আমি কেন আরব বিপ্লবীদের সমর্থন করি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শুক্র, ২১/১০/২০১১ - ১২:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সকালে ঘুম থেকে ওঠা হলেও বিছানা ছাড়তে দেরি হয়। অক্লেশে নানা কিছু মাথায় আসে। এমনকি দিয়ার কথাও। দিয়া আমায় ছেড়ে যাবার পরে বিছানায় ফাঁকাটুকুন মাঝে মধ্যে ভোগাতো। এখন সব ঠিক। আরো কিছুক্ষণ শুয়ে এপাশ ওপাশ করি। পরে উঠি। বাথরুম করতে গিয়ে হাগা কষা মনে হলে বিকালে প্রুন জুস কেনার কথা ভাবি। দাঁত মাজতে গিয়ে আয়নায় দেখতে পাই একটা ব্রণ না ফোঁড়া নাকের নিচে জখমি চেহারা নিয়ে নির্বিকার বসে। চিবে চিবে দেখলেও ব্যথা ঠিক মালুম হয় না।

চায়ের পানি বসিয়ে টিভি খুলে বসি। টু অ্যান্ড আ হাফ ম্যানের পুরানো সিজন। অ্যাসটন কুচারকে বিড়বিড় করে গাল পাড়ি। পুরানো সিজেনের দুটো পর্ব দেখতে দেখতে চা সাথে গারলিক ব্রেডে কামড় দেই। চ্যানেল পালটে দিতেই গাদ্দাফির মৃত্যুর সংবাদ। ন্যাটো হামলায় আহত গাদ্দাফিকে বিদ্রোহীরা আটক করে। পরে তার মৃত হয়ে যাবার খবর ছড়ায়। মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তোলা গ্রাফিকালি ভায়োলেন্ট কিছু ফুটেজও দেখানো হয়। আহত রক্তাক্ত গাদ্দাফি। তারপর একসময় মৃত গাদ্দাফি। বিয়াল্লিশ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বর্বর নিষ্ঠুর স্বৈরশাসকের উৎখাতে লিবিয়ার জনগণের উল্লাসের ছবি সিএনএন বিরতিহীনভাবে দেখাতে থাকে। আমি এসব ভুলে সমুদ্রের কথা ভাবি। দিয়ার কথা, সন্দীপণের উপন্যাসের গলানো পিচের ওপর ছেঁচড়াতে থাকা কষে রক্ত নিচে কিচকিচ করা সেই আশাবাদি ইঁদুরের কথা, স্কুলের ল্যাবে অজ্ঞাত সেই ব্যাঙের কথা, আমার ডুবতে ডুবতে একসময় বেঁচে ওঠা- একটানা সব হাজির হতে থাকে। সেই রাতে হোটেলে দিয়ার ডুকরে ডুকরে কাঁদার দৃশ্য ভাবতে গিয়ে মৃত গাদ্দাফির ছবি গ্রাফিকালি ভায়োলেন্ট মনে হয় না। আমি আরব বিপ্লবীদের সমর্থন করে ফেলি। এর কিছুক্ষণ পরেই ঠিকমতো হাগা পায়।

ফিরে: সন্দীপণ চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি’ উপন্যাসের মুখবন্ধে লিখেছেন- ‘এই ক্ষুদ্র উপন্যাসে বছরকে দিনে, মুহূর্তকে প্রহরে তথা প্রহরকে মাসে রূপান্তরির করার প্রয়াস করা হয়েছে। দিনাঙ্কগুলোও যে যার ঘরে নেই’। এই টুকুন গল্পে সেই ধরনের কোনো প্রয়াস নেই। তবে অজ্ঞাত ব্যাঙ গল্পটা এই গল্পের সাথে গল্পসূত্রে সম্পর্কিত।


মন্তব্য

কল্যাণF এর ছবি

চমৎকার হাততালি

একা পাখি এর ছবি

"সমস্ত পৃথিবীর যৌক্তিক বিপ্লবগুলো সফলতার মুখ দেখুক।

শাব্দিক এর ছবি

চলুক

আলী হায়দার এর ছবি

বিপ্লবীদের সমর্থন করি। দেশদ্রোহীদের নয়। স্বৈরশাসক, লোহমানব, ফ্যাসিস্ট- যা কিছু বিশেষণে গাদ্দাফীকে বিশেষায়িত করা হোক না কেন, লিবিয়ার স্বাধীনতা গাদ্দাফীর মৃত্যুর সাথেই ভুলুণ্ঠিত হলো। সিএনএন, বিবিসি তথা পশ্চিমা মিডিয়াগুলো এনটিসি সমর্থকদের উল্লাসই দেখাবে। কারণ ওটাই এই অন্যায় আগ্রাসনের প্রতি বিশ্ব জনমত তৈরির প্রধান উপকরণ।
এক বিশাল হত্যাযজ্ঞের বিনিময়ে পশ্চিমারা পেল তেলের খনি। শুধু পশ্চিমারা নয়, চীন, জার্মানি সহ আরো কিছু দেশের নাম পেয়েছিলাম খবরে যারা লিবিয়ায় তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ নিয়ে তদবির করছে।
আর লিবিয়াবাসী কী পেল? আপাতত ইরাকের মতো কাগুজে স্বাধীনতা এবং এক পুতুল সরকারের প্রতিশ্রুতি।
শুভেচ্ছা লিবিয়ার বিপ্লবী নামের এই গোবরগণেশদের।

বন্দনা কবীর এর ছবি

আফ্রিকার আরবেরা শৃংখল মুক্ত হোক...

অদ্ভুত ভাল লাগলো অণুগল্প চলুক

মন মাঝি এর ছবি

বুঝলাম না। হাসি

****************************************

আয়ন এর ছবি

চলুক

 তাপস শর্মা  এর ছবি

মুগ্ধতা আর গুরু গুরু

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

গাদ্দাফির ক্ষেত্রে 'মানবতা'র হিসাবটা কেমন হবে? তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দইয়ে এই যে পিটানি দিয়ে মেরে ফেললো, এতে মানবতা কি হাহাকার করে উঠবে না? মানবতার চোখে নিরস্ত্র মানুষের খুনী আর অস্ত্রধারী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধবন্দী সবাই কি সমান, সবার প্রাপ্য মানবতাবাদী অধিকার কি সমান?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

nirbashito pothik এর ছবি

লিখাটা বেশ অপ্রাসন্গিক ও অযৈাক্তিক মনে হলো! সমর্থন করেন ঠিক আছে কিন্তু আপনার দৈনন্দিন জীবনের অপ্রয়োজনীয় বর্ননা কিভাবে ঐ সমর্থনের কারন হলো তাই বুঝলাম না। চিন্তিত

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এগুলা আব্‌জাব্‌, ভাইটু। তাই অপ্রাসঙ্গিক ও অযৌক্তিক।

সুমাদ্রী এর ছবি

গাদ্দাফি নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক ছিলেন, ঠিক, তবে তার হাত ধরেই লিবিয়ার অর্থনীতির বিকাশ শুরু। ইতালিয়ান ঔপনিবেশিকতা লিবিয়াকে মাথা তুলে দেয়নি, সেখানে বেদুইন জাতিগুলোকে সংগঠিত করা, লিবিয়ার কৃষিখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, সবই এসেছে গাদ্দাফির ৪২ বছরের শাসনামলে। বিশ্ব-ব্যাংকের খবরদারি মানেনি গাদ্দাফি, কখনও এক পয়সা ঋণ করেনি এই দুষ্ট চক্রের ব্যাংকটি থেকে, দেশের তেল সম্পদ উত্তোলনে দেশের কতটুকু লাভ হল সেটাই দেখেছিল সে, পরিসংখ্যানটা ছিল ৭৯% রাষ্ট্রের, ২১% উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানের। সেচ প্রকল্পের জন্য পৃথিবীর প্রথম মানবনির্মিত ভূ-গর্ভস্থ নদী গাদ্দাফির এক অনন্য অবদান যেটাকে গাদ্দাফি বলত অষ্টম আশ্চর্য। উপনিবেশিকতা এবং নব্যউপনিবেশিকতার বিরুদ্ধ্বে বরাবরই গাদ্দাফির কন্ঠস্বর ছিল প্রতিবাদী। যুক্ত আফ্রিকান রাষ্ট্রপুঞ্জের ধারণার জন্ম দিয়েছিল এই লোকটিই। আরব লীগের নপুংসক নেতাদের সমালোচনায় যেমন মুখর ছিল গাদ্দাফি, ঠিক তেমনি আল-কায়েদার মত সন্ত্রাসী সংগঠনকেও স্বাগত জানায়নি সে। গাদ্দাফির স্বৈরশাসন নিশ্চিত নিপীড়ণ চালিয়েছে। অনেকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে, ফাঁসীতে লটকেছে অনেকে, গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে অনেকে। তারপরও লোকটার সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধ্বে বুক চেতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য এবং শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করে যাওয়ার মানসিকতার জন্য তাকে স্যালুট জানাই। এটা ঠিক গাদ্দাফির মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশী লাভ হয়েছে নব্য-উপনিবেশিকদের। সাধারণ লিবিয়বাসীর কতটুকু লাভ হল তা সময়ই বলে দেবে। তবে তার পতনের সাথে সাথে আফ্রিকা তার শেষ সাহসী বীরটিকে হারালো। আসুন আমরা উল্লাস করি।

পাঠক এর ছবি

চলুক

- মেফিস্টো

দিগন্ত এর ছবি

"গাদ্দাফি নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক ছিলেন, ঠিক"

- এরপরে বাকি কথাগুলো অর্থহীন কারণ লেখার শেষে এই "নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক" আপনার মতে "শেষ সাহসী বীর" হয়ে গেছে ... কি করে একই মানুষ "নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক" ও "শেষ সাহসী বীর" হতে পারে তা মাথায় ঢোকে না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

উচ্ছলা এর ছবি
মরণশীলিঋবঘ্ন এর ছবি

শুধু মাত্র পশ্চিমাদের তেলের যোগান নির্বিঘ্ন করাই নয়, গাদ্দাফির এ পরিনতির জন্য তিনি নিজেও কম দায়ি নন। বিরোধিদের মাথা তুলতে না দেয়া, নির্বিচার হত্যা এই সব কিছুর জন্যই মাশুল নির্ধারিত। গাদ্দাফি আজ তার কৃতকর্মের মাশুল দিলেন। শুধু দুঃখবোধ করি লিবিয়ার সাধারন জনগনের জন্য। এই দেশের ভাগ্য এখন চলে যাবে আমেরিকা আর ইউরোপিয়ান্দের হাতে।
বিদ্রোহি বাহিনির নেতৃত্ব কেমন পশ্চিম অনুরক্ত তার উপরই নির্ভর করছে এখন অনেক কিছু!!

মন মাঝি এর ছবি

দুনিয়াটা বড়ই জটিল জায়গা! এখানে নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসের নৈতিক এলাইনমেন্টটা সবসময় ঠিক রাখা যায় না। কে কখন বন্ধু, কে কখন শত্রু, কোনটা কখন কেন ভাল, কোনটা কখন কেন খারাপ, সব তালগোল পাঁকিয়ে যায়। ছাঁচে ঢালা লুপবদ্ধ মানসের একটিমাত্র বান্ধা টেমপ্লেটের জাঁতাকলে পড়ে অনেক সময় শয়তানকে মনে হয় হিরো বা শহীদ, আর হিরোকে মনে হয় শয়তান বা দেশদ্রোহী! এই গ্যাঁড়াকলে পড়েই ৭১-এ অনেক আরব দেশের নির্দোষ মানুষের কাছে ভারতের সমর্থন ও সাহায্যের কারনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে মনে হয়েছিল দেশদ্রোহ, হিন্দু/কাফের/ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র আর শয়তানি (বলাই বাহুল্য এমনকি এদেশের কিছু লাফাঙ্গারও তাই মনে হয়েছিল)। আর মুক্তিযোদ্ধাদের মনে হয়েছিল দেশদ্রোহী, বেইমান, মোনাফেক, ভারতীয় চর, ইসলামের শত্রু, ঘরভেদী বিভীষণ, ইত্যাদি। ৪০ বছর পর তাদের দুর্দিনে (এবং একই সাথে মুক্তি ও গৌরবের দিনে) এখন আমাদের অনেকে তাদেরকে তাদের সেই বদ্ধ-টেমপ্লেটের চিন্তা-ও-এম্প্যাথিশুন্য নি-জার্ক রিয়্যাকশনের সহৃদয়তা ঠিক একই ভাবে ফিরিয়ে দিচ্ছি। ওদের মুক্তিযোদ্ধারা এখন আমাদের কারো কারো বদ্ধঅন্ধফসিলিভূত-টেমপ্লেটে দেশদ্রোহী পশ্চিমা স্বার্থের পুতুল , আর ৪২ বছরব্যাপী একব্যাক্তিসর্বস্ব একটা প্রাইভেট হ্যালোইন পার্টির হোস্ট একটা বদ্ধ-উম্মাদ দানব শাদ্দাদ হচ্ছে মহান নেতা এবং বীর!

নাহ্‌, দুনিয়াটা আসলেই জটিল জায়গা!

****************************************

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

দুনিয়া খালি জটিল না, নির্দয় জায়গা।

এই পোস্টের সাথে অপ্রাসঙ্গিক, কিন্তু নির্দয়তা সাপেক্ষে প্রাসঙ্গিক এই ভিডিও দেখার পর থেকে ঠিক স্বাভাবিক থাকতে পারছি না।

গ্রাফিকালি ভায়োলেন্ট, দেখার আগে ভাবুন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।