২য় পর্ব:
আমার প্রশ্ন শুনে পিয়াল ভাই সেন্টু খেলেন। অভিমানী গলায় বললেন,’’দূর ভাই,আপনি কি মনে করেন,অন্যের বউ না ভাগাইলে আমার বিয়া করা হবে না?আপনার অভিজ্ঞতা আছে এ লাইনে ,এইটা শুইনা একটু হেল্প চাইলাম,আপনে লাগাইলেন পেজগি।’’
(একটা অবাক ব্যাপার দেখলাম।সারাজীবনে বিচিত্র বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে, কিন্তু কামের বেলা লোকজন শুধু আমার কু-অভিজ্ঞতা গুলো স্মরণ করে।)
এই বার আমি সর্বশক্তি নিয়োগ করলাম বিবাহ অনুষ্ঠান সংগঠনে। জনশ্র“তি আছে কয়টা বিয়া করাইলে যেন হজ্বের সোয়াব পাওয়া যায়। হজ্ব করার এমন
সুবন্দোবস্ত থাকা স্বত্তেও আমি কি না আরবের মরুভূমিতে গরমে সিদ্ধ হতে
যাচ্ছিলাম বুড়া বয়েসে।
দ্রুত ভাবতে বসলাম। প্রথমে বুঝতে হবে এটা সিটিসেলের পালাবে কোথায় কেস কি না।সেক্ষেত্রে একটা রেন্ট -এ- কারের গাড়ি নিতে হবে,সেই গাড়ি আবার মাঝপথে যাবার পরে ছেড়ে দিতে হবে।সেখান থেকে অন্য ব্যবস্থা।কারন যদি রেন্ট -এ -কারের গাড়ি ধরা খায় ,তাহলেও যাতে নায়ক নায়িকার গন্তব্য বুঝা না যায়।
তারপর দেখতে হবে টাকাকড়ির কী সংস্থান।মাসের প্রথমদিক,সুতরাং পাত্রের বেতন হয়েছে,টাকাকড়ি পকেটে থাকার কথা।মেয়ে চাকরি করলে,তারও বেতন হয়েছে।আর গৃহবাসী হলে নিশ্চয়ই বাসা থেকে কিছু গয়না গাটি নিয়ে এসেছে। তারপরও লাগলে কার্ড মারতে হবে। আমার কার্ড নাই,তবে বউয়ের কার্ডটা কোথায় লুকিয়ে রেখে গেছে সেটা আমি জানি।পিন নম্বরটাও আমি লুকিয়ে জেনেছি।নো প্রবস।
কাজী কোন সমস্যা না,কয়েকজন কাজী সাহেব আমার পেয়ারের লোক,তাদের কাউকে ফোন দিলেই চলে আসবেন।বি.এন.পি ক্ষমতায় যাওয়ার পর এই এক লাভ হয়েছে,গলিতে গলিতে কাজীর লাইসেন্স দিয়েছে,সেই কাজী সাহেবেরা দেয়ালে লিখে,টিনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন,কোন বিয়েতে কাজী তে কাজীতে ঝগড়া লেগে ‘অধিক কাজীতে বিয়ে নষ্ট’প্রবাদের জন্ম হচ্ছে।
প্রথমেই যে কাজ করতে হবে ,কনেকে ব্যস্ত করে ফেলতে হবে।পালিয়ে বিয়ে করার সময় মেয়েদের মন স্বাভাবিক ভাবেই দুর্বল থাকে,শেষ মূহুর্তে অনেকেই পিছটান দিয়ে দেয়।এ সময় মেয়েদেরকে যাবতীয় আতেল বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে।
আমি পিয়াল ভাইকে আবার ফোন দিলাম।বললাম,'মেয়েকে বিউটি পার্লারে সাজতে পাঠান।বনানী আর হাতিরপুলের কিছু বিউটি পার্লার ভোরে খুলে যায়।সেখানে পাঠিয়ে দিন।সাথে একজন মেয়ে দিবেন,যে অনাবশ্যক গেজিয়ে মেয়েকে ব্যস্ত রাখবে।’পিয়াল ভাই থতমত খেয়ে বললেন,’বিয়া কিভাবে হবে ,সে কথা নেই,আপনি আসছেন বউ সাজানোর গান নিয়ে।আর আমি এতো সকালে আরেকটা মেয়ে কোথায় পাই?’ আমার ধারনা ছিল পিয়াল ভাই বা কৌশিক চাইলেই কয়েক ডজন মেয়ে হাজির করতে পারে,পিয়াল ভাইয়ের মার্কেট যে এতো পড়ে গেছে সেটা জেনে দূ:খিত হলাম।সাধে কি আর বিয়ে করতে যাচ্ছে।মার্কেট পড়ে গেলে বিয়ে করে থিতু হওয়াই ভালো।
পিয়াল ভাই এরপর ভেবে বললেন,‘ সারিয়াকে এখন ফোনে পাওয়া যেতে পারে।শনিবার তার ছুটির দিন।ট্রাই করে দেখি।’ব্যস,আমি দায়িত্ব দিলাম যে কোন উপায়ে সারিয়াকে ম্যানেজ করে কনে সহ বিউটি পার্লারে পাঠানোর।কনের খুব সুন্দরি কোন বান্ধবী থাকলে,তাকেও বলা যেতে পারে,তবে আমার উপস্থিতির আগে নয়।
এবার বাকি থাকলো শাড়ি গয়না কেনা,বরের পোষাক কেনা,ফুল -মিষ্টি-দই,আকদের খোরমা কেনা (খোরমাটা কেন আকদের পেটেন্ট খাবার,সেটি আমি জানি না।) বাসর সাজানো,কাজী কনফার্ম করা,বিয়ের একটা স্থান নির্ধারন করা,দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা.... শতেক কাজ। প্রচুর ছুটোছুটি, এ জন্য একটা গাড়ি থাকলে সুবিধা।
আমার নিজের গাড়ি নেই,আমার স্ত্রী সাহেবানের একখান আছে।তিনি দেশে না থাকায়,আমি সেই গাড়ি দিয়ে বাবুগিরি করার সুযোগ পাই ইদানিং।তবে ড্রাইভার বেটা মহা ট্যাটনা, সে বুঝে গেছে তার আসল বস কে,আমাকে তেমন পাত্তা দেয় না।
আমি ভয়ে ভয়ে তাকে ফোন করলাম।সে তার বিরক্তি চাপা না দিয়ে বললো,’এতো সকালে ফোন করলেন যে!আমি ফ্যামিলি নিয়ে থাকি না?’’ এই শোন কথা,তুই ব্যাটা ফ্যামিলি নিয়ে থাকিস কি না আমি কেমনে জানবো ,আমি কি তোর বাসায় বেড়াতে গেছি? আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,‘ড্রাইভার সাহেব,আপনি কি আজকে একটু তাড়াতাড়ি আসবেন?একটু দরকার ছিলো।’ সে আরো বিরক্ত হয়ে বললো,’দরকার থাকলে তো চলবে না স্যার।আইজ বাংলাদেশের খেলা,আইজ আমার অফ ডিউটি।’ আমি তাকে আরো প্রায় দশমিনিট আবেদন নিবেদন করে,আজকের ডিউটির জন্য বিশেষ বকশিশ স্বীকার করে,দুপুরে কাচ্চি বিরানীর সাথে বোরহানির বদলে কোক খাওয়ানোর প্রতিশ্র“তি দিয়ে এবং আগামী এক সপ্তাহ সে জ্বালানি তেল কিনতে গেলে তার সাথে আমি না যাওয়ার অঙ্গীকার করে তাকে আসতে রাজী করালাম।
এবার কিছু লোকজন চাই,যারা ছুটোছুটি করে পুরো ব্যাপারটাকে সামাল দেবে।ঢাকা শহরে আমার বন্ধু বান্ধব অল্প।যারা আছে,তারা নিজেদের বিয়ের খাতিরেই কোনদিন সকাল ৯টার আগে ঘুম থেকে উঠবে না,আর তো অন্য মানুষের বিয়ে।
সুতরাং ফোন দিয়ে ধরলাম কৌশিককে।ব্লগের যাবতীয় সাংগঠনিক কাজে তার বিস্তারিত সুনাম।তাকে পেলে বহু কাজ হবে।তারউপর মিরপুরে তার বাসা। কৌশিক আর শরতের দায়িত্ব হলো মিরপুর বেনারসী পল্লী থেকে শাড়ি কেনা। কার জন্য কেনা হবে,কেন কেনা হবে কিছুই তাদের বললাম না।তারপরও কৌশিক মন্তব্য করলেন,’'কোন ব্যাপার না বস্,ঢাকা শহরে বহুত লোক দুই বিয়া করে,আপনার গোপন কথা আমাদের কাছে গোপন থাকবে,ওয়ার্ড অব অনার।’’আমার চরিত্র নিয়ে বহু লোক বহুবার সন্দেহ প্রকাশ করেছে,কিন্তু মুখের ওপর এতো বড়ো কমপ্লিমেন্ট এবারই প্রথম।আমি কৌশিককে তার ’’ওয়ার্ড অব অনার’’ এর জন্য সবিনয় কৃতজ্ঞতা জানালাম।
ফুল কোন সমস্যা নয়,শাহবাগে রাত ৪টা থেকে ফুল আসতে শুরু করে মফস্বল থেকে,সেখানে গেলে টাটকা ফুল পাওয়া যাবে। খাবার দাবার কেনা যাবে একটু পরে।
এবার স্থান নির্ধারন।আমার বাসাতেই করা যায়,কিন্তু দেশের অবস্থা সুবিধার না।
থাকি ক্যান্টনমেন্টের পাশে।যদি ঝামেলা হয়,তাহলে চট করে তাদের হাওলা হতে হবে,সেক্ষেত্রে খুব দ্রুত তাদের ডেরায় বন্দি হয়ে হালকা পাতলা ডলা উপভোগ শুরু হবে।
তারচেয়ে গাজীপুর ভালো।অন্তত:সাভার,নিদেন পক্ষে উত্তরা।যতো দূরে হয়,ততো মঙ্গল। আসতে আসতে সময় বেশি লাগবে,সুতরাং ডলা খাওয়া শুরু হবে বেশ দেরীতে।
কিন্তু গাজীপুর কিংবা সাভারে আমার পরিচিত কেউ নেই।উত্তরাতে পরিচিত আছেন জামাল ভাষ্কর।কিন্তু আজ আবার তাদের অফিসের কী একটা অফিসিয়াল লাঞ্চ।জামাল ভাষ্করকি সেই লাঞ্চ ছেড়ে বিয়ের ঝামেলা নিতে রাজী হবেন?আমি ভয়ে ভয়ে তাকে ফোন করলাম।
ফোন বেজেই যাচ্ছে...বেজেই যাচ্ছে...কেউ ধরছে না।এখন উপায়?
(চলবে)
মন্তব্য
হাহাহা - মজার লেখা
নতুন মন্তব্য করুন