আনু
শরীফের মতো তেলতেলা লোক আমি জীবনে আর মাত্র একটিই দেখেছি। আমাদের জনৈক মন্ত্রী, যিনি কিনা সব ব্যাপারেই খালি দন্ত বিকশিত করে হেসে যান। শরীফের লেখার যত সমালোচনাই করা হোক না কেন, ও শুনে মুখে একটা তেলতেলে হাসি ঝুলিয়ে রাখে। গত বছর যখন ওর "সোনালি জোছনা এবং কালো জোনাকি" বাজারে আসে, উদাস বইমেলাতে একদিন কিছু উদ্ভিন্ন যৌবনা তরুণীকে অটোগ্রাফ দেয়া অবস্থায় শরীফকে পাকড়াও করে। শরীফ একটু মোটাসোটা। তাই বুকের আকারটাও প্রয়োজনের চেয়ে বেশ বড়। উদাস গিয়ে দিব্যি নির্লিপ্ত মুখে ওর বুকে জোরে একটা চিপি দিয়ে বলে, সভ্যতাকে টিপ দিলাম। সবাই মোটামুটি হা হা করে উঠে বিশিষ্ট লেখকের এই পরিণতি দেখে। উদাস পরে ব্যাখ্যা দিয়েছিলো ওর এই কু কর্মের। শরীফ তার "তোমার জোড়া স্তনের চাপে জোনাকিরা আজ মরে মরে যায়", কবিতার ব্যাখ্যায় স্তনকে সভ্যতা আর জোনাকিকে মানবতা বলেছিল। উদাস তাই নাকি একটু সভ্যতাকে চিপি দিয়েছিলো। সভ্যতা নাকি খুবই অলস বস্তু। মাঝে মধ্যে চিপি না দিলে নাকি ঠিক মতো বেড়ে উঠে না। শরীফ আমাদের কাছে ঘ্যানঘ্যান করে এই অপমানের বিচার দিতে এসেছিলো। উদাস বলে,
- তোর কপাল ভালো যে তুই সভ্যতাকে স্তন বলেছিস, নিতম্ব বলিস নাই। গর্দভ কোথাকার।
এগারোটার সময় একটা ক্লাস আছে আজকে। স্যারের খাতার ভেতর এতো ডুবে ছিলাম যে অনেক সময় চলে গেল। এর মাঝে আবার শরীফের ফোন। তার সদ্য পাওয়া সাহিত্য পুরস্কারের ঘ্যানঘ্যান গল্প। খাতা বন্ধ করে করে ঘড়ির দিকে তাকালাম। যা বাবা, সেই দেরীই হয়ে গেল। দশটা বেজে গেছে। এখন রিকশা পাওয়া মহা মুশকিল হবে। রিকশাওয়ালাদের এ সময় অবস্থা হয় হয় কলেজ পড়ুয়া সুন্দরী কিশোরীটির মতো। নানাদিক থেকে অনেকেই যাকে ভালবাসা জানাতে থাকে। মেয়েটি কাউকেই হ্যা ও বলেনা আবার না ও বলে না। বরং সব ছেলের দিকেই একটা বিরক্তিমাখানো করুণার দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। এই সময়ে আমি যদি রিকশাওয়ালাকে ধানমন্ডি যাবে কিনা জিজ্ঞেস করি তাহলে রিকশাওয়ালা কিছু না বলে একটা বিরক্তিমাখানো উদাস দৃষ্টিতে তাকাবে। এগারটার আগে মনে হয় ভার্সিটি পৌঁছানো যাবে না। আগে যখন ছাত্র ছিলাম, সময়মত ক্লাসে পৌঁছানো নিয়ে মাথা ব্যথা ছিলোনা। এখন শিক্ষক হয়ে দেরীতে পৌঁছালে আমার জন্য পুরো ক্লাস অপেক্ষা করে থাকবে।
বের হতে যাব এমন সময় ফোন বাজা শুরু হল। অচেনা নাম্বার। চঞ্চরী অনেক সময় নাম্বার লুকিয়ে ফোন দেয়। ধুর, হলেই বা কি?ধরবো না ধরবো না করেও ফোনটা ধরে ফেললাম। অপর পাশ থেকে বিচ্ছিরি ধরনের খিক্ খিক্ হাসি শোনা গেল। এমন গা জ্বালানো হাসি একজনই দিতে পারে, উদাস।
- এই উদাস ঢং করিস না।
- কেন সোনা, ঢং ভালো লাগে না? তা ভালো লাগবে কেন, দিনরাইত মাইয়্যা মানুষের সাথে ফোনে ইটিস পিটিস করলে বন্ধুদের ফোন আসলে বিরক্তই তো লাগবে।
- প্যাঁচাল থামা, ক্লাসে যাচ্ছি।
- যা, অত তাড়া কিসের? আমার সাথে তোর ওই মধুমাখা গলায় একটু পিরিত করে তারপর যা।
- ভালো, তুই থাক আমি গেলাম।
- আরে শোন ময়না, রাগ করোস কেন? তোর জন্য ভালো খবর আছে। তোর ডাটাগুলা উদ্ধার করে দিতে পারলে আমারে কি দিবি বল?
- একটা চুমা দিমু।
- মন্দ না, তবে তুই না ওই যে কি জানি নাম মঞ্জরী না খঞ্জরী ওরে বলিস দিতে, তাহলে রাজী আছি।
- চঞ্চরী নামটা খুব কঠিন বলে মনে হলে ওর আরও একটা নাম আছে সেটা বলতে পারিস, পর্ণা।
- আরেব্বাস্, ওইটা আরও ভয়ঙ্কর নাম, শুনলেই খালি পর্ণো পর্ণো মনে হয়!
- হারামজাদা! ডাটা আসলেই সব রিকভার করছস?
- হুম্, হান্ড্রেড পারসেন্ট। তোর পুরানো অনেক লেখার খসড়া পড়লাম। তুই মনে হয় গত পাঁচ বছরে নতুন কিছুই লিখস নাই। তোর পিরিতের মেইলগুলা এখনো পড়ি নাই। আয়েশ করে বসে পড়তে হবে।
- কি হবে লিখে? ডাটাগুলা সাইজ করার জন্য থ্যাংকস। কিন্তু আমার প্রাইভেসির ব্যাপারটা খেয়াল রাখিস।
- রাখ তোর প্রাইভেসি। তোর ওইসব ল্যাদল্যাদা প্রেমের ইমেইল পড়ার আমার কোন ইচ্ছা নাই। সারারাত বইসা মেয়েদের পিরিতের মিষ্টি মিষ্টি ইমেইল লেখতে পারো আর স্যারের গল্পটা নিয়ে বসার সময় হয়না।
- আমারে জ্ঞান দেয়ার আগে তোর অংশের কি খবর বল।
- আরে, আমি তো টাউনের বাইরে। কনফারেন্সে আসছি ফ্লোরিডায়। কালকে ফিরবো। এরপর শুরু করবো।
- ওই আমি রাখলাম রে উদাস দেরী হয়ে গেল।
- আচ্ছা সোনা, খোদাহাফেজ।
যাক একটা সমস্যার সমাধান হল অন্তত। কম্পিউটারটা গত এক বছর ভালোই সার্ভিস দিচ্ছিলো তারপর থেকেই বিগড়ানো শুরু হলো। একবার এটা নষ্ট হয় তো আরেকবার ওটা। হার্ডডিস্কটা নষ্ট হয়ে যাবার পর মহা মুশকিলে পড়লাম । প্রথমত: অনেকগুলো টাকার ধাক্কা এবং তারচেয়েও বড় কথা অনেক প্রয়োজনীয় ডাটা হারানো । অবশ্য প্রয়োজনীয় ডাটার বেশিরভাগই হচ্ছে আমার পুরনো কিছু লেখা আর চঞ্চরীর মেইল। রাগ করে সমস্ত মেইল মেইল বক্স থেকে মুছে দিয়েছিলাম। হার্ডড্রাইভে ওগুলোর কপি ছিল। মেয়েটা মেইল লিখে চমৎকার। ধুর, আবারও সেই একই চিন্তা মাথায় ঢুকছে। তবে উদাস মহা ফাজিল হলেও খুবই কাজের। প্রোগ্রামিং এর বস। আমাকে একটা সফটওয়্যার দিয়েছিলো ডাটা উদ্ধারের জন্য। সেটা চালিয়ে কি সব হাবিজাবি একগাদা ফাইল পেয়েছি। সেইগুলা আবার উদাসকে পাঠিয়েছিলাম ঠিক করার জন্য।
রিকশায় উঠে চঞ্চরীকে নিয়ে আমার সমস্যার ব্যপারে আবার ভাবতে শুরু করলাম। অবশ্য জানি ভেবে লাভ নেই, আজকে যেটা সত্য মনে হচ্ছে কাল সেটা আবার অন্যরকম বলে মনে হবে। ধুর, মেয়েরা যে এত ঝামেলার সেটা কে জানত। নাহ্, একেবারেই যে জানতাম না সেটাও ঠিক না। বলতে গেলে জেনেশুনেই বিষপান করেছি। অবশ্য ঠিকমতো পান করতে পারলেও কথা ছিলো, গলায় বিষ আটকে এখন শিবের মতো নীলকণ্ঠ হয়ে বসে আছি। উদাস আমাকে বলতো আমার মধ্যে নাকি তরলভাব প্রবল। তাই আমার উচিৎ মেয়ে দেখলেই মনে মনে সাপ, সর্প, কালসাপ, অজগর, পাইথন ইত্যাদি কথা আউরাতে। ভালোই চলছিলো জীবন। কিন্তু ভার্সিটি জীবনের শেষ বছরে এসে খানিকটা লেজে-গোবরে করে ফেললাম। কোন কুক্ষণে যে পর্ণার সাথে পরিচয় হয়েছিলো। অবশ্য পর্ণা না হয়েছিলো ঝর্ণা, সুবর্ণা বা অনন্যা জাতীয় যে কোন মেয়ের সাথেই পরিচয় হলে একই ঘটনা হয়তো ঘটতো। বিবি হাওয়া থেকে শুরু করে পর্ণা পর্যন্ত সকল নারীকেই এখন একই রকম মনে হচ্ছে। আচ্ছা সবকিছু নিয়ে পর্ণার সাথে সরাসরি কথা বললে কেমন হয়। অবশ্য এই কাজটা মনে হয় না কখনো করতে পারব। ছোটবেলা থেকেই আমি প্রচণ্ড অভিমানী। আমাদের বাংলা স্যার মিথ্যা বলা সহ্য করতে পারতেন না। স্কুলে থাকতে একবার মনে আছে মিথ্যা বলার অপরাধে স্যার আমাকে মারতে গিয়েছিলো। তখন ভীষণ কেঁদেছিলাম। আমার কান্না দেখে শেষ পর্যন্ত স্যার আমাকে মারেননি কিন্তু আমার কান্না থামছিল না। স্যার হয়তো ভেবেছিলো আমি ভয়ে কাঁদছি কিন্তু আমি কাঁদছিলাম অপমানে, অভিমানে। আমি মিথ্যা বলিনি কিন্তু' সেই কথাটা স্যারকে বলতেও পারিনি। তখন অনেক ছোট ছিলাম তো তাই একরাশ অভিমান বুকে নিয়ে শুধু ভাবছিলাম, কেন আমি বলবো? কেন আমাকে সব বুঝিয়ে বলতে হবে? অনেক পরিণত হবার পরও আমার মধ্যে সেই প্রবল অভিমান রয়ে গেছে। সবসময় আশা করি আমার না বলা কথাগুলো অন্যে বুঝে নেবে। আর সেটা যখন হয়না তখনই প্রবল অভিমান নিয়ে ভাবতে থাকি, কেন আমি সব বুঝিয়ে বলবো?
রাজীব আর উদাসের সাথে কথা বলে ঠিক হয়েছে স্যারের পুরো গল্পটাকে সময়কালের হিসেবে তিন ভাগে ভাগ করে আমরা তিনজনে তিন অংশ লিখবো। মেলানোটা কঠিন হবে বেশ। আমাদের তিনজনের লেখার ধাঁচ আলাদা। আমি যে কোনধরনের বাহুল্য বাদ দিয়ে শুধু গদ্যটাই লিখে যেতে পছন্দ করি। রাজীব ক লিখে শুরু করলে সেটা কলা কমলা হয়ে কম্পিউটারে গিয়ে ঠেকে। ঘটনার চেয়ে ওর উথাল পাথাল ভাবনাই বেশী থাকে ওর লেখায়। কিন্তু সেই এলোমেলো ভাবনাগুলোই আসলে ওর লেখার মূল আকর্ষণ, গল্পটা মুখ্য নয়। আর উদাস লেখার চেয়ে বেশী ফাতরামিতে ব্যস্ত থাকে। লেখক না বলে ওকে হয়ে স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান বলাই শ্রেয়। স্কুলজীবনে আমরা একসাথে অনেক বদমাইশি করেছি। আমাদের কুসঙ্গে পরে রাজীব পর্যন্ত সকল অকাজের সাথে জড়িয়েছে। কিন্তু সেই জীবন আমরা কবেই ফেলে এসেছি। শুধু উদাস ছাড়তে পারেনি। আমেরিকাতে গিয়ে ডক্টরেট করছে, অথচ স্কুলে যেভাবে অকাজ করে যেত একের পর এক সেইগুলা ওখানেও দিব্যি বজায় রেখেছে। সারাজীবন শুনে এসেছি পিএইচডি সুপারভাইজার এর অত্যাচারে গবেষকগণ অতিষ্ঠ হয়। ওর বেলায় হয়েছে উল্টা। ওর অত্যাচারে নাকি ওর প্রফেসর চাকরি ছেড়েছুড়ে বিবাগী হবার চিন্তা ভাবনা করছে।
রাজীব
বসে বসে উদাসের জগাখিচুড়ির পরের পর্বের খসড়া পড়ছিলাম। উদাস প্রতি পর্ব লিখে আগে আমাকে পড়তে দেয়। ওর ধারনা আমি এই জগতের সবচেয়ে নির্লিপ্ত এবং কাটখোট্টা মানুষ। তাই ওর লেখা পড়ে যদি আমার হাসি পায় তাহলে নাকি দুনিয়ার যে কোন লোকেরই হাসি পাবে।
জগাখিচুড়ি - ০৭
নারী তিন প্রকার। আম, কলা এবং লেছু (মতান্তরে লিচু) নারী। হিন্দিতে আম মানে সাধারণ। আম নারীও হচ্ছে সাধারণ নারী। এরা জন্মায়, বিয়ে করে, ঘর সংসার করে এবং মরে যায়। কলা নারী নানা ধরনের কলায় পারদর্শী। কেউ শিল্পকলা, কেউ ছলাকলা, আর বাকিরা সবাই অত্যাচারকলা। আর লেছু নারী ...
পড়তে পড়তে আমার হাই উঠে। বাকিটুকু না পড়েই বুঝতে পারি উদাস কথাকে কোথায় নিয়ে যাবে। মহিলাদের ক্ষ্যাপাতে ওর জুড়ি নেই। আমি পরের প্যারায় যাই,
স্বপ্ন দেখাটা নিশ্চয়ই দোষের কিছু না। তবে স্বপ্ন দেখলে দোষ হতে পারে। আর তাই দোষী স্বপ্ন বলে কিছু না থাকলেও স্বপ্ন দোষী আলবৎ আছে।
এখানে ও শিবরাম কে নকল করছে। কথা নিয়ে খেলা করছে। শিবরাম যেটাকে নিয়ে সারাজীবন খেলে গেছে নিজেকে Pun আসক্ত বলে। লাইনগুলোর নীচে লাল কালি দিয়ে দাগ দিয়ে শিবরাম লিখে রাখি। এভাবেই উদাসের লেখা কাটা ছেঁড়া করে ওর কাছে ফেরত পাঠাই। যদিও উদাস লেখায় তেমন পরিবর্তন করে না। যা মনে চায় লিখে যায়। বেশীরভাগ সময়েই সেটা হালকা ধরনের হাসির কিছু হয়। মানুষজন সেটাই বেশ পছন্দ করে। সকল রসের মাঝে মানুষের কাছে হাস্যরসটাই সবচেয়ে প্রিয়। আমি জগাখিচুড়ি পড়া বাদ দিয়ে আমার ভাবনা খাতা খুলে হাস্যরস সম্পর্কে লিখতে থাকি।
হাস্যরস
যদিও রস নয় প্রকার, রস বলতে আমরা হাস্যরসকেই বুঝি। রসবোধ সবার একরকমের নয়। কেউবা রস-আলো পরে হাসে (আসলেই কি এমন কেউ আছেন??), কেউবা ১০০১ টি জোকস এর বই পড়ে হাসে আবার কেউবা শিবরাম পড়ে হাসে। তবে মানুষকে রাগানো যেমন সবচেয়ে সহজ কর্ম, হাসানো ঠিক তেমনি সবচেয়ে কঠিন কর্ম। মানুষকে রাগানোর জন্য অনেকসময় একটি বাক্য, এমনকি একটি শব্দই যথেষ্ট। ধরা যাক, কাউকে গালি দিলেন, হারামজাদা রাজাকার কোথাকার । যে রাজাকার না সে ক্ষেপে যাবে রাজাকার গালি শুনে আর যে রাজাকার সে ক্ষেপে যাবে হারামজাদা গালি শুনে। কত সহজ! সেই তুলনায় মানুষকে হাসানোর ঝামেলা অনেক। নানা উদ্ভট গল্প ফাঁদো, একে তাকে পচাও, মাথা চুলকে নানা পাঞ্চ লাইন বের করো, বার বার চিন্তা করে দেখ কোন জাতি, গোষ্ঠী, ভাবধারাকে অপমান করা হচ্ছে কিনা। মহা ঝামেলার কাজ। নির্দোষ রসিকতা অনেকটা মিষ্টিআলু পত্রিকার দেশপ্রেমের মতোই অলীক ব্যাপার। তারপরেও লোকে রসিকতা করে।
- ওই টিউবলাইট, ওই দার্শনিক ... ধুর আরে ওই রাজীব , ধুর শালা আবার ভাবের জগতে ডুব দিছে, ওই আরে ওই রাজীব।
অনেকক্ষণ পর আমি বহুদূর থেকে আনুর গলা শুনতে পেলাম। আমি দোতলার বারান্দায় বসে লিখে যাচ্ছিলাম। তাকিয়ে দেখি নিচ থেকে আনু হেঁড়ে গলায় আমাকে ডেকে যাচ্ছে।
উপরে এসে বলে,
- এতক্ষণ ধরে থেকে চিৎকার করে যাচ্ছি শুনতে পাস না।
- একটু অন্যমনস্ক ছিলাম তো তাই খেয়াল করিনি।
- এ আর নতুন কি, কিন্তু বাপধন যেভাবে তোর ভাবনা সমস্যা বাড়ছে তাতে তো খবর আছে। লিখতেছিলিও তো না। আমি তো দেখলাম খোলা খাতা সামনে রেখে কি যেন চিন্তা করতে।
লাজুক ভাবে একটু মুচকি হাসলাম,
- নারে আমার মাথায় মনে হয় আসলেই একটু সমস্যা আছে, কি নিয়ে যে ভাবি তারও কোন ঠিক নেই, এক চিন্তা ঠেলে অন্য চিন্তায় চলে যাই দ্রুত। মনে কর একটু আগে হটাত একটা খোলা ম্যানহোল দেখে আমাদের গ্রামের বাড়ীর কুয়ার কথা মনে হলো। কুয়াটা অনেক গভীর ছিলো, পানি তুলতে অনেক লম্বা দড়ি লাগতো। আমি অনেক সময় পানি কত নিচে আছে আন্দাজ করার জন্য কুয়ার মধ্যে পাথর ফেলে কতক্ষণ পর শব্দ শোনা যায় সেটা দেখতাম।
- ভালোই তো তুই দেখি ফিজিক্স নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছিস। কিন্তু এইটা নিয়ে এরকম গভীরভাবে ভাবার কি আছে? কুয়ার মধ্যে পাথর ফেলে এর গভীরতা বের করা যায় এটা তো বাচ্চা ছেলেরাও জানে।
- আরে কুয়ার গভীরতার কথা ভাবতে ভাবতে আমার মনে হলো মানুষের গভীরতার কথা। মনে হলো একইরকমভাবে ঢিল ছুড়ে মানুষের গভীরতাও মাপা যায়। যেই কুয়ার গভীরতা যত বেশী সেটাতে পাথর ফেলার পর শব্দ শুনতে ততো বেশী সময় লাগে, এমনকি খুব গভীর হলে কোন শব্দই আর শোনা যায়না। মানুষও তাই। অগভীর মানুষকে আঘাত করলে সাথে সাথে সে শব্দ করে প্রতিবাদ জানায় কিন্তু গভীর মানুষের প্রতিবাদ হয় অনেক পরে, অনেক ক্ষীণভাবে। এমনকি তেমন গভীর হলে সে সমস্ত আঘাত তার বুকের ভেতরেই রেখে দেয়। সামান্য শব্দও শোনা যায়না।
- যা বাবা, ফিজিক্স পর্যন্ত তাও ভালো ছিলো কিন্তু এ তো দেখছি রীতিমতো ফিলসফি।
- মানুষের গভীরতার কথা ভাবতে ভাবতে আমার মনে হলো মানুষ একজন থেকে অন্যজন কত ভিন্ন। কেউ ভালো কেউ খারাপ, কেউ বুদ্ধিমান কেউ বোকা। কিন্তু একেকজন মানুষ একেক রকম বলেই তো পৃথিবীতে এতসব অনুভূতির সৃষ্টি। থার্মোডিনামিক্স এ “তাপীয় মৃত্যু“ বলে একটা কথা আছে। পৃথিবীর সব বস্তুই হয় তাপ গ্রহণ করছে অথবা তাপ ছাড়ছে। এরকম চলতে চলতে একসময় যদি এমন অবস্থা হয় যে সবার তাপমাত্রা সমান হয়ে গেল তখন সবাই তাপীয় সাম্যাবস্থায় পৌঁছে যাবে আর এরকম হলে তাপ থেকে আর কোন কাজ পাওয়া যাবে না। কোন ইঞ্জিন আর চলবে না। সব মানুষও যদি তাই একরকম হয়ে যায় তাহলে সব অনুভূতির মৃত্যু হবে, সব অচল হয়ে যাবে। কম্যুনিস্টরা কোন সাম্যের কথা বলে কে জানে। সব মানুষকে সমান করা কি সম্ভব। এমনকি দেখ সৃষ্টিকর্তা পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাটাগরির বেহেস্ত আর দোযখ তৈরি করে রেখেছে যেন ভালো মানুষদের বা খারাপ মানুষদের মধ্যেও তাদের ভালোর বা খারাপের পরিমাণের পার্থক্য করা যায়। কিন্তু সবারই শাস্তির মেয়াদ নাকি একসময় শেষ হয়ে সবাই একই বেহেস্তে জায়গা পেয়ে যাবে। তারপর, তারপর কি হবে মানুষের? একটানা একই সমান আনন্দে থাকতে থাকতে সবারই তো পাগল হয়ে যাবার দশা হবে। মানুষের সুখে থাকার মূলনীতিই তো আরেকজনের চেয়ে ভালো থাকা।
- আরিব্বাস্, শুরু করলি ফিজিক্স দিয়ে তারপর ফিলোসফি আর পলিটিক্স পার হয়ে ধর্মতত্ত্বে এসে থামলি। আমার মাথা ঘুরছে।
- কি করব বল? আমি তো আমার ভাবনাগুলোকে কন্ট্রোল করতে পারিনা। কোথা থেকে শুরু হয়ে কোথায় যে চলে যায়।
- তুই তোর ভাবনা খাতায় এসব লিখে যাচ্ছিস তো?
- লিখি তো, কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় কি লাভ। আমি কি লেখক নাকি যে বই ছাপাবো।
- ছাপাতে হবে কেন? নিজের লেখা তুই নিজেই পড়বি মাঝে মাঝে।
- হুম্
- হুম মানে, আরে ধুর আবার কি ভাবিস? এবার কি কুয়া থেকে সমুদ্রে চলে গেলি নাকি।
- আচ্ছা সাইক্রিয়াটিষ্ট বানান কিরে? আগে পি আছে নাকি?
- আরে ধ্যাত আমি বলি কি আর আমার সারিন্দা বলে কি? তোর আসলেই সাইক্রিয়াটিষ্ট দেখানো দরকার।
- আমার ফাদারও কালকে একই কথা বলছিল? আচ্ছা আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?
- সুস্থ ছিলি কোনকালে? চা দিতে বল।
চা খেতে খেতে আমি আনুর কথাটা নিয়ে ভাবলাম। মনে যখন যা আসে সবকিছুই এখন থেকে লিখে রাখতে হবে। তাহলে হয়তো আমার ভাবনাগুলো খেই হারাবে না। আনু স্যারের গল্পটার ব্যাপারে তাড়া দিয়ে চলে গেলো। উদাস তাও ব্লগে এটা সেটা লিখে মাঝে মাঝে। আমি আর আনু অনেকদিন কিছু লিখি না। এখন হুট করে উপন্যাস লিখতে শুরু করলে খুব ভালো কিছু তৈরি হবে না। আমার মনে হল ওইটা শুরুর আগে আমার অন্তত অনেক টিউনিং করে নেয়ার দরকার। আমার হাবিজাবি ভাবনাগুলো লিখে লিখে আগে নিজেকে তৈরি করা দরকার। আনুকে নিয়ে লেখা শুরু করলে কেমন হয়? ও মনে হয় কোন একটা সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে মনে হয় আর প্রাণপনে শুধু চেষ্টা করে যাচ্ছে ওর সমস্যাগুলো গোপন করতে। একদিকে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে আর অন্যদিকে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো সব কিছুতেই নির্লোভ নির্লিপ্ত থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি এটা নিয়েই লেখা শুরু করলাম।
লোভ
ছোটবেলা একটা গল্প পড়েছিলাম। এক দরিদ্র কৃষকের তেমন কিছুই ছিলনা। কিন্তু তার দিনকাল মোটামুটি ভাবে চলে যেত। প্রতিদিনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম শেষে রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতো। একবার রাজা কি কারণে যেন তার উপর খুশি হয়ে তাকে এক ঘড়া মোহর উপহার দিলো। দরিদ্র লোকটি তো এই অভাবিত সৌভাগ্যে মহা খুশী। তার জীর্ণ কুটিরে মোহরের ঘড়া এনে লুকিয়ে রাখল। কিন্তু তারপর তো আর কিছুতেই তার ঘুম হয়না, একটু পর পর চমকে জেগে ওঠে আর দেখতে যায় তার মোহর ঠিকমতো আছে নাকি। সমস্ত রাত কেটে গেলো দুশ্চিন্তা করতে করতে। পরদিন সকালে উঠে সে বিরক্ত হয়ে সেই মোহরের ঘড়া রাজাকে ফেরত দিয়ে আসলো এবং আবার নিশ্চিন্তে ঘুমাতে লাগলো। ছোট্ট এই গল্পটিতে জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যটিকে কত সহজ ভাবে বলা হয়েছে। একই রকম আরও একটা গল্পের কথা মনে পড়ছে, ‘সুখী মানুষ‘ গল্পটির নাম। এক জমিদারের অসুখ সারানোর জন্য কবিরাজ দাওয়াই দিয়েছিলো একজন সুখী মানুষের জামা এনে পড়ালে তার অসুখ সেরে যাবে। অনেক খোঁজার পর যখন একজন সুখী মানুষকে পাওয়া গেল তখন দেখা গেল তার কিছুই নেই এমনকি একটি জামা পর্যন্তও নেই আর সেজন্যেই সে সুখী মানুষ। একই রকমের একটা গল্প সেদিন আমাকে আনু শোনালো। আগের গল্পগুলোর আধুনিক রূপ। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে আনু কম্পিউটার কিনল। কম্পিউটার না কিনলে যে চলতে পারতো না তা নয়। ভালোভাবেই পারত কিন্তু এখন আর পারেনা। ওর কম্পিউটার দুদিন ধরে নষ্ট, যতদিন না ঠিক হচ্ছে ও চরম অস্বস্তিতে থাকবে। প্রথম ইন্টারনেট এর লাইন নেবার সময় মনে হয়েছিলো না নিলেও এমন কোনও ক্ষতি হতো না। একটি মেয়ের সাথে ওর নিয়মিত মেইল আদানপ্রদান শুরু হলো আর তারপরই হলো মুশকিল। একদিন নেট এ ঢুকতে না পারলেই মাথা গরম হয়ে যেত। একটু পর পর খালি চেক্ করত কোনো মেইল আসলো কিনা। না আসলেই মন খারাপ হয়ে যেত ভীষণ। আনু প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ও ওর আবেগগুলো লুকিয়ে রাখতে চায়। ফলে একসময় ওর অনুভূতিগুলো জমতে জমতে প্রচণ্ড আকারে বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে আসে। এখন চেষ্টা করছে নির্লিপ্ত হবার যেটা ও কখনোই পারবে না। কয়দিন আগে ও ওর কম্পিউটার থেকে মোডেম খুলে সেটাকে ভেঙে দুই টুকরা করে নেট এর জগত থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে চাইছে। কিন্তু এভাবে কি হয়? এরপর ও কি ভাঙবে? হাতুড়ী দিয়ে কম্পিউটার ভাঙবে? এভাবে হয় না তবে কিভাবে হয় সেটা আমিও ঠিক জানিনা। সেই দরিদ্র কৃষক বা সুখী মানুষের গল্পটি কি ওখানেই শেষ? আমার তো মনে হয় আরও আছে। মোহরের ঘড়া ফেরত দিয়ে আসার পরেও কৃষকটি আর ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। এবার তার মাঝে অন্যরকম এক চিন্তা। বুকে অন্যরকম এক জ্বালা, অতৃপ্তির জ্বালা। ঘর থেকে মোহরের ঘড়া না হয় সরানো গেল কিন্তু মন থেকে কি এত সহজে সরানো যায়? একইরকম জ্বালা সুখী মানুষের মনেও। জামা না থাকলেও হয়তো অনেক আনন্দে থাকা যায় কিন্তু ‘জামা নেই‘ এ কথা একবার জেনে গেলে কি আর আনন্দে থাকা যায়?
উদাস
সুপারভাইজার আমার সামনে দাঁত কিড়মিড় করে দাড়িয়ে আছে। আমি উদাস মুখে "আমি আবার কি করলাম" ভাব নিয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছি। ঘটনা সামান্য। আল মালিক নামের এক প্রফেসর আমার নামে তার কান ভারী করেছে। ব্যাটা এক লেবানিজ বদ প্রফেসর। দুইটা তিনটা পেপার নিয়ে সবাইকে তেল মেরে মেরে দিব্যি টেনিউর হয়ে বসে আছে। তার আবার এখানে গাড়ীর ব্যবসাও আছে। আবার সে এখানের একটা মসজিদের খতীব। এইরকম বস্তু যে আমাকে আমেরিকা এসে দেখতে হবে কখনো কল্পনা করিনি। প্রফেসর কাম কার ডিলার কাম ইমাম। সৃষ্টিকর্তা তাকে একটা জিনিসই দিয়েছে, কথা বলার ক্ষমতা। এমনিতেই গাড়ী ব্যবসার দালাল গুলো কথা বলতে মহা ওস্তাদ। এ তার আরও কয়েক কাঠি উপরে। এই এক কথা বলার ক্ষমতা নিয়ে সে গাড়ী, ইমামতি এবং শিক্ষকতা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সকালবেলা একটা চিরকুটের মধ্যে কিছু সিগন্যাল প্রসেসিং এর ইকুয়েশন, কিছু সূরা, হাদিস লিখে বের হয়। আর চিরকুটের উল্টাদিকে থাকে তার গাড়ী ব্যবসার হিসাবপাতি। এই এক চিরকুটে সারাদিন কাভার করে ফেলে। ব্যাটা আমাদের এডভান্স সিগন্যাল প্রোসেসিং পড়ায়। কোন প্রস্তুতি ছাড়াই ক্লাসে চলে আসে। তারপর শুরু হয় তার গলাবাজি। একবার এইরকম গলাবাজির সময় আমি একটা বেমক্কা প্রশ্ন করে ফেললাম। বলে, ভেরি গুড কয়েশ্চেন। তারপর হাবিজাবি কথা শুরু করলো। কেন সবসময় প্রশ্ন করা উচিৎ। কিভাবে এর মাধ্যমে ছাত্র শিক্ষকের মাঝের দূরত্ব কমে। আলোচনার মাধ্যমে অনেক কিছু বেরিয়ে আসে। এইসব বলে বলে ক্লাসের বাকি ৩০ মিনিট কাটিয়ে দিলো। প্রশ্নের উত্তর দেয়া তো দূরের কথা, ওর কথা শুনতে শুনতে আমি কি প্রশ্ন করেছিলাম সেটা নিজেই ভুলে গেলাম ততক্ষণে। প্রতিভা একটা।
আমাদের পুরো রিসার্চ গ্রুপ একসাথে ফ্লোরিডাতে এসেছি কনফারেন্সে। আজ দুপুরে ড. মালিকের পেপার প্রেজেন্টেশন ছিল। ৫ মিন যাবার পর যোহরের নামাজের ওয়াক্তে তার ল্যাপটপে আযান শুরু হয়। তার ল্যাপিতে আযানের সফটওয়্যার ইন্সটল করা, প্রতি ওয়াক্তে আযান বেজে ওঠারই কথা। কিন্তু প্রেজেন্টেশনের আগে আগে সে দিব্যি সফটওয়্যারটিকে অফ করে রেখেছিলো। সেই সাথে তার ল্যাপির শব্দও বন্ধ করা। এতো কিছুর পরেও ভুলক্রমে যদি আযান বেজে উঠে, তাইলে সেইটা সাথে সাথে বন্ধও করে দিতে পারার কথা। কিন্তু প্রেজেন্টেশনের সময় তারস্বরে আযান শুরু হবার পর হন্তদন্ত হয়ে সেটা বন্ধ করতে গিয়ে সে খেয়াল করলো ওটা বন্ধ করা যাচ্ছে না, এবং একই সাথে সাউন্ডও বন্ধ করা যাচ্ছে না। ঘামতে ঘামতে পুরা ২ মিনিট ধরে কনফারেন্সের গোটা চল্লিশেক লোক নিয়ে পুরা আযানটা সে শুনল। হতভম্ব সকল দর্শকের মাঝে একমাত্র আমার ৩২ টি দাঁত দেখা যাচ্ছিলো বলে তার ধারনা হল এই ব্যাপারে আমার কালো হাত জড়িত। এখানে আমার তেমন কোন দোষ নেই। গতকাল সবার প্রেজেন্টেশন ওই ল্যাপিতে কপি করার সময় আমি এক ফাঁকে আযানের প্রোগ্রামটাকে একটু রগড়ে দিয়েছিলাম আরকি। এমন গাধার মতো কোড লিখে প্রোগ্রাম বানিয়েছে যে ওইটাকে দেখেই একটু রগড়ে দিতে মন চাইলো। খালি একে যোহরের ওয়াক্তে অটো স্টার্টের একটু ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। আর যেন বন্ধও না করা যায় সেটার একটু ব্যবস্থা করেছিলাম। বাকি কাজ সফটওয়্যার নিজেই করেছে, আমার কোন দোষ নাই। এখন এসে ব্যাটা সুপারভাইজারের কাছে কেঁদে কেটে বিচার দিয়েছে। এইটা কি স্কুল নাকি? তুই ব্যাটা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ঘ্যানঘ্যান করে বিচার দিতে লজ্জা লাগে না?
সুপারভাইজার দাঁত কিড়মিড় করে আমাকে বলে "Excess!"
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম, সারাজীবন খালি শিক্ষকদের চক্ষুশূল হয়েই থেকে গেলাম। স্কুল পেরিয়ে, কলেজ পেরিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে এখন ডক্টরেট করতে এসেও যদি সব একই রকম থেকে যায় তাহলে ক্যামনে কি? মানি আমি হালকা বদমাইশি করি কিন্তু একটু ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখলেই তো হয়। পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য ডক্টর মালিকের কাছে গেলাম। ওর দুর্বলতা কোথায় ভালোই জানা আছে।
- ডিনার কোথায় করবে ঠিক করেছ?
গম্ভীর মুখে মালিক এড়ানোর চেষ্টা করে,
- আমি একটু ব্যস্ত, তোমরা যাও। আমি পরে কোথাও খেয়ে নিব।
- দেখ, আমার প্রফেসরের সাথে গেলে জোর করে কোন মেডিটোরিয়ান রেস্তোরাতে নিয়ে যাবে। সেই একই ফালাফাল, বাবা গানুশ আর হুমাস খেতে হবে। অন্য কিছু চাও তো আমার সাথে চলো।
মালিক এবার একটু উৎসাহ দেখায়,
-অন্য কোথায় যেতে চাও?
- দশ মাইল দূরে একটা লবস্টার বাফে আছে। দাম একটু বেশী, কিন্তু যত খুশী লবস্টার খাওয়া যাবে। এবং আমি খাওয়াচ্ছি।
মালিকের চোখ চকচক করে। বুঝে যাই ঠিকমতো টোপ ফেলা হয়েছে।
আমি ক্ষমা চাই,
- দ্যাখো, আযানের ব্যাপারটার জন্য আমি দুঃখিত। আমি আসলে কিছু করিনি। গতকাল সফটওয়্যারটা দেখে একটু এমনি একটু নাড়াচাড়া করেছিলাম। মনে হয় ভুলে কোন একটা কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে।
মালিক এবার ফুঁপিয়ে ওঠে,
-তুমি জান লেকচারের পর আমার কতজনকে "হাইয়াহালাছছালা" আর "হাইয়াহালালফালা" এর মানে ব্যাখ্যা করতে হয়েছে। একজন আবার সরল মুখে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে, আর ইউ এ টেররিস্ট?
-দ্যাখো একদিক থেকে ভাবলে ব্যাপারটা খারাপ কিছু হয়নি। তুমি তো একজন ইমাম। এই ফাঁকে কিছু লোক তো ধর্ম সম্পর্কেও জানতে পারলো।
দুইটা লবস্টার পেটে পরা মাত্র মালিকের মনটা ভালো হয়ে যায়। আমার সাথে খেজুরে গল্প জুড়ে দেয়,
-আচ্ছা, পাকিস্তানের সাথে তোমাদের সমস্যাটা কি বলতো। তোমরা সবাই মুসলিম ব্রাদার ছিলে, আমরাও তাই। আজকে তোমরা একসাথে থাকলে এশিয়ার মুসলিম ব্রাদারহুড কত শক্ত থাকতো।
মাঝখানের একটা একুরিয়ামে তাকিয়ে দেখলাম বিশাল সব জ্যান্ত লবস্টার ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাথাসহ তিন পাউন্ড ওজনের একটা আস্ত, জ্যান্ত, আছিলা লবস্টার ব্যাটার পেছন দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়ার ইচ্ছেটা অনেক কষ্টে দমন করি। সামলে উঠে জিজ্ঞেস করি,
- লেবানন তো বাংলাদেশকে অনেক পরে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। ৭৩ এর মার্চে, মনে হয় ৮২ নাম্বার দেশ হিসেবে। কি কারণ মনে হয় তোমার?
- আরে ধুর, আমি অতোসব রাজনীতি জানিনা। কিন্তু আমরা বাংলাদেশ আর পাকিস্তান দুজনকেই ভালোবাসি, আমরা সবাই মুসলিম ব্রাদার।
তোর ব্রাদারহুডের মায়রে বাপ বলে আমি মনে মনে গালি দেই। স্বাধীনতার স্বীকৃতির তালিকাটা মনে করার চেষ্টা করি। সবার শেষে ছিল মনে হয় সুদান, সৌদি আরব, ওমান আর চীন। নির্লজ্জ সুদান আর সৌদি ১৬ই আগস্ট, ১৯৭৫ আর ওমান ১৭ই আগস্ট, ১৯৭৫। চীন ৩১ শে আগস্ট। চীনের চক্ষুলজ্জাটা কি এদের চেয়ে একটু বেশী ছিল যে কারণে অন্তত ১৬টা দিন অপেক্ষা করেছে।
চিন্তাভাবনা বন্ধ করে মালিকের দিকে তাকালাম। ব্যাটা খেয়েই যাচ্ছে। মনে হল মুসলিম ব্রাদারের একটু উপকার করি। বললাম,
- তোমার ল্যাপটপ দাও। দেখি আযানের সফটওয়্যারে কি সমস্যা হয়েছে। কালকেও তো দুপুরে তোমার আরেকটা প্রেজেন্টেশন আছে। আবার আযান বেজে উঠলে তোমাকে ধরে গুয়ান্তানামো বে তে নিয়ে যেতে পারে।
ওর ল্যাপি নিয়ে প্রোগ্রামটা ঠিক করে দিলাম। সাথে ছোট আরেকটা প্রোগ্রামও ঢুকিয়ে দিলাম। কালকে আর ওর প্রেজেন্টেশনের সময় আযান বাজবে না। তবে শুরু করার পর পরই "ইয়া হাবিবি, ইয়া হাবিবি" গাইতে গাইতে এক অর্ধনগ্ন বেলি ড্যান্সার কিছুক্ষণ পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড গুলোর উপর দিয়ে নেচেকুদে যাবে। হোটেলে ফিরে আমি লেখাটা নিয়ে বসি। আগামীকাল আমাদের ফেরত যাবার কথা। আমি ঠিক করেছি আরও কয়েকদিন ফ্লোরিডা কাটিয়ে যাবো। সুপারভাইজার আমাকে খুঁজে মরুকগে কয়দিন।
মন্তব্য
দাড়ান আইসা পড়তাছি,
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
চরম ... চালাই যান
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ফেরা ৩ দেন এবার
দিলাম ফেরা - ০৩
এইবার আপ্নের টার্ন
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
শ্যাষের প্যারায় আইসা হাসতে হাসতে শ্যাষ! আপনেও পারেন বটে!
ধন্যবাদ নিটোল
উফ ! আপনি তো দারুন। যতটুকু লিখেছেন ততটুকু সুপার আর যেটুকু কল্পনা করে নিতে ইশারা করেছেন সেটুকু তো মালিকের চেহারা যা হবে পরের দিন!
সুদান আর সৌদি যে ৭৫-এর ১৬ই আগস্ট বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে আগে জানতাম না। আমি যতদুর শুনেছি রাজাকারদের বিচার সময় মত না হওয়ার পিছনে সৌদিকে খুশি রাখাটা একটা কারন ছিল। এরা যদি আমাদেরকে স্বীকৃতি না দিয়েই থাকে, তাহলে ঐ সময় ওদের মতের মূল্য কি হতে পারে বুঝলাম না। কী জানি, আমার জানার ভুল হতে পারে।
আমিও জানিনা কি মুল্য হতে পারে।
আপ্নে মিয়া ভালৈ খ্রাপ এক্টা লোক
কেন? কি কইচ্চি ?
মজা পেলাম, রাজীবের মত আমিও ভাবতে শুরু করলাম। ৩ জনের ভাবনার মিশ্রনটা জটিল হইসে।
ধন্যবাদ শাব্দিক। কিন্তু অতো বেশী ভাবনা চিন্তা কইরেন না ...
বেশ তরতর করে এগুচ্ছে। তবে আপনি লোক খারাপ এটা মনেহয় সত্যি!!
ইদানীং পৃথিবী অনুভব করে, একটা সূর্যে চলছেনা আর
এতো পাপ, অন্ধকার
ডজনখানেক সূর্য দরকার।
কি করলাম ...
দারুন কাজ কইচ্চেন
চলুক.....
রাজীবের ভাবরচনা দারুণ লাগ্লো। বেশ ভাবে উদাস হয়ে গিয়েছিলাম পড়তে পড়তে। শেষে উদাসের কীর্তিতে এসে ফ্রেৎ করে একটা হাসি দিসি, আর ধরা খাইসি।
আমার চাকরি গেলে আপ্নের দোষ
বসরে প্রতিদিন ইয়া হাবিবি গেয়ে শুনাবেন তাইলে আর চাকরি যাবে না।
আপনে মিয়া মহা বদলোক!
"সাহিত্যিক" ভক্ত-পাঠিকাদের তাড়ায় প্রাণপণে দৌড়াক!
আবার পপ্পন নিয়ে বসে পরছে কাতারে ...
আপনি দারুণ লেখেন।
কিছু কিছু জায়গা তো পুরো খিচুড়ি!
facebook
সাহিত্য লিখলেও লোকে বলে খিচুড়ি ...
আহ!রাজীবের ভাবনা
পড়তে পড়তে এক একসময় মনে হচ্ছিল জগাখিচুড়ি পড়ছি। ঠিক নিশ্চিত নই, তবে যেন মনে হল এটার ফ্লেভার একটু অন্যরকম হলে বেশ হত। তা হলেও আপনি এমনিতেই যা লেখেন আপনার ডেজার্টের মতই উপাদেয় হয়। পরেরটার অপেক্ষায় রইলাম।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
এইটা আমার সমস্যা না। সব পাঠকের স্ক্রুপে ঢিলা পরছে। মাথা থেকে খিচুড়ির ভূত নামে না। আমি রেসিপি লিখলে কয় খিচুড়ি, ভ্রমণ কাহিনী লিখলে কয় খিচুড়ি, সাহিত্য লিখলেও কয় খিচুড়ি ...
জ্ঞানের কথা কইলেও কয় খিচুড়ি, অজ্ঞানের কথা কইলেও কয় খিচুড়ি
ইয়া হাবিবি' পুরোটাই মজারু তব এ লাস্ট প্যারায়
ইয়া হাবিবি
রাজীব ভাইয়ের চিন্তাভাবনা অসাধারণ। উনারে হুমকিধামকি দিয়া ব্লগে নিয়ে আসেন।
আচ্ছা নিয়ে আসব। কিন্তু উনি কই থাকেন ঠিকানাটা আগে দেন ...
শেষের অংশটাই বেশি ভালো লাগলো
ধন্যবাদ তানভীর ভাই। ডালাস আসলে জানায়েন।
ছোটমুখে বড় অনুরোধ: পোস্টের দৈর্ঘ্য একটু কমাবেন, জনাব?
এত্ত বড় লেখা দেখলে আমার ফাঁপর আটকে যায় (পাবনার ভাষায়: আমার 'অনজালা' হতিছে)
খালি আপনার লেখা বলে শেষ পর্যন্ত পড়লাম আরকি ভাল লেগেছে বরাবরের মতই।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
লেখার সাইজ আসলেই অনেক বড় হয়ে গেছে। এইজন্য পাঠকেরও হেঁচকি উঠতেছে বুঝতে পারছি। কি করবো? এক পর্ব শেষ হতে না হতেই লোকজন সারি বেঁধে বসে পপ্পন চিবানো শুরু করে ... ।
তাই পাঠকের যেন দম এট্টু বন্ধ হয় আর সেই ফাঁকে আমি হপ্তাখানেক দম নিতে পারি সেই আশাতেই বড় লেখা দিয়েছি। সবাইরে বলবো, একটু একটু করে পড়েন, দম নিয়ে আইসা পরে আবার বাকিটুকু পড়েন ... ।
ভাগ করে দেয়া যেত, কিন্তু তাতে পাঠক আবার খেই হারিয়ে ফেলতে পারে এই ভয়ে পুরো অধ্যায় একসাথে দিয়েছি। দেখি আরও কারো দম আটকায় কিনা, তাইলে পরের পর্ব ভাগ করে দিব।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
আপনার হাতে ল্যাপটপ দেওয়া যাবে না এটা বুঝলাম
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ তাসনীম ভাই।
উপন্যাসের চরিত্রের সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলবেন না। আমি উদাস না, আমি চরম উদাস। যে কিনা অনেক নম্র, সুশীল, শ্লীল, বিনয়ী, নিপাট ভদ্রলোক ...
আপনি মহা ঘুঘু। মানুষ আপনার কাছ থেকে হালকা লেখা আশা করে দেখে অন্যদের নামে চামে চামে সিরিয়াস জিনিসও খাওয়ায় দিচ্ছেন, কঠিন পদ্ধতি! তৃতীয় পর্ব আসুক উল্কার গতিতে। আর পর্ব লম্বা হইলে কোন অসুবিধা নাই, পাঠ্য বই তো না, ঠিকই সুন্দর ভাবে পড়া হয়ে যায়।
আমারে ঘুঘু কইলেন?
পর্বগুলা হয়তো একটু লম্বাই হবে, তবে উল্কার গতিতে আসবে কিনা বলতে পারিনা।
একটা চরম জিনিস আবিষ্কার করলাম গরম ভাই। পোস্ট পড়ে না, মন্তব্য পড়ে। কিন্তু আমারে আর্কিমিডিস ভাবার কোনো কারণ নাই। লুঙ্গি পরা আছে। এবং বেশ টাইট করেই। তাছাড়া, আমি চৌবাচ্চাতেও বসে নাই। বিছানায় আধাশোয়া হয়ে ঠ্যাঙ দোলাই। তবে, আসল কথা হইলো, যতোই জোরাজুরি করেন, কোনোই লাভ নাই। আবিষ্কারের কথা আমি কমু না। কইলেই জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশনের মকদ্দমা শুরু হয়ে যাবে। আমার নামে না, আপনের বিরুদ্ধে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আবরও অর্ধেক কথা বইলা বাকি অর্ধেক পেটে ...
যাই হোক কি আবিষ্কার করছেন বুঝতে পারছি, আফটার অল, উইকেড ম্যান থিঙ্কস এলাইক ...
হে হে লুঙ্গি পড়া অবস্থায় একটা জিনিসই আবিষ্কার করা যায়
এই পর্বও ভাল হয়েছে। পাওয়ারপয়েন্টে নাচাগানার কায়দাটা শেখাবেন নাকি?
আমি তো জানিনা, উদাস জানে।
ইয়া আল্লাহ, ইয়া আল্লাহ, ইয়া হাবিবি । এই উদাস ব্যাটায় তো বিরাট বদ দেখা যায়
ছেলে ভালো, খালি একটু ইয়ে আরকি ...
হুম... অনেস্ট ফিডব্যাক দেই? প্রথম পর্বের মতন অত বেশি দারুণ লাগেনি এই পর্ব। আনুর অংশটা খানিকটা বোরিং লেগেছে, বিশেষ করে তার নিজের অভিমানী সত্ত্বা নিয়ে চিন্তাভাবনার অংশটা একটু বেশিই বোরিং ছিলো। রাজীবের অংশে কচকচানি বেশি থাকছে, কিন্তু সেটাই স্বাভাবিক তার চরিত্রানুসারে, তবে আনুর সাথে এই পর্বে পার্থক্যটা বেশি হয়নি আরকি। তার নিজের লেখার মাঝে কৃষকের গল্প আর সুখী মানুষের গল্প অত ডিটেইলসে না লিখলেও চলতো মনে হয়, যদিও সেটা তার নিজের লেখা সরাসরি তুলে ধরা হচ্ছে কাজেই বিস্তারিত থাকাটা স্বাভাবিক, তাও আনুর সাথে কথাবার্তায় রাজীবকে অনেক বেশি গোছান মনে হয়েছে।
ইন্টারেস্টিং চিন্তাভাবনা...!
এবার নিখাদ ভালো লেগেছে কোন্টুকু বলি? উদাস ভাইয়ের কার্যকলাপ, কথাবার্তা। আর এই যে সৌদি আরবের বাংলাদেশকে দেরি করে স্বীকৃতি দেয়ার মতন ঘটনার মতন ছোট ছোট জিনিসগুলান যে আপনি ভালোমতন ঢুকায়ে দেন গল্পের মাধ্যমে পাঠকের ভেতরে, এইটা।
আর ইয়ে, চরম উদাস ভাই, বহুদিন থেকেই বলবো ভাবি, 'কারণ' বানানে 'ণ' হয়, বানানটা 'কারণ', 'কারণ', 'কারণ'!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আসেন ভাই বুকে আসেন, বুকে না আসলে পেটে আসেন ...
এইরকম ফিডব্যাকই তো দরকার আমার।
কারণ ই তো লিখছি, ঐযে উপরে তাকায়ে দেখেন ( টের পাবার আগে বাকিগুলাও ঠিক করে দিতেছি। এই ণ আর ন এর অত্যাচারে জীবন শেষ । হিমুর কি জানি একটা লেখা ছিলোনা, ন আর র কে নিয়ে বোধহয়, ওইটা খুঁজে বের কতে হবে)
আনুর চরিত্রটা ইচ্ছে করেই একটু ডাউন টোনে বানানো হয়েছে। এটা একদন পুরাপুরি ইচ্ছা করেই করেছি। পাঠকের আনুকে বোরিং মনে হলে বুঝবো যা করতে যাচ্ছি সেটা হয়েছে। গল্প শেষ হলে কারণ ( ) টা জানা যাবে। আমি আবার উল্টা তরিকায় কাজ করি, সবার আগে এই লেখার শেষ অধ্যায় লিখেছি, তারপরে প্রথমে গিয়েছি। তবে এই পর্বে বেচারা একটু বেশীই প্যান প্যান করছে। ছেঁকা খাইছে তো তাই।
রাজীবের ভাবনা খাতার লেখাটা কিছুটা বড় হয়েছে আসলেই প্রয়োজনের চেয়ে। আবার পড়ে ঠিক করেছি ওই অংশটা একটু ছোট করব।
উদাসের কথা আর কি বলবো? ওই ব্যাটা আমার কন্ট্রোলে নাই ...
অনেক ধন্যবাদ সময় নিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে এরকম চমৎকার ফিডব্যাক দেয়ার জন্য।
এখন খব বুকে-পেটে ডাকছেন বটে, কিন্তু আরও কয়েকবার এইরকম ক্যাচাইল্যা খুঁতধরা কমেন্ট করলেই পিঠে দিতে যে ছাড়বেন্না, আমি কি আর তা জানি না ভাবছেন? হুঁ, হুঁ বাবা, আমারো বুদ্ধি হ্যাজ!
হ! তাইলে ঠিকাছে। তাকে বোরিং মনে হয়েছে কিনা শিওর না আমি, কারণ এরকম মানুষ আমি দেখেছি, আমার আশেপাশেকাছেই আছে কয়জন, তারা বোরিং না আমার পছন্দেরই বরং, কিন্তু তাদের এই অনর্থক অভিমান বিরক্তি ধরিয়ে দিতে যথেষ্ট মাঝে মাঝে, (আবার এটাও ঠিক যে সবাই জানে আমার ধৈর্য্য কম!) তবে তার বর্ণনা বেশ ভালোরকমের বোরিং মনে হয়েছে অন্তত এই পর্বে! খালি রাজীব-এর গভীর আত্মচিন্তার সাথে পার্থক্যটা যেন থাকে সেইটা খেয়াল রেখেন তাহলেই হবে।
হিমু ভাইয়ের সেই ণ-ত্ব বিধান লিংক আজকেই আরেকজনের পোস্টে দিয়ে এলুম খানিক আগে, এই যে এইখানে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
'ভাই' ঠাউরেছেন কিনা, তাই বুকে-পেটে ডাকছেন
ইয়া মউলা। তবে কি উনি বোন ...
কবে জানি শুনবো ধুগো আসলে বড়লোকের বখে যাওয়া অষ্টাদশী সুন্দরী তনয়া।
হ! রঙিন ভাই যেরকম ভাবের সাগরে থাকে! এইটা হওয়ার সমূহ সম্ভবনা আছে। আমি ভোট দিলাম। (কোলন খুবই সিরিয়াস ফেইস)
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
হ, পাত্র দ্যাখেন। এই আমি বসলাম লুঙ্গি কাছা মাইরা। এইবার ন্যাটোভুক্ত দেশেই হামলা চালামু, যা আছে কপালে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ওরে অ বাবুইল্যা, রান্নাঘর থেকে রুটি বেলনটা দে তো! কই ভাবছিলাম যে যাক! মেলাদিন পরে আবার লোকে ধোঁকা খাচ্ছে জেন্ডার ইসুতে, বেশ আবার একটা ইন্ডিফারেন্ট 'ব্লগার ওনলি' ইমেজ ফেরত আসতেছে, তা না, কৌদা স্ট্রাইকস আগেইন। এইটার মাথায় এইবার বেলন ভাঙুম!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আল্লাহর রহমত। আমি আরেকটু হলেই একটা আওয়াজ দিতে যাচ্ছিলাম, পিছনে সুপারভাইজার এসে দাঁড়াতে চুপ মেরে গেলাম। মাঝখান থেকে কৌস্তুভ মাথা না ঢুকালে বেলনের বাড়িটা আমার মাথায় এসে পড়তো! থ্যাঙ্কু, কৌস্তুভ।
আরে ঠিকাছে, আমায় বেলন দিয়ে বাড়িয়ে বাড়িয়েই তো এত বড় করল যাযাবড়দি, ওসব অভ্যাস আছে
বটে, জড়াজড়ির আমন্ত্রণে বাগড়া পড়েছে বলে এত চটে যাওয়া, তাই না?
কৌস্তুভ, হেলমেট পড়া আছে তো?
অফটপিক একটা প্রশ্ন করি কিছু মনে না করলে। অপছন্দনীয়কে অনেকদিন দেখিনা। কোন খবর জানেন?
পড়া নয়, পরা! দশবার লিখুন, নইলে ঐ এল যাযাবড়দি বেলুন নিয়ে!
ওটার জন্য এখানে দেখুন... এটাও দেখবেন'খন...
চালিয়ে যান। লেখা উপাদেয় হইছে।
ধন্যবাদ ...
ইয়া হাবিবির কাহিনি খান ও শুনতে চাই । আপনাকে আর কি বল্বো, ব্যাপক লিখেছেন
লেখাটা সত্যিই বেশ একটু বড় হয়ে গেছে। তবুও পড়লাম। রাজীবের ভাবনায় আমাকে আটকিয়ে দিলেন। বেরুতে পারছি না।
বেশী ভাবনা চিন্তা কইরেন না
উদাস একটানে শেষ করলাম। ০৩ রেডি করেন, আর মিষ্টিটিষ্টি নিয়া কি কি সব জানি কি কি করছেন ওইগুলান সব ছাপাইয়া ফালান ভাই, দেরি করলে পিপড়া লাগতে পারে, ছাতা ধরতে পারে, আরো কত পেরেবেলেম আছে না।
পুলিশ!
উচিৎ হৈছে এক্কেরে!!!
দারুণ লাগছে..............পরের পর্বে তাত্তাড়ি যাই.................
খুব ভালো।
অনেক শুভেচ্ছা।
পরের পর্ব এখন পড়বো।
--------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
নতুন মন্তব্য করুন