14 ফেব্রুয়ারি,1983
আমাদের রক্তে তখন অন্তর্গত এক বিপন্ন বিষ্ময়।
দ্রোহ আর ক্ষোভে আমাদের নিওরনের অলিতে গলিতে মিছিলের তুমুল উৎসব।
ধুলিময় রাজপথ শিঙা ফুকিয়ে বলে' এখন যৌবন যার ,যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।'।
আমরা রাজপথে নেমে আসি সেদিন। দিনবদলের চিরায়ত সংগ্রামের বীজ আমাদের রক্তে বুনে দিয়েছিলেন যে পূর্বপুরুষেরা,সেই রক্তের কসম খেয়ে প্রেমিকার কোমল হাত ছাড়িয়ে আমরাও নেমে আসি মিছিলে।
জলপাই ট্রাক পথ রুখে বলে-'থামো।'। আমরা পথচলি।
খাকি পোষাক হুইসেল বাজায়-'থামো'। আমরা পথচলি।
মাসলম্যনরা চাপাতির ঝিলিক দেখায়-'থামো। আমরা পথচলি।
অত:পর হঠাৎ!
শান্ত মিছিলের পিছন দিকে নীল দানব তার ট্রাক তুলে দেয় দ্রুত গতিতে।
সহযোদ্ধাদের ছুটাছুটি,কোথাও একটা করুণ আর্তনাদ,কে যেন এতোজোরে এক বুকচেরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
এবং সব শান্ত হয়ে আসে এক সময়।
আমরা খুজে পাই সহযোদ্ধাদের লাশ।
গলিত,দলিত চিড়ে চ্যাপ্টা হওয়া একেক জন তুমুল প্রানবান তরুনের নিথর দেহ।
দীপালি সাহা,জাফর,জয়নাল,কাঞ্চন--লাশ খুজে পাওয়া যায় এই চারজনের মাত্র। কতোজন নিহত হয়েছিলেন মোট,সেই তথ্য আজো উদঘাটিত হয় নি।
দীপালি,কাঞ্চন,জাফর ,জয়নালের সেই অমর আত্মত্যাগের দিন-14 ফেব্রুযারি।
14 ফেব্রুয়ারি,2007
দীপালি,কাঞ্চন,জাফর ,জয়নালের উত্তরপুরুষেরা আজ মগ্ন ভালোবাসায়।এক জারজ পুরুষ আমাদের কে ভালোবাসার দিন এনে দিয়েছেন। তার আগে কেউ এদেশে ভালোবাসতো না। আমরা তাই নতুন করে ভালোবাসা শিখছি।
পয়লা ফাল্গুনের হলুদ রেখে আমরা পরদিন থেকে ভালোবাসাবাসি করব।
আমরা আজ বইমেলায় গিয়ে ইমদাদুল হক মিলনের পর্ণো বই কিনব,
রমনা পার্ক,বোটানিক্যাল গার্ডেন, জিয়ার মাজার আর সাইবার ক্যাফের বুথে প্রেমিকার স্তন টিপব,
কে জানে ভাগ্য ভালো থাকলে কোন বন্ধূর বাসায় উপগত হয়ে সঙ্গম সুখও পেতে পারি।
আমরা আজ ভালোবাসার বন্যায় ভেসে যাবো।
দীপালি,কাঞ্চন,জাফর ,জয়নালের মুখ আর আমাদের মনেও পড়ে না...
মন্তব্য
আসলেই আমরা আমাদের অর্জনগুলো যারা এনে দিয়েছিল তাঁদের মনে রাখি না। কী আশ্চর্য!!
অদ্ভুততো, ২০০৭ এর এই পোস্টে প্রথম কমেন্ট পড়লো ২০১২ সালে! আমরা কি এতই দ্রুত ভুলে যাই সব? কি অদ্ভুত! আরিফ জেবতিক, আপনাকে স্যালুট!
নতুন মন্তব্য করুন