কুলদা রায়
এমএমআর জালাল
প্রথম পর্ব : লিংক
দ্বিতীয় পর্ব: লিংক
প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিজ্ঞানের ঘনিষ্টতা আলোচনা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে অধুনা একটি ব্লগে অভিযোগ আনা হয়েছে, তিনি প্রমথনাথ সেনগুপ্তর লেখা বইটি চুরি করে নিজের নামে প্রকাশ করেছেন। বইটির নাম 'বিশ্বপরিচয়' । তৃতীয় পর্বে বিশ্বপরিচয় বিজ্ঞান গ্রন্থটির ইতিবৃত্ত বর্ণিত হল। এখানে অনুসন্ধানের বিষয় ছিল,বই চুরি বা রাহাজানির সারবত্তা কতটুকু।
একটি পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান বিষয়ক বই লেখার পরিকল্পনা : বিশ্বপরিচয়-------------------------------------------------
রবীন্দ্রনাথ লোকশিক্ষা গ্রন্থমালা প্রকাশের শুরুতে পরিকল্পনা করলেন বিশ্বপরিচয় নামে একটি পূর্ণাঙ্গ বই লেখার। তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিয়াত্তর। ইতিমধ্যে রবীন্দ্রনাথের ১৮১টি বই প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৪১ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সে সংখ্যা ২০২ টি।
এই বইটি লেখার জন্য তিনি নির্বাচন করলেন বিশ্বভারতীর তরুণ শিক্ষক প্রমথনাথ সেনগুপ্তকে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়েছেন। প্রখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বোসের প্রিয় ছাত্র। তিনিই রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রমথনাথকে পাঠিয়েছেন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ প্রদনের সুপারিশ করে।
শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের জন্য প্রমথনাথ বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন অল্পদিনে মধ্যেই। তাছাড়া কয়েকটি ইংরেজী আর্টিকেলও তিনি লিখেছেন। বাংলাভাষায় বিজ্ঞানবিষয়ক রচনার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। পদার্থ বিদ্যার এই তরুণ শিক্ষককে রবীন্দ্রনাথ বইটি লেখার জন্য নির্বাচন করলেন দুটি কারণে, এক. বিষয় বিশেষজ্ঞ তরুণের হাত দিয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক একটি গ্রন্থ রচনা করা। দুই. বাংলাভাষার নতুন একজন বিজ্ঞান লেখক সৃষ্টি করা।
বিশ্বপরিচয় বইটি লিখতে প্রমথনাথকে রবীন্দ্রনাথ পড়তে দেন–
১. জিনস-এর থ্রু স্পেস এনড টাইম
২. এডিংটনের জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি বই।
এবং লেখার শুরুতেই নক্ষত্রলোক নিয়ে একটি মনোজ্ঞ আলোচনা করেন।
এসব আলোচনায় ক্ষিতিমোহন সেন এবং বিধুশেখর শাস্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সে সময় জর্জ গ্রের নিউ ওয়ার্ল্ড বইটির সাহায্য নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।
লেখার উদ্দেশ্য বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ প্রমথনাথকে বলেছেন–
———————————————–
১. বইটির রচনার ভাষাকে হতে হবে সহজ সরল।
২. যথাসম্ভব পরিভাষা বর্জিত।
৩.অথচ তার মধ্যে বিষয়বস্তুর দৈন্য থাকবে না।
৪. এই রচনা শিক্ষণীয় নানা বিষয়কে বাংলাদেশের সর্বসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার মত হতে হবে।
রবীন্দ্রনাথ প্রমথনাথকে বলেন, সাধারণ জ্ঞানের সহজবোধ্য ভূমিকা করে দেওয়াই হবে তোমার কাজের উদ্দেশ্য। তাই, জ্ঞানের এই পরিবেশকার্যে পাণ্ডিত্য যথাসাধ্য বর্জন করতে হবে।
রবীন্দ্রনাথ বিজ্ঞান বিষয়ক রচনাকে জনপ্রিয় করার জন্য ভাষাকে এবং সাহিত্যকেও গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই বিজ্ঞান বিষয়টি কোনো বিশেষজ্ঞকে দেখানোর আগে এমন একজনকে পড়তে দিতে হবে, যিনি বিজ্ঞানের কিছুই জানেন না। তিনি এজন্য বাংলা ও সংস্কৃত ভাষার অধ্যাপক গোঁসাইজীর নাম করেন। গোঁসাইজী যদি খসড়া রচনা পড়ে বিষয়টি বুঝতে পারেন তবে–সেটা গ্রহণীয় হবে।
প্রমথনাথকে রবীন্দ্রনাথ বইটির একটি পরিকল্পনা তৈরি করে দেন। সে ছক মোতাবেক প্রমথনাথ বইগুলো পড়ে একটি অধ্যায় লিখে রবীন্দ্রনাথকে দেখান। সেটা পড়ে পরমাণুলোক অধ্যায় কীভাবে লিখতে হবে তার ভাষার সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা রবীন্দ্রনাথ প্রমথনাথের কিছু অংশ লিখিত পাণ্ডুলিপির গায়ে লিখে দেন।
রবীন্দ্রনাথ তার পাণ্ডুলিপির প্রথম পর্ব পড়ে বুঝতে পারলেন–তার পরিকল্পনা অনুসারে প্রমথনাথ বইটি লিখতে পারছেন না। সেটা এক ধরনের গুরুগম্ভীর অনুবাদ হয়ে যাচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথ প্রমথনাথের প্রথম পর্বটা পড়ে বুঝলেন–প্রথমনাথ লেখক হিসাবে দুর্বল। তখন তিনি কীভাবে লিখতে হবে সেটা বলে দিলেন। সেটা অনুসরণ করেও যখন লেখাটি রবীন্দ্রনাথের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পাণ্ডুলিপি হচ্ছে না তখন তাকে রবীন্দ্রনাথ লেখা বন্ধ করে দিতে বলতে পারতেন। সেটা করেননি। তিনি তাকে লিখে যেতে বললেন। উদ্দেশ্য–তাকে লেখার তালিম দেওয়া। কী করে লেখা শেখা যায়–সে বিষয়ে তাকে হাতে কলমে শেখানো। তিনি জানেন, লেখা শিখলে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানশিক্ষার কাজে লাগবে। এভাবে তিনি অনেককেই লেখক হিসাবে তৈরি করেছেন। ধীরে ধীরে প্রমথনাথ লেখায় উন্নতি করলেও তা রবীন্দ্রনাথের নিজের ফিলসফির মত হয়ে ওঠে নি। সেজন্য রবীন্দ্রনাথই নিজের মত করে বইটি আবার লিখেছেন।
চার বছর ধরে রবীন্দ্রনাথ তার বিশ্বপরিচয় বইটি লিখেছেন। অন্তত ছয় বছর রবীন্দ্রনাথ এই কাজে জড়িত ছিলেন। লেখাটি শেষ করেছেন আলমোড়ায়। প্রভাতকুমার মুখেপাধ্যায় রবীন্দ্রজীবনকথা গ্রন্থে লিখেছেন, ১৯৩৭ সালে কবি গরমের ছুটিতে সপরিজন আলমোড়া পাহাড়ে চললেন। সঙ্গে চলেছে রাশীকৃত বিজ্ঞানের বই। লেখা হয়েছে বিশ্বপরিচয় বইটি। এ জন্য কবি সে সম্বন্ধে বহু বই পড়লেন, বিষয়গুলি সম্বন্ধে বিশেষ ভাবলেন, অন্যদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়গুলি বুঝে নিলেন—তারপর লেখা আরম্ভ করেন। কবির বহুদিনের ইচ্ছা ‘বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ’ নামে সাধারণের সহজবোধ্য জ্ঞানবিজ্ঞানের গ্রন্তমালা লিখিয়ে সর্বসাধারণের মধ্যে অল্পমূল্যে প্রচার করবেন। অনেক বছর আগে একবার এই পরিকল্পনার কথা কাগজে ছাপাও হয়, কিন্তু সেবার কাজে খাটানো যায় নি। এতদিনে সেই গ্রন্থমালার সূত্রপাত হল—বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে।
তখন রবীন্দ্রনাথের বিশ্বপরিচয় বইটি এবং প্রমথনাথের পাণ্ডুলিপিটি পড়ে বিশেষজ্ঞগণ জানালেন–একই বিষয়ে দুটো দুরকম বই হয়েছে এই দু লেখকের।
সুতরাং প্রমথনাথের বইটি পৃথ্বিপরিচয় নামে প্রমথনাথের নামে প্রকাশ করা হল। এবং রবীন্দ্রনাথের বইটি বিশ্বপরিচয় নামে রবীন্দ্রনাথের নামেই প্রকাশ হল। বিশ্বপরিচয় প্রথম প্রকাশিত হয়–১৩৪৪ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে। পঞ্চম সংস্করণ হয় পৌষ ১৩৪৬-এ। এই দুই বছর সময় ধরে তার পরিমার্জনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের স্বভাব অনুসারে ঘষে মেজে নতুন করে তুলেছেন প্রতি সংস্করণেই।
এজন্য এ সময় আরও কয়েকটি বই রবীন্দ্রনাথকে পড়তে হয়েছে––
১. দি ইউনিভার্সেস সার্ভেয়ড
২. নারায়ণস ডায়েরি–রাধারমণ ব্যানার্জি
এই সব বই সংগ্রহ করেছেন প্রথম প্রকাশের পর। অন্যান্য সংস্করণে সেগুলো থেকে তথ্য নিয়ে রবীন্দ্রনাথ পরিমার্জন,সংযোজন করেছেন বিশ্বপরিচয়কে।
বিশ্বপরিচয়ে ৩টি জিনিস আছে–
————————————–
১. বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্য যা বিদেশী বই থেকে সংগৃহীত। বইগুলি রবীন্দ্রনাথ সংগ্রহ করেছেন। পড়েছেন।
২. জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্যের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নিজের ফিলসফি।
৩. রবীন্দ্রনাথের ভাষা।
প্রমথনাথের বইতে আছে–
——————————-
১) বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্য যা বিদেশী বই থেকে সংগৃহীত।
২) নিজের কোনো দর্শন আলোচনা তিনি করেন নাই।
৩) তার ভাষাটিও পোক্ত নয়।
রবীন্দ্রনাথের বিশ্বপরিচয়ের ভূমিকা–
—————————————-
শ্রীযুক্ত সত্যেন্দ্রনাথ বসু
প্রীতিভাজনেষু
এই বইখানি তোমার নামের সঙ্গে যুক্ত করছি। বলা বাহুল্য, এর মধ্যে এমন বিজ্ঞানসম্পদ নেই যা বিনা সংকোচে তোমার হাতে দেবার যোগ্য। তা ছাড়া, অনধিকারপ্রবেশে ভুলের আশঙ্কা করে লজ্জা বোধ করছি, হয়তো তোমার সম্মান রক্ষা করাই হল না।
কয়েকটি প্রামাণ্য গ্রন্থ সামনে রেখে সাধ্যমতো নিড়ানি চালিয়েছি। কিছু ওপড়ানো হল। যাই হোক আমার দুঃসাহসের দৃষ্টান্তে যদি কোনো মনীষী, যিনি একাধারে সাহিত্যরসিক ও বিজ্ঞানী, এই অত্যাবশ্যক কর্তব্যকর্মে নামেন তা হলে আমার এই চেষ্টা চরিতার্থ হবে।
শিক্ষা যারা আরম্ভ করেছে, গোড়া থেকেই বিজ্ঞানের ভাণ্ডারে না হোক, বিজ্ঞানের আঙিনায় তাদের প্রবেশ করা অত্যাবশ্যক। এই জায়গায় বিজ্ঞানের সেই প্রথমপরিচয় ঘটিয়ে দেবার কাজে সাহিত্যের সহায়তা স্বীকার করলে তাতে অগৌরব নেই। সেই দায়িত্ব নিয়েই আমি এ কাজ শুরু করেছি। কিন্তু এর জবাবদিহি একা কেবল সাহিত্যের কাছেই নয়, বিজ্ঞানের কাছেও বটে। তথ্যের যাথার্থ্যে এবং সেটাকে প্রকাশ করবার যাথাযথ্যে বিজ্ঞান অল্পমাত্রও স্খলন ক্ষমা করে না। অল্প সাধ্যসত্ত্বেও যথাসম্ভব সতর্ক হয়েছি। বস্তুত আমি কর্তব্যবোধে লিখেছি কিন্তু কর্তব্য কেবল ছাত্রের প্রতি নয় আমার নিজের প্রতিও। এই লেখার ভিতর দিয়ে আমার নিজেকেও শিক্ষা দিয়ে চলতে হয়েছে। এই ছাত্রমনোভাবের সাধনা হয়তো ছাত্রদের শিক্ষাসাধনার পক্ষে উপযোগী হতেও পারে।
আমার কৈফিয়তটা তোমার কাছে একটু বড়ো করেই বলতে হচ্ছে, তা হলেই এই লেখাটি সম্বন্ধে আমার মনস্তত্ত্ব তোমার কাছে স্পষ্ট হতে পারবে।
বিশ্বজগৎ আপন অতিছোটোকে ঢাকা দিয়ে রাখল, অতিবড়োকে ছোটো করে দিল, কিংবা নেপথ্যে সরিয়ে ফেলল। মানুষের সহজ শক্তির কাঠামোর মধ্যে ধরতে পারে নিজের চেহারাটাকে এমনি করে সাজিয়ে আমাদের কাছে ধরল। কিন্তু মানুষ আর যাই হোক সহজ মানুষ নয়। মানুষ একমাত্র জীব যে আপনার সহজ বোধকেই সন্দেহ করেছে, প্রতিবাদ করেছে, হার মানাতে পারলেই খুশি হয়েছে। মানুষ সহজশক্তির সীমানা ছাড়াবার সাধনায় দূরকে করেছে নিকট, অদৃশ্যকে করেছে প্রত্যক্ষ দুর্বোধকে দিয়েছে ভাষা। প্রকাশলোকের অন্তরে আছে যে অপ্রকাশলোক, মানুষ সেই গহনে প্রবেশ করে বিশ্বব্যাপারের মূলরহস্য কেবলই অবারিত করছে। যে সাধনায় এটা সম্ভব হয়েছে তার সুযোগ ও শক্তি পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষেরই নেই। অথচ যারা এই সাধনার শক্তি ও দান থেকে একেবারেই বঞ্চিত হল তারা আধুনিক যুগের প্রত্যন্তদেশে একঘরে হয়ে রইল।
বড়ো অরণ্যে গাছতলায় শুকনো পাতা আপনি খসে পড়ে, তাতেই মাটিকে করে উর্বরা। বিজ্ঞানচর্চার দেশে জ্ঞানের টুকরো জিনিসগুলি কেবলই ঝরে ঝরে ছড়িয়ে পড়ছে। তাতে চিত্তভূমিতে বৈজ্ঞানিক উর্বরতার জীবধর্ম জেগে উঠতে থাকে। তারই অভাবে আমাদের মন আছে অবৈজ্ঞানিক হয়ে। এই দৈন্য কেবল বিদ্যার বিভাগে নয়, কাজের ক্ষেত্রে আমাদের অকৃতার্থ করে রাখছে।
আমাদের মতো আনাড়ি এই অভাব অল্পমাত্র দূর করবার চেষ্টাতেও প্রবৃত্ত হলে তারাই সব চেয়ে কৌতুক বোধ করবে যারা আমারই মতো আনাড়ির দলে। কিন্তু আমার তরফে সামান্য কিছু বলবার আছে। শিশুর প্রতি মায়ের ঔৎসুক্য আছে কিন্তু ডাক্তারের মতো তার বিদ্যা নেই। বিদ্যাটি সে ধার করে নিতে পারে কিন্তু ঔৎসুক্য ধার করা চলে না। এই ঔৎসুক্য শুশ্রূষায় যে-রস জোগায় সেটা অবহেলা করবার জিনিস নয়।
আমি বিজ্ঞানের সাধক নই সে কথা বলা বাহুল্য। কিন্তু বালককাল থেকে বিজ্ঞানের রস আস্বাদনে আমার লোভের অন্ত ছিল না। আমার বয়স বোধ করি তখন নয়-দশ বছর; মাঝে মাঝে রবিবারে হঠাৎ আসতেন সীতানাথ দত্ত [ ঘোষ ] মহাশয়। আজ জানি তাঁর পুঁজি বেশি ছিল না, কিন্তু বিজ্ঞানের অতি সাধারণ দুই-একটি তত্ত্ব যখন দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিতেন আমার মন বিস্ফারিত হয়ে যেত। মনে আছে আগুনে বসালে তলার জল গরমে হালকা হয়ে উপরে ওঠে আর উপরের ঠাণ্ডা ভারী জল নীচে নামতে থাকে, জল গরম হওয়ার এই কারণটা যখন তিনি কাঠের গুঁড়োর যোগে স্পষ্ট করে দিলেন, তখন অনবচ্ছিন্ন জলে একই কালে যে উপরে নীচে নিরন্তর ভেদ ঘটতে পারে তারই বিস্ময়ের স্মৃতি আজও মনে আছে। যে ঘটনাকে স্বতই সহজ বলে বিনা চিন্তায় ধরে নিয়েছিলুম সেটা নয় এই কথাটা বোধ হয় সেই প্রথম আমার মনকে ভাবিয়ে তুলেছিল। তার পরে বয়স তখন হয়তো বারো হবে (কেউ কেউ যেমন রঙ-কানা থাকে আমি তেমনি তারিখ-কানা এই কথাটি বলে রাখা ভালো) পিতৃদেবের সঙ্গে গিয়েছিলুম ড্যালহৌসি পাহাড়ে। সমস্ত দিন ঝাঁপানে করে গিয়ে সন্ধ্যাবেলায় পৌঁছতুম ডাকবাংলায়। তিনি চৌকি আনিয়ে আঙিনায় বসতেন। দেখতে দেখতে, গিরিশৃঙ্গের বেড়া-দেওয়া নিবিড় নীল আকাশের স্বচ্ছ অন্ধকারে তারাগুলি যেন কাছে নেমে আসত। তিনি আমাকে নক্ষত্র চিনিয়ে দিতেন, গ্রহ চিনিয়ে দিতেন। শুধু চিনিয়ে দেওয়া নয়, সূর্য থেকে তাদের কক্ষচক্রের দূরত্বমাত্রা, প্রদক্ষিণের সময় এবং অন্যান্য বিবরণ আমাকে শুনিয়ে যেতেন। তিনি যা বলে যেতেন তাই মনে করে তখনকার কাঁচা হাতে আমি একটা বড়ো প্রবন্ধ লিখেছি। স্বাদ পেয়েছিলুম বলেই লিখেছিলুম, জীবনে এই আমার প্রথম ধারাবাহিক রচনা, আর সেটা বৈজ্ঞানিক সংবাদ নিয়ে।
তার পরে বয়স আরো বেড়ে উঠল। ইংরেজি ভাষা অনেকখানি আন্দাজে বোঝবার মতো বুদ্ধি তখন আমার খুলেছে। সহজবোধ্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই যেখানে যত পেয়েছি পড়তে ছাড়ি নি। মাঝে মাঝে গাণিতিক দুর্গমতায় পথ বন্ধুর হয়ে উঠেছে, তার কৃচ্ছ্রতার উপর দিয়ে মনটাকে ঠেলে নিয়ে গিয়েছি। তার থেকে একটা এই শিক্ষা লাভ করেছি যে, জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতার পথে সবই যে আমরা বুঝি তাও নয় আর সবই সুস্পষ্ট না বুঝলে আমাদের পথ এগোয় না এ কথাও বলা চলে না। জলস্থল-বিভাগের মতোই আমরা যা বুঝি তার চেয়ে না বুঝি অনেক বেশি, তবুও চলে যাচ্ছে এবং আনন্দ পাচ্ছি। কতক পরিমাণে না-বোঝাটাও আমাদের এগোবার দিকে ঠেলে দেয়। যখন ক্লাসে পড়াতুম এই কথাটা আমার মনে ছিল। আমি অনেক সময়েই বড়োবয়সের পাঠ্যসাহিত্য ছেলেবয়সের ছাত্রদের কাছে ধরেছি। কতটা বুঝেছে তার সম্পূর্ণ হিসাব নিই নি, হিসাবের বাইরেও তারা একরকম করে অনেকখানি বোঝে যা মোটে অপথ্য নয়। এই বোধটা পরীক্ষকের পেনসিলমার্কার অধিকারগম্য নয় কিন্তু এর যথেষ্ট মূল্য আছে। অন্তত আমার জীবনে এইরকম পড়ে-পাওয়া জিনিস বাদ দিলে অনেকখানিই বাদ পড়বে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের সহজ বই পড়তে লেগে গেলুম। এই বিষয়ের বই তখন কম বের হয় নি। স্যার রবর্ট বল-এর বড়ো বইটা আমাকে অত্যন্ত আনন্দ দিয়েছে। এই আনন্দের অনুসরণ করবার আকাঙ্ক্ষায় নিউকোম্ব্স, ফ্লামরিয়ঁ প্রভৃতি অনেক লেখকের অনেক বই পড়ে গেছি – গলাধঃকরণ করেছি শাঁসসুদ্ধ বীজসুদ্ধ। তার পরে এক সময়ে সাহস করে ধরেছিলুম প্রাণতত্ত্ব সম্বন্ধে হক্সলির এক সেট প্রবন্ধমালা। জ্যোতির্বিজ্ঞান আর প্রাণবিজ্ঞান কেবলই এই দুটি বিষয় নিয়ে আমার মন নাড়াচাড়া করেছে। তাকে পাকা শিক্ষা বলে না, অর্থাৎ তাতে পাণ্ডিত্যের শক্ত গাঁথুনি নেই। কিন্তু ক্রমাগত পড়তে পড়তে মনের মধ্যে বৈজ্ঞানিক একটা মেজাজ স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল। অন্ধবিশ্বাসের মূঢ়তার প্রতি অশ্রদ্ধা আমাকে বুদ্ধির উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে আশা করি অনেক পরিমাণে রক্ষা করেছে। অথচ কবিত্বের এলাকায় কল্পনার মহলে বিশেষ যে লোকসান ঘটিয়েছে সে তো অনুভব করি নে।
আজ বয়সের শেষপর্বে মন অভিভূত নব্যপ্রাকৃততত্ত্বে – বৈজ্ঞানিক মায়াবাদে। তখন যা পড়েছিলুম তার সব বুঝি নি। কিন্তু পড়ে চলেছিলুম। আজও যা পড়ি তার সবটা বোঝা আমার পক্ষে অসম্ভব, অনেক বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতের পক্ষেও তাই।
বিজ্ঞান থেকে যাঁরা চিত্তের খাদ্য সংগ্রহ করতে পারেন তাঁরা তপস্বী। – মিষ্টান্নমিতরে জনাঃ, আমি রস পাই মাত্র। সেটা গর্ব করবার মতো কিছু নয়, কিন্তু মন খুশি হয়ে বলে যথালাভ। এই বইখানা সেই যথালাভের ঝুলি, মাধুকরী বৃত্তি নিয়ে পাঁচ দরজা থেকে এর সংগ্রহ।
পাণ্ডিত্য বেশি নেই সুতরাং সেটাকে বেমালুম করে রাখতে বেশি চেষ্টা পেতে হয় নি। চেষ্টা করেছি ভাষার দিকে। বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ শিক্ষার জন্যে পারিভাষিকের প্রয়োজন আছে। কিন্তু পারিভাষিক চর্ব্যজাতের জিনিস। দাঁত-ওঠার পরে সেটা পথ্য। সেই কথা মনে করে যতদূর পারি পরিভাষা এড়িয়ে সহজ ভাষার দিকে মন দিয়েছি।
এই বইখানিতে একটি কথা লক্ষ্য করবে – এর নৌকোটা অর্থাৎ এর ভাষাটা যাতে সহজে চলে সে চেষ্টা এতে আছে কিন্তু মাল খুব বেশি কমিয়ে দিয়ে একে হালকা করা কর্তব্য বোধ করি নি। দয়া করে বঞ্চিত করাকে দয়া বলে না। আমার মত এই যে, যাদের মন কাঁচা তারা যতটা স্বভাবত পারে নেবে, না পারে আপনি ছেড়ে দিয়ে যাবে, তাই বলে তাদের পাতটাকে প্রায় ভোজ্যশূন্য করে দেওয়া সদ্ব্যবহার নয়। যে-বিষয়টা শেখবার সামগ্রী, নিছক ভোগ করবার নয়, তার উপর দিয়ে অবাধে চোখ বুলিয়ে যাওয়াকে পড়া বলা যায় না। মন দেওয়া এবং চেষ্টা করে বোঝাটাও শিক্ষার অঙ্গ, সেটা আনন্দেরই সহচর। নিজের যে-শিক্ষার চেষ্টা বাল্যকালে নিজের হাতে গ্রহণ করেছিলুম তার থেকে আমার এই অভিজ্ঞতা। এক বয়সে দুধ যখন ভালোবাসতুম না, তখন গুরুজনদের ফাঁকি দেবার জন্যে দুধটাকে প্রায় আগাগোড়া ফেনিয়ে বাটি ভরতি করার চক্রান্ত করেছি। ছেলেদের পড়বার বই যাঁরা লেখেন, দেখি তাঁরা প্রচুর পরিমাণে ফেনার জোগান দিয়ে থাকেন। এইটে ভুলে যান, জ্ঞানের যেমন আনন্দ আছে তেমনি তার মূল্যও আছে, ছেলেবেলা থেকে মূল্য ফাঁকি দেওয়া অভ্যাস হতে থাকলে যথার্থ আনন্দের অধিকারকে ফাঁকি দেওয়া হয়। চিবিয়ে খাওয়াতেই একদিকে দাঁত শক্ত হয় আর-একদিকে খাওয়ার পুরো স্বাদ পাওয়া যায়, এ বই লেখবার সময়ে সে কথাটা সাধ্যমতো ভুলি নি।
শ্রীমান প্রমথনাথ সেনগুপ্ত এম. এসসি. তোমারই ভূতপূর্ব ছাত্র। তিনি শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান-অধ্যাপক। বইখানি লেখবার ভার প্রথমে তাঁর উপরেই দিয়েছিলেম। ক্রমশ সরে সরে ভারটা অনেকটা আমার উপরেই এসে পড়ল। তিনি না শুরু করলে আমি সমাধা করতে পারতুম না, তাছাড়া অনভ্যস্ত পথে শেষ পর্যন্ত অব্যবসায়ীর সাহসে কুলোত না তাঁর কাছ থেকে ভরসাও পেয়েছি সাহায্যও পেয়েছি।
আলমোড়ায় নিভৃতে এসে লেখাটাকে সম্পূর্ণ করতে পেরেছি। মস্ত সুযোগ হল আমার স্নেহাস্পদ বন্ধু বশী সেনকে পেয়ে। তিনি যত্ন করে এই রচনার সমস্তটা পড়েছেন। পড়ে খুশি হয়েছেন এইটেতেই আমার সব চেয়ে লাভ।
আমার অসুখ অবস্থায় স্নেহাস্পদ শ্রীযুক্ত রাজশেখর বসু মহাশয় যত্ন করে প্রুফ সংশোধন করে দিয়ে বইখানি প্রকাশের কাজে আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন; এজন্য আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
শান্তিনিকেতন
২রা আশ্বিন ১৩৪৪
———————
পড়ুন
বিশ্বপরিচয়ের প্রথম অধ্যায়
পরমাণুলোক
—————–
আমাদের সজীব দেহ কতকগুলি বোধের শক্তি নিয়ে জন্মেছে, যেমন দেখার বোধ, শোনার বোধ, ঘ্রাণের বোধ, স্বাদের বোধ, স্পর্শের বোধ। এইগুলিকে বলি অনুভূতি। এদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের ভালোমন্দ-লাগা, আমাদের সুখদুঃখ।
আমাদের এই-সব অনুভূতির সীমানা বেশি বড়ো নয়। আমরা কতদূরই বা দেখতে পাই, কতটুকু শব্দই বা শুনি। অন্যান্য বোধগুলিরও দৌড় বেশি নয়। তার মানে আমরা যেটুকু বোধশক্তির সম্বল নিয়ে এসেছি সে কেবল এই পৃথিবীতেই আমাদের প্রাণ বাঁচিয়ে চলার হিসাবমত। আরো কিছু বাড়তি হাতে থাকে। তাতেই আমরা পশুর কোঠা পেরিয়ে মানুষের কোঠায় পৌঁছতে পারি।
যে নক্ষত্র থেকে এই পৃথিবীর জন্ম, যার জ্যোতি এর প্রাণকে পালন করছে সে হচ্ছে সূর্য। এই সূর্য আমাদের চার দিকে আলোর পর্দা টাঙিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীকে ছাড়িয়ে জগতে আর যে কিছু আছে তা দেখতে দিচ্ছে না। কিন্তু দিন শেষ হয়, সূর্য অস্ত যায়, আলোর ঢাকা যায় সরে; তখন অন্ধকার ছেয়ে বেরিয়ে পড়ে অসংখ্য নক্ষত্র। বুঝতে পারি জগৎটার সীমানা পৃথিবী ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে গেছে। কিন্তু কতটা যে দূরে তা কেবল অনুভূতিতে ধরতে পারি নে।
সেই দূরত্বের সঙ্গে আমাদের একমাত্র যোগ চোখের দেখা দিয়ে। সেখান থেকে শব্দ আসে না, কেননা, শব্দের বোধ হাওয়ার থেকে। এই হাওয়া চাদরের মতোই পৃথিবীকে জড়িয়ে আছে। এই হাওয়া পৃথিবীর মধ্যেই শব্দ জাগায়, এবং শব্দের ঢেউ চালাচালি করে। পৃথিবীর বাইরে ঘ্রাণ আর স্বাদের কোনো অর্থই নেই। আমাদের স্পর্শবোধের সঙ্গে আমাদের আর-একটা বোধ আছে, ঠাণ্ডা-গরমের বোধ। পৃথিবীর বাইরের সঙ্গে আমাদের এই বোধটার অন্তত এক জায়গায় খুবই যোগ আছে। সূর্যের থেকে রোদ্দুর আসে, রোদ্দুর থেকে পাই গরম। সেই গরমে আমাদের প্রাণ। সূর্যের চেয়ে লক্ষ গুণ গরম নক্ষত্র আছে। তার তাপ আমাদের বোধে পৌঁছয় না। কিন্তু সূর্যকে তো আমাদের পর বলা যায় না। অন্য যে-সব অসংখ্য নক্ষত্র নিয়ে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, সূর্য তাদের মধ্যে সকলের চেয়ে আমাদের আত্মীয়। তবু মানতে হবে, সূর্য পৃথিবীর থেকে আছে দূরে। কম দূরে নয়, প্রায় ন’কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল তার দূরত্ব। শুনে চমকে উঠলে চলবে না। যে ব্রহ্মাণ্ডে আমরা আছি এখানে ঐ দূরত্বটা নক্ষত্রলোকের সকলের চেয়ে নীচের ক্লাসের। কোনো নক্ষত্রই ওর চেয়ে পৃথিবীর কাছে নেই।
এই-সব দূরের কথা শুনে আমাদের মনে চমক লাগে তার কারণ জলে মাটিতে তৈরি এই পিণ্ডটি, এই পৃথিবী, অতি ছোটো। পৃথিবীর দীর্ঘতম লাইনটি অর্থাৎ তার বিষুবরেখার কটিবেষ্টন ঘুরে আসবার পথ প্রায় পঁচিশ হাজার মাইল মাত্র। বিশ্বের পরিচয় যতই এগোবে ততই দেখতে পাবে জগতের বৃহত্ত্ব বা দূরত্বের ফর্দে এই পঁচিশ হাজার সংখ্যাটা অত্যন্ত নগণ্য। পূর্বেই বলেছি আমাদের বোধশক্তির সীমা অতি ছোটো। সর্বদা যেটুকু দূরত্ব নিয়ে আমাদের কারবার করতে হয় তা কতটুকুই বা। ঐ সামান্য দূরত্বটুকুর মধ্যেই আমাদের দেখার আমাদের চলাফেরার বরাদ্দ নির্দিষ্ট।
কিন্তু পর্দা যখন উঠে গেল, তখন আমাদের অনুভূতির সামান্য সীমানার মধ্যেই বৃহৎ বিশ্ব নিজেকে নিতান্ত ছোটো করে একটুখানি আভাসে জানান দিলে, তা না হলে জানা হতই না; কেননা, বড়ো দেখার চোখ আমাদের নয়। অন্য জীবজন্তুরা এইটুকু দেখাই মেনে নিলে। যতটুকু তাদের অনুভূতিতে ধরা দিল ততটুকুতেই তারা সন্তুষ্ট হল। মানুষ হল না। ইন্দ্রিয়বোধে জিনিসটার একটূ ইশারা মাত্র পাওয়া গেল। কিন্তু মানুষের বুদ্ধির দৌড় তার বোধের চেয়ে আরো অনেক বেশি, জগতের সকল দৌড়ের সঙ্গেই সে পাল্লা দেবার স্পর্ধা রাখে। সে এই প্রকাণ্ড জগতের প্রকাণ্ড মাপের খবর জানতে বেরল, অনুভূতির ছেলেভুলোনো গুজব দিলে বাতিল করে। ন’কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইলকে আমরা কোনোমতেই অনুভব করতে পারি নে, কিন্তু বুদ্ধি হার মানলে না, হিসেব কষতে বসল।
প্রমথনাথ সেনগুপ্ত ও রবীন্দ্রনাথের লেখার অংশ তুলে দেওয়া যাক। তুলনা করে দেখুন–
১. প্রমথনাথের লেখা পাণ্ডুলিপি থেকে–
———————————————-
অনেক আশ্চর্য ও অসম্ভব কথা তোমরা পড়ে ও শুনে থাক। তোমাদের কল্পনা করার শক্তি যদি তাকে না জেনে নেয় তা হলে মনে হবে যে, এ কথা অসম্ভব, এ হতে পারে না। সকলের চিন্তা করার ক্ষমতা এক নয়, তাই তোমার আমার কাছে যা অসম্ভব ও আশ্চর্য বলে মনে হয় আর একজন হয়ত তা খুবই স্বাভাবিক বলে মেনে নেয়। সত্য যে কল্পনাকে কতদূর ছাড়িয়ে যায় তা আজকাল বিজ্ঞানে যুগে প্রতি পদেই আমরা (টের পাই)। Aeroplane সৃষ্টি হওয়ার আগে ‘মানুষ আকাশে উড়ে বেড়াবে;’ এর কল্পনাও ছিল আমাদের কাছে অত্যন্ত অসম্ভব। কিন্তু বৈজ্ঞানিক যখন তাঁর যন্ত্রের সব বুঝিয়ে দিয়ে আমাদের বলেন যে, এভাবে আকাশে ওড়া তো খুবই সোজা ও স্বাভাবিক, তখন আমাদের মন তাতে সাড়া দেয়–’হ্যা সত্যিই, এতো এমন কিছু আশ্চর্য নয়, এ খুবই সোজা।’ আজ যখন বৈজ্ঞানিক পৃথিবী থেকে চন্দ্র ও মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার জন্য rocket নামে এক যন্ত্রের সৃষ্টি করতে ব্যস্ত, তখন আমরা ঘরের কোণে বসে হেসে বলছি ‘ একি কখনো সম্ভব হয়? এ শুধু পাগলামী?”
কিন্তু যেদিন এ সম্ভব হবে, চোখের সামনে আমরা যেদিন দেখব মানুষ এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে যাতায়াত করছে, সেদিন আমরাই মাথা নেড়ে বলব, এতো এমন কিছু শক্ত কাজ নয়। সত্য বুঝতে হলে আমাদের কোনো জিনিসই অসম্ভব বলে উড়িয়ে দিলে চলবে না। স্থির হয়ে আমাদের ভাবতে হবে, বুঝতে হবে। তোমাদের কাছে আজ গ্রহ, নক্ষত্র, সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবী, জীব, জন্তু এদের সম্বন্ধে আমার….’
রবীন্দ্রনাথের বিশ্বপরিচয় থেকে পড়ুন
—————————————-
‘সূর্য আমাদের জগতের চারিদকে একটা আলোর পর্দা খাটিয়ে দিয়েছে। পৃথিবী ছাড়িয়ে আর যে কিছু আছে মানুষকে তা দেখতে দিচ্ছে না। ভাগ্যক্রমে দিন শেষ হয়, সূর্য অস্ত যায়, আলোর আবরণ সরে যায়, তখন অন্ধকার ছেয়ে প্রকাশ পায় নক্ষত্রলোক। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কি যে চেহারা হয় তা আমাদের চোখে তখন ধরা পড়ে। এ বিশ্ব যতই প্রকাণ্ড বড় ততই অত্যন্ত ছোট হয়ে আমাদের কাছে দেখা দিয়েচে। নইলে সমস্তটার মোটামুটির পরিচয় পেতুম কী করে। হিমালয় পর্বতটা কি রকম তা জানবার জন্যে তার যে ছবি আঁকা হয়, একটা বইয়ের পাতার মধ্যেই তা ধরে। কিন্তু হিমালয়কে যদি একেবারে সামনে এনে দেখাতে চাই তাহলে সমস্ত বাংলাদেশটা চাপা পড়বে এবং হিমালয়ের সামান্য এক অংশের বেশি দেখতে পাব না।
তেমনি বিশ্বের আয়তনকে কতই ছোটো করে প্রত্যেক রাত্রে আমাদের গোচর করা হয়েছে কিছু পরিমাণ তার আভাস পেতে হলে সূর্যের দৃষ্টান্তটা মনে আনা চাই। ভোরবেলায় সূর্য পূর্বদিকসীমানার ধারে যখন প্রকাশ পায় তখন তাকে একটি সোনার থালার মতো দেখতে হয়। তার থেকে আর কিছু না হোক বুইঝতে পারি সূর্য গোলাকার। অথচ প্রায় চোদ্দ লক্ষ পৃথিবী একত্র করলে তবে সূর্যের আয়তনের সমান হতে পারে। সমস্ত সূর্য যদি আমাদের কাছে থাকত তাহলে সমস্ত সূর্যের রূপ আমরা জানতেই পারতাম না। যা আমারদের চেয়ে অত্যন্ত বড়ো তাকে আমরা যতটুকু চিনতে পারি সে দূরের থেকে।’
এ দুটি লেখা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ও বিজ্ঞানগ্রন্থের লেখক দিপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলছেন–
———————————-
যদি বলি, রবীন্দ্রনাথের লেখা এই অনুচ্ছেদটি প্রমথনাথের রচনারই ঘষামাজা চেহারা, তবে সত্যের অপলাপ হবে। বস্তুত দুটি রচনাংশের বৈদগ্ধের কোনো তুলনাই হয় না এবং তাদের বক্তব্যের মধ্যেও কোনো মিল নেই। এমনকী প্রমথনাথের ভাষা যে যথেষ্ট সহজ নয় তাও বলা যায় না। সমস্যাটা আরও অনেক বেশি গভীর। কবি রবীন্দ্রনাথ এবং পার্থবিদ্যার তরুণ অধ্যাপক প্রমথনাথ, এই দুজনের মধ্যে চিন্তার গভীরতার যতখানি তফাৎ, বিজ্ঞানকে বোঝার ব্যাপারেও তফাৎ ততখানি।
তাহলে রবীন্দ্রনাথ কীভাবে প্রমথনাথের বইটি রাহাজানি করে নিজের নামে ছাপিয়েছেন? এই রাহাজানির অভিযোগটি কি ধোপে টেকে?
সূত্র :
১. রবিজীবনী--প্রশান্তকুমার পাল
২.রবিজীবনকথা--প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
৩. রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়স্বজন -- সমীর সেনগুপ্ত
৪. দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়-- রবীন্দ্রনাথ ও বিজ্ঞান
৫. রঙের রবীন্দ্রনাথ --কেতকী কুশারী ডাইসন ও সুশোভন সরকার
৬. [url= http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=18247]রবি ঠাকুর, রাহাজানি এবং রবীন্দ্র পূজারীবৃন্দ [/url]: ফরিদ আহমেদ ও অভিজিৎ রায় :
৭. 'আমি কোথায় পাব তারে' থেকে 'আমার সোনার বাংলা' --কুলদা রায় ও এমএমআর জালাল :
৮. এইখানে গান নিয়া আলাপ চলিতেছে --কুলদা রায়
মন্তব্য
ভালো লাগলো এই পর্বটি।যারা অভিযোগটি করেছেন তারা যে যথেষ্ট পড়াশুনা করেননি সে স্পষ্ট হয়েছে আগেই।এমনিতে অভিজিৎের লেখা ভালো লাগে।আরেকটু দায়িত্বশীলতা আশা করেছিলাম উনার কাছ থেকে।
এই পর্বটা দারুণ লাগলো। অনেক তথ্য অজানা ছিল।
তবে প্রমথনাথের ভাষাও বেশ ঝরঝরে লেগেছে
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
প্রমথনাথের লেখা কিন্তু উন্নত হয়েছিল। হাতে কলমে ট্রেনিংটা রবীন্দ্রনাথ ভালোই দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালের লেখাগুলোও সুখপাঠ্য হয়েছিল।
একটা বিষয় আমাকে আকর্ষণ করেছে। সেটা হল রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে যারাই এসেছেন তারাই কিন্তু লিখেছেন। তাদের লেখাও সুখপাঠ্য। রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী তো বাংলা ইংরেজী দুভাষাতেই লিখতে পারতেন। অবনীন্দ্রনাথ সুন্দর করে কথা বলতেন। রবীন্দ্রনাথ তাকে বলেছিলেন, তুমি লেখা শুরু কর। তোমার কথা বলার স্টাইলেই লেখো। আমি তোমাকে দেখিয়ে দেব দুর্বলতাগুলো। অবনীন্দ্রনাথের লেখা অসাধারণ হয়ে উঠেছিল। একটা তথ্য পাচ্ছি। শিলাইদহের সেরেস্তায় একজন কর্মচারী কিছু লিখতেন। রবীন্দ্রনাথকে দেখিয়েছিলেন। রবীন্দ্র পড়ে সংশোধন করেছিলেন তার লেখাও সুন্দর হয়েছিল। আমার একটা পরিকল্পনা আছে--রবীন্দ্রসান্নিধ্যে যারা লিখেছেন, লেখা শিখেছেন--তাদের নিয়ে একটা লেখা করব।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
আমাদের শুধু বিশ্বাস ছিল যে চুরি করে রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না; তবে তাকে প্রতিষ্ঠিত করার মত যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ ছিল না। কিন্তু আপনি কাজটি করলেন এবং করতে যেয়ে অনেক পরিশ্রম করলেন। সেজন্য বিশাল একটা ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য। তবে আপনি অন্য লেখকদের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত না হলেই পারতেন; কারণ প্রচলিত ধারাকে চ্যালেঞ্জ করার অধিকার সবারই আছে। লেখার সৌন্দর্যের মাধ্যমেই তাকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করা যায়, যেমনটা আপনি আজ করেছেন। এমনিতেই চারদিকে কলহের অন্ত নেই যার থেকে মুক্তি পেতে ব্লগে ঢুকি; কিন্তু সেখানেও যদি একই কান্ড ঘটতে থাকে, তাহলে হাস-ফাস করা ছাড়া আর উপায় থাকে না!
ধন্যবাদ।
আমি প্রচলিত ধারায় লেখালেখি শিখিনি। আর প্রবন্ধ লিখতেও পারিনা। এটা আমার অযোগ্যতা। এ বিষয়ে আমার সহলেখক আমার সঙ্গে যোগ দেওয়ার লেখার স্টাইলটাতে পরিবর্তন আসছে। সেটা অব্যহত থাকবে। আমরা চেষ্টা করেছি মূল পোস্টে ব্যক্তি নিরপেক্ষ থাকতে। সেটা ১০০% করতে একটু সময় লাগছে। তবে হবে। ধন্যবাদ আপনাকে।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
চমৎকার! থামতে মানা...
আপনি বলেছেন প্রমথনাথের পান্ডুলিপি প্রকাশ হয়েছে বই হয়ে ও তার নামও লিখেছেন। এই তথ্য কোথায় পেয়েছেন একটু জানাবেন কি - রেফারেন্স? প্রথম কয়েক প্যারা পড়ে মনে হল আপনি তখন সবার মনের অবস্থা জানতেন - এটা যেন গল্প হয়ে গেল, প্রবন্ধ নয় - আপনার মনের কথা আপনি তাদের উপর আরোপ করে পারিপার্শিকতা সাজিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ তাকে লেখা বন্ধ করে দিতে বলেছেন এ তথ্য আপনি কোথায় পেলেন - রেফারেন্স? এ দুটো বিষয়ে গ্রহনযোগ্য রেফারেন্স দেন প্লিজ - বই ও পেজ নাম্বার। তাহলেই কেস সল্ভড। যদি না দিতে পারেন তাহলে এ পুরো লেখাটার কোনো মুল্য নেই। রবীন্দ্রনাথ মহাকবি ছিলেন, এর বাইরে তাকে এনে বিশাল কিছু বানানো অন্ধভক্তির নমুনা।
আমার কমেন্টে একটু ভুল আছে। রবীন্দ্রনাথ প্রমথনাথকে শুধু তালিম দেওয়ার জন্য লেখা চালিয়ে যেতে বলেছেন এটার রেফারেন্সের কথা আমি জানতে বলেছি। যুক্তিখন্ডনের খাতিরে এটা আপনি মনে করেন সেটা আমি বুঝতে পারছি।
রবীন্দ্রনাথ তালিম দেওয়ার জন্য অনেককেই লেখা চালিয়ে যেতে বলেছেন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে যেমন বলেছেন--তেমন তার সেরেস্তার কর্মচরী হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বলেছেন। রবীন্দ্রনাথের তালিম পেয়ে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৩০ বছর ধরে লেগে থেকেছেন। তারপর তিনি সমাপ্ত করতে পেরেছেন--তার অসাধারণ গ্রন্থ বঙ্গীয় শব্দকোষ।
প্রমথনাথ সেনগুপ্ত যখন তার প্রতিশ্রুত লেখাটি শেষ করলেন, রবীন্দ্রনাথের হাতে পাণ্ডলিপিটি দিলেন, তখন প্রমথনাথ রবীন্দ্রনাথকে বললেন, 'বইখানা লেখার ভার আমার উপরে দিয়েছিলেন, কাজ সম্পূর্ণ করে আপনার হাতে দিয়েছি, পরবর্তী ব্যবস্থার ভার আপনার, আপনি যে-ব্যবস্থা করবেন তাতেই আমি তুষ্ঠ, ক্ষুণ্ন হবো কেন।'
তার অর্থ কি দাঁড়ায়? রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পনা মতো, সরবারহকৃত বইপত্রিকার সহযোগিতা অনুসারে এবং তালিমঅনুসারে, ঘষামাজা-সংশোধন অনুসরণ করে পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন তিনি--কিন্তু সেটা যখন বিশেষজ্ঞ গ্রুপ দেখলেন--রবীন্দ্রনাথ নিজে পড়লেন তখন কিন্তু বুঝতে পারছেন, প্রমথনামের রচনাটি একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে বটে--তার মানও খারাপ নয়, তবে রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পনাকে তুষ্ট করতে পারেনি। বিজ্ঞানের তথ্যের সঙ্গে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞানের ঘাটতি আছে। সেকারণে রবীন্দ্রনাথ আলমোড়া থেকে প্রমথনাথকে চিঠি লিখে অনুরোধ করছেন, এই পাণ্ডুলিপি অনুসরণ করেই পৃথ্বী-পরিচয় লেখা শুরু করতে। তার পরিকল্পনাও করে দিচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ। তারপর রবীন্দ্রনাথ লিখছেন--তার বিশ্বপরিচয়টি। আর প্রমথনাথ লিখছেন পৃথ্বী-পরিচয়টি। সেটা লেখা শেষ হলে রবীন্দ্রনাথের নির্দেশেই লোকশিক্ষা গ্রন্থমালার অন্তর্গত হয়েই প্রকাশিত হয় প্রমথনাথের স্বাক্ষরে। এটা তার কাজের স্বীকৃতি।
একটা তথ্য দেখুন রবীন্দ্রনাথের ন'দিদি স্বর্ণকুমারী দেবী ১৮৮২ সালের সেপ্টেম্বরে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ পৃথিবী প্রকাশিত হয়। তবে রবীন্দ্রনাথ ন'দিদির লেখালেখিকে উচ্চপর্যায়ের মনে করেননি। এবং দেখুন, সুকুমার রায়ের পিতা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী যখন বিজ্ঞানবিষয়ক একটি প্রবন্ধ লেখেন--তার ভাষা রবীন্দ্রনাথ পছন্দ করেননি। ত্রুটিগুলো নিয়ে লিখেছেন।
জগদানন্দ রায়ের উদাহরণ দিয়েছি মূল পোস্টে।
রেফারেন্স সবই সংযুক্ত আছে। দেখুন--রবীন্দ্রনাথ ও বিজ্ঞান, আনন্দস্বরূপম, রবিজীবনী।
আপনাকে ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
আপনার পর্বগুলো ফলো করছিলাম কিন্তু আগের দুটো পর্বে মন্তব্য করি নি, করার মত কারণও ছিল না তেমন। তবে এ পর্বটা পড়ে খুব ভালো লাগলো এবং বলতে বাধ্য হবো আপনি খুব চমৎকার একটা সিরিজ লিখেছেন। প্রথম পর্বের ভূমিকাটায় কিছু বিষয় কাটছাট করলে (বুঝতেই পারছেন কোন বিষয়গুলো বোঝাচ্ছি), এই সিরিজটা সচলায়তনের সেরা সিরিজগুলোর একটি হয়ে থাকবে।
আগের দুই পর্বেই আমি একতারা দিয়েছি। এই পর্বে পাঁচ তারা।
টুইটার
এই বিতর্কটি খুব সহজেই শেষ করা যায় ও যেতো। তা হচ্ছে প্রমথনাথের লেখা 'পৃথ্বিপরিচয়' বইটি যদি কারোর কাছে থাকে দয়া করে স্ক্যান করে আপলোড করে দিন। এই বিষয়টি নিয়ে মুক্তমনাতেই আলোচনা হয়েছে বিশদ ভাবে। এই লেখাতেও নুতন কিছু নেই। মুক্তমনাতে লেখক যা মন্তব্য করেছিলেন সেগুলোকেই এখন লেখা হিসেবে দেওয়া হয়েছে, তবে আরেকটু বিষদ ভাবে।
সমস্যা হচ্ছে প্রমথনাথের বইটি ছাড়া এই আলোচনা করে লাভ নেই। বইটি থাকলে খুব সহজেই বই দু'টি পড়ে বুঝা যেতো রবীন্দ্রনাথ কি আসলেই সম্পূর্ণ নুতন করে লিখেছেন নাকি প্রমথনাথের বইয়ের উপরেই ঘষামাজা করেছেন। যদি দ্বিতীয়টি হয় সে ক্ষেত্রে প্রমথনাথকে সহলেখক হিসেবে রাখা রবীন্দ্রনাথের উচিত ছিল। আর যদি সম্পূর্ণ নুতন করে লিখে থাকেন তবে তো কথাই নেই।
প্রমথনাথ বাবু যে বইটি পুরো শেষ করে কবির হাতে তুলে দিয়েছিলেন সে কথা দীপঙ্কর বাবুর লেখা বইয়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।
তাই মূল প্রশ্ন এক জায়গাতেই ঘুরপাক খাচ্ছে তা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ কি সম্পূর্ণ নুতন করে শুরু করেছিলেন নাকি প্রমথনাথ বাবুর পান্ডুলিপি কাজে লাগিয়ে লিখেছিলেন। এই লেখায় লেখক দীপঙ্করবাবুর বই থেকে যে অংশ তুলে দিয়েছেন তা দিয়ে সেটা পরিষ্কার নয়। তাই প্রমথনাথ বাবুর বইটি কারো কাছে থাকলে আপলোড করে দিন, ল্যাঠা চুকে যায়।
রবীন্দ্রনাথ সম্পূর্ণ নতুন করে বিশ্বপরিচয় লেখা শুরু করেছিলেন। এই তথ্যটি আছে। আপনি পড়ুন প্রশান্তপালের রবিজীবনী। সেখানে পাবেন।
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় তার রবিজীবনকথা গ্রন্থে লিখেছেন, প্রমথনাথের পাণ্ডলিপি আদ্যান্ত পাঠ করিয়া কবির মনে হইল ভাষার দিক হইতে জটিল বিষয়গুলিকে আরো সরল করা প্রয়োজন। তজ্জন্য স্থির করিলেন পাণ্ডুলিপিকে নতুন রূপ দিবেন। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান সহজসাধ্য নহে, তদ্বিষয়ক গ্রন্থগুলিও সহজ ও সুখপাঠ্য নহে। কবি পশ্চাৎপদ না হইয়া স্বয়ং আধুনিক বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থসমুহ পাঠে প্রবৃত্ত হইলেন। গাড়ি ভরিয়া বিজ্ঞানের বই চলিল আলমোড়ায়। অতঃপর স্থির করিলেন আলমোড়া-বাসকালে স্বয়ং বিশ্বপরিচয় নূতন করিয়া লিখিবেন।
দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন--আধুনিক বিজ্ঞানের বই কবি বহুকাল ধরে পড়ে আসছেন। প্রমথনাথকেও সে ধরনের বই পড়তে দিয়েছেন।
প্রমথনাথ সেনগুপ্তর আনন্দরূপম বইটির প্রকাশক বসুমতি, কোলকাতা। ওখান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
ওখান থেকে সংগ্রহ করতে পারলে তো স্ক্যান কপির কথা বলতাম। তবে হতাশ হলাম আপনাদের কাছে নেই দেখে। এই সিরিজ দেখে ভাবলাম আপনাদের কাছে জলিল সাহেবের ট্রাম কার্ড রয়েছে। দেখা গেল সেই দীপঙ্করবাবুর লেখাই আপনার ভরসা। লেখার অনেক স্থলে ভাষাটাও দীপঙ্করবাবুর বইয়ের ভাষাই হয়ে গেছে। দীপঙ্কর বাবুর বই নিয়ে বেশি বলার নেই। দীপঙ্কর বাবুর বইতেই স্পষ্ট করে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে প্রমথনাথ বাবু বইটা শেষ করে রবীন্দ্রনাথের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। বইটা রবীন্দ্রনাথ তাকে দিয়েও লেখাতে চেয়েছেন সেটাও আছে, আবার তিনি যে মত বদলেছেন সেটাও উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তারপরেও যুক্তি কি যে "Babu changes his mind"। তাই তিনি ও কুলদা রায় সহজেই সিদ্ধান্তে আসতে পারেন যে শেষ পর্যন্ত তিনি যা করেছেন তা ঠিকই করেছেন। কারণ ব্যক্তিটি রবীন্দ্রনাথ।
একটা ছবি আপলোড করতে চাইলাম, কিন্তু হলো না । দীপঙ্করবাবুর বই থেকে স্ক্যান করা অংশটুকু আপলোড করতে চাইলাম। সেটা অবশ্য কুলদা রায় মুক্তমনার লেখাতেই আপলোড করেছেন কমেন্ট হিসেবে। আগ্রহী পাঠক চাইলে সেই অংশটুকু দেখে নিতে পারেন।
হা হা হা। অন্ধকারে ঢিল ছোড়া। আপনার টিপ ঠিক নেই।
আপনি গান শোনোন--লিংক।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
ছবিটি এম্বেড করে দিলাম।
ফ্লিকরের শেয়ার অপশনে এইচটিএমেল কোড পাওয়া যায়, সেখান থেকে।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
অনেক ধন্যবাদ। আমিও ফ্লিকারে আপলোড করেই চেষ্টা করছিলাম। অবশ্য আমি শুধু লিঙ্ক দিচ্ছিলাম, এইচটিএমেল কোড দেইনি। যা হোক এই বার শিখলাম
এই স্ক্যান আমার করা। মুক্তমনায় মন্তব্যে আপলোড করে দিয়েছিলাম।
এখানে লেখকদ্বয় যখন বিশ্বপরিচয় বইটি রবীন্দ্রনাথকে চুরি এবং রাহাজানিকারী হিসাবে দায়ী করে পোস্ট দিয়েছিলেন, তখন পোস্টটির বিশ্বপরিচয় অংশটি পড়ে বুঝতে পেরেছিলাম--তারা দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের রবীন্দ্রনাথ ও বিজ্ঞান বই থেকে তথ্য নিয়েছেন। বইটিতে বিশ্বপরিচয় শিরোণামে অষ্টম আধ্যায় আছে। পৃষ্ঠা সংখ্যা শুরু হয়েছে ১৭৩ থেকে, শেষ হয়েছে ৩১১ পৃষ্ঠায়। অষ্টম অধ্যায়ের সূচিটি নিম্নরূপ--
৮.১ জনৈক অধ্যবসায় ও তার তরুণ সাহায্যকারী--২৭৩
৮.২ বিজ্ঞানগ্রন্থ রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ
৮.৩ ভাষা এবং রচনাশৈলী
৮.৪ বিশ্বপরিচয় এবং বিজ্ঞানশিক্ষক রবীন্দ্রনাথ
৮.৫ বিজ্ঞানসাহিত্য হিসাবে বিশ্বপরিচয় এর স্থান
৮.৬ বিশ্বপরিচয় এবং রবীন্দ্রনাথের বিশ্বদৃষ্টি
উল্লেখপঞ্জী।
দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের এই বইটি একটি আকর গ্রন্থ। এই বই থেকে উক্ত লেখকদ্বয় তথ্যের পূর্ণাঙ্গতা রক্ষা করেননি। তারা তথ্যকে ট্যুইস্ট করে ব্যবহার করেছেন। তথ্যকে বিকৃত করেছেন। তথ্যের সততাকে ক্ষুণ্ন করেছেন। একজন সৎ লেখক যখন একটি তথ্যকে সৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চান--তখন তথ্যের পূর্ণাঙ্গ অবয়বের দিকেই অনুসন্ধান করেন। তাকে খণ্ডিতরূপে ব্যবহার করেন না। খণ্ডিতরূপে ব্যবহার করলে লেখক অসৎ হয়ে পড়েন। রবীন্দ্রনাথকে চোর বানানোর জন্য বইটি থেকে তারা খণ্ডিতরূপে তথ্যাংশ ব্যবহার করেছেন। তারা প্রমথনাথের রেফারেন্স দিচ্ছেন--কিন্তু তারা প্রমথনাথের পাণ্ডুলিপি এবং রবীন্দ্রনাথের বিশ্বপরিচয় বইটির লেখা থেকে উদ্ধৃতি দেন নাই। হাইড করে গেছেন। এদুটি লেখা একটু মিলিয়ে দেখলেই দুটো লেখারই পার্থক্যটা ধরা পড়ে। যখন এই প্রতারণাটি দেখতে পেলাম--তখন অই বই থেকেই দুজনের লেখা থেকে স্ক্যান করে প্রমাণ হিসাবে দাখিল করলাম মন্তব্যে। তখন তো পুরো বেলুন ফুটো হয়ে গেছে। তখন বেশ কড়া গলায় বলা হল--কেনো আমি স্ক্যান করে পেজ তুলে দিচ্ছি? বোঝেন!
সে সময় নানা বই তন্ন করে তন্ন করে খুজে দেখলাম, লেখকদ্বয় অই পোস্টটি লেখার জন্য খুবই কম পড়াশোনা করেছেন। ব্যবহার করেছেন অই একটিমাত্র বই-ই। প্রমথনাথ সেনগুপ্তর আনন্দরূপম বইটি তারা চোখেই দেখেননি। ঘটনাচক্রে বইটি আমাদের কাছে আছে। পড়ে প্রচুর হেসেছি। এরপরে যেটা ঘটল, লেখকদ্বয় প্রমাদ গুনলেন। তার গুণমুগ্ধ অনুসারীগণ ক্যাচাল লাগিয়ে দিলেন। প্রচুর গালিগালাজ করলেন। কুলদা রায়ের গুষ্টি উদ্ধার করে দিলেন। একজন লেখক আবার কুলদা রায়ের আত্মীয়স্বজনদের ধরে টান দিলেন। বোঝা গেল যুক্তি খোঁড়াতে শুরু করেছে শুধু নয়--মুখ থুবড়ে পড়েছে। অক্ষমের মুখব্যাদানে পরিণত হয়েছে। তারপর বুদ্ধির মুক্তির আন্দোলনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কুলদা রায়ের পোস্টকে এডমিনের আওতায় নিয়ে গেলেন। কুলদা রায়কে আর মন্তব্য করার সুযোগ দিলেন না। কিন্তু কুলদা রায়কে গালি দিয়ে মন্তব্য করলে সেটা প্রকাশিত হতে থাকল। তারপর কুলদা রায় গান চুরি নিয়ে একটি প্রামাণ্য ছোট লেখা লিখলেন। সেটা অনেক পাঠক পছন্দ করলেন। কিন্তু লেখাটিকে ঘুরিয়ে দিয়ে কুলদা রায় কেন লেখার সুযোগ পাচ্ছে এটা নিয়ে ক্যাচাল তৈরি হয়ে গেল। সেখানে কুলদা রায় অনুরোধ করেছিলেন--আসেন, এখানে বিষয় নিয়ে কথা বলি। প্রয়োজেনে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ নিয়ে আলাদা নোট দেন সেখানে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলি। দেখা গেল--কুলদাকে মডারেশনের আওতায় নেওয়া হল। কুলদা রায়ের পোস্ট প্রকাশের সুযোগ কেড়ে নেওয়া হল। একটি প্রাতিষ্ঠানিক যুক্তিবাদ একজন অনামী লেখকের যুক্তিকে ভয় পাওয়া শুরু করল। তাকে বাতিল করার সকল ষঢ়'র আয়োজন করা হল। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
প্রসঙ্গ হল, দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় অধিকাংশ তথ্য ব্যবহার করেছেন--প্রশান্ত পালের রবিজীবনী এবং প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের রবীন্দ্রজীবনকথা, রবীন্দ্রজীবনী ও রবীন্দ্রসাহিত্য প্রবেশক, প্রমথনাথের আনন্দরূপম বইটি থেকে।
আমরা এই লেখাটি লেখার সময় এই বইগুলি ব্যবহার করেছি।
প্রশান্ত পালের বইটির একটি বৈশিষ্ট্য হল--সন তারিখ ধরে ধরে রবিজীবনী লেখা আছে। বইটি নয় খণ্ডে। একটু শ্রম দিলেই বইটিতে সকল তথ্য পাওয়া পাওয়া যায়। আরেকটা বইও গুরুত্বপূর্ণ--গোলাম মুরশিদের হাজার বছরের বাঙালি। রবীন্দ্রনাথের আত্মীয়স্বজন বইটি কোষগ্রন্থ। রবীন্দ্রসংশ্লিষ্ট লোকজন বিষয়ে ভুক্তি আকারে তথ্য রয়েছে। আরেকটা বইও গুরুত্বপূর্ণ--সেটা হল কেতকী কুশারী ডাইসনের রঙের রবীন্দ্রনাথ। সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথের নিজের রচনাই তথ্যের ভাল উৎস। আরও কিছু বইপত্রিকা ব্যবহার করা হয়েছে।
আরেকটা তথ্য জানানো যেতে পারে--কুলদা রায় নিয়মিত ব্যবহার করেন নিউ ইয়র্কের একটি বড় লাইব্রেরীর সেন্ট্রাল লাইব্রেরী। আর জালাল ভাই সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন অনেকেই। তিনি চলমান অভিলেখাগার।
সুতরাং স্বাধীন, এভাবে বাগবিস্তার করে লাভ নেই। এখন তথ্যবিশ্ব মানুষের দুর্গম্য নয়। সে কারণে কাউকে তথ্যবিকৃত করে চোর ছ্যাচোড় ঠাউড়ে পার পাওয়া কঠিন। আর রবীন্দ্রনাথতো বিশ্বপরিচয় লেখার সময় ১৮১টি বই প্রকাশ করেছেনই। সে সময় তার রচনাবলী প্রকাশিত হয়েছে। তার বিষয় দেশে বিদেশে বিস্তর বইপত্র লেখা হচ্ছে। পণ্ডিত সাহিত্য রসিক বিজ্ঞানীরা তার সকাশে আসছেন। তারজন্য মামুলি একটা বই চুরি করার দরকার হয় কি?
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
একটু কনফিউজড হয়ে গেলাম। "আনন্দরূপম" বইটিই কি "পৃথ্বিপরিচয়"? কথা হচ্ছিল পৃথ্বিপরিচয় নিয়ে সেখানে আনন্দরূপম কেন আসছে বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছি। এনি ওয়ে, যদি এই দু'টো একই হয়, এবং আপনাদের কাছে থেকেই থাকে তবে স্ক্যান করে আমাদের জন্যে কোথাও আপলোড করে দিন এবং সেটার লিঙ্ক এখানে দিয়ে দিন। জালাল ভাইয়ের নিশ্চয়ই একটা স্ক্যান মেশিন রয়েছে।
প্রমথনাথ সেনগুপ্তর স্মৃতিকথার নাম আনন্দরূপম। আর পৃথ্বিপরিচয় তার লেখা বিজ্ঞানবিষয়ক বই। এখানে কনফিউজড কিছুই নেই দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় তার বইয়ে এই দুটো থেকে তথ্য নিয়েছেন। আনন্দরূপমে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার সম্পর্ক, বিজ্ঞানলেখার হাতেখড়ি, বিজ্ঞান বিষয়ক বই বিশ্বপরিচয়, পৃথ্বিপরিচয় বিষয়গুলো নিয়ে স্মৃতিচারণ আছে। এখানে কনফিউজড হওয়ার কিছু নেই।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
ধন্যবাদ ক্লিয়ার করার জন্যে। আপনাদের সংগ্রহে কি পৃথ্বিপরিচয় বইটা আছে? "আনন্দরূপম" ও "পৃথ্বিপরিচয়" এই বই দু'টো যদি স্ক্যান করে আপলোড করে দিতেন কোথাও তাতে আর অন্যের লেখার উপর ভরসা করতে হয় না। নিজেই পড়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতো। আশা করি এই কষ্টটুকু করতে অনাগ্রহী হবেন না। অগ্রীম ধন্যবাদ দিয়ে রাখলুম বই দু'টোর জন্যে।
আপনার অনুরোধ রক্ষিত হবে যথাকালে।
আমরা এখন রবীন্দ্রনাথের জমিদারি --জমিদারের রবীন্দ্রগিরি'তে প্রবেশ করব। সেখানে অনুসন্ধান করা হবে--রবীন্দ্রনাথ প্রজানিপীড়ক ছিলেন কিনা। বেশ কয়েকটা পর্বে আসবে। এক সঙ্গে দিতে পারলে ভাল হত। তাতে ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তবে কলেবর বড় হওয়ার কারণে সেটা করা হচ্ছে।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
লক্ষ করা যাচ্ছে কিছু পাঠক মুল লেখাটির চেয়ে প্রথম পর্বের ভূমিকাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। আলোচনাটিকে প্রাসঙ্গিক রাখতে প্রথম পর্ব থেকে ভুমিকাটি তুলে নেওয়া হল।
এখানে আলোচনা চলুক। আমরা এবার 'রবীন্দ্রনাথের জমিদারগিরি : জমিদারের রবীন্দ্রনাথগিরি' বিষয়ে যাব। সেখানে আমাদের অনুসন্ধানের বিষয় হলো--রবীন্দ্রনাথ প্রজানিপীড়ক ছিলেন কিনা। এই অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে ডঃ আহমদ শরীফের যে প্রবন্ধ-চিঠি ইত্যাদি মিথগুলো উল্লেখ করা হয়েছে--সেগুলো নিয়েও আলোচনা হবে।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
দয়া করে আপনি কি আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিবেন? রবি ঠাকুর বলেছেন
"যদি তুমি কাউকে ভালবাস তবে তাকে মুক্তি দাও, যদি সে ফিরে আসে তবে সে তোমার। আর যদি ফিরে না আসে তবে সে কোন দিন তোমার ছিল না থাকবেও না।" যদি তিনি এটিই বলেন তবে কেন বলেছেন "যতবার পরাজয় ততবার কহে আমি ভালবাসি যারে সে কি কভু আমা হতে দূরে যেতে পারে" অথবা রাহুর প্রেম কবিতা কেন লিখলেন তিনি?
এটা একটা গবেষণার মতোই ব্যাপার। দারুণ হল, দাদা! রবীন্দ্রনাথ সমালোচনার ঊর্দ্ধে নন। তবে, কিছু বলতে গেলে জেনে বুঝেই বলা দরকার। নইলে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। অনেক ধন্যবাদ, দাদা।
নতুন মন্তব্য করুন