শাহবাগ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে স্রেফ সরকারের রুটিনওয়ার্ক অনেক বিতর্কের অবসান ঘটাতে পারে

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০২/২০১৩ - ৪:৩৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সরকার শাহবাগের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছে অনেক আগেই; সরকারের অনেক কর্তাব্যাক্তি এবং সরকারদলীয় অনেক উচ্চপদস্থ নেতা নিয়মিতই শাহবাগে আসছেন একাত্মতা প্রকাশ করতে। এগুলো খুবই পজিটিভ দিক। কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অনেকেই উত্থাপন করছেন। সেটা হল সরকার কি তার রুটিন সরকারী দায়িত্বগুলো পালন করছে বিগত কয়েকদিনের ঘটে যাওয়া ব্যাপারগুলো নিয়ে?

১. এই যে শুক্রবার জামাত শিবির যে ভয়াবহ তাণ্ডব চালালো এ ব্যাপারে কিছু রেটরিক ছাড়া আর তেমন বেশী অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। দেশের প্রত্যেকটি পত্রপত্রিকায়, টেলিভিশনে প্রচুর ছবি এবং ফুটেজ এসেছে। সেগুলো দেখে অনেককেই খুব দ্রুত এবং সহজেই ট্রেস করে ফেলা সম্ভব। এটাতো সরকারের নির্দিষ্ট বডির খুবই রুটিন কাজ; বিশেষ করেতো এক্সট্রা কিছু করার প্রয়োজন নেই। হ্যাঁ, এই মুহূর্তে যেহেতু
এটা সরাসরি সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত (জামাত শিবির এটা নতুন করে করছে না), ফলে কিছু এক্সট্রা এফোর্ট এখানে দাবী করে। কিন্তু কাজটা একেবারেই সরকারের রুটিন ওয়ার্ক।

২. মাহমুদুর রহমান নামের ইতর শুয়োরটা যেটা করছে তার আমারদেশ পত্রিকার (পড়তে হবে টয়লেট পেপার) মাধ্যমে সেটা রীতিমতো রাষ্ট্রদ্রোহীতা। স্কাইপ কথোপকথন হ্যাক করার পর অনেকেই আশা করেছিলেন তাকে গ্রেফতার করা হবে, তার পত্রিকাকে অন্তত কারণ দর্শাতে বলা হবে; সেটাও হয়নি। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত ইতরটা ক্রমাগত তার বদমাশ কলমজীবীদের দিয়ে একের পর এক সাম্প্রদায়িক
ঘৃণা ছড়াচ্ছে। তার পত্রিকার রিপোর্টগুলো যেকোনো সুস্থ মানুষের বমির উদ্রেক করবে। ব্লগার রাজিবের নাম দিয়ে ভয়াবহ মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে যে ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগটি বানানো হয়েছে সেটার একমাত্র পরিবেশক সেজেছে এই শুয়োরটির পত্রিকা। শাহবাগের আন্দোলনকারীদের গালি দেয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে বরাহশাবকটি। নানা সময়ে ফেসবুকের ছাগু পেজগুলোর মতো ফটোশপকৃত ছবি দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে রিপোর্ট করেছে তার পত্রিকা। অথচ এখনও তাকে কিছুই বলা হচ্ছে না। আমাদের মনে থাকে যে, নব্বইয়ের দশকে ইনকিলাব পত্রিকার কেবলমাত্র একটি মিথ্যে শিরোনাম আমাদেরকে কি ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মুখে ফেলে দিয়েছিল; অথচ তার চে কয়েকগুণ বেশী মিথ্যে রিপোর্ট করছে আমার দেশ পত্রিকাটি নিয়মিত। প্রশ্ন হচ্ছে মাহমুদুর রহমানকে টাচ না করে, তাকে গ্রেফতার না করে এবং তার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ না করে সরকার যে নব্বইয়ের দশকের মতো একটি রিস্ক জিইয়ে রাখছে এটা কি বুঝতে পারছে না? নাকি এখানে অন্য কোনও হিসেব কাজ করছে?

৩. ব্লগার থাবা বাবা হত্যার বিচারের ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপের ব্যাপারেও খুব একটা মুভমেন্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে কি? এটাও কিন্তু সরকারের একেবারেই একটি রুটিন ওয়ার্ক। একজন তরুণ ব্লগার, একজন নাগরিক তার বাড়ির কাছে নৃশংস ভাবে হত্যার শিকার হল তার লেখালেখির কারণে। শুধুমাত্র এই কারণেই কিন্তু এটি অনেক গুরুত্বের দাবী রাখে। এখানে সরকারের তরফে একে শাহবাগের সাথে মিলিয়ে
ফেলে অতিরিক্ত প্রেশার নেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না যদি সরকার তার নিয়মিত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করে।

৪. বিভিন্ন টকশোতে পিয়াস করিম, আসিফ নজরুল, ফরহাদ মজহারসহ কয়েকজন চিহ্নিত মধ্যরাতের টকশোজীবী বুদ্ধিবেশ্যা প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মিথ্যাচার করে চলেছে। প্রায়শই ইনিয়ে বিনিয়ে এবং মাঝেমধ্যে সরাসরি এরা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কথা বলছে, রীতিমতো ট্রাইব্যুনাল অবমাননা করছে। এটাতো নতুন করে বলার কিছু নেই যে, ইয়োরোপে নাজিদের পক্ষে কেউ টু শব্দ করতে
পারবে না। এটা একদিকে যেমন নীতিগত সিদ্ধান্ত, আবার একই সাথে এ ব্যাপারে আইনও আছে। এটা নিয়ে ফ্রিডম অব স্পিচ, মানবতা জাতীয় ত্যানা কেউ প্যাঁচাতে আসলে তাকে স্রেফ জেলের চৌদ্দশিক দেখতে হবে কোন কথা ছাড়াই। এই কিছুদিন আগের খবরেও জানা যায় জার্মানি নতুন কয়েকটি নিও নাজি গ্রুপ এবং একটি নিও নাজি পার্টি (NPD) নিষিদ্ধ করার কাজ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। অথচ
আমাদের এখানে প্রায় নিয়মিত দেশের স্বাধীনতাবিরোধী, গণহত্যায় নিয়োজিত দলগুলোর পক্ষে কথা বলে যাচ্ছে ভাড়াটে বুদ্ধিবেশ্যাগুলো। এ ব্যাপারেও সরকার এবং সংশ্লিষ্ট অর্গানগুলো যদি তাদের স্রেফ রুটিন দায়িত্বটাই পালন করে তবেই আর এগুলো দেখতে হয় না।

উপরোক্ত ব্যাপারগুলো কোনভাবেই “তেল নাই, গেস নাই, পদ্মাসেতু দেও হেরপরে বিচার” টাইপের মামাবাড়ির আহ্লাদ আবদার না শাহবাগের দাবীর সাথে নতুন যুক্ত কোন দাবীও না। দাবী এই মুহূর্তে সেই একটাই, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি, ফাঁসি এবং ফাঁসি এবং সেটা যতদ্রুত সম্ভব। এখানে এই কথাগুলো বলার কারণ হল, এমনিতেই এই বিচার নিয়ে নানামুখি অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারের আঁতাত নিয়ে প্রশ্নও ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। দেশের মানুষ এখনও এইসব অপপ্রচারে কান দেয়নি এবং এখনও সরকারের উপর দৃঢ় আস্থা রেখেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে। ব্লগাররা অনলাইনে এসব অপপ্রচারের জবাবও দিচ্ছে। তবে আসল জবাবটা দিতে হবে কিন্তু সরকারকেই। সেটা অনেকাংশেই খুব সহজ হয়ে যায় যদি সরকার কেবল তার রুটিন দায়িত্বগুলো নিয়মিত পালন করে। খুব বেশী চাপ নেওয়ারও দরকার নেই। নিয়মিত আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার অনেকগুলো প্রশ্নের জবাব নিজেই এই মুহূর্তেই দিতে পারে, উত্থিত অনেক ভুল, মিথ্যে বিতর্কের এখানেই সমাপ্তি ঘটিয়ে দিতে পারে। এতে করে সরকারের অভ্যন্তরে বিচার নিয়ে যদি কিঞ্চিত দোদুল্যমানতাও
থাকে সেটা দূর হবে, সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রশ্নে আরও কনফিডেন্টলি অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। মানুষের ভেতরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

সৈকত
মস্কো, রাশিয়া
২৬শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩


মন্তব্য

ব্যঙের ছাতা এর ছবি

সহমত চলুক

Shib Lee এর ছবি

এক মত। সরকার এখ্ন সব আউলা লাগাইসে। অথবা অন্য কোন কড়া ফন্দি আছে !

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।