পশুসমাজে শিয়ালের স্থান খুব একটা সম্মানজনক না হলেও রাত বিরাতে তাদের হুক্কাহুয়ার চিৎকার শুনলে মনে হবে এই বনে একটাই মাত্র প্রাণী -তার নাম শিয়াল। অথচ এই বনে শিয়াল ছাড়াও অগুনতি পশু আছে। হাতি, ঘোড়া, বাঘ ভাল্লুক সিংহ বানর গরু ছাগল সব রকমের পশু বাস করে শান্তিপূর্নভাবে।
শক্তির দিক থেকে সিংহের চেয়ে বড় কেউ নেই, কিন্তু সংখ্যার দিক থেকে গরু এক নম্বর। এর কারণ হলো গরু জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিশ্বাসী নয়। গরুদের মধ্যেও নানান ভাগ, বলদ, ষাঁড়, গাভী, বকনা বাছুর।
এই বনে গণতন্ত্রের জয়জয়কার। তাই বনের রাজা এবং নির্বাচিত প্রতিনিধি সবকটাই গরু। এটা নিয়ে সিংহেরা মনে মনে খুব অসন্তুষ্ট। কিন্তু গনতান্ত্রিক সভ্য সমাজে শক্তি বেশী হলেও তা সমাজের নেতা হবার ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আবশ্যক।
গরুদের সাথে সবারই সুসম্পর্ক থাকলেও শেয়ালদের সাথে নেই। কারণ শেয়ালের দল একাধিকবার বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দিয়েছে। এই বসতি গড়ে ওঠার সময় থেকেই। এদের সব শাখা প্রশাখা বিদেশে। এরা বনসমাজের নিয়মনীতির বিরুদ্ধে কাজ করেও অজুহাত দেয় বনদেবতার নির্দেশের। এদের তেমন কিছুতে নৈপুন্য না থাকলেও দুইটা কাজে এদের নিপুনতা তুলনাবিহীন-
এক- রাতের সম্মিলিত হুক্কাহুয়া,
দুই- জামাতের সাথে মলত্যাগ।
এরা সকালে উঠে জামাতের শৃংখলার সাথে মলত্যাগ শুরু করলে তীব্র দুর্গন্ধে বনের সব পশুপাখীকে ওই এলাকা ছেড়ে সরে যেতে হয়। এটার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না কারণ এটা তাদের গনতান্ত্রিক অধিকার। এমনকি সংখ্যাগুরুরা গরুর দলও মেনে নেয় এই শৃংখলাবদ্ধ দুষ্কর্ম।
কিন্তু ব্যাপারটা খেয়াল করে একদিন সিংহের মাথায় অন্যরকম বুদ্ধি খেলে যায়। সিংহ ভাবতে থাকে এত শক্তি থাকা সত্ত্বেও বনের সকল নিয়মনীতির মালিক গরু সমাজ, এটা কিছুতে মেনে নেয়া যায় না। একটা কিছু করতে হবে। এবং সেটার জন্য শেয়ালদের কাজে লাগাতে হবে। সিংহ গোপনে শেয়ালদের ডেকে বললো তার উদ্দেশ্যের কথা। সফল হলে শিয়ালদের পুরস্কারের কথা বলতেও ভুললো না। শিয়াল সমাজ কাজে লেগে গেল। গরুদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করলো বাকী পশুদের।
কিন্তু ছাগলসমাজ বাদে আর কেউ সাড়া দিল না শিয়ালের প্রস্তাবে। ফলে শিয়ালদের একা একাই মতলব হাসিলের কাজ করতে হয়। যে সাহস তাদের আগে ছিল না, সিংহের আশ্বাসে তারা অতি সাহসে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা রাতের বেলা হুক্কাহুয়া আর দিনের বেলা মলত্যাগের পরিমান বাড়িয়ে দেয়। দৈনিক একবারের জায়গায় চারবার লাদি ছাড়ে। এই গনতান্ত্রিক অধিকার মেনে নিয়ে বনের শান্তিপ্রিয় পশুরা বিপদে পড়লো। এমনকি সর্বোচ্চ গন্ধ সহনশীল বলদরাও তীব্র গন্ধে অতিষ্ট হয়ে গেল।
সিংহ বাস করে অনেক দূরে, ওখানে কোনরূপ গন্ধ পৌঁছায় না। কিন্তু বাকী সব পশু দুর্গন্ধের দাপটে নিজেদের আস্তানা ছেড়ে দূরের পাহাড়ে আশ্রয় নিল।
পশুদের মধ্যে গাধাকে সবচেয়ে বুদ্ধিহীন ভাবা হতো। বুদ্ধিহীন হলেও সে শক্তির মাত্রা বোঝে। তাই গরুর চেয়ে সিংহের উপর ভরসা বেশী তার। গাধা ভাবলো শেয়ালের এই নিদারুণ অত্যাচারের কথা সিংহের কাছে বলে আসি। সিংহ এসে তিন হুংকার দিলে শিয়ালের দল পালাবার রাস্তা খুঁজে পাবে না। একদিন সে চুপিচুপি চলে গেল সিংহকে ডেকে আনতে।
দূর থেকে গাধাকে আসতে দেখে সিংহ বুঝে গেছে সময় এসে গেছে। দেরী না করে সিংহ দলবল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো বনের কেন্দ্র অভিমূখে। বনের কেন্দ্রে হাজির হয়ে সে এসে একটা হুংকার দিতে না দিতেই শেয়ালের দল চুপ। তারপর সিংহ ঘোষনা করলো,
"ভাইসব, আজ এই বন মরুভূমি হয়ে গেছে নানান চক্রান্তে। এই মরুভুমিকে আবারো বসবাসের উপযোগী করে তুলতে হবে। জাতির ক্রান্তিকালে তাই আমাকে হাল ধরতে হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই বনে আর কোন পশু নেই, কেবল সিংহ, শিয়াল ছাগল আর গাধা। সুতরাং জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখি -কে হবে নতুন রাজা?
শিয়াল? না! শিয়ালের বুদ্ধি আছে ঈমান নাই।
ছাগল? না! ছাগলের দাড়ি আছে সাহস নাই।
গাধা? না! গাধার মাথা আছে মগজ নাই।
সুতরাং আমি- পশুজাতির এই নগণ্য কাণ্ডারী বাধ্য হয়ে আজ থেকে বনের সকল দায়িত্ব নিজের হেফাজতে নিলাম। বনের সকল পশু দীর্ঘজীবি হোক।"
শিয়ালের দল তখন হুক্কাহুয়া করে সমস্ত বন বাদাড় কাঁপিয়ে জিন্দাবাদ দিল সিংহের নামে।
মন্তব্য
মজাদার ,
চমৎকার।
ঝুমন
মজা পেলাম!
শিমুল কিবরিয়া
shimulkibria.sachalayton
চমৎকার !!!!!!!!!!!!!!
Md. Mostafizur Rahman
সিংহ কি ইউনিফর্মে ছিলো না সিভিল ড্রেসে?
দারুন লিখেছেন !
হাঃ হাঃ হাঃ
চলমান সময়কে কি অবিশ্বাস্য সার্থকতার সাথেই না তুলে ধরলেন রূপকাচ্ছলে! আমার পড়া সচলের একটি শ্রেষ্ঠ গল্প। গল্পটি শুধু এই সময়ের রাজনৈতিক চরিত্রগুলোকেই প্যাকেট-বন্দী করেনি, তীব্র শ্লেষ আর অনিশ্চয়তাগুলোও ফুটিয়ে তুলেছে বিশ্বাসযোগ্যতার শর্ত পূরণ করে। আমি কিছু লাইন কোট না করে পারছি না:
শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার নয়। কিন্তু গল্পটা অনেক ভাল লিখেছেন।
সুরথ সরকার।
অসাধারণ । এই গল্পের প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক।
অনেক্দিন পরে ব্লগে এলাম ,আর আপনার লেখাতা পরে খুব মজা পেলাম।
নতুন মন্তব্য করুন