সিধকাঠির বিনিয়োগ,কাশিমবাজার কুঠির পুনারবৃত্তি

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: সোম, ০৭/০৫/২০০৭ - ৭:২৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অত:পর বিনিয়োগ আসছে। বিনিয়োগের মিটারে মাপা হচ্ছে সরকারের সাফল্য,অর্থসচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ,অর্থমন্ত্রীর মেয়াদ।বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান মনের সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশ থেকে দেশে,প্রথম আলোর পিচ্চি সাংবাদিকরা টাটা নগর দেখে এসে যে বর্ণনা দিচ্ছে, বেহেশত ঘুরে এসেও সাঈদী সেই বর্ণনা দিতে পারবেন না তার রসনায়,সেমিনারে দেবব্রত বাবু গ্রাফ একে আমাদের চোখ ঝলসে দিচ্ছেন; আর আমরা ভেবে যাচ্ছি,আর মাত্র কয়েকটা দিন,একটু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা,একটু অবকাঠামোকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা,তারপরই শুরু হবে দুধে ভাতে পেটপুরে রাম ঢেকুর।

আমাদের কেউ বলছে না,বা আমরাই শুনতে আগ্রহী নই,আমরা চাইও না ইতিহাস পড়তে ,(অন্যদের তো পরের কথা,আমাদের নিজেদের ইতিহাস পড়লেও পরষ্পরকে গালি দেই,)যে বেনিয়ারা কোন দেশেই যায় নি তাদের নিজেদের স্বার্থ ছাড়া,তাদেরকে কাশিম বাজার কুঠিতে বিনা মাশুলে ব্যবসা করতে দেয়া আমাদের জন্য আরেকটা আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত,এই দেশে স্টুপিড মানুষের সংখ্যা এতো বেশি,মধ্যবিত্তের মাঝে আমরা সকলেই স্টুপিড হয়তো,তারা এই বিষয়গুলোকে বার বার ধামাচাপা দিয়ে চলে যায়।

টাটা বিনিয়োগ করবে ইস্পাত শিল্পে,সেটা টাকার ফিগারে দেখলে আমার মতো মানুষেরা ভয় আর উত্তেজনায় ফিট খেয়ে যাবে,তবু যারা এসব ব্যাপার স্যাপার বুঝেন ,তাদের কেউ জানতে চাচ্ছে না,পাইপ ভরে গ্যাস দিলে আমার কয়টা লোকের কর্ম সংস্থান হবে,কয়টা বাংলাদেশী সেই টাটার বিনিয়োগে সরাসরি লাভবান হবে,আমার জানামতে মাত্র ১০০০ শ্রমিক সেখানে কাজ পাবে,সেই ১০০০ শ্রমিকের জন্য আমি আমার দেশের এতোবড়ো সম্পদটা বন্ধক রাখতে পারি কি না।আমাদের ছাগল অর্থনীতিবিদরা শুধু ক্যালকুলেটর টিপে হিসাব করছে গ্যাসের দাম কতো ধরা যায়,কিন্তু যে বিনিয়োগ আমার সাধারন মানুষের জীবন যাত্রায় কোন এফেক্ট ফেলবে না,সেই বিনিয়োগ নিয়ে যে উতসাহিত হবার কিছু নেই,সেটা তারা নিজেরা বুঝে না,না কি আমরাই তাদের মাজেজা বুঝি না,সেটা মাঝে মাঝেই আমাকে ধন্দে ফেলে দিচ্ছে।

টাটার যখন এতো শখ,তাকে বলেন কয়েকটা টেক্সটাইল গড়ে তুলতে,কৃষককে তুলা চাষের জন্য লোন দিক,বীজ আর চারা দিক,তারপর সেই তুলা দিয়ে বানাক কাপড়,তাদের মিলগেট থেকেই সে কাপড় কিনে নেবে এ দেশের গার্মেন্টস মালিকরা, এভাবেই ভ্যালু এডিশন হবে কৃষকের জন্য,গার্মেন্টস মালিকদের জন্য,গার্মেন্টসের শ্রমিকদের জন্যও।তা না করে গ্যাস দিয়ে দেয়ার কী মাজেজা,আমি বুঝতে পারছি না,আর মুশকিল হচ্ছে এ কথাগুলো কাউকে বলত্ওে পারছি না,কে আমার মতো মূর্খের কথা শুনে।

অথবা টাটা গড়ে তুলুক লাইভ স্টক শিল্প, কৃষককে দেয়া হোক উন্নতমানের গবাদি পশুর চারা, সেই গবাদি পশুর মাংস প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রফতানি হোক,চামড়া দিয়ে ট্যানারি মালিকরা কিংবা টাটা নিজেই লেদার গুডস বানিয়ে রফতানি করুক;তবু হাজার হাজার কৃষক লাভবান হবে,লেদার শিল্পে প্রচুর শ্রমিক লাগে,মিড লেভেলে প্রচুর শিক্ষিত তরুন লাগে,সেখানে আমাদের লোকজন কাজ করে খাক।

বিদেশী বিনিয়োগের নামে ছাগলামি থেকে বেরুতে হবে আমাদের।গ্রামীন ফোন কোন বিদেশী বিনিয়োগ নয়,এটা হচ্ছে লুটপাটের একটা স্থায়ী কাঠামো;মধ্যবিত্তের পকেট থেকে ৩০০ টাকা করে মাসে নিয়ে সেটাকে ডলারে কনভার্ট করে বাইরে নিয়ে যাওয়া,রুপালি ব্যাংক কোন বিনিয়োগ নয়,সেখান থেকে আমাদের মানুষের কোন আর্থিক লাভ নেই,এটা আরেকটা ধান্দা,সেই মিগ কেনার মতোই,এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সবারই হয়তো আরেকবার চিন্তা করার সময় আছে,কিন্তু খুব বেশি দেরী হয়ে গেলে আগামি প্রজন্ম আমাদের বাপ মা তুলে গালি দেবে।

নাইজেরিয়ার জিডিপি আর তার বর্তমান অবস্থা আমাদের মনে রাখতে হবে।
আমাদের বুঝতে হবে , সিধকাঠি আর শাবল যদি কেউ কিনে তাহলে তাকে বিনিয়োগ বলে আমাদের খুশি হবার কিছু নেই,বিহান বেলা উঠলেই দেখা যাবে,সেই বিনিয়োগ আমাদেরকে ঘুমের ঘোরে রেখে ফতুর করে চলে গেছে।


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।