সুখী গণ্ডারনামা ০১

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: সোম, ২৪/১০/২০১১ - ৫:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পুরাকালে বাঁশখোর নামের এক পৌরাণিক চরিত্রকে ধাওয়া দিতে দুখী গণ্ডারনামা শিরোনামে একটা সিরিজ লিখেছিলাম। পৌরাণিক বাঁশখোরদা তার গণ্ডারপনায় ইতি টানার কারণে সিরিজটি তার গুটিকয় পাঠকের বহু তাগাদা সত্ত্বেও তেজগাঁও বিমানবন্দরের মত পরিত্যক্ত হয়। খোদাবি ইশারায় তেজগাঁও বিমানবন্দর যেমন বিমানবন্দর হিসেবে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে, সেভাবে এই সিরিজটিরও পুনরুজ্জীবন আবশ্যক বলে মনে করছেন দুয়েকজন বন্ধু। পৌরাণিক বাঁশখোরদা দুখী ছিলেন, কিন্তু এই সিরিজের গণ্ডারটি সুখী প্রকৃতির, তাই সিরিজের নামে শল্যোপচার করণ ঘটন হওনটা জরুরি ছিলো। তবে অতীতে আমি প্রতিদিনই নতুন একটা গণ্ডারনামা লেখার মতো তাগদ আর তাগিদ ধারণ করন হওন ঘটাতাম, এখন অসুখের কারণে দুবলা মেরে গেছি, তাই এই সিরিজ অনিয়মিতভাবে এগোবে।

দূষণে দূষণে দেশটার অবস্থা টাইট। বিদেশী দাতাগোষ্ঠীর পরামর্শকরা মাথা নেড়ে ফিরে গেছেন। হবে না, কিচ্ছু হবে না। নিওলিবারেলরা প্রতিদিন আংরেজি খবরের কাগজে কাঁদে। সশস্ত্রবাহিনীর জেনারেল, মার্শাল, অ্যাডমিরালরা পর্যন্ত বিরক্ত, তারাও আর বন্দুকের নাক গলাতে রাজি না। শান্তির বুড়ো পারাবত বলেছেন, একমাত্র সমাধান হতে পারে সামাজিক ব্যবসা। দেশটাকে একটা সামাজিক ব্যবসা বানিয়ে চালানোই একমাত্র সমাধান। মিডিয়া বলছে, বদলে যাও বদলে দাও। পাবলিক আর কিছু বলে না, খালি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। সেখানে শুধু স্টিভ জবস, কানিজ আলমাস আর জোকার নায়েক।

এমন যখন বাজে অবস্থা, তখন গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন গায়া, পৃথিবীর আত্মা। তারপর তুড়ি বাজিয়ে প্ল্যানেটিয়ারদের ডাক দিলেন। এই দেশের হাল পাল্টাতে পারে একমাত্র ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট।

আফ্রিকা থেকে কোয়ামে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে হুইলার, রাশিয়া থেকে লিঙ্কা আর জাপান থেকে গি এসে হাজির। কিন্তু মা-তির কোনো খবর নাই। সবাই উদ্বিগ্ন মুখে পায়চারি করছে, মা-তি না এলে তো ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটকে ডাকা যাবে না।

এমন সময় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলেন গণ্ডারদা। মুখে হাসি। হাতে আংটি।

কোয়ামে এগিয়ে গিয়ে বললো, "কে তুমি?"

গণ্ডারদা কড়ে আঙুলের আংটি দেখিয়ে বললেন, "আমি আবুল।"

হুইলার চোখ রাঙিয়ে বললো, "কী চায় ব্যাটা? দেবো নাকি ফায়ারপাওয়ার দিয়ে পোঁদে একটা ছ্যাঁকা?"

লিঙ্কা হুইলারকে গায়েমাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করে। গি বলে, "দ্যাখো, আমরা তোমাকে কমিশন দিতে পারবো না। আমাদের জরুরি কাজ আছে, আমরা আমাদের বন্ধু মা-তির জন্যে অপেক্ষা করছি।"

গণ্ডারদা হাই তুলে বলেন, "মা-তি আসতে পারবে না। মানিকগঞ্জে একটা দুর্ঘটনা হয়েছে, জানো না? মা-তি শ্যাষ। দোষটা অবশ্য মা-তির ড্রাইভারেরই ছিলো।"

কোয়ামে, হুইলার, লিঙ্কা আর গি স্তব্ধ হয়ে গেলো। ব্যাটা গণ্ডার বলে কী?

গণ্ডারদা বললো, "আমার কাছেও একটা আংটি আছে। যৌতুক পেয়েছিলাম। আমার শ্বশুর খুবই কামেল পাবলিক। ওনারও নানা পাওয়ার টাওয়ার ছিলো। এক কাজ করো, মা-তির জায়গায় আমাকে নাও। তারপর ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটকে ডাকো।"

কী আর করা, অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হলো চারজন।

কোয়ামে তার আংটি বাগিয়ে বললো, "ক্ষিতি!"

গি তার আংটি বাগিয়ে বললো, "অপঃ!"

হুইলার তার আংটি উঁচিয়ে বললো, "তেজ!"

লিঙ্কা তার আংটি উঁচিয়ে বললো, "মরুৎ!"

গণ্ডারদা তার আংটি তাক করে বললো, "হে হে হে!"

এক ভীষণ জ্যোতির্বলয় দেখা দিলো পাঁচ পাওয়ারের সম্মিলনে। সেই জ্যোতির্বলয় থেকে বেরিয়ে এলো এক জ্যোতির্ময় মাসলম্যান, তার পরনে হাফপ্যান্ট। বেরিয়ে এসে সে মন্দ্রস্বরে ম্লেচ্ছ ভাষায় বললো, "বাই ইয়োর পাওয়ারস কম্বাইন্ড, আয়্যাম ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট ... !" তারপর চুপ মেরে গেলো।

সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো, গোওওওওওও প্ল্যানেট বলতে ভুলে গেলো সকলেই। এই ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট কেমন যেন। ঠিক স্বাভাবিক নয়।

উড়ে উড়ে আকাশে চক্কর দেয়ার বদলে মাটিতে নেমে কিছুক্ষণ মিটিমিটি হাসলো ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট। তারপর ঘরের এক কোণা থেকে একটা চেয়ার এনে বসে পড়লো সেটার ওপর।

হুইলার এগিয়ে গিয়ে বললো, "কী হলো? বসে পড়লে যে? যাও, কাজে নামো! দেশটাকে সাফ করো!"

ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট কিছু বললো না, ভাবুক চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে রইলো গদিতে। মুখে হাসি।


মন্তব্য

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

গুল্লি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

পাঠক এর ছবি

ইশ! কতদিন যে ক্যাপ্টেন প্লানেট দেখিনা! আপনি মনে করিয়ে দিলেন। আর লেখা হয়েছে মারাত্মক। চলতে থাকুক, দাদা। হাততালি চলুক

দ্রোহী এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সাফি এর ছবি

দেঁতো হাসি দাঁড়ান গন্ডারদার ছবি দিতেছি।

তারাপ কোয়াস এর ছবি


প্লানেটিয়াররা কর্মরত(ডানদিকে গণ্ডারদা'কে দেখা যাচ্ছে)


love the life you live. live the life you love.

দ্রোহী এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

হিমু এর ছবি

গুল্লি গুল্লি গুল্লি

চরম উদাস এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

সাফি এর ছবি

উরে... গুরু গুরু

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

গুল্লি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

শাব্দিক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি হো হো হো গড়াগড়ি দিয়া হাসি চলুক

বন্দনা কবীর এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

গুল্লি

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তিথীডোর এর ছবি

গুল্লি গুল্লি গুল্লি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সাদাকালো এর ছবি

আমারও পাচঁটা গুল্লি।

তাসনীম এর ছবি

হো হো হো

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রু (অতিথি) এর ছবি

ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটের মধ্যেও ভেজাল ঢুকায় দিলেন?

রুমঝুম ১ এর ছবি

"ক্যাপ্টেন আবুল????????" নাকি পাওয়ার কম্বাইন্ড হয়ে অন্য কোন ক্যাপ্টেন??? ক্যাপ্টেন চিন্তিত চিন্তিত

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হাসি

রনি এর ছবি

চলুক

আশালতা এর ছবি

ক্ষিতি অপ তেজ মরুৎ হে হে হে !!! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

[ অ টঃ আরও একটা সিরিজ ! বুচ্চি, আর কোন আশা নাই ইয়ে, মানে... ]

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

সুপ্রিয় দেব শান্ত এর ছবি

হিমু ভাই .......

আপনাকে সালাম।

gypsy এর ছবি

গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি গুল্লি

তানজিম এর ছবি

গায়া যে কখন গাইলাইবো হেইডাই ভাবতাসি চিন্তিত

অর্ক রায় চৌধুরী এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
মাগার ক্যাপ্টেন প্লানেট এর জন্য মন্টা খ্রাপ হয়ে গেলো। অনেকদিন দেখি না।

নিটোল. এর ছবি

চরম! গুল্লি গুল্লি

যুমার এর ছবি

ক্যাপ্টেন প্লানেট,হি ইজ দ্যা হিরো--- গড়াগড়ি দিয়া হাসি

তাপস শর্মা  এর ছবি

ব্যাপক গুল্লি গুল্লি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু চলুক

------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !

guest_writer এর ছবি

আপনার সব লেখাগুলোই পড়ি কিন্তু মন্তব্য করা হয়ে ওঠেনা। ভাললাগা জানাবার প্রয়োজন আছেকি ? পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। আশাকরি অপেক্ষা দীর্ঘায়িত করবেন না।

প্রৌঢ়ভাবনা

সচল জাহিদ এর ছবি

চলুক


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

শামীমা রিমা এর ছবি

যে বরাবরই এতো ভালো লেখে তার লেখায় আর কী মন্তব্য করব?

শামীমা রিমা

সপ্তর্ষি এর ছবি

গুল্লি গুল্লি গুল্লি

উচ্ছলা এর ছবি

মাশাল্লাহ্! এমন লেখা যে হাত দুইখান লেখে, সেই হাতে ফুলচন্দন পড়ুক হাসি

সাকিন উল আলম ইভান  এর ছবি

ওরে ঝাঝা রে ..................সেরাম হইসে

তারেক অণু এর ছবি
মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

যদিও পোলাপানেরা বেশী পছন্দ করবে, তবে এইটাও ভালো। এবার দেখি প্রথমটা কেমন!

--------------------------------------------------------------------------------

কল্যাণF এর ছবি

গুল্লি

ধৈবত এর ছবি

ক্রনোলজিতে ভুল আছে তো। 'ক্ষিতি-তেজ-মরুৎ-অপঃ-হেহেহে' হবে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।