এক.
ব্যাপারটা প্যাচ খেয়ে গেল গোড়াতেই।
কন্যার বড়বোনের অনেকগুলো বন্ধু আবার আমারও সহপাঠি। তারা কান ভারি করল শুরুতেই।'এই ছেলে একসময় বিরাট ক্যাডার ছিল রে।'কেউ বলল,'এই ছেলে হইলো এখন ভোরের কাগজের সাংবাদিক,নিজেই খাইতে পায় না,বউ পালব কেমনে?'।আরেকদল আবার বাড়িয়ে বলল,'এ হইলো নাটক ফাটক করা লোক। এদের বিশ্বাস নাই।'
মন্তব্যগুলো যারা করলেন,তারা সকলেই আবার নারী। সুতরাং যা জানেন,তার থেকে বেশি মেশালেন কল্পনার রং। ব্যস,মামলা কোর্টে উঠার আগেই রায় ঘোষিত হলো,'এই ছেলে বাতিল।'
এদিকে মিডিলম্যান ছিলেন যে ভদ্রলোক,তার জুতার শুকতলি ক্ষয়ে ছেড়া মোজা দেখা যেতে লাগলো। তালতলা আর আম্বরখানায় ঘুরে ঘুরে যে টাকা রিঙ্াভাড়া দিলেন তা দিয়ে গোটা দশেক রিঙ্াই কিনে ফেলা যেত। এভাবে কেটে গেল পুরো একবছর।
দুই.
জেবতিক বংশীয় মুরুবি্বরা এতোদিন ব্যাপারটাকে সিরিয়াস ভাবে নেননি।
একদিন তাদেরও টনক নড়লো।গোয়ালার কাছে তার দুধই সেরা।'আমাদের ছেলে কি কানা না লুলা,যে এই মাইয়া ছাড়া মাইয়া নাই!'অহংবোধের ঠেলায় একদিনেই গোপনে দেখা হলো গোটা আস্টেক পাত্রী।
এইবার জরুরি বাতর্া গেলো ঢাকায়।ছোট বোনের এস.এম.এস,'ভাইয়া,তুমি বোধ হয় কট ডেড।কাম শার্প।'
তিন.
জীবনে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা পেরিয়ে এসেছি,তবে এরকম জটিলতায় আর পড়িনি। কইন্যার সাথে জরুরি বৈঠক হইলো। বিভিন্ন দিক থেকে সমস্যার পোস্টমর্টেম করে দেখা গেল এবার নিজেদের হস্তক্ষেপ জরুরি।
এই পর্যায়ে আমরা শরনাপন্ন হলাম দ্য গ্রেট নজমুল আলবাব অপু ভাইয়ের। কইন্যার বন্ধু হিসেবে কইন্যার বাসায় তার অবাধ যাতায়াত।
টেকনিক্যালি একটা বায়োডাটা লেখা হলো।সুপাত্রের যাবতীয় গুনাগুন সেখানে সনি্নহিত।120 গ্রাম অফসেটে প্রিন্ট নেয়া,খাটি ইংরেজিতে লিখা সেই বায়োডাটা দেখার পর ,অন্য লোক তো পরে,খোদ পাত্রের মনে হলো,'খাইসে,এইটা তো দেখি অনেক ভালো পাত্র!ছেলেটা ক্যাঠায় ?'
এই বার সেই বায়োডাটা নিয়ে নজমুল ভাই কন্যার পিত্রালয়ে গমন করলেন। বিস্তর ভুমিকার পরে জানালেন যে,'পাত্র উনার বড়ো ভাইয়ের বন্ধু। আলবাব ভাইয়ের বিয়েতে কইন্যাকে দেখে তিনি বড়োই পসন্দ করেছেন। পাত্রকে নজমুল ভাই বহুদিন ধরে চিনেন।এই রকম পাত্র হাজারে তো দূরের কথা,লাখেও একটা জোটানো যায় না।'।
তারপর না না বিতং করে সেই বায়োডাটা পাত্রীপক্ষকে সমজাইয়া দেয়া হলো। কাগজে না না টেকনিক্যাল বিষয় করা হইয়াছে। পাত্রের শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা বলা হয়েছে বটে,কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা লিখা হয় নাই।শুধু মাস্টার্সটা যে ঢাকায় করিয়াছেন,তাহা এমন ভাবে বলা হইয়াছে যে ,সাদা চোখে মনে হবে এই ছেলে ঢাকাতেই আজীবন লেখাপড়া করিয়াছে।
পাত্রের গ্রামের বাড়ির যাবতীয় ঠিকানা দেয় হলেও,সিলেট শহরের ঠিকানাটা উহ্য রেখে ,বর্তমান ঠিকানা হিসেবে দেয়া হয়েছে ঢাকার ঠিকানা।
এই ভাবে না না কসরত করে এই পাত্রকে উপস্থাপন করা হইল।
কইন্যার পিতা আগের পাত্রের বায়োডাটা হাতে নিয়াই দেখেন নি,সুতরাং তিনি এই বায়োডাটা পড়িয়া কোন সুক্ষ ষড়যন্ত্রের ইংগিত পাইলেন না।
কইন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হইলো।কইন্যা অনেক মন খারাপ করিয়া এই নবাগত ঢাকাবাসির প্রতি তার মতামত জানাইলেন।
কইন্যা পক্ষ হাপ ছাড়িয়া বাচিলেন।
ঢাকায় আসিয়া পাত্র দেখা হইলো। খোজখবর নেয়া হইলো ঢাকাস্থ সিলেটিদের কাছ থেকে। সব ঠিকঠাক পাওয়া গেল। অন্যদিকে কইন্যার একটা চাকরিও কনফার্ম হয়েছে ঢাকায়,সুতরাং এই মাসের মধ্যে বিয়া হইলে চাকরিটাও করা যায়।
খুবই স্বল্প সময়ের নোটিশে তাই বাগদানের তারিখ ঘোষিত হইলো।
বাগদানের দিন জানা গেল যে,পাত্রের স্থানীয় বাসা তালতলায়। এই সেই পাত্র ,যাকে দীর্ঘদিন ধরে এন্ট্রি দেয়া হচ্ছিল না।
পাত্রের অভিভাবকরা বুঝলেন না,কইন্যা পক্ষ কিভাবে হুট করে রাজি হলেন।
পাত্রী পক্ষ বুঝলেন না,তারা কিভাবে এই পাত্র আর সেই পাত্র যে এক তাহা বুঝলো না!!
শুধু সেই ছেলেটা আর কইন্যা বুঝিলেন যে,
নজমুল আলবাব সত্যিই একজন জিনিয়াস বটে!!!!!
ঘঠনাটি আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগের।2005 সালের মার্চ মাসে এই ষড়যন্ত্রটি ঘঠিত হয়।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন