১.
সারপ্রাইজ, সারপ্রাইজ। বাজার করার সময় আমিও ছিলাম। তখন জানতাম এই দিনের যত বিশিষ্টতা আছে তা সীমাবদ্ধ থাকবে শুধু আমাদের দুইজনের মধ্যে। খরচ বাঁচানোর রোমান্টিক তরিকা। কিন্তু হঠাত্ রান্নাঘরে ঢুকে গোটা দশেক রূপচাঁদা ভাজা দেখে অবাক। প্রতিবেশি বলে মাসুদা-ইসমেতের জন্য দরজা সবসময়ই খোলা। ইসমেত মাছ পছন্দও করে, তাবলে এত রূপচাঁদা? রেহনুমা কখনও কম রাঁধতে পারে না। প্রশ্ন তুলতেই সে আমাকে নিশ্চিন্ত করলো ভয়ের কিছু নেই সব খাওয়া হয়ে যাবে।
২.
বাথরুম থেকে গোসল সেরে বের হয়ে দেখি তানভির আর পুষ্প। ওরা অফিস থেকে সরাসরি হাজির। স্মিরনফ আর মিট সমোসা নিয়ে ওদের সাথে বসলাম। তারপর ঢুকলো ইভান, ওয়াইন স্পেশালিস্ট হিসেবে নতুন যোগ দিয়েছে জন লুইসে। উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছে ফ্রান্সের এক স্পেশাল ওয়াইন,২০০৪ এর। আরো একবছর শুইয়ে রাখতে হবে সে বোতল। নো ফাজলামি, ওয়াইনের বোতল শুইয়েই রাখতে হয়। মাসুদা ও ইসমত আসলো তারপর। সবুজ জমিনে ফুল ফুল এক ফ্রক পরে সেজেগুঁজে সারাহও হাজির। আশাই করিনি এতজন, শুক্রবার রাতকে কাজের বানানোর চেষ্টা বাদ দিয়ে উপভোগে মন দিলাম।
৩.
আড্ডাটা জমছে জমছে ঠিক এই সময় পাশের রুম থেকে মোমবাতি জ্বালানো কেকটা নিয়ে আসলো রেহনুমা। রীতিমত হ্যাপি বার্থডের শ্লোগান রুমে। চেলসি ফুটবল ক্লাবের কেক। কি বিস্ময়! জন্মদিনের কার্ডটাও দেখি চেলসি ক্লাবের! সবার স্বাক্ষরও দেখা যায়। এতো ষড়যন্ত্র করলো কখন এরা! রেহনুমার গিফট হলো রিভার আইল্যান্ডর প্যান্ট-শার্ট। মাসুদা-ইসমেত-এর আবার শিল্পে আস্থা গভীর, হাতে বানানো কাগজে তৈরি ফটো এ্যালবাম পেলাম তাদের কাছ থেকে। তানভির-পুষ্প নিয়ে এসেছে পারফিউম, এর নেপথ্যে কি কোনো বিশেষ বক্তব্য আছে? ক্যামেরা নাই তাতে কি? মোবাইলেই ফটো সেশন চললো। কেক কাটা পর্ব শেষে শুরু হলো খাবারের আয়োজন। রাত তখন সাড়ে বারোটা।
৪.
রূপচাঁদা মাছ আস্ত খেতে কেউ রাজি হলো না। ফ্রায়েড রাইসটার সুগন্ধে ঘর ভরে গেলো। মেন্যুতে আর ছিল ব্ল্যাক বিন সস দিয়ে চাইনিজ কায়দায় সব্জি। আর পাইনএ্যাপেল বিফ। রাত পার করে এসব খেয়ে কতক্ষণ সোফায় বসে থাকা যায়। ইভান ঝিমুচ্ছে দেখে বিদায় নিলো সারাহ-ইভান। তানভিরও বেডরুমে গিয়ে নিহত হয়ে গেল। আমরা বাকীরা আড্ডা চালিয়ে গেলাম। বিবিসির প্রভাতী অধিবেশন শেষ করে নবনীতা আসলো রাত সাড়ে তিনটায়। আলোচনায় নতুন উত্তেজনা যোগ হলো। লালনগীতির দশটা গান দিয়ে এ্যালবাম বেরুচ্ছে ওর আগামী মাসে। রেকর্ডিং-এর নানা গল্প নবনীতার বর্ণনায় জমিয়ে দিলো আড্ডা। এর ফাঁকে ওর খাওয়া শেষ না হতেই ভোরের আলো। হাঁটতে বেরুলাম আমরা। লাইমহাউস কাট ক্যানেলের পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে লী নদী, ম্যাডোনা আর জর্জ মাইকেলের অনেক গানের স্মৃতি বিজড়িত থ্রি মিলস্ স্টুডিও। পাশেই পার্ক। অলিম্পিক ভিলেজের ভেলোড্রোম বানানোর জন্য দখল করে নেয়া হচ্ছে পার্কটা। পাশেই একটা উঁচু ঢিবি। সিঁড়ি বেয়ে এভারেস্ট জয়ে ভঙিতে আমরা তাতেই চড়লাম। আশে পাশের বেশ খানিকটা জায়গা দেখা যায়। উঠতে উঠতে জঙলে থোকায় থোকায় ধরে থাকা ব্ল্যাক বেরি আর ওয়াইল্ড বেরির স্বাদ নেয়া। রোজমেরি ছিড়ে গন্ধ নেয়ার জন্য সবাইকে দিলো মাসুদা। বন্ধুকে রক্ষা করতে গিয়ে বন্ধুর প্রাণ হানির স্মৃতিস্মরণে একটা সৌধ আছে কাছেই। নেমে সৌধের সামনে গোল করে সাজানো বেঞ্চে কিছুক্ষণ বিশ্রাম। প্রলম্বিত আড্ডা। তারপর ফিরে চলা।
৫.
ক্রিস্প স্ট্রিট মার্কেটে দোকানগুলো মাত্র খুলতে শুরু করেছে। কফি খেতে বসলো কয়েকজন। কফি পর্ব দিয়ে দীর্ঘ আড্ডায় ভাঙন ধরলো। সারা রাতের ঘুম সবার চোখে। সচলায়তনে উঁকি দিয়ে দেখলাম জন্মদিনের শুভেচ্ছা পোস্ট। এ এক নতুন ভালো লাগা, নতুন কৃতজ্ঞতা। ফেইসবুকেও অমিত, জিকোর অভিনন্দন। চোখের পাতায় আঠা লেগে আছে। দুম করে বিছানায় গড়িয়ে পড়লাম। সবাই চলে যাওয়ার সুযোগে রেহনুমা বের করলো তার আরেকটা বিশেষ কার্ড। এ-ফোর সাইজের লাল রংয়ের শক্ত বাক্সের মধ্যে রাখা বিশাল কার্ড। কার্ড না বলে বই বলাই ভালো একে।
৬.
বাহ বিস্ময়! আসলেই চমকে দিয়েছে রেহনুমা। বেশ মজার একটা দিন কাটলো অনেকদিন পর। খাবারগুলো মজা ছিল। কেকটাও। উপহারগুলোও বেশ! ভাইয়া আর তার একমাত্র পুত্র সাগর এলো সকালে। এবার সাতে পড়লো সাগর। ওর জন্মদিন উপলক্ষে ভাইয়া ওকে নিয়ে গিয়েছিলো নায়াগ্রা ফলস। সাগর সেখান থেকে নায়াগ্রার ছবির বই নিয়ে এসেছে সেই সাথে দুটা ফিকশন। রিটা ব্র্যাডশো’র ওলওয়েজ আই উইল রিমেমবার আর স্ট্যান পটিনজারের দ্যা লাস্ট নাজি। সাগরের নতুন নেশা নাকি গ্যাজেট কেনা। আমার জন্য নিয়ে এসেছে ইউএসবি পোর্ট থেকে জ্বালানো যায় এরকম ল্যাপটপের লাইট। কি বিস্ময়! কি বিস্ময়!
৭.
বাসায় বন্ধু-বান্ধব আর স্বজনদের শুভেচ্ছা। ইন্টারনেটে দূরদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্ধুদের অভিনন্দন। আহা কত ভালবাসা এই মনুষ্য জীবনে। সবার কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। অনেক অনেক ধন্যবাদ সবাইকে।
লেখাটা যখন পোস্ট করতে যাবো তখন একটা চমতকার সাদার ওপর হালকা ফিরোজার চওড়া স্ট্রাইপড্ শার্ট পাওয়া গেলো আম্মুর কাছ থেকে। এটাও রিভার আইল্যান্ডের। নাহ, বিদেশ হলেও জন্মদিনটা খারাপ যায়নি। কি বিস্ময়! কি বিস্ময়!
(সবগুলো ছবিই ইন্টারনেট থেকে)
মন্তব্য
বললাম পিমস কিনে পান কইরা ফ্যালেন, তা তো শুনলেন না
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নিবোর্ধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!
যদিও পিমসের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানি উইন্টার ভার্সন বাজারে ছেড়েছে তবু সামারেই পিমসের ফল ফল স্বাদ বেশি লাগে জিহ্বায়। ক্যালেন্ডারে সামার হলেও ব্রিটেনে এখন চলছে বন্যা ঋতু।
ঠিক আছে অরূপ, পিমসের সুযোগ তো আর চলে যাচ্ছে না। হলেই খবর দিব।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
দারুন লাগল। কি বিস্ময়! কি বিস্ময়!
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
স্মিরনফের বোতলটা কি খালি?
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
নাহ, প্রায় আড়াইটা নিয়ে বসছিলাম। অর্ধেক এখনও আছে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
জম্পেশ জন্মদিন কাটাইলেন তো!
বিলম্বিত শুভেচ্ছা।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
অ. হাসান, আমিও বলি হুম।
শ্যাজা, দিনের শুরুটায় তেমন নতুনত্ব না থাকলেও শেষটা হয়েছে দারুন।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
নতুন মন্তব্য করুন