নিজস্ব দূরত্বে থেকে দেখেছি .

তানিম এহসান এর ছবি
লিখেছেন তানিম এহসান [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০/১০/২০১১ - ৩:৩০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তুমি কিংবা তোমাকে লেখার চাইতে বরং এইসব কথা - নিজস্ব কথোপকথন নিজস্বতার সাথে। নিজস্বতায় নিজেকে মেলানোর চাইতে বরং তুমি নিজস্ব দূরত্বে থেকে দেখো - আমাদের অনন্যতর নিজস্বতা অনন্য কোন অভিন্নতা খুঁজে পেলো কিনা ----

ফোঁটায় ফোঁটায় বলে যাবো কতদূর যাই। ফোঁটা মানে তোমার অর্ধচাঁদ কপালে একটা লুণ্ঠিত ভ্রমরের নীলটিপ; ফোঁটা মানে নির্ঝর আকাশ থেকে টুপ করে পরে যাওয়া একটা বৃষ্টির ফোঁটা তোমার চোখ বেয়ে নেমে যায় আনমনে; প্রতিবার ফোঁটায় ফোঁটায় দেখো কত কথা বলে যাই - আমাকে আমি -

একটি বালক দেখো এখনো বালক রয়ে গেছে! সামনে বয়স তার, আর পিছু ফিরে নিমগ্ন সে বালক চমৎকার সামনে তাকিয়ে দেখে দূর বহুদূর ......... একটি বালক দেখি বালক থেকে গেছে!

ভাবা যায় অনেককিছু, এই যেমন ধরো এখন তোমাকে ভাবাচ্ছে - আমি কোথায় যেয়ে তোমাকে “আচ্ছা যাই” বলে চলে যেতে পারি .....

সব ছেড়ে চলে যাবার ডাকে একটা নিরিবিলি প্রশান্তি থাকে - থাকে একদম নিজের মত করে যখন যা মন চায় তাই করে ফেলতে পারার একটা শিশুতোষ আবাহন। পাখীর ডিমের মত আটটি লোকমা খেলেই পেট পুরে খাওয়া হয় বলে বাসন-কোসন লাগেনা। সব ছেড়ে চলে যাওয়া মানে নিজের চৈতন্যে ফিরে যাওয়া - সেখানে নিত্য খেলা করে অঘোর বিস্ময়!

অর্থ কাগজের নোটের আদলে চলে গেছে বলে কাগজে কাগজে মানুষের বিকিকিনি হয়; আর দেখো কি অদ্ভুত আমরা - কাগজে কাগজ হই - কাগজ কাগজে খোলে - বোধের আগল -

পলাতক হতে হতে জেনে গেলাম পালাইনি আসলে। আসলে পালানো যায়না কোনদিন। শুধু ভিন্ন দূরত্বে থেকে জীবনের অভিন্ন সংজ্ঞা জেনে গেলে পরে আবার তীব্র চোখে টানটান জেনে ফেলা সব -

নৈঃশব্দ্য পৃথিবীর মহত্তম রাগ! যারা জানে তারা বোঝে একটি রাতের নৈঃশব্দ্যের কাছে আমাদের কতটুকু ঋণ,

রাত যদি রাগ হয় তবে তা ঝিঁঝিঁর আলাপে শুরু, আলাপে আলাপে আজ নিস্তরঙ্গ ঢেউ খেলানো একটি ঝিঁঝিঁময় এলানো সন্ধ্যায় ছোটছোট করে শুরু হলো - জীবনের টোল খাওয়া গালে জলের কাঁপুনি;

জেনে গেছি সব সুর হয়না গান - অনুক্ত থেকে যায় বহুকিছু। না বলা ভাষার ভেতর শব্দ নয়, শ্বাসের আনাগোনা - চেপে যাওয়া দীর্ঘশ্বাসে হ্রস্ব ব্যথা - প্রলম্বিত হ্রস্ব শ্বাসেরা ঠাঁই নেয় কোষাগারে; আর আমাদের সব সুখ নিরালা জলের কাছে বাঁধা -

দূরে থাকাই শ্রেয়, বেশি কাছে গেলে দেখেছি বিযুক্তি আসে - খুব কাছে যেয়েও দূরে থাকা যায়, থাকা যায় দূরে থেকে কাছে; আদতে দেখেছি খানিকটা দূরত্ব চিরকাল গভীর বৈচিত্র্য দিয়ে গেছে -

একপাশে ওজন দেবে দাও, আমি আরেকপাশে আছি - মহাশূন্য ছাড়িয়ে গেছি!

একা একা ফিরে যাই, সাথে থাকি আমি! সাথে থাকে একা একাকীত্ব; আর আমার পৃথিবী থাকে তার সাথে মোহগ্রস্ত পৃথিবী;

আমি একদিন এসে দেখি তুমি নেই। কি হলো বলতে পারবোনা, সবকিছু কেমন ফাঁকাফাঁকা হয়ে গেলো - ফাঁকা মানে চতুঃপার্শ্বে যাকিছু - সব বেদম উধাও - তারপর সবকিছু ফিরে আসতে থাকে। তবু মনে পড়ে, একদিন এসে জেনেছিলাম তুমি না থাকার মানে!

দেখলাম উত্তেজিত হলেই ভুল করে ফেলি ক্ষণিকের উত্তেজনায়; বরং একদম সহজ স্বাভাবিক থেকে গেলে দূর্বোধ্য সমাধানে মেটানো যায় সব। উত্তেজিত হলেই বরং জেনে ফেলো ভাঙনের ধ্বনি। দূর্বোধ্য হয়ে যাই - উত্তেজিত চারপাশে বরং দূর্বোধ্য হয়ে যাই -

বিশ্বাসে পার্থক্য সব। যার যার অনন্য বিশ্বাসের সংজ্ঞায় মানুষেরা শেষ প্রশ্বাস পর্যন্ত অপেক্ষা করে। আমি দেখলাম সব অপেক্ষার শেষ হয় নির্বাপণে; নির্বাপিত হয়ে আছি মানুষ এক সনাতন মানুষ ..... বিশ্বাস করেছি আমাতে .....

“বেদেবহর বেদেবহর! জলের কোন খোঁজ জানো কি,
ঠিক জানো কি পাস্তুরিত জল এর বুকে জলের কথা
লিখে ফেলে জলগুলো সব
নাইছে কিনা আগের মতই জলে জলে -

বেদেবহর জলের জীবন - জল এর খবর ঠিক জানো কি
ঠিক জানো কি কোথায় জলের কমতি পরে!”

একটি দেশকে ভালোবাসার কাছে আর সব ভালোবাসা তুচ্ছ হয়ে যায় -

এখন যে যেতে হয়, এখন তবে যাই - বহুক্ষণ কথার ভেতরে কথা জমা হয়ে গেছে - এসো তার সব মনে রেখে -এসো আবার দেখা করি যুক্তাক্ষরে!!

(ক্রমাগত, আজ ১৯ অক্টোবর ২০১১, বরিশাল)


মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

একটি দেশকে ভালোবাসার কাছে সব ভালোবাসা তুচ্ছ হয়ে যায় - হওয়া উচিৎ, কিন্তু সবার হয়না। গদ্যকবিতা, পদ্যকবিতা চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

কিছু কিছু মানুষ আপাদমস্তক সংসারী হয় দেখেছি, কিন্তু কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়ে যায় বৈরাগী ধ্বস । জীবন বড় দীর্ঘ সময় । ধ্বংস আর ভাঙ্গন লুকাতে লুকাতে কায়ার চেয়ে দীর্ঘ ছায়া নিয়ে তবুও কর্তব্যের কাছে প্রতিদিন হাজিরা দেয়া সেই সব মানুষ তাই খুঁজতে থাকে অবলম্বন । যেমন সুখ পাবে বলে পুরুষ ছুটে যায় নারীর কাছে , নারীরা নদীর কাছে যায় , নদীরা মাটির কাছে আসে আর মাটি ? সে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে অবিরাম ।
কেউ কেউ খুঁজে পায় কোন না কোন রোদ্দুর আবার কেউ পায় না …........

লেখাটির প্রতি লাইন থেকে লাইন চোরাবালির গহীন গহ্বর।

কৃতজ্ঞতা শেয়ার করার জন্যে।

দিহান এর ছবি

বাহ...
এতোগুলো এ্যাত্তো এ্যাত্তো ভালো লাইন একসাথে?!
আপনার লেখা অনেক ভালো হচ্ছে দিন দিন...শুভকামনা থাকলো।

ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।

সুমিমা ইয়াসমিন এর ছবি

প্রতিটি লাইন চমৎকার!

কর্ণজয় এর ছবি

নিজস্ব দূরত্বে দাড়ানো মানে ঈশ্বরের চোখ হয়ে যাওয়া...
ভাল লাগলো তানিম...

কর্ণজয় এর ছবি

নিজস্ব দূরত্বে দাড়ানো মানে ঈশ্বরের চোখ হয়ে যাওয়া...
ভাল লাগলো তানিম...

তানিম এহসান এর ছবি

সব পাঠককে ধন্যবাদ, আর মন্তব্যকারী সবার জন্য কচি কলাপাতার মোড়কে বাধাই একটা করে হাট্টিমাটিমটিম হাসি

guest_writer এর ছবি

অদ্ভুত এক ভাললাগা। বোঝানো যাবেনা।

প্রৌঢ়ভাবনা

 তাপস শর্মা  এর ছবি

কি বলব তানিম ভাই, একটা অদ্ভুত আবেশে মনটা ছেয়ে গেলো। মনপাখির ডাক শুনতে পাচ্ছি।

বন্দনা কবীর এর ছবি

দূরে থাকাই শ্রেয়, বেসি কাছে গেলে দেখেছি বিযুক্তি আসে-খুব কাছে যেয়েও দূরে থাকা যায়, থাকা যায় দূরে থেকেও কাছে; আদতে দেখেছি খানিকটা দূরত্ব চিরকাল গভীর চৈচিত্র দিয়ে গেছে’

বড্ড সত্যি কথা।

ট্যাগটা আক্ষরিক অর্থেই স্বার্থক।
অসম্ভব ভাল লাগলো।

তিথীডোর এর ছবি

ভাল লাগল পড়তে। চলুক

কিন্তু একটা ছোট্ট কৌত্বহল--
লেখার শেষে তারিখ, জায়গার নাম জানানোর দরকার আছে কি? চিন্তিত

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

তানিম এহসান এর ছবি

সময় আর স্থান আমি মনে রাখতে চাই, বহুদিন পর হয়তো খাতা খুলে দেখবো আজকের এই তারিখে আমি কেমন ছিলাম, নিজের সাথে কি কথা হয়েছিলো - আমরাতো একটা রুপান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যে যাই - নিজেকে সময়ের সাথে সাথে বোঝার একটা সচেতন আগ্রহ আমার ভেতর কাজ করে লেখালেখির শুরুর সময় থেকেই।

কবিতার বিষন্ন গল্প লেখিকাকে শুভেচ্ছা হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

প্রৌঢ়ভাবনা, তাপস শর্মা, বন্দনা কবির - আলাদা আলাদাভাবে আপনাদের ধন্যবাদ। জীবনে প্রশান্তি থাকুক হাসি

চরম উদাস এর ছবি

জটিল লাগলো তানিম ভাই। চলুক
দেশকে ভালোবাসা মানে তো দেশের মানুষকেও ভালোবাসা। এরকম জিনিস উপযুক্ত বয়সে পেলে এখান থেকে চোথা মেরে চিঠি লিখে লিখে কত মেয়েকে কাত করে ফেলতে পারতাম খাইছে

তানিম এহসান এর ছবি

চাল্লু শয়তানী হাসি

আপুর জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভীষণ গভীর লাগলো লেখাটা।
বেশিরকম মুগ্ধ হলাম। চলুক

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

তানিম এহসান এর ছবি

সুলতানা পারভীন শিমুল! আমার পোস্টে আপনার এই প্রথম মন্তব্যটি আমাকে পরবর্তী পোস্ট করার আগে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে সহায়তা করবে। আশা করি লেখার দুর্বলতায় সমানভাবে আলোচনা করবেন .... আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- শুভেচ্ছা!

বন্দনা এর ছবি

দূরে থাকাই শ্রেয়, বেসি কাছে গেলে দেখেছি বিযুক্তি আসে-খুব কাছে যেয়েও দূরে থাকা যায়, থাকা যায় দূরে থেকেও কাছে; আদতে দেখেছি খানিকটা দূরত্ব চিরকাল গভীর চৈচিত্র দিয়ে গেছে

অসম্ভব সুন্দর লাইনগুলা।
আর ও এমন অসংখ্য লাইন কোট করা যায়। অসাধারন করে লিখেছেন ভাইয়া।

তানিম এহসান এর ছবি

বন্দনা, প্রতিবার আপনার মন্তব্যের শেষে এই ‘ভাইয়া’ বলে ডাক দেয়াটা কেন যেন আমাকে আন্দোলিত করে। ভাইয়াদের সব বোনেরা সর্বত্র সুন্দর থাকুক, অনাবিল প্রশান্তি তাদের জীবন জড়িয়ে রাখুক!!

উচ্ছলা এর ছবি

দ্বিতীয় প্যারা খুব সুন্দর হাসি বাকি প্যারাগুলিও সুন্দর।

আপনার লেখা পড়লে মন খারাপ হয়, তবুও পড়ি হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

“প্রশংসা করলেন না গী.. করলেন ঠিক বুঝতে পারলামনা ইয়ে, মানে... .... তবে ধন্যবাদ :-)” .... খাইছে

তাসনীম এর ছবি

চমৎকার।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তানিম এহসান এর ছবি

তাসনীম ভাই! অনেক ধন্যবাদ ভাই পড়ে মন্তব্য করার জন্য। আপনার লিটল এনজেল দের জন্য আলো থাক আর থাক ছায়া!

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানিম এহসান এর ছবি

ভ্রাত, বুধবার দেখা হইয়া যাইতে পারে!

মৃত্যুময় ঈষৎ(অফ্লাইন) এর ছবি

কী অপূর্ব লাগলো!!! চলুক আপনার শেষ দুটো পোস্টে আপনাকে নতুন রূপে খুঁজে পেলাম, অভিভূত। এই স্বরূপটি আমার খুব ভালো লেগেছে, কবি!!!

“বেদেবহর বেদেবহর! জলের কোন খোঁজ জানো কি,
ঠিক জানো কি পাস্তুরিত জল এর বুকে জলের কথা
লিখে ফেলে জলগুলো সব
নাইছে কিনা আগের মতই জলে জলে -

বেদেবহর জলের জীবন - জল এর খবর ঠিক জানো কি
ঠিক জানো কি কোথায় জলের কমতি পরে!” চলুক

তানিম এহসান এর ছবি

কি র‌্যাগার! র‌্যাগ এর মজা জীবনে একবারই আসে, জীবনে একবারই র‌্যাগ এর ছায়া স্থির করে ফেলা যায়।

পরবর্তীপোস্ট আপলোড করে ফেলেছি, ছাপা হলে পরে দেখো। ভালো থাকো, বড় হও হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।