একটি ছেলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে সেটা জানলে আমার কিশোরবেলায় যে অনুভূতি হত সেগুলো এরকম:
১. ছেলেটি ইংরেজি জানে। ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। (ইংরেজি জানা তখন একটা মারাত্মক ব্যপার ছিল। ইংরেজি জানা মানেই শিক্ষিত!)
২. সে ধনী পরিবারের সন্তান এবং সে স্মার্ট।
৩. সে আমার আশাপাশের কেউ নয়। আমার সীমানার বাইরে তার বসবাস। তার সঙ্গে আমার সাবলীল কোনো সম্পর্ক হতে পারেনা!
আরেকটু বড় হয়ে, একরম একটি ছেলে দেখলে আমার ধারনা হত,
১. এই ব্যাটা বহুৎ ঢং করবে!
২. একে একটু জোরে ধমক দিলে সে কেঁদে ফেলবে!
৩. এটি একটি ফার্মের মুরগি!
কলেজ/ভার্সিটিতে পড়ার সময় আমার ধারনা এরকম রুপ নিলো,
১. ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়ারা একটা আলোদা গোত্র/গোষ্ঠীর লোক।
২. এরা এই দেশের আপনজন নয়। এই দেশের মানুষের আপন নয়। এই দেশ, মানুষ এবং সংস্কৃতির সঙ্গে এদের সম্পর্ক কেবলই ব্যাবসায়িক!
অন্তত দ্বিতীয় কথাটি নিঃসন্দেহে বিরাট সরলীকরণ! জনসমক্ষে এরকম কিছু বলা খানিকটা অপরাধ! কিন্তু একটি ব্যপার মনে রাখা দরকার, আমি এই দেশের খুব সাধারণ নিন্মবিত্ত পরিবারের ছেলে। আমি নিজেকে সংখ্যাগরিষ্টের একজন বলে বিশ্বাস করি। অন্তত এই বিষয়ে আমার চিন্তা-ভাবনা এবং এদেশের একটা বড় অংশের চিন্তাভাবনা একরকম। আমাকে কেউ ব্যক্তিগতভাবে কখনো বলে দেয়নি ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেমেয়েরা কেমন। আমি এই ধারনাটা পেয়েছি আমার পরিবেশ থেকে। আমি এই ধারনা পেয়েছি যে অল্প খানিকটা নিজে দেখেছি তার দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে!
কেবল আমি নই। আমার খুব কাছের বন্ধুমহলে দরিদ্র এবং উচ্চমধ্যবিত্ত দুই অংশেরই ছেলেমেয়েরা ছিল। এবং ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়াদের বিষয়ে আমাদের সবার মানসিকতার মোটামুটি মিল ছিল বলে জানি। আমি এবং আমরা যদি দেশের সংখ্যাগরিষ্টের অংশ হয়ে থাকি, তাহলে কোনো সন্দেহ নেই, আমাদের সঙ্গে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ছেলেমেয়েদের দূরত্ব অনেক। এবং আমরা কেউই এই সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে খুব ভালো চোখে দেখিনা। গত কয়েকদিনে সচলায়তনে বেশ কিছু পাঠকের মন্তব্যও এ্ই দূরত্ব এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন বিদ্বেষকে প্রকাশ করে বলে মনে হয়ছে আমার।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ুয়াদের আমি ঢালাওভাবে দোষ দিতে পারিনা। বিশেষত যারা শিশু অথবা কিশোর তাদেরকে তো নয়ই! একটি বিশেষ পরিবেশে বেড়ে উঠলে কোনো ব্যক্তির মানসিকতা যে সেই পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারো দোষ হয়ে থাকলে সেটি তাই সবার আগে এই শিক্ষাব্যবস্থার এবং এর পৃষ্ঠপোষকদের।
বাংলাদেশে কেন একটি ইংরেজি ভাষার শিক্ষা ব্যবস্থা থাকবে? হিসেবে ইংরেজি শেখার প্রয়োজনীয়তা আছে। সেই ইংরেজি আমরা স্কুলেই শিখে থাকি। কিন্তু ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে গ্রহন করার এই মানসিকতাটা আমাদের মাঝে কীভাবে এলো! আফ্রিকার কিছু কিছু দেশের মানুষের ভাষা ইংরেজি, কিছু মানুষের ভাষা ফরাসি। তাদের মাতৃভাষা ইংরেজি অথবা ফরাসি না হলেও এই ভাষাকে তাদের গ্রহন করতে হয়েছে দায়ে পড়ে! বাধ্য হয়ে! আমাদের দায়টা কোথায়? এটি আমাদের দায়, নাকি দৈন্যতা! সাহেবদের ভাষায় শিখলে সাহেব হওয়া যাবে, সেজন্য আমরা ইংরেজিকে ভাষা হিসেবে গ্রহন করব?
গ্রহনযোগ্য একটা যুক্তি হতে পারে পড়াশোনার মান। কিন্তু সেটি কেন হবে? একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে কেন দুই মানের শিক্ষাব্যবস্থা থাকবে? যদি ইংরেজি মাধ্যমের পড়াশোনার মান ভালো হয় তাহলে যে ছেলেটি বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করছে তার অপরাধ কী! সে কেন তার রাষ্ট্রের কাছ থেকে সর্বোচ্চ মানের শিক্ষার সেবা পাবে না? এই দেশে কেন দুটি স্কুল গড়ে উঠবে পাশাপাশি, যার একটিতে পড়াশোনার মান ভালো আর একটিতে খারাপ। যার আর্থিক ক্ষমতা রয়েছে সে ভালো শিক্ষা পাবে, আর যে দরিদ্র সে পাবে নিন্মমানের শিক্ষার সেবা!? রাষ্ট্রের এই অবস্থানটি কেমন?
আমার জানামতে অনেক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়াশোনার পাঠ্যক্রম আমাদের জাতীয় পাঠ্যক্রম নয়। সেই পাঠ্যক্রম আমদানী হয় ইউরোপ, আমেরিকা থেকে (মূলত বৃটিশ এবং আমেরিকান)। আমি বলছিনা, ইউরোপ আমেরিকার পাঠ্যক্রম খারাপ। কিন্তু একটি দেশের শিক্ষার পাঠ্যক্রম সেই দেশের সামাজিকতা, সংস্কৃতি আর মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হওয়া প্রয়োজন। সেসব মিলিয়েই যদি ইউরোপীয়/আমেরিকান পাঠ্যক্রম আমাদের জন্য উন্নত হয়ে থাকে তাহলে সেটি কেন সারাদেশের স্কুলে জন্য প্রযোজ্য হবে না? একটি আলাদা ধরনের স্কুল তৈরি করে সেখানে কেন সেই পাঠ্যক্রম মেনে পড়ানো হবে? আমাদের রাষ্ট্র কি মনে করে ইংরেজি মাধ্যমের পড়াশোনা উন্নত? সেরকম হলে রাষ্ট্রই পারে সেই উন্নত শিক্ষা সেবা সবার জন্য নির্দিষ্ট করে দিতে। যদি সেরকম না হয়, তাহলে রাষ্ট্র কেন এই শ্রেনীর শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে?
আমি সব স্কুলের ব্যপারে জানি না। কিন্তু যতটুকু জেনেছি তাতে অনেক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পরিবেশই এই দেশ এবং সংস্কৃতির থেকে বহুদূরের। এই দেশের এবং সংস্কৃতির সঙ্গে তার সর্ম্পক নেই বললেই চলে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীরা এদেশের ইতিহাসও পড়ে না! ব্রিটিশ পাঠ্যক্রমে যারা পড়ে তারা পড়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির বীরত্বের ইতিহাস! আছে সামাজিক বিজ্ঞানের অংশে ৭১'র নামমাত্র উল্লেখ! বাংলা একটিমাত্র বিষয় আছে বলে জেনেছি! সেখানে তারা নির্দিষ্ট কিছু গল্প কবিতা পড়তে পায়!
একটি দেশের শিশুরা যে শিক্ষা লাভ করে সেটি বস্তুত সেই জাতির শিক্ষার ধরন হয়ে ওঠে। আমাদের যে শিশুরা তাদের ভাষা আর সংস্কৃতি বিবর্জিত শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে তারা যে এই জাতির অংশ হয়ে উঠবে না, সেটাতে তো কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়! আর যদি এই জাতির সব শিশুই এই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠে তাহলে কী এই জাতির পরিচয়টাই বদলে যাবেনা?
একজন সহসচল জানালেন, অক্সফোর্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বাংলা বলা নিষেধ! ধারনা করছি এরকম স্কুলগুলোতে ইংরেজিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তা-ভাবনাও ইংরেজিতে করতে হয়! সেই ইংরেজি ভাবনা নিয়ে বেড়ে ওঠা শিশুরা যে এই দেশের কেউ হয়ে ওঠেনা সেটা বুঝতে বেগ পেতে হয়না! এই শিশুরা বাংলা ভাষাকে, বাঙালি সংস্কৃতিকে, বাঙালি মূল্যবোধকে ভালোবাসতে পারে? তারা কী এই দেশটিকে ভালোবাসে? এদেশের মানুষকে? তারা কী এই দেশটিকে নোংরা, অনুন্নত, নিগারের দেশ ভেবে নেয়? এই প্রশ্নটির জবাব আমি জানিনা। এই প্রশ্নটির জবাব জানতে আমি খুবই আতঙ্ক নিয়ে অপেক্ষা করে আছি!
ভালো লেগেছে, যখন একজন সহসচলের কাছে জেনেছি, এই দেশেরই কিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে অনেকটা বাংলা পরিবেশও রয়েছে। সেখানে বাঙালি সংস্কৃতির ছোঁয়াও রয়েছে! এই বিষয়টিও অবশ্য আমাকে খুব দুঃশ্চিন্তামুক্ত করতে পারেনি। যে কথাটি আগে বলেছি, সেই কথাটি আবারও বলি, ভাষা হিসেবে ইংরেজি শেখার প্রয়োজনিয়তা আছে। কিন্তু শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার বাইরে অন্য কোনো ভাষাকে কেন গ্রহন করা হবে? এরকম আচরণ কি একটি হীনমন্য এবং একই সঙ্গে বোকা জাতির পরিচায়ক নয়!
একটি ব্যপার খুব স্পষ্ট বলে রাখা প্রয়োজন, ইংরেজিতে শিক্ষা গ্রহন আধুনিকতা নয়! উন্নতির জন্য সেটির প্রয়োজন নেই! সেটি বরং একটি জাতিকে হীনমন্য এবং পশ্চাদপদ করে রাখবে! বিশ্বে ইংরেজরাই কেবল শিক্ষিত এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে আধুনিক নয়! জার্মানরা তাদের ভাষায় শেখে, স্প্যানিশরা তাদের ভাষায় শেখে, ইতালিয়রা তাদের ভাষায় শেখে (আমি জেনেছি সেখানে ইংরেজিতে তো বটেই, যে কোনো বিদেশী ভাষায় পড়ানো নিষেধ!), দিতে চাইলে উদাহরণের অভাব হবেনা! এইসব জাতি অনুন্নত নয়, এরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রথম কাতারের! এইসব দেশও উন্নত বিশ্বেরই দেশ! কিন্তু সেটি আমার বক্তব্য নয়, এইসব জাতি যদি উন্নত না হতো, তারমানেই কী আমরা আমাদের ভাষা সংস্কৃতি ছেড়ে লাফ দিয়ে সাহেবী ভাষা-সংস্কৃতির মদ পান করে সাহেব হওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতাম? সেটি কি আদৌ সম্ভব?! আমরা কী ভেবে দেখেছি এই চিন্তাটাই কতটা হাস্যকর, কতটা অবৈজ্ঞানিক?! (আফ্রিকার অনেক দেশেই পড়াশোনা/দৈনন্দিন কথাবলার ভাষা ইংরেজি, তারা কিন্তু বিশ্বের সবচে অভাগা এবং পশ্চাদপদ জাতিদের মধ্য পড়ে!)
ইংরেজি শিক্ষাও আধুনিকতার পরিচায়ক নয়। যে ইংরেজি বলতে পারে সে বড়জোর একটি বিদেশী ভাষা জানার কৃতিত্বের দাবীদার হতে পারে! সেই ছাড়া তার আর কোনো মাহাত্ম্য নেই! এমনিতে মাতৃভাষার বাইরে অন্য ভাষা জানা নিশ্চয়ই ভালো, কিন্তু খুব আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ শুদ্ধ বাংলা জানেনা! আরো অবাক করা ব্যপার হলো বাংলা না জানাটা অনেকের কাছেই সামাজিক মর্যাদার বিষয়! এই শিক্ষাটি এরা তাদের পরিবার, তাদের পরিমণ্ডল থেকেই পায়। এই কথাটি তাই কেবল ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী নয়, তাদের পরিবারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেসব পরিবারের একটি বড় অংশ ৮০'র দশকে আচমকা অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে! যে পরিবারগুলোর শিক্ষার কোনো ইতিহাস কখনোই ছিলনা! এই শ্রেণীর কাছে ইংরেজি কথা বলতে পারা যতটা না স্মার্টনেস, বাংলা না বলতে পারা তার চাইতে বেশি স্মার্টনেস! এদেরই একটা অংশ এইসব ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পৃষ্ঠপোষক! এদের আগ্রহতেই পাঠ্যক্রম আর সংস্কৃতি আমদানী হয়েছে এসব স্কুলের। সমাজের বিত্তবান শ্রেণীর পরিচায়ক সেই ধারাটিই এখনো চালিয়ে নিচ্ছে এসব স্কুল! বিত্তবান অথবা উঁচুতলার বাসিন্দাদের একজন হতে অনেকেই অনেক কষ্ট করে হলেও নিজেদেরকে যোগ করে নিচ্ছেন এই অংশে!
সাধারণের চোখে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া ছেলেমেয়েরা তাই সমাজের সুবিধাভোগী বিত্তবান গোষ্ঠীর অন্তর্গত! একজন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছেলেকে দেখেলেই 'টাকাওয়ালা এবং দূর্ণীতিবাজের' ছেলে ধরে নেয়ার মানসিকতা আমাদের মাঝে এসেছে সেই বোধ থেকেই!
স্কুলের শিক্ষার পরেও সামাজিক মর্যাদারক্ষার শ্রেণী থেকে উঠে আসা ছেলেমেয়েরা এই সমাজে নিজস্ব বলয় তৈরি করে প্রায় বিচ্ছিন্ন থেকেও টিকে যাচ্ছে হয়তো, কিন্তু এই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহজে টিকতে পারছেনা! (উদাহরণ হিসেবে বলি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা বুয়েটের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই শ্রেণীর প্রতিনিধি নেই বললেই চলে! এসব ছেলেমেয়েদের বড় অংশটির শেষ পর্যন্ত উপায় হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অথবা বিদেশ!
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, অথবা এই শিক্ষাব্যবস্থা প্রসঙ্গে সবমিলিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন তৈরি হয়,
১. বাঙালি শিশুরা কেন ইংরেজিতে শিখবে?
২. (যদি প্রযোজ্য হয় তাহলে) বাঙালি শিশুরা কেন ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠবে?
৩. প্রথাগত বাংলা মাধ্যমের চাইতে যদি অন্য কোন মাধ্যম উন্নত/ভালো হয়ে থাকে তাহলে সেই সুবিধা দেশের সব শিশুর জন্য না হয়ে কেন কেবল বিশেষ কোন গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ হবে?
৪. যদি সত্যিই এই শ্রেণীটি বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি বিবর্জিত হয়ে বেড়ে ওঠে তাহলে তাদের কাছ থেকে এই দেশ কী আশা করতে পারে?
৫. সাধারণের সঙ্গে এই শ্রেণীটির যে দূরত্ব সেটি কি সুস্থ এবং স্বাভাবিক?
৬. বেড়ে ওঠার পর বিস্তৃত সমাজে কি এই শিশুরা নিজেদেরকে মিলিয়ে নিতে পারে?
৮. দৃশ্যত যে বিভেদ বাংলা, ইংরেজি আর আরবী মাধ্যমে শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে, সেটি কী ভবিষ্যতে কোনো সামাজিক/রাষ্ট্রীয় টানাপোড়েনের জন্ম দিতে পারে?
৯. যদি করে, তাহলে একটি সুস্থ সমাজের ভেতরেই ভিন্ন একটি গোষ্ঠীর জন্ম দিয়ে চলা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্র কেন স্বীকৃতি দিয়ে চলছে?
লেখাটি শুরু করেছিলাম, আমার ব্যক্তিগত ধারনার কথা বলে। সেখানে যতটুকু সরলীকরণ রয়েছে সেই দায় আমার। তবে আমি বিশ্বাস করতে চাই, ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরাও আমাদের একজন। আমি বিশ্বাস করতে চাই, যে ছেলেটিকে দেখে আমি আমার দেশের মাটি-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা ভিন্নগ্রহের বাসিন্দা ভেবেছি, সে আসলে এই দেশেরই খুব কাছের মানুষ! কিন্তু তেমনটা চাইলেই ভাবতে পারা যায়না। যে প্রশ্নগুলোর কথা আমি বলেছি সেই প্রশ্নগুলো আরো অনেকের মনেই জেগেছে, সন্দেহ নেই! রাষ্ট্রও এই বিষয়ে মৃত্যুর মতো নিরব! সেটিও কখনোই সুস্থতার লক্ষণ নয়। আমাদের কথা বলার প্রয়োজন, আলোচনার প্রয়োজন, অলীক ধারনা তৈরি হলে তা ভেঙে দেয়া প্রয়োজন। সমস্যা থাকলে মিটিয়ে নেয়ার প্রয়োজন। এবং সেটি প্রয়োজন এখনই।
একই সঙ্গে মনে রাখা প্রয়োজন, যদি সত্যিই ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষাব্যবস্থা সামঞ্জস্যহীন কিছু হয়ে থাকে তাহলে সেখানে যেসব শিশুরা পড়ছে, তাদেরকে এই সমাজ-সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জসস্যহীন সেই ব্যবস্থায় ফেলে দেয়ার দায় আমাদেরই! নির্বুদ্ধিতার সেই দায় আমাদেরকেই মেটাতে হবে। আমাদের জাতির মেরুদণ্ড কতটা ঋজু আর সুদৃঢ় হবে সেটা র্নিভর করে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার উপরেই! আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় তাই কোনো অন্ধকার/অসামঞ্জস্য থাকার সুযোগ নেই!
(শিক্ষাব্যবস্থার প্রসঙ্গেই মাদ্রাসা/কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কথা হতে পারে। জাতীয় প্রশ্নে এই বিষয়গুলো পরস্পর সর্ম্পকিত। কিন্তু এতো বিস্তৃত বিষয়ের সব আলোচনা একবারে হওয়া সম্ভব নয়। মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ে তাই আরো কেউ লিখবেন বলে আশা রাখি। সেই বিষয়ে সেখানেই কথা হবে। আর এই লেখাটিও খুব দারুণ লেখা হয়েছে সেই দাবী করছিনা। কেবল আশা করছি এই লেখাটি থেকে একটি দারুণ আলোচনার শুরু হবে। সবাই বলবেন তাঁদের ভাবনা/যুক্তির কথা। প্রয়োজনে আলাদা পোস্ট লিখবেন এই প্রসঙ্গে।)
কৃতজ্ঞতা: সহসচল জিএম তানিম, স্পর্শ, ধ্রুব বর্ণন, বুনো হাঁস, নজরুল ইসলাম, রেজওয়ান, অছ্যুৎ বলাই, এবং আরিফ জেবতিক।
এবং কৃতজ্ঞতা নাজনীন জাহান মিথুন (আমার মিথুন আপুকে)
মন্তব্য
সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে, আমাদের দায়টা কম নয়। 'আমরাই ৯৯%' এর কথা মনে করেন, যেখানে একটা গ্রোস স্টিরিওটাইপিং করা যায় যে, এদের অনেকের মনে বাকি এক পার্সেন্টে প্রবেশ করার আশা থাকে। সেটাকে একটা টার্গেট করে রাখা হয়। আমাদের আশেপাশেই, বাংলার যথেচ্ছ ভুল ব্যবহার দেখতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কেন? কারণ বাংলা ভাষাটার যথেষ্ট গুরুত্ব আমরা এখনও প্রতিষ্ঠা করতে পারি নাই। কেউ যখন ভুল বাংলায় কথা বলে, আমরা তাকে যথেষ্ট তিরস্কার করতে পারি নাই। বাংলার গুরুত্বটা যদি বাড়ে, বাংলার জন্য সচেতন হয়ে ওঠার মাত্রা যদি বাড়ে, তাহলে কি ইংরেজি মিডিয়ামের অযৌক্তিকভাবে লক্ষ্যস্থল হয়ে থাকার আসনটার অবস্থান পরিবর্তিত হবে না?
আপনার সঙ্গে একমত নই। বাংলায় সমস্যা থাকলে তিরষ্কার করে এটার সমাধান হবে বলে মনে হয়না। আর বাংলায় সমস্যার জন্য বাংলা ভাষা বিমুখীতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করিনা। এদেশের আকাশে বাতাসে এখনো কিন্তু বাংলাই রয়েছে। থাকবে বলেই বিশ্বাস।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমাদের ত্রিপুরা রাজ্যেও ঠিক একই অবস্থা। ভারতে আঞ্চলিক রাজ্যগুলো তাদের ভাষায় শিক্ষাদানের অধিকার রাখে। অন্যান্য রাজ্যগুলোর কথা আর এখানে বলছি না। যেহেতু বাংলা ভাষা নিয়ে কথা হচ্ছে তাই আমার রাজ্যের কথাই বলি। এখানে প্রায় ৭৫% মানুষ বাঙালি। আর বাকি ২০% জনজাতি অংশের মানুষ, বাকি ৫% মিশ্র। এখানকার ৮০% স্কুল বাংলা মিডিয়াম। তবুও দেখা যায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ানোর জন্য একটা হিড়িক লেগে আছে। আসলে ইংরেজী বলতে না পারাটাকে একটা অক্ষমতা হিসেবে দেখা হয়। আমি আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত ঘরের বাবা মায়েরা এই বলে দুঃখ করছেন যে - আহ, ছেলেটাকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করতে পারলাম না, ভবিষ্যতে যে কি হবে!! অর্থাৎ নিজের ছেলের ইংরেজি স্কুলে না পড়ার বিষয়টাকে একজন বাবা কিংবা মা তাদের ছেলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হিসেবে দেখছেন।
যদিও সরকারি বাংলা মাধ্যমের স্কুল গুলিতে সত্যিই পড়াশুনার যা তা পরিবেশ। শিক্ষকরা এখানে গিয়ে ভুলে জান তারা কোনো দিন ছাত্র ছিলেন। সেই তুলনায় ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় গুলিতে অনেক বেটার পড়াশুনার পরিবেশ রয়েছে। কিন্তু কথা আছে - এখানেও আছে একটা স্থায়ি বানিজ্য সাম্রাজ্য।
তবে আরেকটা জিনিসও ঠিক যে এখানকার ইংরেজী মাধ্যমের স্কুল গুলোতে দেশীয় সংস্কৃতি এবং ইতিহাসও পড়ানো হয় ( কিছু কিছু বাদে) তবে বাংলা ভাষাটাকে কিন্তু একেবারে বস্তা পচার ঝুলিতে ফেলে দেওয়া হয়। ভার্সিটিতে পড়ার সময় আমি একটি ছেলেকে পড়াতাম। আমার খুব পরিচিত বন্ধুর ভাই এর ছেলে। উনি আমাকে খুব পিড়াপিড়ি করেছিলেন, প্লিজ আমার ছেলেটাকে বাংলাটা একটু পড়াও। উনি শিক্ষক মানুষ তাই মানা করতে পারিনি। উনি বাংলা মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষক। আর আমি তার ছেলেকে পড়াচ্ছি ৫০ নম্বরের বাংলা সাবজেক্ট। ১৪ বছর বয়সের সেই ছেলেটি বাংলা বলতে পারলেও বই এর পাতায় বাংলা বানান ঠিক করে উচ্চারণ করতে পারতো না !!
একই অবস্থা বাংলা ভাষাভাষী পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামেও (কিছু অংশ)।
আমি বলছি না বাংলা পড়ে বিশেষ কিছু হয়ে যাবে কিংবা ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা নিলেই পণ্ডিত হওয়া যাবে। আসলে মূল বিষয়টা হল - আমরা কেন নিজের ভাষা এবং কৃষ্টির প্রতি উদাসীন হয়ে যাচ্ছি। বিব্রত করার মত ব্যাপার গরিব মানুষেরা এই ভেবে দুঃখ করেন - আমার ছেলেটা বাংলা মাধ্যমে পড়াশুনা করেন।
একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ শিক্ষকতা করার সময় আমার ক্লাশে বাংলা-ইংরেজি মিডিয়াম এমন একটি বিভাজন দেখে খুব মন খারাপ হয়। একদিন মেজাজটা বিগড়ে গেল যখন কোন একটা বিষয় ব্যাখ্যা করার সময় খুব প্রচলিত বাংলা শব্দও ইংরেজীতে বলার জন্য বার বার আমাকে থামিয়ে দিচ্ছিল তারা। আমি একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, বাংলা মাস গুলোর নাম বলতে পার? আমি উত্তর পেলাম , " what's the point? who use them? "
আমি বোর্ড এ লিখলাম " যে সবে বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী, সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি " । বললাম, "যারা বোঝনি এর মানে তারা বাসায় গিয়ে বাংলা জানে এমন একজনের কাছ থেকে জেনে নিও।
বলা বাহুল্য আমার এমনতর "আনপ্রফেশনাল" আচরণের অনেক খেসারত দিতে হয়েছিল। তবু আমার কোন ক্ষেদ নেই মনে এ নিয়ে।
নাম্বার ওয়ান শাকিব খান
ইংলিশ মিডিয়াম প্রারম্ভের দিকে স্রেফ উচ্চ মধ্যবিত্তের জন্য হলেও এখন মধ্যবিত্তও দলে দলে এর দিকে ঝুঁকছে ক্রমেই ভবিষ্যৎতে বাংলা মিডিয়ামে গ্রামের ও মফস্বলের নিম্নবিত্ত ছাড়া কেউ পড়বে না বলেই আমার ধারনা
ইংলিশ মিডিয়ামের যেটা মূল সমস্যা সেটা হচ্ছে আমেরিকা যুক্তরাজ্যের স্বাধীনতার ইতিহাস পড়ানোর হয় যত্ন করে তার জন্য অনেক বই পুস্তকও আছে কিন্তু বাংলাদেশ ষ্টাডিজ নামে একটা দায়ছাড়া সাবজেকট্ ছাড়া আর কিছু নেই , ফলাফল আমার ছোট ভাইয়ের যে জর্জ ওয়াশিংটন কে তা চিনে, ইংলিশ ভিক্টোরিয়া এইজ সম্পর্কে গড় গড় করে কথা বলতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাস তার কাছে ধোঁয়াশা এই ব্যবস্থা সেইখানে পড়া বেশিরভাগ ছেলেমেয়েরই দুই একটা ব্যতিক্রম ছাড়া ।
ঐ তিন সময়েই (কিশোর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়) এ বিষয়ে আমার অনুভূতিও প্রায় একি রকম।
দুইয়ে দুইয়ে সবসময় চার মিলানো সম্ভব না। একটু খুলে বলি। পরিচিত অনেকেই ইংরেজী মাধ্যমে পড়ালেখা করেছেন। আমি নিজে বাংলা মাধ্যমের ছাত্র। কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে ২-৪ জন ইংরেজী মাধ্যমে পড়ালেখা করা বন্ধু ছিল। দেশ-জাতি-ইতিহাস সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের জ্ঞানের লক্ষ্যণীয় কমতি চোখে পড়ে নাই (হয়তো থেকে থাকতে পারে, আমি দেখি নাই)। আবার টিউশনি করবার সুবাদে বাংলা মাধ্যমে পড়া কিছু বাঁদরের জ্ঞানের পরিসীমাও দেখেছি। কেবল 'শিক্ষা-পদ্ধতি' নিয়ে কথা বলতে গেলে মনে হয় ২ মাধ্যমেরই ভালো-খারাপ দিক বের করা সম্ভব। আমি সেদিকে যাচ্ছি না (জ্ঞানে কুলাবে না )
মূল সমস্যাটা (আমার মনে হয়) এখানে কেবল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার না। প্রধানতঃ পারিবারিক শিক্ষার। বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক ভাবে যেস্তরের ছাত্র-ছাত্রী ইংরেজী মাধ্যমে পড়ালেখা করেন, (অভিজ্ঞতা বলে) তাদের পারিবারিক শিক্ষাটি হয় ভিন্নতর। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা (ইংরেজী) স্বয়ং-সম্পূর্ণ হলে পারিবারিক শিক্ষার কি দরকার? দরকার একারনে যে, বেশিরভাগ মৌলিক জ্ঞান/বোধ গুলি (নীতিবোধ, ধর্মবোধ, সংস্কৃতি, সামাজিকতা, রাজনৈতিক ইত্যাদি) সবাই (অন্ততঃ আমাদের দেশে) পরিবার থেকেই গ্রহন করেন। ইস্কুলের স্যার ক্লাশে রবীন্দ্রসংগীত গাইলেও, গোলাম আযমের পুত্র বাড়ি গিয়া পাক সারজামিনই শুনবে। আর তাছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও (বাংলা / ইংরেজী) স্বয়ং-সম্পূর্ণ না।
ইংরেজী মিডিয়াম এর কথা এতোশত জানি না। বাংলা মিডিয়ামে আমরা কি শিখি? ক্লাশ ৫-১০ পর্যন্ত সমাজ বই পড়ে আমি ইতিহাস যা জানতে পারলাম, ইন্টার পাশ করার পরে ২-৩টা বই পড়ে তারচেয়ে অনেক ভাল জ্ঞান পাইছি। ইস্কুল থেকে ইতিহাস তেমন কিছুই জানি নাই আসলে, বঙ্গবন্ধু ৬৯ এর আগে কই ছিলেন, কি ছিলেন? তাজউদ্দিন মুক্তিযুদ্ধে কি অবদান রাখছেন? জিয়াউর রহমান কেন স্বাধীনতার ঘোষনা দিলেন? এইগুলা বইতে পাই নাই কখনো। এতো গেলো ডিটেইলস, ৭৫-৯০ পর্যন্ত দেশে কি হইলো? কেন হইলো? পাই নাই। আরো সহজ কথা বলি। ক্লাস ৫-১০ পর্যন্ত তিতুমীরের কথা কয় লক্ষবার পড়ছি হিসাব নাই। এখন "তিতুমীর কে?" এই প্রশ্নের উত্তর নিয়া বুয়েট ছাত্রদের একটা ভিডিও আছে ইউটিউবে, না দেখে থাকলে দেখতে পারেন। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এই হালত দেখে কান্না পাইছিলো সেইদিন।
এখন আপনার প্রশ্নের উত্তর দেইঃ
১। দু'টি বিষয় - ইংরেজী ভাষা শিক্ষা, ইংরেজীতে শিক্ষা। প্রথমটি নিয়ে আশা করি দ্বিমত নাই। উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করতে চাইলে ইস্কুল থেকে ইংরেজী ভাষা শিক্ষার বিকল্প নাই। অন্যান্য শিক্ষা কে ইংরেজীতে শিখবে, কে বাংলায়, কে হিন্দীতে সেটা যার যার (বা তাদের পিতা-মাতার) ব্যক্তিগত ইচ্ছা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মাতৃভাষা ব্যতীত অন্য ভাষায় শিক্ষার উপর করারোপ করতে পারে, কিন্তু নিষিদ্ধ করতে পারে না (ব্যক্তিগত অভিমত)।
২। ভিন্ন সংস্কৃতি কেবল প্রতিষ্ঠান আমদানী করছে না, এর দায় পরিবারের উপর আরো অনেক বর্তায়। সাম্প্রতিক সময়ে তরুন প্রজন্মের মুখের ভাষা খেয়াল করলে আমদানী করা হিন্দী শব্দের আধিক্য পাবেন। পহেলা বৈশাখ "পৌত্তলিক" আচার, কিন্তু হ্যালোউইন না, এমন পিতা-মাতাও দেখেছি।
৩। কারন, বাংলাদেশ পুরোপুরি কম্যুনিস্ট রাষ্ট্র না। বাংলা মাধ্যমেও এই বিভেদ আছে। ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল আর সিদ্ধেস্বরী বালিকা বিদ্যালয়ের বেতন/ভর্তি ফি তে অনেক ফারাক রয়েছে। আবার অন্য ভাবে দেখলে ক্লাশ ১ এ যখন ছাত্র ভর্তি হয়, তখন আমার সন্তান আর আপনার সন্তানের জ্ঞানে হয়তো ৯৯-১০০ পার্থক্য। কিন্তু সিট সংকটের কারনে আপনার সন্তান সুযোগ পেল, আমারটা পেল না। এও তো বৈষম্য ! তাই না?
৪। আশা করতেই পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীর সুবাদে দেখেছি, বিগত বছর গুলিতে ইংরেজী মাধ্যম থেকে বুয়েটে ফর্ম কেনা, পরীক্ষা দেয়া, আর ভর্তি হবার- সবের হার বেড়েছে। একই যায়গা থেকে বাংলা/ইংরেজী মাধ্যমের ছাত্র পাশ করে বের হলে তারা সমান অবদান রাখবে, এটা আশা করা যায়। পারিবারিক শিক্ষা (আবার সেই একি যায়গায় চলে আসলাম) ঠিক থাকলে, বীজ থেকে অঙ্কুরোদ্গম হতে বেশি সময় লাগে না। আর যারা বাপের টাকায় বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে, (টাকা হালাল হইলে) তারা আর কিছু না করুক, দেশের অন্ন ধ্বংস করছে না। টাকা হালাল না হইলে ঐ ব্যাটার বাপকে ধরা যুক্তিযুক্ত।
৫। এই সাধারন কারা? আজকাল তো ব্লগে দেখি অন্যান্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের (সরকারী-বেসরকারী) ছাত্ররা বুয়েট কে গালি দেয় (বুয়েট অন্য সবার থেকে আলাদা, হেহেহে)। আমি পড়ার সময়ে দেখতাম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকজন সরকারী কে গালি দেয় (সুবিধাভোগী বলে)। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকজন বেসরকারী কে গালি দেয় (আত্মতৃপ্তি পেতে!)। মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রী সবাইকে গালি দেয় (তারা সুখে নাই বলে)। অন্য সবাই মেডিকেলের ছাত্র-ছাত্রীদের গালি দেয় (ডাক্তারের ভিজিট বেশি বলে)। আবার কোন ভাঙ্গচুর হইলে সমগ্র দেশবাসী সম্মিলিত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের গালি দেয়। তার উপরে মাদ্রাসা, ইংরেজী, বাংলা, ক্যাডেট ইত্যাদি শ্রেনীবিভাগ তো আছেই।
৬। যারা ঠিক ভাবে বেড়ে উঠে তারা মিলিয়ে নেয়।
৭। ব্যাপারটা আসলে উলটা বলে মনে করি। রাষ্ট্রীয় / সামাজিক টান-পোড়েনের ফসল এটা। বাঙ্গালী মুসলমানের আইডেন্টিটি নিয়া টানা-পোড়েন আছে বলেই এইসকল শাখা-প্রশাখার জন্ম।
৮। রাষ্ট্র হইলাম - আমি আপনি আমরা। আমরা চাইলে উর্দু রাষ্ট্র ভাষা হইতো। চাই নাই তাই হয় নাই। আমরা চাইছি বলেই এই রকম গোষ্ঠী হইছে। রাষ্ট্র বলতে আপনি যদি প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর কথা বলেন। তাহলে তারা নিরব কেননা, এই ইস্কুল গুলায় বেশ ভালো সংখ্যার ছাত্র-ছাত্রী পড়ে, পড়তে চায়। বন্ধ করলে নতুন হাউ-কাউ।
আমার মতামত, ইংরেজী মাধ্যম বন্ধ করার চেয়ে, এর সিলেবাসে বাংলা ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত করবার দাবি বরং বেশি যুক্তিযুক্ত।
আমার বাবা-মা আমাকে কোন ভাষায় পড়াবেন সেটা তাঁদের ইচ্ছে, মেনে নিলাম। আমার কথাটি সেখানে নয়। আমি বলতে চাই, রাষ্ট্র কেন একটি ভিন্ন ভাষায় শিক্ষা দেয়ার প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেবে! আমি কী শিখব সেটি আমার ব্যপার, কিন্তু যে শিক্ষা রাষ্ট্রের দায় সেটি তো আমার মনমতো হতে পারেনা। যে ভাষায় ইচ্ছে শিক্ষা গ্রহনের অধিকার যদি সবার থেকে থঅকে তাহলে রাষ্ট্র কেন বিশ্বের সব ভাষার স্কুল খুলবে না! কারো কারো তো স্প্যানিশে পড়তে ইচ্ছে হতে পারে! প্রশ্নটা আসলে ব্যক্তিগত পছন্দের নয়। প্রশ্নটা রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে!
সেটা নিয়েও কথা হোক। শিক্ষব্যবস্থায় বৈষম্যও তো গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা।
আপনি যে বিভেদের কথা বলেছেন সেটি সবখানেই। এমনকি একটি প্রতিষ্ঠানের দু'দল শিক্ষার্থীর মধ্যেও হতে পারে। আমি যে বিভেদটার কথা বলেছি, সেটি স্পষ্টত সামাজিক শ্রেনীতে! আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
ইংরেজি মাধ্যম বন্ধ করার কথা বলিনি। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা আলোচনা করতে চেয়েছি। সিদ্ধান্তটা আলোচনা থেকেই আসুক।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
রাষ্ট্র তো ইংরেজী মাধ্যমকে এন্ডোর্স করছে না (যেমনটা করছে বাংলা মাধ্যমকে)। সরকারী কোন ইংরেজী মাধ্যম ইস্কুল আছে নাকি? স্প্যানিশে শিক্ষা গ্রহনের চাহিদা থাকলে স্প্যানিশ মিডিয়াম থাকতেই পারে। বাংলা আমাদের রাষ্ট্র ভাষা। রাষ্ট্র এই ভাষাকে অগ্রাধিকার দেবে। বেসরকারী খাতে কেউ ইংরেজী মাধ্যম চালাতে চাইলে তাকে বাধা দেবার এখতিয়ার রাষ্ট্রের থাকা উচিৎ কি?
সমাজব্যবস্থায় বৈষম্য থাকলে শিক্ষাব্যবস্থাতেও থাকবে। বেসরকারী ভিত্তিতে স্কুল খুলতে দেওয়া হইছে যখন, তখন তারা তাদের পন্য যে দরে বেচবে, (কিনতে চাইলে) সেই দরেই কিনতে হবে। আমি-আপ্নি চিৎকার করে কিছু হবে না।
অবশ্যই, বিভেদ সামাজিক শ্রেনীতেই। বিভেদ প্রতিষ্ঠান তৈরি করে নাই। বরং সামাজিক শ্রেনীবিভেদ প্রতিষ্ঠানকে তৈরি করছে। তাই, ইংরেজী মাধ্যম ইস্যু না। যাদের নিয়ে কথা হচ্ছে, ইংরেজী মাধ্যম না থাকলে, তারা নিজেদের মনের মতো বাংলা ইস্কুল তৈরি করে নিতো। আর সেখান থেকে এই রকম ছাত্রই বের হতো। বিষয়টা “মৌলবাদিরা দাড়িওয়ালা লোক, কিন্তু দাড়িওয়ালা লোকরা মৌলবাদী না” এই পদের ব্যাপার।
"অবশ্যই, বিভেদ সামাজিক শ্রেনীতেই। বিভেদ প্রতিষ্ঠান তৈরি করে নাই। বরং সামাজিক শ্রেনীবিভেদ প্রতিষ্ঠানকে তৈরি করছে।"
আর প্রতিষ্ঠানই এই সামাজিক শ্রেনীবিভেদকে টিকিয়ে রাখবে তাই প্রতিষ্ঠানকেই বিভেদ তৈরী থেকে দমিয়ে রাখতে হবে।
পুরোপুরি মনের কথা, পোস্টে এবং কমেন্টের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। ছাত্রাবস্থায় একটা কনফারেন্সে বেইজিং গিয়েছিলাম, ২০০৪ সালে। যা দেখি তাতেই চোখ ধাঁধিয়ে যায়। সঙ্গে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক বললেন মাত্র ১০ বছর আগেও তিনি যখন বেইজিং এসেছিলেন তা নাকি ঢাকার মতোই ছিল। চারপাশের এত বিস্ময়ের পরও অনেক বড় বিস্ময় আমাকে আচ্ছন্ন করেছিল যখন দেখলাম একজন নাগরিকও একবর্ণ ইংরেজি জানেনা। ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ইংরেজি শেখা এক বন্ধুর বদৌলতে লিখে দেয়া চিরকুট দেখিয়ে পথ চিনতে হয়। কেনা কাটা চলে ক্যালকুলেটারে বোতাম টিপে দরদাম করে করে। সেই বিস্ময়বোধের ধাক্কাতেই পরবর্তিতে খোঁজ নিয়ে জেনেছি চাইনিজদের ব্যবসা বাণিজ্যের বিস্তারের জন্য ইংরেজি শিখতে হয়নি। বরং হার্ভার্ডের বিজনেস ল' ক্লাসে চাইনিজ শেখাটা চালু করতে হয়েছে। কারণ তা না হলে চীনের সাথে আমেরিকানদের ব্যবসা আর চাকরি চলবে কি করে?
বিদেশি ভাষা শেখা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু বিদেশের মার্কেট ধরার জন্যই যদি সেটা শেখা হয় তাহলে কেবল ইংরেজি কেন? মাতৃভাষার সাথে সাথে স্কুলে বিদেশি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যেতেই পারে; তবে সেটা যদি শুধুমাত্র ইরেজি শেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে, তবে তা আমাদের নতজানু দাসমনোবৃত্তির পরিচায়ক হয়ে দাঁড়ায়। বিদেশি ভাষা হিসেবে ফরাসি, জার্মান, রাশিয়ান, স্প্যানিশ, আরবি, ফার্সি, উর্দু- সবকিছু শেখার ব্যবস্থাই করা উচিত। যার যেটা খুশি সে সেটা শিখবে। বাস্তবতার নিরিখে ঠিক এই মুহূর্তে সেই সক্ষমতা না থাকলেও অন্তত: নীতিগত ভাবে এই অবস্থান আমাদের স্বাধীন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা দাবি করতেই পারে।
কমেন্টের শুরুতে চীনের উদাহরণ দিয়েছি। পরবর্তিকালে কাজের সুবাদে ভিয়েতনাম, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড (এখানে অবশ্য ইংরেজিটা বেশ ভালভাবেই চর্চিত; তবে রাস্তা ঘাটে ইংরেজি সাইনবোর্ড একটাও চোখে পড়েনি; শিক্ষার মাধ্যমও ডাচ), ইরান, মধ্যপ্রাচ্যের আরো কিছু দেশ, ফ্রান্স- এসব দেশে যখন গিয়েছি একই দৃশ্য দেখেছি। আর ইংরেজি প্রীতি দেখেছি নাইজেরিয়া, জিম্বাবুয়ের বন্ধুদের মধ্যে।
সর্বোপরি, বিদেশি ভাষা যদি শিখতেই হয়, সেটাও বাংলা মাধ্যমেই শিক্ষনীয়। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোর বৈষম্যমূলক শিক্ষাকে জিইয়ে না রেখে বরং বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়গুলোতে উন্নতমানের ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
ভালো লাগল। শিশুরা স্বাভাবিকভাবে তার নিজের ভাষাতেই শেখে। সেটাই উচিত।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
জাতীয় সংস্কৃতি'র মাথা-মুন্ডুদের বাচ্চারাও বেশির ভাগ ইংলিশ স্কুলেই পরে... আসাদুজ্জামান নুর, সৈয়দ হক, আলী জাকের, জাফর ইকবাল এরা সবাই নিজেদের বাচ্চাদের ইংলিশ স্কুলে পরাইসেন... সাধারণ পাবলিক'এর আর দোষ কি
অন্যের ঘাড়ে দায়টা কেন চাপালেন বুঝতে পারছি না! "সব শালা খারাপ' হলেই তো আর নিজের অন্যায় ঢাকা পড়ে না! আপনার বর্ণিত জাতীয় মাথা'রা যদি মানুষ খুন করতে লেগে যায় তাহলে পাবলিকেরও খুন করতে দোষ নেই বলে আপনি লেগে যাবেন? এই মন্তব্যটা বিরক্তিকর!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
------------------------------------
সময় এসেছে চল ধরি মোরা হাল,
শক্ত কৃপাণে তুলি বরাহের ছাল।
আমার অভিজ্ঞতায় মধ্যে ইংরেজী মাধ্যমে পড়া কাজিন/বন্ধুদের থেকে পার্থক্য চোখে পড়তে থাকে খুব সম্ভবত ক্লাস সিক্স সেভেন থেকে। ইংরেজীতে ফুটফুটানি এবং কোএডে পড়ার কারণে স্মার্ট/সাহসী/বদ ভাবের সাথে কুলায় উঠতে পারতাম না।
একটা কথা বারবার পোস্টে এসেছে যে - এটা উৎকৃষ্ট হলে রাষ্ট্র কেনো এটাকে সর্বজনীন করছে না, আর এটা আমাদের জাতীয় পরিচয়ের জন্যে সংকটজনক হলে রাষ্ট্র কেনো এটাকে স্বীকৃতি দিয়ে যাচ্ছে। তা, সে প্রসঙ্গে মনে হলো শিক্ষার অনুমোদনযোগ্য মাধ্যম নির্ধারণের ব্যাপারে রাষ্ট্র সর্বকর্তৃত্বপূর্ণ, এমন একটা অনুমান অবচেতনভাবে হলেও হয়তো কাজ করছে এখানে। রাষ্ট্রের এমন কর্তৃত্বপূর্ণ এখতিয়ার আছে কিনা আমি নিশ্চিত নই। এই নিশ্চিতি খুব সহজে পাওয়া যাবে বলেও মনে হয় না। ফলে এটাও একটা আলোচনার বিষয় হতে পারে। রাষ্ট্রে কী কী পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা বা মাধ্যম থাকতে পারে সেটা নির্ধারণে রাষ্ট্রের এখতিয়ার কতোটুকু?
যেমন ধরা যাক, আমি আমার সন্তানকে চাইলেই কি শুধুই হিন্দিতে শিক্ষা দিতে পারি? ধরুন ঘরে বসে দেয়া শুরু করলাম। বা চাইলেই কি কোনো প্রকার শিক্ষা নাও দিতে পারি? পাহাড়ি অঞ্চলে অনেক জায়গায় বাংলা নয়, ভিন্ন ভাষায় (সম্ভবত বার্মিজ) পড়াশোনা করাতে দেখেছি। রাষ্ট্র এসে বলবে - এটা অনুমোদনযোগ্য নয়, ভিন্ন ভাষায় পড়ানো যাবে না, এমন ক্ষমতা কি রাষ্ট্রের আছে? বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আছে? না থাকলে সে ক্ষেত্রে আমরা রাষ্ট্রকে কি সেরকম করে তুলতে চাই? এগুলোও আলোচনার বিষয় হতে পারে। মানে রাষ্ট্র সুবিধাই কেবল দিবে নাকি বাধ্যও করবে। কেউ তার সন্তানকে স্কুলে না পাঠিয়ে থাকতে পারবে না, রাষ্ট্র ঘাঁড় ধরে সবাইকে একই মাপের স্কুলে পাঠাবে, এমন কি?
এই প্রশ্নগুলো এই পোস্টের অনেক প্রশ্ন ও আলোচনাকেই সাহায্য করতে পারে। যেমন, আমরা যদি ধরা যাক জানতে পারি যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র কেবল শিক্ষার সুবিধাই নিশ্চিত করে, কে স্কুলে যাবে যাবে না, কোন স্কুলে যাবে যাবে না, সেই ব্যাপারে কর্তৃত্ব খাটানোর এখতিয়ার রাষ্ট্রের নেই, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কেনো সবার জন্য একই মাপের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে পারছে না বা ভিন্ন মাধ্যমের বিরুদ্ধে (মাদ্রাসাসহ) কেনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা সাথে সাথেই পেয়ে যাই। তখন সমস্যার প্রতিবাদে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বা বাহুবল প্রয়োগের আহ্বান যেহেতু আর জড়িত থাকে না (মানে রাষ্ট্রের যেহেতু এ ব্যাপারে কিছু আর করার থাকে না), সামাজিক ও সমালোচনামূলক প্রতিবাদের দিকে তখন বেশি মনোযোগ দেয়া যায়।
একটা তথ্য যোগ করি।
সরকারী বোর্ডের বই গুলোর ইংরেজি অনুবাদ ভার্শন আছে। রেসিডেন্সিয়াল মডেল, ভিকারুন্নিসা তে আলাদা সেকশন আছে যেখানে একি কারিকুলাম কিন্তু ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হয়। সেখানে এই বই গুলা ব্যাবহৃত হয়। আমার কিছু আত্মীয় পড়েছে বলে ব্যাপারটা জানি।
হলিক্রসে আলাদা সেকশান ছিল না, কিন্তু কলেজে এসে ক্লাসের ২/১ জন ইংলিশ মিডিয়াম ছাত্রীর জন্য শিক্ষিকারা বাংলাতে পড়ানোর পাশাপাশি ইংরেজি টার্মটাও পাশাপাশি বলে দিতেন। এতে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রীর তার ইংরেজি বই ফলো করতে সুবিধা হতো, আর আমরাও দু ভাষাতেই টার্মগুলো শিখতে পারতাম।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
শিশির কণা আপুর সাথে আমি আরেকটু যোগ করতে চাচ্ছি। শুধু রেসিডেন্সিয়াল মডেল, ভিকারুন্নিসা নয়, দেশের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইংরেজী ভার্শনের সুবিধা আছে, সেগুলো সবগুলোতেই একই কারিকুলামে ইংরেজী পড়ানো হয়। এবার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলি।
আমি বাংলা মাধ্যমেই পড়ালেখা করেছি। স্কুলে থাকতে এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে বইতে শেখা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় টার্মগুলো ইংরেজীতে শিখে নিতাম। এটা আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে টার্মগুলো বুঝতে অসুবিধা হয় ক্লাসে শিক্ষকেরা পুরোপুরি ইংরেজীতে পড়াতেন না। নি।আমাদের বিভাগে বাংলায় পরীক্ষা দেবার ব্যবস্থা ছিল না। তাতে আমার বা আমার অন্য বন্ধুদের সমস্যাও হয় নি খুব একটা। মাদ্রাসা বা গ্রাম থেকে এসেও অনেকেই খুব ভাল ফলাফল করেছে। তবে ১ম বর্ষে কাউকে কাউকে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখতাম। জানা জিনিসটাও টার্ম না জানার কারণে বুঝতে প্রথম প্রথম অসুবিধা হত বলে। আমি এদিক দিয়ে এগিয়ে ছিলাম। এর জন্য আলাদা করে কলেজের অবদানটা বুঝতে পারিনি, কারণ আমি স্কুল থেকেই এগুলো শিখতাম।
এবার কলেজের কথায় আসি। আমিও হলিক্রসে পড়েছি। এ কলেজ আমাকে দিয়েছে অনেক। এখানে দেখেছি, ইংরেজীকে বেশি প্রাধান্য দিতে। ১ম বর্ষে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের নতুন করে ইংরেজী বর্ণমালা ও উচ্চারণ শেখানো হল। যিনি পড়াতেন, তিনি ছিলেন ভিন দেশী। তিনি বলেছিলেন, এ দেশে ঠিক মত ইংরেজী শেখানো হয় না। অনেকে ঠিক মত ইংরেজী বর্ণমালা লিখতে পারে না। ইংরেজী নিয়ে নাক উঁচু ভাবটা আমি তখনই টের পেয়েছিলাম। নতুন করে এবিসিডি শিখতে গিয়ে আমিও একটা কিছু উপলব্ধি করি, সেই যেমন স্টিব জবস করেছিলেন ক্যালিগ্রাফি শেখার পরে। (এই যা, কোথায় স্টিভ জবস আর কোথায় আমি!)
আমাদের শিক্ষকদের অনেকেই ছিলেন ভিন দেশী, কেউবা এংলো। তাঁরা নিজেদের সংস্কৃত পালন করতেন। তাঁদের সংস্কৃতি আমাদের মধ্যেও কালচার (এটা একটা বায়োকলিক্যাল টার্ম, জানি সবাই বুঝতে পারছেন) করে গড়ে তুলতে চাইতেন। একদিন শালীনতা শেখাতে গিয়ে একজন শিক্ষক বলেছিলেন, ‘’তোমাদেরকে তো বিদেশীরা অসভ্য বলবে। এই তো সেদিন, আমার এক আত্নীয়ের ছোট্ট ছেলে রাস্তায় দুজন লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। লোক দুজন একজন আরেকজনের কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়েচিল। এটা দেখে ও ওর মাকে জিজ্ঞেস করেছে, mom, look, gay, gay.’’
যদিও আমাদের দেশে দুজন লোক কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা খুব সাধারণ ব্যাপার। আমাদের দেশে যা স্বাভাবিক, অন্য অনেক দেশেই তা অশালীন।
আমাদের কলেজে মেয়েরা মেয়েরা হাত ধরা ধরি, কাঁধে হাত দিয়ে ঘুরা, চুল টানাটানি একদম নিষেধ ছিল। এই শৃংখলাগুলো আমি কলেজ থেকেই শিখেছিলাম। সব সময় মেনে চলি।
আমাদের আরেকজন শিক্ষক ছিলেন, যিনি বোর্ডের বই অনুসরণ করে পড়াতেন না। একটু নাক উঁচু করেই বলতেন, আমি ওগুলো ফলো করি না। তিনি তাঁর নিজের পছন্দের একটি বই (ইংরেজী) থেকে পড়াতেন, ইংরেজীতে। আমাদের কারিকুলামের সাথে মিল খুঁজে পাওয়াটা কষ্টকর ছিল। অথচ ক্লাসে কারা ইংরেজী ভার্শন বা মাধ্যমের ছিল আজো জানি না। আমরা যারা এই বিষয়টি কোন প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়িনি, খুব সমস্যায় পড়তাম। এই শিক্ষকের পোশাকও আমাদের সংস্কৃতির সাথে খাপ খায় না। যদিও তাঁকে ঐ পোশাকে বেশ লাগত দেখতে।
আরেকজন শিক্ষক ছিলেন। তাঁকে কখনো একটি বাক্য শুদ্ধভাবে সম্পূর্ণ বাংলা বা ইংরেজীতে বলতে শুনিনি। তখন বাংলিশ বলা এফ.এম আরজে ও ছিল না, ‘’লুকিং ফর শত্রুস’’ বাবরও ছিল না। তাই আড়ালে তাঁকে নিয়েই বান্ধবীরা হাসাহাসি করতাম।
আমার মন্তব্য পড়ে আবার ভেবে বসবেন না, আমি আমার কলেজ বা শিক্ষকদের হেয় করার জন্য বলছি। আমি ফোকাস করতে চাইছিলাম, এখানেও ইংরেজীকে, ভিন্ন সংস্কৃতিকে কীভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়, সেই ব্যাপারটাকে। যাঁদের কথা বললাম, তাঁরা প্রত্যেকেই আমার ভীষণ প্রিয়। শিক্ষক হলেও তাঁরা মানুষ। দু একটা ভুল ত্রুটি থাকবেই। ভুলগুলো সহই তাঁদের আমি ভালবাসি।
একই কারিকুলামে ইংরেজী*তে পড়ানো হয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে টার্মগুলো বুঝতে অসুবিধা হয় নি*। ক্লাসে শিক্ষকেরা পুরোপুরি ইংরেজীতে পড়াতেন না।
নিজের করা মন্তব্যগুলোতে এই ভুলগুলো পেলাম। তাই ঠিক করে দিলাম।
বুঝতে পারিনি, কারণ আমি স্কুলের সময়* থেকেই এগুলো শিখতাম।
আপনি মনে হয় আমার আগে হলিক্রস থেকে বেরিয়েছেন। আগে টিচাররা অনেক বেশি ইংরেজি প্রেফার করতেন শুনেছি। কিন্তু এটা বলতেই হয় আমরা যেমন ইংরেজিতে দক্ষ শিক্ষকদের পেয়েছি আমাদের ইংরেজির শক্ত ভিত গড়ে দেওয়ার জন্য, বাংলাদেশের বড় স্কুল গুলো বাদে কয়টাতে সেরকম দক্ষ শিক্ষক আছেন? থাকলেও বাংলার পাশাপাশি আরেকটা ভাষাকে চর্চা করে শেখার দিকে কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়? অন্যান্য স্কুল থেকে আসা অনেক ভালো ছাত্রকে দেখেছি পরীক্ষায় চমৎকার উৎরে যাচ্ছে ইংরেজিতে উত্তর লিখে,কিন্তু দু পাতা SOP লিখা বা টোফেল/GRE নিয়ে আতঙ্কিত, বা তাদের অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে ঐ বাধটুকু টপকাতে বুড়া বয়সে এসে। এদিক থেকে হলিক্রসে যেটা অনুভব করি যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একজন মানুষের সাথে সহজে শালীন ভাবে যোগাযোগ করতে পারার একটা বেসিক ট্রেইনিং দেয়া হয়েছে ছোটবেলা থেকে, যে এখন বেপারটা আর আমাকে খেয়াল করে করতে হয় না।
আর যেটা বললেন কারিকুলামের বাইরের বই পড়ানোর কথা , সেটা আমার কাছে একদিক ভালোই লেগেছিল, সম্ভবত তিনি বিজ্ঞানের কোন বিষয় পড়াবার জন্য ভালো রেফারেন্স বই ব্যবহার করছিলেন যাতে আমরা জিনিষটা আরো ভালো ভাবে বুঝতে পারি, আমাদেরও অনেক সময় এমন পড়ানো হয়েছে, কিন্তু পরীক্ষায় প্রশ্ন কিন্তু বই থেকেই এসেছে। এখানে তোতা পাখির মত শুধু বই মুখস্ত করার চে' বিষয়বস্তু বুঝাবার দিকে আন্তরিকতা প্রকাশ পেয়েছে, সেটা আমার কাছে বেশি ভালো লেগেছে। আমি তো শুধু পরীক্ষা পাশের জন্য পড়ছি না, জানা বুঝার জন্য শিখছি, যেটা সারা জীবন কাজে লাগবে, এক্ষেত্রে প্রয়োজন মাত্র আলাদা বই রেফারেন্স ব্যাবহার করা ভালো শিক্ষকেরই উদাহারণ। হয়তো ইন্টার লেভেলে আমরা এতটা আশা করি নাই।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আন্তর্জাতিকভাবে তৈরি করে দেবার ব্যাপারটা ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে নিজের সংস্কৃতিটা নিয়ে এত অবহেলার ভাব কেন? রাস্তার দুজন সাধারণ মানুষকে কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে আপনার বা আমার আঁতকে না উঠে স্বাভাবিকভাবে নেওয়াটাই স্বাভাবিক। অন্য দেশের, অন্য সংস্কৃতির কারো কাছে আমাদের দেশে এসে অস্বস্তিকর লাগলে আমাদের কিছু করার নেই। (ভিন্ন দেশে গেলে তাদের সংস্কৃতি দেখেও আজকাল আমরা অবাক হই না। বরং অনেক সময় মেনেও চলি। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু তাই বলে তাদের সংস্কৃতির আড়ালে নিজেরটা ভুলে যাওয়া বা ব্যংগ করা কোন কাজের কথা নয়)। এখন ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরাও যদি এই রকম আন্তর্জাতিক মানুষ হতে গিয়ে দেশের সাধারণ লোকজনদের নিয়ে এই রকম ব্যংগ করে ফেলে, দেশের মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আপনার আমার এতে রুষ্ঠ হবার কী আছে?
‘’বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাংগালি হ!’’
মুখস্ত বিদ্যাকে আমাদের কলেজে কখনই উৎসাহিত করা হয় নি। বরং সৃজনশীল বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সারাক্ষণই শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রাখা হয়। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, কারিকুলামের বাইরে কোন বই হয়ত একজন শিক্ষক রেফারেন্স হিসেবে পড়াতে পারেন (আমিও আমার শিক্ষার্থীদের মূল বইয়ের পাশাপাশি ও’লেভেলের বা অন্য বই ফলো করতে পরামর্শ দিই)। কিন্তু সেটা কি মূল কারিকুলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে? এতে কত জন শিক্ষার্থী প্রকৃতই উপকৃত হচ্ছে, সেদিকে কি কোন খেয়াল রাখবেন না? কাদের জন্য মূল কারিকুলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভিন্ন বইকে এত গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হত??
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একজন মানুষের সাথে সহজে শালীন ভাবে যোগাযোগ করতে পারার একটা বেসিক ট্রেইনিং দেয়া হয়েছে ছোটবেলা থেকে, যে এখন বেপারটা আর আমাকে খেয়াল করে করতে হয় না।
সব সময় শালীনতা খুব বেশী প্রয়জন নেই। শালীনতা কি সকলের কাছে থেকে োষনের মানসিকতা দূর করতে পেরেছে।
ইংরেজী ভাষা কে োষকরা োগবাদী এক ভাষাতে রূপান্তর করেছে। ভাষার নিজস্ব োন ভূমিকা নেই। এর চর্চাটাকে পুঁজিবাদীরা তাদের আয়েত্বে নিয়ে নিয়েছে।
ঠিক, রাইফেলস পাবলিকেও আছে এই রকম।
সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোটা আমাদের পয়সাওয়ালা শ্রেণীর স্ট্যাটাস সিম্বল হয়ে গেছে। সবাই যখন করছে তখন আমিও না করলে যুগের তুলনায় পিছিয়ে পড়বো - ফলে এই বোধ থেকেই মোটামুটি অবস্থাপন্নরাও তাদের সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
অতীতে বাঙালি মুসলমানেরা ইংরেজি বর্জন করতে গিয়ে সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছিল। কালের আবর্তে ইংরেজি যেহেতু লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কায় পরিণত হয়েছে তাই ইংরেজি বিমূখ হলে লোকসান আদতে আমাদেরই হবে।
আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা কারিকুলাম দেশের সাথে পুরোপুরি সম্পর্কহীন। ফলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে যারা বেড়ে উঠছে তারা দেশের সাথে পুরোপুরি সম্পর্কহীন হয়েই বেড়ে উঠছে। তাই ইংরেজি মিডিয়ামকে ঢালাওভাবে দোষারোপ না করে শিক্ষা কারিকুলামকে আমাদের দেশের উপযোগী করে নিলেই কিন্তু ল্যাঠা চুকে যায়। কিন্তু সেই কাজ কি আর বাঙালিকে দিয়ে হপে?
একমত।
স্কুলের পেছনে লাগার চেয়ে লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করাটাই ভাল। স্কুল পাশ করে তো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। অফিসে আদালতে কারখানায় চাকুরী করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ইংলিশ মিডিয়ামে (ইঞ্জিনিয়ারিং)। মেডিকেল, ওকালতি সবই ইংরেজী। এতে আর যাই হউক, ছাত্রদের অনেকেই অনেক সহজ ব্যাপারও ইংরেজী জুজুর ভয়ে হৃদয়াঙ্গম করতে পারে না। আমার একটি ক্লাসে দুইজন নেপালী ছাত্র থাকার কারণে ইংরেজীতে লেকচার দিলাম (আমার ইংরেজী উচ্চারণকে স্ট্যান্ডার্ড বলেই বলেছিল বিদেশের অনেক জায়গায়)। বাকী ক্লাসের চেহারা ঘুমিয়ে পড়ার মত। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে আসলে এই সমস্যাটা কম হত। কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয় যে এই শিক্ষাগুলো মাতৃভাষায় অসম্ভব। জাপানে সমস্ত উচ্চশিক্ষা জাপানি ভাষাতেই হয় বলে দেখেছি। ফলে ইংরেজি না জানলেও প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনে কোন সমস্যা হয় না ওদের।
বাংলাদেশে কোন আন্তর্জাতিক সেমিনারের প্রোসিডিং সম্পুর্ন ইংলিশ। বাংলাদেশের মানুষকে অর্জিত জ্ঞান বিতরণও ইংলিশ - আগত শ্রোতা, দর্শক, সাংবাদিক সেটা বুঝলো কি না বুঝলো তাতে কি এসে যায়! কাজেই স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে দেশের ভেতরেই ইংলিশের কবলে পড়তে হবে প্রতিনিয়ত ... ... তাই শুরু থেকেই ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানোর আগ্রহ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। আমার গ্রামের বাড়িতেও সেই অজ পাড়া গাঁয় ইংলিশ মিডিয়াম কিন্ডারগার্টেন চলে ভালভাবেই।
চাকুরী, আদালত, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলায় হউক -- ইংলিশ মিডিয়ামে অতিরিক্ত পয়সা দিয়ে অতিরিক্ত যন্ত্রনাময় অর্ধশিক্ষিত তৈরী করাতে অনেক অভিভাবকই আগ্রহী হবে না।
আমি আমার অধীনে যারা থিসিস করে তাঁদের থিসিসের অ্যাবস্ট্রাক্ট বা সারমর্মটা বাধ্যতামূলক ভাবে বাংলাতেও করাই। এই বুদ্ধিটা পেয়েছিলাম একটা জাপানি জার্নাল থেকে। সবকিছু জাপানিতে থাকলেও সবগুলো অ্যাবস্ট্রাক্ট একটা পাতায় ইংলিশে দেয়া থাকতো। ওটা পড়ে কোনোটা ইন্টারেস্টিং লাগলে সেটা খুলে ওটার চিত্র, টেবল ইত্যাদি দেখে বোঝার চেষ্টা করতাম কী গবেষণা করেছে। বাংলাদেশ থেকে সেমিনার সিম্পোজিয়ামের কাজগুলোর প্রকাশনাতে এমন বাধ্যতামূলক বাংলা সারমর্ম দেয়া থাকলে আগ্রহী পাঠক বাড়তো নিঃসন্দেহে। এক্ষেত্রে বাংলা না জানাটা কোন সমস্যা করবে বলে মনে হয় না। ফরাসী না জানা সত্বেও ফরাসী ভাষায় অ্যাবস্ট্রাক্ট জমা দেয়ার অভিজ্ঞতা আছে (পেপার ইংলিশে), তা-ও সেটা ভিয়েতনামে বসে করা। সেটার জন্য ট্রানস্লেশন সার্ভিস এদেশেও দেয়া সম্ভব।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
ভাষা হিসেবে ইংরেজি/অন্য প্রয়োজনীয় ভাষা খুব গুরুত্ব দিয়ে শিখতে হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজিকে গ্রহন করা কতটা যুক্তিযুক্ত? একই সঙ্গে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কহীনতাও কতটা গ্রহনযোগ্য তা ভাবা দরকার!
আপনি জাপানের কথা বললেন, বিশ্বের উন্নত দেশ/জাতিগুলোর সবাই তার নিজের ভাষাতেই সর্বোচ্চ শিক্ষা নিয়েছে বলে জানি। অন্তত ইউরোপে জার্মান, ফরাসী, ইতালিয়, স্প্যানিশদের তো নিজের চোখেই দেখছি!
আমি বলতে চাইছি, যুক্তিতে যদি কোন মাধ্যম অপেক্ষাকৃত উন্নত হয়ে থাকে তবে দেশের সব শিশুর জন্য সেই ব্যবস্থাটাই নয় কেন!?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমাদের শুধু প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষাই নয়- উচ্চশিক্ষাও বাংলাতেই হওয়া উচিত। উচ্চশিক্ষার সোপান ধরেই ছাত্র ছাত্রীদের একাংশ নতুন জ্ঞানের জন্ম দেয়; গবেষণা করে।তার জন্য যে জিনিসটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল সৃজনশীলতা; উদ্ভাবনশীলতা। মানুষ স্বপ্ন দেখে মাতৃভাষায়। তাই সৃজনশীল আবিষ্কারের পথপরিক্রমায় মস্তিষ্কচর্চা কখনো back translation করে হতে পারেনা। উচ্চশিক্ষা বাংলাভাষায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের জাতীয় মুক্তি কস্মিনকালেও হবেনা, guaranteed.
একবার এক বাসায় গিয়েছি, দেখি ওদের ইংলিশ মিডিআম-এর six বা seven পড়ুয়া ছেলে একটা বাংলা পত্রিকা হাতের কাছে পেয়ে পরার চেষ্টা করছে | খুব কষ্ট করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে আহ্লাদী করে করে দু'একটা শব্দ বানান করে করে পরছে আর ভুল করছে | এই দেখে খুব খুশি হয়ে তার মা তিন-গুন আহ্লাদে গদোগদো হয়ে বলছে "ওরে আমার সোনাটা পড়তে পারছে না! থাক থাক, আর পরা লাগবে না" | মহিলা'র বুক গর্বে বেশ খানিকটা ফুলে উঠলো | খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ছেলে ও ছেলে'র মা'র গালে চড় মারতে
যা হোক, বাংলা কম জানা'টাকে ইংরেজি বেশি জানার একটা লক্ষণ বলে এরকম অনেকেই মনে করে | একবার কোথায় যেন পড়েছিলাম- একটা সাধারণ মানুষ, বড় হবার সময়, যদি যথাযথ সুযোগ পায়, তাহলে একসাথে ছয়টা পর্যন্ত ভাষা শিখতে পারে, সেই ক্ষমতা মানব-মস্তিষ্কের আছে, এর জন্য জিনিয়াস হবার দরকার নেই | তবে মানসিক প্রতিবন্ধীদের কথা আলাদা, তাদের জন্য একটা ভাষা শেখাও কষ্টকর, দুটো তো দুরের কথা |
ইংরেজি ভালো শিখতে চাওয়া দোষ'এর কিছু না | তবে বাংলাদেশ'এ বাস করে বাংলা বাদ দিয়ে যারা ইংরেজি শিখে, তারা আসলে প্রতিবন্ধী বলেই দুটো ভাষা একসাথে শিখতে পারছে না, এদের ওপর রাগ করার কিছু নেই | এদের সংখ্যা আমাদের দেশ'এ যত বাড়বে, আমরা প্রতিবন্ধী অলিম্পিক'এ তত বেশি মেডেল জিতব | এইসব অলিম্পিক'এ অংশ নিতে যখন এরা দেশ-বিদেশে যাবে, তখন তো বাংলা বললে হবে না, তাই এরা ইংরেজি শেখে | এইসব প্রতিবন্ধী'দের প্রতি আমাদের সদয় হব উচিত, অন্তত অলিম্পিক মেডেল'এর আশায় হলেও |
ইংরেজিকে বিষয় হিসেবে নয় ভাষা হিসেবেই শেখা উচিত কিন্তু ইংলিশ মিডিয়ামে নয় সাধারণ স্কুলেই
শুধু ইংরেজি দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশের বেশিরভাগ গ্র্যাজুয়েট শুধু লোকল মার্কেটেই কাজের সন্ধান করে
০২
ব্রিটিশ আমলে যেমন ভারতের ছাত্রদের ভারতীয় বৃটিশ স্কুলগুলো বৃটেনের দেশপ্রেম শেখাতো তেমনি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো্ও অন্য কোনো দেশের সংস্কৃতি শেখায়
এদের বেশিরভাগের কারিকুলাম আর বইপত্র আশি নব্বই বছর আগে ইউরোপ আমেরিকার পরিত্যাক্ত কারিকুলাম আর টেক্সটবুক
আধুনিকতার কোনো নামগন্ধ ওসবে আছে কি না সন্দেহ
এর থেকে বাংলাদেশের কারিকুলাম দশ বছরে হলেও একবার রিভিউ হয় কিন্তু ওইসব ইংলিশ মিডিয়ামের কারিকুলাম আপডেটের কোনো লোক নেই। ধারণাও নেই
০৩
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষকেরই কোনো শিক্ষাবিষয়ক প্রশিক্ষণ নেই
০৪
আমার পর্যবেক্ষণে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে যে মুসলমানবাদী প্রবণতা বেড়েছে তার সিংহভাগই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে আসা;
আমার ধারণা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ার কারণে এরা না হতে পারে বাঙালি না হতে পারে ইংলিশ তাই শেষ পর্যন্ত বেশি করে মুসলমান হতে চায়
চমৎকার পর্যবেক্ষণ!
অলস সময়
প্রয়োজনীয় পোস্ট। মন্তব্যগুলোও পড়লাম মনোযোগ দিয়ে। আপনার পোস্টের একজায়গায় আপনি আপনার একটি আতংকের কথা বলেছেন, সেই একই আতংক আমার ভেতরও আছে। শুভেচ্ছা জানবেন।
আমার মতামত বলি:
১. বাঙালি শিশুরা কেন ইংরেজিতে শিখবে?
বাঙালি শিশুরা ইংরেজি শেখার কারণ স্পষ্ট: বিশ্বের সাথে কমিউনিকেশন। ইংরেজিতে শেখার দরকার আছে কিছু কিছু কনটেক্সটে। যেমন টেকনিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি পর্যায়ে যে জ্ঞান অর্জন করা হয়, তার সোর্সের সিংহভাগই ইংরেজিতে। এটাকে জোর করে বঙ্গানুবাদ করার কোনো দরকার নাই। ইন জেনারেল, বিদ্যালয় পর্যায়ে শেখার জন্য জ্ঞানের যে উৎস (বইপত্র), তা বাংলায়ই প্রতুল। সুতরাং সাধারণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয় পর্যায়ে ইংরেজি শেখার দরকার থাকলেও ইংরেজিতে শেখার দরকার চোখে পড়ছে না। কোন ক্ষেত্রে ইংরেজিতে শেখার দরকার হতে পারে, তার একটা উদাহরণ ৩ নংয়ের উত্তরে আছে।
২. (যদি প্রযোজ্য হয় তাহলে) বাঙালি শিশুরা কেন ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠবে?
১ এর মতো, এক্ষেত্রেও ভিন্ন সংস্কৃতি জানার দরকার আছে, ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠার দরকার নাই। ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞানের মতো সাংস্কৃতিক জ্ঞানও কোনো সংস্কৃতিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। সংস্কৃতি স্থবির জিনিস না, পরিবর্ধনশীল। কোনো সংস্কৃতির ভালো কিছু গ্রহণ করা ও নিজের সংস্কৃতির খারাপ কিছু থাকলে সেটাকে সংশোধনের মাধ্যমেই নিজের সংস্কৃতিটা আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এখানে উদ্দেশ্যটা হওয়া উচিত 'নিজের সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করা'। এই কাজটা করতে অন্য সংস্কৃতি সম্পর্কে জানলে সুবিধা হয়; কিন্তু অন্য সংস্কৃতিতে নিজেই ডুবে গেলে নিজের সংস্কৃতির পায়ে কুঁড়াল মারা হয়।
৩. প্রথাগত বাংলা মাধ্যমের চাইতে যদি অন্য কোন মাধ্যম উন্নত/ভালো হয়ে থাকে তাহলে সেই সুবিধা দেশের সব শিশুর জন্য না হয়ে কেন কেবল বিশেষ কোন গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ হবে?
অর্থনৈতিক কারণেই এটা সম্ভব না। আর 'সব'শিশুকে একই ছাঁচে ফেলাটাও কাজের কথা না। এখানে প্রশ্ন হলো দেশের প্রয়োজনে প্রত্যেকটা শিশুকে অপটিমাইজড শিক্ষাদানের চেষ্টা করা। বাংলা মাধ্যমে যেমন বিজ্ঞান-কলা-বাণিজ্য ভাগ আছে, তেমনিভাবে শিক্ষামাধ্যমেও ভাগ থাকতে পারে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে একটা শিশুর ভবিষ্যত কর্মের বাজার শুধু বাংলাদেশ না, বিদেশও। যাদের টার্গেট বিদেশ, তারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার মাধ্যমে ভবিষ্যত কর্মের বাজারে যদি এগিয়ে যায়, তাতে দোষের কিছু দেখি না। মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রেও এটা সত্য। তবে যে মাধ্যমই হোক, যেহেতু সবারই মূল উদ্দেশ্য 'দেশের' অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা, সেহেতু শিক্ষার বিষয়ের (সিলেবাসের) একটা বিরাট অংশই একই রকম হবে, মাধ্যমের সাথে সিলেবাসের আকাশ-পাতাল পার্থক্য হওয়ার কারণ দেখি না।
৪. যদি সত্যিই এই শ্রেণীটি বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি বিবর্জিত হয়ে বেড়ে ওঠে তাহলে তাদের কাছ থেকে এই দেশ কী আশা করতে পারে?
ক্যাচাল আশা করতে পারে।
৫. সাধারণের সঙ্গে এই শ্রেণীটির যে দূরত্ব সেটি কি সুস্থ এবং স্বাভাবিক?
সুস্থ না, তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে খুব একটা অস্বাভাবিকও না। আমাদের পেশাভেদে শ্রমের মূল্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে, সাধারণের সাথে রাজনীতিবিদদের পার্থক্যও আকাশ-পাতাল। আর্মির বাজেটের সাথে স্বাস্থ্য বা শিক্ষা বাজেটের তুল্য ব্যবহারিক পার্থক্যও বিশাল। প্রত্যকটা পার্থক্যই অসুস্থতার জন্ম দেয়।
৬. বেড়ে ওঠার পর বিস্তৃত সমাজে কি এই শিশুরা নিজেদেরকে মিলিয়ে নিতে পারে?
বিস্তৃত সমাজে মিলিয়ে নেয়ার দরকার বোধ করে কিনা, সেটা আগের প্রশ্ন। বিস্তৃত সমাজে মিলিয়ে নেয়ার কাজটা বাংলা মিডিয়ামের অনেকেও পারে না, অনেকে দরকারও বোধ করে না। মানুষের মধ্যে শ্রেণী আছে এবং অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে। নিজস্ব শ্রেণীসমাজে মিলিয়ে নেয়াটাকে সাধারণত বেশি জরুরি মনে করা হয়।
৮. দৃশ্যত যে বিভেদ বাংলা, ইংরেজি আর আরবী মাধ্যমে শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে, সেটি কী ভবিষ্যতে কোনো সামাজিক/রাষ্ট্রীয় টানাপোড়েনের জন্ম দিতে পারে?
রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক টানাপোড়েনের জন্য মাধ্যমের প্রভাব খুব কম, মাধ্যমের ব্যবহারটা কিভাবে হচ্ছে, সেটা আসল। আমাদের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট ভাষামাধ্যমে পড়াশুনার ক্ষেত্রে অর্থনীতির ভূমিকা অনেক। টানাপোড়েনের ব্যাপারটা মূলত অর্থনৈতিক।
৯. যদি করে, তাহলে একটি সুস্থ সমাজের ভেতরেই ভিন্ন একটি গোষ্ঠীর জন্ম দিয়ে চলা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্র কেন স্বীকৃতি দিয়ে চলছে?
স্বীকৃতিতে সমস্যা দেখি না; কিন্তু মনিটরিংয়ে মূল সমস্যা।
পোস্টে ৫ তারা। তবে পোস্টের অনেক যায়গায়ই একপেশে মনে হয়েছে। যেমন, প্রশ্নগুলোর অধিকাংশই 'উত্তর আগে থেকে ধরে নেয়া' টাইপ। লেখকও মনে হয় বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন। প্রশ্নগুলো আরেকটু 'খোলা' হলে ভালো হতো বলে আমার ধারণা।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
যেটুকু একপেশে মনে হয়েছে সেই দায় স্বীকার করছি। লেখাতেও খানিকটা ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছি। পাঠকের খারাপ লাগলে দুঃখ প্রকাশ করছি।
ইংরেজি মাধ্যম নিয়ে আমার নিজস্ব মতামত থাকতে পারে। কিন্তু সেটা সবাইকে মেনে নিতে হবে তা কখনোই নয়।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
অনার্যদা' লেখাটা চমৎকার। কিন্তু আমি সম্পূর্ন আলাদা একটা দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই। আপনার মতই আমিও নিম্নবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি। বিত্ত না থাকলেও বাবার প্রাণান্ত প্রচেষ্টায় চারপাশে একটা ভাল পড়ালেখার পরিবেশ পেয়েছি সবসময়। দেখেছি যে সেখানে সাদা কথায় "বড়লোকদের" ঘোরাফেরা কত সহজ আর সাবলীল। ছোট থেকে দেখেছি সব রকম সুযোগ সুবিধা, আরাম আয়েশ তারা কত সহজে এফোর্ড করতে পারে। টাকা থাকার কারণে ফেল করা সন্তানের সামনেও কত রকম বিকল্প দরজা খুলে যায়। আবার ধরেন শুধুমাত্র টাকা থাকার কারণেই একটা আভিজাত্য ও বিভেদের রেখা তো প্রথম থেকেই অনুভব করেছি। বাংলাদেশের ধনীরা এক সময় আভিজাত্যের ও সর্বোতক্রিষ্ট শিক্ষা হাসিলের আকাঙ্খায় সন্তানকে ভারতের কনভেন্টে পাঠিয়েছে, পরিবর্তন হিসেবে এখন দেশী কনভেন্টে সোজা কথায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পাঠাচ্ছে। পয়েন্টটা হল এই বিভেদ আগেও ছিলো, এখনো আছে। যাদের টাকা আছে তারা তাদের জন্যে নিজস্ব একটা বেহেস্ত এই জীবনেই তৈরি করে নিচ্ছে। এই গোষ্ঠী ঈদের কোলাকুলি ছাড়া কখনই কিন্তু সাধারন মানুষের স্পর্শের মধ্যে আসেনি। সুতরাং একই গাছে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা সম্বলিত শাখা প্রশাখা থাকবেই যার ফলাফলের মোটাদাগে একটা উদাহরণ এই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হতে পারে খুব সহজেই। আমাদের এই দিকে নজর না দিয়ে বরং দেশের ৯৯% আম পাব্লিকের পাওনাটা পেল কিনা সেগুলো নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি। এই যে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে এত ছেলে মেয়ে পড়ে, রাজস্ব বিভাগতো তাদের একটা লিস্ট নিয়ে তাদের পরিবারের সবার ইঙ্কাম ট্যাক্স রিটার্নের ফাইল্টা চেক করতে পারে। এতে যদি কিছু ক্যাশফ্লো আসে সেটা দেশের গরীব গুর্বো লোকগুলার জন্যে ধরেন অন্তত সামান্য কিছু রেশনের ব্যাবস্থা করা যেতে পারে। অথবা দেশের রাস্তাঘাট গুলা ঠিক করা হল, রেল ব্যাবস্থা ঠিক করা হল, নদীগুলার ড্রেজিং করা হল। মানুষকে ঠিকমত ইন্সপায়ার করা গেলে কিন্তু অনেক কিছু করা যায়।
আমি নবম শ্রেণী পর্যন্ত্য ঢাকার একটা প্রথম সারির ইংরেজি মাধ্যমে পড়েছি, পরে অতিরিক্ত খরচ আর ইংরেজি মাধ্যমের পরিবেশ পছন্দ না হওয়ায় ন্যাশনাল কারিকুলামে চলে আসি। আমার কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরি:-
১) ইংরেজি মাধ্যমে সব উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলে-মেয়ে পড়ে- এই ধারণাটা আংশিক সত্য। আমার স্কুলে একটা মেয়ে ছিল যে ভ্যানে চড়ে স্কুলে আসত, স্কুলের বেতন তখন ছিল প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা। কিছু কিছু অভিভাবক যে কিরকম ডেসপারেট হতে পারেন তা বিশ্বাস করা যায় না। আমি উলটো সেন্ট যোসেফে অনেক বিত্তবান ঘরের ছেলে দেখেছি।
২) স্কলাস্টিকা, মাস্টারমাইন্ড, সানিডেইলের মত ইস্কুলগুলোর মান আসলেই খুব ভাল(স্কলাস্টিকার ব্যাপারে অবশ্য কিছু সংশয় আছে)। আমাদের স্কুলের শিক্ষিকারা মধ্যবিত্ত-উচ্চমধ্যবিত্ত ঘরের ছিলেন এবং অধিকাংশেরই বিদেশে পড়াশুনার অভিজ্ঞতা ছিল। আমার স্কুলে পোলাপাইনের এত বেশি যত্ন নেওয়া হত যে একজন এমন মন্তব্যও করেছিল যে স্কুলটাতে মনে হয় যেন ফার্মের মুরগী পালা হয়! ক্লাসের পড়া ক্লাসেই শেষ করে দেওয়া হত, এমনকি বার্ষিক পরীক্ষার আগে ক্লাসেই পুরো সিলেবাস রিভিশন করিয়ে দেওয়া হত যাতে বাসায় গিয়ে বেশি পড়া না লাগে। বাপ-মা গোয়ার্তুমি না করলে সাধারণত কোচিং করা লাগত না। নাইন-টেন-ইলেভেনের কোন কোন শিক্ষক(খন্ডকালীন) আবার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিংবা সহকারী অধ্যাপক ছিলেন(আমাদেরই এক অংক শিক্ষক ঢাবির সহকারী অধ্যাপক ছিলেন)।
৩) যে বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক/উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে হয়, সেই বোর্ডের প্রণীত পাঠ্যসূচিই মূলত সব স্কুলগুলোকে অনুসরণ করতে হয়। এতদিন স্কুলগুলো এডেক্সেলের পাঠ্যসূচি অনুসরণ করত, এখন মনে হয় কেমব্রিজ অনুসরণ করে। আমার স্কুলে ইংরেজি বিষয় তিনভাগে বিভক্ত ছিল- ১) ইংরেজি সাহিত্য ২) ইংরেজি ব্যাকরণ ৩) সৃজনশীল রচনা(গল্প আর প্রবন্ধ শেখানোর ক্লাস)। ওই ইংরেজি সাহিত্য পড়েই যা ইংরেজি শিখেছি, ব্যাকরণ মুখস্থ করে খুব বেশি দূর আগানো যায়। খুব সম্ভবত একারণেই বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ইংরেজির অবস্থা করুণ হয়। প্রত্যেক মানুষেরই একটা ল্যাঙ্গুয়েজ ইংস্টিঙ্কট থাকে যার কারণে সে খুব সহজেই একটা ভাষা রপ্ত করে ফেলতে পারে। এই ইন্সটিংক্টটা ছোট বয়সে সবচেয়ে সক্রিয় থাকে, পরে বড় হওয়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়। একারণে একটা শিশু এক মাস ফ্রান্সে ছুটি কাটালে যে পরিমাণ ফ্রেঞ্চ শিখে, বড় হয়ে ওই একই পরিমাণ ফ্রেঞ্চ শিখতে তাকে বছরের পর বছর কোর্স করতে হয়। ছোটবেলা থেকেই ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে কথা আর লেখালেখি করার কারণে ভাষাটায় তারা নেটিভদের সমান পারদর্শীতা অর্জনে সক্ষম হয়। আমার মনে হয় ন্যাশনাল কারিকুলামে ইংরেজি ব্যাকরণের উপর থেকে জোর কমিয়ে ইংরেজি সাহিত্যের উপর গুরুত্ব বৃদ্ধি করলে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি জ্ঞান আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ভাল হবে। অবশ্য সেক্ষেত্রে ইংরেজি সাহিত্য পড়ানোর মত যোগ্য শিক্ষকও তৈরী করতে হবে।
ব্রিটিশ সিস্টেমের আরেকটা সুবিধা হল এই সিস্টেমে মুখস্থবিদ্যা একদমই সহ্য করা হয় না। স্কুলের টিচাররা বারবার করে আমাদেরকে একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন যে পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নের উত্তর পড়ে তাদের যদি কখনও মনে হয় যে আমরা মুখস্থ করে লিখেছি, তাহলে অর্ধেক নম্বর কেটে রাখবেন। আমাদের প্রশ্নগুলোও এমন হত যে সারা বছর মুখস্থ করেও পরীক্ষায় টেনেটুনে পাশ করতে জান বের হয়ে যেত। পরীক্ষাগুলো অত্যন্ত স্টিমুলেটিং হত, যার কারণে পড়াশুনার প্রতি অনীহা থাকা ছেলেটাও পরীক্ষা দিয়ে মজা পেত। ন্যাশনাল কারিকুলামের এটা কি, ওটা কি জাতীয় বেরসিক প্রশ্ন ছিল না। মাধ্যমিক স্তরে আমাদের কোন নির্দিষ্ট বই ছিল না, পাঠ্যসূচীর বিষয়গুলো শিক্ষকের নোটের পাশাপাশি বিভিন্ন বই ও নেট ঘেটে বের করতে হত। গবেষণা করে পড়ার এই পদ্ধতি ন্যাশনাল কারিকুলামে প্রয়োগ করতে গিয়ে বিশাল ধরা খেয়েছি। বুয়েটে আর্কিটেকচারে পড়া আমার বাবা ও কাজিনও একই কথা বলেছে যে ইউনিভার্সিটি লেভেলেও বই থেকে হুবহু না লিখতে পারলে নম্বর নিয়ে বিপদে পড়তে হয়। শুধু এই একটা পয়েন্টের কারণেই আমি ইংরেজি মিডিয়ামকে বাংলা মাধ্যমের চেয়ে এগিয়ে রাখব।
এই সিস্টেমের আরেকটা সুবিধা হল যে আপনি বিজ্ঞান নিলে ব্যবসা পড়তে পারবেন না, এমন কোন কথা নেই। অনেকে দেখেছি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতের পাশাপাশি অর্থনীতি, একাউন্টিং, আর্টও নিত। কারও রেজাল্ট খারাপ বলে তাকে ব্যবসা পড়তে বাধ্য করার মত কুৎসিত ব্যাপারটা ছিল না। যারা অতিরিক্ত মেধাবী, তারা বোর্ডের(তৎকালীন এডেক্সেল) অনুমোদিত সব বিষয়ই নিতে পারত(এর জন্য অবশ্য অধ্যক্ষের অনুমতি নিতে হয়)। এতে কারও জন্যই কোন পথ সারা জীবনের জন্য বন্ধ হয়ে যেত না।
৪) একটা ব্যাপার অবশ্য অস্বীকার করার উপায় নেই যে ইংরেজি মাধ্যমের পোলাপাইন বাংলাদেশ সম্পর্কে একজন বিদেশীর চেয়ে কোন অংশেই বেশি ওয়াকিবহাল না। ইংরেজি মাধ্যমের সিংহভাগ পোলাপাইন ১৯৭১ এর ইংরেজি আর নাইন্টিন সেভেন্টি ওয়ানের বাংলা জানে না। আমার ইংরেজি মাধ্যম ছেড়ে আসার এটি অন্যতম কারণ। আমরা শেক্সপিয়র আর ইংরেজি সাহিত্যকে যেভাবে কাটাছেড়া করতাম, বাংলা সাহিত্যকে তার এক-তৃতীয়াংশও করতাম না। আমাদের স্কুলে অবশ্য ক্লাসে সেভেন নাকি এইটে জাহানারা ইমামের "একাত্তুরের দিনগুলি" পড়ানো বাধ্যতামূলক ছিল, অন্য স্কুলের কথা জানি না। ক্লাস এইট পর্যন্ত্য আমাদের ইতিহাস পড়তে হত যেখানে মানব বিবর্তন(মানব ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টা কিন্তু ন্যাশনাল কারিকুলামে অতি সাবধানতার সাথে এড়িয়ে যাওয়া হয়, ফালতু ধর্মীয় সেন্টিমেন্টের কারণে একটা দেশের শিক্ষাবোর্ড জ্ঞানের ব্যাপারে এরকম চেরিপিকিং করলে তো ভয়ানক সমস্যা) থেকে শুরু করে গ্রীক সভ্যতা, অন্ধকার যুগ ও রেঁনেসা পেরিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত্য পড়ানো হত(প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমার বাংলা মাধ্যমের অনেক বন্ধু এখনও জানে না প্রথম আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট কি, হিটলার কি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ছিল নাকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। এই বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ আবার ক্যাডেট কলেজের প্রথম সারির ছাত্র, নটরডেমের ১৪০০টা ছেলের মধ্যে প্রথম ১০০জনের মধ্যে থাকে। বলাই বাহুল্য, এরাই ফেসবুক ও বিভিন্ন জায়গায় হিটলারকে নিয়ে লুল ফালায়, ফেসবুকে প্রোপিকে নাৎসী প্রতীক লাগিয়ে দোজাহানের অশেষ নেকি হাসিল করে)। মোট কথা, ইংরেজি মাধ্যমে ইতিহাস বলতে পাশ্চাত্য সভ্যতা আর দর্শনের ইতিহাস পড়ানো হয়(সেই সূত্রে ব্যাবিলন, সুমের আর প্রাচীন মিশর সম্পর্কেও কিছুটা পড়ানো হয়েছিল), ইসলাম-হিন্দু-খ্রীষ্টান-বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি চীন আর জাপানের ধর্মীয় মতবাদের একটা সংক্ষিপ্ত ইতিহাস পড়ানো হয়। ভারতের ইতিহাস বলতে হরপ্পা আর মহেঞ্জো দারো পর্যন্ত্যই পড়ানো হয়, ইস্ট ইন্ডিয়া সম্পর্কে কেন পড়িনাই এটা পরে জানতে পারছি। দিনে মাত্র চল্লিশ মিনিট বাংলাদেশ নিয়ে পড়ে এই দেশের কৃষ্টি-কালচার সম্পর্কে পোলাপাইন অজ্ঞ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তার উপর আমাদের সমাজবিজ্ঞান বইয়ের ইতিহাসজ্ঞানও বেশ সন্দেহজনক। ক্ষুদিরামকে সেখানে "সন্ত্রাসী" বলা হয়েছে, একটা রাজাকারের নামও সেখানে উল্লেখ করা হয় নাই। এই ইতিহাসজ্ঞান নিয়ে শুধু ইংরেজি মাধ্যম কেন, বাংলা মাধ্যম থেকেও ভবিষ্যতে প্রচুত কেপি টেস্ট পজিটিভ পোলাপাইন বের হবে।
৫) উপরে লীলেনদার মন্তব্যটা আমাকে বেশ অবাক করেছে। প্রথমত, ইংরেজি মাধ্যমে "ব্রিটিশ দেশপ্রেম" শেখানো হয় না(অন্তত আমার স্কুলের সিলেবাসে সেটি ছিল না)। দ্বিতীয়ত, ধর্ন্মোদনার দিক দিয়ে ইংরেজি মাধ্যমের চেয়ে বাংলা মাধ্যমের পোলাপাইনই এগিয়ে আছে। মাধ্যমিক ধর্মবইতে কি আছে, তা নিয়ে আগে লিখেছিলাম, নিচের ক্লাসের ধর্মবইগুলো পড়ার দুর্ভাগ্য হয়নি দেখে আমি কৃতজ্ঞ। বাংলা মাধ্যমে ধর্মশিক্ষার পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যের মধ্যেও একগাদা অতি ভক্তিতে তেতো হয়ে যাওয়া ইসলামী গল্প আর কবিতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। জামায়াত-হিযবুতের ইসলামী মগজধোলাইয়ের জন্য কারা টেইলর-মেইড, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। আমার ইংরেজি মাধ্যমের ধার্মিক বন্ধুরা গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ডের কাছে ছ্যাকা খেয়ে ফেসবুকে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে। এদের দিয়ে আর যাই হোক, রগ কাটাকাটি আর শরীয়া বিপ্লব সম্ভব না।
তবে যাই হোক, ইংরেজি মাধ্যম থেকে দেশের প্রতি দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরী হবে না, কিন্তু বাংলা মাধ্যমকে উন্নত করতে না পারলে অভিভাবকরা জমিজমা বিক্রী করে হলেও পোলাপাইনকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াবে। শিক্ষাবোর্ড এখন ন্যাশনাল কারিকুলাম ইংরেজি ভাষায় অধ্যয়নের সুযোগ করে দিয়েছে যার ফলে আমার মত অনেক ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া পরে মূলধারার সাথে যুক্ত হয়েছে। আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থাকে উন্নত করে যদি ব্রিটিশ কারিকুলামের জন্য প্রতিযোগীতা সৃষ্টি করা যায়, আমাদের স্কুলগুলো গাছাড়া ভাবটা ত্যাগ করে শিক্ষার্থীদের যদি একটু যত্ন নেয়, তবে অভিভাভবকদের ইংরেজি মাধ্যম থেকে না সরে আসার কোন কারণ দেখি না। ইতিমধ্যে অনেক অভিভাবক ছেলেদেরকে ফাইভ-সিক্স পর্যন্ত্য ইংরেজি মাধ্যমে পড়িয়ে ভালমত ইংরেজি শিখিয়ে পরে আইডিয়াল-সেন্ট যোসেফ-রেসিডেনশিয়ালে ভর্তি করানোর পরিকল্পনা করছেন। অন্য স্কুলগুলো এই ফ্যাসিলিটি দেওয়া শুরু করলে ভবিষ্যতে এই ট্রেন্ড বৃদ্ধি পাবে।
দারুণ একটা জবাব, এমন কিছু কথাই আমি বলতে চাচ্ছিলাম। সম্পূর্ণ একমত পৃথ্বীর সাথে!
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
ইংরেজি তে পড়া দোষের কিছু না.
তাও ভালো ভাইজান বলে নাই যে বাংলাদেশে বাস করে বুয়েট এর শিক্ষকরা ইংরেজি তে কেন পড়াবে!
সমস্যা যদি থেকে থাকে তাহলে সেটা পাঠ্য বিষয়বস্তু নির্ধারণে.
নিজের ভাষায় যে ভালো না, সে অন্য ভাষায় 'ভালো'- এ ধরনের কথা আমি ঠিক বিশ্বাস করি না। আমার কাছে যে বাংলা ভাষায় খারাপ, তার ইংরেজির অবস্থাও মনে হয় সেরকম। রবীন্দ্রনাথ যখন একবার ইংল্যান্ডে গেলেন, তখন এক প্রবাসী ভদ্রলোক তাঁর কাছে এসে ইংরেজিতে কথা বলা শুরু করলেন। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় তিনি বাংলা ভুলে গেছেন এরকম দাবী করে খুব গর্ব নিয়ে কবির সাথে ইংরেজিতে বাতচিত করতে লাগলেন। ভদ্রলোক এক পর্যায়ে থামলে কবি শুধু বললেন, 'বাংলা বলতে পারো না ঠিক আছে, কিন্তু ইংরেজিটাও তো ভালো করে শেখো নি।'
আমি এখানে সব ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ুয়ার কথা বলছি না (কারণ ইংরেজি মিডিয়ামে পড়া অনেককেই আমি ভালো বাংলা বলতে, লিখতে দেখেছি), কিন্তু যেসব ইংরেজি মিডিয়াম পড়ুয়া 'আমি বাংলা বলতে পারি না' বলে নাক সিঁটকান তাদেরকে রবিবুড়োর ঐ কথাই বলতে ইচ্ছে করে।
একই কথা প্রযোজ্য মাদ্রাসার ছেলেদের ক্ষেত্রেও। যাই হোক, লেখাটা ভালো লাগলো। আমার দ্ষ্টিভঙ্গির সাথে মিলে গেলো বলেই হয়তো
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
এক্ষেত্রে আমি পরিবারগুলোর কথা বলবো। আমি মনে করি পারিবারিক শিক্ষাটা যদি ঠিকঠাক হয়, তাহলে স্কুলের বাংলা ইংরেজি মিডিয়াম সমস্যা না। বাবা মা যদি মনে করে সন্তান ইংরেজিতেই বা বাংলিশেই কথা বলবে, তাহলে সেটা বাংলা মিডিয়ামে পড়েও সম্ভব।
প্রথম স্কুল পরিবার, বাবা মা...
আমার মেয়ে ইংরেজি মিডিয়ামে পড়লেও আমি ভয় পাই না... কারণ আমি জানি কালচারটা সে বাড়িতেই ঠিকঠাক শিখবে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মাধ্যম যাই হোক, কারিকুলাম একই হওয়া উচিত। আর মানুষ সাধারণত মাতৃভাষার মাধ্যমেই এফিসিয়েন্টলি শিখতে পারে, তাই মাতৃভাষাই শিক্ষার প্রাথমিক মাধ্যম হওয়া উচিত।
ইংরেজী শিখা দরকার। বাংলা মিডিয়ামে যারা পড়ি তারাতো প্রথম বারোটা ক্লাসে ইংরেজী শিখিই, কিন্তু সেটা একটু ইফেকটিভ হলেই আর ইংরেজী শিখতে না পেরে পিছিয়ে পড়ার ব্যাপার থাকতো না। উদাহরণ স্বরূপ, আমরা ইংরেজীতে পড়তে লিখতে শিখলেও বারো বছরে একটা ইংরেজী বাক্য নিজে থেকে না বলেও ভালো গ্রেড পেতে পারি। অথচ ঠিক মত ডিজাইন করলে এর চেয়ে অনেক কম সময়ে অনেক ভালো ভাবে ভাষা হিসাবে ইংরেজীতে আমাদের দক্ষতা অনেক বেড়ে যেত। দিন শেষে ইংরেজী আরেকটা ভাষা মাত্র, সেটা শিখার জন্য পুরো শিক্ষার মাধ্যম পালটে নেয়ার কিছু নেই।
যারা ইংরেজী মিডিয়ামে পড়ে, তাদের খুব কম অংশ নিশ্চয়ই বাংলাদেশের পাবলিক ভার্সিটিগুলোতে পড়তে আসে/চান্স পায়। তার মানে তাদের শিক্ষা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যথেষ্ট না। এই কথা বলছি কারণ শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে পাবলিক ভার্সিটিগুলো এখনো প্রাইভেটের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে আছে। তাইলে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ার বাড়তি সুবিধাটা কী? আমি অন্তত দেখছি না। বিদেশে পড়তে আসার ক্ষেত্রে আমার বাংলা মিডিয়ামতো কোন সমস্যা করেনি।
আমার অভিজ্ঞতা (খুব সামান্য যদিও) বলে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়াদের বেশির ভাগ দেশীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতির সাথে কোন সংযোগ খুঁজে পায় না (জাতীয় দিবস নিয়ে জিজ্ঞেস করলে উত্তরঃ জানি না), সেই ক্ষেত্রে দেশের মাটিতে বিদেশী মন চাষ করার দরকার দেখি না।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা কি আমাদের কেউ?
- এই ধরণের বিভাজনের কারণ দেখছি না। 'ইংলিশ মিডিয়াম'-এটা বিভাজনের কোন মার্কারই না ইনফ্যাক্ট। একটা মানুষের আচার-আচরণ, মানসিকতা ইত্যাদি নানাবিধ প্যারামিটার কেমন হবে সেটা কিন্তু তার পরিবারের উপরই নির্ভর করে মূলত।
আমার ইংলিশ মিডিয়ামের অনেক বন্ধু আছে যাদেরকে আমার বাংলা মিডিয়ামের অনেকের চাইতে বন্ধু হিসেবে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়, আবার অনেকজনকে চিনি যারা বাংলা পড়তে পারে না বলে গর্ব করে। তাহলে কিসের ভিত্তিতে একই জায়গার দুই গ্রুপের মানুষকে বিচার করবো? অবশ্যই পারিবারিক শিক্ষা এইখানে অনেক বড় একটা ব্যাপার। তাই নয় কী?
"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"
বাংলাদেশে বাংলা মাধ্যমে ইংরেজি শিক্ষার চিত্র জানতে আগ্রহীরা এই পেপারটা পড়ে দেখতে পারেন।
****************************************
পোস্টটা দেখে অনেক ভাল লাগল। আমি নিজেই ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র। আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথাই বলি।
আমি যে স্কুলে পড়তাম, সেখানে ছোটদের ৩ টি কাজ। বই খাতা নারাচারা করা (তেমন কেউই করত না), টিফিন খাওয়া এবং এনিমেশন (অবশ্যই ইংরেজি) দেখা (সবারই খুব আগ্রহ)। কোন এক বিচিত্র কারনে, বেশিরভাগ এনিমেশনেই মুরগি থাকে।
আমার স্কুলে অনেক বড় খেলার মাঠ ছিল (৯০% ই মা স্কুলেরই তা নেই), কিন্ত খেলতে পারতাম না। রোদে খেললে নাকি আমরা অসুস্থ হয়ে যাব। তবুও নিয়ম ভেঙে খেলতে যেতাম। ফলাফল- স্কুলের নিয়ম না মানার কারনে শাস্তি, গার্ডিয়ান মিটিং...। নো খেলা, ওয়াচ টিভি। মুরগি আমরা হব নাতো কে হবে ????
স্কুলে অবস্থানকালে বাংলায় কথা বলা নিষেধ। প্রান খুলে হাসতেও পারতাম না। ইংরেজি কথা আর বাংলা হাসি, সে কি হয়??? (এখন নাকি সাইফুর'স এ ইংরেজিতে কাশিও দেয়া শেখায়)।
আমাদের বইগুলো ৭০-৮০ বছর আগের ছিল না। নিয়মিত আপডেট করা হতো। একেকটা বইয়ের যে দাম...।
সেখানে বাংলাদেশের ইতিহাসের কথা কিছু নেই। থাকবে কিভাবে??? আমাদের তো দেশি বই পড়ার সুযোগ হয় নাই। তবে, আমি বাংলা সমাজ বিজ্ঞান বইটি পড়েছি। পড়ে যত না ভাল লেগেছে, তার চেয়ে বেশি হতাস হয়েছি। এই বই ৫ বছর পর পর সংস্ক্রার করা হয়। কেন তা মনে হয় বুঝতে পেরেছেন। কোনও মাধ্যমে পরেই বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাশ জানা সম্ভব নয়। তবে, বাংলা মাধ্যমে অন্য দেশের ইতিহাস পড়ানো হয় না। আলেক্সান্ডার, জুলিয়াস সিজার পড়ালে কি খুব বেশি ক্ষতি হতো??
অনেক মন্তব্যকারি তাদের আচার-বাবহারের কথা বললেন, সংস্কৃতির কথা বললেন। ভাই, ব্যবহারে বংশের পরিচয়, স্কুলের নয়। আপনারা হয়ত জানেন, মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা-আন্দলনকারিরাও ইংরেজি মাধ্যমে পরেছেন।তখন এটি ছিল একমাত্র মাধ্যম। তাঁদের দেশপ্রেম, সংস্কৃতিবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা গাধামী ছাড়া আর কিছুই না। আজ যারা উদ্ধত, তারা বাংলা মাধ্যমে পড়লেও এরকমই থাকত।
স্কুল পেরিয়ে, একটি চমৎকার কলেজে (ইংরেজি ভার্সন) পড়ার সুযোগ হয়েছিল। দুই মাধ্যমের শিক্ষক এক হওয়াএ মাঝে মাঝে তারা বাংলায় লেকচার দিতেন। পুরো স্কুল জীবন ইংরেজিতে পার করলেও আমার কথাগুলি বুঝতে কোন সমস্যা হয়নি। স্কুলের বাংলা ক্লাসে আমাদের ভালভাবেই বাংলা শিখিয়েছে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার কারনে একজন বাংলা পড়তে পারবে না, এ কথা আমার কাছে অবিশ্বাস্য।
ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহনে আমার বেশ সুবিধা হচ্ছে, কিন্তু অন্যদের যে খুব বেশি অসুবিধা হচ্ছে তা কিন্তু না।
রাষ্ট্র কেন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল উনুমোদন দেয় , হিন্দি উর্দু দেয় না ??? উনুমোদন দিলেই বা লাভ কি ??? উচ্চশিক্ষা আপনি হিন্দি, উর্দুতে নিতে পারবেন না, তাই বাবা-মা এমনকি আপনি নিজেও এতে যেতে চাইবেন না।
এখন দেশে অনেক ই মা স্কুল। এই স্কুলগুলোর বেতন আকাশচুম্বী। এখানে এক মাসে যে মাইনে নেয়া হয় তা একটি সরকারি স্কুলে ১১ বছরের চেয়ে বেশি !!!! প্রকৃতপক্ষে এটি একটি উৎকৃষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান !!!!! তাই আজকাল ব্যবসাইরা পন্য-বানিজ্যের চেয়ে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল খুলতে বেশী আগ্রহী। দুঃখিত, শিক্ষা তো একটি পন্যই, এখানে তবে বিনয়োগ নয় কেন?????
আর যদি এটা সর্বজনীন করা হয়, তবে কি ব্যবসা জমবে ?????
মন্তব্যে
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
অন্তত আমার জীবনে যা একটু খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি তা ইংরেজি শিক্ষার বদৌলতে। এক মিশনারি স্কুলের বাংলা মিডিয়ামে এসএসসি পর্যন্ত যতটুকু ইংরেজি পড়েছি, ততটুকুই আমার ইংরেজি বিদ্যা। তাই দুই ছেলের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াচ্ছি। আমার মাঝে মাঝে ওদের উপর রাগ উঠে যায়। ইয়ার নাইনে পড়ে অথচ বাংলা তো পারেই না, দুনিয়াদারি সমন্ধে কোন ধারনা নাই, দোকান থেকে কোন জিনিস কিনতে পারে না। পয়সা দিয়ে গাধা বানাচ্ছি।
এই কিছুদিন আগে ও ৩ জন ইংলিশ মিডিয়ামের ক্লাশ এইটের বাচ্চা পড়াতাম। খুব খারাপ লাগত যখন ওরা বলতে পারতনা বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস এগুলো কি? এমন কি কখনোই এইসব ব্যাপারে ওদের মধ্যে জানার কোন আগ্রহ দেখিনি।
চট্টগ্রামে কিন্তু উচ্চবিত্ত ছাড়াও আরেকটি বিশেষ শ্রেণীর মধ্যবিত্তও কিন্তু ইংলিশ মিডিয়ামের দিকে ঝুঁকছে। চট্টগ্রামে এরা দুবাই ওয়ালা হিসাবে পরিচিত। এদের সবার পিতা/মাতা যে দুবাই থাকে তা না, হটাৎ ধনী হওয়া পরিবার বুঝাতে এই নামকরণ। এই ধরনের পরিবার ই আজকাল তাদের সন্তানদের বাংলা মাধ্যম বাদ দিয়ে ইংরেজি মাধ্যমের দিকে ঝুকছে। কারণ আর কিছু নয়, তারা নিজেরা যে বাংলা মাধ্যমেও পড়ালেখা করতে পারেন নি, এমন কি প্রমিত বাংলায় কথাও বলতে পারেন না, তার শোধ নিতে ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো, আর সাথেতো আছেই টাকার গরম (স্ট্যাটাস) এর ফুটানি।
পরিবার ও সমাজ থেকেই যখন এটাকে উঁচুনিচুর স্তর হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে তখন ভবিষ্যতে নিশ্চয় আমরা হাজারে হাজারে নয়, রীতিমত লাখে লাখে বাংলা সিনেমার চৌধুরী সাহেবদের পদচারণা দেখতে পাব
নির্ঝরা শ্রাবণ
খুব ভাল লাগল পড়ে, ভাবনা গুলো এমন ই ছিল, খুব সুন্দর ভাবে বলেছেন। হতাশ লাগে, পরিবর্তন সুদুর পরাহত।
আরব বসন্তের মতো এখানে হতে পারেনা?
আমরা তো সবচেয়ে বেশী মানুষ এক জায়গাতে থাকি।
এখানে কোন অনিয়ম বা ভুল সিদ্ধান্ত খুব বেশি মানুষকে প্রভাবিত করে।
কিন্তু যাদের সামর্থ্য আছে তাদের অনেকেরই বসন্তের কোন অনুভব আছে?
জেগে ওঠা প্রয়োজন খুব তাড়াতাড়ি।
নতুন মন্তব্য করুন