প্রস্তাবনা:
কথায় বলে ,নামে নামে যমে টানে।প্রায়ই সংবাদ পত্রের ভেতরের পাতায় খবর দেখা যায়,আসল আসামী বাইরে ঘুরছে আর একই নামের আরেক নির্দোষ লোক জেলের ঘানি টানছে !
বাংলাদেশে নামের সংকট আছে,প্রায়ই এক নামের একাধিক লোকের সাথে আমাদের পরিচয় থাকে। ঘরে ঘরে খালেদা,হাসিনা,মাসুদ,মইন এই নামগুলো আছে।
তো আমার নাম রাখার সময়ই দেখা গেল বিরাট সমস্যা।শুধু মা বাবার নয়,মামা বাড়ি,বাবার বাড়ি ..দুপক্ষেই আমি প্রথম সন্তান।বিরাট উত্তেজনা। কী নাম রাখা যায়,তা নিয়ে হুলুস্থুল।
এ বলে এটা রাখো,ও বলে ওটা রাখো।
শেষ পর্যন্ত প্রাথমিক ভাবে আমার নাম রাখা হলো ‘আবু হেনা মোহাম্মদ জেবতিক আরিফুল হক’। (নামটি সম্ভবত: আরো বড় ছিল,এই মুহুর্তে পুরোটা মনে পড়ছে না,আম্মাকে জিজ্ঞেস করতে হবে..) তো সেই নামের ভার নিয়ে আমি নড়তে চড়তে পারি নি বহুদিন।শেষ পর্যন্ত আমার বাবার হস্তক্ষেপে আমার নামটি ছোট হয়ে মোটামুটি সার্টিফিকেটে লেখার সাইজে এসেছিল।
বাবা আমাকে আরেকটি বড়ো বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। আমার দাদী ,সিলেট জেলার যতো জীবিত পীর,মাওলানা,হুজুর ইত্যাদি ছিলেন;তাদের সবার কাছ থেকে আমার জন্য একটা করে তাবিজ আর কবচ নিয়ে এসেছিলেন। আমার যখন নিজের ওজন ছিলো ১ কেজি,আমার শরীরের তাবিজ কবচের ওজন ছিলো সোয়া দুই কেজি।দাদী গ্রামের বাড়িতে ফেরত যাওয়া মাত্র বাবা এই তাবিজগুলো খুলে আমাকে মুক্তি দিয়েছিলেন।
আমার নাম যখন ছোট করা হয়,তখন মা প্রবল আপত্তিতে আমার নাম থেকে ’মোহাম্মদ ’ শব্দটি বাদ দেয়ার বিরোধিতা করলেন। তার বক্তব্য হলো ,নামের আগে ‘মোহাম্মদ’ থাকলে রোজ হাশরে আল্লাহ যখন আমাকে মাপ করতে চাইবেন,তখন প্রিয় নবীর নামের উসিলায় আমাকে মাপ করে দিতেও পারেন।(আমি মাঝে মাঝে অবাক হই, মা কিভাবে আমার শৈশবেই টের পেয়েছিলেন যে, রোজ হাশরের ময়দানে আমার পাশ করতে হলে আল্লাহর স্পেশাল কম্পার্টমেন্ট আর ডিসকাউন্টই একমাত্র ভরসা!!)
তো,আমার সার্টিফিকেট গুলোতে ‘মোহাম্মদ’ শব্দটি এখনও আছে,জীবদ্দশায় এই শিক্ষাগত গুলো কাজে না লাগলেও পরকালে সেগুলো কাজে আসবে ,এই আশায় আছি।
আমি যে কথা বলার জন্য এই বিশাল ভুমিকা টানলাম,সেটি হচ্ছে যে অভিভাবকরা সবসময় নিজ নিজ সন্তানের ভালো মন্দটি সেই ছোটবেলাতেই নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন। নামের মাঝে মোহাম্মদ লাগিয়ে,বাহু আর গলায় তাবিজ লাগিয়ে তারা চেষ্টা করেন নিজ নিজ উত্তর প্রজন্মের ভবিষ্যত রক্ষা করতে।আমি তাদের এই প্রচেষ্টাকে সম্মান জানাই।
সিদ্ধান্ত :
এখন আমি চিন্তা করলাম,আমার যখন ছেলেপিলে হবে তখন আমি তাদের জন্য কী প্রটেকশন নেব। হামের টিকা,পোলিও ড্রপ এগুলো তো পরের ব্যাপার,আগে তো একটা নাম ঠিক করতে হবে। নাম ঠিক করার আগে টাইটেল।
‘মোহাম্মদ’ কথাটি নামের আগে থাকছেই। (বেহেশতে যাবার একটা ভালো অপশন যেহেতু)
তারপর টাইটেল লাগাবো ‘ব্রিগেডিয়ার (অব:)’।
অর্থাত, আমার ছেলের নাম যদি ‘জুনিয়ার আরিফ’ রাখি,তাহলে তার পুরো নাম হবে ‘বিগ্রেডিয়ার (অব:) মোহাম্মদ জুনিয়ার আরিফ’।
নামের শেষ অংশ ,অর্থাত ‘জুনিয়ার আরিফ’ কথাটি বদলে হয়তো একটা ভালো নাম রাখতে পারি,কিন্তু নামের প্রথম অংশ ‘বিগ্রেডিয়ার (অব:) কথাটি থাকছেই। ছেলেপিলে কয়েকটা হলে সবগুলোর আগে এভাবে ‘কর্ণেল (অব:’ ‘মেজর (অব:) এভাবে টাইটেল লাগিয়ে নাম রাখবো।
কারন আজকাল আর তাবিজ কবচে কাজ হবে না। নামই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ তাবিজ।
দেখেন না,কতো লোকের দুর্ণীতির জন্য শাস্তি হচ্ছে ,কিন্তু মেজর (অব:) কামরুল ইসলাম মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর বিষয়ে কতো ধান্দাবাজি করলো,কিছু হলো ? আলতাফ হোসেন নামের সেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নামের আগে কী লেখা খেয়াল করেছেন ?অথবা,দুর্ণীতির দায়ে চাকরি হারানো লোক হয়েও নির্বাচন কমিশনে ঠাই পাওয়া সাখ্ওায়াত সাহেবের পুরো নাম যে ‘ব্রিগেডিয়ার (অব:) সাখাওয়াত হোসেন’ এটা কি আপনি জানেন ?
ভাইরে,এই লোকগুলো কিছু হচ্ছে না ,কারন এদের ক্যারিশমা নয়,এটি এদের নামের আগের টাইটেল গুলোর মাহাত্ম।
ঠিক হ্যায়,আমার ছেলেপিলের জন্মের পরেই টাইটেলগুলো লাগিয়ে দিব,ইহকাল পরকাল,দুই কালেরই মুশকিল আসান।
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন