ঊষাকালে নন্দন কানন নিঝুম নিস্তব্ধ থাকে। কাকপক্ষীও তখন নীড়ে কুণ্ডলী পাকাইয়া নিদ্রামগ্ন থাকে। আদম এই সময়েই প্রাতকৃত্য সারিতে গাড়ু হস্তে বাহির হয়। আশেপাশে নন্দন কাননের অপূর্ব সব বৃক্ষ ও ঝোপঝাড়, তারই কোন এক গহীন কন্দরে ঢুকিয়া সে কর্মসাধন করিয়া আসে। বেলা চড়িলে লোকজনের সমাগম বাড়ে, এবং তাহাদের ভিড়ে দুই-চারিটি পরিবেশবাদী সর্বদাই থাকিবে, যাহারা ঝোপেঝাড়ে বাগানক্রিয়া সারিতে দেখিলে হল্লাচিল্লা করে। একবার তো তাহারা পাপারাজ্জিতার সীমাহীন পরাকাষ্ঠা দেখাইতে পত্রিকায় আদমের বমাল চিত্র ছাপাইয়া দিয়াছিল।
আজ ভোরে গাড়ু হাতে বাহির হইয়া আদম বোকা বনিল। বাটীর অদূরেই পৌর চত্বরে বিষম ভিড় দেখা যাইতেছে। কয়েকটি বাদাম ও চটপটিবিক্রেতা স্বর্গদূত সেই ভিড়ের উছিলায় চুটাইয়া ব্যবসা করিতেছে। আদম যোগবলে নিজের বিয়োগবেদনা দমন করিয়া গাড়ুটি পুনরায় অন্দরমহলে রাখিয়া আপেলপত্রটি ঠিকঠাক করিয়া সেই ভিড়ের দিকে আগাইয়া গেল। ঘটনা কী, জানা প্রয়োজন।
কিছু উৎসুক স্বর্গদূতকে কনুইয়ের ঘায়ে পরাভূত করিয়া আদম ভিড় ঠেলিয়া আগাইয়া গেল।
চত্বরের মাঝে দুইটি আসনে আয়েশ করিয়া নির্লিপ্তবদনে বসিয়া আছে আশরাফিল আর আবুলিল। তাহাদের অদূরেই ঘুরঘুর করিতেছে নিউটনিল। জুয়াড়ি সালমানিল ঘুরিয়া ঘুরিয়া ভিড় হইতে পয়সা তুলিতেছে। অদূরে সাপ্তাহিক চান্দের আলোর এক সাংবাদিক হাস্যমুখে উপস্থিত জনতার সাক্ষাৎকার লইতেছে।
আদম ভিড়ের এক কোণায় গিবরিলকে দেখিতে পাইয়া আগাইয়া গেল।
"ওহে গিবরিল, হইতেছে কী এইখানে?" আদম গিবরিলের হস্তধৃত ঠোঙা হইতে একটি বাদাম তুলিয়া দাঁতে কাটিয়া কহিল।
গিবরিল উৎফুল্ল মুখে কহিল, "রেস চলিতেছে, দেখিতেছ না?"
আদম গর্দান ঘুরাইয়া এইপাশ ওইপাশ দেখিয়া কহিল, "কই? কীসের রেস? কে দৌড়াইবে?"
গিবরিল হাসিয়া কহিল, "এ দৌড়ের রেস নহে আদম, ইহা বসিবার রেস।"
আদম ঘাবড়াইয়া কহিল, "এমনও রেস হয় নাকি?"
গিবরিল ইশারায় নিউটনিলকে দেখাইয়া কহিল, "দেখিতেছ ইহাকে? নিউটনিল। দিবারাত্র জ্ঞানবৃক্ষের তলে বসিয়া বসিয়া ঝিমাইত হতভাগা। আচমকা একদিন জ্ঞানবৃক্ষের একটি ফল তাহার মস্তকে আসিয়া আছড়াইয়া পড়িবার পর সে বিপুল আক্কেল লাভ করিয়াছে। গণিত বল বিজ্ঞান বল সব কিছুতেই সে নানা তত্ত্ব ঝাড়িতেছে। অসিতকাষ্ঠ আর খড়ি ছাড়া কোথাও যায় না।"
আদম দেখিল, নিউটনিল একটি অসিতকাষ্ঠে খড়ি দিয়া কী কী হিজিবিজি যেন দাগ কাটিতেছে।
"কী বলিতে চায় সে?" আদম শুধাইল।
গিবরিল বাদামের খোসা ছাড়াইতে ছাড়াইতে কহিল, "নিউটনিল দাবি করিতেছে, সে গতির তিনটি সূত্র আবিষ্কার করিয়াছে। তাহার প্রথমটি হইতেছে, বাহ্যিক বল প্রযুক্ত না হইলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকিবে।"
আদম কহিল, "বটে? তা বাকি দুইটি সূত্র কী?"
গিবরিল কহিল, "বাকি দুইটি সূত্র এখনও ফাঁস করে নাই হতভাগা। কিন্তু প্রথম সূত্র দিয়াই সে বাজার জমাইয়া ফেলিয়াছে। ঐ যে দেখিতেছ সালমানিল? ঐ যে ফাটকা বাজারে ফটকেমো করিয়া বেড়ায়? সে আজ ভোরে আশরাফিল আর আবুলিলকে ধরিয়া আনিয়া রেসের আয়োজন করিয়াছে। বাজির পয়সা তুলিতেছে জনগণের নিকট হইতে, চাহিয়া দেখ।"
আদম দেখিল, লোকজন ঘটিবাটী বেচিয়া পয়সা আনিয়া তুলিয়া দিতেছে সালমানিলের হাতে।
গিবরিল কহিল, "কে সবচে বেশিক্ষণ গদিতে বসিয়া থাকিতে পারিবে, ইহা লইয়া বাজি। কেহ ধরিতেছে আশরাফিলের উপর, কেহ ধরিতেছে আবুলিলের উপর।"
আদম কহিল, "তুমি কাহার উপর ধরিলে?"
গিবরিল কহিল, "এখনও ধরি নাই, বিবেচনা করিতেছি কাহার উপর ধরা যায়।"
আদম কহিল, "আবুলিলের উপরেই ধর। খোদ ঈশ্বর উহাকে ঘাঁটাইতে সাহস পাইতেছেন না, তদুপরি শুনিয়াছি তাহার পশ্চাদ্দেশের ত্বক তক্ষকের ন্যায় সূক্ষ্ম রোমযুক্ত, যাহা ভ্যান ডের ওয়াল বল দ্বারা সংলগ্ন সমতলের অণুপরমাণুর সহিত চিপকাইয়া থাকে। আর নিউটনিল ত বলিতেছেই, বাহ্যিক বল প্রযুক্ত না হইলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকিবে। আবুলিলের উপর বল খাটাইবার মত বলিষ্ঠ বলীবর্দ নন্দন কাননে নাই।"
গিবরিল কিছু কহিল না, আনমনে দূরে সাপ্তাহিক চান্দের আলোর সাংবাদিকের দিকে আঙুল তুলিয়া শুধু হাসিল।
আদম কিয়ৎক্ষণ চিন্তা করিয়া কহিল, "রোসো, গাড়ুখানা কাঁসার দোকানে বেচিয়া কিছু পয়সা লইয়া আসি। আশরাফিলের উপর বাজি ধরিলে লস নাই।"
মন্তব্য
মুখফোড় অন ফায়ার
সকাল বেলায় মনটাই ভালো হয়ে গেল ।
আদমের কথায় ভরসা করিয়া আশরাফিলের উপর বাজি ধরিতে যাইয়াও আবুলিলের উপর বাজি রাখিলাম!
love the life you live. live the life you love.
আবুলিলের উপরেই বাজি ...
চরম।
খাসা হয়েছে ...সেইরাম
টুইটার
বাজি ‘আবুলিলই’ জিতিবে, তাহার পক্ষে বাজি ধরিলাম!
আবুলাইল এর উপর বাজি ধরিলেও সালমানিল এর পকেটই ভরিবে মনে হইতেছে।
"যোগ বলে বিয়োগ বেদনা দমন"
আদম চরিত ৩৯ এর পর ৪৪?!! মাঝখানের সংখ্যাগুলো কে খাইলো? আশরাফিল না আবুলিল?!!
গুল্লি দাগাইয়া গেলাম
সেইরাম হইছে বস ...
বাজির দর কত?
তয় আবুলিলের উপর ব্লাইন্ড খেলতেও আপত্তি নাই।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ল্যাব করে এসে যে ক্লান্তিটা ছিল, এইটা পড়ার পর সেইটা কই যে গেল টের পেলাম না।
আবুলিলের ওপর বাজি ধরিলাম।
মুখফোঁড় আদমচরিত লিখিতে ক্লান্ত বোধ করিবেন, কিন্তু আবুলিল লজ্জিত হইবে না।
তাহার পশ্চাদদেশ শুধু নহে চক্ষু চর্মও ব্যাপক পুরু, না হইলে কি আর শহীদ মিনারে যায় আজ!
"যোগ বলে বিয়োগ বেদনা দমন"
facebook
" যোগ বলে বিয়োগ বেদনা দমন "
"যোগবলে বিয়োগবেদনা দমন" এই প্রক্রিয়াটি শেখার কি কোন উপায় কারো জানা আছে? প্রক্রিয়াটি শেখার বড়ই সাধ।
প্রৌঢ়ভাবনা
হাহাহা মুখা খেপি গেসে!!
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আবুলিল আবুলিল।
ব্যাপক
অতি চমৎকার। দৈর্ঘ-প্রস্থ-উচ্চতা সবদিক দিয়ে এটি অন্যতম লেখা।
চমৎকার চমৎকার চমৎকার চমৎকার চমৎকার।
বিজ্ঞান দ্বারা আবুলিল আশরাফিল কে ধৌত করণে যারপরনাই আমোদিত হৈলাম। নতুন মাত্রা খুঁজিয়া পাইলাম। যথারীতি অনন্য!!!
যোগবলে বিয়োগবেদনা ত্যাগ করিতে পারিলে ভালো হইত। হাসিতে হাসিতে আমার তো . . . ... ..
আহা ! আজ নিউটন বুড়ো বেঁচে থাকলে তার আবিস্কারের এমন জ্যান্ত প্রমান দেখে কতই না খুশি হতো !!
নতুন মন্তব্য করুন