উম্মাদ অফিসের খোঁজে(আমার ভোরের কাগজ বেলা-১)

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: বিষ্যুদ, ০১/০৩/২০০৭ - ৭:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক.
তখন ভোরের কাগজের একটি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন 'অবসর'।প্রতি শনিবারে বের হয় ম্যাগাজিনটি। সেখানে একটা বিভাগের নাম 'মুখোমুখি'। এই বিভাগে বিভিন্ন সেলিব্রিটিদের মজাদার সাক্ষাতকার নেয়া হয়।

তো একদিন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম,' উন্মাদ ' এর ' উন্মাদক', আহসান হাবীব ভাইয়ের একটি সাক্ষাতকার নেব। হাবীব ভাই খুবই মজাদার একজন মানুষ,তার মাথা গিজগিজ করে আইডিয়ায়।যে কোন বিষয়ে চটজলদি মন্তব্য করে সবাইকে গড়াগড়ি খাওয়াতে ওস্তাদ।
এরকম একজন মানুষের মজাদার সাক্ষাতকার নেব নাতো কার সাক্ষাতকার নেব!

টেলিফোনে এপয়েন্টমেন্ট নেয়া হলো। দুইদিন পর ধানমন্ডির
'উন্মাদ' অফিসে সাক্ষাতকার নেয়া হবে। এপয়েন্টমেন্ট নিল রাসেল ও'নীল,আমাদের এক ফিচকে কলিগ।

সেই মতো আমি আর রাসেলের রওনা দেয়ার কথা।রিঙ্া ডাকার মুহুর্তে গোল দেখা গেল একটা।

আমি রাসেলের কাছে জানতে চাইলাম,' উন্মাদ অফিসটা কতো নম্বর রোডে?'

রাসেল জবাব দিল,'ঢাকা শহরে কেউ আছে নি যে উন্মাদ অফিস চিনে না!!এইটা কি কইলা।উন্মাদ অফিস না চিইনা লেখালেখি করো কেমনে ?'

উন্মাদ অফিস না চেনার জন্য যে বিব্রত হতে হয়,এটা জানতাম না।
তবু ,আমি তাকে বিনয়ের সাথে জানালাম যে ,আমি ঢাকায় নবাগত এবং উম্মাদ অফিস না চিনে এতোদিন লেখালেখি করার চেষ্টা করায় খুবই দূ:খিত। তবে এখন যদি সে দয়াকরে উন্মাদ অফিসের ঠিকানাটা বলে,তবে আমার পক্ষে রিঙ্া ঠিক করা সহজ হয়।

এবার রাসেল বিরক্ত মুখে বলল,'ইয়ে ,আমিও তো উন্মাদ অফিস চিনি না।আমি তো মনে করছি তুমি চিনতে পারো!'

তারপর সে বিভিন্ন রিঙ্াওয়ালাকে জিজ্ঞেস করতে লাগল,'এই তুমি উন্মাদ অফিসটা চেনো নি ?'

আমাদের দূর্ভাগ্য এই যে ,বাংলামোটরে দাড়িয়ে থাকা কোন রিঙ্াওয়ালাই উন্মাদ অফিসটা চিনতে পারলো না।সম্ভবত,রিঙ্াওয়ালাদের মাঝে উন্মাদ পত্রিকার কোন জনপ্রিয়তা নেই।

তো আমরা দুজনেই কমনসেন্স খাটিয়ে আবার ভোরের কাগজ ভবনের চারতলায় উঠলাম। সেখানে কাজ করতেন উন্মাদের সহউন্মাদক (খুব সম্ভবত এটাই তার পদ ছিল,কারন তিনি যে উন্মাদের দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন,এটা জানতাম।)কাজী তাপস। আমরা এবার কাজী তাপসের শরনাপন্ন হলাম।

তিনি খুব সুন্দর করে ছবি একে আমাদেরকে লোকেশন বুঝিয়ে দিলেন।
'এই যে দেখছ,রাসেল স্কয়ার..এই যে ব্রিজ..এখানে মোড় নিলে..সামনে এখানে আবাহনী মাঠ...'এভাবে একেবারে সুন্দর করে দেখিয়ে দিলেন।
তারপর আমাদের কাছে জানতে চাইলেন যে আমরা বুঝেছি কী না।

আমরা দুজনেই তাকে আশ্বস্থ করলাম যে আমরা পরিষ্কার ভাবে বুঝেছি। এবং আমি বললাম যে ,যেকোন অন্ধ ব্যাক্তিও এই ম্যাপ দেখে সহজেই উন্মাদ অফিসে পৌছাতে পারবে।

এবার রওনা হতে আর কোন অসুুবিধা হলো না।

দুই.

রাসেল স্কয়ার পেরুলাম,ব্রিজে উঠলাম,ডানে মোড়...ব্যস..এইতো পৌছে গেছি। বিশাল ক্যাম্পাসের মধ্যে অফিসের দালানটা ।ধানমন্ডির আগেকার বাড়িগুলো বিশাল বিশালই হয়। এতো বড়ো বাড়ি হবে,এটা আশা করিনি । সামনের লনটাও বেশ ছিমছাম।

লোহার গেট পেরুতে গেলেই বাধা দিলেন এক পুলিশ। একে এতোক্ষন খেয়ালই করি নি। পত্রিকা অফিসে যে পুলিশ গার্ড হয়,তা আগে কখনো দেখিনি।

'আপনারা কই যাবেন ?আপনাদের পরিচয়?'পুলিশ সাহেব জলদগম্ভীর কন্ঠে জানতে চাইলেন।

আমি উত্তর দিলাম,'আহসান হাবীব ভাইয়ের সাথে আমাদের এপয়েন্টমেন্ট আছে।আমরা তার কাছে যাচ্ছি।'

পুলিশ ভুরু কুচকে বলল,'এখানে আহসান হাবীব বলে কেউ থাকে না।'

আমি পুলিশের বেকুবি দেখে বিরক্ত হলাম।বিরক্তিটা কন্ঠে নিয়েই বললাম,'কেন,এটা উন্মাদের অফিস না?'

এবার পুলিশ কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে বলল,'কী আবোল তাবোল কথা কন! এইটা উন্মাদের অফিস হইব ক্যান!এইটা তো যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর বাসা!''


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।