এক.
গতকাল আমার জীবনে এক ভয়ংকর দূর্ঘটনা ঘটে গেছে।বলা নেই কওয়া নেই,বাড়িওয়ালা হঠাৎই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই কপাল ভালো যাচ্ছে না। ছোট একটা কারখানা করেছিলাম মিরপুরে,সেটি গুড়িয়ে দিয়েছে বুলডোজার দিয়ে। না না জায়গায় পাওনা টাকা কড়ি যে ফিরত পাবো তার আশা তেমন একটা নেই।
মাসের শেষ,হাত একেবারেই খালি।
এর মাঝেই বাড়িওয়ালা কাল দুপুরে এসে বাসায় আম্মাকে বলল,আপনাদের কে ঘর খালি করে দিতে হবে।এক্ষুনি।
আমার বউ কাজে গেছে,আমিও ধান্দা টান্দা খুজতে বেরিয়েছি--এ সময় এমন ধারা কথায় আমার বৃদ্ধ মায়ের হার্ট এটাকের মতো অবস্থা!
ঘরে টেলিফোন নেই,আমাদের কে যে খবর দিবেন তার কেন উপায় জানা নেই এই বৃদ্ধা মহিলার। ঢাকার রাস্তাঘাটও তার চিনে নেয়া হয় নি। তাকে কোন ধরনের সুযোগ না দিয়ে বাড়িওয়ালার লোকজন আমাদের খাট পালং,বাসন কোসন সব রাস্তায় ছুড়ে ছুড়ে ফেলতে লাগল!
আমি এখানে বিনামূল্যে থাকি না। মাস শেষে ভাড়াটা দেই নিয়মিত। বাড়িওয়ালার ফাজিল ছেলেটাই নিয়ে যায় প্রতিমাসে। আমাকে বাসা ভাড়াটাও দিয়েছে তার ছেলেটাই।গত কয়েক বছর ধরে থাকছি,এ নিয়ে কোনদিন বাড়িওয়ালার কোন আপত্তি আছে বলেও শুনিনি।
আজ হঠাৎ করেই বাড়িওয়ালার কাছে এ বাড়িটা জরুরি হয়ে পড়েছে। এখানে নাকি একটা ক্লিনিক করা হবে। ক্লিনিক করা হবে ,সেটা খুব ভালো কথা। দেশে ক্লিনিকের কোন আকাল পড়ে নি যে আরেকটা নতুন ক্লিনিক এক মাস বাদে তৈরী হলে দেশে মহামারি লেগে যাবে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা।বাড়িওয়ালার এক কথা ,আজই বাড়িটা ছাড়তে হবে।
নোটিশ ফোটিশের ধার ধারেন না তিনি। জোর যার মুল্লুক তার এ যুগে,আমার অসহায় মা তার মাঝে কী করতে পারেন!!
দুই.
আমি বেকার মানুষ আড্ডা ফাড্ডা মেরে যখন ঘরে ফিরি তখন রাত 9টা। ঘর কোথায় ?
আমার মা আর বউ রাস্তায় দাড়িয়ে।চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বহু সাধের সংসারের টুকিটাকি...
মাসের শেষ।
আমাদের হাতে এমন কোন টাকা নেই যে কোন হোটেলে গিয়ে উঠব।
এমন কোন আত্মীয় স্বজন নেই এই শহরে যিনি আমাদের আশ্রয় দিতে পারেন।
ঘরে চাল ডাল যা ছিল,সেগুলো তো উচ্ছেদের ঠেলায় গেছে।থাকলেও লাভ হতো না,রান্না করব কোথায়,চুলা কই ?
আমরা তিনজন মানুষ অসহায় হয়ে রাস্তার ধারে দাড়িয়ে থাকি।
পরম করুণাময় তার আকাশ নামক ছাদের নিচে আশ্রয় দেয়া ছাড়া সেই অসহায় রাতে আমাদের জন্য আর কিছুই করতে পারেন না...।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন