হিট বিয়ার ফ্লপ বর্ণনা! শেষ কিস্তি!!

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: বুধ, ১৬/০৫/২০০৭ - ৩:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মেয়ে পক্ষের আত্মীয় স্বজন বলে যে আলাদা কিছু নেই,সেটা কাজীকে বুঝানো যায় না।মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই,সে হিসেবে চিপকের আব্বা যে আমার ভাই এই যুক্তিতেও কাজীর মন টললো না।তিনি আমাকে বললেন,সেক্ষেত্রে আপনি কষ্ট না করে আপনার ভাইকে খবর দিয়ে নিয়ে আসুন।আমি বললাম,চিপকের আব্বা একজন সাবেক এম.পি,এ মুহূর্তে ত্রানের টিন সংক্রান্ত একটু জটিলতায় আছেন,
তবে মেয়ের চাচা বিয়ের আসরে হাজির আছেন।কাজী কাগজকলম বের করে বললেন,তার নাম বলেন।কৌশিক তখন পাশের রুমে ছিলেন,তিনি বেরিয়ে কাজীর সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন,ইশারায় কৌশিককে দেখিয়ে দিলাম।আমি কৌশিক আহমেদ নামটি বলে দিলাম।

কিন্তু গোল বাধালেন,চিপকের এই চাচা নিজেই।তাকে যে চাচা হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে,সেটি তো আর জানেন না।চাচাশ্বশুর সটান পিয়াল ভাইয়ের সামনে এসে বললেন,’’পিয়াল ভাই,সিগারেট দ্যান তো একটা।’’

কাজী সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তার চোখমুখ দেখে মনে হলো,তিনি তার জীবনে এমন জলজ্যান্ত শয়তান আর দুটো দেখেননি।

নজমুল আর শরৎ এবার কাজী সাহেবকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে গেল,একটু পরে পিয়াল ভাই তার মানিব্যাগ খুলে শরতের হাতে কিছু কড়কড়ে ৫০০ টাকার নোট দিলেন,এবার কাজী সাহেব হাসিমুখে বেরিয়ে এলেন সেই ঘর থেকে।তাকে দেখে মনে হলো,বিয়ের মতো একটা মহান কাজে চাচা-মামা-খালু’র মতো তুচ্ছ ব্যাপার স্যাপার নিয়ে মাথা ঘামানোর যে কিছু নেই,সেটা তিনি বুঝতে পেরেছেন।

এদিকে জরুরী খাদ্য সাহায্য এসে পৌছেছে। ব্লগার কাম সামহোয়্যার কর্তৃপক্ষের অংশ আনিকাকে ফোন করা হয়েছিল মাংসের লবন সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে,তিনি অল্পক্ষনের মাঝেই চমতকার রোস্ট নিয়ে হাজির। (পরে জানা গিয়েছিল,এগুলো উনার ছোটবোন তৈরী করেছিলেন অন্য কোন কারনে,কিন্তু আনিকা ফ্রিজ থেকে হাতসাফাই করে নিয়ে এসেছেন)।

আমি কাজী সাহেবের সাথে কাগজপত্রের যাবতীয় ঝামেলা সেরে ফেললাম।
স্বাক্ষী হিসেবে কৌশিক,শরৎ,জামাল ভাষ্কর,আমিন।উকিল হিসেবে আমি ।
আমার খুব ইচ্ছা ছিলো মৌসুম আর সারিয়াকে স্বাক্ষী হিসেবে রাখতে,কিন্তু দেখা গেল শরীয়ত তরিকাতে মেয়েদের সেই অধিকার নেই ।কী আর করা!

ব্লগে অলরেডি পোস্ট দেয়া হয়েছে বিয়ের খবর জানিয়ে।বিভিন্ন স্থান থেকে ব্লগাররা ফোন করে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।নজমুল আলবাব,সারিয়া আর পিয়াল ভাই সেই ফোন ধরার দায়িত্ব পালন করছেন।
আমি ঝামেলার মাঝে থাকায় নিজের ফোনটি বন্ধ করে দিলাম।

এবার দেখলাম,কৌশিকের মোবাইলে একটা ফোন এসেছে। কৌশিকের মুখ দেখতে দেখতে ফ্যাকাশে হয়ে গেল।সে উঠে পাশের রুমে চলে গেল। কিছুক্ষন পর ঘর থেকে বের হয়ে বললেন,’’বস,জরুরী ব্যাপার।১ মিনিটের মধ্যে আসছি।’

এ দিকে ক্ষুধা লেগে গেছে সবার।সেই ভোর রাত থেকে ব্যস্ততায় কোন কিছু
মুখে দেয়া হয় নি তেমন;শুধু মিষ্টি খাওয়া হয়েছে দুইটা তিনটা করে।এ দিকে কৌশিকের জন্য অপেক্ষা করতে করতে জান কয়লা।কাজী সাহেব নতুন বিতং বের করল,বলে মেয়ের চাচা পালাইলেন কেন? লে হালুয়া,একটু আগে কৌশিককে চাচা স্বীকার করতে রাজী হচ্ছিল না,এখন সেই চাচার জন্যই কাজীর দিল লবেজান।
কৌশিক অলরেডি ফোনে জানিয়ে দিয়েছে ,সে আসবে না।ঘন দূর্যোগে পড়েছে,স্বাক্ষাতে বিস্তারিত বলবে।

তো,বাধ্য হয়ে আমরা নজমুল আলবাবকে স্বাক্ষী বানিয়ে ফেললাম।সারিয়া আর শরৎ বুদ্ধি দিল,যেহেতু আগের স্বাক্ষীর মাথায় টাক ছিলো,সুতরাং নতুন স্বাক্ষীর মাথাও চান্দিছিলা করে দেয়া হোক।কিন্তু নজমুল এই প্রস্তাবে রাজী হলেন না।ঠেকায় পড়ে আমরা নজমুলের চুল না কেটেই তাকে স্বাক্ষী হিসেবে মেনে নিলাম।

কবুল!
কবুল!!
কবুল!!!
আরেক উইকেটের পতন ঘটলো দুই মিনিটের মাথায়।

এবার কাজী সাহেব বললেন,দোয়া করব।সবাই হাত তুলেন।মৌসুম আর সারিয়া তখন রান্নাঘরে ব্যস্ত,শরৎ ব্লগে ছবি আপলোড দিতে চলে গেল,নজমুল আলবাবের হাতে ভিডিও ক্যামেরা,জামাল ভাষ্কর স্টিল ক্যামেরা নিয়ে রেডি...হায় হায় দোয়া করার জন্য তো আমি ছাড়া কেউ আর অবশিষ্ট নেই।

তো আমি বরকনে কে নিয়ে হাত তুললাম।
কাজী শুরু করলেন,‘‘হায় আল্লাহ,এই বিয়ের বরকতে অনেক সন্তান সন্ততির জন্ম দিয়া তুমি ....’

হাসতে চাই নি।তবু ফিক করে হেসে ফেললাম।একটা বিশেষ শ্রেনীর মানুষের মাথায় বোধহয় যৌনতাড়না বেশি থাকে।প্রত্যেকটি কাজের পিছেই তারা প্রথমে সেই লাভালাভের কথা চিন্তা করে।দোয়ার প্রথমেই সেই কামনা দিয়ে শুরু হলো!!ফ্রয়েড বুঝি তার থিওরিটা এদের দেখেই বানিয়েছিলেন!!

(পাবলিক রি একশন কম বইলা,এই সিরিজরে এখানেই শেষ করে দিলাম।হানিমুন পর্ব হয়তো বিপ্লব ভাই লিখবে।)


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।