বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা ও রবীন্দ্রনাথ : 'গ্রহগণ জীবের আবাসভূমি' থেকে 'বিশ্বপরিচয়'

কুলদা রায় এর ছবি
লিখেছেন কুলদা রায় [অতিথি] (তারিখ: সোম, ৩১/১০/২০১১ - ৯:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


কুলদা রায়
এমএমআর জালাল

প্রথম পর্ব
---------

সম্প্রতি একটি ব্লগে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ শুধু প্রজানিপীড়ক জমিদারই ছিলেন না--গান চুরি করেছেন, বিজ্ঞানবিষয়ক বই চুরি করে নিজের নামে চালিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের মতো একজন বড়ো মাপের মানুষ যিনি সেই সময়ে ১৮১টি বই লিখে ফেলেছেন, সারা জীবনে ২০২টি বই লিখেছেন, নোবেল প্রাইজ পেয়ে গেছেন, লেখক তৈরি করেছেন, বিশ্ববিবেকে পরিণত হয়েছেন-- তাঁর বিরুদ্ধে আনীত একটি বই চুরির অভিযোগটি নিঃসন্দেহে অভিনব এবং মারাত্মক। এ অভিযোগটির সারবত্তা অনুসন্ধান করার উদ্দেশ্য এই লেখাটি করা হল।

প্রথম গদ্যের খোঁজ
-----------------
রবীন্দ্রনাথের জন্মের মাত্র দুবছর আগে ডারউইনের যুগান্তকারী গবেষণাগ্রন্থ অরিজিন অব স্পিসিস প্রকাশিত হয়। এর ঠিক চৌদ্দ বছর পরে রবীন্দ্রনাথ জীবনে প্রথম গদ্য রচনা লেখেন। তখন তিনি বালক। বয়স মাত্র বার। গদ্যটির নাম গ্রহগণ জীবের আবাসভূমি। বিষয় গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা।

বাড়ির বিজ্ঞান:
-------------
বাল্যকাল থেকে বিজ্ঞানের রস আস্বাদনে রবীন্দ্রনাথের লোভের অন্ত ছিল না। বিজ্ঞানের রস আস্বাদনের এই আগ্রহটি তিনি পেয়েছিলেন তার বাল্যকাল থেকেই। তাদের বাড়িতে ছিল নানাবিধ জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার উদার পরিবেশ। তার ঠাকুরদা দ্বারকানাথ ঠাকুর তৎকালীন ভারতবর্ষে নতুন প্রযুক্তি প্রবর্তনের পথিকৃত। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ঈশ্বরসন্ধানী মানুষ হলেও মানুষের মুক্তির কথা ভেবেছেন। বিজ্ঞানমনষ্ক যুক্তিবাদি মানুষ ও কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। অক্ষয়কুমার দত্তকে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক করেছিলেন। মাত্র বার তের পৃষ্ঠার এই পত্রিকায় অক্ষয়কুমার দত্ত বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ লিখতেন। বাহ্য বস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধ নামে একটি ধারাবাহিক প্রবন্ধ প্রকাশ লিখেছিলেন। এটাতে সমাজতত্ত্ব, মনস্তত্ত্ব, ধর্মনীতি, স্বাস্থতত্ত্ব ইত্রাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি প্রথম বাংলায় সা্য়েন্টিফিক এটিচুড প্রচার করাই ছিল লক্ষ্য। সাধারণ মানুষকে আধুনিক জগৎ এবং বিজ্ঞান সম্বন্ধে সচেতন করে তুলতে তিনি সচেতন হন। দেবেন্দ্রনাথ তাকে সহযোগিতা করতেন।

ঠাকুরবাড়ির বালকদের লেখাপড়ার দায়িত্বে ছিলেন সেজদাদা হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর।স্কুলের নির্দিষ্ট লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি নানাবিধ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে তাদের লেখাপড়া করাতেন। নয় বছর বয়সে রবি নরমাল স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়তেন। সে সময় সাতকড়ি দত্ত তাকে খুব স্নেহ করতেন। সাত কড়া দত্ত প্রাণীবৃত্তান্ত নামে একটি বই লিখেছিলেন। তিনি এই বালককে কবিতা লিখতে উৎসাহ দিতেন। মুখে মুখে পদ রচনা করে তাকে বাকীপদ লিখতে বলতেন। দশ বছর বয়সে অক্ষয়কুমার দত্তের পদার্থ ও ওয়ানস এরিথমেটিকস বই পড়তে হয়েছে। তার আরেকদাদা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মৌলিক গণিত চর্চায় অবদান রেখেছিলেন। জ্যামিতি বিষয়ে তাঁর কাজ উল্লেখযোগ্য। তার লেখা প্রবন্ধ—
জ্যামিতির নূতন সংস্করণ, ভারতী: স্থান, মান: দ্বাদশ স্বীকার্য বর্জিত জ্যামিতি; রেখাক্ষর বর্ণমালা বা বাংলা শর্টহ্যান্ড।
Geometry in which the 12th axion has been replaced by other one—অভিসন্দর্ভের পাণ্ডুলিপি।

রবীন্দ্রনাথের নদিদি দিদি স্বর্ণকুমারী দেবী ভারতী পত্রিকার সম্পাদক হয়েছিলেন। তিনি নিয়মিত লিখতেন। তিনি পত্রিকার দায়িত্ব নিয়ে বিজ্ঞানচর্চার অংশ বাড়িয়ে দেন। ভূমিকায় তিনি লিখেছেন—আমরা এখন হইতে বিজ্ঞানের মাত্রা কিছুটা বাড়াইতে ইচ্ছা করি—আমাদের মতে বিজ্ঞানের উপকারিতা আছে। রবীন্দ্রনাথও এই বিজ্ঞান বিভাগের লেখক ছিলেন। ১৮৮২ সালে স্বর্ণকুমারী দেবীর জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক বই প্রকাশিত হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানের পাঠ দেবেন্দ্রনাথের কাছে।

জ্যোতির্বিদ্যা ও প্রাণত্ত্বের হাতে খড়ি:
----------------------------------
সে সময় রবীন্দ্রনাথ তার বাবা দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে হিমালয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ডালহৌসি যাওয়ার আগে তাদেরকে বোলপুরে থাকতে হয়েছিল। সঙ্গে নেয়া হয়েছিল—peter Parley’s এক সেট বই। টেলস এবাউট লাইভস ওয়াশিংটন এন্ড ফ্রাকলিন; টেলস এবাউট ইংলন্ড., স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এন্ড ওয়েলস; টেলস এবাউট প্লান্টস, ইউনিভর্সেল হিস্ট্রি অন দি বেসিস অব জিওগ্রাফি, দি গ্রামার অব মডার্ন জিওগ্রাফি, রবার্ট এ প্রক্টরের সরল জ্যোতির্বিজ্ঞান ইত্যাদি বই। বিকেলে ডালহৌসি পাহাড় ঘুরে এসে সন্ধ্যা বেলায় দেবেন্দ্রনাথ ছেলেকে পড়তে বসাতেন। আকাশের নক্ষত্র দেখিয়ে নক্ষত্র চেনাতেন—গ্রহ চেনাতেন। এ কাজটি তিন করতেন আর এ প্রক্টরের সরলপাঠ্য ইংরেজি জ্যৌতিষ গ্রন্থ থেকে পড়ে পড়ে। । সূর্য্য থেকে কক্ষচক্রের দূরত্বমাত্রা, প্রদক্ষিণের সময় এবং অন্যান্য বিষয় আলোচনা করতেন। এই আলোচনার উপর ভিত্তি করে রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রবন্ধটি ১৮৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

এ সময় সীতানাথ ঘোষ ঠাকুর বাড়িতে বিজ্ঞান পড়াতে আসতেন। তিনি অত্যন্ত সহজসরলভাবে দৃষ্টান্ত দিয়ে বিজ্ঞানের সহজ পাঠ বুঝিয়ে দিতেন। এটা তাকে আকর্ষণ করত। সে সময় থেকে নক্ষত্র এবং প্রাণতত্ত্ব বিষয়ে আগ্রহ গড়ে ওঠে।

রবীন্দ্রনাথের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি ভাষার বোঝা আয়ত্ব করেন। তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের বেশ কিছু পড়েন। তিনি লিখেছেন, স্যার রবার্ট বল-এর বড়ো বইটা আমাকে আনন্দ দিয়েছে। এই আনন্দের অনুসরণ করবার আকাঙ্ক্ষায় নিউ কোম্বস. ফ্লামবিয়ঁ প্রভৃতির অনেক বই পড়ে গেছি।...গলাধঃকরণ করেছি শ্বাসসুদ্ধ বীজসুদ্ধ।‘ তারপর তিনি পড়েছেন টমাস হাক্সলীর প্রাণতত্ত্ব বিষয়ে প্রবন্ধমালা। তখন থেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞান রবীন্দ্রনাথের বিষয়। এভাবে পড়তে পড়তে তার মনের মধ্যে বৈজ্ঞানিক মেজাজ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল। সে সময় তার নিয়মিত পাঠ্য ছিল—জ্যামিতি, পদার্থবিদ্যা, ভূগোল গণিত ইত্যাদি। মেডিক্যাল কলেজের একজন ছাত্র তাদেরকে বাড়িতে এসে এনাটমী পড়িয়ে যেতেন। এইজন্য একটা নরকঙ্কাল তাদের পড়ার ঘরে ঝুলানো থাকত।

রবীন্দ্রনাথের সে সময়ের বিজ্ঞান বিষয়ক পড়ার বইয়ের একটি তালিকা—
-------------------------------------------
১) পপুলার লেকচার্স অন সায়েন্টিফিক সাবজেক্টস : লেখক-হেলমহোলসে : প্রকাশকাল ১৮৯৩ সাল।
২) জ্যোতির্বজ্ঞান বিষয়ক আরও ২টি বই।
৩) টেক্টস বুক অব বোটানী : জুলিয়াস সাচস।
৪) দি অরিজিন এন্ড ফাংশন অব মিউজিক প্রবন্ধ : হার্বার্ট স্পেন্সার
মূল বই—এসেজেস : সায়েন্টিফিক, পলিটিক্যাল এন্ড স্পেকুলেটিভ--হার্বার্ট স্পেন্সার, ১৮৮৩।
৫) দি প্রিন্সিপলস অব সাইকোলজি, হার্বার্ট স্পেন্সার,১৮৮১।
৬) দি স্টাডি অব সোসিওলজি, হার্বার্ট স্পেন্সার, ১৮৮০।
৭) দি পিন্সিপলস অব বায়োলজি : হার্বার্ট স্পেন্সার, ১৮৮৪।

ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা, বালক, ভারতী, সাধনা ইত্যাদি পত্রিকায় বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ ছাপা হত। ঠাকুর বাড়ির পরিবেশটাই ছিল বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য অনুকুলে। এছাড়া রবীন্দ্রনাথের জন্মের আগে থেকেই কোলকাতায় হিন্দুমেলার আয়োজন হত। সেখানে কুটিরশিল্প-বিজ্ঞান-কৃষি-সাহিত্য, সংস্কৃতির প্রদর্শনী বা এগজিবিশন এবং নানাবিধ আলাপ আলোচনা হত। ঠাকুরবাড়ির লোকজন এই হিন্দুমেলায় যোগদান করতেন। নামে হিন্দুমেলা হলেও সেটাকে কিন্তু সাম্প্রদায়িক কোনো মেলা বলা যায় না।

একটু আগের আলোচনা--
---------------
রবীন্দ্রনাথের জন্মের সময়কালে বিজ্ঞানচেতনা ও বৈজ্ঞানিক মুল্যমানের প্রথম উন্মেষের যুগ। সে সময়টাকে এদেশের বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে ঠিক উচ্চতর শিক্ষা এবং গবেষণার যুগ বলা যায় না। ১৮৭৬ সালে কলকাতায় মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। দেবেন্দ্রনাথ এই কলেজ প্রতিষ্ঠায় প্রভূত সহায়তা দেন। আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞানচর্চার অবস্থা যাই হোক না কেন—যুক্তিবদ্ধ এবং বিজ্ঞানচেতনাকে সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা রবীন্দ্রনাথের জন্মের আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে রামমোহন রায়কেই সে চেষ্টার পথিকৃত বলা যায়। ডি রোজারিওর শিষ্যরা যে ইয়ং বেঙ্গল সোসাইটি গড়ে তোলেন তারা বিজ্ঞান বিষয়ে উদাসীন ছিলেন না। তারা প্রকৃতি বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান নিয়ে আলাপ করতেন।

উনিশ শতকে নবজাগরণ এসেছিল। সে সময়ে স্বাধীন ও স্বয়ম্ভর কোনো বিজ্ঞান গোষ্ঠী এদেশে গড়ে ওঠেনি। উপযুক্ত বিজ্ঞান শিক্ষকের অভাবে এটা ঘটেনি। ইউরোপে সতের শতকে যে বৈজ্ঞানিক বিপ্লব এসেছিল তার সঙ্গে তুলনীয় কোনো আন্দোলন এদেশে ঘটেনি। আবার উপনিবেশিক শাসনের আওতায় শিল্পবিপ্লবের মত বড় কোনো ঘটনা সম্ভব ছিল না। ফলে ফলিত বিজ্ঞান তথা প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বড় কোনো বদল আসেনি।
রামমোহন রায়ের সময় থেকেই পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সঙ্গে বাঙ্গালিদের সাক্ষাতের সুযোগ ঘটে। ফলে তখন থেকেই একটি বুদ্ধিজীবী শ্রেণী গড়ে উঠতে থাকে। এদের একদল শঙ্কিত ছিলেন ঐতিহ্য নষ্ট হতে পারে জেনে। অন্যদল আধুনিকতার হাওয়ায় বদলে যেতে চাইলেন।

বিজ্ঞান জিনিসটা এই আধুনিকতার ধারণার অন্যতম উপাদান হিসাবে কাজ করেছিল। যেখানে বিজ্ঞানচর্চা বা বিজ্ঞান বিষয়ে ভাবনার প্রধানত বাহন ছিল সাহিত্য। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর লিখেছিলেন শিক্ষামূলক বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা। বঙ্কিমচন্দ্র বিজ্ঞানকে বৃহত্তর সংস্কৃতির অংশ হিসাবে দেখেছিলেন। লিখেছিলেন একটি বই বিজ্ঞান রহস্য।

এ ছাড়াও বিজ্ঞানকে সাহিত্যের বিষয়ীভূত করে লিখেছিলেন—কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রামলাল মিত্র, ভূদেব মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। তখন বাংলা ভাষার সাময়িক সাহিত্যে বিজ্ঞানও অন্তর্ভূক্ত হয়েছিল। প্রত্যেক সাহিত্যপত্রেই প্রতি সংখ্যায় এক আধটা বিজ্ঞান সংক্রান্ত রচনা থাকত।

এশিয়াটিক সোসাইটি
১৭৮৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানত ভারততত্ত্ব ও প্রাচ্যবিদ্যা নিয়ে গবেষণা কেন্দ্র হিসাবে কাজ করার একটা সুযোগ ঘটে। তবে এ সোসাইটি তৎকালীন ভারতের প্রাকৃতিক সম্পদ, তার চিকিৎসাশাস্ত্র, রসায়ন শাস্ত্র, শল্যশাস্ত্র, পাটিগণিত, জ্যামিতি ও মিশ্রবিজ্ঞান নিয়েও চর্চা করত। এর পর সার্ভে অফ ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। নৃতত্ত্ব উদ্ভিদবিদ্যা প্রাণীবিদ্যা এবং ভূতত্ত্বের স্বতন্ত্র সমীক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে ওঠে।

বিজ্ঞানের জগৎটি কেমন ছিল
রবীন্দ্রনাথের বাল্যকালে পদার্থের প্রাথমিক উপাদান হিসাবে যে-পরমাণুর অস্তিত্বই প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণিত হয়নি। তার ধর্ম ও গড়নের আলোচনা নিয়ে কলেজের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পরমাণুর কেন্দ্রের গড়ন নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। কেন্দ্র প্রোটনের অস্তিত্ব নিয়ে আগেই জানা ছিল। সে সময়ে তড়িৎবিহীন নিউট্রনের কথা জানা যায়। পজিট্রন কবির যৌবনে আবিষ্কৃত হয়েছে।

এরপর প্রৌঢ়ে কৃত্রিম উপায়ে পরমাণুর কেন্দ্রকে ভেঙে নিয়ে অভূতপূর্ব পরিমাণ শক্তি উৎপাদনের কল্পনাও করা হচ্ছে। আইনস্টাইনের উত্তরসূরি একদল নবীন বিজ্ঞানী পরমাণুলোকের অণুতম বস্তুখণ্ডসমূহের গতিবিধি সম্বন্ধে এক নতুন তত্ত্ব কোয়ান্টাম থিওরি এসে যাচ্ছে। সেই তত্ত্বে পরমাণুলোকের যাবতীয় ঘটনার বর্ণনায় খানিকটা অনির্দেশ্যতা (Indeterminacy ) এসে গেছে।

প্রাণতত্ত্বের ক্ষেত্রেও অনেক বদল এসেছে। প্রাণীর বংশগতির রহস্য সম্পুর্ণ উদ্ঘাটিত না হলেও অনেকটাই হয়েছে। ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্বকে আর বিতর্কিত বলা চলে না।

প্রযুক্তি এসে যুদ্ধের পরিসরকে বাড়িয়ে দিয়েছে। হয়ে গেছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। আর শোনা যাচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পদধ্বনি। রবীন্দ্রনাথ তখন বিশ্বের বিবেকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে গেছেন। সভ্যতার সংকট নিয়ে কথা বলছেন। এক সময় অনুভব করছেন—শুধুমাত্র সাহিত্য নয়—বিজ্ঞানকেও সাধারণের বিবেকের বানী হতে হবে। তিনি শেষে আশ্রয় নিয়েছেন বিজ্ঞানের—ভাষার।

--------------------------------------------(দ্বিতীয় পর্ব অনুসরণ করুন)

সূত্র :
১. রবিজীবনী--প্রশান্তকুমার পাল
২.রবিজীবনকথা--প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
৩. রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়স্বজন -- সমীর সেনগুপ্ত
৪. দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়-- রবীন্দ্রনাথ ও বিজ্ঞান
৫. রঙের রবীন্দ্রনাথ --কেতকী কুশারী ডাইসন ও সুশোভন সরকার
৬. [url= http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=18247]রবি ঠাকুর, রাহাজানি এবং রবীন্দ্র পূজারীবৃন্দ [/url]: ফরিদ আহমেদ ও অভিজিৎ রায় : http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=18247
৭. 'আমি কোথায় পাব তারে' থেকে 'আমার সোনার বাংলা' --কুলদা রায় ও এমএমআর জালাল : http://www.sachalayatan.com/node/41311
৮. এইখানে গান নিয়া আলাপ চলিতেছে --কুলদা রায় http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=19123


মন্তব্য

দিগন্ত বাহার * এর ছবি

বড় বড় ব্লগারদের ব্যাক্তি আক্রমনের সেফ-গার্ড ব্যাক্তিগত মর্জিমাফিক পোষ্টগুলোতেই একান্ত প্রয়োগে ব্যাপক রঙিলা দুনিয়ার পরিচয় পাই। ধুগোদার কথাই ঠিক, দুইন্যাটা পুরাই একটা বাইগুন!

তাপস শর্মা এর ছবি

বড় বড় ব্লগারদের ব্যাক্তি আক্রমনের সেফ-গার্ড ব্যাক্তিগত মর্জিমাফিক পোষ্টগুলোতেই একান্ত প্রয়োগে ব্যাপক রঙিলা দুনিয়ার পরিচয় পাই। ধুগোদার কথাই ঠিক, দুইন্যাটা পুরাই একটা বাইগুন!

সহমত । আমিও তাই দেখে এলাম ।

তাপস শর্মা এর ছবি

ব্যাক্তি আক্রমণাত্মক পোস্ট বন্ধ হোক। খিস্তি খেউর ভালো লাগেনা। তা একা এই লেখক নন, যে কোনো কেউ হতে পারেন... এই লেখাটা যদি ভূমিকা বর্জিত হতো তাহলেই দেখতে কত ভালো লাগতো। তা না, একে তো ভূমিকা, তারপর আবার এন্তার লিঙ্ক ???

মঈনুল এর ছবি

এইটুকু ব্যাক্তি আক্রমন হতেই পারে,সচলায়তনে ব্যাক্তি আক্রমন মুলক পোষ্ট অনেক আছে। অধিকাংশ ইস্যুতেই কথা তুললে কেউ না কেউ ব্যাক্তি আক্রমনের শিকার হবেন।অভিজিৎ ও ফরিদ রবিঠাকুরকে কে নিয়ে যে পোষ্টটা দিয়েছেন অনেক তথ্য টুইষ্ট করে ওইটাও ব্যাক্তি আক্রমন।কুলদা তার জবাব দিতে পারবেন না কেন।পাঠক সিদ্বান্ত নেবেন সব পড়ে।অন্যব্লগের কেষ্টুবিষ্টু হলেই ছাড় দিতে হবে কেন। সচলায়তন পইলা আলুর মতন আচরন করবে না বলেই ধারনা রাখি।

২য় পর্বটাও তাড়াতাড়ি দিন কুলদা,অপেক্ষায় আছি।

কুলদা রায় এর ছবি

ধন্যবাদ।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

তাপস শর্মা এর ছবি

আরে ধুর। এই ব্লগ পড়তে গিয়া আমার নরক দর্শন অইয়া গেছে। খাইছে, কোথাকার জল কোথায় গড়ায়। যত সব !!!! ধুর। বলি ভুমিকা বাদে বাকিটাতো ঠিকাছে। আর নিচের ৬ নং এবং ৮ নং লিঙ্ক এর কি প্রয়োজন ?? আপনার লেখায় তো যুক্তি আছেই, পাঠক তা বুঝে নিক, খামোখা জাস্টিফাই করতে যান কেন ??

ভূমিকা বাদে বাকিটা তো খুবই ভালো লেগেছে, অনেক অথ্য বহুল এবং আলোচনা প্রসারী ।

***** ভূমিকায় আমিও আপত্তি জানালাম , আর লিঙ্কেও

নীল রোদ্দুর এর ছবি

ভাই কুলদা রায়, রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা বাদ দিয়ে উনারা রবীন্দ্রনাথকে বাংলাসাহিত্যের নবীজী আখ্যা দিলে আপনি শান্ত হবেন?

ব্যক্তিপূজার বাইরে এসে একটু অন্য আলোয় কি রবীন্দ্রনাথকে দেখা যায়? আমার এই প্রশ্নের উদ্দেশ্য রবীন্দ্রনাথের পক্ষে বিপক্ষে কাউকে দাঁড়াতে বলা নয়, নির্মোহ চোখ দিয়ে দেখার দাবী। রবীন্দ্রনাথ একজন মানুষ, দেবতা নন, ঈশ্বর নন, উনার বিশাল কর্মযজ্ঞের জন্য শ্রদ্ধার দাবীদার হতে পারেন, সেইখানে গানের সুর বা আস্ত লেখা মেরে দেয়ার অভিযোগ থাকলে, এবং তার স্বপক্ষে প্রমাণ থাকলে অশ্রদ্ধার দাবীদার হতে পারেন। কিন্তু অন্ধভাবে ব্যক্তিপূজার দাবীদার কি একজন মানুষ হতে পারে?

যে ব্লগের রেফারেন্স দিয়ে সচলায়তনে এসে পোষ্ট দিলেন, সেই ব্লগেও তো দিয়েছিলেন, সেইখানেও তো আপনার আপত্তিকর বক্তব্যের জন্য ধরা হয়েছিল, পিছলে এইখানে দিলেন কেন আবার? বিতর্ক করতে হলে ওইখানেই আবার শুরু করুন না... যারা বিতর্ক করতে পারে, তারা কেউ পিছলে অন্য ব্লগে যায় নি, ওইখানেই আছে। হাসি

এইখানেও করুন রবীন্দ্রনাথ নিয়ে বা যা নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছা হয় তাই নিয়ে, কেবল ব্যক্তি আক্রমন বাদ দিয়ে আর যুক্তি দিয়ে, অন্ধ আবেগ দিয়ে নয় মহাশয়। শুভকামনা! হাসি

-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়

কুলদা রায় এর ছবি

১. রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা কেন, যে কোনো সমালোচনাই যদিবস্তুনিষ্ঠ হয়, তাকে আমি স্বাগত জানাই। বস্তুনিষ্ঠতার অভাব দেখলে তার পাল্টা সমালোচনাও আসবে খুব স্বাভাবিক নিয়মে।
২. রবীন্দ্রনাথকে আমরা কোথাও নবী, দেবতা ঈশ্বর বানানোর চেষ্টা করিনি। যদি আপনার চোখে সেটা পড়ে থাকে, তাহলে এখানে উত্থাপনের অনুরোধ জানাচ্ছি। যদি দেখাতে ব্যর্থ হন, তাহলে আপনাকে আপনার বক্তব্য প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি।
৩. কোথায় কোন ব্লগে লিখলাম সেটা কোনো বিষয় নয়। লেখাটাই আসল। আমরা রবীন্দ্র বিরোধিতার স্বরূপ নিয়ে একটি ৩. অনুসন্ধানকর্ম হিসাবে এই লেখাগুলো লিখছি। ইতিমধ্যে পনেরটি ক্ষেত্রকে আমরা চিহ্ণত করেছি। সেগুলোর অধিকাংশই লেখা হয়েছে। আশা করছি--ক্রমশ সেগুলো প্রকাশ করা হবে। কোনো ব্লগ বা পত্রিকা তা যদি তা প্রকাশে অসমর্থ হন, তাহলে অন্যত্র যাব। এবং আমাদের লেখার বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনাকে স্বাগত জানাব। ধন্যবাদ।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

আপনার নাম লিখুন এর ছবি

লিখাটিতে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খন্ডন করার চেষ্টা করা হয়েছে।স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগকারীদের নাম আসা উচিত এবং এসেছে। যে অভিযোগের জবাবে এই লিখা, লেখক লিখার শেষে তার লিংকও যুক্তকরে দিয়েছেন যাতে পাঠক দু পক্ষের যুক্তি পড়তে পারেন। আমার দৃষ্টিতে এটা গঠনমুলক বিতর্ক মনে হয়েছে।

কুলদা রায় এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

আপনার নাম লিখুন এর ছবি

লিখাটিতে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খন্ডন করার চেষ্টা করা হয়েছে। ..স্বাভাবিক ভাবেই অভিযোগকারীদের নাম আসা উচিত এবং এসেছে। যে অভিযোগের জবাবে এই লিখা, লেখক লিখার শেষে তার লিংকও যুক্তকরে দিয়েছেন যাতে পাঠক দু পক্ষের যুক্তি পড়তে পারেন। আমার দৃষ্টিতে এটা গঠনমুলক বিতর্ক মনে হয়েছে।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

আচ্ছা, মন্তব্য করার সময়ে 'আপনার নাম লিখুন' এই অংশে মন্তব্যকারীকে নিজের নাম লিখতে হবে, এই সহজ জিনিসটা কেন বুঝতে পারেননি?

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

কালো কাক এর ছবি

এইজন্য 'পাঁঠা" ভাল ছিল। লজ্জাশরম থাকলে নামটা লিখতো তখন।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

না, মজার হলেও সেটা জেনেরাল এবং সম্মানিত পাঠকদেরকে অপমান করা হতো। ঠাট্টা করে কয়েক ঘন্টার জন্যে টার্মটা রাখা হয়েছিলো তাও পূর্ণ এবং অতিথি সচল অনেকেই আপত্তি জানিয়ে দ্রুত বদলাতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু এভাবে নাম/পরিচয় লুকিয়ে মন্তব্য করাটা স্রেফ বিরক্তিকর, বিশেষ করে বারবার যেখানে কর্তৃপক্ষ শুধু না, অন্যান্য পাঠক-লেখক সবার তরফ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে তখনো!

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

স্বাধীন এর ছবি

প্রথম পর্ব পড়লাম। পরের পর্বের জন্যে পপকর্ণ নিয়ে বসলাম। যদিও ঠিক কতটুকু লাভ হবে জানি না। কারণ, আপনি নিজে নানান প্রশ্নের অবতারণা করতে পছন্দ করেন, কিন্তু অন্যের প্রশ্নের জবাব দিতে পছন্দ করেন না। মুক্তমনার লেখাগুলোতে, সেই সাথে সচলের লেখাতেও নানান সময় নানান প্রশ্ন করেছি, কিন্তু কোন জবাব পাইনি। যা হোক জবাব দেওয়া না দেওয়া আপনার মর্জি সেখানে আমার বলার কিছু নেই। তবে আমার প্রশ্ন থাকলে সেটা আমি করে যাবো, আপনি জবাব না দিলেও।

এই লেখা এবং আগের লেখার বিষয়ে আমার একটি প্রশ্ন রয়েছে। তবে প্রশ্নটি আপনার কাছে নয়, প্রশ্নটি আপনার কো-অথর জালাল ভাইয়ের কাছে। যদি জালাল ভাই আমার প্রশ্নটি দেখেন তবে আশা করবো জবাব দিবেন। একটি লেখায় যখন একজন সহ লেখক থাকেন তখন ধরে নেওয়া যায় যে সেই লেখায় সহ-লেখকের কন্ট্রিবিউশান থাকে। আমার প্রশ্ন জালাল ভাইয়ের কাছে - যে যে লেখাগুলোতে জালাল ভাইয়ের নাম ব্যবহৃত হচ্ছে সেই লেখাগুলোতে জালাল ভাইয়ের কন্ট্রিবিউশান কোন কোন স্থলে সেটি পরিষ্কার করলে ভালো হয়। বা আদৌ জালাল ভাইয়ের এই লেখাতে কোন কন্ট্রিবিউশান আছে কি না? যততুকু জানি জালাল ভাই নিজেও একজন পূর্ণ সচল। তথাপি উনাকে এই লেখাগুলোতে কোন প্রকার অংশগ্রহণ করতে দেখিনি। আশা করি এবার উনি অংশগ্রহণ করবেন।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চলুক

কুলদা রায় এর ছবি

মুক্তমনায়তো আমার লেখার অধিকারকেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে এই বিষয়ে কথা বলা যায় কিভাবে?
আপনার প্রশ্নের উত্তর নানাভাবে দেওয়া হয়েছে। যদি না পেয়ে থাকেন, আবার উত্থাপন করুন।
জালাল ভাইকে করা প্রশ্নের উত্তর তিনিই দেবেন। শুধু আপনাকে এই ফাঁকে একটি প্রশ্ন করি--বলুনতো লেখকের সংজ্ঞা কি? সহলেখকের কি কি করণীয় আছে সেটা বিষদভাবে বলুন। ধন্যবাদ।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

স্বাধীন এর ছবি

শুধু আপনাকে এই ফাঁকে একটি প্রশ্ন করি--বলুনতো লেখকের সংজ্ঞা কি? সহলেখকের কি কি করণীয় আছে সেটা বিষদভাবে বলুন।

এই খানেই আপনাকে নিয়ে সমস্যা। সরাসরি কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে উলটো প্রশ্ন করে যাবেন। আমার ধারণা কতটুকু পরিমান কন্ট্রিবিউশান থাকলে একজনকে সহলেখক হিসেবে গণ্য করা হবে সেটা আপনি ভালোভাবেই জানেন। যদি স্বীকার করেন যে জানেন না সে ক্ষেত্রে তখন আমরা বলতে আপত্তি নেই। এবং বলবো।

কিন্তু তার আগে আপনিই জবাবটি দিন (আপনি যেহেতু মূল লেখক - জালাল ভাই চাইলে আবার জবাব দিবেন), এই লেখায় জালাল ভাইয়ের কন্ট্রিবিউশান ঠিক কোথায় কোথায়? আপনি আগে এই তথ্যটুকু জানান, তারপর আমি বলবো সহলেখক হতে হলে কি কি করণীয়। আশা করি পিছলিয়ে যাবেন না।

জানতে পারলাম জালাল ভাই হজ্বে গিয়েছেন। তাই আপাতত উনার মতামত পেতে হলে উনার জন্যে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

কৌস্তুভ এর ছবি

সচলে (আর) লেখেন না, এমন দুজনের বিরুদ্ধে এমনভাবে একতরফা নিয়মিত লিখে যাওয়াটাকে প্রোপাগান্ডা-ই বলা যেতে পারে। আর সেটা সচলায়তন ধারণ করে যাবে, এটা দেখতে ভাল লাগে না। মডারেটরদের এ বিষয়ে দেখতে অনুরোধ করি।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চলুক

কুলদা রায় এর ছবি

কৌস্তভ, সচলে কে লেখেন না লেখেন, সেটা নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। আমি কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে লিখছি না। আমি ব্যক্তিকর্তৃক উত্থাপিত কিছু বিষয় নিয়ে লিখছি। এই বিষয়গুলো আমাদের চেতনার সঙ্গে জড়িত। অধুনা রবীন্দ্রনাথ নিয়ে বিদ্বেষপূর্ন লেখা লিখেছেন, ফরহাদ মজহার, সাদ কামালী, অভিজিৎ রায়, ফরিদ আহমেদ, মেজর জেনারেল (অবঃ) আব্দুল মতিন প্রমুখ। আমরা কিন্তু এদের সকলের বিদ্বেষবিষয় নিয়ে লিখেছি। দেখুন--[url=http://www.facebook.com/note.php? note_id=10150835365610338]http://www.facebook.com/note.php?note_id=10150835365610338[/url]

বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বিরোধিতার স্বরূপ
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে পাকিস্তানপন্থীরা বাংলাদেশের ক্ষমতায় নানা কায়দায় বহাল হয়। সে সময় থেকেই একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা দাবী তোলে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে হিন্দু রবীন্দ্রনাথের আমার সোনার বাংলাকে বাতিল করা হোক।

গানটির বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ করা হয় রক্তের দাগ মুছে রবীন্দ্রনাথ পাঠ বইটিতে। লেখক—ফরহাদ মজহার। তার অভিযোগগুলোর সার সংক্ষেপ–
১. রবীন্দ্রনাথের এই গানটি কোনো অসাধারণ গান নয়। শুধু রবীন্দ্রনাথকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত করা হয়েছে।

২. রবীন্দ্রনাথের গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ না করে কোনো বাংলাদেশীকে দিয়েই রচনা করালে ভাল হত। কারণ পারিবারিক ও ধর্মীয় পরিচয়, মনন, দর্শন, পঠন, পাঠন প্রভৃতির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথের মধ্যে যে মনোগাঠনিক প্রক্রিয়া ও প্রকাশ সচল ছিল তার সম্পৃক্তি হিন্দু ঐতিহ্যের সঙ্গে, বৌদ্ধ বা ইসলামী ঐতিহ্যের সঙ্গে নয়। সুতরাং হিন্দু রবীন্দ্রনাথের গানটিকে মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীত করাটা একটা ঐতিহাসিক ভুল।

৩. আমার সোনার বাংলা গানটির বাংলা শব্দটির বানান রবীন্দ্রনাথ পাল্টে দিয়েছেন। কারণ বাংলা বানানটি আদিতে মুসলমানেরা বাঙ্গালা বলতেন। রবীন্দ্রনাথ মুসলমান বিরোধী ছিলেন বলে বাঙ্গালা শব্দটিকে বাংলা করে দিয়ে হিন্দুয়ানি করে দিয়েছেন। সে কারণেও গানটিকে বাতিল করা দরকার।

এই তিনটি অভিযোগে কতটুকু সারবত্তা আছে তা একটু খতিয়ে দেখা যেতে পারে।
-------------------------------------------------------------------------------------
১. রবীন্দ্রনাথের আমার সোনার বাংলা গানটি বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের ভাব ও ভাষায় রচিত। আর সুরটিও কুষ্টিয়ার শিলাইদহের বাউল গানের থেকে নেওয়া। গানটির মধ্যে দিয়ে বাংলার শ্যামল জননী প্রকৃতির নিরাভরণ বর্ণনা দিচ্ছেন সহজ সরল মুগ্ধতায়। বানীতে প্রকাশ পাচ্ছে স্বদেশমায়ের প্রতি সন্তানের ভালবাসার নিবেদন। স্বদেশের গলায় পরানোর জন্য বিদেশী আভরণ কেনাকে তিনি ফাঁসির তুল্য বলছেন। বলছেন—স্বদেশকে স্বদেশের সম্পদে পুর্ণ করতে হবে। সে অর্থে এই গানটি শুধু বর্ণনাবহুলতা পূর্ণ নয়, আকুলতা পুর্ণও গান নয়— এ গানে স্বদেশকে রক্ষার একটি ঐক্যের সতেজ আহ্বানও আছে। সে অর্থে গানটি অসাধারণ। রবীন্দ্রনাথ বাঙালি জাতির শুধু রাজনীতিতে নয়—জীবনের সর্বত্রই জড়িয়ে আছেন। শুধু রাজনীতির কথাটি নির্দেশ করলে সংকীর্ণ ব্যাখাই করা হয়। কারণ মিছিলে মিটিংএ যেমন রবীন্দ্রনাথের গান করা হয়, আনন্দে উৎসবে, ব্যাথা বেদনায়ও রবীন্দ্রনাথ উচ্চারিত হন। তিনি প্রেমে-প্রকৃতিতে আসেন, শীতে আসেন, বর্ষায় আসেন। আলোতে আসেন। অন্ধকারেও তাকে নিয়ে পথ চলা যায়। তিনি সর্বত্র ছুঁয়ে আছেন। তাঁকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার দরকার হয় না। পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রনাথকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু মানুষের প্রাণের মধ্যেই আরও জাগরুক হয়ে উঠেছেন।

২. রবীন্দ্রনাথকে গোড়া সাম্প্রদায়িক লোকজন হিন্দু বলে ঘোষণা করার চেষ্টা করলেও তিনি অবশ্য নিজের ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে ততটা নিশ্চিত ছিলেন না। কারণ, বেশির ভাগ মানুষের মতো যে ধর্ম নিয়ে জন্মেছিলেন, সেই পারিবারিক ধর্মমত তিনি চিরকাল আঁকড়ে রাখতে পারেননি। রবীন্দ্রনাথের জন্ম ব্রাহ্ম পরিবারে। ব্রাহ্মরা একেশ্বরবাদি। হিন্দুরা তাদের অহিন্দু মনে করে। আর ব্রাহ্মরা নিজেদের হিন্দুদের চেয়ে পৃথক মনে করেছে। রবীন্দ্রনাথ কখনোই কোনো পুরণো বিশ্বাসে নিজেকে বদ্ধ রাখেননি। কোনো কিছু নিয়েই তিনি অচল ছিলেন না। গাছ যেমন প্রতি বসন্তে সজ্জিত হয় নতুন পাতায়, তিনও তেমনি নব-নব রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। নিজেকে নিরন্তর পাল্টে নিয়েছেন—নিজের উত্তরণ ঘটিয়েছেন। কখনো নেতির দিকে তাঁর যাত্রা ছিল না। যাত্রা ছিল ইতির দিতে। প্রতিক্রয়াশীলতা নয়–প্রগতিশীলতাই তার লক্ষ্য। পুরনো বিশ্বাসকে নতুন বিশ্বাসে বদলে দিয়েছেন। তিনি আদি ব্রাহ্মসমাজের সীমানা অতিক্রম করেছিলেন অল্পকালের মধ্যেই। নতুন কোনো গুরুর সন্ধান তিনি পাননি অথবা কারও কাছে তিনি দীক্ষাও গ্রহণ করেননি। তা সত্ত্বেও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, এমনকি ধর্মচিন্তা বদলে গেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এর সূচনা হয় যখন তিনি ক্ষুদ্র জোড়াসাঁকো তথা কলকাতার সীমানা পেরিয়ে বৃহত্তর সমাজের মুখোমুখি হলেন, তখন। তখন থেকেই তিনি হৃদয় প্রসারিত করে চারদিকে চেয়ে দেখলেন। তিনি সর্বমানবের মিলনের কথা ভেবেছেন। তিনি মানব ধর্মে পৌছে গিয়েছিলেন। ‘হিন্দু মুসলমান’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, যে দেশে প্রধানত ধর্মের মিলেই মানুষকে মেলায়, অন্য কোনো বাঁধনে তাকে বাঁধতে পারে না, সে-দেশ হতভাগ্য। যে-দেশ স্বয়ং ধর্মকে দিয়ে যে-বিভেদ সৃষ্টি করে সেইটে সকলের চেয়ে সর্বনেশে বিভেদ। …মানুষ বলেই মানুষের যে মূল্য সেইটিকেই সহজ প্রীতির সঙ্গে স্বীকার করাই প্রকৃত ধর্মবুদ্ধি। যে দেশে ধর্মই সেই বুদ্ধিকে পীড়িত করে রাষ্ট্রিক স্বার্থবুদ্ধি কি সে-দেশকে বাঁধতে পারে? ‘’ শেষ বেলায় রবীন্দ্রনাথ অনুভব করেছিলেন—মোহমুগ্ধ ধর্মবিভীষিকার চেয়ে সোজাসুজি নাস্তিকতা অনেক ভালো। ধর্মমোহ কবিতায় লেখেন—
ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে
অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে।
নাস্তিক সেও পায় বিধাতার বর,
ধার্মিকতার করে না আড়ম্বর।

৩. বঙ্গ নামটি রামায়ণ মহাভারতের মতো অনেক পৌরাণিক কাহিনীতে পাওয়া যায়। ফার্সি নথিতে শাহ-এ বঙ্গালিয়া বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। পর্তুগীজ নথিতে বাঙ্লা নামটি পাওয়া যায়। বৃটিশ আমলে দুটো বঙ্গ ছিল। একটি পূর্ব বঙ্গ। আরেকটি পশ্চিমবঙ্গ। এই দুটো প্রদেশ মিলেই ছিল বঙ্গ।

রবীন্দ্রনাথ জমিদার হলেও তাঁর মূল কাজ আসমানদারী। কবিতার ছন্দ মেলানোর জন্য কবিতায় বঙ্গদেশ লিখলেন না। লিখলেন না বাঙ্গালাদেশ বানান। বাঙলাদেশও লিখলেন না। তিনি কবিতার ছন্দ মেলানোর জন্য যুক্তাক্ষরকে দুই মাত্রা হিসাবে গণনা করেছিলেন। তখন তিনি লক্ষ করলেন—’ঙ্গ’ অক্ষরটি যুক্তাক্ষর। ‘ঙ্গ’ থেকে যদি যদি পুরো আওয়াজ আদায় করতে হয়—তো সে এক মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। সেটা ভারি মুশকিল। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন—শব্দতত্ত্ব অনুসার লিখিব এক, আর ব্যবহার অনুসারে উচ্চারণ করিব আর, সেটা ছন্দ পড়িবার জন্য বড়ো অসুবিধা।

যেখানে যুক্ত অক্ষরেই ছন্দের আকাঙ্ক্ষা সেখানে যুক্ত অক্ষর লিখলে পাঠকের কোনো সংশয় থাকে না। পাঠক যুক্ত অক্ষর গণ্য করে সেটা পড়তে পারে। যেমন—
বাঙ্গলা দেশে জন্মেছ বলে বাঙালি নহ তুমি
সন্তান হইতে সাধনা করিলে লভিবে জন্মভূমি।।

কিন্তু যদি বাঙ্গালার মাটি বাংলার জল—লেখা হয় তাহলে কবিতাটির ছন্দ মাটি হয়। যেখানে এই পঙক্তিতে তিন মাত্রা দরকার—তখন বাঙ্গালা বা বাঙ্গলা লিখলে চার মাত্রা হয়ে যায়। কিন্তু বাঙ্গালার ঙ্গ-এর বদলে অনুস্বার ব্যবহার করে বাংলার মাটি বাংলার জল লেখা হয় তাহলে অনুস্বার থেকে তিন মাত্রাই পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ছন্দ বজায় থাকে। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটির ক্ষেত্রেও এই কারণে ঙ্গ এর বদলে অনুস্বার রেখেছেন। এখানে তিনি কোনো ধরনের মুসলমান শাসক মুগলদের বিরোধিতার জন্য করেননি। আর ব্যকরণের বিষয় হিসাবে বানান পরিবর্তিত হয়। এখানে সাম্প্রদায়িক বিভেদ খোঁজার অর্থই হল আরেকটি সাম্প্রদায়িকতার সূত্রপাত ঘটানো। রবীন্দ্রনাথ তো চিরকাল হিন্দুমুসলমানদের মিলনের কথা কথাই ভেবেছেন। কলকাতায় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গায় তার মন পীড়িত হয়ে পড়েছে। তিনি ১৩৩২ সালে রানী মহলানবিশকে এক পত্রে লিখছেন–কোথাও একটা কোনো অন্যায় উপদ্রব হলে আমার বুকের ভিতর ভারি একটা ক্ষোভ উপস্থিত হয়। এই হিন্দু-মুসলমান উৎপাতে আমার শরীরটাকে ভারি পীড়ন করচে। সে অর্থে বাংলাদেশ বানান নিয়ে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক অভিযোগ শুভবুদ্ধিকে উৎপীড়িত করে মাত্র।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

কৌস্তুভ এর ছবি

ওই কথাটা তো আপনাকে বলাই হয় নি, বলা হয়েছিল মডারেটরদের, আপনি তাতে একটা সম্পর্কহীন লম্বা জিনিস এনে ফেলে দিলেন। আগেই দেখেছি, আপনাকে কিছু বলে লাভ নেই - হয়, অন্যরাও যেমন লক্ষ্য করেছেন তেমন, পালটা প্রশ্ন তুলে এড়িয়ে যাবেন, নয়ত জবাব না দিয়ে সরে পড়বেন, যেমন ওই অভিজিৎদার ব্যক্তিগত ফেসবুক কমেন্টকে টেনে এনে করা আপত্তিকর পোস্টে দেখা গেছিল - ওটা নিয়ে আবার অন্য এক ব্লগে গর্ব করে বলেছিলেন যে অন্যদের আলফাল কথার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন দেখেন না।

সজল এর ছবি

আমার মন অশান্ত থাকলে মাঝে মাঝে রবীন্দ্র সংগীত শুনি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আপনার যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখে রবীন্দ্রনাথের সাথে শান্তির সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

কুলদা রায় এর ছবি

সজল আপনাকে ধন্যবাদ এই লেখাটি পড়ার জন্য। একটু বিশ্লেষণ করুন--এই লেখাটির কোথায় যদ্ধংদেহী মনোভাব প্রকাশ করা হয়েছে। সেটা দেখে পরবর্তিতে আরও মার্জিত হয়ে উঠতে পারব আশা করছি।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

সজল এর ছবি

সমস্যাটা ভূমিকায়। মুক্তমনায় এই বিষয়ক বিতর্ক অনেকটাই অনুসরণ করেছি। ওই অভিযোগের খন্ডন আপনি ওইখানে আপনি করেছেন, আপনার চেষ্টা ভালো লেগেছে। ওইখানে অনেক কুতর্কও হয়েছে, সেটা ভালো লাগেনি। সে যাই হোক, কথা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আপনার লেখাগুলো এমনিতে বেশি ভালো হয়, বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লেখাটা খুবই ভালো লেগেছিলো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ইদানিং আপন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যাই লিখেন, তাতে কোন না কোন ভাবে মুক্তমনার বিতর্কের ব্যাপারটা নিয়ে আসেন, সেই বিতর্ক তো কয়েক দফা মুক্তমনায় হয়েছেই, তার জের বারবার টানা কেন? রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ওই ঘটনার সাথে সম্পর্কহীন লিখা লেখা যায় না?
আপনি শক্তিমান লেখক, সেই শক্তিটা যেন অপচয় না হয়, পাঠক হিসাবে এটা একটা অনুরোধ।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

sagar এর ছবি

সহমত।

কুলদা রায় এর ছবি

রাগিব, এই পোস্ট রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে একটি গুরুতর অভিযোগ বিষয়ে কিছু অনুসন্ধান করার চেষ্টা করা হয়েছে। অভিযোগটি তুলেছে দুজন লেখক। তাদের লেখালেখি--প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ বিষয়ে আমি প্রশংসাই করেছি। মুক্তমনা-যুক্তিবাদ (এখানে মুক্তমনা বলতে ব্লগকে বোঝানো হয়নি)-এর গুরুত্ব বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছি। বিজ্ঞানচেতনার সঙ্গে এ বিষয়গুলো গভীরভাবে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশ ভূখণ্ডে যুক্তিবাদের ইতিহাসটা টেনে যুক্তিবাদের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যটাও পরিস্কার করার চেষ্টা করা হয়েছে।

একটা জিনিস খেয়াল করেন, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্যারাতে অভিজিৎ রায় বা ফরিদ আহমদের নাম ধরে কিছুই বলা হয়নি। এখানে আমাদের দেশের একটি নেতিবাচক প্রক্রিয়ার উল্লেখ করে তার সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে--ব্যক্তি যখন প্রতিষ্ঠান গড়েন, তখন তা আর ব্যক্তির থাকে না। সমষ্টির হয়ে যায়। ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টির স্বার্তরক্ষায় সেখানে গণতন্ত্র এসে হাজির হয়। বাকস্বাধীনতার প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানে কখনোই একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ নেওয়াকে আর আধুনিকতা বলা যায় না। তাকে একধরনের প্রতিক্রিয়াশীলতা বলা যেতে পারে। আর এই প্রতিক্রিয়াশীলতার উদ্দেশ্যই থাকে কিছু সুবিধাবাদের চর্চা। প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চান। এটাকে কথ্যভাষায় ধান্ধাবাজিই বলে। এভাবে অনেক শুভ প্রতিষ্ঠানের অপমৃত্যু ঘটে। অনেক কৃতী মানুষও সে দায়ে অভিযুক্ত হন। ডঃ ইউনুসও এই অভিযোগে অভিযুক্ত।
এ বিষয়ে ভাল একটি কথা বলেছিলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়। একবার পরিভাষা তৈরীর একটি কমিটি করা হয়। সেখানে অনেক বিদ্বান কৃতি ব্যক্তির সঙ্গে বিদ্যাসাগরকে রাখা হয়েছিল। তখন বিদ্যাসাগর বলেছিলেন রবিঠাকুরকে যে, এরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি করে ওই ভাল উদ্যোগকে ভেস্তে পাঠাবেন। কারণ এরা এখনো গণতন্ত্র শেখেননি। তারা নিজেকে ছাড়া আর কাউকে ভাবতে পারেন না। বিদ্যাসাগরের এই মন্তব্যটা সত্যি হয়েছিল।

এরি পোস্টের ভূমিকায় বাঙালির এই আত্মপরতার দিকটিকেই উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে অভিজিৎ বা ফরিদ কাউকেই বিশেষভাবে নির্দেশ করা হয়নি। আমাদের স্থুলচর্চার একটি দিককে সমালোচনা করা হয়েছে মাত্র।
প্রশ্ন হল--এই ভূমিকাটাকে কেন আপনাদের মনে হল অই দুই ব্যক্তিকে খাটো করার জন্য লিখিত হয়েছে?

অই দুই লেখক যদি এই দুর্বল এবং অসত্য তথ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে গানচোর এবং বই রাহাজানকারী না প্রমাণের চেষ্টা করতেন, তাহলেতো কুলদা রায়কে এ বিষয়গুলো নিয়ে লেখার দরকার হত না। কুলদা রায় কিছু তথ্য দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন--তাঁদের ঐ লেখাটার পর্যবেক্ষণ ভুল ছিল, অসত্য তথ্য তারা উল্লেখ করেছেন এবং লেখার টাইটেল, বিষয় এবং স্টাইল একটি বিশেষকালের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির সঙ্গে মিলে যায়। লেখক যখন অযৌক্তিক তথ্য দেন তখনতো তাকে অপ্রমাণের দরকার আছে, নাকি কিনা বলুন? এবং বিষয়কে অপ্রমাণ করতে গেলে লেখককেতো এড়ানো যায় না। কারণ লেখাতো নিজে নিজে সৃষ্টি হতে পারে না--কোনো লেখকই লেখেন। সুতরাং দায়টা কার? লেখার--না, লেখকের? এই প্রশ্নের জবাব দিন। প্রমাণ করুন-- কোথায় কুলদা রায় শুধুমাত্র অভিজিৎ রায় এবং ফরিদ আহমদকে ধান্ধাবাজ, সুবিধাবাদী বলেছেন?
আপনাকে ধন্যবাদ।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

অনিকেত এর ছবি

এক ব্লগের ঝগড়া আরেক ব্লগে বয়ে আনার মানেটা ঠিক বুঝলাম না। সেইখানের দুইজন লেখকের কথা উল্লেখ করে এখানে লম্বা ভূমিকা ফাঁদা হয়েছে। সেই লেখকরা কি এই লেখা সম্পর্কে অবহিত? এই ধরনের আচরণ অত্যন্ত বিরক্তিকর এবং এসব এইখানে প্রকাশ করা হচ্ছে কী বুঝে সেইটাও বোধগম্য নয়। মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। পোষ্ট লেখক কুলদা রায়ের প্রতি অনুরোধঃ রবীন্দ্রনাথ শেষ পর্যন্ত একজন মানুষ। তাকে অযথা দেবকোটির লোক বানানোর মাঝে অন্ধত্ব কাজ করে। আমাদের মাঝে নানান রকমের মৌলবাদীতা কাজ করে। রবীন্দ্র-মৌলবাদীতা নামের নতুন কিছু চাই না প্লীজ!

স্পর্শ এর ছবি

মূল লেখাটা সত্যিই ভালো হচ্ছে| রবীন্দ্রনাথ এর বিজ্ঞান চর্চার ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছি| বিজ্ঞান ঘাটাঘাটি করেনি এমন মেগাবস লোকজন পাওয়া মুশকিল| জগদীশ চন্দ্র বসুর সাথে রবীন্দ্রনাথ এর পত্রালাপের সংকলন নিয়ে একটা বই পরেছিলাম| রবীন্দ্রনাথ এর বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে আইনস্টাইনকেও প্রসংশাবাক্ক বলতে শুনেছি| পরের পর্বগুলো আসুক|

আর

"প্রশ্ন হল--এই ভূমিকাটাকে কেন আপনাদের মনে হল অই দুই ব্যক্তিকে খাটো করার জন্য লিখিত হয়েছে?"

এইসব ছেলেভোলানো কথা বলেন কেন? ভুমিকাতে আপনি কি বলেছেন আর তার অর্র্থ কি সেটা আমরা সবাই বুঝতে পেরেছি| এইসব ক্ষুদ্রতা কাটুক| এমনিতে আপনি লেখেন ভালো|


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

কুলদা রায় এর ছবি

রবীন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন ১৫০ বছর আগে। বেঁচেছিলেন প্রায় আশি বছর। এই সময়কালে তিনি কোলকাতার জোড়াসাঁকো থেকে পা বাড়িয়ে পৃথিবীর আলোকিত মানুষের মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন--বিশ্বপ্রবাহের মধ্যে যুক্ত করেছেন বাংলাকে--বাঙ্গালীকে। তিনি অবিরল হয়ে উঠেছেন। বেড়ে উঠেছেন। নিজেকে বদলেছেন সময়ের সঙ্গে সভ্যতার সমান বয়সী হয়ে। তাঁকে নিয়ে মুগ্ধতা যেমন ছিল-আছে, তাঁকে নিয়ে তর্কবিতর্কও ছিল-আছে তার স্বকালে যেমন, সমকালেও তেমন।
রবীন্দ্রনাথের হয়ে ওঠার অন্যতম ক্ষেত্র হল পূর্ববঙ্গ--বর্তমান বাংলাদেশ। এই ভুখণ্ডে অসাম্প্রদায়িক বাঙ্গালী চেতনা যেমন বারবার বিরোধিতার সম্মুখিন হয়েছে, তাকে রক্ত ঝরিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হয়েছে, এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ নিরন্তর ছায়ার মতো থেকেছেন। রবীন্দ্রনাথ কায়ার মতো রয়েছেন। তাঁকে এড়ানো যায়নি।এড়ানো সম্ভব নয়। তিনি মুক্তপ্রাণের মানুষ হয়ে মুক্তির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এই-ই বাস্তবতা।
এইএড়ানো শব্দটির মধ্যেই বিরোধিতার আভাষ মেলে। এই বিরোধিতার স্বরূপটি বোঝা দরকার তাকে রক্তমাংসপ্রাণসমেত বোঝার প্রয়োজনে।
রবীন্দ্রবিরোধিতা হয়েছে পাকিস্তান পর্বে, বাংলাদেশ পর্বেও। ১৫টি খণ্ডে এই বিরোধিতার স্বরূপটি প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে খুঁজে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

ধুসর গোধূলি এর ছবি

উপরে স্বাধীন ভাই যে প্রসঙ্গটা তুলেছেন, একই প্রসঙ্গ আমিও তুলতে চাই। আপনার প্রায় লেখাতেই দেখি জালাল ভাই এর নাম জুড়ে দিচ্ছেন, অর্থাৎ জালাল ভাই আপনার সাথে সংশ্লিষ্ট লেখাটির কো-অথার। এ ব্যাপারে আমিও জানতে ইচ্ছুক বিশদে। আশাকরি, ফিরতি কোনো প্রশ্ন না করে জানাবেন।

আরও একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম এই লেখাটির তথ্যসূত্র তালিকায়। আপনি নিজের (বা নিজেদের) লেখাকেই সূত্র হিসেবে জুড়ে দিয়েছেন। নিজের লেখার সূত্র হিসেবে নিজেরই আরেকটা লেখা উল্লেখ করা কতোটা যুক্তি বা ন্যায় সঙ্গত!

কুলদা রায় এর ছবি

জালাল ভাই সহলেখক হলে আপনার আপত্তি কেন? স্বাধীনকে একটা প্রশ্ন করেছি। আশা করি সেটার উত্তর আপনিও দিতে পারেন।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আবারও প্রশ্ন! আমার আপত্তি থাকবে কেনো? ঠিক কোন জায়গাতে জালাল ভাই তাঁর কনট্রিবিউশন করেছেন, সেটা জানাতে আপনি এতো দ্বিধা করছেন কেনো সেটাই তো সমঝে আসছে না। স্বাধীন ভাইকে প্রশ্ন না করে সোজা সাপ্টা উত্তর দিলে সমস্যাটা কোথায়।

আপনি পোস্ট লিখেছেন, সেটার প্রেক্ষিতে জনগণের প্রশ্ন তো আসতেই পারে। তো আপনি সেইসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টা প্রশ্ন করতে থাকলে তো ত্যানাতে যে খালি প্যাঁচ খাইতে থাকে, এটা আশাকরছি বুঝতে পারছেন।

কুলদা রায় এর ছবি

সহলেখক হওয়ার জন্য যে কনট্রিবিউশন থাকা দরকার--তা নিয়েই জালাল ভাই এই লেখাগুলোর সহলেখক। দ্বিধার প্রশ্নটি আসছে কেন? এই লেখা বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্য থাকলে সেটা পেশ করুন। অপ্রাসাঙ্গিক বিষয়ে কথা বলাটাই সমীচিন।
আই দা ওয়ে--আপনার ভাষাটা কি অসুন্দর? ত্যানা প্যাচানি শব্দটা কখনো আপনার বেলায় আমি ব্যবহার করেছি বলে মনে পড়ে না। সমস্যাটা কি ভাই আপনার?

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

ধুসর গোধূলি এর ছবি

আপনি কি এর আগেও মুক্তমনা, অভিজিৎ রায়কে আক্রমন করে লিখেছেন?
উত্তর হলো, হ্যাঁ। সচলায়তনেই লিখেছেন [আপনার ফেসবুকের হিসাব ধরলাম না। সেটা আপনার ব্যক্তিগত ক্ষেত্র। সেখানে আপনি কাকে ধুইলেন কাকে মালা দিলেন, আই ডোন্ট গিভ আ ডেম]।

অভিজিৎ রায়ের এক ফেসবুক স্ট্যাটাস ধরে আপনি সচলে পুরো একটা পোস্ট ফেঁদে বসেছিলেন। মন্তব্যের ঘরে অনেকে ফেসবুকের কাহিনি, যেখানে আপনি মন্তব্য করে যাচ্ছিলেন বটে, টেনে সচলে এনে অভিজিৎ রায়'কে 'দু কথা শুনিয়ে' দেয়ার চেষ্টায় আপত্তি জানিয়েছেন।

দেখাই যাচ্ছে, অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে আপনার 'কাদা ছোড়াছুড়ির' বিষয় একটা আছেই। এর একটা 'ইতিহাসও' লিপিবদ্ধ হয়ে আছে, এমনকি সচলেই। সুতরাং, উপরের এক মন্তব্যে আপনি যে দাবী করলেন,

কুলদা রায় লিখেছেন:
অই দুই লেখকের সঙ্গে আমার কাদা ছোড়াছুড়ির কোনো বিষয়ই নেই। এর কোনো ইতিহাসও নেই। আর আপনি একতরফাভাবে কুলদা রায়ের উপর কাদা ছোড়াছুড়ির দায় চাপালেন।

সেটা ধোঁপে টেকে না!

এই লেখাতেও ভূমিকার অংশে আপনি পুরাতন কাজটা আবার করলেন। মুক্তমনা, অভিজিৎ রায় এবং ফরিদ আহমেদকে এখানে আপনার উল্লেখ করার উদ্দেশ্যটা যে পুষ্পাঞ্জলী দান করার জন্য নয়, সেটা বোধ'য় একেবারে শুরুতেই স্পষ্ট হয়েছে। আপনি এরকম কাজ আগেও করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন বলে আস্তা আছে আপনার ওপর। কিন্তু, ব্যাপারটা প্যাঁচ খেয়ে যায় যখন সেখানে জালাল ভাইয়ের মতো একজনের নাম জড়িয়ে যায়। আমার সমস্যাটা সেখানেই। জানতে চাইছিলেন বলে বললাম।

আপনাকে নিয়ে, আপনি কী লিখলেন সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নাই, সমস্যাও নাই। কিন্তু জালাল ভাইকে চিনি বলেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তিনি আপনার সাথে এরকম ফালতু ব্যক্তি আক্রমনে মেতে উঠেছেন! আপনার পোস্টে মন্তব্য করারও সেটাই কারণ। এম এম আর জালাল- নামটা অনেক ওজনদার কুলদা রায়। এটা বুঝবেন আশাকরি।

ধন্যবাদ।

কল্যাণF এর ছবি

আপনার লেখাটা এবং এখন পর্যন্ত প্রাকাশিত মন্তব্য সহ আপনার উত্তর পড়ে ধারনা পেলাম রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা বা বই চুরি বিষয়ক আনিত দাবী অপ্রমাণ করতে আপনাদের এই যৌথ প্রচেষ্টা। তা এত জটিল করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কঠিন করে কঠিন কঠিন ভাষার ব্যাবহার করে ক্ষোদ এই লেখা এবং পাঠকের আগ্রহ নষ্ট করার দরকার কি? কি কি অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো উল্লেখ করে নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিলে এবং প্রতিযুক্তি উপস্থাপন করে অভিযোগগুলো রেফারেন্স সহ খন্ডন করলে কি অসুবিধা ছিল? কে অভিযোগ করেছে, কোথায় করেছে সেই সাথে যেখানে অভিযোগ উপস্থাপিত হয়েছে সেখানে আপনি কি প্রতিবাদ করেছেন তাও উল্লেখ করা যেতে পারত ভূমিকা হিসেবে। এর কিছু অবশ্য ধোঁয়াটে ভাবে এসেছে লেখার শেষে সূত্রে ও আপনার প্রতি-মন্তব্যে। কিন্তু এগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে ও সরাসরি প্রবন্ধের ভুমিকাতে দেয়া উচিত ছিল কারণ আমি পাঠক আর আমাকে উদ্দেশ্য করে আপনাদের এই লেখা, তাহলে আপনাদের লেখার প্রয়োজনে আমাকে ঘুরিয়ে মারবেন কেন? যদি বিস্তারিত জানতে চাই আর কোন কিছু ভেরিফাই করতে চাই তাহলে আমি না হয় সূত্র ঘাটাঘাটি করব, সে আমার স্বাধীনতা। আপনার লেখায় রবীন্দ্রনাথ কোন কোন শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন লিখে কি এটা জাস্টিফাই করতে চান যে রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার উপযুক্ত ছিলেন? তাহলে কিন্তু রবীন্দ্রনাথের লিখিত বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার লেভেলটা কতখানি স্বীকৃত উল্লেখ করবেন। এখানে লেভেল বলে বোঝাতে চায়েছি সেগুলো কি বৈজ্ঞানীক গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ নাকি দৈনন্দিন বিজ্ঞান চিন্তা নাকি নতুন তত্ত্ব ইত্যাদি। আপনারা বেশ কয়েকবার লিখেছেন "মুক্তমনা, যুক্তিবাদ নিয়ে..." এটা কেমন হল? শব্দটা মুক্তমন কেন নয়? মুক্তমনা বললেতো কোন নির্দিষ্ট ব্যাক্তি বা গোষ্ঠিকে নির্দেশ করা হয়, নাকি? অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে চাচ্ছি এই লেখাটা চমৎকার যুক্তি ভিত্তিক বিশ্লেষণ পূর্ণ ও বিরুদ্ধ যুক্তি খন্ডনে সমৃদ্ধ একটা লেখা হতে পারত যেখানে পাঠকের বিষয় সংশ্লিষ্ট আলোচনার অনেক সুযোগ সৃষ্টি হত, কিন্তু তা না হয়ে পাঠকের মন্তব্য ও চিন্তা ভাবনা সম্পূর্ণ ভিন্ন খাঁতে ঘুরছে যা লেখক হিসেবে আপনার ব্যর্থতা কারণ পাঠককে আপনি আপনার লেখার অব্জেক্টিভ বোঝাতে বিফল। এমন কি এটা প্রথম পর্ব বলেও ছাড় দেয়া যাচ্ছে না কারণ পরিস্কার পটভূমি তৈরি করা হয়নি। আমার মনে হয় এখানে আমরা সবাই সরাসরি কথা বলতে ও বুঝতে অভ্যস্ত। দয়া করে না পেচিয়ে সরাসরি যুক্তি-প্রতিযুক্তি উপস্থাপন করুন, সহজ ব্যাখ্যা যুক্ত করুন ও আলোচনার সুযোগ দিন। এমন একটা বিষয় যা উপস্থাপনের গুনে গুরূত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারত, তা এভাবে পেচিয়ে পেচিয়ে পাঠকের মনযোগ নষ্ট করলেন আপনারা।

তাসনীম এর ছবি

রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে আগে লেখা পড়েছি। আপনার মূল লেখাটা ভালো লেগেছে।

তবে মুক্তমনার অভিজিতের সাথে আপনার আড়াআড়ির ব্যাপারটা ফেসবুক এবং পুরানো লেখার সূত্রে জানা আছে। অভিজিৎ এবং মুক্তমনা বিষয়ক অংশ বাদ দিলেও চলত। এতে লেখার মান বাড়তো। এর ফলে লেখার ফোকাস অন্য দিকে চলে গেছে। লেখাতে গালাগাল অথবা বিদ্বেষ থাকলে আলোচনা অন্য দিকে চলে যায়। এটা আগেও দেখেছি।

আরেকটা ব্যাপার, রবীন্দ্র সমালোচনা সব যুগে ছিল এবং থাকবে। এতে তাঁর অবস্থান ক্ষুণ্ণ হয় নি। আমার ধারণা ভবিষ্যতে হবেও না। এতে বিচলিত হওয়ার কিছ নেই।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

তাপস শর্মা এর ছবি

রবীন্দ্র সমালোচনা সব যুগে ছিল এবং থাকবে। এতে তাঁর অবস্থান ক্ষুণ্ণ হয় নি। আমার ধারণা ভবিষ্যতে হবেও না। এতে বিচলিত হওয়ার কিছ নেই।

একদম ঠিক, তাকে নিয়ে আমারা সমালোচনা করি, কারণ মানুষটার নাম - রবীন্দ্রনাথ

মনে পড়ে মাষ্টারমশাই এর কথা। 'জীবন স্মৃতি' পড়াতে গিয়ে তিনি বারবার বলতেন - কল্লোল যুগের লেখকরা, সজনীকান্তরা হাত ধুয়ে রবির সমালোচনায় মেতে ছিল, কিন্তু দিনের শেষে রবির আলো ফুরিয়ে ঘরে ফিরে এলে তাদের ঘর আলো করে থাকতো 'সঞ্চয়িতা', বুদ্ধদেবও সঞ্চয়িতার পাতায় নিজেকে বিলীন হতে দেখেছিলেন। বহুদিন আগে স্যারের বলা কথা গুলো মনে পড়ে গেলো ......

মন_মাঝি এর ছবি

আপনি রবীন্দ্রভক্ত গবেষক, কিন্তু আপনার লেখা আর মন্তব্যের টোন চরম অরাবীন্দ্রিক!

কুলদা রায় এর ছবি

আমার মধ্যে কোনো ভক্তিবাদিতা নেই। আছে একটা অনুসন্ধানী মানুষ। সুতরাং টোনটা ভক্তদের মত প্রার্থনামূলক না হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। ধন্যবাদ।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

স্বাধীন এর ছবি

আপনাকে অনেকে মিলে খুব স্পষ্ট একটি প্রশ্ন করেছি যেটার জবাব দেওয়াটা মনে করি নুতন পর্ব লেখার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নটি ছিল এই লেখাতে সহ লেখক জালাল ভাইয়ের কন্ট্রিবিউশান কি কি? আপনার কাছে থেকে সোজা কিছু জবাব আশা করি। বইলেন না যে সহলেখক হতে হলে যা যা কন্ট্রিবিউশান লাগে জালাল ভাইয়ের কন্ট্রিবিউশান তা তা। এই ধরণের প্যাঁচানো জবাব ব্যতীত স্পষ্ট করে আমাদেরকে জানান যে এই সিরিজে এবং আগের লেখাগুলোতে জালাল ভাইয়ের কন্ট্রিবিউশান কি কি।

কুলদা রায় এর ছবি

লক্ষ করা যাচ্ছে কিছু পাঠক মুল লেখাটির চেয়ে ভূমিকাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। আলোচনাটিকে প্রাসঙ্গিক রাখতে ভুমিকাটি তুলে নেওয়া হল।

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

আসমানী-মডু এর ছবি

প্রিয় কুলদা রায়,
এই ব্লগটির প্রাথমিক ভার্সনে অন্য একটি ব্লগের ব্লগার এবং প্রাক্তন সচল সর্ম্পকে আপনার সমালোচনা সহনশীল প্রতীয়মান হয়নি। সচলায়তনে সমালোচনা সব সময়েই স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু সমালোচনা যাতে কুৎসায় পরিণত না হয় সে জন্য যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। আপনাকে এ ব্যাপারে আরো যত্নশীল হতে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

এই পোস্টের মন্তব্যসমূহের ওপর মন্তব্য:

মন্তব্য ১। পোস্টের ভূমিকার জন্য আপত্তি, পোস্টের বিষয়ের ওপরে কোনো মন্তব্য নাই।

মন্তব্য ২, ৩, ৪, ৫। পোস্টের বিষয়ের ওপর কোনো কথা নাই।

মন্তব্য ৮। লেখককে ঝাড়ি ও জ্ঞানদান। লেখক নাকি রবিকে নবীরাসূল বানাচ্ছেন! লেখার বিষয়ে নো কমেন্টস।

মন্তব্য ১০ থেকে ১৫। লেখার বিষয়ে কোনো মন্তব্য নাই।

মন্তব্য ১৬। লেখকের চরিত্র বিশ্লেষণ। লেখার বিষয়ে কোনো মন্তব্য নাই।

মন্তব্য ১৯। লেখকের সমস্যা বিশ্লেষণ। লেখা সম্পর্কে নো কমেন্টস।

মন্তব্য ২০। লেখকের সম্পর্কে মডারেটরদের কাছে খোলা অভিযোগ। লেখা সম্পর্কে কোনো কথা নাই।

মন্তব্য ২৩। লেখক সম্পর্কে কটুক্তি ও লেখকের চরিত্র বিশ্লেষণ। লেখা সম্পর্কে নো কমেন্টস।

মন্তব্য ২৪। লেখকের চরিত্র অঙ্কন।

মন্তব্য ২৬। লেখককে জ্ঞানদান।

মন্তব্য ৩২। লেখক কি জানেন আর জানেন না, জ্ঞানদান।

মন্তব্য ৩৩। কলিং ফর দ্য মডারেটর। লেখককে অন্ধ আখ্যা দেওয়া।

মন্তব্য ৩৪। লেখকের ক্ষুদ্রতার ওপর আলোকপাত।

মন্তব্য ৩৬। কো অথর সম্পর্কে লেখককে প্রশ্ন। লেখার ওপর নো কমেন্টস।

মন্তব্য ৪৪। লেখক অরাবীন্দ্রীক!

মন্তব্য ৪৮। লেখককে যত্নশীল হতে মডারেটরের অনুরোধ।

মন্তব্য ৪৯। (আমার এই মন্তব্য) মন্তব্যের ওপরে মন্তব্য। লেখার ওপরে নো কমেন্টস।

বাকি মন্তব্যগুলোতেও লেখার ওপরে বিশ্লেষণী কোনো কথা নাই। সচল কি জড়বস্তু (লেখা) থেকে জীবের (লেখকের) ওপর বেশি ফোকাস করছে?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কুলদা রায় এর ছবি

(বাংলায়) হাসি

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

স্বাধীন এর ছবি

বাকি মন্তব্যগুলোতেও লেখার ওপরে বিশ্লেষণী কোনো কথা নাই। সচল কি জড়বস্তু (লেখা) থেকে জীবের (লেখকের) ওপর বেশি ফোকাস করছে?

তোর নিজের মন্তব্যটাও এই তালিকায় যুক্ত করতে পারিস। তোরও উচিত ছিল না - এই মন্তব্য করার আগে লেখা নিয়ে একটি বিশ্লেষণী ব্যাখ্যা প্রদান করে তারপর বাকি মন্তব্যকারীদের মন্তব্য নিয়ে বিশ্লেষণ খাইছে । যাই হোক, আশা করি লেখাটা পড়েই মন্তব্য করেছিস, শুধু মন্তব্য পড়ে না। এই লেখাটি ছিল বড় একটি লেখার ভুমিকা। তাই লেখাটি নিয়ে বিশ্লেষণের অবকাশ কম ছিল। বরং যে সব বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণের দাবী রাখে, যেমন ব্যক্তি আক্রমন যুক্ত ভুমিকা এবং লেখায় কোন প্রকার কন্ট্রিবিউশন ছাড়াই একজনকে সহলেখক হিসেবে দেওয়া, সেগুলো নিয়েই পাঠক মন্তব্য করেছে।

আর লেখক/লেখা পৃথক বিষয় নয়, অন্তত আমার কাছে। একজন লেখক কি লিখেছেন সেটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, আবার লেখাটা কে লিখেছেন সেটাও সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখন গোলাম আযম যদি স্বাধীনতার ইতিহাস লিখে তুই নিশ্চয়ই সেটা পড়তে যাবি না। ব্লগে যেহেতু ব্যক্তি মানুষ্কে কেউ চিনি না তাই একজন লেখকের লেখা পড়েই লেখক সম্পর্কে একটা ধারণা গড়ে উঠে। এই যেমন ব্যক্তি অচ্ছ্যুৎ বলাইকে কেউ না চিনলেও লেখার মাধ্যমে তোর একটি চিত্র পাঠকের কাছে রয়েছে। তাই লেখা/লেখক আমার কাছে খুব বেশি ভিন্ন কিছু নয়। এখন একজন লেখক তার লেখা আর মন্তব্যের মাধ্যমে নিজের কি পরিচয় দিবেন সেটা লেখককেই ঠিক করতে হবে। এটি পাঠকের হাতে নেই মন খারাপ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

তোর নিজের মন্তব্যটাও এই তালিকায় যুক্ত করতে পারিস। তোরও উচিত ছিল না - এই মন্তব্য করার আগে লেখা নিয়ে একটি বিশ্লেষণী ব্যাখ্যা প্রদান করে তারপর বাকি মন্তব্যকারীদের মন্তব্য নিয়ে বিশ্লেষণ

আমারটা আগেই যোগ করেছি। ৪৯ নং মন্তব্যেই ৪৯ নং মন্তব্যের প্রকৃতি সম্পর্কে বলা আছে। হাসি

আশা করি লেখাটা পড়েই মন্তব্য করেছিস, শুধু মন্তব্য পড়ে না।

আমি শুধু মন্তব্য পড়েই মন্তব্য করেছি মন্তব্যের ওপরে।

আবার লেখাটা কে লিখেছেন সেটাও সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখন গোলাম আযম যদি স্বাধীনতার ইতিহাস লিখে তুই নিশ্চয়ই সেটা পড়তে যাবি না।

কুলদা রায় গোলাম আযম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী কেউ হলে সচল তার সেই লেখা প্রকাশ করতো না। সুতরাং গোলামের উদাহরণ এখানে অবান্তর।

এই লেখায় মন্তব্য করার আগে সম্মানিত সচলদের একটা কথা মনে রাখা দরকার ছিলো, লেখাটা মডারেশন পার হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। মডারেটরগণ লেখার ভূমিকায় আপত্তি করলে মডারেশনের সময়ই ওটা আটকে যেতো। ওটা না আটকানো যদি মডারেটরদের ভুলও হয়, তাহলে মডারেটরকে ভুলটা দেখিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এবং সেজন্য সচলায়তনের কন্টাক্ট নামে ইমেইল আছে। পোস্টে এসে মডারেশনের জন্য চাপ প্রয়োগ করা বা লেখককে গোলাম আযম ধরে নিয়ে মোটামুটি দলবদ্ধভাবে ঝাড়ি দেয়া বা জ্ঞানদান করা সচলের জন্য ক্ষতিকর।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

স্বাধীন এর ছবি

লেখাটা মডারেশন পার হয়ে এসেছে বলে যে আপত্তির স্থলগুলোতে আপত্তি জানানো যাবে না তা তো নয়। হ্যা, কন্ট্যাক্ট ইমেইল রয়েছে, কিন্তু তাই বলে পোষ্টে আপত্তি জানানো যাবে না তাও তো নয়। আমার ব্যক্তিগত অভিমত কন্ট্যাক্টের চেয়ে আমি খোলাখুলি ভাবেই আপত্তি জানাতে পছন্দ করবো। লেখাটা যেহেতু ওপেন ফোরামে এসেছে তাই আপত্তিগুলোও ওপেন ফোরামেই আসবে। এটাই ব্লগের মূল শক্তি।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

কেসটা এরকম হলে, যে মন্তব্যগুলোতে লেখককে ঝাড়ি ও অনাকাঙ্ক্ষিত জ্ঞানদান করা হয়েছে, সেগুলোতে মডারেটররা একটু সদয় দৃষ্টি দিবেন আশাকরি।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।