পুরাকালে বাঁশখোর নামের এক পৌরাণিক চরিত্রকে ধাওয়া দিতে দুখী গণ্ডারনামা শিরোনামে একটা সিরিজ লিখেছিলাম। পৌরাণিক বাঁশখোরদা তার গণ্ডারপনায় ইতি টানার কারণে সিরিজটি তার গুটিকয় পাঠকের বহু তাগাদা সত্ত্বেও তেজগাঁও বিমানবন্দরের মত পরিত্যক্ত হয়। খোদাবি ইশারায় তেজগাঁও বিমানবন্দর যেমন বিমানবন্দর হিসেবে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে, সেভাবে এই সিরিজটিরও পুনরুজ্জীবন আবশ্যক বলে মনে করছেন দুয়েকজন বন্ধু। পৌরাণিক বাঁশখোরদা দুখী ছিলেন, কিন্তু এই সিরিজের গণ্ডারটি সুখী প্রকৃতির, তাই সিরিজের নামে শল্যোপচার করণ ঘটন হওনটা জরুরি ছিলো। তবে অতীতে আমি প্রতিদিনই নতুন একটা গণ্ডারনামা লেখার মতো তাগদ আর তাগিদ ধারণ করন হওন ঘটাতাম, এখন অসুখের কারণে দুবলা মেরে গেছি, তাই এই সিরিজ অনিয়মিতভাবে এগোবে।
খোকা গণ্ডারের ঘুম আসছে না। আকাশে মিটিমিটি জ্বলছে তারা, দূরে কোথাও খিখি করে হাসছে একদল হায়েনা, একটা প্যাঁচা বসে আছে আকাশিয়া গাছের ডালে। মাঝেমধ্যে দমকা হাওয়ায় কেঁপে উঠছে ঘাসবন।
বাবা গণ্ডার চুপচাপ ঝিমুচ্ছে, তাই খোকা গণ্ডার গেলো মা গণ্ডারের কাছে। একটু ঢুঁস দিয়ে বললো, "মা মা মা, একটা গল্প বলো!"
মা গণ্ডার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, "কোন গল্পটা?"
খোকা গণ্ডার বললো, "ঐ যে জেনেসিসের গল্পটা, জেনেসিসের গল্পটা, জেনেসিসের গল্পটা ...!"
মা গণ্ডার বললো, "আচ্ছা শোন। ঈশ্বর স্বর্গে একা একা থেকে খুব বোরড হয়ে গিয়েছিলেন। তখন তিনি ঠিক করলেন, তিনি গণ্ডার তৈরি করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ, কাদামাটি দিয়ে একটা ছেলে গণ্ডার তৈরি করলেন তিনি। আর তার নাম রাখলেন আবুল।"
খোকা গণ্ডার বলে, "তারপর?"
মা গণ্ডার বললো, "তারপর আর কী? আবুল ঘোরে ফেরে ঘাস খায়, একে গুঁতো দেয় তাকে গুঁতো দেয়। কোনো কাজেই তার বাধা নেই। ঈশ্বর তাকে বড় স্নেহ করেন। কিন্তু, একটা কাজ আবুলের করা নিষেধ। জ্ঞান ঘাসের শীষ তার জন্যে নিষিদ্ধ।"
খোকা গণ্ডার বলে, "কেন মা, নিষিদ্ধ কেন?"
মা গণ্ডার বলে, "ঈশ্বরের নিষেধ রে খোকা। মানা করেছে তাই নিষিদ্ধ।"
খোকা গণ্ডার বলে, "তারপর?"
মা গণ্ডার বলে, "আবুল একা একা থাকে, তার কেমন কেমন লাগে, তো সে ঈশ্বরকে গিয়ে বললো, মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী ও আজকে যারা শুনছেন! আমাকে একটা মেয়ে গণ্ডার বানিয়ে দিন, একটু খেলিধুলি।"
খোকা গণ্ডার বলে, "কী খেলবে মা?"
মা গণ্ডার বলে, "সেটা তোমাকে আরো কয়েক বছর পর বলবো খোকা, তুমি এখনও ছুডো। তো ঈশ্বর তখন আবুলের বেয়াল্লিশ নম্বর দাঁত উপড়ে সেটা থেকে একটা মেয়ে গণ্ডার বানালেন। তার নাম দিলেন শর্মিলা।"
খোকা গণ্ডার বলে, "তারপর?"
মা গণ্ডার বলে, "শর্মিলা আর আবুল স্বর্গে ঘোরেফেরে, একে গুঁতো দেয় তাকে গুঁতো দেয়, ঘাস লতাপাতা জড়িবুটি খায়। তো একদিন শর্মিলা আবুলকে বললো, চলো আবুল আমরা জ্ঞান ঘাসের শীষ খাই। আবুল বললো, ঈশ্বর তো মানা করেছেন এই জিনিস খেতে, উনি যদি রাগ করেন? শর্মিলা বললো, এহ বললেই হলো মানা করেছেন। ঈশ্বরের মায়রে বাপ। চলো এক কামড় খেয়ে আসি।"
খোকা গণ্ডার বলে, "তারপর?"
মা গণ্ডার বলে, "আবুল আর শর্মিলা জ্ঞান ঘাসের শীষ খেয়েদেয়ে বাড়ি ফিরলো। কিছুক্ষণ পর ঈশ্বরের এক দূত এসে বললো, শর্মিলা, তুমি আবুলকে নিষিদ্ধ জ্ঞান ঘাসের শীষ খেতে প্ররোচিত করেছো! স্বর্গে আর তোমার জায়গা হবে না, তুমি কেটে পড়ো। তখন শর্মিলা স্যুটকেস গুছিয়ে, লাল জুতো পরে, বগলে সুগন্ধী মেখে গটমটিয়ে স্বর্গ ছেড়ে সাভানায় চলে এলো।"
খোকা গণ্ডার বলে, "আর আবুল?"
মা গণ্ডার বলে, "ঈশ্বর নিজেই এলেন আবুলের বাড়িতে, তাকে স্বর্গ থেকে পোঁদে লাথি মেরে দূর করে দিতে। কিন্তু এসে দেখলেন, আবুল একটা গদিতে বসে আছে আর মিটিমিটি হাসছে। ঈশ্বর তখন তার নাক ধরে খুব টানাটানি করতে লাগলেন, কিন্তু আবুল আর গদি ছেড়ে ওঠে না, এমনই জুত করে বসেছে সে! টানাটানির চোটে তার নাক থেকে একটা শিং পর্যন্ত গজিয়ে গেলো, কিন্তু তাকে গদি ছেড়ে আর ওঠানো গেলো না। ঈশ্বর তখন খুব চটেমটে গদিসুদ্ধু তাকে পৃথিবীতে ছুঁড়ে ফেললেন।"
খোকা গণ্ডার বলে, "তারপর?"
মা গণ্ডার বলে, "তারপর আর কি? আবুল আর শর্মিলার অনেক ছানা হলো, সেই ছানাদের অনেক ছানা হলো, সেই ছানাদের অনেক ছানা হলো, সেই ছানাদের অনেক ছানা হলো ... এমনি করে সারা দুনিয়া একসময় গণ্ডারে ভরে গেলো।"
খোকা গণ্ডার বলে, "গদিটার কী হলো মা?"
মা গণ্ডার বলে, "গদিটার আর কী হবে রে খোকা, সেটা আবুলের পেছনেই সেঁটে রইলো?"
খোকা গণ্ডার বলে, "তাহলে আমার পেছনে গদি নেই কেন?"
মা গণ্ডার খোকার মাথা জিভ দিয়ে চেটে আদর করে বলে, "সব গণ্ডারের কি গদি হয় রে পাগল? গণ্ডারের মতো গণ্ডার না হলে পেছনে গদি জোটে না।"
মন্তব্য
এইটা শ্রেষ্ঠচূড়াকূলশিরোমণি!
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
হাহাহা দারুণ!
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
love the life you live. live the life you love.
অতীত
হা হা হা, চরম মজা পাইলাম।
শর্মিলা গন্ডারনিরে নিয়ে আরো গল্প চাই
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
এটা দেখি গণ্ডারমানামা। ২/৪ টা গন্ডারাপানামা আসবে নাকি?
এটা বেস্ট। শর্মিলা গান্ডরিনীর কি হলো?
দুর্দান্ত
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হিমু ভাই, এইটা অচাম।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
দুর্দান্তিস !
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
শর্মিলা গন্ডারনীকে নিয়ে আরো চাই।
এইটা ক্লাসিক হইছে!
একটা কার্টুন দেখেছিলাম, মাছি-মা তার বাচ্চাকে মাছিদের জেনেসিস মিথ পড়ে শোনাচ্ছে, 'প্রথমে ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন একতাল গোবর...'। আপনার গন্ডার-ভার্শনটা চমৎকার হয়েছে।
গণ্ডারনামা গুলোতে কি শুধুই সমস্যার কথায় থাকবে? গদিওয়ালা আর গদিহীন গন্ডারদের কিভাবে আদমে রূপান্তর করা যায়? অন্যথায় এক গন্ডারের পিছন থেকে গদি নিয়ে গেলেও তো আরেক গন্ডারের পিছনেই লেগে থাকবে!!
কঠিন হইসে!
facebook
কি বলব, দম ফাটান হাসি হাসলাম।
আবুল গন্ডার আর শর্মিলা গন্ডারনির মেয়ে রুবু গন্ডারছানাকে নিয়েও লেখা চাই!! পারফেক্ট কম্বিনেশান!!
জটিলজ!!
শর্মিলা গন্ডারনিকেও ডেকে এনে একটা আঁঠাওয়ালা গদিতে বসিয়ে দেওয়া হোক। ষোল্কলা পূর্ণ হোক। :X
পুরা গণ্ডারমারা লেখা।
ওরে পুরাই উরাধুরা ............
sakinsust.blogspot.com
এখন পর্যন্ত পড়া সেরা গণ্ডারনামা।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
চরম হইছে হিমু ভাই
চলুক
বেড়ে হইছে।
প্রৌঢ়ভাবনা
সেরা গণ্ডারনামা। নাকি? আচ্ছা আগেরটা পড়ে দেখি।
--------------------------------------------------------------------------------
হ্যাঁ, এইটাই সেরা! এখন পর্যন্ত!
--------------------------------------------------------------------------------
অছাম।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
এইটা ভালৈছে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সুখী হলাম পড়ে! গন্ডারনামার মত চন্ডীশিরাটাও যদি ---
____________________________
নতুন মন্তব্য করুন