(ভুমিকা: গত পর্বে আলোচনা ছিল শুধু ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে,আমার ইচ্ছা ছিল নিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়েই আলোচনাটা এগুবে। কিন্তুু কিছু কমেন্টকারি বন্ধু আলোচনাটিকে ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন। তাই আজকের লেখায় তারা হয়তো কিছু রসদ খুজে পেতে পারেন।এই ইস্যুটি আরো একাধিক পর্বে গড়াতে পারে।তারপর আবার মুলস্রোতে ফিরে আসা যাবে।গত পর্বে যারা কমেন্ট করে মতামত দিয়েছেন,তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।)
: আব্বু, তাহলে তো গনতন্ত্রের মুল মন্ত্র 'বাই দ্য পিপল,অফ দ্য পিপল' কথাটিকে নতুন ভাবে ভাবতে হবে?রাষ্ট্র যদি সংখ্যাগরিষ্টের মতামতে না চলে তাহলে তাকে রাষ্ট্র বলা কি উচিত হবে?
: তোমাকে মনে রাখতে হবে যে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব তার অধিবাসীদের বেধে ফেলা নয়। মানুষ রাষ্ট্রকে সৃষ্ঠি করেছে তার প্রয়োজনে,তার নিজের কমফোর্টের জন্য।সুতরাং রাষ্ট্র শুধুমাত্র ততোটুকু খবরদারি করবে যতোটুকু করলে নাগরিকের স্বস্থি বজায় থাকে।রাষ্ট্র শুধু তাদেরকে দমন করবে যারা অন্যের অধিকারকে খর্ব করবে।
এখন ধরা যাক একজন হিন্দু একটি মুসলিম দেশে থাকেন। তিনি জন্মসূত্রে এই দেশের অধিবাসী,তার দেশপ্রেম আছে,নাগরিক দায়িত্ব পালনে তিনি কখনোই পিছপা হননি।এখন তিনি তো কারো কোন অসুবিধা ঘঠাচ্ছেন না,সুতরাং তাকে দমন করতে রাষ্ট্র এগিয়ে আসতে পারবেনা। তার ধর্ম পালন তার ব্যাক্তিগত অধিকার,রাষ্ট্র সে অধিকারে কোন হস্তক্ষেপ করলে সেটি আর ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র থাকছে না।
'বাই দ্য পিপল,ফর দ্য পিপল,অফ দ্য পিপল' কথাটিকে এতো সরলিকরণ করা ঠিক হবে না।রাষ্ট্র জনগন দ্বারা গঠিত হবে,এবং জনগন দিয়েই গঠিত হবে--এটুকু ঠিক আছে। কিন্তু এর মানে কী দাড়াচ্ছে ?এর মানে হচ্ছে যে জনগন রাষ্ট্রের উপাদান,তাই তো ?এবার তোমাকে দেখতে হবে কতো বেশী উপাদান তুমি এখানে জড়ো করতে পারো। যতো বেশী যোগ করতে পারবে ,ভিত্তি ততো মজবুত হবে। তুমি ভাষার জন্য,ধর্মের জন্য,চেহারার জন্য,লিঙ্গের জন্য যদি কোন মানুষকে বাদ দিয়ে যাও তবে তোমার উপাদান কম মিশলো,তোমার রাষ্ট্রও দুর্বল হলো।সুতরাং,বাই দ্য পিপল হলো 'জনগন দিয়ে',তুমি সেই জনগনকে বেশী পরিমান নিতে পারলে কথাটির অর্থ ঠিক থাকলো।
আচ্ছা,এখন সংখ্যাগরিষ্টের মতামতকে কিভাবে মুল্যায়ন করবে। ঠিক কথা ,এখন যদি সংখ্যা গরিষ্ট মানুষ তার নিজের দেশকে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়,তাহলে বাকিদের কিছু করার উপায় থাকবে না। কিন্তু এই রাষ্ট্রটি তাহলে দুর্বল ভিতের উপর দাড়াচ্ছে।কারন কিছু মানুষকে খামাখাই তুমি তোমার রাষ্ট্রে দ্বিমতে রেখে দিচ্ছ। তারা সংখ্যালঘিষ্ট এবং সংখ্যালঘিষ্ট মানুষ তাহলে খুব দ্রুতই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরেকটি নিজেদের রাষ্ট্র তৈরী করতে চাইবে। তারাতো তোমার এখানে কমফোর্ট ফিল করছে না,তাই না?এখন তারা যতো বেশী অস্বস্থি বোধ করবে,তারা ততো দ্রুত তাদের নিজেদের রাষ্ট্র তৈরীতে ব্যস্ত হবে।সুতরাং তোমার পুরেনো রাষ্ট্র অস্তিত্ব সংকটে পড়বে।
একারনেই রাষ্ট্র চেষ্টা করবে তার নাগরিকদের কমফোর্ট লেভেলকে উচু করে রাখতে। যতো উচু থাকবে,ততোই রাষ্ট্র মজবুত থাকবে।আর তাই রাষ্ট্র অর্থনীতিতে,সামাজিক ন্যায় বিচারে নিরপেক্ষ হবে,এটা তার মজবুত অস্তিত্বের জন্যই জরুরি।
(চলবে...)
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন