সতর্কতা: লেখাটি অত্যন্ত দীর্ঘ। বিদেশে রক্তদানের অভিজ্ঞতা আর তার সাথে দেশের অভিজ্ঞতার তুলনামূলক রচনা। এটি মানচুমাহারার পোস্ট পড়ে উৎসাহিত হয়ে প্রজন্ম ফোরামের জন্য লেখা হয়েছিল। এখানে সামান্য সম্পাদনা করে প্রকাশ করা হল। শিরোনামটি কবি শামসুর রাহমানের কাব্যগ্রন্হ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে‘ অনুকরণে
এক.
“একের রক্তে অন্যের জীবন / রক্তই হোক আত্নার বন্ধন” এই স্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন তখন সুপ্রতিষ্ঠিত। আমার বিশ্বিবদ্যালয় জীবন অনাবাসিক হয়ে কাটলেও বন্ধু আসাদ-এর কল্যাণে বহুদিন ফজলুল হক হলে থাকা হয়েছে। বাঁধনের অনেক উদ্যোক্তা আমাদের ব্যচমেট, বন্ধু। আমি স্বার্থপর মানুষ। পরিচিত কারো সূত্র না ধরে রক্ত দিতে আমার আপত্তি। তাই অনেকদিন ধরেই আসাদকে বলছি, দোস্ত, তোদের বাঁধনের মাধ্যমে আমার একটা রক্ত দানের ব্যবস্থা কর।
বিকালবেলা আসাদের ফোন পেলাম। রক্ত দেওয়ার সুযোগ এসেছে। ঢাকা মেডিক্যালে এক মহিলার অপারেশন হচ্ছে, তার নাড়ি পেঁচিয়ে গেছে। প্রচুর রক্ত লাগবে। আমি থাকি মিরপুর। যেতে কমপক্ষে ১ ঘন্টা তো লাগবেই। আম্মাকে বললাম, আমি রক্ত দিতে যাচ্ছি। তিনি খুবই নাখোশ হলেন। খেদের সাথে বললেন, “তোদের এত কষ্ট করে খাইয়ে দাইয়ে গায়ে একটু রক্ত জমছে সেটা মানুষকে দিতে যাবি?” আমি তাঁর দোষ দেইনা। শিক্ষিত, আধুনিক মানুষেরাই রক্ত দেয়না, আর আমার মা তো সাধারণ গৃহবধু। তাকে বললাম, “মা আমি এই রক্ত না দিলেও তিন মাস পরে এমনিতেই নষ্ট হয়ে যাবে। আর কোনদিন তো আমারো রক্ত লাগতে পারে“। তবুও সন্তুস্ট না আমার মা। তাঁকে বোঝানোর সময় নেই। আরেক মায়ের কথা চিন্তা করে ঝট্কে বেরিয়ে পড়ি।
সন্ধ্যা হয়েছে একটু আগে। ঢাকা মেডিক্যালের আশেপাশের ছোট ছোট দোকানগুলোর আলো ছাড়া আর সবকিছু আজ অন্ধকার মনে হচ্ছে। আচ্ছা, আমি কি ভয় পাচ্ছি? নাকি জীবনের প্রথম রক্তদানের উত্তেজনায় এমন হচ্ছে। এই প্রথম ঢাকা মেডিক্যালে এসেছি। শুনেছি মেডিক্যালে নাকি সুস্থ মানুষের আসতে নাই, অসুস্থ হয়ে যায়। এসে এখন তাই মনে হচ্ছে। অস্বস্তিকর একটা গন্ধ পাচ্ছি। মাথাটা মনে হয় দুলে উঠল। টিমটিমে আলোয় অসুস্থ এই দালানের ভিতর অসুস্থ মানুষগুলোকে দেখে মনে হল এরা অনিশ্চিত এক গন্তব্যে চলা ট্রেনের যাত্রি। কিন্তু সবারই চোখ চকচকে, আশার আলো ঝিলিক দিচ্ছে সেখানে।
আসাদ সহ আরো কয়েকজন বন্ধু এসেছে সাথে। আঁকা বাঁকা করিডোর পেরিয়ে আমাকে নিয়ে যাওয়া হল কোন এক কামড়ায় যেখানে রক্ত নেয়া হবে। অনেকটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে বোমায় বিধ্বস্ত কোন একটা বাড়ির কামড়ার মত মনে হল। ঘরটিতে রক্ত নেয়ার কোন সরঞ্জাম দেখলাম না। চারপাশে দেয়াল বরাবর অনেকগুলি শেলফ খালি পড়ে আছে। ধুলোর আস্তর সেখানে। একটা রোগী শোয়ানোর ট্রলি-টেবিল। দুইটা চেয়ার। মেঝেতে রক্তের ফোঁটা-ফোঁটা দাগ। মুহূর্তেই আমার বন্ধুদের ষড়যন্ত্রি মনে হল। এরা রক্ত দেওয়ার নাম করে আমাকে এখানে এনেছে অন্য উদ্দেশ্যে। আমি অসম্ভব অস্বস্তি বোধ করছি। আমার অবস্থা দেখে বন্ধুরা কিছুটা বিব্রত। তারা নিজেরাও আশা করেনি বাসায় বাবা-মায়ের আদরে বড় হওয়া বন্ধুটার প্রথম রক্তদানের অভিজ্ঞতা এমন হবে।
আমি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেস্টা করছি। একসময় কেউ একজন এলেন। এসেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে রক্ত দেবে?। বললাম, ‘আমি‘। আমাকে ট্রলি টেবিলের উপর শুইয়ে হাতে কাঠের একটা টুকরা ধরিয়ে দিলেন। বললেন, ‘এটা আস্তে আস্তে নাড়ুন‘। সুঁচ ফুটলো। দ্রুতগতিতে রক্ত বেরিয়ে এলো। ব্যাগ ভরে গেল। আমার গায়ে গরুর রক্ত, ও পজেটিভ। এই রক্ত কারো কাজে লাগবে চিন্তা করে ধন্য হলাম।
বন্ধুরা আমাকে রিক্সায় নিয়ে আসতে চাইল। আমি তাদের সাথে হেঁটেই হলে ফিরলাম। সৌজন্য হিসেবে কোনার দোকান থেকে একটা জুস প্যাক পেলাম। তারপর বাঁধনের অফিসে গিয়ে একটা ফরম ফিলাপ করে “‘রিমাইন্ডার কার্ড” ধরিয়ে দিল, যেখানে পরবর্তী রক্তদানের তারিখ দেয়া। কার্ডটি অনেকদিন মানিব্যাগে ছিল। দেশ ছাড়ার পর সেটি কোথায়, জানিনা।
দুই.
তার বছর তিন পরের কথা। মুসলিম স্টুডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন (এমএসএ) থেকে ইমেইল এলো। রক্ত দানের আহবান। কানাডিয়ান ব্লাড সার্ভিসেস রাজী হয়েছে তাদের পুরো ইউনিট নিয়ে ইউনিভার্সিটিতে আসবে। তবে শর্ত হচ্ছে কমপক্ষে একশ জন ডোনার থাকতে হবে। পাশ্চাত্যে মুসলিমদের এমনিতেই ইমেজ সংকট। এই অবস্থায় কিছুটা ইমেজ বিল্ডিং এর উদ্দেশ্যে, কিছুটা উৎসাহ, আর কিছুটা কৌতূহল নিয়ে নাম লেখালাম। ফিরতি ইমেইলে সময় জানিয়ে দিলো। আমাকে ঠিক সেই সময়েই জায়গামত উপস্থিত থাকতে হবে। অবাক হওয়ার কিছুই নাই, ইউনিভার্সিটিতে ইমেইলই সব যোগাযোগের প্রাথমিক মাধ্যম।
বাংলাদেশে ঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়াটাকে আমরা বলতাম “‘নটর ডেম টাইম‘। খানিকটা আগেই স্টুডেন্ট সেন্টার বিল্ডিং-এ পৌঁছলাম। বাইরেই দেখলাম কানাডিয়ান ব্লাড সার্ভিসেস -এর মোবাইল ইউনিট। বিশাল ভ্যান, ইউনিফরম পড়া কর্মী যাদের অধিকাংশই মেয়ে, বহনযোগ্য অসংখ্য কোল্ড বক্স, স্ট্রেচার। সবকিছু মিলিয়ে এক মোবাইল হাসপাতাল। উপরে ঢুকে দেখি সাজসাজ রব রব অবস্থা। ২০ থেকে ২৫ টি বেড পাতা, রক্তদান চলছে। অভ্যর্থনা ডেস্কে ল্যাপটপ নিয়ে বসে একজন মহিলা। গিয়ে আমার আইডি কার্ড দেখালাম। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে হাসি মুখে জানতে চাইল আমি কেমন আছি। যেন কতদিনের পরিচয়।
আমার নাম ধাম, ঠিকানা, ডেট অব বার্থ, আরো একটি ফটো আইডি (আমি যে আমি তার প্রমাণ হিসেবে) নিলেন। তথ্য এন্ট্রির ফাঁকে ফাঁকে আমাকে বিস্তারিত বলছেন রক্ত দানের পুরো প্রক্রিয়া, যার শুরু হবে এই ডেস্কেই ব্লাড স্যাম্পলিং এর মাধ্যমে। আমার আঙ্গুলে মাথায় সুঁচ ফুটিয়ে কয়েক ফোঁটা রক্ত নিয়ে গ্লাস ভর্তি একটা তরলের মধ্যে ফেলবে- এটাই ব্লাড স্যাম্পলিং। রক্ত যদি ডুবে যায়, তাহলে ওকে। আমার রক্ত ওকে হল। আমাকে তাৎক্ষণিক একটা ডোনার আইডি কার্ড দিল যেখানে নাম, জন্ম তারিখ ইত্যাদি আছে। এই কার্ড নিয়ে পরবর্তীতে রক্ত দিতে গেলে অন্য কোন আইডি দেখাতে হবে না।
সেখান থেকে একটা লাল ব্যাজ পড়িয়ে আমাকে পাঠিয়ে দিল অন্য এক ডেস্কে। সেখানে লম্বা লাইন। বসার জায়গা আছে। বসে অপেক্ষা করছি কখন রক্ত দেয়ার ডাক আসে। অনেক্ষণ পরে একজন মহিলা নার্স এল। না, রক্ত দেয়া নয়, আরো ফর্মালিটি আছে। এই ডেস্কে মৌখিকভাবে আমাকে জিজ্ঞেস করল আমি সুস্থ কি না, বর্তমানে কোন ঔষধ খাচ্ছি কি না, বিশেষ করে এ্যান্টিবায়োটক নিচ্ছি কি না; গত তিন দিনে দাঁতের কোন চিকিৎসা করিয়েছি কি না, ইত্যাদি। বলতে ভুলে গেছি, এমএসএ-র ইমেইলেই বলা ছিল গত তিন দিনের মধ্য দাঁত তোলা বা দাঁতের চিকিৎসা করা থাকলে রক্ত দেয়া যাবে না। পরে জেনেছি এতে নাকি রক্ত কন্টামিনেটেড হওয়ার ভয় থাকে। সে জন্যই এ সতর্কতা।
সেখান থেকে আরেক ডেস্কে পাঠাল। সেই ডেস্কে ল্যামিনেটেড একটা কাগজের উপর অবশ্যপঠনীয় কিছু লেখা আছে। একপাশে ইংরেজী আরেকপাশে ফ্রেঞ্চ। কানাডা দুই ভাষার দেশ (বাইলিঙ্গুয়াল)। রক্ত দানের পর সম্ভাব্য বিপদসমূহ যেমন, মাথা ঘোরা, বমি ভাব, বা আরো যেসব বিষয় জানা দরকার সেগুলি লেখা আছে। আমি সব পড়লাম। একসময় আমার ডাক পড়ল একটা ত্রিপল কাপড়ে ঘেরা অস্থায়ি কামড়ায়। সেখানে কেবল আমি আর একজন নার্স। তিনি আমার ব্লাড প্রেসার মাপলেন, শরীরের তাপমাত্রা দেখলেন। জিজ্ঞেস করলেন আমি অবশ্যপঠনীয় লেখাগুলি পড়েছি কি না এবং এ সম্পর্কে আমার কোন প্রশ্ন আছে কি না। তারপর জিজ্ঞেস করলেন আমি গত দুই বছরে কোন্ কোন্ দেশ ভ্রমণ করেছি। এর মাধ্যমে আসলে জানতে চাইছেন আমার রক্তে ম্যালেরিয়া-থ্রেট আছে কিনা। আমি বললাম, দেড় বছর আগে আমি ভারত গিয়েছি এবং কলকাতা, দিল্লি শহরে থেকেছি। উনি বিশাল একটা বই বের করলেন। সেখানে ভারতের পাতা দেখে বললেন পুরা ভারতই ম্যালেরিয়া প্রবণ। তবে যেহেতু এটা ছয় মাসের বেশি আগের ঘটনা তাই সমস্যা নেই। আমি বললাম, গত ছয় মাসের মধ্যে আমি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ছিলাম। উনি বাংলাদেশের পাতা বের করে বললেন ঢাকা ম্যালেরিয়া-থ্রেট মুক্ত। আমার এত ভাল লাগল জেনে- যাক এই বিষয়ে অন্তত আমরা ভারতীয়দের থেকে এগিয়ে।
এসব হওয়ার পর শুরু হল আসল পর্ব। আমি ততক্ষণে কিছুটা বিরক্ত, কিছুটা হতাশ এই ভেবে যে আমার বুঝি রক্ত আর দেয়া হবে না। আমাকে একটা ফরম ধরিয়ে দেয়া হল। সেখানে দুটা সেকশন। প্রথম সেকশন আমি পুরণ করব, আর দ্বিতীয় সেকশন নার্স পুরণ করবেন। প্রথম অংশে সাধারণ সব প্রশ্ন– আমার সংক্রামক রোগ আছে কি না, আমার এইডস আছে কি না ইত্যাদি। দ্বিতীয় অংশের প্রশ্নগুলো অত্যন্ত ব্যক্তিগত। তখনই বুঝলাম কেন এই কামড়ায় আমি আর তিনি ছাড়া আর কেউ নেই। আমার অংশ পুরণ করা হলে উনি ফরমটি নিয়ে দ্বিতীয় অংশের প্রশ্নগুলো আমাকে জিজ্ঞেস করছেন আর আমি উত্তর দিচ্ছি, তিনি সেটা পুরণ করছেন। প্রথম প্রশ্ন হল, আমি ড্রাগ নেই কিনা, তারপর প্রশ্ন ছিল আমি সুঁই দিয়ে তরল ড্রাগ কখনো নিয়েছি কিনা; আমার একাধিক যৌন সঙ্গী আছে কি না। কখনো সেক্সের জন্য টাকা দিয়েছি কি-না এসব। প্রশ্ন শুনেই আমার কেমন কেমন লাগল। তারা কি আমাকে সন্দেহ করে? পরে জেনেছি এটা সবার জন্যই প্রযোজ্য।
আমি ভাবি, এই বুঝি শেষ, এবার রক্ত দেওয়ার পালা। না, এর পরেও কিন্তু আছে। এত কিছু সাক্ষ্য দেওয়ার পরও তারা আরেকটা সুযোগ দেয় গোপনে সত্যি কথা বলার। আমাকে দুইটা স্টিকার দেয়। প্রত্যেকটিতেই বারকোড দেয়া। এর একটি ‘হ্যাঁ‘ সূচক, একটি ‘না‘ সূচক। অর্থাৎ আমি যে রক্ত অন্যকে দান করছি এটা নিরাপদ কি না তা নিজের বিবেচনায় জানানো। এই বারকোড শুধুমাত্র কম্পিউটার পড়বে এবং কেউ যদি ‘না”‘ দেয় তাহলে তার রক্ত পরে নষ্ট করে ফেলা হবে। প্রাইভেসি রক্ষা এবং মানুষের সামনে হেয় হওয়া থেকে বাঁচার জন্য এই ব্যবস্থা। নার্স জানে না কোনটি ‘হ্যা‘ সূচক আর কোনটি ‘না‘ সূচক। আমাকে যা করতে হবে স্টিকারগুলোর লেবেল তুলে এর একটি স্টিকার (হ্যাঁ বা না) তার অগোচরে নষ্ট করে ফেলতে হবে এবং বাকিটার শুধু বারকোড অংশ নার্সকে ফেরত দিতে হবে। অর্থাৎ কেউ যদি এতক্ষণ মিথ্যা কথা বলেও থাকে তাহলে সে শেষ সুযোগ পাচ্ছে সবার অগোচরে সত্যি কথা বলার। আমি স্বাভাবিক ভাবেই হ্যাঁ দিলাম। স্টিকারটা তিনি আমার ফরমের উপরে মেরে দিলেন। এরপর বললেন তোমার রক্তে যদি এইডস-এর জীবানু থাকে তাহলে তা হেল্থ ডিপার্টমেন্টে এবং অন্যান্য যথাস্থানে জানানো হবে। এতে আমি রাজী কি না? আমি আবার হ্যাঁ ভোট দিলাম। এটাও জানালেন আমার রক্তে কোন সমস্যা ধরা পড়লে আগামী ২০-২৫ দিনের মধ্যেই ফোন করে তারা জানাবে। শেষমেষ বললেন, রক্ত দেওয়ার এক মাসের মধ্যে আমার যদি রক্ত সম্পর্কিত কোন সমস্যা ধরা পড়ে তাহলে কানাডিয়ান ব্লাড সার্ভিসেস কে যেন জানাই। বাপরে বাপ। একেই বলে রক্ত দেয়া! হঠাৎ তিন বছরে আগে আমার প্রথম রক্তদানের অভিজ্ঞাতার কথা মনে পড়ল।
তারপর, রক্ত দিলাম। বাধ্যতামূলক ২০ মিনিট শুয়ে থাকলাম। আমাকে কংগ্রাচুলেট করা হল প্রথম রক্তদানের জন্য (আমি তাদের বলি এটা আমার কানাডায় প্রথম রক্তদান। বেশী ব্যখ্যা করিনা শেষে আবার আমার রক্ত তারা সন্দেহের তালিকায় ফেলে)। পাশের টেবিলে নানা ধরনের জুস, তাজা ফল, কেক, বিস্কুট রাখা আছে। আমি কয়েকটা নিলাম। ‘ফার্স্ট টাইম ব্লাড ডোনার‘ কোটপিনটা পড়ে বাইরে চলে এলাম। এখন আবার এ্যাসাইনমেন্টে মন দিতে হবে।
শেষ।।
লেখাটি যা নিয়ে: রক্ত দান, পশ্চিমা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাঁধন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মন্তব্য
উফ আমার তো পড়তে পড়তেই বোরিং লাগা শুরু করছিল আপনি শেষ পর্যন্ত থাকলেন কেমনে?
আপানর লেখা কিন্তু বোরিং বলি নাই ... গোস্বা কইরেন না আবার
কিংকর্তব্যবিমূঢ়
দ্রুত চোখ বুলালাম।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
গরিবের বাড়িতে হাতির পা। ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি।
আমার ও প্রথম রক্তদান ঘটেছিল ঢা.মে.ক এ।
পরিবেশটায় এত নোংরা যে নিজেই আক্রান্ত হবার ভয় পেয়েছিলাম।
আর বেটাদের সিরিঞ্জগুলার নাকি আজকাল কোনো বিশ্বাস নাই।
তো বোঝেন ঠেলা!
অনেক বছর আগে এক রাতে এক বন্ধুর ফোন পেলাম, তার খালা মারাত্মক অসুস্থ, রক্ত লাগতে পারে, ব্লাডগ্রুপ আমার সাথে মেলে না। বন্ধুর বিপদে কাতর বোধ করে জনৈক ষন্ডা বন্ধুকে ফোন করলাম (এই দু'জন বন্ধুর সাথেই পরবর্তীতে বন্ধুত্ব ছিন্ন হয়েছে, পাঠক হুঁশিয়ার), তার সাথে ব্লাডগ্রুপ মিলে গেলো। রাত তখন পৌনে দু'টা। দ্বিতীয় বন্ধু বাড়ি এলো স্কুটারে চেপে, তাকে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে। হাসপাতালে আমাদের দেখে প্রথম বন্ধু ভ্যাবাচ্যাকা, আদৌ যে তার ডাকে আমি সাড়া দিয়ে যাবো তা সে ভাবেনি। এই উপচিকীর্ষার প্রতিদান সে পরবর্তীতে নানাভাবে বহুগুণে দিয়েছে। এমন একজন উপকারী বন্ধু হারিয়ে আমি কিছুটা বিষণ্ণ হয়েছিলাম।
যাই হোক, শেষ পর্যন্ত রক্ত দিতে হয়নি, দ্বিতীয় ধান্দাবাজ বন্ধুটি হাঁপ ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেলো, আমি রক্তদানের মতো মহত ঘটনার একটি অক্ষত অংশ হিসেবে ঘরে ফিরে খুশি হবো না দুঃখিত হবো বুঝতে না পেরে ঘুমিয়ে গেলাম।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আমি বাঁধনের সাথে ছিলাম হল ছাড়ার আগ পর্যন্ত। রশীদ হল ইউনিট। আমার বেশ ভাল লাগত কাজটা। ডোনার যোগাড় করে দেওয়া, তাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন মেডিক্যাল সেন্টার কিংবা হাসপাতালে যাওয়া। তবে আপনার বর্ণনা শুনে একটু ভয়ই পেলাম। এত লম্বা প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হলে, আমাদের এখানে ইচ্ছুক রক্ত দাতা খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা বলতে পারছি না।
আমার সবচেয়ে বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সেগুনবাগিচায়। এক রোগীর জন্য প্ল্যাটলেট কালেক্ট করতে হবে, মেশিন খারাপ ছিল কিংবা অপারেটর ছিল না বলে ছয়জন ডোনার সহ আমাকে সেই রাত ১০টা থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। পরে খবর পেয়েছিলাম ঐ রোগীকে বাঁচানো যায়নি শেষ পর্যন্ত। মধ্য ত্রিশের সদ্য বিবাহিত রোগী। ক্যন্সার ছিল মিডল স্টেজে, আগে ধরা পড়ে নাই। খবরটা শুনে মন খারাপ হয়েছিল খুব।
ভাল লাগল আপনার লিখা। আরো শেয়ার করুন এরকম।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
হুম. সেটাই ভাবছি। আমার যতটা মনে পড়ে প্রায় ১ ঘন্টার মত লেগেছিল সেদিন। ১ ঘন্টা কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে খুবই কম সময়।
নতুন মন্তব্য করুন