আরিফ জেবতিকের অসহায় অনুভব:একটি মোরগ বৃত্থান্ত।

আরিফ জেবতিক এর ছবি
লিখেছেন আরিফ জেবতিক (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/০৬/২০০৭ - ৬:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এক.
সাংবাদিক জীবনে কী দুর্বিপাকে যেন আমি একবার এফ.ডি.সি বিটের দায়িত্ব পেলাম।সম্ভবত:২০০০ সাল অথবা তার আগের ঘটনা।এফ.ডি.সি.তে তখন খুল্লামখুল্লা সিনেমার উৎসব।সেই এফ.ডি.সি তে সাংবাদিক হিসেবে ঢুকে তো আমার মহা আনন্দ।যা দেখি,তাতেই চোখ টাটায়।
নায়িকা ময়ূরী কিংবা মুনমুনের লগে ঘনিষ্ট হয়ে বসে ইন্টারভিউ নেই,শট দেয়া থেকে মুনমুন উঠে এসেছে,তার পরনে কোন কাপড় নেই (মানে যতোটুকু আছে,তাকে কাপড় বলা না বলায় কিছু যায় আসে না।)তার বিশাল বক্ষের দিকে তাকিয়ে আমি আমার প্রশ্নটশ্ন ভুলে যাই।সপ্তাহান্তে প্রডিউসারদের পার্টিতে গেলে একস্ট্রা খাতির,চাইলে সিনেমার এক্সট্রা নায়িকা ফ্রি এরকম প্রকাশ্য ইঙিত,যথেচ্ছা পান করার সুযোগ,বগলদাবা করে বোতলটোতল কিংবা বিয়ারের ফ্রি কেস যাতে বাড়ি নিয়ে আসেন সেজন্য তাদের অন্তহীন আবেদন,খালাম্মা বয়েসী নায়িকাদের অতিউতসাহে চুমু খাওয়ার চেষ্ঠা ,কী নেই!
এক সময় আমি অবাক হয়ে দেখলাম,আমার কথাবার্তা সব আমার জানি দোস্ত আলেকজান্ডার বো কিংবা মিশা সওদাগরের মতো হয়ে যাচ্ছে,আমার ছাইপাশ লেখার কোয়ালিটি ছাই থেকেও খারাপ হয়ে কুকুরের মলের মতো হয়ে যাচ্ছে,আর ভেবে ভেবে আমি দেখলাম,এর পিছনে আমার এফ.ডি.সি তে প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে কাটানোটাই মূলত:দায়ী।আমি এক পর্যায়ে অসুস্থ বোধ করতে লাগলাম,মুখে থু থু জমতে থাকলো এবং আমি সঞ্জীবদাকে বলে এফ.ডি.সি বিট থেকে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করলাম।

দুই.
মাঠ ছেড়ে যাবার কোন ইতিহাস আমার নেই,সে যতো প্রতিকূল অবস্থাই হোক আমি তেলাপোকার মতো সবসময় টিকে থাকার চেষ্ঠা চালিয়ে গেছি,শিবিরের ছেলেদের সাথে আমার কখনোই বনে নি,এবং তাদের রামদা ,কিরিচ আর পাইপগানের সামনে আমাকে ছাত্রজীবনে অসংখ্যবার মুখোমুখি হতে হয়েছে,কখনোই আমি ক্যাম্পাস ছেড়ে মায়ের আচলের তলে মুখ লুকাই নি।

ছোট ছোট ছেলেদেরকে যখন শিবির তাদের দলে টেনে নিয়ে যায়,তখন তাদেরকে উল্টো টেনে আনার জন্য আমি সিলেটের দুইটি কলেজে টিম করেছিলাম এবং তার বিনিময়ে বেশ ফল পাওয়া গিয়েছিল।
ফাস্র্ট ইয়ারের ছেলেকে গালি দিলে লাভ নেই,সে তার দলের প্রতিই আরো অনুরক্ত হবে,তার থেকে তাকে তার বিভ্রান্তি গুলো বুঝিয়ে দেয়া যেতে পারে,তাহলেও একটা বিশাল গোষ্ঠী শিবিরের মায়াজাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসে,সেই প্র্যাকটিকাল অভিজ্ঞতা আমার আছে।

তিন.
সামহোয়্যার থেকে অনেকেই নিজেকে প্রত্যাহারের ঘোষনা দেন,সেই ঘোষনায় নাটক থাকে বলে আমার মনে হয় না,সবাই আসলে সত্যি সত্যিই এখান থেকে বেরিয়ে যেতে চান,কিন্তু কয়েকদিন পরেই মায়ার টানে ফিরে আসেন,নয়তো ত্রিভুজকে যে পরিমান গালাগালি দেয়া হয়েছে এই ব্লগে সেগুলো হজম করে ত্রিভুজের আবার ফিরে আসার দরকার ছিলো না,কিংবা রাগইমনের আর আস্তমেয়ের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে যে ইঙিত গুলো এখানে করা হয় তারপর তারা এখানে টিকে থাকেন কিভাবে সেই প্রশ্ন আমার মনেও মাঝে মাঝে যাগে,শুধু বুঝি যে এক মায়ার টানেই তার টিকে আছেন,কিছু বলার জন্য আর কিছু শোনার জন্যই তারা এখানে বারবার ফিরে আসেন।

চার.
আজ শমশের একটি চমৎকার কথা বলেছেন যে বিনাপয়সায় এতো বিনোদন এই ব্লগ ছাড়া কোথাও মিলে না বলেই তিনি এই ব্লগ ছেড়ে যেতে আগ্রহী না এবং আমার বিশ্বাস যে এই একই কারনে আরো অনেকেই এই সাইটে লগইন করে থাকেন।

আমার আজ কেন যেন মনে হচ্ছে ঠিক একই কাজ আরেকটু বড়ো আকারে করছেন আরো কিছু মানুষ,তারা এই সাইট খুলে মজা নিচ্ছেন,আমাদেরকে লড়িয়ে দিচ্ছেন,আমরা পরষ্পরের মা বাবা তুলে অশ্লীল গালি দিয়ে বেড়াচ্ছি,কার ঘরের মহিলাকে কে কিভাবে উপগত হবেন এসব নিয়ে মাথা খাটিয়ে উত্তর টুত্তর দিচ্ছি আর তারা,সেই তথকথিত মানুষেরা এসব দেখে মজা পাচ্ছেন।

শৈশবের সেই মোরগ লড়াইয়ের দৃশ্য আমার মনে পড়ে যাচ্ছে,যেখানে অসহায় দুটি মোরগ ঝুটি উড়িয়ে লড়ে যাচ্ছে,পরষ্পরকে রক্তাক্ত করছে,নেই নিরীহ মোরগকে ঘিরে বসে আছেন মকদ্দর মোক্তার,তৈমুছ আলী খান,সাত্তার কন্ট্রাকটর আর আমাদের মতো যতো সব শিশু কিশোরের দল।

আমরা সেই মোরগ গুলোর রক্তপাতে আনন্দিত হচ্ছি,তালি বাজাচ্ছি,সেটা নিয়ে মার্বেল বাজি রেখে ধনবান হচ্ছি,অথচ আমরা চাইলেই সেই নিরীহ মোরগগুলোকে থামাতে পাড়তাম,তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিতে পারতাম,কিন্তু আনন্দের কারনে ,মার্বেলের লোভে আমরা তা করছি না।

শেষ কথা:
আমার কেন যেন গত দুইদিন ধরে মনে হচ্ছে যে আমরা ,ব্লগাররা সেই মোরগ,লড়ে যাচ্ছি তো লড়েই যাচ্ছি,কোন কিছুই অর্জন করতে পারছি না,আর হয়তো কেউ কেউ তাদের অফিসের মনিটরটিকে গোল করে মাঝে রেখে সেসব দেখে কফি টফি খাচ্ছেন ,আর অমুককে তমুক এখন কোন গালি দেবে অথবা দেশের বিরুদ্ধে এই জিনিষটা রাখলে,ধর্মের বিরুদ্ধে ঐ জিনিষটা রাখলে,এই অসুবিধা বা ঐ অসুবিধা থাকলে কে কি রিএ্যাক্ট করবে সেটা নিয়ে জোর বাজি ধরছেন।

আমি কোনদিন মাঠ ছেড়ে দেবার পক্ষে নই,আমি সংসপ্তক মানুষ,জীবনে অজস্ত্রবার পরাজিত হয়েছি,কিন্তু জয়ীও হয়েছি বহুবার কিন্তু যাই অর্জন করি না কেন তা উপস্থিত থেকেই করেছি।
আজ বিকেলে কেন যেন সেই উপস্থিতিতে বড়ো অভিমান হচ্ছে।
নিজেকে সেই অসহায় মোরগের একজন ভেবে ক্লান্তি লাগছে।

কারো বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই,কারো সাথে তর্ক করার কোন ইচ্ছা নেই,শুধু আমার ক্লান্তিটুকু আমি এই ঝিমিয়ে পড়া বিকেলে লিখে যাচ্ছি..লিখে যাচ্ছি...লিখেই যাচ্ছি..


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।