একটি ভাবনা:
জামাত-ই-ইসলামী বাংলাদেশ কে আমার যতোটা না পলিটিক্যাল পার্টি মনে হয়,তার থেকে বেশি মনে হয় এন.জি.ও কিংবা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি।খুবই প্রফেশনাল তাদের অপারেশন। একবার কলেজের শিবির সভাপতি তোফায়েল ভাই এসে আমার কাছে বিদায় চাইলেন (আমি তখন ছাত্রদলের একজন ছোটখাটো কর্মী,পাশাপাশি দুইটি কলেজের সাংগঠনিক বিষয় দেখভাল করার জন্য জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে দায়িত্ব প্রাপ্ত)।তোফায়েল ভাইকে নাকি মৌলভী বাজার জেলা ছাত্রশিবিরের সাধারন সম্পাদক পোস্টে নিয়োগ দেয়া হয়েছে! সারা জীবন রাজনীতি করলেন সিলেট শহরে,আর সাধারন সম্পাদক হলেন মৌলভীবাজার জেলার,এ রকমই তাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত।তোফায়েলের সাথে আমার আর দেখা হয়নি,তবে শুনেছি তিনি তার নতুন দায়িত্ব ভালো ভাবেই পালন করেছিলেন।
আপাত:দৃষ্টিতে জামাত ই ইসলামীর সবকিছুই ভালো।তাদের মাঝে পরিবার তন্ত্রের রাজনীতি নেই,দলের সদস্যদেরকে বেতন দিয়ে,মোটর সাইকেল দিয়ে,লজিং আর মেস দিয়ে,টিউশনি জুটিয়ে তারা উৎসাহিত করে।লেখাপড়ার পরে ইবনে সিনায় চাকরি নয়তো ইসলামী ব্যাংকের সহজ শর্তের ব্যাংক লোন। তাদের সিদ্ধান্ত হয় মজলিশে সূরায় আলাপ আলোচনা করে, কোন নেতা নেত্রী হুট করে কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন না। ব্যবসায়ীদের কাছে নমিনেশন বিক্রী করে তারা টাকা কামায় না,বরং নিখুতঁ হিসাব নিকাশ করে তাদের প্রার্থীরা নির্বাচনে টাকা খরচ করেন,কারন সেই টাকা তার নিজের টাকা নয়,দলই তাদের নির্বাচনের টাকা দেয়।তারা টিউবওয়েল গাড়ে,এইডসের বিরুদ্ধে প্রচারনা চালায়।
এতো করেও তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঠিক জুত মতো গেড়ে বসতে পারে না।এতো পারফেক্ট একটা দলের পক্ষে তো গনজোয়ার উঠে যাওয়ার কথা,সেটা কিন্তু হয় না। কারন তাদের সফেদ দাড়ির নিচে যে বিষাক্ত সাপ লকলক করে জ্বিহবা নাচায়,তাদের সাদা জামার আস্তিনের নীচে যে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ;সেটা জনগন জেনে যায়।
এই জানিয়ে দেয়ার কাজটি করে থাকেন এদেশের শিল্পী,লেখক,কবি,সাংবাদিক..এরাই।তারা বারবার বলে যান,‘তুই ঘাতক’। তাদের কথা শুনেই আমি এক অধম আরিফ জেবতিক তাদের ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকি,নইলে এতো গুছানো একটা দলকে ভোট দিতে তো আমার আপত্তি থাকার কথা নয়।
দেশকে পিছন দিকে নিয়ে যাওয়ার যে সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারা কিছু মানুষের,সেখানে কিন্তু বাগড়া বসিয়ে যান এই মধ্যবিত্ত স্বল্প শিক্ষিত মানুষগুলোই।তাদের গল্পে,কবিতায়,‘লেখা এবং না লেখায়’ এই যে সম্মিলিত একটা এফেক্টট পড়ে,সেটাকে অস্বীকার করার কোন জো নেই।
এতে জামাত-ই-ইসলামীর ভীষন অসুবিধা হয় নিশ্চিত। আমাকে রেদওয়ান বলেছিল (সাবেক সিলেট জেলা শিবির সভাপতি,বর্তমানে জামাতের প্রভাবশালী রোকন।আমার সহপাঠী এবং আমরা এক সময় ফুলকুড়ি করতাম।),যে তার মাথায় আসে না,একদল শিশুকে সেই ছোটবেলা থেকেই ফুলকুড়িতে নিয়ে আবৃত্তি শিখিয়ে,মাসিক পত্রিকায় লেখা প্রকাশ করে,সুন্দর সুন্দর ছবিঅলা ক্লাসরুটিন আর ক্যালেন্ডার দিয়ে বড়ো করলেও, বড়ো হলে তাদের বেশির ভাগই আর শিবিরের রাজনীতিতে আসে না কেন।
এই যে না আসাটা,এর পিছনে কিন্তু কাজ করে কিছু গোয়ার মানুষের একগুয়ে চিতকার।
তাই হাসান মোরশেদ যদি ক্রমাগত ব্লগে চিতকার করে যান,তাতে কারো কারো রাজনীতিতে একটু অসুবিধা হয় বৈকি।ব্লগে নতুন যে কিশোর কিশোরী ব্লগিং করতে আসবেন,তাদের কাছে সত্য কথাটা কাউকে না কাউকে বলে দিতে হবে।এতে করে কেউ ঢুলু ঢুলু চোখে তাদেরকে তথাকথিত সত মানুষের রাজনীতিতে নিতে গেলে একটু কষ্ট হবে।
তো হাসান মোরশেদের সেই চিতকারে কিছুই হয় না বলে হালকা করে দিলে কেন যেন বক্তার কথায় সন্দেহ হয়। কারন বক্তার বুদ্ধিশুদ্ধির উপর আমার যথেষ্ঠ আস্থা আছে,তিনি হুট করে বলে বসার কথা না।তিনি মজমার ছোকরা ক্যানভেসার না,না বুঝেই ফাল পাড়বেন।
মুক্তিযুদ্ধ কিংবা যুদ্ধাপরাধী ইস্যু কি অধিক ব্যবহারে জীর্ণ হয়ে যায়,এটা নিয়ে একটি সুস্থ বিতর্ক চললে আমার মতো সাধারন মানুষ সমৃদ্ধ হতো নিশ্চিত।নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে আমিও উৎসাহ নিয়ে অংশ নিতাম,সেটা নিশ্চিত।
কিন্তু কেন সেটা করছি না,এটা ভাবছি ‘ভিন্ন ভাবনায়’।
ভিন্ন ভাবনা:
প্রচারের লাইম লাইটে থাকতে চাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।নিভৃতচারী মানুষ খুব কম আছেন সমাজে।বেশির ভাগ মানুষ চায় তাকে নিয়ে একটু হৈ চৈ হোক,লোকজন তাকে দেখুক,তার কথা শুনুক। সবার সে ভাগ্য হয় না।আমার সে ভাগ্য নেই বলে একটা দূ:খ আছে ,তাই বলে গায়ের জোরে প্রচার চাওয়ার মতো দুর্দিন এখনও হয় নি।
যারা প্রচার পান;তাদের নিয়ে আমার কোন হিংসা নেই।
প্রচার পাওয়ার উদগ্র বাসনা এক ধরনের মানসিক বিকৃতির সৃষ্ঠি হতে পারে। নিকট অতীতে এই ব্লগেই আমি এর উদাহরন দেখেছি।প্রচারের লাইম লাইটে আসার জন্য উম্মত্ত হয়ে কিছু মানুষের উল্টা পাল্টা কাজ দেখে খুব মায়া লেগেছে,বিরক্তও হয়েছি।কেউ মিথিলা বানিয়ে সহানুভুতি কুড়ান,কেউ সিরিজ পোস্ট মারেন,কেউ আবার অন্য নিকে নিজের গুনগান গাইতে গিয়া বুকে বুক মিলিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। ভেরি ফানি।
তবে অন্যকেউ প্রচার পেয়ে গেলে তাকে হিংসা করার একটা নতুন ট্রেন্ড দেখলাম এখন।এটা গুরুতর মানসিক রোগ,এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই।
একজন আপনার লেখা ভালো পেয়ে ৫ রেটিং করেছেন।তিনি সেটি জানিয়ে গেলেন।এ থেকে আপনার বুঝার সুবিধা হলো কোন কোন পাঠক আপনার লেখা পছন্দ করছেন।এটা এক ধরনের উৎসাহ হতে পারে বিশেষ করে নতুন লেখকদের জন্য। পোস্টে কমেন্ট না পড়লে অনেকেই মন খারাপ করেন,করাটাই যৌক্তিক,খেটেখুটে লেখে যদি পাঠকের আনুকুল্য না পাওয়া যায়,তবে মন খারাপ হবারই কথা।প্রত্যেক লেখকের কাছেই তার লেখা সন্তানতুল্য,সেটার এক ধরনের এফেক্ট তিনি আশা করে থাকেন।
এখন আমার লেখা পাঠক পছন্দ করেন না,সেটা আমার জন্য মেনে নেয়া কষ্টকর হতে পারে,কিন্তু আরেকজনের লেখা পড়ে সবাই তাকে পছন্দের তালিকায় ঠাই দেন,সেটা দেখে আমার ‘চামচামি’বলতে ইচ্ছা হলে বুঝতে হবে কেউ কেউ ধূর্ত শিয়ালের ‘আঙুর ফল টক’ গল্টটির কথাও স্মরণ করতে পারেন।
আমি এখনও বুঝতে পারি নি,সমস্যাটা কোথায়।সমস্যা কি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখায় গাত্রদাহ,নাকি সেটা লিখলে ‘পাবলিক ওয়েব সাইট ফাটিয়ে দেয়’বলে কোন সুক্ষ ঈর্ষা।
দ্বিতীয়টি যদি হয়ে থাকে ,তাহলে বিতর্কের কোন অবকাশ নেই।
যেকোন মানুষ তাকে গুরুত্বপূর্ণ ভেবে আমোদ পেতেই পারেন।আমার সাথে তার কোন বিরোধ নেই।তবে নিজের গুরুত্ব প্রমানের জন্য যুক্তি ছেড়ে ব্যক্তি আক্রমনে গেলে তিনি হোসেইন কিংবা ত্রিভুজের লগে গুতাগুতি করুন,আমার সাথে না।
তাকে নিয়ে খুব হৈ চৈ হয়,ম্যাসেঞ্জারে কথা হয়,তার বিরুদ্ভে ব্লগে হরতাল হয়, এসব ভাবে আত্মতৃপ্তি পাওয়া দোষের কিছু নয়।
জাতীয় ছাত্রসমাজ নিকে যদি আকন্দ সাহেব নিজেকে যুগ্ম সহকারী ক্যাশিয়ার হিসেবে বিশাল কেউ কেটা কিছু ভেবে পোস্ট দিলে আমার আপত্তি না থাকে তাহলে বাকিদের বেলাতেও আমার আপত্তি করার কী ঠেকা পড়েছে।
তবে সে আশায় আমার বিরুদ্ধে ব্যক্তি আক্রমন করে লাভ নেই।আমি কাউকে বিখ্যাত হতে মোটেও সাহায্য করতে পারবো না।তবে শুভানুধ্যায়ী হিসেবে তাকে বুদ্ধি দেব ত্রিভুজ আর হোসেইনের নামে পোস্ট দিতে ।প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত পাবেন বলে আশা করি।
আমি সত্যি সত্যিই আকন্দ সাহেবের যুগ্ম সহকারী ক্যাশিয়ার হওয়ার খবরকে দুই আনা দাম দেই না।আমার কথার এক আনা দাম কেউ না দিলেও আমার কিছু আসে যায় না।আমি লেখি নিজের আনন্দের জন্য,নিজের ভাবনা চিন্তাগুলোকে হরফের নকশায় ফুটিয়ে তোলার জন্য।
আমাকে গুতালে আমি রোজ রোজ সেই কথার বিপরীতে আজকের মতো লম্বা লম্বা পোস্ট দিব আশা করলে ভুল করছেন।
আমার অনেক ফালতু জিনিষ লেখার বাকি।
নাম ফাটানোর ইচ্ছায় রত মানসিক বৈকল্যের রোগীদের কথার জবাব দেবার টাইম আমার নেই।
(এ প্রসঙ্গে এটাই আমার শেষ পোস্ট।যার যা ইচ্ছা করুন,আমাকে নিয়ে দরকার মনে করলে হাজার পোস্ট ঝেড়ে ফেলুন,আমি আর এই সব ব্যক্তি আক্রমনের হাস্যকর রম্য পড়তে যাচ্ছি না।)
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন