আদম চটিয়া কহিল, "টাকা নাই মানে? টাকার অভাবে একলা থাকিব?"
ঈশ্বর কাশিয়া কহিলেন, "দেখ আদম, স্বর্গের কোষাগারে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা নাই। যা ছিল সব বিরোধী দলের স্বর্গদূতেরা মারিয়া কাটিয়া লুটিয়া পাচার করিয়াছে। কিয়ৎকাল ধৈর্য ধর। সুমায়ে সুনা ফলে।"
আদম ঘ্যানাইতে লাগিল, "বহুকাল ধৈর্য ধরিয়াছি। শুধু ধৈর্যই নহে, আরও অনেক কিছু ধরিয়াছি। বামহাতের হস্তরেখা প্রায় বিলীন হইয়া গিয়াছে একাকী ধৈর্য আর অনেক কিছু ধরিতে ধরিতে। সুনা ফলিয়াছে, আপনি যথাশীঘ্র সম্ভব অর্থের সংস্থান করিয়া আমাকে একটি ঈভ নির্মাণ করিয়া দিন।"
ঈশ্বর কহিলেন, "আহারে বাছা ইহা ত মোদক নহে যে তুমি আবদার করিবে আর আনিয়া দিব। বিশেষজ্ঞদের মতামত লইতে হয়। তাহারা একেকজন একেক কথা বলিতেছে। কেহ বলিতেছে ঈভ নির্মাণ না করিয়া বরং তোমাকে একটি পেলাসটিকের পুতুল কিনিয়া দিতে। কেহ কহিতেছে আদমের আবার স্ত্রী কী, বেশি লম্ফঝম্ফ করিলে ধরিয়া খোজা করিয়া দিন। কেহ কহিতেছে তোমাকে আরও দুইটি বাম হস্ত সৃজন করিয়া দিতে। শিমুল তুলার কোলবালিশও বিকল্প হিসেবে প্রস্তাব করিতেছে কেহ কেহ। নানা মুনির নানা মত। মাঝখানে তুমি আসিয়া ফট করিয়া ঈভ নির্মাণ করিতে বলিলেই তো হবে না।"
আদম চক্ষু রাঙাইয়া কহিল, "আপনি এই কহিতেছেন কোষাগারে টাকা নাই, আবার পরক্ষণেই নানা মুনির ঘাড়ে মতের বস্তা চাপাইতেছেন! আপনার মতলব ত সুবিধার ঠেকিতেছে না খোদাবন্দ!"
ঈশ্বর কহিলেন, "অনেক হইয়াছে, এইবার যা পালা! ফলমূল পাড়িয়া কিছু আহার কর। আমি দেখি কী ব্যবস্থা করা যায়। আর খবরদার নিষিদ্ধ ফলের বৃক্ষের আশপাশে গমন করিবি না। যদি শুনি ঐদিকে পা বাড়াইয়াছিস, ঈভ তো পাবিই না, ডিংডংখানিও দুই আঙুল কর্তন করিয়া লইব! আমি বিশেষজ্ঞদের সহিত আলাপ মারিয়া দেখি তারা আবার কী কহে।"
আদম মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে দরবার হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া কহিল, "রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।"
বিশেষজ্ঞদিগের সহিত আলাপ সারিয়া ঈশ্বর আদমকে পুনরায় ডাকিয়া পাঠাইলেন।
আদম সাগ্রহে শুধাইল, "টাকাকড়ি কি যোগাড় হইল জাঁহাপন? কবে নাগাদ ঈভ পাইতেছি?"
ঈশ্বর গলা খাঁকরাইয়া কহিলেন, "বিমানিলের সহিত আলাপ করিলাম। বিমানিল মৃত্তিকা হইতে ঈভ সৃজনে আপত্তি জানাইয়াছে। মৃত্তিকা হইতে ঈভ সৃজিলে তাহার উড্ডয়নে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটিবে বলিতেছে সে।"
আদম কহিল, "ঈভের সহিত উড্ডয়নের কী সম্পর্ক?"
ঈশ্বর স্কন্ধ ঝাঁকাইয়া কহিলেন, "আমি কি অত কিছু জানি নাকি রে বাপু? ঈশ্বর হইয়া কী ফ্যাসাদে পড়িলাম, সকলে খালি সকলকিছুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মাগিয়া বসে! বিজ্ঞান চাস তো রিচার্ড ডকিন্সের কাছে গিয়া প্রশ্ন কর হতভাগা, ঈভের সহিত উড্ডয়নের কী সম্পর্ক! আর একখানা ঈভ বলিস বিবর্তনের মাধ্যমে শাখামৃগ হইতে সৃজিয়া দেখাইতে! আমার নিকট ঈভ মাঙিলে এইসব বিজ্ঞানটিজ্ঞান চলিবে না বলিয়া দিলাম!"
আদম কহিল, "বিমানিল কহিল, আর আপনি শুনিলেন?"
ঈশ্বর কহিলেন, "হাঁ। ঈশ্বর হইলে অনেক কিছু শুনিতে হয়। বিমানিল, জাহাজিল, বন্দুকিল, সবার কথার মূল্য দিতে হয়। আরশে তো অধিষ্ঠান কর নাই বাপু, তাই তাল পাও না। স্বর্গ পরিচালনা বহুৎ কঠিন কর্ম, হুঁহুঁ!"
আদম দরবারের মেঝেতে পা ঠুকিয়া কহিল, "তাহলে আমি কীরূপে ঈভ পাইব?"
ঈশ্বর কহিলেন, "দাতা সংস্থার জাপানিলকে বলিয়াছি, বিকল্প হিসেবে তোমার একটি পঞ্জরাস্থি হইতে ঈভ সৃজন করা হইবে। তাহারা এই প্রস্তাব পাশ করিলে অর্থ সংস্থান করিবে, তাহার পর তোমার অপারেশন।"
আদম দুই পা পিছাইয়া গিয়া কহিল, "আমার পঞ্জরাস্থি হইতে মানে? আমার হাড্ডি কাড়িয়া ঈভ বানাইবেন নাকি?"
ঈশ্বর কহিলেন, "হাঁ, সমস্যা কোথায়? একটি হাড্ডিই ত? পঞ্জরের হাড্ডি ধৌত করিয়া কি মাধ্বিক পান করিবি নাকি?"
আদম হাপুস কাঁদিয়া কহিল, "আমার এত সুন্দর দেহ, কাটিয়া কুটিয়া নষ্ট করিবেন? লুই কানের ডিজাইন করা শইলডা আমার ...!"
ঈশ্বর কহিলেন, "এইসব কোনো ব্যাপার নহে আদম, ঈভ চাহ নাকি চাহ না?"
আদম হাপুস কাঁদিতে লাগিল।
এমন সময় বাহিরে মৃদু গুঞ্জরণের শব্দ দরবারে ভাসিয়া আসিল। ঈশ্বর অলিন্দে উঁকি দিয়া কহিলেন, "আ মোলো যা, এ যে দেখছি সত্যাগ্রহী মক্সুদিল আর তার অহিংস সভা! আমার দরবারের সামনে কী চায় হতভাগা?"
আদম আগাইয়া গিয়া কহিল, "এই ঠা ঠা গরমে এই খদ্দরের চাদর গায়ে কী চাহিতেছে মক্সুদিল?"
ঈশ্বর গিবরিলকে তলব করিয়া কহিলেন, "যা তো, গিয়া শুনিয়া আয়, বেটা কী চাহিতেছে এইবেলা!"
গিবরিল উড়িয়া গিয়া সব খবর লইয়া ফিরিয়া কহিল, "হুজুর, স্বর্গগান্ধী মক্সুদিল অনশন শুরু করিয়াছে। লাঞ্চের আগ পর্যন্ত অনশন চালাইবে বলিয়া হুমকি দিতেছে।"
ঈশ্বর বিরক্ত হইয়া কহিলেন, "কেন, আবার কী ঘটিল?"
গিবরিল কহিল, "ঈভ নির্মাণের প্রতিবাদে অনশন চলিতেছে জাঁহাপন!"
আদম তড়াক করিয়া লাফাইয়া উঠিয়া কহিল, "ঈভ নির্মাণের প্রতিবাদ মানে? ঈভ নির্মাণ করিলে মক্সুদিলের কী সমস্যা?"
গিবরিল নোটবই বাহির করিয়া পৃষ্ঠা উল্টাইয়া কহিল, "হাঁ, এই তো যুক্তি দিয়াছে ... মোক্ষম প্রশ্ন! ঈভ নির্মাণ হইলে তাহা ভুরুঙ্গামারীর কী কাজে লাগিবে?"
মন্তব্য
মুখা ফর্মে আছে! মানে দ্যাশে অসঙ্গতি বাড়তেছে...
মুখফোড়ের হইলোটা কী? একটার পর একটা লেখা ছাড়িয়া যাইতেছে!
মুখার জবাব নাই...
ঈশ্বর মুখারে নিজ হাতে কী দিয়া গড়িয়াছেন জানিতে মুঞ্চায়
(অফটপিকঃ আদমচরিতের ফেসবুক পেজে যোগদান করে কেমনে? শুধু তো বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের ব্যবস্থা দেখিলাম। নাকি এইডার কথাই বলা হইসে )
অতীত
ব্যাপক
ইয়া মাবুদ!!!!!!!
এই যে মুখফোড় ব্লগে একটা লেখা লিখিলো, ইহা ভুরুঙ্গামারীর কী কাজে লাগিবে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনাকে গুরু মানিলাম মহাশয়
আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে আপনি কীভাবে কথা বলেন! আপনার লেখা পড়লে কিছুতেই বিশ্বাস হয়না যে আপনি সাধুভাষা ভিন্ন অন্য কিছু বলতে পারেন!!
ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।
চ্রম
আদমচরিতের ফেসবুক পৃষ্টা ভুরুঙ্গামারির কোন কর্মে লাগিবে?
............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্ চিনে।
মুখফোড় রেজিস্টার্ড রস আবার ফিরত আইছে
ফাটাইয়া দিসেন একেবারে । চরম হইসে লেখাটা
জব্বর হইয়াছে খোদাবন্দ
ঈশ্বর ...... ঈশ্বর
ভুরুঙ্গামারী কি স্বর্গের কাছাকাছি?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আদম চরিত রকস। এগেন এন্ড এগেন।
মুখফোড় লোকটা চরম 'ইয়ে' আছে
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
ব্যাপক হয়েছে,
ঠা ঠা ঠা শব্দে স্বর্গ কাঁপাইয়া হাসির ইমো ...
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
অনিন্দ্য সুন্দর লেখা। আদমচরিত-এর মত লেখা পরেই ব্লগ এর নেশায় পেয়ে বেসেছে। অনুভূতি ব্যক্ত করিবার ভাষা খুঁজিয়া পাইতেছিনা।
নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
বৃদ্ধ মক্সুদিল ভাঁড়ে পরিণত হৈতেছে.............
http://www.sachalayatan.com/node/41643#
http://www.sachalayatan.com/node/41643#
অসাধারণ।
ফটোসৌজন্য: রায়হান আবীর
এইডা আইলো কেমনে?! কয়টা দিন ফাকিবাজি কইরা পিরীত করতে চাইসিলাম এর ফাকে এমন বাহারের পোস্টার টাঙ্গাইসিলো কোন বুড়বক?!!
ওস্তাদ, বহুদিন হইল কেউ এইরুপে হাসাইতে পারে নাই । তবে ইদানিং শয়তান কে খুব মিস্ করিতেসি ...........
সবই প্রায় হৃদয়ঙ্গম হইতেছিল তবে স্বল্পজ্ঞানহেতে ভুরুঙ্গামারীতে আসিয়া হারাইয়া গেলাম। সহৃদয় কেউ একটু সুত্র ধরাইয়া দিলে কৃতার্থ হইতাম। মুখফোড়ের মুখ চলতে থাকুক।
নতুন মন্তব্য করুন