গ্রীষ্মের অলস দুপুর। ভ্যাপসা গরমে টেকা দায়। শহরের সমস্ত কোলাহল যেন একটা উত্তপ্ত বিন্দুতে থমকে আছে। জমির আলী হাই তোলেন। এই গরমে কাস্টমার আসার কোন চান্স নেই। তিনি অলসভাবে চেয়ারে গা এলিয়ে দেন। একটু আগেই কারেন্ট এসেছে। ফ্যানের বাতাসে ঘুম ঘুম লাগছে। একটু ঘুমিয়ে নেব নাকী, তিনি ভাবেন। তারপর নিজের মনেই সেটা খারিজ করে দেন। ঘুমিয়ে সময় নষ্ট করার চেয়ে একটা সিগারেট খাই বলে তিনি সিগারেট ধরান। সিগারেটের ঝাঁঝাল গন্ধে তার বেশ আমোদ লাগে। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তিনি টেবিলের ওপর রাখা বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখতে থাকেন। পুরোনো বইয়ের দোকান থাকাতে এই এক সুবিধা, বিনে পয়সায় নানা ধরনের বই পড়ার সুযোগ হয়। সুযোগটার ষোল আনাই তিনি কাজে লাগাতে চেষ্টা করেন। দোকানে ভিড়বাট্টা একটু কমলেই তিনি সিগারেট টানতে টানতে বইয়ের ভেতর মুখ গুঁজে দেন।
টেবিলের ওপরে রাখা বইগুলো আজই এসেছে। প্রায় নতুন বই। জমির আলী প্রথম বইটা পড়ার জন্য তুলে নেন। হুমায়ূন আহমেদের একটা ঝকঝকে উপন্যাস, নাম- লীলাবতী। এই লেখককে অনেকে বাজারি লেখক বলে বাতিল করে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জমির আলীর মতে হুমায়ূনের গল্প বলার ঢং অসাধারণ, পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠা যায় না।
লীলাবতীর প্রচ্ছদ বেশ চমৎকার। বইটা উল্টেপাল্টে দেখতে গিয়ে শেষ পৃষ্ঠায় তার চোখ আটকে যায়। সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে কিছু মোবাইল এসএমএস লেখা। লেখায় তাড়াহুড়োর ছাপ স্পষ্ট। বোঝাই যাচ্ছে খুব জরুরী প্রয়োজনেই হাতের কাছে কাগজ না পেয়ে বইয়ের পেছনে লেখা হয়েছে। জমির আলী পড়তে থাকেন।
“আজ বিকেলে আসতে পারবো না। ভালো থেকো। কাল দেখা হবে।
ভালোবাসা।”
“কেমন আছো? তোমার কথা খুব মনে পড়ছে। ঘুমোতে পারছি না। একটু আদর করে দাও না। জান আমার।”
“কাল অবশ্যই সেভ করে আসবা। খোচা খেতে একদম ভালো লাগে না। জানটু আমার। আদর নিও।"
“আমাদের পরিচয়ের কতোদিন হলো? বলতে পারবা? দুই বছর! আই লাভ ইউ সো মাচ ডিয়ার...আমি শুধু তোমাকেই চাই”
“শোন, আমার এই পোস্টপেইড নম্বরটা আর থাকছে না। প্রিপেইড নিচ্ছি। নতুন নম্বর ০১৭২৩৩৪৮৫৫। ভাল থেক লাভ।
নম্বরটা দেখতেই জমির আলী বরফের মত জমে গেলেন। প্রচণ্ড গরমেও হঠাৎ করেই তার খুব শীত শীত লাগে। তিনি উদভ্রান্তের মত এদিক ওদিক তাকান। চারিদিকে কেবলই অন্ধকার। লীলাবতী তার হাত খসে মাটিতে ধূলো উড়ায়।
২০/০৮/২০১১
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
মন্তব্য
ভাল লেগেছে
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
পড়েছি। ভাল লাগল। বেশ জমাটি গল্প বলার ঢংটা আপনার আছে। হঠাৎ করে থেমে গেল শেষে।
-এখানে প্রথম বাক্যে
'একটু ঘুমিয়ে নেব নাকি'--,
এরপরে,
'তিনি ভাবেনটা' --বাদ দিলে কেমন হত? যদি বলা যায়, দুটো বাক্যকে এক করে, এরকম করে--
অনু গল্প নয়--পুরো গল্প লিখুন। আমাদের গল্পের লোক দরকার।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
ধন্যবাদ কুলদা। ওটা বিবেচনা করা যেতে পারে।আর পুরো গল্প লেখার ধৈর্য থাকেনা তাই আপাতত অনুগল্পই ভরসা। এটি লিখেই মজা পাচ্ছি।
মূর্তালা রামাত
আমারও মনে হয়, প্লটটা ছোটগল্পের জন্যে দারুণ হতো। আমরা অনুমান করতে পারি নাম্বারটা কার। এটা নিয়ে আরও অনেকদূর হেঁটে আসা যেতে পারতো।
আপনার মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
ভালো...
কিন্তু এসেমেস বইয়ের পিছে লিখে রাখার কারণ কী?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ
ভালো। একই প্রশ্ন !
facebook
লিখে রাখার কারণ আমিও জানিনা নজু ভাই, কিন্তু আমি আমার এক ফ্রেন্ডকে দেখতাম ওর গার্লফ্রেণ্ডের কাছ থেকে এসএমএস আসার সাথে সাথে একটা ছোট নোটবুকে লিখে রাখত। পরে কারণ জিজ্ঞেস করলে ও বলে যে, যখন এই মেয়ের সাথে ব্রেকাপ হবে তখন এইসব এসএমএস আবার অন্য মেয়ের সাথে ব্যবহার করতে পারবে এটা ওর এসএমএসের কালেকশান। আরেকটা কারণ বলেছিল, ওর ছোটভাই নাকি খুব দুষ্টু এসএমএস পড়ে আর ডিলিট করে দেয় তাই এই ব্যবস্থা। এরকম বিচিত্র কোন কারণ হবে হয়ত।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
এসএমএস লিখে রাখা একটা খেয়াল বা শখ, মাঝে মাঝে প্রয়োজন- যেমন সেটটা কাউকে দিবেন, কিন্তু মেসেজগুলো সে পড়ুক এটা আপনি চান না আবার জরুরী মেসেজগুলো হারানোও চলে না।অতএব লিখে রাখাই ভাল।আমি একসময় মেসেজ লিখে রাখতাম, বিশেষ করে কলরেট যখন ১০ টাকা, ৭ টাকা ছিল- তখন প্রচুর মেসেজ চালাচালি করতে হত।প্রচুর দরকারী মেসেজ ছিল। হাতের কাছে কাগজ না পেলে বইয়ের পেছনেই লিখতাম। ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
ভালো লাগল লেখাটা।
ভাল
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
খুব ভালো লেগেছে। শেষে এসে চরম রূপ নিয়েছে অনুগল্পের ধরণে।
ধন্যবাদ।
মূর্তালা রামাত
নতুন মন্তব্য করুন