১৯৭১ সালে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের সবচে’ গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গর্বিত হবার কথা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিভিন্ন বর্ণনাকারীর বর্ণনায় সামান্য হেরফের হলেও তাদের মূল সুর এক হবার কথা। কারণ, মূল সত্যটি হচ্ছে সামান্য ব্যতিক্রম ব্যতীত এই ভূখণ্ডের সব মানুষের পাকিস্তানী শাসন, শোষন, আক্রমণ, জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, সাহস ভরে সন্মূখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। সেই বিজয় ত্রিশ লক্ষ প্রাণের মূল্যে অর্জিত হয়েছে। কোটি কোটি মানুষকে সহ্য করতে হয়েছে শারিরীক-মানসিক অত্যাচার, চার লক্ষ নারীকে হতে হয়েছে ধর্ষণের শিকার। লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, স্থাপণা ধ্বংস হয়েছে অগণিত। এসবের সাক্ষী বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ।
দেশে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংগঠন কর্তৃক এই ধরনের প্রত্যাখ্যানের অপচেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহীতার পর্যায়ে পড়ে। দেশের বাইরে বা কোন বিদেশী ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংগঠন কর্তৃক এই ধরনের প্রত্যাখ্যানের অপচেষ্টা বাংলাদেশ বিরোধীতার পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু এই সংক্রান্ত ব্যাপারে স্পষ্ট বা স্বতন্ত্র কোন আইন না থাকায় অপকর্মকারীদের বিরূদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের সাধারণত কোন উপায় থাকে না। ফলে, দেশে বা দেশের বাইরে এক শ্রেণীর লোক বই, পত্র-পত্রিকা, ব্লগ, চলচিত্র, সভা-সেমিনার, টক শো ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতি নিয়ত মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জখমের ঘটনাকে প্রায়শ অস্বীকার, প্রত্যাখ্যান বা সামান্যীকরণের অপচেষ্টা করেই যাচ্ছে। এই ধরনের অপতৎপরতা রোধের জন্য এবং আমাদের জাতীয় ইতিহাসকে বিকৃতিমুক্ত রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা প্রত্যাখ্যান ও সামান্যীকরণ বিরোধী আইন প্রণয়ন এবং তার যথাযথ প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী।
২০১০ সাল হতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মানবতা বিরোধী অপরাধ, শান্তি বিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশন বিরোধী কাজ, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যে কোন অপরাধ ইত্যাদি অপরাধে যুক্ত থাকার দায়ে অভিযুক্ত কতিপয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিচার কাজ শুরু করেছে। ইতিমধ্যে দুই জন অভিযুক্তের ক্ষেত্রে (বাচ্চু রাজাকার ওরফে আবুল কালাম আজাদ এবং কাদের কসাই ওরফে আবদুল কাদের মোল্লা) বিচার কার্য সম্পন্ন হয়ে মামলার রায়ও প্রদান করা হয়েছে। যেহেতু গণমাধ্যমে, আন্তর্জালে ও জনসমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জখমের ঘটনাকে অস্বীকার, প্রত্যাখ্যান বা সামান্যীকরণের চেষ্টা ট্রাইব্যুনালের স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করতে পারে অথবা ট্রাইব্যুনালে প্রদত্ত রায়ের বিপক্ষে মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনঅসন্তোষ সৃষ্টি বা শান্তিভঙ্গের অপচেষ্টার সম্ভাবনা থাকে; তাই অনতিবিলম্বে এসদৃশ আইন প্রনয়ণ করা আবশ্যক। এই ধরনের আইন নতুন কিছু নয়। বরং পৃথিবীর অনেক দেশেই এই প্রকার আইন অনেক দিন ধরেই বিদ্যমান ও কার্যকর আছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জার্মানী কর্তৃক ইয়োরোপ জুড়ে পাইকারী হারে ইহুদী নিধণ যেমন চলেছে, তেমনই সেই দুষ্কর্মের চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টাও চলেছে। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ পর্যন্ত জার্মান বাহিনী ও তাদের সহযোগী দালালেরা তাদের অধিকৃত পোল্যান্ড, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং সার্বিয়ার ইহুদী নিধণ কেন্দ্রগুলিতে গণহত্যার পাশাপাশি গণকবরগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার কাজও করেছে। এদের মধ্যে বেলযেক, সোবিবোর, ত্রেবলিঙ্কা, বাবি ইয়া’র নিধণ কেন্দ্র উল্লেখযোগ্য। দুষ্কর্ম নিশ্চিহ্ন করার এই অপারেশনটির কোডঃ অ্যাকশন ১০০৫। ১৯৪৩ সালে পোযনানে এসএস’দের এক সভায় হেইনরিখ হিমলার ইহুদী গণনিধণ গোপনে সারতে এবং তার কোন রেকর্ড না রাখতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু এই পাপ চাপা থাকেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে ইহুদী গণহত্যার খবর প্রায় সবই প্রকাশিত যেমন হয়েছে এবং তার যথাসম্ভব বিচারও হয়েছে। তাই বলে ইহুদী গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার বা সামান্যীকরণের অপচেষ্টা যে হয়নি তা নয়। সেই চেষ্টা বন্ধের লক্ষ্যে ইয়োরোপের অনেক দেশ এই ব্যাপারে আইনী পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পদক্ষেপের মধ্যে কোথাও কোথাও যেমন গণহত্যা অস্বীকারকরণের জন্য আইন আছে, তেমন কোথাও কোথাও নাৎসীবাদ নিষিদ্ধকরণ আইন বা জাতিবৈষম্য বিরোধী আইন বা অনুরূপ আইন বা ফৌজদারী আইন সংশোধনের মাধ্যমে ইহুদী গণহত্যা অস্বীকার বা সামান্যীকরণের অপচেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
গণহত্যা অস্বীকার বা সামান্যীকরণের অপচেষ্টা সংক্রান্ত ইয়োরোপীয় দেশগুলোর আইনগুলোর তালিকা এরকমঃ
১। অস্ট্রিয়া: নাৎসীবাদ নিষিদ্ধকরণ আইন ১৯৪৭, সংশোধনী ১৯৯২।
২। বেলজিয়াম: অস্বীকারকরণ আইন ১৯৯৫, সংশোধনী ১৯৯৯।
৩। চেক প্রজাতন্ত্র: মানবাধিকার ও স্বাধীনতা লঙ্ঘনের পক্ষে সমর্থন ও আন্দোলন সংগঠনের বিরুদ্ধে আইন ২০০১।
৪। ফ্রান্স: বর্ণবাদ, সেমিটিজম বিরোধীতা ও বিদেশীভীতি বন্ধকরণ আইন ১৯৯০।
৫। জার্মানী: গণপ্ররোচণা আইন ১৯৮৫, সংশোধনী ১৯৯২, ২০০২ ও ২০০৫।
৬। হাঙ্গেরী: গণহত্যা অস্বীকার বা সামান্যীকরণ বিরোধী আইন ২০১০।
৭। ইসরায়েল: গণহত্যা অস্বীকার (রোধকরণ) আইন ১৯৮৫।
৮। লিচেনস্টেইন: ধারা-২৮৩: জাতিগত বৈষম্যীকরণ সংক্রান্ত (২০০৯)।
৯। লিথুয়ানিয়া: ধারা-১৭০(২): আন্তর্জাতিক অপরাধ সংক্রান্ত (২০১২)।
১০। ল্যুক্সেমবার্গ: ধারা-৪৫৭(৩): গণহত্যা অস্বীকারকরণ সংক্রান্ত (১৯৯৭)।
১১। পোল্যান্ড: পোলিশ জাতির বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত আইন ১৯৯৮।
১২। পর্তুগাল: ধারা-২৪০: ধর্মীয়, জাতিগত ও লৈঙ্গিক বৈষম্য সংক্রান্ত (২০০৭)।
১৩। রোমানিয়া: ৩১ নং জরুরী অধ্যাদেশ ২০০২।
১৪। সুইৎজারল্যান্ড: ধারা-২৬১: জাতিগত বৈষম্যীকরণ সংক্রান্ত (২০০৯)।
১৫। স্পেন: গণহত্যা অস্বীকারকরণ আইন ২০১৩।
এছাড়া ইয়োরোপীয় ইউনিয়ন ২০০৭ সালে জাতিবৈষম্য ও বিদেশীভীতি প্রতিহতকরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে যার আওতায় সদস্য দেশগুলো চাইলে গণহত্যা অস্বীকার বা সামান্যীকরণের অপচেষ্টার বিচার করতে পারবে। গণহত্যা অস্বীকার বা সামান্যীকরণের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে আইন ছাড়াও ইয়োরোপের বহু দেশে নাৎসীবাদ বিরোধী আইন আছে যেগুলোর আওতায় নাৎসীবাদের সমর্থনে কিছু বললে বা করলে, অথবা তাদের অতীত কর্মের পক্ষে কিছু করলে বা বললে সেটা দণ্ডযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়। এক জার্মানীতে শুধুমাত্র ২০০৯ সালে এই আইনে হর্স্ট মাহলারের ৫ বছরের কারাদণ্ড, দ্রিক জিমারম্যানের ৯ মাস কারাদণ্ড ও রিচার্ড উইলিয়ামসনের ১২,০০০ ইয়োরো জরিমানা হয়েছে। সুতরাং, এই আইনের কঠোর প্রয়োগও কোন বিরল ঘটনা নয়।
ইহুদী গণহত্যা অস্বীকার বা সামান্যীকরণ বিরোধী আইনগুলো সামনে রেখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা প্রত্যাখ্যান ও সামান্যীকরণ বিরোধী আইনের কাঠামোর প্রাথমিক পর্যায়টি নিয়ে একটি আইনের রূপরেখা কল্পনা করা যাচ্ছেঃ
১। যদি কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান —
(ক) ১৯৭১ সালে সংঘটিত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে বা প্রত্যাখ্যান করে বা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে বা সামান্যীকরণ করে
(খ) ১৯৭১ সালে সংঘটিত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে অস্বীকার করে বা প্রত্যাখ্যান করে বা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে বা সামান্যীকরণ করে
(গ) ১৯৭১ সালে সংঘটিত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা যা তৎকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার বা ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারী পরবর্তীকালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বলে স্বীকৃত তা অস্বীকার করে বা প্রত্যাখ্যান করে বা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে বা সামান্যীকরণ করে
(ঘ) ১৯৭১ সালে সংঘটিত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জখমের ঘটনাকে অস্বীকার, প্রত্যাখ্যান বা সামান্যীকরণের অপচেষ্টা করে
— তাহলে উক্ত ব্যক্তি অথবা উক্ত সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের উক্ত কার্যক্রম ফৌজদারী অপরাধ বলে গণ্য হবে। এবং উক্ত ব্যক্তি অথবা উক্ত সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে দোষী সাব্যস্ত করে [দণ্ডের বিবরণ] দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
২। যদি যে কোন মাধ্যমে, যে কোন উপায়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত অনুষ্ঠান, বক্তব্য, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গবেষণাকর্ম, সাহিত্যকর্ম, শিল্পকর্ম, পারফর্মিং আর্টের মাধ্যমে উপরোক্ত ধারা-১ এ বর্ণিত অপরাধসমূহ কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সংঘটিত হয় তাহলে উক্ত ব্যক্তি অথবা উক্ত সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের উক্ত কার্যক্রম ফৌজদারী অপরাধ বলে গণ্য হবে। এবং উক্ত ব্যক্তি অথবা উক্ত সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে দোষী সাব্যস্ত করে [দণ্ডের বিবরণ] দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। উক্ত ঘটনায় উক্ত মাধ্যমের প্রকাশক, প্রচারক, প্রযোজক, পরিচালক, সম্পাদক, সংগঠকও একই প্রকার অপরাধে দোষী হিসাবে বিবেচিত হবেন। এবং তাকে বা তাদেরকে উক্ত ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে [দণ্ডের বিবরণ] দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
৩। বাংলাদেশে বিদ্যমান অন্য সকল আইন ও অধ্যাদেশে যাই থাকুক না কেন উপরোক্ত ধারা-১ ও ২ এ বর্ণিত অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার বিচার বন্ধ বা রহিতকরন; বন্ধকরণ, রহিতকরণ, হ্রাসকরণ বা মওকুফ করা যাবে না।
এই রূপরেখাটি সম্পূর্ণ নয়, যথাসম্ভব নিশ্ছিদ্রও নয়। আইন বিশেষজ্ঞগণ স্বপ্রণোদিত হয়ে এই প্রকার একটি আইনের খসড়া প্রণয়ন করতে পারেন এবং আমাদের জনপ্রতিনিধিগণ জাতীয় সংসদে বিল উত্থাপন ও পাশ করার মাধ্যমে খসড়াটি আইনে পরিণত করতে পারেন। তবে তার জন্য পূর্বাহ্নেই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং এর স্বপক্ষে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলা প্রয়োজন। সে’কাজে এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরকেই। শাহ্বাগের আন্দোলন আমাদেরকে দেখিয়েছে প্রবল জনমত ও একটি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কীভাবে জনপ্রতিনিধিদেরকে অনতিবিলম্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনকে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে উৎসাহিত করেছে। আমরা এগিয়ে আসলে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা প্রত্যাখ্যান ও সামান্যীকরণ বিরোধী আইন প্রণয়ন ও পাশ হওয়া অসম্ভব কিছু হবে না।
(এই লেখায় উল্লেখিত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থানের নামসমূহ তাদের মূল নামের বাংলা প্রতিবর্ণীকরণ মাত্র, প্রকৃত উচ্চারণানুগ নয়।)
মন্তব্য
এরকম একটা পোস্টের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
--------------------------------
বানান ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন!
সহমত প্রকাশ করলাম।
সৈকত
এটা নিয়ে আমি আগে একবার লিখেছিলাম। এই ধরণের আইন আসলেই দরকার।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আপনার পোস্টটার কথা মনে ছিল না। নয়তো ওটাকে ভিত্তি ধরে কাজ করলে ব্যাপারটা আমার জন্য আরো সহজ হতো।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লেখাটা শাহবাগ আন্দোলনে পৌঁছানো ভীষণ জরুরী
ব্যাপারটা শাহ্বাগে পৌঁছানোর চেয়ে বেশি জরুরী আমাদের আইনপ্রণেতাদের কাছে পৌঁছানো। তারাই পারেন এমন একটা আইন প্রণয়ন করে এই মিথ্যাচার রোধ করতে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারণ!
অস্বীকার, প্রত্যাখ্যান বা সামান্যীকরণের মধ্যে সামান্যীকরণের প্রবণতা প্রচুর - 'বসু' থেকে 'ম্যান' কেউ বাদ যায়না!
এই আইন চাই ই চাই। আমরা যার যার কর্মক্ষেত্রে আরেকটু মনযোগী হতে পারতাম আইন টা হয়ে তার প্রয়োগ শুরু হলে।
আমি আমার পরিচিতদের জানাচ্ছি - যারা এই পোস্ট পড়বেন তাদেরকেও অনুরোধ করছি জানানোর জন্য সবাইকে - বাংলাদেশ এ থেকে ছাগুগিরি চল্বেনা - বন্ধ করতে হবে।
দারুণ !
আজ চ্যানেল আইয়ের নিউজে দেখলাম, বিএনপি নাকি বলেছে যে, প্রমাণ হয়ে গেছে জাতি যুদ্ধাপরাধের বিচার চায় না। এটা যদি সত্য হয়, তাহলে ১ (ঘ) এর আওতায় তাদের শাস্তি হওয়ার কথা, তবে এরকম আইন যদি আমাদের দেশে পাস হয়।
অত্যন্ত সময়োপযোগী একটি আইনের কথা জানিয়েছে, পান্ডবদা, সেজন্য এদেশের মুক্তিকামী ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রত্যাশী জনতার একজন হিসেবে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আর একই সঙ্গে প্রজন্ম স্কয়ারের নেতাদের এরকম আইন প্রণয়নের দাবি জানানোর জন্য অনুরোধ করছি।
অনেক সুন্দর লেখা । একটি সুন্দর লেখায় পারে ইতিহাস রচনা করতে।
সহমত।
অসাধারণ পাণ্ডবদা!
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি লেখা পান্ডবদা।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
সহমত প্রকাশ করি।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
খুবই জরুরী লেখা পাণ্ডবদা। পৃথিবীর ইতিহাসে ঘাতকেরা সব সময়ই চেয়েছে ইতিহাসের কলঙ্ক লুকোতে। কিন্তু সময় তাদের সে অসদুদ্দেশ্য পূরণ করতে দেয়নি।
আপনার চারটি ধারার সাথে আরো একটি ধারা সংযোগের প্রস্তাব জানাচ্ছিঃ
ঙ) স্বাধীন বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারী পাকিস্তানী দখলদার হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সশস্ত্র মুক্তি-সংগ্রামকে "গৃহযুদ্ধ" কিংবা "পাক-ভারত যুদ্ধ" বলে অভিহিত করা সুস্পষ্টভাবে রাষ্ট্রদ্রোহীতা। এ ধরনের বক্তব্য প্রদানকারী সকল ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে।
ধন্যবাদ। আপনার প্রস্তাবিত ১ (ঙ) ধারার মূল প্রতিপাদ্য আমার প্রস্তাবিত ১ (ক) ধারা কাভার করে। সুতরাং এটা আলাদা করে বলার দরকার নেই মনে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তা অবশ্যই করে। আরেকটু স্পষ্ট করার জন্য আর কি! ১(ক) এর ব্যাখ্যা হিসেবে আরো সঠিক হয়। বা ১(ক)-১, ১(ক)-২ ইত্যাদি যুক্ত করা যেতে পারে।
স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের গণমাধ্যমে যখন কেউ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার প্রয়াস পায়,আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আত্মদানকে খাটো করতে চায়,লক্ষ শহীদের নির্মম হত্যাকান্ডের, লক্ষ মা-বোনের নির্যাতন-অপমানের ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকারের বিরোধীতা করে তখন কিরকম অসহ্য ক্রোধে-ক্ষোভে বুকের ভিতরটা জ্বলে ঊঠে তার বর্ণনা দেবার মতো ভাষা খুঁজে পাইনা।৩০ লক্ষ শহীদের সংখ্যাকে ৩লক্ষে নামিয়ে আনার অপপ্রয়াসে লিপ্ত চক্রকে একটা কথাই বলতে চাই----৭১ এর পাশবিক নির্যাতনের ইতিহাসকে সংখ্যার হিসাব দিয়ে হ্রাস করা যাবেনা।
"দেশে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংগঠন কর্তৃক এই ধরনের প্রত্যাখ্যানের অপচেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহীতার পর্যায়ে পড়ে। দেশের বাইরে বা কোন বিদেশী ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংগঠন কর্তৃক এই ধরনের প্রত্যাখ্যানের অপচেষ্টা বাংলাদেশ বিরোধীতার পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু এই সংক্রান্ত ব্যাপারে স্পষ্ট বা স্বতন্ত্র কোন আইন না থাকায় অপকর্মকারীদের বিরূদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের সাধারণত কোন উপায় থাকে না। ফলে, দেশে বা দেশের বাইরে এক শ্রেণীর লোক বই, পত্র-পত্রিকা, ব্লগ, চলচিত্র, সভা-সেমিনার, টক শো ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতি নিয়ত মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জখমের ঘটনাকে প্রায়শ অস্বীকার, প্রত্যাখ্যান বা সামান্যীকরণের অপচেষ্টা করেই যাচ্ছে। এই ধরনের অপতৎপরতা রোধের জন্য এবং আমাদের জাতীয় ইতিহাসকে বিকৃতিমুক্ত রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা প্রত্যাখ্যান ও সামান্যীকরণ বিরোধী আইন প্রণয়ন এবং তার যথাযথ প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী।"
লেখকের সাথে ১০০% সহমত ।সাথেই আছি। সাথেই থাকবো।
তোমার সাথে সহমত।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
সম্পূর্ণ সহমত।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ডেভিড বার্গম্যান টুইটারে কান্নাকাটি করেছে এই ব্যাপারে। এই আইন প্রণীত হলে নাকি তার অপপ্রয়োগ হবে। হলোকস্ট ডিনায়াল অ্যাক্টের কথা বললে সে চুপ করে থাকে নয়তো কথা ঘুরায়।
এই আইন হলে বার্গম্যান সাহেবের লম্ফ-ঝম্প যে বন্ধ হয়ে যাবে সেটা উনি ভালোই জানেন। তাই আইন প্রণয়নের আগেই তিনি অপপ্রয়োগ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন।
একটা সরল প্রশ্ন করি, ডেভিড বার্গম্যান কি বাংলাদেশের নাগরিক? যদি তাই হন, তাহলে তো রাজাকারদের বাঁচানোর জন্য তার এতো কথা বলার দরকার নেই। সোজা আদালতে গিয়ে সরকারের এই সংক্রান্ত কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করতে পারেন। আর যদি তিনি বাংলাদেশের নাগরিক না হয়ে থাকেন তাহলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এতো নাক গলানোর উনি কে? আমাদের সংসদে আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আমাদের জন্য কোন আইন প্রণয়ন করবেন সেটা কি কোন বিদেশীর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী হতে হবে?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সম্পূর্ণ সহমত।
এই ধরণের আইনের কি কোনও খসড়া তৈরি করেছে বর্তমান সরকার?
ছোট্ট একটা সংশোধনঃ
৮। লিচেনস্টেইন: ধারা-২৮৩: জাতিগত বৈষম্যীকরণ সংক্রান্ত (২০০৯)।
লিচেনস্টেইন – এর জার্মান ভাষায় সঠিক একটা উচ্চারণ হচ্ছে লিখ্টেন্স্টাইন ।
-- জ্যোতিস্কর দাদু
না, এমন কোন আইনের খসড়া বর্তমান সরকার করছে বলে জানা নেই। এমন কোন আলোচনা জাতীয় সংসদে হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
লেখার শেষে একটা ডিসক্লেইমার দিয়েছিলামঃ
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সম্পু্ন সহমত তবে আগে চাই জনগনকে সচেতন করা এবং এর মাধ্যমে সকল রাজনৈ্তিক দলগুল চাপে পড়ে বাধ্য হবে ঐক্য্মতে পৌছতে। কেবল তখনি সম্ভব এই আইনের সফল বাস্তবায়ন। আপনাকে অসংখ ধন্যবাদ এই সময় উপযগি লেখার জন্যে।
আমাদের আইনপ্রণেতাগণ জনপ্রতিনিধিও বটে। সুতরাং তারা যেমন জনগণের কথা শুনে আইন প্রণয়নের কথা ভাববেন তেমন স্বপ্রণোদিত হয়ে জনগণের জন্য বা রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গলকর আইনের কথাও ভাববেন। এটা আশার কথা নয়, এটাই উচিত। তবে সেটা যে প্রায়ই হয়ে ওঠে না তা আমরা জানি। ক্ষমতাসংলগ্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মৌলিক চরিত্র জনমুখী না হওয়া পর্যন্ত এই সমস্যা চলবে। ততোদিন পর্যন্ত জনমত তৈরি করে আইনপ্রণেতাদের ওপর চাপ প্রয়োগের বিকল্প নেই।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আজকে একটি ভারতীয় বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানতে পারলাম - ইউরোপিয়ান রা নাৎসী বিষয়ে কি ভীষণ রকম গোঁড়া!
"এক স্যালুটেই ভিলেন হলেন গ্রিক ফুটবলার গিয়র্গস কাতিদিস, বিপক্ষের গোলে বল ঠেলে তামাম দর্শককে স্তম্ভিত করলেন নাত্সি স্যালুট ঠুকে। ঘটনাক্রমে ওই দিনটাই নাত্সি কনসেন্ট্রেশন চেম্বার-এ অগণিত গ্রিক ইহুদির মৃত্যুর সত্তর বছর পূর্তি, ইতিহাস-দগদগে ঘায়ে যেন নুনের ছিটে পড়ল। দেশময় ধিক্কার, ফুটবল সংস্থা পত্রপাঠ ‘লাইফ ব্যান’ ধরালেন। নায়ক গোড়ায় বোঝেনইনি ভুলটা কী, পরে সন্তপ্ত জানালেন, ওই স্যালুটের মারাত্মক নিহিতার্থ বা কদর্য ইতিহাস তিনি জানতেনই না, কোত্থেকে দেখে মনে ধরেছে, করে ফেলেছেন। লঘু পাপে গুরু দণ্ড কি না, প্রশ্ন। আরও বড় প্রশ্ন, কালপ্রবাহে দেশ-মানুষ-রাজনীতি-কূটনীতি সব কিছুই বদলায়, তবে বিশেষ একটি হস্তভঙ্গিমাকে এখনও এতখানি ঘৃণার গুরুত্ব দিলে তা একটু বেশি জঙ্গিপনা হয়ে যায় না কি? এই জিনিসটি নিয়ে এতটুকু লঘুতা চলবে না এই অনড় গোঁড়া ‘ট্যাগ’ নাত্সি দর্শনেরই কাছাকাছি খেলছে কি না, দেখার। আর অবশ্যই প্রকট হল: হালের তারুণ্যের ‘সিকি বিদ্যা ভয়ংকরী’। কিচ্ছু জানব না পড়ব না , পূর্বাপর মাথায় রাখব না, একে ওকে দেখে ঝলকাব গনগনে ট্রেন্ডি যা কিছু, হঠকারী আলটপকা কম্মো করে, কিক-অ্যাস! এ বার বোঝো।"
আপনার দেয়া লিঙ্কটিতে সংশ্লিষ্ট খবরটি পেলাম না। আমি বরং ডেইলি মেইলের খবরের লিঙ্কটি যোগ করে দিচ্ছি।
"আমি আইনটা জানতাম না" বলে কোন অপরাধেই নিষ্কৃতি পাওয়া সম্ভব নয়। আইন প্রণীত হওয়া মানে সেই আইন অজ্ঞ-বিজ্ঞ সকলের জন্য প্রযোজ্য।
কিছু কিছু বিষয়ে 'জিরো টলারেন্স' ব্যবস্থা নিতে হয়। ইঁদুরকে ছোট, নিরীহ প্রাণী ভেবে প্রশ্রয় দিলে সে শুধু ঘরের সব কিছু কেটে ছারখার করবে না; আন্ডা-বাচ্চা পেড়ে সারা ঘরও একসময় দখল করে নেবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সোভিয়েত দখলদারির ইতিহাসকে অস্বীকার করলে তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে আইন পাশ করেছে লাটভিয়ার সংসদ। আন্তর্জাতিক মান নিয়ে যাদের অনেক আহাউহু, তাদের জন্যে এটা কাজে লাগবে।
বাংলাদেশের মিডিয়ার অনুবাদ ডেস্ক মারফত এই খবরটা এলে (আদৌ যদি কাওরানবাজারের সেন্সর বোর্ড পার হয়) নির্ঘাৎ, তার খৎনা করা শিরোনাম হবে-
"জাতিবিদ্বেষী আইনের ফাঁদে লাটভিয়াঃ সতর্ক বাংলাদেশ"
কিংবা
"অতীতের পথে হাঁটছে বর্ণবাদী লাটভিয়াঃ নাৎসিদের মানবাধিকার রক্ষায় ইউরোপে তোলপাড়"
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
চমৎকার লেখা। আশা করি দেশের আইনপ্রনেতারা এই বিষয়টি পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
সব বেদনা মুছে যাক স্থিরতায়
হৃদয় ভরে যাক অস্তিত্বের আনন্দে...
সময়ের দাবি।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
নতুন মন্তব্য করুন