অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। দেশের সৃজনশীল লেখক পাঠকদের মিলনস্থল এই মেলা। এটা তথাকথিত এবং সকলের জানা একটা কথা। এর সাথে ভিন্নমত পোষণ করবেন এমন কেউ কি আছে এই দেশে, থাকতে পারে? উত্তরটা বিষ্ময়করভাবে হ্যাঁ। এবং এই উত্তরটা তারচেয়েও বিষ্ময়করভাবে সত্য। হ্যাঁ সত্যই। কারণ একটু আগেই এর প্রমাণ মিলেছে। আমাদের প্রাণের বইমেলায় আগুন লেগেছে, পুড়ে গেছে ৪০ টির মত স্টল। যদিও গণমাধ্যমগুলো এখনো পূর্ণাঙ্গ সংবাদ প্রচার করছে না তবু উপস্থিত কয়েকজনের বরাতে এটা নিশ্চিত খবর। ফায়ার সার্ভিস এখন পরযন্ত সেই শর্ট সার্কিটের ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে চলেছে। নাশকতার আশঙ্কাকে যদিও একেবারে উড়িয়ে দেয়নি। সংখ্যাটা বাড়তে পারে, কমার সম্ভাবনা কম। পুড়ে যাওয়া স্টলের সংখ্যা বাড়ুক কমুক তাতে কিছু যায় আসে না। ওটা প্রকাশক বা স্টল মালিকের ব্যাবসায়িক ক্ষয়-ক্ষতির বিষয় হতে পারে। কিন্তু মেলার একটি স্টলও পোড়ার ক্ষতিটা সমগ্র জাতির, যখন এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে এই অগিন্কাণ্ড দুর্ঘটনাপ্রসূত নয় বরং পরিকল্পিত। পরিকল্পিত যে তার সবচেয়ে বড় যুক্তি হতে পারে, মেলা বন্ধ হওয়ার সাড়ে পাঁচ ঘন্টা পরে এই ঘটনা ঘটা। পরিকল্পিত যে তার বড় প্রমাণ হতে পারে, দুটি বিষ্ফোরন। এবং একইসাথে আগের দুদিনে ওই জানোয়ারদের হাতে আমার পতাকা আর শহীদ মিনার ভুলন্ঠিত হতে দেখা একটা বড় যুক্তি হতে পারে।
ঘরে বসে হাত কামড়াই, আজ ঘরে ফেরার দোষে নিজেকে দোষী মনে হওয়ায়। ওখানে থাকলে আগুন নেভাতে পারতাম এমন নয় যদিও। কিন্তু এ যুক্তিতো প্রবোধ দিতে পারে না। এ কোথায় আছি? ভাবা যায়? নিরাপত্তার ফাঁকা বুলি আর কত? প্রতিদিন কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে শাহবাগ আর মেলায় যাতায়াত কেউ একবারো ব্যাগটি দেখতে চায় না। মাঝে মাঝে ভাবি আমার চেহারা কি এতই নিরীহ? তাকিয়ে দেখি সবাই নিরীহ। রাতে শাহবাগে একাধিক দিন নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশদের এ বিষয়ে সজাগ থাকতে অনুরোধ করেছি। তাৎক্ষণিকতা বাদ দিলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শিবির সন্দেহে ৪ জনকে ধরিয়ে দিলেও ছেড়ে দিতে দেখেছি। এই সুযোগে ওরা একের পর এক আঘাত দিয়ে যাচ্ছে। সাথে ছড়িয়ে দিচ্ছে সুকৌশলে ধর্মের পুরোনো আফিম। আমরা তা গিলছিও কেউ কেউ। সরে যাচ্ছি আন্দোলন থেকে, কেউ ঘোষণা দিয়ে (ফেসবুকে এ ধরনের কিছু ঘোষণা দেখেছি) কেউ অঘোষিতভাবেই। কেউ কেউ নির্লিপ্তভাবে দূরে বসেই দেখছেন (দর্শকের দল)। যারা সরে গেছেন অথচ ছিলেন, আর ওই তথাকথিত মধ্যবিত্ত নিরপেক্ষ, হ্যাঁ আপনাকেই বলছি-
- মতিঝিলের জনসভায় জানোয়ারেরা গৃহযুদ্ধের ডাক দিল।
- আপনি চ্যানেল ঘুরিয়ে নিলেন।
-কসাই কাদেরকে ফাঁসির বদলে যাবজ্জিবন দেয়া হলো।
- আপনার কিছু মনে হয়নি, বাদাম চিবুতে চিবুতে আপনি চ্যানেল ঘুরিয়ে নিলেন।
-সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগ সহ গোটা দেশ গর্জন করলো।
-আপনি আবেগ নিয়ন্ত্রন করলেন, এবং চ্যানেল ঘুরিয়ে গেলেন।
-জামাত শিবিরসহ ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠলো।
-আপনি রাজনীতি ধরতে পারার মহা উল্লাসে বাঁকা হাসি হাসলেন এবং চ্যানেল পাল্টালেন।
-জাতীয় পতাকা পুড়লো, শহীদ মিনার ভাঙলো, শহীদের অর্ঘ্যে আগুন জ্বললো।
-আপনি চ্যানেল ঘোরালেন, আপনার কপালে কি একটুও ভাঁজ পড়লো না!
-বায়তুল মোকররমের ভেতরে বিষ্ফোরণ হলো, জায়নামাজ আর মসজিদের ম্যাট পুড়লো।
-আপনি সন্দিহান, রাজনীতি নয়তো?
-একুশের বইমেলায় আগুন দিল, এখনও পুড়ছে মেলা, পুড়ছে বাঙালি।
-আপনি ঘুমুচ্ছেন, সকালে খবর হয়ে আসবে আপনার সামনে। আপনি কি করবেন?
প্রশ্নটা তাদের দিকে যারা খেলা দেখছেন। এখনও পক্ষ বেছে নেননি। মধ্যপন্থাই উত্তম পন্থা এই আপ্তবাক্য মেনে যারা নজর রাখছেন আর আউড়ে যাচ্ছেন বুদ্ধিবৃত্তিক বুলি। কোথায় যেন পড়েছিলাম একটা প্রবাদের কথা ‘between two fires only devil can survive.’। ভেবে দেখুন। একদিকে পিশাচ, দেশবিরোধী, মাঝে আছে স্বয়ং শয়তান, আর আরেক দিকে নিরঙ্কুশ মানুষ। নিজের পক্ষ বেছে নিন।
স্বয়ম
মন্তব্য
বেছে নিয়েছি নিজের পক্ষ। দৃঢ়ভাবেই।
জয় বাংলা।
নিজের পক্ষ অনেক আগেই বেছে নিয়েছি। দেশের সাথেই ছিলাম। দেশের জন্য থাকবো।
জয় বাংলা!
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
যোজ্ঞ লোকেরা এগিয়ে আসুন ।লড়াইয়ের ময়দানে যোজ্ঞ লোকের অভাব।
নতুন মন্তব্য করুন