তোমরা যেখানে খুশি যাও,আমি আজ নিজের মাঝেই থাকবো.....

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: শুক্র, ১৩/০৪/২০০৭ - ৮:০৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সমেবত সূধীজন,
আজ তবে শুনুন সেই আদ্যিকালের কথা ।কিভাবে স্মৃতির শেকল ভেঙ্গে কোন এক হারানো ন্বপ্ন ঘাই মেরে বসে বুকের পুকুরে।
কী করে আমার কিশোরবেলা কড়া নেড়ে কেদেঁ বলে,এবার মুক্তি দাও বৈরাগী প্রভু।
আজ আমি নিজের জন্য লিখছি,আজ আমার মস্তিস্কের নিউরোনে নিউরোনে নিজের সাথেই শুধু কথা বলা।
যদি ধৈর্যচু্যতি ঘটে তবে অন্য কোথাও যান,জীবনের অসীম রস আস্বাদনে আজ আমার কাছে আসবেন না কেউ।

সে এক সময় ছিল বটে। কী না ছিল আমাদের।
জীবন আর যৌবনরে গুলতির গুটি বানাইয়া বুক পকেটে রাখি আমরা ক'জন কী না করেছি গ্রামময় শহরে। আমাদের শহরে তখন আলো ছিল,প্রান ছিলো,ছিল বান্ধবের লাগি জান দেয়ার অপার ক্ষমতা।

আহারে পয়লা বৈশাখ। আহারে নতুন বছর। তিল তিল করে টাকা জমাইয়া আমরা তখন
'উচ্ছ্বাস'নামে গড়েছিলাম এক সংগঠন। প্রানে যদি প্রান মিলে,তবে সেখানে যেতে বাধা নেই কোন তরুনের। এভাবেই কেউ আসে এম,মি কলেজ,কেউ সরকারী কলেজ.কেউ মদন মোহন আর কেউবা মহিলা কলেজ।

সমবেত সূধীজন,সেই দিনের কথা আজ আমি স্মরণে আনিতে অক্ষম। সে এক স্বপ্ন বেলা ছিল আমাদের,আর স্বপ্নের কথা কি আর দিবাভাগে স্মরণ করিতে পারি এই অধম।

কতো রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি,শিবির হায়েনার হাত থেকে মঞ্চ রক্ষায়। কতো দুপুর অভুক্ত কেটে গেছে আল্পনা আর মুখোশের লাগি।কতো তরুন তার টিউশনির টাকা পরম যতনে উজাড় করে দিয়েছে সেই প্রেমযজ্ঞে,কতো তরুনি বাবার পকেট কেটে নিয়ে এসেছে সেই মেলায়।।
আজ তার কতোটুকুইবা বলতে পারি আমি।

তারপর সেই বৈশাখের ভোর রাতে,আমাদের শহর ভেঙ্গে পড়তো এক পাহাড়ি মায়াময় ক্যম্পাসে।সে এক উৎসব ছিল বটে। সে এক প্রানের ডাক ছিল বটে।

তারপরও কতো বছর,জীবন আমাদের ছড়িয়ে দিয়েছে মানচিত্রের আনাচে কানাচে। তবু সেই প্রানের টানে কতোবার আমরা ভিড়েছি সেই নোঙরে। আহারে অবোধ কিশোর,শেষ টাকাগুলো সম্বল করে সস্তা বাসের ছাদে শুয়ে তুই কেন ঢাকা ছেড়ে বার বার ছুটে যেতি সেই সবুজ শহরে। মনে আছে তোর,হাসান মোরশেদ,কী না ঝুকি নিয়ে শিলংয়ের পরীক্ষা বাদ দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে সোজা ছুটে আসতি প্রেসে,সংকলনটা বের করবি বলে।

শেষ যেবার যাই,হেসে ফেলেছিলাম নতুনদের উৎসাহ দেখে। চুপিচুপি রনিকে বলেছিলাম,আজ যারা 'উচ্ছাস' করছে,জানিস,আমরা যখন কলেজে পড়তাম,তারা তখনও স্কুলেই ভর্তি হয় নি। হিসাব কষে চমকে উঠেছিল সে।মুচকি হেসে বলেছিল,আমরা তাহলে কিছু একটা গড়তে পেরেছি।

রনি আজ লন্ডনের টিউবে চড়ে রোজকার মতো কাজ করতে যাবে।
মনি আজ সারাদিন ঘুমাবে। মোরশেদ তার আইপডে শুনবে বাউলিয়ানা।জাকির তার সুন্দরি বউ নিয়ে চলে যাবে লং ড্রাইভে নতুন গাড়িটি চড়ে।

আর আমি শুধু কান পেতে ছিলাম সেই ডাক শোনার জন্য।বিব্রত টিপু বলে,'এসে কী করবি। এখন আর সিলেটে কোন আয়োজন নেই। সেই সপ্তাজুড়ে বৈশাখী মেলা নেই,সেই ভোরের আবাহন নেই,সেই কলেজের উচ্ছাস বলে কোন সংগঠন নেই......

আজ আমাদের অনেক কিছুই আছে,তবু আজ আমাদের কিছুই নেই।অসীম নি:স্বতা আজ আমাদের চারপাশের দেয়াল।

এই বৈশাখে,সমবেত সূধীজন;আপনারা আনন্দ করুন।
আমি আজ কোথাও যাবো না।

তোর বুঝায় ভুল ছিল রে রনি।
আমরা কিছু গড়তে পারিনিরে, আমরা কিছুই গড়তে পারিনি....
যা কিছু ছিল ,সেগুলোও খুইয়ে বসে আছি কখন....বুঝতেও পারি নি.................


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।