আমার অনেক দিনের পরিচিত সহদেব বসাক। তার কাছে যখন কিছু টাকা ধার চাইতে গেলাম। সে ধারের কারণ জিজ্ঞাসা করে বলল- কি জন্য ?
আমি বললাম এই তো ডুম্বুরে যাচ্ছি। তারপর আমার অভিপ্রায়ের কথা জানালাম। সে বলল ডিপার্টমেন্টের কাজে জাচ্ছিস যা না, তার মধ্যে আবার সিনেমা ঢুকালি কেন। দিব্যি ঘুরে ফিরে আসবি। খামোকা উৎকট ঝামেলা বাধাচ্ছিস কেন।
বুঝলাম, টাকা তো দেবেই না, বরং হাজারটা নীতিকথার ঝোল ধরিয়ে এবার রান্না চাপাবে। আর কথা বাড়ালাম না, আসলে বলতে ইচ্ছে করছিল না। আর কিই বা বলব, আমি জানি ওর কাছেও পয়সা নেই। সাংবাদিকতা করে আর ক’পয়সা কামায়। তারমধ্যে নিজের চলা, সংসারের খরচ, গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠানো। তবু একবার বললাম – কিছু দিতে পারবি। সে বলল- পাঁচশ টাকার মতো দিতে পারি, কিন্তু আগামি মাসের মধ্যে ফেরত দিতে হবে।
পেলাম কিছু। তারপর আর উপায় না দেখে মাকে ফোন লাগালাম। আমতা আমতা করে বললাম, মা কিছু টাকা দরকার। শত অভাবেও মা কোনদিন আমাকে না করেন নি। এইবারও নিরাশ করলেন না। বললেন, আয় এসে নিয়ে যা। আমার জন্য আমার পরিবার আরও কত সেক্রিফাইস করেছে তা আমি ধীরে ধীরে বলব, আগামী পোস্ট গুলোতে।
২.
যাই হোক সেই সুস্মিতার দৌলতেই তার বর হবার তাগিদে নাটকের খাতায় নাম লেখালাম। অবশ্য নাটকে সুস্মিতা আমার গৃহিণী হয়নি। ঐ নাটকে কোনো জামাই-বউ এর সিকোয়েন্স ছিলনা। আমার ভূমিকা ছিল একজন বেকার যুবকের। যে সারাক্ষণ বিব্রত থাকে। চাকরি নেই, কাজ নেই, ঠায়ঠায় বেকার, নিজের কর্মহীন জ্বালাকে ভুলতে সে মদ খায়। এখন ভাবলে হাসি পায় সেই নয় বছর বয়সে আমি ‘অগ্নিদগ্ধ’ নাটকে অপূর্ব সান্যালের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলাম। নাটকটি দুইবার মঞ্চস্থ হয়েছিল। প্রথমবারের কথা না বললেই নয়। প্রথম দৃশ্যতেই আমার এন্ট্রি। মদ খেয়ে বুদ। তারপর ঢুলতে ঢুলতে মঞ্চে আগমন। প্রথমবার ঢুকেই আমার দেখা হয়ে যায় আমার পরিচিত বন্ধুর সাথে, তার সাথে ধাক্কা খাওয়ার সিন। ধাক্কা খেয়েই আমি আমার সকল ডায়ালগ ভুলে গেছি! একেবারে যা তা অবস্থা। বেগতিক বুঝে ডিরেক্টর মানে আমাদের সুভাষ স্যার পেছন থেকে সামনে চলে আসলেন এবং স্ক্রিপ্ট পড়তে শুরু করলেন। আগেই বলা ছিল এই কৌশল। আমি উনার সাথে সাথে ডায়ালগ বলা শুরু করলাম। সিরিয়াস সেই নাটককে আমি কৌতুক বানিয়ে দিয়েছিলাম। লোকে নাটক দেখবে না আমার ভয়ার্ত চেহারা! কোনো রকমে শেষ করলাম। স্যার অবশ্য কিছু বলেননি। আরও অনেকেরই একই দশা হয়েছিল। আমারা কচিকাচারা তখন প্রত্যেকেই জীবনের প্রথম মঞ্চাভিনয় করছি। পরের দফায় অবশ্য ঠিক হয়ে গিয়েছিল। সেই প্রথম এবং শেষবার মঞ্চে উঠে আমার বুক কেঁপেছিল। তারপর আর কাপেনি। কিন্তু ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল একটা বীজ। একটা পাগলামি। যার পরিপূর্ণতা পেয়েছিলাম এর ছয় বছর পর সমন্বয় নাট্য সংস্থায় ডাক পেয়ে।
যতদূর দেখা যায় দিগন্তের অসীম রূপরেখাকে স্পর্শ করে শুধুই সবুজের আস্তরণ। চড়াই উতরাই পরিয়ে পাহাড়ের খোপে খোপে ছনের ছাওনি দেওয়া ঘড়, কোথাওবা টিন আর বেড়ার কম্বিনেশন। ঝর্ণার কলকল শব্দ আর পাখিদের গুঞ্জনে মনটা ভালো হয়ে গেলো। আর সম্পূর্ণ ডুম্বুর উপত্যকা জুড়ে কলকল শব্দের উচ্ছ্বাসে বয়ে চলছে স্রোতস্বিনী গোমতী।
আমি বিনীত ভাবে জানালাম - না ভাই আমার থাক, তোরা চালিয়ে যা।
ওফ সে এক ভয়ংকর রাত। নিজে বেশি একটা না খেলেও আমার প্রচুর অভিজ্ঞতা আছে মদ খেলে প্রেম বিরহের বেদনা ভরা কাহিনি শোনার। ঐ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুই মাতালের হুজুগে আমি অস্থির হয়ে গেলাম। শেষে ঝড়ের অবসান হল মাতাল যুগলের সশব্দে নাক ডাকার মধ্যে দিয়ে। কোনরকমে ছাড় পেয়ে খাতা কলম নিয়ে বসে গেলাম। বাইরে তখন বৃষ্টির কোনো চিহ্ন নেই, পূর্ণিমার আলোয় চাঁদ হাসছে।
।।...............................................।।
======================================
আমার শহর
নভেম্বর, ০৭, ২০১১
মন্তব্য
বাহ!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ধন্যবাদ
অনার্যের মন্তব্য কপি করছি - বাহ।
তবে "ডুম্বুরভ্যালীকে" কি কারণে জানি ভুরুঙ্গামারি পড়েছি
অটঃ আপনার তো একটি অতিথি একাউন্ট আছে, ওখান থেকে লেখা দেন না কেন?
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ।
চলে আসেন একদিন ভুরুঙ্গামারি দেখতে একসাথে যাবো। আজকাল আমার আবার ঠায়ঠায় কাঠখোট্টা জীবন চলছে
অটঃ ওটা আপাতত বন্ধ আছে। আমার কিছু দোষ ছিল তাই,
সুন্দর।
শুধু সুন্দর, খুব সুন্দর নয় কেন খোকা
লেখা ভালো লাগলো, তিন পর্বই আজকে পড়লাম। ঘটনাপ্রবাহ একটু খাপছাড়া লাগলো যদিও। আর ছবিগুলো দারুণ তুলেছেন।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধন্যবাদ, সজল ভাই। প্রথম পর্বটাতে ভাবনা গুলি বিচ্ছিন্ন ছিল। শুরুরটা দিয়ে গোটা পর্বের আভাস দিতে চেয়েছিলাম তাই । পরের পর্ব থেকে একটু গতি পেয়েছেন আশা করি।
৩য় ছবিটা সবচেয়ে ভাল।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আচ্ছা। ... বাকি গুলো ভালু নাই
প্রতিটা পর্বকে আরেকটু স্বয়ংসম্পূর্ণ করা যায় না?
মনে হয় যেন কিছুটা বাকি রয়ে গেছে
০২
ছবিগুলো দারুণ
চেষ্টা করব লীলেন ভাই।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ঘাসফড়িং-এর ছবিগুলো দারুণ! আর ডাবের খোল আর একাকী ফড়িংটা!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আপনাকে ধন্যবাদ দাদা।
ওটা ডাবের খোল নয়হে যাযাদিদি, প্রি-ডাব বা আঞ্চলিক ভাষায় ডাবের মুচি
এই রে এই মাত্র যাযাবর দিদির প্রোফাইল এবং লেখায় ভালো ভাবে রাউন্ড মেরে এলাম। খাইছে খাইছে আমি তো চরম মুর্খামি করলাম। দাদা লেইখা ফালাইছি দিদির জায়গায়। সরি সরি। সত্যিই
আরে ভাই আপনিতো ছবিও ভাল তোলেন!!!! পরের পর্ব তাত্তাড়ি ছাড়েন।
আইচ্ছা। তবে এই লেখাটার আগামী সংখ্যার ছবির চেয়ে ভিডিও থাকবে
ঠিক আছে ভিডিওই সই
facebook
কিরে ভাই এইডা কি দেখাইলা অনু হে হে ঠেংগা
দারুণ দাদা ।
_____________________
Give Her Freedom!
ধন্যবাদ অলি
নতুন মন্তব্য করুন