U(After উদাম)।
গণিতে আমাদের কারো মাথা না খুললেও সাহিত্যে খুলল খানিকটা। শুরু বাংলা ক্লাস থেকে। পাগলাটে এক বাংলা শিক্ষক ছিলেন যিনি পড়ানো ছাড়া বাকি সব কাজ নিখুঁত ভাবে করতেন। তার একবার কি খেয়াল চাপল, আমাদের ধরে ধরে সাহিত্যিক বানানোর জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। মাঝে মাঝেই কোন পত্রিকার সংবাদ অথবা নিজের হাতে লিখা কোন একটা চিরকুট ফটোকপি করে নিয়ে এসে ক্লাসে বিতরণ করে বলতেন, এটা নিয়ে একটা গল্প লেখ। আমরা হাবিজাবি লিখার চেষ্টা করতাম। তার প্রথমবারের চিরকুটটা ছিল একটা পেপার কাটিং, খবরের অংশ বিশেষ। কাঁপা কাঁপা গলায় তিনি প্রথম কয়টি লাইন আমাদের শুনালেন,
কথা ছিল কিশোরী দিপালী দুপুরে খাবে, আর তার ছোটভাই খাবে রাতে। কিন্তু সেদিন দুপুরে ছোটভাইটির একটু বেশীই ক্ষিধে পেয়ে যায়। রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করার ধৈর্য ধরতে পারেনি সে, বোনের খাবার নিয়ে খেয়ে ফেলে। অভ্যস্ত দিপালী সন্ধ্যা পর্যন্ত উপোষও করেছিলো। কিন্তু এরপর ক্ষুধার কাছে পরাজিত হয় মেয়েটি। নিজেই নিজের জীবনের যবনিকা টেনে দেয়। গলায় ফাঁস দেয় দিপালী, চলে যায় ক্ষুধা-তৃষ্ণার ঊর্ধ্বে।
তারপর বললেন এটা নিয়ে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ যা খুশী লেখ একটা কিছু।
এক ঘণ্টা পর রাজীব তার প্রথম কয়টি লাইন পড়ে শোনাল -
পৃথিবীতে সকল কষ্টই কষ্টের। সে ভাতের কষ্টই হোক বা অভিমানে পাওয়া কষ্টই হোক। আর সে যদি হয় ভাত না পাবার অভিমানের কষ্ট তবে সেটা আরও বেশী কষ্টের।
রাজীব বেশ ভাবুক ধরনের ছোটবেলা থেকেই। ওর লিখা যে কোন কিছুই শেষ পর্যন্ত গল্প আর প্রবন্ধের মাঝা মাঝি কিছু গিয়ে দাড়ায়। আমরা ওর এতো সব ফিলসফিকাল কথার সব বুঝলাম না কিন্তু স্যার ওর লেখা পড়ে রীতিমতো মুগ্ধ হলেন।
উদাস শুরু করলো এভাবে -
পরীক্ষা হলে একটু দেরীতে পৌঁছে হন্তদন্ত হয়ে মকবুল শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। আঁতকে উঠে শিক্ষক বাঁধা দিলে সে ৩২ দাঁত কেলিয়ে বলে, স্যার ওপেন বুক এক্সাম কিনা তাই বুক খুলে পরীক্ষা দেই।
উদাসের গল্প একটু এগোলে বোঝা গেলো এই মকবুল আসলে দিপালীর ভাই। পরীক্ষা হল থেকে বাসায় ফিরে সে দিপালীর ভাত খেয়ে ফেলে। তার পুরা গল্প জুড়ে খালি হাবিজাবি কথা, পড়লে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যায়। শুধু শেষ দুলাইনে আসল গল্পটা বলা হয়েছে। উদাসের লেখা পড়ে স্যার হেসে ফেলে বললেন, তুই আসলেই একটা বান্দর। তারপর সিরিয়াস হয়ে বলেন,
-তোর লেখার স্টাইলটা আসলেই চমৎকার। এটা সেটা বলে পাঠককে মূল গল্পের জন্য তৈরি করা। তারপর কিছু বোঝার আগে আঘাত করা। অনেকটা দাঁতের ডাক্তারের মতো। কথা বলে ভুলিয়ে ভালিয়ে ফট করে দাঁত তুলে ফেলা।
উদাস খুশী হয়ে বলে,
-জী স্যার, অথবা হাজামের মতো।
-তবে গল্পে অনেক টেকনিক্যাল ভুল আছে। যেমন গ্রামের গল্প, স্কুলও গ্রামের। এইখানে ওপেন বুক এক্সাম আসবে কোথা থেকে।
-স্যার, মনে আসছে লিখে দিছি। অত চিন্তাভাবনা করি নাই। একটার সাথে আরেকটা খিচুড়ি পাকায়ে গেছে।
-আচ্ছা যা, হয়তো এইটাই তোর কপালে আছে। লিখে যা যা মনে আসে, অতো মিল ঝোল খোঁজার তোর দরকার নাই। জগাখিচুড়ি হলে সেইটাই সই।
বড় হয়ে উদাস আসলেই জগাখিচুড়ি লিখা শুরু করলো। কিন্তু সে আরেক গল্প।
স্যারের খসড়া খাতাটা নিয়ে বসলাম। এতো অগোছালো আর বাজে হাতের লেখা যে এক প্যারা পড়তেই হাঁফ ধরে যায়।
রাজীব
উদাসের নামটা উদাস না হয়ে আমার নামটা উদাস হলেই মনে হয় বেশী মানাতো। আমি যে স্বভাবে বেশ খানিকটা উদাস সে ব্যপারে কোন সন্দেহ নেই। ভাবতে ভালো লাগাটা নিশ্চয়ই দোষের কিছু না। অবশ্য এমন না যে আমার সব কিছুতেই ভুলো মন, কোন কিছু মনে রাখতে পারিনা। ছাত্র হিসেব আমি বেশ ভালো। বেশ বড়ো বড়ো পরীক্ষাগুলো ভালোভাবেই উৎরে এসেছি। সুতরাং আর যাই হোক আমার মস্তিষ্কের ধুসর ধুসর কোষের পরিমাণ নিয়ে তেমন সন্দেহ থাকার কথা না। সমস্যা হচ্ছে আমি একটু ভাবুক প্রকৃতির। তাও সবসময় নয়, মাঝে মাঝে হয়ত ছোট্ট একটা ব্যপার নিয়ে হয়ত আমি ভাবতে থাকি। ভাবতে ভাবতে জগত সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একেবারে গভীরে চলে যাই। আর সেরকম সময়ে হঠাৎ কেউ আমার ভাব ভঙ্গ করলে আমি একেবারে খেই হারিয়ে ফেলি। বেশীরভাগ সময়েই তখন তার সামনের মানুষটিকে কিছুক্ষণের জন্য চিনতে পারি না। আজকে বেশ ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে এসব কথাই ভাবছিলাম।
ভাবনার যথেষ্ট কারন অবশ্য আছে। গতকাল রাতেই বেশ গুরুতর একটা ঘটনা ঘটে গেছে। কলিং বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে সামনে অপরিচিত একজন মানুষকে দেখে খুব বিনয়ী গলায় বলেছিলাম, কাকে চাচ্ছেন? লোকটির বিস্ময় অভিভূত চেহারার সামনে দাড়িয়ে আমার একটু একটু করে লোকটির চেহারা চেনা মনে হতে থাকে এবং প্রায় মিনিট খানেক পর আমি বুঝতে পারি লোকটি আমার জন্মদাতা পিতা। পরে বাবার ঘরের পাশ দিয়ে যাবার সময় শুনতে পেয়েছিলাম বাবা মাকে বলছে, তোমার ছেলেকে ভালো একটা সাইক্রিয়াটিষ্ট দেখাও। সেটা শোনার পর থেকে আমি একটু চিন্তায় পড়েছিলাম এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ভাবছিলাম, আমি কি পাগল? নাহ্ নিশ্চয়ই না। একটা পাগল কখনো বসে বসে এতটা সুস্থ মস্তিষ্কে বিশ্লেষণ করতে পারে না, সে পাগল কি না। আমার সমস্যা আসলে একটাই আমার ভাবতে ভালো লাগে। অনেকে যেমন বিভিন্ন মজার খাবার খেতে ভালবাসে আমিও তেমনি বিভিন্ন মজার বিষয় নিয়ে ভাবতে ভালবাসি। মানুয়ের কত রকম শখ থাকে। অবসর সময়ে একেকজন একেকটা ব্যপার নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমারও তেমনি শখ হচ্ছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবা। অবশ্য এই ব্যপারটা বুঝতেও আমার অনেক ভাবতে হয়েছিলো। এস.এস.সি তে আমি একটু বাড়াবাড়ি রকমের ভাল রেজাল্ট করে ফেলেছিলাম। এত ভালো যে বাবা মায়ের দুই কাঁধে হাত রেখে বিশাল একটা হাসি দিয়ে আমাকে ছবি তুলতে হয়েছিলো এবং সেই ছবি পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিলো। পত্রিকায় আমার ইন্টারভিউ ছাপা হয়েছিলো। দিনে কত ঘণ্টা পড়াশুনা করি, ভবিষ্যতে কি হবার ইচ্ছা এ জাতীয় প্রশ্নের উত্তর বেশ ভালোভাবেই দিয়েছিলাম। সমস্যা হলো যখন একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলো অবসর সময়ে আমি কি করি, আমার প্রিয় শখ কি? প্রশ্ন শুনে আমি কিছুক্ষণ মাথা চুলকে ভাবলাম তারপর অবসর সময়ে, অবসর সময়ে আমি ... বলতে বলতে খেই হারিয়ে ফেললাম। তাইতো অবসর সময়ে আমি কি করি? আমি আড্ডা দিতে পারি না, গল্পের বই টই ও খুব একটা পড়ি না। গান শুনি কিন্তু সেটা শোনার জন্য নয়, ঘুম তাড়ানোর জন্য। অনেক রাতে পড়তে পড়তে ঘুম আসলে আমি দেখেছি ‘আখখিও সে গোলী মারে‘ টাইপ হিন্দি গান ছাড়লে আমার ঘুম ঘুম ভাব কেটে যায়। আমি তাই সেদিন আমার শখ কি এটা নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে গিয়েছিলাম। অনেক ভেবে যখন বুঝতে পারলাম আমার শখ আসলে ‘ভাবনা‘ তখন সেই সাংবাদিক মহাশয় চলে গেছে।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ায় আমার বেশ হাই উঠছিল।আমি ঘুম তাড়ানোর জন্য গান ছাড়লাম। খুঁজে পেতে বেশ হাল্লাগুল্লা ধরনের একটা ব্যান্ডের গানের সিডি চালিয়ে দিলাম। গায়ক অনেক কষ্ট করে কষ্ট কষ্ট বলে গান গাইছিল। ব্যন্ডের গায়কদের মনে কেন যে এতো কষ্ট থাকে কে জানে। তবে সকাল সকাল আমার মনটাও বোধহয় বেশ আর্দ্র ছিল না হলে কষ্ট কষ্ট চিৎকার শুনে আমার চোখে পানি এসে যাবে কেন? আমার হঠাৎ মনে হতে লাগলো আমারও অনেক কষ্ট যদিও অনেক ভেবেও আমার কষ্টটা কি সেটা মনে করতে পারছিলাম না। এমন সময় আমার পিতা হঠাৎ বারান্দায় এসে আমাকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন। হবারই কথা, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় দাড়িয়ে দামড়া ছেলেকে মেয়েদের মতো ফিচিক্ ফিচিক্ করে কাঁদতে দেখলে যে কোন পিতারই অবাক হবার কথা। কিছু না বলে পিতৃদেব চলে গেলেন। একটু পর শুনলাম তিনি মাকে বলছেন, “ আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল। ছেলে যখন নিজের বাপকে চিনতে পারেনা তখনই বুঝতে হবে ছেলের বিয়ের বয়স হয়েছে। আল্লা মালুম কোন মেয়ের কাছে হাফসোল খেয়েছে আর এখন ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদছে“।
কথাটা একদম ডাহা মিথ্যা। আমি কারো কাছে হাফসোল বা ফুলসোল কোনটাই খাইনি। আমার কষ্টটা যে আসলে কি সেটা আমি কেমন করে পিতাকে বোঝাব, আমি নিজেই তো জানিনা। একজন মানুষ কেন কাঁদে? অধিকাংশ সময়েই বোধহয় “আমি কাঁদছি“ এটা দেখানোর জন্য মানুষ কাঁদে। আন্তরিকভাবে মানুষ হাসতে পারে কিন্তু আন্তরিকভাবে কাঁদাটা মনে হয় একটু কঠিন। অনেকদিন থেকে আমি সত্যিকারের একটা কান্না খুঁজে বেড়াচ্ছি। কি জানি কেন যেন আমার মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের অশেপাশের এত মানুষের এত দুঃখ এত কষ্ট কিন্তু তার অনেকগুলোই সত্যিকারের দুঃখ না। তাই তাদের কান্নাগুলোও সত্যিকারের না। অথচ চারিদিকে তবু এত অজস্র কান্না। তাই আমার অনেকদিনের শখ একটা সত্যিকারের কান্না দেখার। সমস্যা হচ্ছে সত্যিকারের কান্নাগুলো দেখা যায় না। সেই কান্নায় কোন জল থাকেনা, সেটা অনেক গভীর গোপন।
স্যারের খসড়া খাতাটা খুললাম। সত্যিকারের কান্না দেখার বিলাসিতাটুকু এক নিমিষে উড়ে যায় এটা হাতে নিলে।
উদাস
আনুকে আনু ডাকার কোন মানে নাই। আমি তাই আদর করে শালাকে দুইবার নু বলে ডাকি। মাঝে মাঝে বিরক্ত হলে ডাবল নু বলি। তাও তো ব্যাটার পুরা নামের চেয়ে অনেক ভালো। পুরা নাম আইনুদ্দিন, ভাব নিয়ে নাম সংক্ষেপ করেছে আনু। আর রাজীবের ভালো নাম আবদুল্লাহ রাজীব, আমি তাই ডাকি চ্যাটের ... আবদুল্লা বলে। সংক্ষেপে চ্যাবা। তাও অনেক ভালো নাম। আমি আমাদের রিসার্চ ল্যাবে এসে একগাদা তুর্কী পোস্ট-ডক পেলাম। এদের একজনের নাম Abdullah Bal। আমাদের গ্রুপের সুপারভাইজার বাঙ্গালী। তিনি মিটিং এর শুরুতে দিব্যি বলতেন,
-ডক্টর বাল, এনি আপডেটস?
একদিন ভুলক্রমে আমার কয়টা দাঁত বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি এখন গম্ভীর গলায় তাকে ডক্টর আব্দুল্লা বলে ডাকেন। যদিও ফর্মাল মিটিঙে আমেরিকাতে লাস্ট নেম ধরেই ডাকার চল। সুপারভাইজার আরও বিপদে পড়লেন যখন আরেক ভারতীয় পোস্ট-ডক আসলো, Balsara নামে। না বলতে পারেন ডক্টর বাল, না বলতে পারেন ডক্টর ছাড়া, আর ডক্টর বালছাড়া তো আরও অপমানজনক। তাই তাকে সুপারভাইজার অনেকটা ওগো শুনছো স্টাইলে ডাকাডাকি করেন। এইরকম আজব কোন নাম হয় কিনা দেখার জন্য আমি একদিন Balsara লিখে গুগলে খোঁজ নিলাম। দেখি এই নামে বহু লোক আছে। Berkley তে রীতিমতো রিসার্চ গ্রুপ আছে Balsara Research Group নামে। আল্লাই জানে ওইখানে এরা কি বালের রিসার্চ করে। ডক্টর বালছাড়ার একটা পুত্র আছে রাজেন নামে। আমি সুপারভাইজারকে একদিন বুদ্ধি দিলাম, স্যার উনাকে রাজেনের বাপ বলে ডাকতে পারেন। আমি একটু বদ কিসিমের এটা জানা থাকায় সুপারভাইজার আমাকে বেশী ঘাঁটালেন না, খালি অগ্নি দৃষ্টি হেনে চলে গেলেন। পরের দিন মিটিং এর সময় Balsara কে জিজ্ঞেস করলাম-
-হোয়াট উড বি দ্যা রাইট প্রনাউনসিয়েশন অফ ইউর লাস্ট নেম? ইজ ইট ছাড়া অর ছিঁড়া ?
সুপারভাইজার আমার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
আরেকদিন আবার মিটিং এর সময় Abdullah Bal কে জিজ্ঞেস করলাম ওনাকে আবাল বলে ডাকতে পারি কিনা।
সুপারভাইজার বুঝলেন আমাকে ডিগ্রী দিয়ে বিদায় করার সময় এসে গেছে।
শরীফ গর্দভটা আজকে দেশ থেকে ফোন দিয়েছিলো। ওর নতুন প্রবন্ধ সংকলন নাকি "মিষ্টি আলু" পত্রিকার তরফ থেকে কি একটা পুরষ্কার পেয়েছে। আমাদের বাংলা শিক্ষক যখন দিপালীর ঘটনাটা নিয়ে আমাদের গল্প লিখতে বলেছিলেন তখন শরীফ গর্দভটা শুরু করেছিলো এইভাবে,
ভাত আমাদের জাতীয় খাদ্য। আমরা তিন বেলা ভাত খাই। চাল থেকে ভাত হয়। ধান থেকে চাল হয়। চাল প্রধানত চার প্রকার, আউশ, আমন, বোরো এবং ইরি। ভাত তিন প্রকার পান্তা ভাত, জাউ ভাত (প্যাগা ভাত) এবং সাধারণ ভাত। ভাত মানুষের মৌলিক অধিকার।
স্যার এইটুকু শুনেই শরীফকে থামিয়ে দিয়ে বিষণ্ণ গলায় বলেছিলেন -
বাবা, আজকে তুই আমার মাথা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা কর জীবনে আর যাই হোক তুই লেখক হবার চেষ্টা করবিনা।
শরীফ থতমত খেয়ে স্যারের মাথা ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করলো জীবনে কখনো লেখা লেখি করবে না।
আমাকে, রাজীবকে, আর আনুকে স্যার আলাদা করে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন,
-তোরা লেখা লেখি শুরু কর। আমি জানি তোরা অনেকদূর যাবি। দরকার হলে এইসব প্রথাগত পড়াশোনা বাদ দিয়ে খালি লিখে যা।
স্যার যে ভীষণ বোকা মানুষ ছিলেন আমরা সেই বয়সেই বুঝে গিয়েছিলাম। সেটা আরও ভালো করে প্রমাণ হলো যখন ১৫ বছর পরে এসে দেখলাম আমরা তিনজনের কেউই তেমন লেখালেখি করি না। বড়জোর মাঝে মাঝে ব্লগে উজির নাজীর মারি। আর শরীফ এখন দেশের বেশ নামকরা সাহিত্যিক। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ কি না লিখে সে। কয়দিন আগেই তার "বাংলাদেশের তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধঃ একটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি" বই বাজারে বেশ হইচই ফেলে দিয়েছে। সমালোচনাও হয়েছে কিছু। বই প্রকাশ উৎসবে কোন এক উটকো খোঁড়া লোক এসে তার মুখে নাকি থুতু ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এতে আরও বইয়ের কাটতি বেড়েছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাধুনিক তরুণ সমাজ নাকি বইটিকে বেশ ভালোভাবে নিয়েছে। এইরকম গত বছরেও শরীফের কাব্যগ্রন্থ "সোনালি জোছনা এবং কালো জোনাকি" বেশ হৈচৈ ফেলেছিল তরুণ পাঠকদের মাঝে। একটি কবিতার লাইন, "তোমার জোড়া স্তনের চাপে জোনাকিরা আজ মরে মরে যায়", উত্তরাধুনিক তরুণদের মুখে মুখে ফেরে। যদিও মানে কি কেউ জানেনা। শরীফ নিজেও জানে কিনা সন্দেহ। এক সংবাদ সম্মেলনে নাছোড়বান্দা সাংবাদিকের কবলে পড়ে ব্যাখ্যা দিয়ে দিয়েছিলো, এখানে স্তন হচ্ছে সভ্যতা আর জোনাকি মানবতা। সভ্যতার চাপে আজ মানবতা বিপর্যস্ত। গর্দভটাকে আজকে বললাম, তুই আগে গাধা ছিলি এখন ছাগল হইলি। কেন যে গর্দভগুলাই সব ছাগল হয়ে যায়। কিন্তু ছাগল হবার পরে আর গর্দভ থাকেনা।
গত সপ্তাহে স্যার মারা গেছেন। তার খসড়া খাতার একটা করে ফটোকপি আমি, রাজীব আর আনু পেয়েছি ডাকযোগে। যেই গল্পটা অনেক চেষ্টা করেও তিনি লিখতে পারেননি, আমাদের কাছে রেখে গেছেন সেটা লেখার জন্য।
মন্তব্য
খুব ভালো লেগেছে। চলুক!
ধন্যবাদ হিমু। ভাবতেছি আপনের মতো চা কফি খাইতে যাবো গল্প ফালায়ে ...
চরম উদাম হইসে
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
খুব ভাল ... অপেক্ষা করে আছি
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
লেখা তো দিলাম, আবার কিসের জন্য অপেক্ষা করেন??
পরের পর্বের জন্যে
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
লুঙ্গিতে কাছা মেরে গাঁট হয়ে বসলাম। পরের পর্ব ছাড়েন।
আরে, এক পর্ব ছাড়তে না ছাড়তেই বলেন পরের পর্ব ছাড়েন। কাছা খুলে উঠে লুঙ্গি ঝাড়া দেন। তারপর এট্টু হাঁটাহাঁটি করে আসেন, ওই ফাঁকে আমি পরের অংশ নামাই।
হ। উইদ ঢিলা-কুলুব আর মিনিমাম চল্লিশ কদম!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
(বহুদিন পর এই ঢিলা-কুলুব এর নাম শুনলাম, প্রায় ভুলেই গেছিলাম)
দারুণ!
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
কাতারে দাড়াইলাম
বসে পড়েন বস। পরে দাঁড়ায়ে থেকে ঠ্যাঙ ব্যথা হয়ে যাবে।
অপূর্ব। আপনার লেখার হাতটি দারুন। থামবেননা।
-নিলম্বিত গণিতক
লেখা তো সেরকম উদাম হয়েছে।
তবে "দিপালী" প্রসঙ্গটায় আরেকটু কথা বলতে পারতেন।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ধন্যবাদ। পুরোটা শেষ করে যখন ঘষামাজা করবো তখন এটা খেয়াল রাখবো।
ধন্যবাদ ইস্কান্দর বরকন্দাজ, রাব্বানী এবং শাব্দিক।
আনু'র অংশ পড়লাম, আফিস থিকা আইসা বাকিটা পড়মুনে, তারপর উপন্যাসের চরিত্র আলচনা করমুনে একলগে বইসা। চরম হইছে মনে হয়।
উদাস ভাই চ র ম হইছে, চরম । ফাটাফাটি, সেইরকম । বাকিগুলা নিয়া কিন্তু বেশি ঘুরাইয়েন না ভাই।
মিয়া ফাতরামির আর জায়গা পান না? আপনের ঠ্যালা খেয়ে খেয়ে লেখা নামালাম, আর এখন না পইড়া অফিসে দৌড় দিছেন।
উহহহ কি আপবাদ। কয়দিন আগে আর এক ভাই কইছে আমি বিটলামি করতেছি, আমার তো দুর্নাম হয়া যাইতাছে রিতীমত!!! তাও ভাগগিস আমার একাউন্ট ম্যাকাউন্ট নাই, বাইচ্চা গেছি উফফ। আমি ঝান্তাম এই ঝাড়ি আমার কপালে আছে, তাই সাত সকালে সাধের ঘুম বাদ দিয়া উঠছি, আগে অফিসের মেইল চেক না কইরা চেক কর্ছি আপনার লেখা আইছে কিনা। তারপর ব্রাশ করতে করতে, প্যান্ট পরতে পরতে খানিক পড়ছি, তাপ্পর দেখেন সততার সাথে কমেন্টও করছি। পরে অফিসের ব্রেকে সবাই যখন গপাগপ খাইছে আমারে দেখাইয়া (সুলুপ সুলুপ, আইজকা ভাল মন্দ ব্যাবুস্থা করছিল...উলস) আমি আপনার পুস্ট পড়ছি (কমেন্টে প্রমাণ দিছি না উপরে?)। ও ভাই পরের পর্ব তাড়াতাড়ি ছাইড়েন কিন্তু (এইটা কিন্তু নরম ও বিনীত অনুরোধ, উইদাউট ঠেলা, আমি আপনার পোস্টের আশেপাশেই আছি )। চলুক চলুক চলুক...
আয়ুষ্মান ভবেহ্। গত দু'দিন ধরে ভাবছিলাম অনেক দিন হয় 'গরম' উদাসের কোন পোস্ট পাওয়া যাচ্ছে না। যাক, এবার উপন্যাস শুরু করে অপ্রাপ্তিটা পুরিয়ে দিলেন। উপন্যাস দৌড়াক। এর পরিণোতি যেন চলতে চলতে থেমে যাওয়া আরো কিছু উপন্যাসের মতো না হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ পাণ্ডবদা। আশাকরি শেষ করতে পারবো।
খুব চমৎকার শুরু। ভালো লেগেছে।
ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।
ধন্যবাদ দিহান। আপনার সিরিজের পরের পর্ব এবং ইবুক কবে পাচ্ছি?
শরীফ গর্দভটাতো দারুণ লিখছে!
আবার জিগায় ...
ভাই উদাসের কাহিনী পড়তে গিয়া হাসতে হাসতে চেয়ার থেইকা পইড়া গেছি...
এরপরের পর্ব মাটিতে বইসা পইড়েন ...
সচলে এসেছে চরম উদাস,
তারে ছেড়ে দিতে হবে স্থান...
স্থান ছাড়তে হবে না, নিজ নিজ জায়গায় গ্যাঁট হয়ে বসে থাকেন ...
দুর্ধর্ষ... দৌড়ায়া চলুক...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজরুলদা। চলবে আশাকরি।
দারূণ দারূণ! চলুক।
চমৎকার
ধন্যবাদ নিটোল, Fruhling, এবং আয়ন।
চরম হয়েছে ভ্রাত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অনেক ধন্যবাদ ভ্রাত।
অসাধারন!
চলুক...
ধন্যবাদ অঅসাধারন, নৈষাদ, রুমঝুম।
অস্থির কমপ্লেক্স (জটিলস) হইছে বাইজান।
ধন্যবাদ ঝুমন
সত্যিকারের কান্না যেমন সহজে খুঁজে পাওয়া যায়না তেমনি সত্যিকারের হাসিও কিন্তু দূর্লভ। আপনার লেখাটির মধ্যে সত্যিকার হাসিটাই খুঁজে পেলাম। এরকম নির্মল হাসি উপহার দেবার জন্য ৯৯৯.......( অসংখ্য ) ধন্যবাদ।
প্রৌঢ়ভাবনা
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ প্রৌঢ়ভাবনা। আপনার শেষ লেখাটা কিন্তু অনেক ভাবনার খরাক জুগিয়েছে।
facebook
এতো পপ্পন খাইলে পেটে অসুখ হবে। আসলে একটা ভ্রমণ কাহিনী লিখতেছিলাম, "তিন দিনে বিশ্ব ভ্রমণ"। সেইটা একটু বাকি রেখে হটাত কি খেয়ালে এই লেখা শুরু করলাম ...
চ্রম উদাসজী পরেরটা তাড়াতাড়ি।
আরে এট্টু দম নিতে দেন। একটু কফি টফি খেয়ে নেই।
আপনি পারেন ও বটে...
কি পারি??
ডিম
তাপসদা' ডিম মারলেন ক্যা ?
আপনে মানুষরে হাসায়ে মেরে ফেলতে পারেন রে ভাই।
তাও ভালো ... ডিম না ...
Dr. Balsara আর Abdullah Bal-এর কথা তুলতেই মনে পড়ল জনৈক জাপানিজ অধ্যাপকের নাম: ডক্টর তাকিওনা মুতেআশি
লেখা অসহ্য রকমের উপভোগ্য হয়েছে
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
তাকিওনা মুতেআশি ... ... জটিল। আপনে আবার তাকান নাই তো ?
ঐটা কি তাকায়ে তাকায়ে দেখার মতো কোনো মনমুগ্ধকর দৃশ্য নাকি?
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
হইতেও পারে। তারেক অণুর মতো তো আর দুনিয়া ঘুরে ঘুরে ত্রেভি ফাউন্টেন দেখার সৌভাগ্য সবার হয়না। তাই না হয় তাকিওনার ফাউন্টেন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেই দুধের সাধ সেভেনাপে মিটানো আরকি। আপনে বরং একটা লেখা দেন এই নিয়ে, শিরোনাম " তাকিওনার দিকে তাকিয়ে"।
চরম উদাস, মস্করাটা একটু বেশি ফাত্রা হয়ে গেল না?
আপনার সাজেস্টেড শিরোনামটাও কিঞ্চিত ফাত্রা।
আমি মাইন্ড খাইছি।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
হে হে হে আমিও তাহলে আশি
এটা (তাকিওনা মুতেআশি) কী সত্যিই কোন প্রফেসরের নাম ? আমি জোক হিসেবে শুনেছিলাম কোথাও !
হে হে হে। এই 'টাকিওনা মুটেআশি' সাহেবের নামটা অনেকটা বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীতে পরীক্ষা দেওয়ার সময়ের সেই 'টর্চ লাইট জ্বালিয়ে বিড়ির ধোঁয়া' দেখার ঘটনার মতো। সবাই, সবখানেই এই দুইটা চরিত্র ও কাহিনি খুঁজে পায়!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কখনো সত্যি বোঝা যায়না, সাধারণটা অনন্য সাধারণ হয়ে যাচ্ছে ...
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
মানে কি, বুঝাই দেন ...
দুর্দান্ত শুরু...চলুক।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ তাসনীম ভাই। চলবে আশা করি।
ভাইয়া, মনে হইতেছে আপনি চট্টগ্রামের একটি সুপ্রাচীন সামরিক বালক বিদ্যালয়ের এলমনাই (ভাটিয়ারীরটা না)। আপনার সেন্স অব হিউমারের ধাঁচটা ওইরকমই...
আমার রসিকতা শুনে আমাকে সামরিক মনে হইলো ??
ভালো লাগল
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
সৈয়দ সাহেবের পর কাউকে যদি গুরু মানি তবে সেটা আপনি!
পেন্নাম কর্ত্তা!
কোন সৈয়দের কথে বলেন গো?? ...
আফগান সৈয়দ সাহেব!
মজাদার শুরু, দেখি তারপর কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়
কোথায় গিয়ে যে দাঁড়াবে। গল্পের গরু গাছে উঠবে না পানিতে নাম্বে সে এখনো জানিনা।
চরম একখানা পোস্ট। চরম হাস্যরস, তেমনি চরমভাবে উদাসও করে দিয়েছেন ।
ধন্যবাদ রাজকন্যা
ভাল... খুবই সরল ভাল। শরৎচন্দ্র আর শীর্ষেন্দু এই দুইজনের সাথে বুদ্ধদেব বসুর লেখার কথা মনে পড়লো... + তারাপদ রায়...
কোন কথা নেই- তবুও হটাৎ আরেক কথা মনে পড়ার মত করে বলা..
এই যে তিনজন - ওরা কথা বলছে নিজেদের ভাষায়- মনের ভাসায়-
এই তিনটা মনের ভাষায় আরেকটু আলাদা আলাদা হলে কি হতো...
এইটুকু লেখার পরে মনে হলো..
তাহলে যা হতো না তা হলে- একটানের ব্যাপারটি থাকতো না...
আরেকটু মনযোগ লাগতো পড়তে...
পাঠক হারানোর ভয় থাকতো..
লিখতে বেশি সময় লাগতো...
এইসব আর কি..
তবে চরিত্রগুলোর মধ্যে পার্থক্য নেই তা বলছি না...
যথেষ্ট আছে...
হয়তো একটা টোনে সব সাজানো বলে আমার এই কথাগুলো মনে হয়েছে...
অনেক ধন্যবাদ কর্ণজয় মন দিয়ে পড়ার জন্য। চরিত্রগুলো আলাদা, কিন্তু তাদের সুর এক। হয়তো লেখাটা আরও আগালে তাদের মধ্যের পার্থক্য আরও ফুটে উঠবে।
আপনার লেখাগুলো অনেক ভাবায়। অনেক শক্তিশালী গদ্য আপনার। তাই আপনার ফিডব্যাক অনেক গুরুত্বের সাথে নিচ্ছি।
আমি চেষ্টা করি ভয়ঙ্কর রকমের সরল করে লিখতে। যেন পড়তে গিয়ে পাঠককে কিছু ভাবতে না হয়, বিন্দুমাত্র আটকাতে না হয়। তবে একেবারে শেষ করার পর সামান্য কিছু ভাবনা হলেও যেন পাঠকের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া যায় সেই চেষ্টাই করি।
আমি নিজে শরৎচন্দ্র,শীর্ষেন্দু, হুমায়ুন এর পাশাপাশি বুদ্ধদেব, তারাপদ এমনকি বঙ্কিমও পছন্দ করি। তবে কিনা যত দিন যাচ্ছে পাঠককুল ততো ফাঁকিবাজ হয়ে যাচ্ছে। সবাই জানে আখরজ্জমান ইলিয়াস কালের সেরা লেখকদের একজন। প্রিয় বইয়ের নাম বলতে বললে বলে, চিলে কোঠার সেপাই এর নাম। আর পড়তে বসে হলুদ হিমু কালো র্যাব। শুধুমাত্র ঝরঝরে গদ্যের লোভে। পড়া শেষে গালি দিতেও কার্পণ্য করেনা কারন বুঝতে পারে সেই গদ্যটুকুই সব ছিল। গদ্য শেষ তো সবই শেষ।
আর তাই পাঠক হারাবার ভয় তো আমারও। তবে প্রাণপণে চেষ্টা করবো গদ্যটুকু যেন শুধু গদ্যই না হয়।
ঘটনা হইলো, দুইটা।
এক. আপনের হাতটা সোনা মুড়িয়ে রাখতে মঞ্চায়। [ডিসক্লেইমার: এখানে কোবি ছাপ্পান্ন হাজার টাকা ভরির 'সোনা'র কথা চয়ন করেছেন]
দুই. এক নাম্বারের ডিসক্লেইমার লিখতে গিয়ে দুই নাম্বারে কী লিখবো সেটা ভুলে গেছি। মনে পড়লে এসে বলে যাবো ব্রো।
ফাউ. প্যাটার্নটা দারুণ লাগে আমার। একসঙ্গে কয়েকটা চরিত্রের ভেতরে গিয়ে খেলা করা যায়। লিখেন বস। খুব জম্পেশ একটা লেখার আশা করে আছি। ঈমানেই।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
স্বর্ণ বলেন, তাইলে আর কষ্ট করে ডিসক্লেইমার দিতে হবে না ... :D। স্বর্ণের যেই দাম, তাতে পুরা হাত লাগবে না একটা আঙ্গুল মুড়ায়ে দিয়েন তাইলেই হবে (মধ্যমা বাদ দিয়া, ওইটা দিয়া বেয়াদ্দব লোকজনের সাথে ভাব আদান প্রদান করতে হয়তো তাই)।
লেখা জম্পেশ বে কিনা কইতারিনা, তবে শেষ করবো অবশ্যই। দোয়া রাইখেন ...
আমি মুগ্ধ হয়ে ভেবে যাচ্ছি এই ছেলেটাকে আমি চিনি! গর্ব হয় তোমার জন্য। আমি জানি তুমি এই উপন্যাস শেষ করবে, তোমাকে যতদিন দেখেছি হালকাভাবে কোনকিছু করতে দেখিনি। উপন্যাস যারা শুরু করেও শেষ করতে পারবেনা তাদের জন্য তুমি উদাহরণ হও! নিরন্তর শুভেচ্ছা, আপুটার জন্য একবক্স চকলেট (দেশে আসলেই দিয়ে দেব)
তানিম ভাই, শেষ করবো অবশ্যই। চকলেট পাওনা রইলো ...
খান খান, বেশী করে পপ্পন খান। পপ্পন চাবায়ে চাবায়ে চাপা ব্যথা করে ফেলেন ...
এইযে!!! অণুমিয়ারে কম খাইতে কন পেটের অসুখ হবে তাই, আমারে বেশি খাইতে কন। আপনিতো ভাই ভয়ঙ্কর!! আরে ভাই কত কাহিনী কইরা তারপর আপনার পোস্টে আইতাছি রোজ, শিগগির শিগগির পরের পর্ব ছাড়েন।
ঘটনা কি ঘটলো? আমি যে মন্তব্য করলাম এতো তেল, মাখন, ঘি ঢেলে, গেল কই? যাই হোক কোন ব্যাপার না, এমনিতেই ভেজালযুক্ত দ্রব্য।
লেখা খুব ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ রু তেল,মাখন, ঘি বিবর্জিত মন্তব্যের জন্য ...
উদাস ভাই
গেলেন কই
সাহিত্যিক দুই ????
আসিতেছে ... সম্পূর্ণ রঙ্গিন।
চমৎকার শুরু হয়েছে। তারপর ?
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
ধন্যবাদ । তারপর আসিতেছে ...
হে হে... এখেনে নাম নিয়ে কি যেন একটা কেলো ছিল... আমি কিন্তু দেখেছি
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
না ইয়ে মানে ত টা ট হয়ে গিয়েছিলো। এই টাইপো আরকি। পরে ভাবলাম দিদি যদি আবার মাইন্ড খায়
দেশ ছাড়ার আগে অনেকেই খালি বলতো, " এই যে ইরুপ যাচ্ছো, ওইখানে মানুষ কিন্তু এক্ট্রা কারিকারি এক্টিভিটির অনেক গুরুত্ব দেয়। তা তোমার শখ-টখ কী?" আমি ভেবে চিন্তে দেখলাম আমার কোন শখ নাই। আমার খালি একটা জিনিসই ভালো লাগে, সেটা হচ্ছে চিন্তা ভাবনা করতে। চিন্তা-ভাবনা করে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা আনন্দে কাটিয়ে দিতে পারি। কিন্তু এটাতো কাউকে শখ হিসেবে বলা যায় না। আপনার লেখা পড়ে মনে হলো, যাক বাবা, দল ভারী হচ্ছে
লেখা দারুণ, কিছু কিছু লাইনতো কোট করার মতন... পরের পর্ব আসুক ...
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
সেটাই। ভাবনা যে সখ হতে পারে সেটাই লোকে বোঝে না, ভাবে অলস
ধন্যবাদ।
রাজীবের বাবাকে অন্নেক ভাল লেগেছে। দারুন বাবা একখানা
উদাস আর শরীফেরটা পড়ে পুরাই
জমে গেছি একদম !!! পরের পর্বে যাচ্ছি..................
দারুণ শুরু।
-------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
নতুন মন্তব্য করুন