আজকাল একটি গোষ্ঠী বাক-স্বাধীনতা ও গণ্মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে খুব কথা বলছে। দেশে নাকি বাক-স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই এবং গণতন্ত্র বিলুপ্ত হয়েছে। সরকার নাকি নিরন্তর ফ্যাসিস্ট(আসলে ফ্যাশিস্ট, এরা উচ্চারণটা জানে না!) হয়ে উঠছে। সত্যিই কি তাই? বরং বাংলাদেশই কি পৃথিবীর একমাত্র গণতান্ত্রিক দেশ নয়, যেখানে প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে, তথ্য বিকৃত করে, সংবিধানের ধারাসমূহকে উপেক্ষা করে যথেচ্ছ কথাবার্তা প্রকাশ্যে বলেও পার পাওয়া যায়। সুস্পষ্ট রাষ্ট্রদ্রোহীতারও এদেশে কোন শাস্তি হয় না, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার নীতিবিহীন খেলায়। চলুন দেখা যাক বাক-স্বাধীনতা বলতে আসলে কি বোঝায়, একটি গোষ্ঠী তো মনে হচ্ছে বলতে চায় ‘যেমন খুশি, তেমন বলো” এর অপর নাম বাকস্বাধীনতা। হলুদ-সাংবাদিকতার প্রতিবাদ করলে বলা হচ্ছে যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকছে না!
উইকির মতে ফ্রিডম অফ স্পিচ হচ্ছে- “Freedom of speech is the political right to communicate one's opinions and ideas.” অর্থাৎ বাক-স্বাধীনতা হচ্ছে কারো ভাবনা ও মতামত প্রকাশের রাজনৈতিক অধিকার। কখনো কখনো এর সঙ্গে সমার্থকভাবে অভিব্যক্তির স্বাধীনতা বা Freedom of expression শব্দটি প্রযুক্ত হয়। এতে অবশ্য কোন তথ্য খোঁজা, তথ্যের প্রাপ্যতা এবং প্রচারের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত হয়। বাক-স্বাধীনতা কোন দেশেই পরম(abosolute) বা ধ্রুব কোন বিষয় নয়। বেশ কিছু কারণেই বাক-স্বাধীনতা যৌক্তিকভাবেই সীমাবদ্ধ বা খর্ব করা হয়। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছেঃ
Libel- কাউকে নিয়ে বানোয়াট খবর পরিবেশন করা।
Slander- কারো সুনাম নষ্ট করার উদ্দেশ্যে তার সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা
Obscenity
Sedition- ক্ষমতা দখলে উস্কানি দেয়া উগ্রবাদী মতবাদ
Copyright violation – স্বত্বাধিকার লঙ্ঘন।
দেখা যাচ্ছে যে, উপরের সব কয়টি প্যারামিটারেই “আমার দেশ” পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক দোষী। কাজেই তার গ্রেফতারের দাবীটি ন্যায্য। অথচ এই ন্যায্য দাবীটি পূরণ করা হয় নি। তারপরও বিরোধী দল সন্তুষ্ট নয়! বিরোধী দলীয় নেতারা অনেক কথাই বললেন। শুধু বল্লেন না আমাদের জাতীয় পতাকা অবমাননা করার বিষয়ে একটি কথাও, করলেন না শহীদ মিনার ভাংচুরের মতো বর্বরোচিত ঘটনার একটি প্রতিবাদ। সালাম, বরকত, জব্বারের পূণ্য স্মৃতিতে অর্পিত পুষ্পস্তবক লণ্ড-ভণ্ড ও অগ্নিসংযোগের ব্যাপারেও তারা নীরব! কিছুদিন আগেই গৃহযুদ্ধের হুমকি দেয়া জামায়াত নেতা সেলিমুজ্জামানও এখনো খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন! রহস্যজনক কারণে এদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না আর দয়া-দাক্ষিণ্যে মুক্ত থাকা এই লোকগুলো নির্দ্বিধায় বাক-স্বাধীনতার নামে ছড়াচ্ছেন দেশদ্রোহী মতবাদ এবং উগ্র মৌলবাদের বিষাক্ত বীজ। দিগন্ত টি,ভি তে যা ইচ্ছে বানোয়াট খবর দেয়া হচ্ছে, বলা হচ্ছে “মুসল্লিদের গুলি করছে পুলিশ” জাতীয় কাল্পনিক ও অসদুদ্দেশ্য প্রণোদিত খবর। তারপরও তো এই চ্যানেলটি চলছে!
কাজেই দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে মোটেই বাক-স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে না। বরং অতি গণতান্ত্রিকতা আর বাক-স্বাধীনতার নামে ভণ্ড বাক-চাতুরীর আড়ালে অশুভ তৎপরতায় লিপ্ত আছেন কিছু লোক। জন স্টুয়ার্ট মিল বা জোয়েল ফেইনবার্গ এর মত বাক-স্বাধীনতার প্রবক্তারাও যা খুশি বলার স্বাধীনতা অনুমোদন করেন নি যথাক্রমে অন্যের ক্ষতি ও অন্যের অনুভূতিতে অন্যায় আঘাত দেয়া প্রসঙ্গে। ইউরোপে কেউ বাক-স্বাধীনতার নামে নাৎসীবাদের পক্ষে কথা বললে তার রক্ষে থাকে না। অথচ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বাক্য ও কর্মকাণ্ড চলে বিনা দ্বিধায়। মানুষের মুখ যারা চিরতরে বন্ধ করে দিতে চায় জবাই করে তারা কিনা চায় বাক-স্বাধীনতা? শাহবাগের তারুণ্যের জোয়ারে এই সব জঞ্জাল ভেসে যাবেই। কাজেই আর অপব্যাখ্যা নয়। অবিলম্বে “আমার দেশ” এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করার দাবী জানাচ্ছি।
জাগ্রত জনতা
মন্তব্য
বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের কম্পিউটার হ্যাক করার অপরাধে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন?
কারণ সাইবার ক্রাইমের মত মারাত্মক অপরাধ বাংলাদেশের গণতন্ত্রে কোন অপরাধ না!
জাগ্রত জনতা
ধর্মের নামে এর চেয়ে অনেক বড়ো বড়ো অপরাধও 'হালাল' হয়ে যায়, এই যেমন ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা, হুমায়ুন আজাদকে কোপানো, তসলিমা নাসরীনকে দেশছাড়া করা।
এবং খুন করে পালিয়ে যাওয়াটা বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে সাদামাটা অপরাধ। রাজীব হত্যার বিচার বোধহয় আর হবে না। এবং এই খুনীরা আরো অনেক রক্ত ঝরাবে। এই অযোগ্য আইন-শৃংখলা বাহিনী দিয়ে আমাদের কী হবে? আন্দোলন নিয়ে হতাশ নই। কিন্তু আন্দোলনে সরকারের সাড়া হতাশাব্যঞ্জক।
সিদ্ধান্ত দিতে আর একশ্যান নিতে এত কালক্ষেপন করে আমার দেশের মাহমুদুর রহমানকেও পালানোর সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে না তো?!
নিবেদিতা
নতুন মন্তব্য করুন