ওরা বলতো:
ইন্দিরা পাড়লো ডিম
মুজিব দিলো তা
ডিম ফুইটা বাইর হইলো
বাংলাদেশের ছা।
আমরা বলতাম:
ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা
বোয়াল মাছের দাড়ি
টিক্কা খান ভিক্ষা করে
শেখ মুজিবের বাড়ি।
তারপর শুরু হতো মারামারি। এক পক্ষে শায়েস্তার দল, শায়েস্তা দারোগা সাহেবের মেয়ে। খুব অহংকার ছিলো। আমার থেকে লম্বায় খানিকটা বড় ছিলো ও। মারামারিতে তেমন পটু না হলেও দেখনধারীতে ছিলো সেরা। খুব সেজে-গুজে পরিপাটি হয়ে থাকতো। আর এমন ভাব নিতো যেনো টিক্কা খান ওর বাবার সাথে দু’বেলা খানা খায়।
অপর পক্ষে আমি আর ছ্যাপ বেবী। “ছ্যাপ বেবী” নামকরণের শানে-নযুল হলো, বেবীর সারা গায়ে ছিলো এক ধরনের একজিমা। ও সারাক্ষণ গা চুলকাতো, আর গায়ে থুতু মাখতো। যার ফলে ওর গা থেকে পারফিউমের মতো থুতুর গন্ধ ছড়াতো। ওর ধারে কাছে কেউ ঘেঁষতো না, ওকে কেউ খেলায়ও নিতো না। একমাত্র আমিই ওর সাথে খেলতাম তার প্রশ্নাতীত আনুগত্যর জন্য। ও ছিলো আমার আজ্ঞাবাহক প্রজা। আমি যা বলতাম ও সেটাই করতো, কখনো প্রশ্ন করতো না।
আমার চামড়ায় মোড়া হার ক’খানা নিয়ে মারামারির পুরোটা একাই চালিয়ে যেতাম। খুব বেকায়দায় পরে গেলে ছ্যাপ বেবী উদ্ধারকার্যে এগিয়ে আসতো। ওর শুধু এগিয়ে এলেই হতো, আর কিছুই করতে হতো না, সবাই আমাকে ছেড়ে দূরে সরে যেতো। তাতে করে সব মারামরিতে আমার টেকনিক্যালি জয় হতো।
শায়েস্তার মা ছিলেন আমাদের পাড়ার একমাত্র মহিলা যিনি ঠোঁটে কড়া লিপস্টিক মেখে, ডানাকাটা ব্লাউজ, হাই-হিল জুতো, চুল ফুলিয়ে বিরাট খোঁপা ও রঙ-বেরঙের সিল্কের শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াতেন। আমাদের সময়ে আমাদের মা-খালারা তেমন কোন সাজগোজ করতেন না। চুল বেঁধে, চোখে কাজল পরা এটাই ছিলো সাজের ষোল আনা। অবশ্য আমার মার ঠোট সব সময় লাল টুকটুক করতো, তবে সেটা লিপস্টিক নয়, পানের রসে। আমরা খেলার মাঠ থেকেই দেখতাম প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা সেজে-গুজে শায়েস্তার মা বেড়াতে বেরুচ্ছেন। পিছে পিছে যথারীতি ভুঁড়ি ভাসিয়ে শায়েস্তার বাবা তাকে অনুসরণ করতেন। দু’জনের বয়সের বেশ ব্যবধান ছিলো। লোকে বলতো “ওই দেখ দ্বিতীয়পক্ষকে খ্যাপ খাটাতে নিয়ে যাচ্ছে।” খ্যাপ খাটা কী, অত বুঝতাম না, তবে সেটা যে খারাপ এটা বুঝতাম। “তোর মা খ্যাপ খাটে” এইটুকু বললেই হলো, শায়েস্তা চিলের মতো ছুটে আসতো মারতে।
মুক্তিযোদ্ধারা তখন তাদের ট্রেনিং শেষ করে সারা দেশে ছড়িয়ে পরেছে। ভেতরে ভেতরে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। তার আঁচ পেতাম প্রতিদিন মুক্তিবাহিনীর অ্যাকশনের খবরে। গ্রামে-গঞ্জের কথা বলতে পারবো না, তবে খোদ ঢাকা শহর ও তার আশে পাশে প্রতিদিনই কোনো না কোনো ঘটনা ঘটতো। “খবর শুনছেন? বিচ্ছুরা আবার অ্যামবুশ করেছে তো!” এভাবেই বলা হতো তখন। ওরা যে কোথা থেকে আসতো আর বোম ফুটিয়ে কোথায় যে মিলিয়ে যেতো, আল্লাই জানে! ওদের এই সব কীর্তি-কলাপে পাক আর্মিরা হয়ে উঠলো পাগলা কুকুরের মতো। শুরু হয়ে গিয়েছিলো ব্যাপক ধর-পাকড়। শুনতাম অমুককে ধরে নিয়ে গেছে, তমুককে ধরে নিয়ে গেছে। এই সব খবর। তখন জোর গুজব পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় নাকি পাক-আর্মির স্পাই আছে। কথাটা লোকে সত্যি বলে বিশ্বাস করতে শুরু করলো, না হলে পাক-আর্মি কী করে খবর পেতো কোথায় মুক্তিবাহিনী আছে? পেপারেও খবর ছাপানো হলো ওরা দুষ্কৃতিকারীদের ধরেছে, অনেক অস্ত্রসহ, অস্ত্রের মনে হয় ছবিও ছাপা হয়েছিলো। যদিও আমি পুরোপুরি নিশ্চিন্ত না।
সে সময় আরো দুটো তোলপাড় করা ঘটনা ঘটেছিলো। একটা খুশীর অন্যটা খুব দুঃখের। স্কোয়াড্রন লিডার ক্যাপ্টেন মতিউর রহমানের কথা সবাই জানে, তাই ও প্রসঙ্গে আর গেলাম না, পরেরটুকু বলি... আমি ডাক্তার মামার কথা আগেই লিখেছি, তার বড়বোনের মেয়ে বেদানা আপার সাথে মিলি রহমানের (স্কোয়াড্রন লিডারের স্ত্রী) ভাইয়ের বিয়ে হয়েছিলো। মিলি আপা তার বাচ্চাদের নিয়ে আগেই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকা চলে এসেছিলেন। প্লেন হাইজ্যাক করতে গিয়ে তিনি যখন প্লেন ক্রাশে মারা যান, তখন তাঁর মতো এত বড় একজন দেশপ্রেমিক বীরকে দুষ্কৃতিকারী, দেশদ্রোহী, ইন্ডিয়ার চর হিসেবে পাকিরা দেশবাসীর কাছে পরিচিত করতে চেষ্টা করেছিলো। অপরপক্ষে সেই পাকিস্তানি পাইলটকে দেশপ্রেমিক হেন-তেন বলে খেতাব দিয়ে বিরাট এক দেশপ্রেমিক বানিয়ে রেডিও, টিভি, খবরের কাগজে খুব প্রচারণা করা হয়েছিলো।
মামারা ছিলেন নিঃসন্তান দম্পতি। আমরাই ছিলাম তাদের সন্তানের মতো। আমার মনে আছে মতিউর রহমানের দোয়ায় মামা মামীর সাথে আমি ও তাদের ভাগনা মাশুক গিয়েছিলাম একটা স্কুটারে করে। আমাদের নিয়ে গিয়েছিলেন বোধহয় এই জন্য যে বাচ্চারা সঙ্গে থাকলে মিলিটারিরা সন্দেহ করতো না, গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতো না।
বেদানা আপারা থাকতেন মনিপুরী পাড়ায়, বাড়িটা ছিলো রাস্তাটার মুখেই, পাড়ায় ঢুকতেই দেখলাম এক ট্রাক ভরা মিলিটারি দাড়িয়ে আছে। বাড়ির ভেতরের একটা ঘরে মিলি আপা তার বাচ্চা দুটোকে বুকে জড়িয়ে খুব কাঁদছিলেন! বলছিলেন, “আমার স্বামী দুষ্কৃতিকারী না, ইন্ডিয়ার চর না, ও দেশপ্রেমিক, ও দেশপ্রেমিক।”
খুশীর ঘটনাটা হলো, মুক্তিবাহিনীরা মোনায়েম খানকে তার বাসাতেই গুলি করে মেরে রেখে গিয়েছিলো। কেউ টের পায়নি। উঃ ভাবা যায় এটা কত বড় সাহসের কাজ! অনেকদিন পর, অনেকদিন পর লোকেজন যে কী খুশী হয়েছিলো! আর কি যে মিষ্টি খাওয়ার ধুম সবার! মিষ্টির দোকানে কোন মিষ্টিই ছিলো না। সব শেষ হয়ে গিয়েছিলো।
আমাদের পাড়ায় ফেরিওয়ালাদের আনা-গোনা বেড়ে গেলো। একজন নতুন লেস-ফিতেওয়ালা আসতো। যতো না জিনিস বিক্রি করতো, তার চেয়ে বেশি বারান্দায় বসে বসে ঝিমাতো। একজন খবরের কাগজ কিনতে আসতো। যে ভালো করে দাড়িপাল্লাই ধরতে পারতো না। আর আসতো একটা লম্বা শাড়ি-কাপড় ওয়ালা। তার সংগে ১২-১৩ বছরের একটা ছেলে থাকতো। ওদের সাদা কাপড় দিয়ে বাঁধা শাড়ির পোটলাতে তেমন বেশী শাড়ি ছিলো না। একই শাড়ি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখাতো আম্মাদের। একদিন শাড়ি বিক্রি করতো তো দুদিন পর এসে সেই শাড়িটা ফিরিয়ে নিয়ে যেত। অথচ আম্মারা ওদের দু’জনকে খুব যত্ন করে খাওয়াতেন।
পাড়ার মহিলারা শায়েস্তার মাকে পছন্দ করতেন না। মেলামেশাও করতেন না। সেও সবাইকে এড়িয়ে চলতো। কিন্তু হঠাৎ করেই সে সবার বাড়িতে যাওয়া-আসা শুরু করলো। লোকে বলতো দারোগার বউ নাকি টিকটিকি। টিকটিকি যে স্পাইদের বলে সেটা তখনি প্রথম জেনেছিলাম। তার পাড়া বেড়ানো শুরু হবার পর পরই একটা জিনিস হলো আমাদের পাড়ায় আবার মিলিটারি আসা শুরু হলো। হায়দ্রাবাদি চাচা পাড়ার মুরব্বিদের ডেকে সাবধানে থাকতে বললেন। বললেন, আপত্তিকর কিছু থাকলে যেন সরিয়ে ফেলা হয়। কখন কার বাসায় আর্মি রেইড হবে কেউ জানে না। বলেছিলেন, “তোমরা নিজেরাই যদি নিজেদের সাথে গাদ্দারি করো, তাহলে আমি কী করতে পারি?” শহিদবাগের লোকের সৌভাগ্য যে, তারা তাদের পাড়ার গাদ্দারটাকে চিনতে পেরেছিলো। তাই শায়েস্তার মা বাড়ি থেকে বেড় হলেই সবাই সেটা জেনে যেত, এবং যথেষ্ট সময় পেতো নিজেদের রক্ষা করতে। সেই জন্যেই বোধ হয় শহীদবাগের মেয়েদের ও মুক্তিযোদ্ধাদের আর্মিরা ধরে নিয়ে যায়নি। নভেম্বরের শেষে বা ডিসেম্বরের প্রথমে শায়েস্তারা পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলো। ফিরে এসেছিলো দেশ স্বাধীন হবার পর। তখন আমাদের পাড়া পরিচালনার ভার ছিলো সিক্সটিনথ ডিভিশনের হাতে। (১৬ই ডিসেম্বরের পর যুদ্ধ না করেও যারা স্বঘোষিত মুক্তিযোদ্ধা) কাকে ধরেছিলো বা কী করেছিলো জানি না। তবে ওদের কোনো রকম অসুবিধা হতে দেখিনি। বরং ওরা অনেকের চেয়ে বেশীই ভালো ছিলো। পরে দেখেছি, শায়েস্তার বাবা রক্ষীবাহিনীতে কাজ করতো। রক্ষীবাহিনী দ্বারা দেশের লোক কেন অত্যাচারিত হয়েছিলো এ থেকে পাঠক কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারবে আশা করি।
তখন তো আর এখনকার মতো বাথরুম ও রান্নাঘর পরিষ্কার করার জন্য ব্লিচ পাওয়া যেত না, তাই আম্মা আমাদের কেমিকেল কোম্পানি থেকে এক ধরনের কেমিক্যাল নিয়ে আসতেন, যেটা একদম ব্লিচের মতো কাজ করতো। ওটার নাম মনে নেই তবে বড় বড় করে লেখা ছিলো ‘পয়জন’।
পাড়ায় মিলিটারিরা আসতো ঠিক সন্ধ্যার আগ দিয়ে। পাড়ায় ওদের গাড়ি ঢুকবার সঙ্গে সঙ্গে কেমন করে যেন, “মিলিটারি আসছে, মিলিটারি আসছে” বলে ঘরে ঘরে খবর পৌঁছে যেত। আম্মারও তো তখন বয়স বেশি ছিলো না। ৩২-৩৩ হবে। মিলিটারি আসার খবর শুনলেই আম্মা বড়াপুর হাত ধরে বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিতেন। হাতে থাকতো সেই কেমিকেলের শিশি।
আম্মা বড়াপুকে নিয়ে বাথরুমের দরজা বন্ধ করলেই আমি এক দৌড়ে ছাদে গিয়ে পানির ট্যাংকের আড়ালে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অঝোর ধারায় কাঁদতাম। আর আঙুল দিয়ে ট্যাংকের গায়ে কাটাকুটি কাটতে কাটতে বলতাম, আল্লাহ যেন মিলিটারি না আসে, আল্লাহ যেন মিলিটারি না আসে। ঠিক যেমন করে, লুডু খেলতে বসে, প্রতিপক্ষের যেন ছক্কা না পরে, সেজন্য লুডুর বোর্ডের ওপর যেমন করে কাটাকুটি করে বলতাম, “আল্লাহ যেন ছক্কা না পড়ে, আল্লাহ যেন ছক্কা না পড়ে” ঠিক সেভাবে। নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি অমন করলে প্রতিপক্ষের কখনোই ছক্কা পড়তো না। কিন্তু মিলিটারি আসার ব্যাপারে এটা কখনো কাজ করতো কখনো করতো না। কখনো মিলিটারিরা আসত, কখনো আসত না। মিলিটারির গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে নেবার সঙ্গে সঙ্গে আমি নিচে এসে দুম-দাম বাথরুমের দরজায় ধাক্কা দিয়ে আম্মাদের খবর দিতাম। আমার ভয় ছিলো একটু দেরি করলেই ওরা যদি বিষ খেয়ে ফেলে। পরের দিকে আর্মি আসবার খবর পেলে বড়াপু নিজেই বিষ নিয়ে বাথরুমে ঢুকে বসে থাকতো। আম্মাকে আর হাত ধরে নিয়ে যেতে হতো না।
বহু বহু দিন পর আমার মেয়ে ডোরা যখন ঠিক সেই বয়সী, আমি ডোরার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সেই দিনগুলিতে ফিরে যেতাম। নিজেকে আমার মায়ের চরিত্রে কল্পনা করলে আমার সমস্ত শরীর শিউরে উঠতো! দিনের পর দিন ওই পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাওয়া, ভাবলে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যেত। এমন যদি কোন ঘটনা আমার জীবনে ঘটতো, আমি কী পারতাম আমার মেয়ের মুখে বিষ তুলে দিতে? না, অসম্ভব! আমি হয়ত নিজে মরে যেতাম, তবু আমার মেয়েকে বিষ খাওয়াতে পারতাম না। কিন্তু আমার মা পেরেছিলেন। আমার মায়ের মতো আরো শত শত মায়েরা পেরেছিলেন নিজের বুকের ধনকে দেশের জন্য বলি দিতে বা দেবার জন্য প্রস্তুত থাকতে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ আর বিপক্ষ নিয়ে তর্ক করে আমরা গলা ফাটিয়ে দেই, কিন্তু এই সব মায়েদের কথা কে কবে স্মরণ করি? এমনি সব রত্নগর্ভা মায়েরা জন্ম দিয়েছিলেন সেইসব সোনার টুকরো বাঙালিদের, যারা জীবন দিয়ে, জীবন বাজি রেখে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।
প্রথম পর্ব: http://www.sachalayatan.com/mehbuba/38450
দ্বিতীয় পর্ব: http://www.sachalayatan.com/mehbuba/38556
তৃতীয় পর্ব: http://www.sachalayatan.com/mehbuba/38759
চতুর্থ পর্ব: http://www.sachalayatan.com/mehbuba/38908
পঞ্চম পর্ব: http://www.sachalayatan.com/mehbuba/39129
ষষ্ঠ পর্ব: http://www.sachalayatan.com/mehbuba/39358
সপ্তম পর্ব: http://www.sachalayatan.com/mehbuba/39919
অষ্টম পর্ব: http://www.sachalayatan.com/mehbuba/40312
নবম পর্ব: http://www.sachalayatan.com/node/40908
দশম পর্ব: http://www.sachalayatan.com/node/41203
মন্তব্য
'ছ্যাপ বেবির' কথা পড়ে হাসলাম। শায়েস্তার কথা পড়েও হাসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসি নাই হয়ে গেল। শেষ অর্ধেকটুকু পড়তে যেয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছিল। কী ভয়াবহ অভিজ্ঞতা! বর্ণনা থেকে একটা জিনিষ পরিষ্কার বুঝতে পারি নাই। মিলিটারি আপনাদের পাড়ায় আসতো, ওটা কি স্বাধীনতার আগে না পরের সময়কাল?
স্বাধীনতার পরে মিলিটারি? না রু সেটা স্বাধীনতার আগের ঘটনা।
--------------------------------------------------------------------------------
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ নজরুল।
--------------------------------------------------------------------------------
আমার জন্ম ৭১ এর অনেক পরে। মুক্তিযুদ্ধের কথা জেনছি বই পড়ে, বড়দের কাছ থেকে নানা গল্প শুনে। এইসব গল্পগুলো শুনলে খুব বিচিত্র একটা অনুভূতি হয় - গর্ব, হতাশা ও ক্রোধের মিশেল। যারা কথক, ঘটনাগুলোর প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী তাদের কেমন লাগে ?
আপনার লেখা সবগুলো পর্ব পড়েছি। সাবলীল গদ্যের হাত আপনার।
অনেক শুভেচ্ছা।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
'ঘটনাগুলোর প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী' যারা তাদের কিছুই লাগেনা, তারা সব ভুলে গেছে। ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------------------------------
মায়ের মুখে শোনা গল্পগুলোর মত, তিনি তখন হয়ত আপনার বড় আপুর মতই ছিলেন।
ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------------------------------
ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------------------------------
রক্ষী বাহিনীর ব্যাপার টা সম্পর্কে আরো কিছু জানা থাকলে এবং রেফারেন্স দিলে খুব ই ভালো হত আপু ,এই ব্যাপারে আমি একেবারেই অজ্ঞ বলা যায় , যাই হোক পড়া শুরু করলাম ............
প্রথম এর কবিতাটা অনেক ভালো লেগেছে ।
রক্ষীবাহিনীর একজন বড় অফিসার ছিলেন, তার নাম ছিলো সেলিম বা সালাম সাহেব। থাকতেন ১৫ নাম্বার আলমগন্জ লেন, মিল ব্যরাক পুরোণো ঢাকায়। তিনি ও তার স্ত্রী তাদের বড় মেয়ের বিয়েতে রক্ষীবাহিনীর জিপ ও লোকজন নিয়ে দাওয়াত দিতে এসেছিলেন। আমি শায়েস্তার বাবাকে রক্ষীবাহিনীর পোষাক পরে ওই জিপে বসে থাকতে দেখেছিলাম। ব্যস এইটুকুই। আর কিছু জানিনা।
--------------------------------------------------------------------------------
এইরকম লেখাগুলো পড়লে আমার খুব গর্ব হতে থাকে। মনে হয় আহ, এইরকম লেখাও থাকে যে প্লাটফরমে সেখানে আমিও লিখি ! এই লেখাগুলো আমায় গর্বিত করে দেয়। খুব খুব।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
এই রে ভারি লজ্জায় ফেলে দিলে যে আশালতা!
--------------------------------------------------------------------------------
শুধু ভাললাগা নয়, আপনার লেখাগুলো পড়ার সময় অদ্ভুত এক ভালবাসা আপনার জন্য অনুভব করি।
ভাল থাকুন।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
অনেক অনেক ধন্যবাদ উচ্ছলা।
--------------------------------------------------------------------------------
শায়েস্তা খাঁ ছাড়াও যে কারো নাম 'শায়েস্তা' হয় তা পড়ে মজা পেলাম।
ছবিসূত্র
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
শায়েস্তার বড় বোনের নাম ছিলো বুলবুলি। এক্কেবারেই মিল নেই। পোস্টারটা কোথায় পেলে?
--------------------------------------------------------------------------------
পোস্টারের একটা বড় ভার্শন আমার ঘরে আছে। বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের স্টল থেকে কেনা।
তবে আমার মনে হয়েছিলো আপনি জিজ্ঞেস করবেন এখানে দেয়াটা কোথা থেকে পেলাম। পোস্টারের ছবির নিচের 'ছবিসূত্রে' ক্লিক করে দেখুন, লিংক দিয়ে দিয়েছি।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
বাংলার মায়েরা মেয়েরা সকলেই মুক্তিযোদ্ধা! আসলেই!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
ঠিক তাই।
--------------------------------------------------------------------------------
খুব চমৎকার লাগলো ভাবী। আমার নানীর কাছে গল্প শুনেছিলাম এক মহিলা - বাচ্চা যেন না কাঁদে এমনভাবে বাচ্চার মুখ চেপে ধরেছিলেন যে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী চলে যাবার পরে দেখা গেল বাচ্চা দম আটকে মরে গিয়েছে। বাস্তবতা এমন-ই ছিল যে বাচ্চেকে কবরও দিয়ে যেয়ে পারেনি সেই মা
এমনি কতশত বুক ভাঙ্গা, পাঁজর ভাঙ্গা সত্যি গল্প জড়িয়ে আছে আমাদের স্বাধীনতার সাথে! কজনাই বা তার খবর রাখে!
--------------------------------------------------------------------------------
মায়েরা নিরবে নিভৃতেই রয়ে যান চিরদিন ... এমন রত্নগর্ভা মায়েদের চরনে শতকোটি শ্রদ্ধা ।
পড়ে চলেছি ...
ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------------------------------
সবগুলো পর্ব-ই পড়েছি।
চমৎকার লাগলো....
ভাল থাকুন আপু।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
তুমিও ভালো থেকো।
--------------------------------------------------------------------------------
নত শিরে বলি, অসাধারন।
ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------------------------------
লিখে যান যতদিন লিখতে পারেন। আপনার পরবর্তিতে লেখার জন্যও কাউকে তৈরী করে যান। আমাদের বড়ই ভুলোমন। যাঁদের সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে আমাদের এ অর্জন তাঁদের কথা আমরা ভুলতে বসেছি। প্রতি নিয়তই কথাগুলো স্মরন করিয়ে দিতে হবে, জানিনা আরও কতকাল। সত্যিই কবে আমরা তাঁদের সঠিক মুল্যায়ন করতে পারবো!
অসংখ্য ধন্যবাদ, সুন্দর একটি সিরিজ উপহার দেবার জন্য, ইতিহাসকে ধরে রাখার জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকেও।
--------------------------------------------------------------------------------
অনেকদিন পরে লিখলেন ভাবী, সিরিজটা দেখতে পেয়েই ভালো লাগলো।
বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান প্রসঙ্গে দুইটা ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এক, সম্ভবত উনার পদবী 'ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট' হবে, 'স্কোয়াড্রন লীডার' নয়। একটু চেক করবেন।
দুই, মতিউর রহমান যখন শহীদ হন তখন তাঁর স্ত্রী মিলি রহমান এবং তাঁদের সন্তান মাহিন ও তুহিন তাঁর সাথে রিসালপুরেই থাকতেন বলে পড়েছি, ঢাকাতে নয়। তাছাড়া মতিউর রহমান শহীদ হবার পর উনাদেরকে দীর্ঘদিন আটকে রাখা হয়েছিল বলেও পড়েছি। কোন পত্রিকায় পড়েছি সেটা ঠিক বলতে পারবো না। বিষয়টা একটু চেক করে নিশ্চিত করবেন?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মতিউর রহমানের কথা লেখার কারণ আমার দুটো স্মৃতি। একটা ওই বাসার যাবার ঘটনাটা। সেটা এতো পরিষ্কার মনে আছে যে, কী রঙের জামা পড়েছিলাম সেটা সহ স্কুটার ওয়ালা দেখতে কেমন ছিলো সেটা পর্যন্ত আমার পরিষ্কার মনে আছে।
অন্যটা মিলি আপার ওই কান্নার দৃশ্যটা! খাটটা ছিলো ঘরের মাঝখানে। জানালার সাদা পর্দা উড়ছিলো। খাটের কাছে একটা হাতল দেওয়া বেতের চেয়ারে ডাক্তার মামা বসে ছিলেন! ব্যস এইটুকুই, এর আগে পিছে আর কিচ্ছু মনে নেই। আমরা কখন ফিরে এসেছিলাম বা ওখানে কোন মিলাদ বা দোয়া হয়েছিলো কিনা, অথবা আমরা কিছু খেয়ে ছিলাম কিনা! সে সব কিছুই মনে নেই।
আমি আগেই বলেছি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কোন নতুন তথ্য যোগ-বিয়োগ করা আমার এ লেখাটার উদ্দেশ্য নয়। পান্ডব, তুমি যদি কোথাও পড়ে থাকো তাহলে হয়ত সেটাই ঠিক। সে ক্ষেত্রে মিলি রহমানের কা্ন্নার দৃশ্যটা হয়ত পরে ঘটেছিলো। আমি একাকার করে ফেলেছি। কিন্তু তাহলে তিনি সেই কথা গুলি কেন বলবেন? ঘটনাটা যদি স্বাধীনতার পর হয়, তাহলে তো সবাই জানতোই যে মতিউর রহমান কত বড় দেশ প্রেমিক ছিলেন। জানিনা ভাই, আমি আসলেই কনফিউজড!
মামাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক একটু বেশীই ঘনিষ্ঠ ছিলো, যার ফলস্বরূপ পরবর্তীতে ওদের পরিবারে আমার বড়াপুর বিয়ে হয়েছে। ও ওর শ্বশুরকুলের কথা আমার চাইতে বেশী জানবে, তাই ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বড়াপুও জানালো যতদূর মনে করতে পারে তারা আগেই চলে এসে ছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিন্ত করেই তিনি নিজের জীবনের ওপর ঝুঁকি নিয়েছিলেন।
তাঁর পদবী যদি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হয়, তাহলে মনে হয় সেটাই ঠিক! ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আর স্কোয়াড্রন লিডারের মাঝে ফাইথথক্য কী সেইটাই তো আমি জানি না।
--------------------------------------------------------------------------------
এই লেখাগুলো পড়তে ইচ্ছে করে না। কারণ, পড়ার পরে মেজাজ খারাপ হয়। আপনার সাবলীল গদ্যের কারণে পড়লাম। পড়ার পরে মন খারাপ হলো, মেজাজও খারাপ হলো। আমরা এখনো একাত্তরে শত্রুকে সংসদে বসাই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাই, কি বিষয় ভাইজান? এতো রাগ হলে কেমনে চলবে? বেশী রাগ হলে বুদ্ধি ভোতা হয়ে যায়। ভোতা বুদ্ধি নিয়ে উল্টো পাল্টা কাজ করে মানুষ। ( আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি) এখন সময় খুব খারাপ। ওদের শিকর ছড়িয়ে গেছে অনেকদূর। রাগ নয়, মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করতে হবে।
--------------------------------------------------------------------------------
স্যালুট।
বাকিগুলো পড়তে হবে সময় করে।
খুব ভালো লাগছে। প্রথম পর্ব থেকেই সাথে আছি।
ভীষণ ভাবে ছুঁয়ে যায়। বারবার
সবগুলো লেখাই পড়েছি, অনেক ভাল হয়েছে।
অনেক ভাল থাকুন।
লেখাটা পড়ে অনেক ভাল লাগল। স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে ভারী ভারী কথার আড়ালে আমাদের মা বোনদের ত্যাগ হারিয়ে যায়। আমার মা অনেক ছো্ট ছিল তখন। শুনেছিলাম আমার নানাবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল ৭১ এ। ছোট-বড় সব আত্মত্যাগ মিলিয়ে আজকের স্বাধীন আমরা।
স্বাধিনতার ৪০ বছর গত হয়েছে। বড় জোর আর দশক দেড়/দুই পরেই মুক্তিযোদ্ধা'রাও সবাই গত হয়ে যাবেন। এই সব চোখে দেখা 'সত্যি গল্প-কাহিনী'গুলো আরো বেশি বেশি করে লিখে ফেলা দরকার। যে হারে স্বাধিনতা যুদ্ধের ইতিহাস/গল্প বদলাচ্ছে দিনে দিনে...
রত্নগর্ভা বীর জননীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা। তাঁদের বলিদান আর সহিষ্ণুতার কারনেই আজ আমরা স্বাধিন একটা রাষ্ট্র পেয়েছি, তার স্বিকারোক্তি কাগজে লেখা না থাকুক আমাদের হৃদয়ে লেখা থাকবে ভালবাসার কালিতে।
পরের লেখার অপেক্ষায়...
কষ্ট, ক্রোধ, অপারগতা এবং সর্বোপরি একের পর এক নতুন সব তথ্যে আমি পর্যুদস্ত। আমি এখানে একেবারেই নতুন হওয়ায় আপনার গতকালকের এই লেখাটির সূত্র ধরেই পড়লাম পুরনো দশটি পোস্ট। মুনির চৌধুরীর মতো আরও অনেক তথ্যই প্রচণ্ড ধাক্কার মতো বুকে লেগেছে। পরিবারের অনেকের কাছ থেকেই ব্যাংক লুটের কথা শুনেছি কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভেবে মন দেইনি। জানামতে শোকরানা, তপন এরা মুক্তিযুদ্ধ কিছুটা করলেও মানুষ হিসেবে সুবিধার নন ততটা। এই ঈদে বাড়ি গিয়ে চেষ্টা করব পুরোটা জানার এবং পোস্টানোর।
এই লেখাগুলোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানানোটাও ধৃষ্টামো মনে হচ্ছে। ইচ্ছে থাকলো কখনও দেখা হলে পায়ের ধূলো নেবার।
কী অসাধারণ লেখনী
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
আপনার ১৯৭১ এর সিরিজ পড়তে ইচ্ছা করে না, পড়লেও কমেন্ট করতে ইচ্ছা হয়না। এধরনের লেখা পড়লে কষ্ট হয়। মনে হয় দায়িত্ব নিয়ে যখন অনেক প্রয়োজনীয় লেখা তৈরি করার কথা তখন ফাতরামি/ ভাঁড়ামি করে সময় কাটাচ্ছি।
আজকে বিডিনিউজের খবরটা দেখে মুখটা তিঁতা হয়ে আছে। বীর বিক্রম একজন, অলি আহমেদ। কেবলমাত্র নোংরা রাজনীতির হালুয়া রুটির জন্য এমনকি নিজের রক্তের সাথেও বেঈমানী করতে দ্বিধা করলো না সে! কতোটা খারাপ লাগে সেই মায়েদের জন্য, যাঁরা অলি আহমেদের মতো স্বার্থপরদের পেটে ধরেছিলেন, মানুষ করার চেষ্টা করেছিলেন! তিনি কি জানতেন, তাঁর ছেলে তাঁকেই বিকিয়ে দিতে পারবে অনায়াসে শুধুমাত্র রাজনীতির একটু মাখনের লোভে! ধিক অলি আহমেদ, ধিক। আপনার মতো মুক্তিযোদ্ধার মুখে থুঁতু দেই আমি।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
শুরু্র কবিতাটা বেশ চমৎকার লেগেছে ভাবী। অনেক কিছুই জান্তামনা, আপনার লিখায় একটু একটু করে এমন সব তথ্য উঠে আসছে আগা যেগুলা জানা ছিলোনা।
অসাধারণ! কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই! আমার মাও গত মাসে বলছিলেন সেই সময়ের কথা, তখন তিনি ৭ম শ্রেণীতে পড়তেন।
facebook
এর পর আর কোন লেখা কি নাই? নাকি আমি পাচ্চিনা। ই বুক চাই।
? বসে আছি পরের পরবের দিকে চেয়ে।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।
নতুন মন্তব্য করুন