অতসীর হাতে একটা গল্পের বই। তথাকথিত এক বাজারী লেখকের বই। দিয়ে গেছে কাকলী। নতুন বই। বইমেলা থেকে কেনা। অতসী নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেয়। কি মিষ্টি গন্ধ। মনের পর্দায় কিছু ভাসা ভাসা দৃশ্য ভেসে ওঠে। গতবছর বইমেলায় এই লেখকের সাথে তার দেখা হয়েছিল। তিনি বইতে অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন। সাথে ছিল তার শিশুপুত্র, স্ত্রী। বাচ্চাটা শান্ত স্বভাবের ছিল। অতশী যখন একটা বই এগিয়ে দেয় তিনি তখন অতশীর দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, “আমার ছেলে তোমাকে পছন্দ করেছে, তাই বইতে তার নামও লিখে দিচ্ছি।”
অতশী বুঝতে পারেনি কি বলবে, ফিক করে হেসে দিয়েছিল। মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনি এত মানুষের ভিড়ে। তাকে অটোগ্রাফ দিতেই আরেকজন তাকে সরিয়ে দেয়। বাচ্চাটা তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। অতশী তাকে একটু আদর করতে চেয়েছিল, পারেনি। সেই ছিল বইমেলায় শেষ যাওয়া। এরপর যাওয়া হয়নি। বইমেলা থেকে বের হয়ে আসতেই কে যেন তাকে এসিড ছুঁড়ে মারে। ভয়ে আতঙ্কে চিৎকার দিয়ে ওঠে অতশী। অন্ধকার নেমে আসে দু’চোখে। জ্ঞান হারায় অতশী। নিজেকে পরে খুঁজে পায় হাসপাতালের বেডে। বাবা-মায়ের কান্না, আত্নীয়-স্বজনের স্বান্তনা কিছুই তার কানে প্রবেশ করছিল না। আঁধার তাকে গ্রাস করেছে আজীবনের জন্য। আর কোনদিন সে দেখতে পাবে না পৃথিবীর রং, ছোট্ট শিশুর মুখের হাসি।
পরে শুনেছে তাকে এসিড মেরেছে এলাকারই এক বড় ভাইয়ের লোক। তার বাবা সে বড় ভাইয়ের প্রতিপক্ষ দলের অনুসারী। অধিপত্য বিস্তারের জের ধরে অতশী হয়ে গেল গিনিপিগ। তার মনে পড়ে সে বড় ভাই বাবাকে বলেছিল রাজনীতি না করতে, করলে বিপদ হবে। তার বাবা না শুনে সৎ রাজনীতির চেষ্টা করেছিলেন। তাই তো মেয়ের এমন পরিণতি দেখতে হলো তাকে।
বইয়ের ঘ্রাণ নিতে নিতে হঠাৎ লেখকের বাচ্চাটার কথা মনে পড়লো। আচ্ছা, অতশী কি কখনো এমন বাচ্চা পাবে ? দেখতে না পারুক, নতুন শিশুর গন্ধ তো নিতে পারবে ; হবে না হয়তো। অতশীকে কে বিয়ে করবে, বন্ধুরা প্রথমদিকে যোগাযোগ করতো। এখন আর করে না। অতশীও বুঝে গেছে তাদের কাছে তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। অতশী জানালার কাছে এসে দাড়ায়। শীতের মিষ্টি বাতাসের পরশ লাগছে মুখে। বাতাসেরও তো একটা গন্ধ আছে, সেটা আর কেউ কি পায় ? অতশীর তা মনে হয় না। পেলে মানুষ বাতাসকে নষ্ট করে কেন ? অতশী জানালর গ্রীল ধরে, তার হঠাৎ করে ইচ্ছে হয় চিৎকার করে বলতে কেন সামান্য রাজনীতির জন্য তার জীবনটা এমন হয়ে গেল। চিৎকার করে না সে, কথাগুলো বুকের ভেতর জমা হয়। চাপা কষ্টগুলো জমা হতে হতে একদিন হয়তো অতশী ভার বইতে না পেরে হাল ছেড়ে দিবে। অতশীর দৃষ্টিহীন চোখের পাপড়ি ভিজে ওঠে, সন্ধ্যার আলো-ছায়ায় যার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় না।
--- প্রখর রুদ্র
মন্তব্য
হয়তোবা লেখকের বাচ্চাটির সাথে অতসীর আবার দেখা হবে কোনদিন। সেদিন কি সে অতসীকে আগেরমতই পছন্দ করবে?
-ওয়াহিদুজ্জামান
ভাল লাগেনি তেমন ... একেবারেই ক্লিশে
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
স্বপ্ন হারাদের গল্প। কাহিনী ভালো, প্লটটাও মজবুত। তবে খুব ভালো লাগেনি, তবে ভালো লেগেছে। অতশীর বা এই ধরণের অতশীদের বেদনাকে আরও ভালো ভাবে আঁকতে পারতেন।
শুভেচ্ছা রইলো।
নতুন মন্তব্য করুন