এক.
রাজা বলেছেন,'আমাকে দন্ড দাও'।
বৃদ্ধ রাজা জুবুথুবু হয়ে শুয়ে থাকেন।অশতিপর রাজার কথা পরিস্কার বুঝা যায় না।মুখের কাছে কান লাগিয়ে শুনতে হয় ,তা ও সবার পক্ষে এ কথার অর্থ বের করা কঠিন।
রাজার খুব প্রিয় শিষ্য মোখলেস শুধু এ কথা গুলোর অর্থ ধরতে পারেন তাই মোখলেসকে রাজার আশেপাশে চবি্বশ ঘন্টা থাকতে হয়। মোখলেসের কোন পদ পদবি নেই,রাজ অন্তপুরে থাকার কোন অধিকার তার নেই,তবু বউ বাচ্চা ফেলে তাকে রাজার শিয়রে বসে থাকতে হয় রোজ দিন।আপাতত: কাজ চালানোর জন্য তাকে একটি মুখভরা পদবি দেয়া হয়েছে,কারন পদবি ছাড়া মোখলেস থাকবে না, (বউয়ের কাছে রাতে না থাকতে পারার একটি গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যাতো তাকে ঘরে দিতে হবে, নাকি !)আর মোখলেস না থাকলে রাজার কথা কেউ বুঝতেও পারবে না।জটিল সমস্যা!!
সেই রাজা একদিন মোখলেসের কানের কাছে মুখ লাগিয়ে বলেছেন, 'আমাকে দন্ড দাও'।তারপর সব চুপচাপ, রাজার আর নড়ন চড়ন নাই।
দুই.
রাজার কথায় রাজ্য জোরে শোর ওঠে। কেউ কিছু বুঝতে পারে না। রাজার আবার কী দন্ড দরকার!! তিনি তো রাজদন্ড পেয়েই গেছেন!!
সারা দেশে বিভ্রান্তি! বাংলা একাডেমির পন্ডিত বুদ্ধিজীবিরা বলেন,এই দন্ড হচ্ছে 'শাস্তি',রাজা নিজেকে শাস্তি দিতে চাচ্ছেন। বরাবরের মতোই ,বুদ্ধিজীবিদের এই বিবৃতি হালে পানি পায় না।এদেশে ছাগল আর বুদ্ধিজীবির কথায় কেউ কোনদিন কান দেয় নি।
কেউ কেউ পেছনে মুচকি হাসেন।তারা বলেন,রাজা মঘা ইউনানি বর্ণিত 'দন্ডে'-র কথা বলছেন। বুড়ো বয়েসে এই ধরনের চিন্তা জাগে। শুনে এরশাদ হেসে বলেন,'যে জিনিষ হারায় জীবনে,তা কি আর ফিরে আসে হে রাজন।নিজেকে দিয়েই বুঝেছি।'
ইমদাদুল হক মিলন এই 'দন্ড' নিয়ে আরেকটি রগরগে উপন্যাসের প্লট ফাদেন, তসলিমা নাসরিন 'দ' নামে আরেকটি বই লিখে তার 'দন্ড' বিষয়ক স্মৃতি লিখতে আগ্রহী হন।
কিন্তু ,সমস্যার সমাধান হয় না।সারা দেশে নৈরাজ্য দিনে দিনে বাড়তেই থাকে। চিন্তায় চিন্তায় মোখলেসের চুল পড়ে টাক বেরিয়ে আসে,বেচারা টুপি পড়ে মনমরা হয়ে ঘুরে বেড়ায়।
তিন.
এবার এগিয়ে আসেন,একদল বিদেশী ডাক্তার। তারা এতোদিন মুখ লুকিয়ে চলতেন। কিন্তু এক মন্ত্রি তাদের স্টুপিড বলে গাল দিতেই তাদের চৈতন্য হয়। স্টুপিড ইংরেজী শব্দ,তারা কথাটির অর্থ ধরতে পারেন।শুনে তারা আশ্চর্য হন,তাদেরকে গালাগালি করছে কেন?তাহলে নিশ্চয়ই বাংলাতেও তাদের গালি দিচ্ছে ,তারা ভাষা জানেন না বলে ধরতে পারছেন না!
এবার তারা বাংলা শিখতে আগ্রহী হন। তাদেরকে বাংলা শিখার ঝামেলার কথা মনে করিয়ে দেয়া হয়। এক 'দন্ড'শব্দেরই কতো অর্থ এই দেশে,এটা নিয়েই সারা দেশ মশগুল,এবার বিদেশিরা বাংলা শিখে কী করবে!
শুনে বিদেশী ডাক্তাররা হাসেন। এই স্টুপিডের দল,রাজার কথার অর্থ বুঝিস নি,রাজা তো তার দরকারি দন্ডটাই চাচ্ছেন।
বিদেশীরা এক মিটিংয়ে বসে রাজার জন্য একটি জলপাই কালার 'দন্ড ' বানিয়ে দেন। রাজ দন্ড নয়,মেরুদন্ড।
সেই মেরুদন্ড পেয়ে রাজা চট করে দাড়িয়ে যান।তিনি একের পর এক নির্দেশ দিয়ে রাজ্যের সকল বিশৃংখলা ঠিক করে ফেলেন। দেশের মানুষ তাকে ধন্য ধন্য করতে থাকে।
আর এতোদিন ধরে রাজার কথার অর্থ ধরতে না পারায় পরদিন দুপুরে বেচারা মোখলেসের চাকরি চলে যায়...
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন