চিকিৎসা মানুষের জীবন বাঁচায়,রোগ হলে মানুষ বাঁচার তাগিদে হাসপাতাল,ক্লিনিক এ যায় চিকিৎসা করাতে। কিন্তু এই রোগমুক্তির স্থান যদি হয়ে ওঠে প্রাণ হরণ এর আদর্শ স্থান তাহলে সত্যিই ভয় পেতে হয়……
কিছুদিন আগের ঘটনা। পহেলা বৈশাখ এর রাতে,সারাদিন বন্ধুদের সাথে অনেক ঘোরাঘুরি করার পর সন্ধ্যার সময় যখন বাসায় আসলাম তখন রীতিমত ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছি। তাই গোসল করে আর দেরি না করেই শুয়ে পড়েছিলাম।
মাঝরাতে যখন ঘুম ভেঙ্গে গেল বুঝতে পারলাম আমি প্রচণ্ড অসুস্থ। বেশ জ্বর এসেছে, ভীষণ মাথাব্যথা,বুকে পিঠে ও চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম। প্রচুর পানির পিপাসা পেয়েছে বুঝতে পেরে উঠে পানি খেলাম,বিছানায় এসে শুয়ে পড়া মাত্র আর কিছু মনে ছিলনা। জ্ঞান হারিয়েছি, নাকি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাও মনে নেই।
পরদিন সকাল বেলা নিজেকে বিছানাতেই আবিষ্কার করলাম,আম্মা পাশে বসে মাথায় পানি দিচ্ছে।
এইভাবে দুই দিন কাটার পর আম্মা যখন বুঝতে পারলেন আমার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না,তখন আম্মা আমাকে নিয়ে গেলেন ঢাকা তথা দেশের অন্যতম নাম করা হাসপাতাল “ইবনে সিনা” তে। যে ডাক্তার কাছে নিয়েছিলেন সঙ্গত কারণেই আমি তার নামটা উল্লেখ করছি না। ভদ্রলোক আমাকে পরীক্ষা করে বললেন,“কিছু না,সামান্য ভাইরাস জ্বর,ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে”। আমি আর আম্মা নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি ফিরে এলাম।
কয়েকদিন পর আমার ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। তাই পরীক্ষার আগ মুহূর্তে আমার এমন অসুস্থতা আম্মা কে চিন্তিত করে তুলেছিল। শেষে বাধ্য হয়ে আম্মা আমাকে আবার সেই ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি এবার আম্মাকে আমার রক্ত পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিলেন,করালাম,রিপোর্ট দেখে ডাক্তার সাহেব বললেন যে রিপোর্ট এ তেমন কিছু আসে নি। আম্মা তার কাছে এখন করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তিনি আম্মাকে কিছু দামী ওষুধ লিখে দিয়ে বললেন সেগুলো খাওয়াতে। যদি কাজ না হয় যাতে আবার আসি।
আমার পরিষ্কার মনে আছে,প্রতি বেলা আমি ১৫০ টাকার ওষুধ খেয়েছিলাম। প্রতিদিন দুই বেলা ৩০০ টাকার ওষুধ খেতাম!
ওষুধ গুলো খাওয়া শুরু করার পর থেকে আমার অবস্থা হঠাৎ করেই খারাপ হতে শুরু করল। প্রথমত,আমি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে গেলাম। খাওয়া দাওয়া একদম বন্ধ হয়ে গেল। সবচাইতে খারাপ যেটা হয়েছিল তা হল আমার ঠোঁটে,জিভে,গলায় অনেক ঘা হয়ে গেল। আমি পানি ও খেতে পারতাম না। কথা বলতে গেলে গলার ঘা গুলোতে প্রচুর ব্যথা হত। তাই কথা বলা ও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি কয়েকদিন বাধ্য হয়ে সবার সাথে ইশারায় কথা বলেছিলাম।
আমার ইয়ার ফাইনাল দেয়া হল না। আম্মা আর আমার বোন ক্যাম্পাস এ গিয়ে আমার দরখাস্ত আর অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিয়ে এল।
আমার এই অবস্থা থেকে আম্মা কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন,কারণ আমার পরিষ্কার মনে আছে আমি প্রায় ১১ দিন ভাত তো দূরের কথা তরল স্যূপ ছাড়া আর কিছু মুখে তুলতে পারিনি। আম্মা আর কোনো উপায় না পেয়ে আবার সেই ডাক্তার এর শরণাপন্ন হলেন। তিনি ঘা এর জন্য কিছু ওষুধ দিয়ে বাকিগুলো চালিয়ে যেতে বললেন। এতে আমার ঘা কিছুটা কমলে ও আর তেমন কোন উন্নতি হয় নি।
এবার আবার আম্মা আমাকে সেই ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গেলেন। ভদ্রলোক আমাকে পরীক্ষা করে বললেন,আমার ধারণা এটা “ম্যালেরিয়া”। আম্মা রেগে গেলেন, কারণ আমার অবস্থার কোন উন্নতি হচ্ছিল না। তার উপর আবার উনি ম্যালেরিয়া বলছেন। তাও কোন টেস্ট ছাড়া। তিনি বললেন তিনি একজন অভিজ্ঞ প্রফেসর,কিন্তু তার ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক। এইবার তিনি বললেন,“দেখুন,আমরা এই কন্ডিশন এর রোগীদের ভর্তি করে চিকিৎসা করি। আপনি আপনার ছেলে কে এখানে ভর্তি করে দিন,তারপর দেখছি”।
আমি বসে বসে চিকিৎসার নামে প্রহসন দেখছিলাম। কিন্তু বলার শক্তি ছিল না একটু ও। আম্মা চেম্বার থেকে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে এলেন। এরপর আমার মামা আমাকে অন্য একটা হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে আমার আগের চিকিৎসা সম্পর্কে যা জানলাম,সত্যিই বিস্ময়কর! ওই ডাক্তার ভদ্রলোক আমাকে বিনা রক্ত পরীক্ষায় টাইফয়েড এর ওষুধ দিয়েছিলেন। আমার অবস্থার অবনতি হওয়ার সেটাই মূল কারণ ছিল। পরবর্তী তে এই ডাক্তার আমাকে বেশ কিছু টেস্ট আর ওষুধ দিয়েছিলেন,সেই অনুযায়ী সেবন করে প্রায় দেড় মাস পর আমি সুস্থ হই।
ঘটনাটা সংক্ষেপে বললাম। কথায় আছে, “ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়!” আমার অবস্থা ও ঠিক সেই রকম। এখন কোন চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পাই। আর চিন্তা করি,আমি না হয় বেঁচে গেছি, কিন্তু সবার তো আর আমার মত সৌভাগ্য নয়!পত্রিকা আর অন্যান্য গণমাধ্যম এ দেখি,প্রতিদিন কত মানুষ ভুল চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার,আমরা সেটা ভুলে যাই।এটা ও ভুলে যাই যে এই লজ্জা আমাদের ঢাকতে হবে,কিন্তু ঢাকার জন্য আমরা আমাদের কাণ্ডারি পাব কই?
-ফরহাদ রাকিব।
মন্তব্য
এই মাত্র এখানে শ্যাষ করলাম।...............
লেখাটা ফেসবুকের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে দেয়া হোক।
এক কাজ করা যায় না, ডাক্তারের নাম-ধাম, দরকার পড়লে প্রেসক্রিপশনের স্ক্যানড কপি তুলে দেয়া যায় না? সচল কতৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাই। ... যাতে এসব তথাকথিত পফেছর সাহেবদের পিছনের কাপড়টা উলটে যায়, আর পরবর্তীতে সাধারণ মানুষকে নিয়ে ছেলেখেলে করতে গিয়ে অন্তত দুবার ভাবে।
আমারও একই মত.........!!
কী ভয়ংকর!!!
নাম ঠিকানা প্রকাশ করা হোক. আপনি নাম প্রকাশ না করে অন্যকেও কি বিপিদে ফেলার প্লান করছেন নাকি? প্রমান সহ নাম দিন। শিক্ষিত হাতুরে ডাক্তারদের থেকে মুক্তি চাই।
হবু রোগী.
জামাতিস্লামির হাসপাতালে যান ক্যান?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ইবনে সিনাতে জয়েন করার ইচ্ছে ছিল ।সমস্যা হলো জয়েন করলে তো আমি জামাতেইসলামী ডাক্তার হয়ে যাব!চিন্তায় ফেলে দিলেন ভাই
শামীমা রিমা
ভাই, আপনার যদি ডাক্তারের নাম প্রকাশ করতে কোন অসুবিধা থাকে, দয়া করে কারন গুলো জানাবেন। যদি এমন হয় আপনার কাছে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই, তাহলে নাম উল্লেখ করাটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ হাতে থাকলে প্রকাশ করেন, আরো অনেকের উপকার হবে। ব্লগের পাশাপাশি যদি সংবাদপত্রে দিতে পারেন, তাহলে উত্তম।
সহমত।
ভাগ্য আপনার ভালই বলবো।
ভর্তি পরীক্ষার কোচিংএর সময় প্রচণ্ড জ্বর আর একবার পাতলাপায়খানা হওয়ায় আমাকে এক ডাক্তার আমাশয়,টাইফয়েড আর ম্যালেরিয়া এই তিন রোগের ওষুধ একসাথে দিয়েছিল। এক দিনের মাথায় আমি ঘুরে পড়ে যাই। পরে ওষুধ বন্ধ করে প্রাণে বেঁচেছিলাম।
পরে ঐ ডাক্তারকে আমি খুঁজে বের করি। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি উনি ছিলেন আমারই মেডিক্যালের এক বড় ভাই। ঐ সময় উনি ছিলেন হৃদরোগের উচ্চশিক্ষা কোর্সের ছাত্র।
আপনারা না হয় ডাক্তারদের গালাগাল দিয়ে মনের ক্ষোভ মিটাচ্ছেন...আমি কি করবো
সহমত
ইদানিংকালে প্রায় সব ডাক্তারের চেম্বারইতো ডায়াগনোসিস সেন্টারে। মুফতে তাঁদের জন্য চেম্বারকক্ষ বরাদ্ধ দেন ডায়াগনোসিস সেন্টারগুলো। তার একমাত্র কারন প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে যাতে গাদা গাদা টেষ্ট দেওয়া হয়। কোন কোন ডাক্তারতো এর একটা পার্সেন্টেজও পান। আপনার বেলায় উল্টোটা হল কেন বুঝতে পারলামনা।
জানতে চেষ্টা করুন।
প্রৌঢ়ভাবনা
আপনি সুস্থও হয়েছিলেন যার চিকিৎসায় তিনিও কিন্তু একজন ডাক্তার।কিন্তু সেটা আপনার জন্য মধুর কোনো অভিজ্ঞতা হয়নি আগের জনের ক্ষেত্রে যেমন তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনি লিখতে বসেছেন।আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে যেটা দেখেছি,একজন ডাক্তার ১০০ রোগী সুস্থ করার পরিবর্তে যতটা ধন্যবাদ পান তার চেয়ে বেশি গালি খান একজনের ভুল চিকিৎসার জন্য ।আমরা মাঝেমাঝেই ভুলে যাই ডাক্তাররাও মানুষ!!!!!!
অবশ্য আপনাদেরকে বলে লাভ নেই।আসলে ডাক্তার হওয়া আমাদের আজন্ম পাপ আর তার প্রায়শ্চিত্ত করছি আমরা যাদের নামের আগে ডা. উপাধিটা আছে।
ডা. শামীমা রিমা
নতুন মন্তব্য করুন