আপুমনি ঘুমিয়ে আছে, খাজনা দিব কিসে ....

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/০২/২০০৭ - ৬:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মন্নান মিয়ার দিনকাল
গত পাচঁ বছরে মন্নান মিয়ার ভালোই উন্নতি হয়েছিল। যদিও পাঁচ পেরিয়ে যাওয়া জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারে মন্নান মিয়ার অবদান নেই কিছুই,তবুও সেটা উন্নতিই বটে। মন্নান মিয়া খাম্বা বিক্রী করেন নি,টিভি চ্যানেল কিনেননি, টেন্ডার ভাগজোকের জটিল হিসাবও তিনি আত্মস্থ করেন নি। তিনি করেছিলেন একটি টঙ ঘরের চায়ের দোকান। মহাখালির ফ্লাইওভারের কাছে,রেল লাইনের ধারে তিনি এসে যে বস্তিতে ডেরা বেধেছিলেন, তার পাশেই একটি টঙ ঘর ভাড়া নিয়ে মন্নান মিয়া বেচতেন চা,পান সিগারেট।

সুনামগঞ্জের ফুলপুর নামের যে গ্রাম থেকে তিনি এসেছিলেন সেখানে ভাতের বড়ো কষ্ট ছিল রে ভাই। এক ফসলি ধান ওঠে বৈশাখ মাসে। দিনমজুরি করে যে ধান ভাগে পড়ে তাতে একমাস কুলানোটাই মুসিবত। বাকি মাসগুলোয় মাছ টাছ ধরে যে জান বাচাঁবেন তারও আর কোন উপায় নেই। সবগুলো জলমহালই আজকাল ইজারাদারদের দখলে।

এদেশের শত শত ভূমিহীনদের মতো মন্নান মিয়াও তাই একদিন বউ আর দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় চলে এলেন পাঁচ বছর আগে।

তিলোত্তমা মমতাময়ী ঢাকা তাকে বিমুখ করেনি। এখানে এসে তিনি দুবেলা দুমুঠো খেয়ে বেচেঁ আছেন।বৌ ও পিঠা বিক্রী করে বেশ রোজগার করে। ছেলে দুটি এন.জি.ওর স্কুলে যায়।কে জানে হয়তো এই ছেলে দুটিই একদিন লেখাপড়া করে বড়ো অফিসার হয়ে যাবে। মন্নান মিয়ার বুকের ভেতর সুখ রিমঝিম করে...।

সারাদিন দোকানে বসে থাকতেও খুব মজা। নানান কিসিমের মানুষ আসে ,চা সিগারেট খায় আর আড্ডা মারে। তাদের কাছ থেকে না না খবর পাওয়া যায়। দেশে যে একটা নতুন সরকার এসেছে তা নিয়ে সবাই খুব উল্লসিত। কতো ভালোই যে করছে এই সরকার.....। মান্নান মিয়া তাদের জন্য মনে মনে খাসদিলে দোয়া করেন.....

স্টপ প্রেস :অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চলছে
আজ সকালে মন্নান মিয়ার দোয়াপ্রাপ্ত বলীয়ান সরকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কর্মসূচীতে খোদ মন্নান মিয়ার দোকান আর বস্তিঘরটি উচ্ছেদ করে দিয়েছে।হা:হা:হা:।

দরজার ওপাশে আরো যারা মন্নান মিয়া

দরজার ওপারেই পশ্চিমবঙ্গ।
মমতা ব্যানার্জি নামের এক নেত্রী।
সিঙ্গুরে কৃষিজমি দখলের প্রতিবাদে অনশন করেন।সকাল এগারোটা থেকে বিকাল 5টা পর্যন্ত অরেঞ্জ জুস খাওয়া অনশন নয় । তিনি টানা তিন সপ্তাহ একটা রাস্তার ধারে চুপচাপ শুয়ে থাকেন। ভাত ছাড়া,রুটি ছাড়া এমনকি ঔষধ আর স্যালাইন ছা্ড়া।তার শরীরের রক্তচাপ কমতে থাকে,কিডনি দূর্বল হয়,হৃদ কম্পন ধীর হয়ে পড়ে....তিনি মারা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হন...।

অবশেষে নতি স্বীকার করে কেন্দ্র সরকার। সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহন স্থগিত হয় আর অনেক অনেক অনুরোধের পর মমতা অনশন ভঙ্গ করেন। ততোদিনে মমতার শরীরের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গেছে...আজো তিনি চিকিৎসাধীন আছেন

ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো
দরজার এপাশে বাংলাদেশ
খালেদা আর হাসিনা নামের দুইজন নেত্রী।
দেশে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে তারা চুপচাপ ঘরে বসে আইপডে গান শুনেন।গত কয়েক মাসের ধকল কাটিয়ে উঠতে আপেল -আঙুর খান।

মন্নান মিয়া,মাছুম আলি,রেজিয়া,আফতেরা,মলয় পালদের দূ:খ তাদের স্পর্শ করে না। এই অভাগা গুলোর দূ:খের কথা ভেবে তারা হাওয়া ভবন কিংবা সুধা সদনে এক কাপ কফি কম খেতেও আগ্রহী হন না।

তারা শুধু অপেক্ষা করে থাকেন,জলপাই সরকার মন্নান মিয়াদের ছবি তুলে কবে বুকে ঝুলিয়ে দেবে।আর সেই আই.ডি দিয়ে মন্নান মিয়া তাদের দুজনের কাউকেই আবার মসনদে নিয়ে যাবে...


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।